হবে কি আমার পর্ব-১৪+১৫

0
2664

#হবে_কি_আমার💞
#writer_Ruhi-mondal
#পর্ব_14

আকাশটা আজ নীল রঙ ধারণ করেছে, তার মধ্যে ভেসে যাচ্ছে সাদা মেঘের ভেলা,, সূয্যিমামা লাল রক্তিম বর্ণ ধারণ করে ডুবি ডুবি হয়ে আছে, আবছা ভাবে গোল চাঁদ দেখা যাচ্ছে, পড়ন্ত বিকেলে অনুকে শাড়ি পরিয়ে দিতে নাজেহাল অবস্থা হয়ে আছে অরিন্দমের, অরিন্দমের ফ্রেন্ড দ্বীপের বাড়িতে যাবে তার ছেলের বার্থডেতে,ওকে সালোয়ার পড়তে অনেক বার করে বলেছে কিন্তু সে জেদ ধরে আছে সে আজ শাড়ি পরবে তাও আবার অরিন্দম কে পরিয়ে দিতে হবে,,, বেচারা বাধ্য হয়ে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে, আবার তাকে চোখে কাপড় বাধতে দেয়নি,অনুর এখন করে অরিন্দম কে জ্বালাতে বেশ মজা পায়, অরিন্দম বেচারার কপাল থেকে ঘাম ঝরে ঝরে পড়ছে,অনু হাসতে হাসতে অরিন্দমের মুখে দুহাত দিয়ে ঘাম মুছে দিয়ে গালে হাত দিয়ে বলল,,

_______বরবাবু তোমার এতো ঘাম ঝরছে কেনো?

অরিন্দম কিছু বললো না শাড়ি ঠিক করে দিয়ে খাটের ওপর গিয়ে বসে বলল,,

_______” আমার কথা চিন্তা করতে হবে না তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও দ্বীপ বারবার ফোন করছে!”

অনু কিছু না বলেই রেডি হতে থাকলো , একটা সাদা আর গোলাপী মিশ্রণে শাড়ি পরেছে, ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক, চোখে কাজল, কানে ঝুমকো, হাতের চুড়ি, সিঁথি ভর্তি সিন্দুর পড়েছে,,,,
______________

অনু এখন অনেকটাই বুঝতে শিখেছে,, কয়েকদিন আগেই ওর পরীক্ষা শেষ হয়েছে,, মিলি তিশা, অনু অরিন্দম এর ব্যাপারটা জানে আর কেউ না,, মিলি আর তিশা মিলে ওকে নানানভাবে পিঞ্চ করে কথা বলে কিন্তু ও কতটা বোঝে তা ওরা জানেনা,, কিন্তু অনু এটা বুঝেছে অরিন্দমের আশেপাশে থাকলে ও আলাদা একটা অনুভূতি হয়, এটা হয়তো ওর স্বামী বলে তাই, অরিন্দম এর স্পর্শে ও এখন করে একটু বেশি লজ্জা পায়,, একটা আলাদাই ভালো লাগা কাজ করে ওর মনে,, তাই ওর থেকে একটু দূরে দূরে থাকে,,কিন্তু অরিন্দম এই ব্যাপারটা নিয়ে একটু বেশি বিরক্ত হয়ে যায়।

______________

অরিন্দম ব্লাক জিন্স, হোয়াইট শার্ট পড়েছে,,সে হাতা ফোল্ড করছে অনু তখন পিছন দিকে এসে বলল,,

_________বরবাবু তোমাকে সাদা পরলে খুব সুন্দর লাগে, অরিন্দম মুচকি হেসে বলল,, তাই,, অনু মাথা উপর নিচে করে হ্যাঁ বোঝালো,,, অরিন্দম অনুর পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে তাকিয়ে দেখল শাড়ি পড়লে তার বউ কে একটু বেশি সুন্দরী লাগে,,অনু মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে আছে, অরিন্দম অনুর পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হঠাৎ করেই টান দিয়ে অনুর খোপা খুলে দিয়ে চুল গুলো পিঠে ভালো করে ছড়িয়ে দিল,, অনু রেগে গিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো,

_____আলুর দম তুমি আমার চুল খুলে দিলে কেন? কত কষ্ট করে ঠিক করেছিলাম!

অরিন্দম অনুকে কাছে টেনে নিয়ে বলল,

_______ তোমাকে না বলেছি চুলগুলো সবসময় ছেড়ে রাখবে, খোলা চুলে তোমাকে বেশি সুন্দর লাগে টিয়াপাখি!

অনুর অরিন্দমের কথায় লজ্জা পেলো লজ্জা পেয়ে ও অরিন্দমের কাছ থেকে সরে আসতে গেলে অরিন্দম অনুকে দুহাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে কাছে টেনে নিয়ে বলল,

_____ তোমার মুখটা এমন লাল লাল হয়ে যাচ্ছে কেন?

অনু ঢোঁক গিলে বলল,

______ কোথায় লাল হয়ে যাচ্ছে তুমি জোরে ধরে আছো লাগছে তাই, অরিন্দম তাড়াতাড়ি করে ছেড়ে দেয় অনুকে,,অনু একটু দূরে সরে গেলে অরিন্দম আবার কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নিয়ে বলে,

______আমার পুচকি বউ এখন করে খুব লজ্জা পেতে শিখেছে, দেখো বউ এত লজ্জা পাবে না, আমার পুচকি বউ যেন পুচকি থাকে, যেনো যখন তখন আমাকে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত করে ফেলে,,,অনু ও বাধ্য মেয়ের মত মাথার নাড়ায়, অরিন্দম অনুর বাম গালে একটা চুমু দিয়ে বলল,

________”ওখানে গিয়ে সব সময় আমার হাত ধরে থাকবে হাত ছেড়ে একা কোথাও যাবে না কথাটা যেন মনে থাকে!”

__________________

দ্বীপের বাড়িতে এসেছে ওরা অনেকক্ষণ হলো সবার সাথেই পরিচয় করে অনু একটা চেয়ারে বসে জুস খাচ্ছে, দ্বীপের বাড়িতে বেশি কেউ আসেনি শুধু ছেলে ফ্রেন্ড আছে কয়েকজন আর তাদের ওয়াইফ আর কয়েকটা বাচ্চাকেও এনেছে, অরিন্দম কিছুক্ষণের জন্য অনুকে বসতে বলে দ্বীপের সাথে কথা বলতে গেছে, ও বাধ্য মেয়ের মতো একাই বসে আছে, আশেপাশে কেউ নেই,,, তখনই অরিন্দমের একটা ফ্রেন্ড অনুর সামনে এসে দাঁড়ায়,,, অনুর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,,

_______ হে বিউটিফুল কেমন আছো ?

অপরিচিত কারোর কণ্ঠের চমকে উঠে ওপর দিকে তাকিয়ে দেখে অরিন্দমের একটা বন্ধু ‘বিশাল’,,, একটু আগেই ওর সাথে পরিচয় হয়েছে,অনু আশেপাশে অরিন্দম কে খুজতে থাকে না দেখতে পেয়ে আবার সামনের দিকে লোকটার দিকে তাকিয়ে দেখা সে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিকে ওর দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে অনুর লোকটাকে দেখে ভালো লাগছে না, একটু আনইজি ফিল করে বলল,,

_______ভালো আছি দাদা ভাই!

বিশাল সামনের চেয়ারে বসলো, বিশালকে বসতে দেখে অনুর আরও অস্বস্তি হতে লাগলো অনুর এমন অবস্থা দেখে বিশাল বললো,,

______আরে অনু এরকম ভাবে আনইজি ফিল করছ কেনো?আমি অরিন্দমের খুব ভালো বন্ধু, ইনফ্যাক্ট ও আমাকে ওর দাদার মতই দেখে,, আমি তোমাদের বিয়ের দিন কেও ছিলাম, আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই চিনি, আর অরিন্দম যে আমার থেকে ছোট তাই আমি তোমাকে নাম ধরে ডাকবো ।। তারপর অদ্ভুত হেসে বলল,,

_______ আর তাছাড়া এত বিউটিফুল লেডি কে আমি অন্য কিছু বলে ডাকতে পারবো না। ইউ আর সো বিউটিফুল এন্ড সুইট,,

অনু চারিদিকে অরিন্দম কে খুঁজতে থাকে তার যেন একা থাকতে ভয় করছে, তাড়াতাড়ি করে বলে,,,

_____আপনি বসুন আমি একটু আসছি, বলে এক সেকেন্ড ও না বসে উঠে আসে,, কিন্তু এসে কোন লাভ হল না অনু কোথাও অরিন্দম কে দেখতে পাচ্ছে না, তার এবার ভীষণ কান্না পাচ্ছে,,,হঠাৎ করে পিছন থেকে কেউ ওর শাড়ী ভেদ করে পেটে হাত দিয়ে চেপে ধরে,,ও চমকে ওঠে পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে বিশাল,কেমন অদ্ভুত চাউনি দিয়ে হেসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে,,, ও কোনো কিছু না ভেবেই একটা চড় বসিয়ে দেয়, রাগে ভয়ে ও সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে,বিশাল গালে হাত দিয়ে চোখ মুখ লাল করে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে,অনু কিছু বলতে যাবে তার আগেই বিশাল ওর হাত শক্ত করে ধরে বাড়ি বাইরে ফাঁকা জায়গায় টেনে এনে দাঁড়ায় অনু হাত ছাড়ার জন্য মোচড়ামুচড়ি করে কান্না করে যাচ্ছে, বিশাল ওর হাত শক্ত করে ধরে, ওর গাল চেপে ধরে বলে,,

________ তোর সাহস তো কম না আমার গায়ে হাত তুলেছিস,,, আজ তোর ভয়ঙ্কর ক্ষতি হবে,,,

অনু কেঁদে কেঁদে বলছে আমাকে ছাড়ুন বলছি,, যেতে দিন আমাকে ,,, বিশাল ওর মুখের সামনে ঝুঁকে বলে,,

_____ একটু আগে তো খুব সাহস দেখাচ্ছিলিস না এখন কি হল? এবার দেখ তোর কি করি।।।

অনু ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তা সারা শরীর ভয়ে কাঁপছে ভয়ে পেয়ে এবার হুহু করে কেদে চারিপাশে ভালো করে অরিন্দম কে খুজতে থাকে,বিশাল ওকে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ওর মুখের সামনে ঝুঁকে যেতে থাকে অনু কাঁদতে কাঁদতে লাস্টে বিশালের হাতে একটা কামড় বসিয়ে পা দিয়ে লাথি দেয় ব্যাথা পেয়ে ওকে ছেড়ে দিতে অনু দৌড়াতে থাকে,

____________অনেকটা দৌড়ানোর পর হঠাৎ করে কারো বুকের সাথে ধাক্কা লেগে দাঁড়িয়ে যায়, সামনে অরিন্দম হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে অনুর দিকে তারপর কি হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করছে, ওকে দেখে অনু জড়িয়ে ধরে হু হু করে কাঁদতে থাকে, অরিন্দম ওকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ভীত গলায় জিজ্ঞাসা করছে,,

_______কি হয়েছে তোমার এমন অবস্থা কি করে হল?

অনু অনেক কষ্টে জড়ানো গলায় বলল,

_____ ওই লোকটা আর কিছু বলার আগেই বিশাল দৌড়ে অনুকে ধরতে আসে তারপর অরিন্দম কে দেখে ভয়ে দাঁড়িয়ে যায় বিশালকে এমন ভাবে আসতে দেখে অরিন্দমের আর বুঝতে দেরী হল না বিশাল কি করতে চাইছিলও কারন ও এমন আগেও ঘটনা ঘটে ছিল,, কিন্তু ওরা কেউ বিশ্বাস করেনি,, কিন্তু আজ ,,, অরিন্দম অনুকে ছেড়ে ওকে দাঁড় করিয়ে বিশালের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে চিৎকার করে বলল,

_______ তোর সাহস কি করে হল ওর সাথে এমন ব্যবহার করা, বলে এগিয়ে গিয়ে মুখে একটা ঘুষি মারে,,, বিশাল নিচে পড়ে যায়, অরিন্দম আবার ঝুঁকে ওর ঘাড় ধরে,

_________বিশাল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলতে থাকে আমি কিছু করিনি সব দোষ তোর বউ এর ওই আমাকে,,, বিশাল এর পুরো কথা শেষ করার আগেই অরিন্দম হুংকার দিয়ে বলে,,,,, জাস্ট সাট অপ,, মিথ্যে কথা বলা বন্ধ কর,,, ছিঃ নিজের দোষ তুই আমার বউয়ের নামে দিচ্ছিস, বলে ওকে কয়েকবার মুখে অনবরত ঘুষি মারতে থাকে ইতিমধ্যে দ্বীপ এবং সমস্ত বন্ধুরা এসে বিশালের কাছ থেকে ছাড়ায় অরিন্দম কে,,, অরিন্দম যেনো নিজের মধ্যে নেই সে যেনো বিশাল কে মেরে ফেলতে চায়,,,,আর বিশাল সে হিংস্র দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে যার মধ্যে আছে প্রতিহিংসা আগুন,যে সে এর ফল অনুকে দেবেই,,,,, অনু কেঁদে চলেছে দ্বীপের বউ ‘পায়েল’ ওকে জড়িয়ে ধরে আছে ,,অরিন্দম অনুর কাছে গিয়ে দাড়ায় অনু আবারো জোরে জোরে কেঁদে ওঠে,অরিন্দম ওকে কোলে তুলে নিয়ে এসে গাড়িতে বসিয়ে এক হাতে জড়িয়ে নিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে,,, আর বলতে থাকে,

_________প্লীজ রিলাক্স, আর কেঁদো না আমি তো আছি এখন তোমার সাথে, কিছু হবে না আর,,,

_______কিন্তু কোনো কিছুতেই অনু থামছে না সমানে কেঁদে চলেছে, অরিন্দম কিভাবে চুপ করাবো সেটাই ভেবে পাচ্ছেনা!!

#চলবে

#হবে_কি_আমার💞
#writer_Ruhi_mondal
#পর্ব_15

অরিন্দম বাড়ি ফিরেছে পঁচিশ মিনিট হলো, কোন কিছুতেই অনুকে চুপ করানো যাচ্ছে না,, সেই থেকে অরিন্দম কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে চলেছে, ওকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে আসে ও, অরিন্দম ও অনেকটাই ভয় পেয়ে আছে,,,ওকে রুমে এনে খাটে বসাতে ও অরিন্দম কে কাঁকড়ার মত জড়িয়ে বুকে লেপ্টে আছে, যেনো ছেড়ে দিলেই অরিন্দম ওকে রেখে চলে যাবে,, অনেকটা সময় পর অনুকে জোর করে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে সামনে বসিয়ে মলিন কন্ঠে বলল,

________বউ আর কেঁদোনা আমি তোমার সাথেই আছি আর ভয় পেয়োনা!

অনু কাঁদতে কাঁদতে নাক টানতে টানতে বলল,,

_____বরবাবু তুমি আমাকে রেখে তখন চলে গেলে কেন? ওই লোকটা আমার সাথে কেমন ব্যবহার করল, ওই লোকটা আমার পেটে কেমন ভাবে হাত দিয়েছিল, তারপর একটু থেমে হেঁচকি তুলতে তুলতে বলল,, আর আমার হাত খুব জোরে চেপে ধরে নিজের বুকের কাছে নিয়ে ছিল আর আমার মুখের কাছে ঝুকে এসেছিল ,, ওই লোকটা এমন করল কেন? খুব খারাপ খুব।। বলে আবার অরিন্দম কে জড়িয়ে ধরে।।

অরিন্দম অনুকে কি বলে বোঝাবো সেটাই ভেবে পাচ্ছে না,, তার জন্য যে এমন কিছু হতে যাচ্ছিল,, অরিন্দম অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,,

_____বউ সব মানুষ সমান হয় না, বাইরে বার হলে তোমাকে হাজার লোক কে সাথে নিয়ে চলতে হবে তাই তোমাকে ভালো করে বুঝতে হবে কে ভালো আর কে খারাপ,,,, আর তোমাকে কেউ বাজে ভাবে দেখলে বা স্পর্শ করে তুমি তোমার সবটা দিয়ে প্রতিবাদ করবে, আজ যেমন চড় মেরেছিলে,ঠিক সেই ভাবেই তোমাকে যদি আবার কেউ খারাপ ভাবে হাত ধরে তুমি তাকে চড় মারতে দ্বিধা বোধ করবে না, যদি তাতেও সে না শোনে তাহলে নিজেকে বাঁচাতের কাছে যা পাবে তাই দিয়ে তাকে আঘাত করবে,, বউ নিজেকে কখনো দুর্বল ভাববেন না,আমি আশে পাশে থাকি কিংবা না নিজেকে নিজেই রক্ষা করতে হয়।।

কিন্তু অরিন্দম এর কথা অনু আদেও বুঝলো কি কে জানে।‌

অনু অরিন্দম কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,,,

________বরবাবু তুমি আবার আমাকে রেখে চলে যাবে? আমি আর বাইরে যাব না ,,কোথাও যাবনা আমি।।

অরিন্দম এখন ভালোভাবেই বুঝতে পারছে অনু এখন খুব ভয় পেয়ে আছে ওর কোনো কথা শুনবে না, তাই সে অনুকে বলল,,

________ঠিক আছে বউ আমি তোমাকে আর একা ছাড়বো না, কিন্তু এবার তুমি চুপ করো প্লিজ,আর যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও মুখটা দেখো ভূতের মত হয়ে গেছে, অরিন্দমের কথায়, অনু আয়নায় দেখল সত্যি কাজল লিপস্টিক সব লেপ্টে আছে,, কিন্তু সে তবুও বসে রইল,, অরিন্দম বুঝতে পেরে অনুকে কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।।

___________________

আকাশে আজ গোল চাঁদ উঠেছে,, তারমধ্যে রাশি রাশি তারা মিটি মিটি করে জ্বলে যাচ্ছে,, চারিদিকে জোনাকি পোকা উড়ে বেড়াচ্ছে, নিঃশব্দতার মধ্যে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক সুরের মত ভেসে আসছে কানে,, একটা বড় মাঠের ঘাসের উপর বসে আছে “অনুরাগ” আশেপাশে কেউ নেই বললেই চলে,, কিছুটা দূরে রাস্তায় কাউকে শুয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে,, হয়তো কেউ নেই তার,বা থেকেও একা সে,, মাঠের আশে-পাশের লাইট নেই জ্যোৎস্নার আলোয় আলোকিত হয়ে আছে,অনুরাগের মন যখন খুব ভার হয়ে থাকে সে তখন এখানে এসেই বসে থাকে, মা নেই দশ বছর বয়সে হারিয়েছে তাই পড়াশোনায় পিছিয়ে পরেছে,,ও বাবা কাছেই মানুষ,, বাবা বিজনেসম্যান,,, তাকে সময় খুবই কমই দেয়, বয়সটা খুব একটা নয় অনু থেকে এক দেড় বছরের বড় হবে,, এই ষোলো সতেরো বছরের ছেলে মেয়েরা একটু বেশি উতলা হয় সব কিছুতে, অনুরাগের অনুকে মনে ধরেছে, অনুর দুষ্টু মিষ্টি বোকা বোকা কথা সে তার প্রেমে পড়েছে, কিন্তু অনু কয়েক মাস তার সাথে ভালো করে কথা বলে না, এই নিয়ে ওর মনটা বড় উদাস হয়ে আছে, ও নিজের মায়ের পর প্রথম কোন মেয়েকে ভালবেসেছো, অনুকে ভালোবেসে নাম ও দিয়ে ফেলেছে” পুতুল পরি “এটাও ঠিক করে নিয়েছে এবার যেদিন দেখা হবে ওই দিনই ওকে প্রপোজ করবে, তারপর জমিয়ে কয়েক বছর প্রেম করার পর বিয়ে করে ঘরে তুলবে , আগেই বললাম এই বয়সে প্রেমে পড়া মানে হাজারো স্বপ্ন বোনা হয়ে যায়,,,, আর তাকে না পেলে হাজার মানুষ থাকলেও নিজেকে নিঃস্ব মনে হয়,, মনে হয় তাকে পাওয়া জন্য সব করতে পারি সব তবুও তাকেই চাই!! তাকে না পেলে বেঁচে থাকাটা অর্থহীন।।। পকেট থেকে ফোনটা বার করে গ্যালারিতে গিয়ে একটা ফটো দেখতে থাকে অবশ্য অনুর ফটো ব্লাক কালার সালোয়ার পড়ে আছে মাথা নিচু করে বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে এলোমেলো চুলগুলো মুখে ডান সাইডে পড়ে কপালে কিছু লেপ্টে আছে,অনুরাগ তাকিয়ে মুচকি হেসে ফটোটা অনুর মুখে একবার হাত বুলিয়ে তারপর বলে,

________কি আছে তোমার মধ্যে এত? যা আমাকে এত করে টানে, তোমার নেশায় পাগল করেছে আমায়, আমিও জানি তুমি একদিন না একদিন আমাকে ভালোবাসবেই, আমি বাধ্য করবো আমাকে ভালবাসতে, খুব মিস করছি তোমাকে খুব মিস করছি তোমাকে আমার ছোট্ট পুতুল পরি। বলে ঘাসের উপর ফোনটা বুকে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো অনুরাগ। তার মনে যে প্রথম প্রেমের সূচনা হয়েছে।। উপসংহারে সে শুধু অনুকেই চায়।।

______________

মধ্যে রাতে একটা বারে সোফায় শুয়ে আছে বিশাল,, আশেপাশে তারই মত আরো সব নেশাখোর ঢলে পড়ে শুয়ে আছে, বিশাল একবার করে মদের বোতলে চুমুক দিচ্ছে,, অরিন্দমের ওপর প্রতিশোধের আগুন তার চোখ দিয়ে আগুন জ্বলসে পরছে, মাথায় ব্যান্ডেজ করা ঠোঁট কেটে রক্ত বের হয়ে শুকিয়ে গেছে,,তখন অরিন্দম বেরিয়ে যেতে বিশাল ও আহত হয়েই গাড়ি নিয়ে ওইখান থেকে বেরিয়ে গেছিল ,, ওর যে ওখানে মুখ দেখানোর সুযোগ ছিল না, আজ যে ওর সব কুকীর্তি ওদের কাছে ফাঁস হয়ে গেছে, এর আগেও এমন অনেক কুকর্ম করেছে, কিন্তু টাকার জোরে সব ধামা চাপা পড়েছে,আর ওদের বন্ধুত্বের মধ্যে বিশ্বাস ছিল বলেই কেউ কোনদিন সন্দেহ করেনি, কিন্তু আজ একটা পুচকি মেয়ের জন্য সবার কাছে ও ধরা পড়ে গেছে, তাকে যে এর দাম দিতেই হবে ,,দিতেই হবে এর দাম, ও “বিশাল বর্মন” এর গায়ে হাত তুলছে তার প্রতিশোধ যে ও নেবেই!! ওর চোখ বাজপাখির চোখ, যদি একবার শিকারের ওপর পরে সেটা শিকার করেই ছাড়ে।

______________

অরিন্দম অনুকে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে আছে, অনু ইঁদুর ছানা মত ভয়ে ওর বুকে লেপ্টে আছে,, কান্না করার কারণে একবার করে কেঁপে উঠছে,অরিন্দমের খুব চিন্তা হচ্ছে অনুকে নিয়ে আজ যদি কিছু হয়ে যেত তাহলে কি হত?আর ওর মনে হচ্ছে অনু এত সহজে ওটা ভুলতে পারবে না, ওর মাইন্ড চেঞ্জ করার জন্য, ওকে কিছুদিন গ্রামের বাড়িতে কাকাই- কাকিয়ার কাছ থেকে ঘুরে আনলেই হয়,অরিন্দম ভাবলে এটাই ঠিক হবে ওকে নিয়ে ঘুরে আসাই বেটার,এই ভেবেই ও অনুর মুখের দিকে একবার তাকাল,অনু ঘুমিয়ে আছে কিন্তু একবার করে কেঁপে উঠছে,অরিন্দম অনু মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজিয়ে নিল।।

_____________

অরিন্দম আর অনু দুজনের কেউই জানে না তাদের জীবনে বিপদের সূচনা হয়ে গেছে,,, এখন অপেক্ষা শুধু সময়ের,,হঠাৎ যেমন ঝড়ের সমস্ত কিছু ওলট পালট করে দিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়ে অনেকের জীবনের সব কিছু কেড়ে নিয়ে নিঃস্ব করে যায়,,, ঠিক তেমন ভাবে তাদের জীবনেও এরকম এক কালবৈশাখী ঝড় এগিয়ে আসছে যা তাদের জীবন সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করে দিতে পারে।

#চলবে