হবে কি আমার পর্ব-১৮+১৯

0
6128

#হবে_কি_আমার💞
#writer_Ruhi_mondal
#পর্ব_18

প্রবল বেগে বাইরে ঝড় উঠেছে, বৃষ্টি সমান ছন্দে হচ্ছে,, আকাশে মেঘের আওয়াজ বা বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে না,, শুধু মুষুলধারে বৃষ্টি নামছে,, ঠিক তেমনই অনুর চোখ দিয়েও বৃষ্টির মতো শ্রাবণ ধারা বয়ে চলেছে,, চোখ মুখ কান লাল হয়ে উঠেছে,, কেঁদে কেঁদে চোখের জলে বুকের কাছে ওড়নাটা ও ভিজে গেছে ,, অরিন্দম বেচারা চুপ করে তার বউয়ের কান্না দেখছে,, অনু কাঁদছে আর একবার করে নাক টানছে,হাতে স্যাভলন তুলো নিয়ে অরিন্দমের কপাল এককোনে ওয়াজ করে দিচ্ছে, তারপর কাঁদতে কাঁদতে জড়ানো গলায় বলল,

________ কি করে রাস্তায় হাঁটছিলে? পোরে কি করে গেলে?দেখো কত রক্ত বার হচ্ছে,এখন যদি তোমাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় তখন কি হবে?

অরিন্দম ফিক করে হেসে দিল,, তার কপালটা সামান্য কেটে গেছে তাই অনু সেটার একটা অপরশন করে দিতে চাইছে,, আসলে হয়েছে কি অফিস থেকে বাইরে নতুন একজায়গায় বসের সাথে মিটিংয়ে গেছিল,, মিটিং শেষ বাইরে বার হয় ফোনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি দিকে যাওয়ার সময় সামনের দিকে না তাকানোই ফলে অসাবধানতার কারণে ল্যাম্পপোস্ট এর সাথে ধাক্কা খায় আর তারই ফলে সামান্য কেটে যায়,হাতে সময় না থাকায় রুমাল চেপে বাড়ি ফিরে এসেছে,, সেই দেখে অনুর এত পাগলামি, অরিন্দম হাসি থামিয়ে বললো,,

_____আমার বেশি লাগেনি সামান্য কেটে গেছে তুমি এত কাঁদছো কেন প্লিজ চুপ করো।

অনু কাঁদতে কাঁদতে বলল,,

___লাগেনি তো এতো রক্ত কেন বার হচ্ছে তোমার? বলে ভালো করে ওয়াজ করে দিয়ে কপালে একটা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেয়,,

অরিন্দম অনুকে টেনে নিয়ে কোলে বসিয়ে বলল,,

_______ আচ্ছা লাগছে আমার না তোমার?আমার কাঁদার কথা তুমি নিজে ফ্যাচফ্যাচ করে কেঁদে চলেছ।

অনু নাক টানতে টানতে বললো ,,

_____তোমার কষ্ট হলে, আমার ও তো কষ্ট হয়।

অরিন্দম অনুকে জড়িয়ে ধরে বলল,,

_____”আচ্ছা তাহলে আমার বউ আমাকে এতটা ভালোবাসে!”

অনু কিছু বললোনা চুপ করে বসে রইল,

অরিন্দম অনুর চোখের জল মুছে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,

_______আর কাঁদতে হবে না বউ এখন ঠিক আছি।

অনু আবার কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,

______”তুমি সত্যি বলছো তো বরবাবু তোমার কষ্ট হচ্ছে না?”

অরিন্দম মাথা দুদিকে নাড়িয়ে না বোঝার,

অনু একটু চুপ করল,,

অরিন্দম ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,,

_______”বউ ভালোবাসো?”

অনু অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইল,অরিন্দম তো কোনদিন তাকে এই কথাটা জিজ্ঞাসা করেনি তাহলে আজ কেন জিজ্ঞাসা করল? সে কি জানে না ও তাকে কতটা ভালোবাসে?

অরিন্দম আবার জিজ্ঞাসা করলো,,

____ কি হল বলো?

অরিন্দম জানে ওকে অনু কতটা ভালোবাসে, কিন্তু ইদানিং অনু মুখে বলে না,, আর সেই জন্য ও আজ জানতে চাইল।

অনু শান্ত গলায় বলল,,

______”না!”

অরিন্দমের হাতের বাঁধন আলগা হয়ে গেল, অনু ওঠে দাড়াতে,অরিন্দম ও উঠে দাঁড়াল,,অনু মুখে না শুনে ওর বুকটা যেন কেমন করে উঠলো,,,অনু ওর কাছ থেকে সরে দৌড়ে রুমের বাইরে চলে গেল,, অরিন্দমের মুখে অন্ধকার নেমে এলো,অনু আবার দু সেকেন্ডের মধ্যে তড়িৎ বেগে রুমে দৌড়ে এসে অরিন্দম কে জড়িয়ে ধরে বলে,

__________”ভালোবাসি বরবাবু তোমাকে, অনেক বেশি ভালোবাসি!”

অরিন্দম কিছুক্ষণ ফ্রিজড হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে অনুকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলল,

________”বউ আর যাই হোক তুমি প্লিজ কখনো ভুলেও আমায় ভালোবাসো না এই কথাটা বলবে না,,তাহলে সেই ব্যথা আমি সহ্য করতে পারবো না,

অনু মুখ ফুলিয়ে বলল,,

_______”তুমি তাহলে জেনেও জিজ্ঞাসা কেনো করলে?”

অরিন্দম চোখ বুজে বলল,,

_______”আমি যত শতবার তোমাকে এই প্রশ্ন করব তুমি ততো শতবার আমাকে ভালোবাসি কথাটা বলবে এই ছাড়া অন্য কিছু নয়!”

___________________

পুরো রুমে অন্ধকার ছড়িয়ে আছে ঘরে একটু আলো কোথাও থেকে ডুকছে না,, ফ্লোরে বসে খাটের এক কোনায় পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে অনুরাগ, ঝাঁকড়া চুলগুলো উসকো খুসকো হয়ে আছে, যেনো মাথার ওপর দিয়ে ঝড় উঠেছিল,, উজ্জল শ্যামলা বর্নের ছেলেটা মুখ চোখটা রক্তিম বর্ণ ধারণ করে আছে, নিজের মনে কি সব বিড়বিড় করে যাচ্ছে অনেকক্ষন থেকে, তারপর হঠাৎ করে উঠে দাঁড়িয়ে খাটের লম্বা হয়ে শুয়ে পরলো, পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে গ্যালারিতে গিয়ে অনুর ফটো বের করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল,,,ছবি দেখতেই তার চোখমুখ স্বাভাবিক হয়ে উঠলো, ছবিতে হাত বুলিয়ে বলল,,

_________ জানি “পুতুলপরী” তুমি অন্য কারোর বউ, জানি তোমার স্বামী আছে, তবু আমার তোমাকেই চাই,, আর আমিও জানি তুমি এই বিয়েতে খুশি না,,, তুমি ভালোবাসো না ওই লোকটাকে,,,, আর যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে কোনো সম্পর্কের মানেই হয়না,,, আমি তোমাকে ভালোবাসি,,,এই দুই বছর আমি শুধু তোমাকেই ভালবাসি আর, আগামী দিনে তোমাকে খুব ভালবাসবো, তোমাকে নিয়ে আসবো ওই লোকটার কাছ থেকে, তুমি শুধু আমার হবে,,,,,তিশা আমাকে বলেছে তোমার ছোটবেলার বিয়ে হয়েছে, আর বিয়েটা জোরজবরদস্তিতে হয়েছে, তাই এই বিয়েতে তোমার থাকার কোনো প্রয়োজন নেই,,,,তুমি আমার কাছে থাকবে,,,শুধুই এই অনুরাগ এর কাছে!

____________________

আজ আবার বাইরে বৃষ্টি নেমেছে, অনু কিচেনে টুলের উপর বসে আছে, আর অরিন্দম অনুর জন্য চিকেন পকোড়া করছে, অনু রান্না কোনোকালেই জানতো না,মামি বাড়িতে একবার রান্না করতে গিয়ে রান্নাঘরে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছিল সেইজন্য ওর মামী রান্না বাদে ওকে সব কাজ করা তো আর এইখানে অরিন্দম ওকে কিছু করতে দেয় না,,, তাই ওর ও রান্না শেখা এখনো পর্যন্ত হয়ে উঠেনি,,,

অনু পকোড়া খেতে খেতে বলল,,

_______”জানো বরবাবু বৃষ্টি হলে সবচেয়ে বেশি খুশি কে হয়?”

অরিন্দম মাথা নাড়িয়ে বলল,, “জানিনা তুমি বলো?”

অনু এক গাল হেসে বলল,,

________”ময়ূর বেশি খুশি হয়, বৃষ্টির প্রতিটা ছন্দে ময়ূর একটা সুর পায় আর তাই সে নিত্য করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে,,, ময়ূর খুশি হয়ে পাখনা মেলে কি সুন্দর নিত্য করে বলো?”

অরিন্দম মুচকি হাসলো,,

অনু টুল থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বললো,,

______ তুমি এখানেই থাকো আমি একটু আসছি বলে অরিন্দম কে কিছু না বলতে দিয়ে এক দৌড় লাগালো, অরিন্দম পিছনে ডাকলো তবুও কে শোনে কার কথা।

প্রায় অনেকক্ষণ সময় হয়ে যাওয়ার পর অরিন্দমের সব পকোড়া তৈরি , কিন্তু অনুর কোনো পাত্তা নেই তাই গ্যাস অফ করে দিয়ে অনুকে খুঁজতে ওপরে গেল কিন্তু কোনো লাভ হলো না ও রুমে নেই পাশের রুমে গিয়ে ও পেল না, অরিন্দম বউ বউ ডেকে সাড়া না পেয়ে একটু ঘাবড়ে গিয়ে নিচের দিকে যাবে তখনই ছাদ থেকে অনুর গলা পেল অরিন্দম সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গিয়ে দেখল অনু বৃষ্টিতে ভিজেছে বৃষ্টির ছন্দে ছন্দে নেচে বেড়াচ্ছে , একটু আগেই ময়ূরের কথা বলছিল, এখন সেও ঠিক তারই মতো নেচে বেড়াচ্ছে ছাদে,,,অরিন্দম ওকে আটকাতে গিয়েও থেমে গেল অনু কে খুব খুশী দেখাচ্ছে তাই সে তাকে বাধা দিল না বৃষ্টিতে ভেজার জন্য, ছাদে হয়তো পাইপে কিছু সমস্যা হয়েছে সেই জন্য জল জমাট বেঁধে আছে, অনু জল নিয়ে পা দিয়ে ছুড়ে দিচ্ছে,অরিন্দম কে দেখতে পেয়ে খুশি হয়ে এগিয়ে এসে হাত জড়ো করে মুঠো ভর্তি জল নিয়ে অরিন্দমের গায়ে ছিটিয়ে দিয়ে বলল,,

________ বরবাবু এসো না দুজনে একসাথে বৃষ্টিতে ভিজি,, বলে হাত ধরে অরিন্দম কে ছাদের মাঝখানে নিয়ে দাঁড়িয়ে,, খিলখিল করে হেসে হাতে জল নিয়ে বারবার অরিন্দম কে ছুড়ে মারছে, অরিন্দম এবার হাতে করে জল নিয়ে অনুর দিকে দৌড়ে যায় জল ছুড়ে মারবে বলে,, কিন্তু হলো উল্টোটা,, অনু জল জমার জায়গায় গিয়ে পা মচকে পড়ে যায়,, অরিন্দম দৌড়ে গিয়ে হাঁটুতে ভর দিয়ে এক হাতে ধরে বসিয়ে দেয় ,,

অনু নালিশের সুরে বলল,,

________”বরবাবু তোমার জন্য আমি পড়ে গেছি তুমি আমাকে কেন দৌড় করালে?”

অরিন্দম অনুর বাহু ধরে নিজের বুকে সাথে জড়িয়ে বলল,,

______”সরি সরি আর এমন হবেনা, তোমার কি খুব লেগেছে? কোথায় লেগেছে? কোথায় ব্যথা পাচ্ছ বলো?

অনু অরিন্দমের দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরে বলল,,

______আমার বেশি লাগেনি বরবাবু, বলে অরিন্দমের বাম গালে একটা চুমু দিয়ে দেয়, অরিন্দম অনুর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে,,অনু অরিন্দম এমন ভাবে তাকিয়ে থাকাতে দেখে এবার একটু লজ্জা পেয়ে গেল,,, লজ্জা পেয়ে চোখ নিচের দিকে নামিয়ে নিল,,, অনুর চুলের ডগা ছাদে জমাট জলে ভিজে অর্ধেক ডুবে আছে, অরিন্দম হাঁটুতে ভর দিয়ে কাত হয়ে অনুকে বাঁ হাতে জড়িয়ে ধরে আছে, অরিন্দম এর মুখের এতটাই কাছে আছে ও যে বৃষ্টির ফোঁটা তার মুখে পড়ছে না বরং অরিন্দমের চুলে আর মুখে জল অনুর মুখে টপটপ করে পড়ছে,, অনু নিভু নিভু চোখের অরিন্দমের দিকে আবার তাকায়, অরিন্দম ঘোরলাগা দৃষ্টিতে অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, অরিন্দমের দৃষ্টিতে লজ্জায় অনুর গাল লাল লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে,বৃষ্টির জলে ভিজে আর এমন দৃষ্টিতে অনুর হার্ট খুব দ্রুত শব্দ করছে,, অনু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,

_______”বরবাবু চলো নিচে যাই!”

অরিন্দম ওর মুখের কাছে ঝুকে গিয়ে অনুর ভিজে বাম গালে নিজের ভিজে ঠোঁট জোড়া ছুঁয়ে দেয়,,,তারপর কানের কাছে ফিসফিস করে নেশা ভরা কন্ঠে বলল,,,

_______”টিয়াপাখি আজ বড্ড ইচ্ছে করছে মধুর ভান্ডারে ডুব দিতে, আমি কি সেই অনুমতি পাব? প্লিজ!”

অরিন্দম এর কন্ঠে অনুর কম্পন মাএ যেন আরো বেড়ে গেল, অরিন্দম ওর চোখের দিকে তাকাতে অনু চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়,, তার ঠোটজোড়া অত্যাধিক মাথায় কম্পন শুরু হয়ে গেছে,,,শরীরের ভারসাম্য পুরোটাই অরিন্দমের হাতে ছেড়ে দিয়েছে,, অনুর নীরবতাকে সম্মতির ভেবে, অরিন্দম অনুর ভেজা ঠোঁটযুগল কিছুক্ষণ নেশা ভরা চোখে দেখতে থাকে তারপর তড়িৎ গতিতে অনুর মধুভাণ্ডার হানা দেয়, অনু সঙ্গে সঙ্গে চোখ জোড়া খুলে বড় বড় করে তাকায়, অরিন্দম তৃপ্তি ভরা চোখজোড়া বুজে রয়েছে,,অনু ও আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ করে অরিন্দমের শার্ট খামছে ধরে!

বৃষ্টির গতি তুমুল বেগ ধারণ করেছে, জমা জলের অনুর ডুবে থাকা লম্বা চুলের ডগা ভেসে ভেসে উঠছে আর সেগুলো বৃষ্টির ফোটা পড়ে টাপুর টুপুর সুরে নিত্য করে এদিক ওদিক ভেসে বেড়াচ্ছে,,,, বৃষ্টির গভীরতার সাথে প্রেমযুগল শালিকের জোড়ার ও ভালোবাসার গভীরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ।।

!
!
!

#চলবে

#হবে_কি_আমার💞
#writer_Ruhi_mondal
#পর্ব_19

মুষলধারে দীর্ঘকয়েক ঘন্টা ভারী বৃষ্টির পর, আকাশটা যখন স্বচ্ছ নীল আর সাদা রূপ ধারণ করে,, প্রকৃতির চারিপাশে এক অদ্ভুত শীতল,, প্রাণবন্ত স্বচ্ছ চকচকে কাঁচের মত পরিস্কার পরিবেশ দেখা যায়,, গাছ গুলো দেখে মনে হয় যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে তারা, প্রতিটি গাছের পাতা ও ফুলের মধ্যে যে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির জল জমে থাকে, সেগুলো যখন ঝড়ো হাওয়ায় গাছ থেকে ঝিরঝির ঝরে পড়ে এক অদ্ভুত সুর কানে ভেসে আসে,, ভারী বৃষ্টির ফলে ঝিলের জল পুরো উবুচুবু হয়ে আছে,,বক গুলো সরু নালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে ছোট ছোট মাছ ধরে খাবে বলে,ঝিলের পারে শুকনো মোটা গাছ শুইয়ে পরে আছে তার মধ্যে মাছরাঙার আর পানকৌড়ি পাখি বসে আছে, জলের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে শিকারের উদ্দেশ্যে, হয়তো মাছ নিয়ে এবার তারা বাসায় ফিরবে,আরো কত পাখির হয়তো সব বাসা ভিজে গেছে, তারাও ভিজে গাছের ডালে ডালে বসে গা থেকে জল ঝেড়ে ফেলছে, কখনো সরু ঠোট দিয়ে নিজের ডানাগুলো থেকে জল ছেড়ে ফেলার চেষ্টা করছে,,প্রকৃতি এক অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছে অনু, সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছিল,, বিকেলে একটু থেমেছে,, সূর্য উঠেছে আবার,, ও ছাদে এসে চারিদিকে মন ভরে দেখছে,, আর অরিন্দম রুমে বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছে,দেখতে দেখতে একেঅপরের সাথে ওরা আড়াই বছরের বিবাহিত জীবন পার করে ফেলল,, কিন্তু আজও তার প্রথম দিনের মতোই অরিন্দম কে লাগে,, অরিন্দম ও ওর সেই পুচকি বউ কে পুচকি ভেবে চলেছে, অনু ছাদে এসে মন ভরে সুন্দর প্রকৃতি উপভোগ করছে ছাদে রাখা টপের মধ্যে লজ্জাবতী গাছের কাছে গিয়ে দাড়ালো ও তারপর হাত দিয়ে সামনে টপের লজ্জাবতী গাছের পাতায় হাত দিয়ে ছুয়ে দিল,সঙ্গে সঙ্গেই পাতাগুলো যেন কত লজ্জা পেয়ে মুরে গেল দেখে হাসলো ও তারপর আবার একই কাজ করলো, এমন করে যেন ও কি মজাই না পাচ্ছে,,,,অরিন্দম অনেকক্ষন থেকে পিছনে এসে দাঁড়িয়ে ওর এই খেলা দেখছে, তারপর ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল,,, অনু খানিকটা চমকে গেল, তারপর বুঝতে পেরে অরিন্দমের হাতের উপর হাত রেখে বলল,,

____বরবাবু তুমি এখন করে আমাকে হঠাৎ হঠাৎ জড়িয়ে ধরে চমকে দাও কেন?

অরিন্দম অনুর কাঁধে থুতনি রেখে বলল,,

_____তোমাকে চমকে দিতে যে আমার বড্ড ভালো লাগে, তবুও তো আমি সামান্য চমকে দিই আর তুমি যখন আমাকে চমক দিতে তখন তো আমার ছোটোখাটো হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেত।।

অনু শুনে লজ্জামাখা হাসি দিল,, সত্যিই কত পাগল ছিল ও, কিন্তু দিন গুলো খারাপ ছিল না বেশ মজার ছিল,,, প্রতিটা স্মৃতিই অসাধারণ।।

অরিন্দম অনুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওর গালে দু হাত রেখে বলল,,

______তোমার লজ্জা মাখা হাসিটা যে আমার দেখতে খুব ভালো লাগে,,, আর তা দেখলেই আমার বেশি বেশি করে তোমাকে তারপর অরিন্দম আরো কিছু বলতে যাবে, পাশে কদম গাছে বসে থাকা কাকটা তার বিরক্তিকর সুরে কা কা করে উঠলো,, অরিন্দম কাকটার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত বোধ করলো,

অনু হেসে বললো,

_____বরবাবু এখানে কাক না হয়ে কোকিল হলে কি সুন্দর মিষ্টি ধ্বনি কানে আসতো বল?

অরিন্দম হতাশায় নিশ্বাস ফেলে বলল,,

____হ্যাঁ কাকে বিরক্তিকর কন্ঠের থেকে কোকিলের কুহু কুহু খুব মিষ্টি ধ্বনি এক আলাদা পরিবেশ সৃষ্টি করে, এক রোমান্টিকতা,, তারপর অনুকে কাছে টেনে নিয়ে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে ওর নাকে নাক ঘষে বলল,,

_____ জানো বউ বিকেলে এই মিষ্টি রোদের সোনালী আলো তোমার গায়ে পড়তে তোমাকে আরো সুন্দর লাগছে। মনে হয় যেনো

অনু যেনো অরিন্দমের কথায় লজ্জা পেয়ে যাচ্ছে,সে মুচকি হেসে বলল,,

_____বরবাবু তুমি এখন করে এই বাচ্চা মেয়েটা সাথে একটু বেশি ফ্লার্ট করছো!

অরিন্দম ওর কপালে কপালে ঠেকিয়ে বলল

____বাচ্চা মেয়ে বলে ফ্লার্ট করছি, বড় হলে অন্য কিছু করতাম, বলে চোখ টিপ দিল,,

____ অনু বিষ্ময় হয়ে চোখ বড় বড় করে অরিন্দমের দিকে তাকিয়ে আছে এ কি ছেলে ও একটু বুঝতে শিখেছে বলে যখনতখন লজ্জা ফেলে ওকে ,,,

অরিন্দম মুচকি হেসে অনু কপালে চুমু দিয়ে বলল,

_____এতো অবাক হতে হবে না বউ, আমি এমনি মজা করে বললাম, পড়াশোনা ছাড়া মাথায় অন্য কোন চিন্তা ঢুকলেই,, ওই কদম গাছের ডাল কেটে এনে তোমার পিঠে পরবে এই বলে দিলাম,,, এবার গিয়ে পড়তে বসো,, আমি একটু অফিসের কাজে বাইরে যাচ্ছি,, ফিরতে নটা বেজে যাবে,,

অনু একটু ভয় পেয়ে বলল,,

_____আমি এতক্ষন বাড়িতে একা থাকবো?

অরিন্দম ওকে এক হাতে জড়িয়ে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল,,

____আমি রিনা মাসিমাকে বলে যাব উনি থাকবেন আমি না আসা পর্যন্ত।

_______________

__________________________

ঘড়িতে রাত 9:30, টা।

অনু আজ সুন্দর করে একটা সাদা শাড়ি পরেছে, ওর বরবাবু কে দেখাতে চাইছে ও একা শাড়ি পরতে শিখে গেছে,তাই মন ভরে সুন্দর করে শাড়ি পড়ে সুন্দর করে সেজে অরিন্দম কে চমকে দেওয়ার প্ল্যান করছে, ছোটোখাটো হার্ট অ্যাটাকে করাতে চায়, পুরনো দিনের স্মৃতি একটু টাটকা করতে চায়,,, রিনা মাসি মা একটু আগেই বেরিয়ে গেছে উনার বাড়ি অনেকটা দূর রাত হলে যেতে অসুবিধা হবে বলে তাই ওকে বলতে ও বাধ্য মেয়ের মত বলেছে ঠিক আছে আমি একাই থাকতে পারবো।।

অনু রেডি হয়ে এবার ফোনটা নিয়ে অরিন্দম কে ফোন লাগালো কিন্তু অরিন্দমের ফোন বারবার আউট অফ নেটওয়ার্ক বলছে,, অনু একটু বিরক্ত হলো,,বাইরে আবার আকাশ গুরুম গুরুম করছে হয়তো ভারী বৃষ্টি নামবে,,, ও এবার একা থাকতে একটু ভয় করছে,,উদাশ হয়ে খাটে বসে পরলো,, হঠাৎ করেই বাড়ি কলিং বেল বেজে উঠে,অনু প্রথমে চমকে গেলেও তারপর খুশি হয়ে দৌড়াতে থাকে তার বরবাবু এসেছে এই ভেবে,একগাল হেসে নিচে নেমে দরজা কাছে গেল তারপর খুশি মনে দরজা খুলতেই তার হাসিমাখা মুখটা মিহিয়ে গিয়ে অন্ধকারে পরিণত হলো ভয় চোখে মুখে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে,, তরতরিয়ে ঘাম ঝরে পরছে,, কারণ তার সামনে তার বরবাবু দাঁড়িয়ে নেই দাঁড়িয়ে আছে “বিশাল” শয়তানি হাসি দিয়ে,,,ও বিশাল কে দেখে তাড়াতাড়ি করে আবার দরজা লক করে দিতে লাগল কিন্তু বিশাল এক ধাক্কায় ভিতরে ঢুকে এলো,

_________অনু ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনে থাকা ব্যক্তিদের দিকে,বিশাল তার মুখে সেই অসহ্যকর বিরক্তি হাসি ফুটিয়ে রেখেছে, অনু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,

______আপনি এখানে এসেছেন কেন? আর এমন ভাবে ঘরে ঢুকে গেলেন কেন? ভালোই ভালোই বলছি এখান থেকে বেরিয়ে যান।

বিশাল অনুর দিকে একপা একপা করে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,,

_____আরে সুইট হার্ট এত তাড়া কিসের? এত দিন পরে এসেছি কোথায় একটু আদর যত্ন করে খাতি করবে তা নয় আসতেই চলে যেতে বলছ!দিস ইজ নট ফেয়ার,, আর এতদিনে দেখছি তুমি আগের সেই পুচকি মেয়ে আর নেই রুপ যৌবন যেন ঝরে ঝরে পড়ছে,,, লোভনীয় হয়ে উঠেছ যে।

ইতিমধ্যে বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে আর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আরো ভয়ানক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে,

অনু একপা দু পা করে পিছনে যেতে যেতে ডাইনিং টেবিলের সাথে সেট হয়ে যায়,,

তারপর ভীত গলায় বলতে থাকে,

_____দেখুন আপনি বাড়াবাড়ি করছেন এই মুহূর্তে এইখান থেকে বেরিয়ে যান, না হলে কিন্তু এর ফল ভালো হবে না!

বিশাল ওর একদম সামনে এগিয়ে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে ওকে ঘিরে দু হাত রেখে বলল,,

_______বেবি সেই রাতের কাজটা আজকে পূরণ করতে এসেছি পূরন না করে আমি এইখান থেকে চলে যাব কি করে ভাবছ?

অনু কথাটা শুনে চমকে উঠে ভিত চোখে বিশালের দিকে তাকিয়ে থাকে,

তখন তো তুমি পুচকি ছিলে আর এখন যে তোমার নেশায় পড়ে গেছি আমি, বলে অনুর কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়,, অনু বিস্ফোরিত চোখে বিশালের দিকে তাকিয়ে আছে এই মুহূর্তে ভয়ে তার সারা শরীর কাপছে দাঁড়িয়ে থাকা শক্তি ও পাচ্ছে না ,,,সে কিছুতেই ছিঁচকে সরে যাওয়ার জন্য ছটফট করছে,,,,, বিশাল ডান হাত দিয়ে অনুর কোমর জড়িয়ে নিয়ে বাঁ হাত দিয়ে অনু চুলের ফাঁকে ধরে অনুর মুখটা নিজের মুখের কাছে আনতে থাকে অনু ছাড়া পাওয়ার জন্য আকুতি করে যাচ্ছে কিন্তু বিশাল তার কথা শুনছে না,, অনু জলভরা চোখে টেবিলের দিকে তাকিয়ে কাঁটা চামচ দেখে আস্তে আস্তে ডান হাত দিয়ে নিয়ে জোরে বিশালের কোমরে গিতে দেয়,,, বিশাল ব্যথা চিৎকার করে কোমরে হাত দেয়,, অনু ছাড়া পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে কিন্তু শেষ রক্ষা হল না,,,,

বিশাল দৌড়ে গিয়ে ওর পা ধরে টান দেয় অনু মুখ থুবড়ে পড়ে কপাল ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে অনুর,, অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে পা ছাড়ানোর জন্য মোচরা মুচরি করতে থাকে,,পা কোনো রকমে ছাড়িয়ে উঠে যেতে যাবে বিশাল তখন ওর শাড়ির আঁচল ধরে টান দেয় ফলে অনুর শাড়ি গা থেকে খুলে যায় বিশালের হাতে,,,অনু হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বিশালের দিকে বিশালের চোখে মুখে লালসা,,, অনু দুই হাত দিয়ে নিজের লজ্জা ঢাকে আর কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে,,

_____প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন, যেতে দিন প্লিজ, আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি?প্লিজ ছাড়ুন আমার এত বড়ো সর্বনাশ করবেন না,,,

বিশাল এগিয়ে গিয়ে ওকে ধরে ওকে কাঁধে তুলে নিয়ে নিচের রুমের দিকে যেতে থাকে আর বলতে থাকে,,

__________ আমার অনেক ক্ষতি করেছি তুই ,তার সব শোধ আজ তুলবো,আর তা ছাড়া এত সুন্দর জিনিসকে আমি ছাড়ি কি করে,,, অনু হাউমাউ করে কেঁদে চলেছে আর দুহাত দিয়ে বিশালের পিঠে কিল ঘুষি দিয়ে যাচ্ছে ছাড়ার পাওয়া জন্য,, কিন্তু তার বুক ফাটা চিৎকার কেউ শুনছে না,, বিশাল ওকে রুমে নিয়ে গিয়ে ঠাস করে বিছানায় ফেলে দেয় তারপর ও তারাতারি নিজের শার্ট খুলতে থাকে,, অনু অঝোরে কেঁদে চলেছে বিশালের দিকে তাকিয়ে নিজেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য আকুতি করে যাচ্ছে কিন্তু বিশাল চোখে মুখে হিংস পশুর ক্ষুদার্থ ছাপ স্পষ্ট অনেকদিন পর শিকার পেয়েছে তাকে খুবলে খাবে,, অনু বেড থেকে নেমে দৌড়ে বাইরে আসতে যাবে,,বিশাল আবার তার হাত ধরে আর এক হাত দিয়ে উন্মুক্ত কোমরে হাত দিয়ে চেপে ধরে যার ফলস্বরুপ অনুর পেট চিরে রক্ত বের হতে থাকে,, অনু আহত হয়ে বিশালের দিকে আকুতি ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার চোখে বেদনা অসহায়ত্ব ছাপ স্পষ্ট,,সে সমানে বলে যাচ্ছে,যেতে দিন আমাকে প্লিজ,, দয়া করুন। কিন্তু বিশাল ওকে টেনে বিছানায় ফেলে তার ওপর হিংস্র পশুর মত হামলে পড়ে, তাকে খুবলে খুবলে খেতে, অনু চিৎকার করে যাচ্ছে তবুও তার দয়া হচ্ছে না, ক্ষুধার্ত হিংস্র পশু সে কারোর চিৎকার তার কানে যাবে না,,

অনু বুকফাটা আর্তনাদ করে উঠলো।।।

#চলবে