হবে কি আমার পর্ব-২২+২৩

0
5745

#হবে_কি_আমার💞
#writer_Ruhi_mondal
#পর্ব_22

গ্রাম! প্রকৃতির সবচেয়ে মনমুগ্ধকর দৃশ্য যদি দেখতে চান আমরা কাছে তার একমাত্র ঠিকানা হল গ্রামবাংলা। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ, সবুজে ঘেরা গ্রাম!! আঁকাবাঁকা পথঘাট, খাল,বিল, নদী,নালা, অসম্ভব সুন্দর মনকাড়া দৃশ্য, শহরের ও সোড়গোল থেকে গ্রামের নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ দারুন, অরিন্দমের গ্রামের পরিবেশটা এমন ই কোথাও বা মাটির রাস্তা কোথাও বা ইটের, রাস্তার দুই সারির মধ্যে একসারিতে শুধু নারকেল গাছ আর নারকেল গাছ, অপসারিতে খেজুর গাছ বা কোথাও তালগাছ, খেজুর ও তাল গাছে তে কলসি বাঁধা,, একবারে ধানের ক্ষেত, অপরপারে পুকুর, পুকুরের পাশে একটা বড় বাগানে বটগাছের নিচে বট গাছের শিকড় এর মধ্যে বসে আছে অরিন্দম আর অনু,, অনুর দৃষ্টি খেজুর গাছের দিকে, যেখানে একটি লোক খেজুর গাছের মাথায় উঠে কলসি বাঁধছে না কি করছে তা সে দেখছে ,, অনু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর কাঁচা আম খাচ্ছে,,অরিন্দম পাশে বসে ধানের ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে আছে যেখানে কৃষকেরা ধান কাটছে, ধান গুলো পেকে সোনালী রং ধারণ করেছে,, তিব্র রোদ্দুরে তারা পরিশ্রম করে যাচ্ছে,, অরিন্দম অনুকে কিছুদিন হল গ্রামের নিয়ে এসেছে ওকে খুশি করার জন্য, কারণ অরিন্দম জানে অনুকে আগের মতো করতে হলে এখানেই আনলে বেশি খুশি হবে আর তাতে সফল হয়েছে ও,অনু এইখানে এসে আগের মতোই হয়ে উঠেছে,, ভর দুপুরে ওরা এখানে এসে বসে আছে, অনেকটা সময় পর অনু বলল,,

_________”বরবাবু কাঁচা আম খাবে? খুব মিষ্টি খেয়ে দেখো!”

অরিন্দম মুচকি হেসে না বোঝালো,

অনু মুখ ঘুরিয়ে বলল,,

______”ভালো জিনিস কিন্তু মিস করছো!”

অরিন্দম বাতাসে উড়ে থাকা অনুর কুঁচো চুল গুলো কানে পিছনে পৌঁছে দিতে দিতে বলল,,

________”আমি ভালো জিনিস মিস করি না বউ, তোমার এই কাঁচা আমের থেকেও আরো মিষ্টি আমার সামনে আছে একটা আস্ত একটা মধুভাণ্ডার!”

অনু কথা শুনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো তারপর মানে বুঝতে পেরে অরিন্দমের কপালে ডান হাতের তিনটে আঙ্গুল দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলল,

________”দিন দিন চরম অসভ্য হয়ে যাচ্ছে!”

অরিন্দম হেসে বলল ,

______ “এমন মিষ্টি বউ থাকলে সবাই অসভ্য হয়ে যায় টিয়াপাখি!”

অনু আর কিছু বলল না, কিছুক্ষণ পরে ওইখানে একটা মহিলা তার হয়তো এক বছরের ছেলেকে নিয়ে এসে তুলসী মঞ্চে স্থানে বসে তাকে চুপ করাতে লাগল, বাচ্চাটার হয়তো খুব গরম হচ্ছে তাই সে অতিরিক্ত কেঁদে চলেছে, অনু বাচ্চাটাকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়ে তাদের কাছে গিয়ে বসলো,, তারপর বাচ্চাটার মাকে বলল,

___________বউদিদি, আমি কি বাবুটাকে একটু কোলে নিতে পারি?

সেও মুচকি হেসে হ্যাঁ বোঝাল,,, অনু বাবুটাকে কোলে নিয়ে একটু হাটাচলা করতে সে চুপ করে গেল, অনু তার নরম গালে দুই হাত দিয়ে আলতো ভাবে চেপে মিষ্টি হেসে তার সাথে খেলা করছে,,

অরিন্দম দূরে বসে এই হাসিমাখা মুখটা দেখছে, অনুকে এমন হাসতে দেখে ওর মনটা খুশিতে ভরে উঠছে, অনু কিছুক্ষণ মনভরে আদর করে ওকে অরিন্দম এর কাছে নিয়ে যায়, অরিন্দম কিছুক্ষণ বাচ্চাটাকে আদর করল, অনু একগাল হাসে বলে ফেলল,,,

_________”বরবাবু আমাদের কবে বাবু হবে?”

অরিন্দম কিছুক্ষণ চুপ থেকে দুষ্টু হেসে বলল,,

________”কি বললে কি হবে?”

অনু এবার খেয়াল করলো যে সে কি বলেছে, তাড়াতাড়ি করে উঠে বাবুটাকে নিয়ে তার মায়ের কাছে চলে গেল,, ওর মায়ের কাছে দিয়ে আবার অরিন্দমের কাছে যেতে গিয়েও গেলেও না থেমে যায় তারপর পুকুরপাড়ের দিকে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে এবার অনুর লজ্জা করছে যেতে।।

কিছুক্ষণ পর অরিন্দম অনুর পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো, আশেপাশে ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলো কেউ আছে কি-না, তারপর পিছন দিক থেকে অনুকে জড়িয়ে ধরে , অনু লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে,,

অরিন্দম ওর কাঁধে থুতনি রেখে বলল,

_______”বউ তুমি কি যেন বলছিল? আর একবার বলো না প্লিজ!”

অনু লজ্জা যেনো মিহিহে যাচ্ছে,

অরিন্দম অনুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওর গালে দুহাত রেখে আদুরে গলায় বলল,

____ “আমার পুচকি বউটার বাবু চাই?”

অনু মাথা নিচু করে হ্যাঁ বোঝায়,

অরিন্দম হালকা হেসে বলল,

________”সময় হলে সব হবে বউ, তখন একটা নয় পুরো ক্রিকেট টিম বানাবো, কিন্তু তার এখনো দেরী আছে, তুমি এখনো অনেক ছোট!”

অনু মুখ ফুলিয়ে বলে,

________”আমি মোটেও ছোট না বুঝেছ!”

_________”তা তুমি কত বড়ো?”

অনু কিছুক্ষণ ভেবে বলল,

_____আর কিছুদিন পরে আমি এইটিন হয়ে যাব!

অরিন্দম মুচকি হেসে বলল,

____ও তাহলে তো তুমি অনেক বড় হয়ে গেছো, তাহলে বাবুর জন্য প্রিপারেশন নিতে হবে!

কথাটা শুনে অনুর মুখটা লাল হয়ে উঠলো, লজ্জা অরিন্দমের বুকে মুখ গুঁজে রইল, অরিন্দম অনুকে জড়িয়ে ধরে বলল,,

_________ তাও এখন না এখনো অনেক দেরি আছে বউ,,,আমি চাই তুমি মন দিয়ে পড়াশোনা করো!

অরিন্দমের কথায় অনুর মনটা ভরে উঠলো,ও সত্যি সঠিক মানুষকে ওর ভাগ্যের পেয়েছে!

__________
_____

সান বাঁধানো পুকুর পাড়ে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে অনু, জলের দিকে তাকিয়ে, জলের রং টা হালকা সবুজ, ওর খুব ইচ্ছে করছে নামতে, পিছন দিকে তাকিয়ে দেখল অরিন্দম লাফিয়ে ওর জন্য আম পারার চেষ্টা করছে, ও কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে ওরনাটা কোমরে বেঁধে দিল ঝাঁপ, জলে কিছু পরার শব্দে পিছন দিকে তাকায় অরিন্দম, তারপর দেখে জলে যেন কিছু পড়েছে জলটা খুব নরছে আশেপাশে অনুকে খুঁজতে লাগল কিন্তু কোথাও দেখতে না পেয়ে এগিয়ে যায়,জলের মধ্যে অনুর ওড়নাটা ভেসে উঠছে দেখে ভয়ে বুকটা ধ্বক করে উঠলো অরিন্দমের কোন কিছু না ভেবে ও জলে ঝাঁপ দেয়, এদিক ওদিক দেখে জলে ডুব সাঁতার দেয় কিন্তু না পেয়ে জলের মধ্যে পা ডুবিয়ে হাঁপাতে থাকে, অরিন্দমের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে, সে যতদূর জানে অনু সাঁতার জানে না কারণ ওর মামার বাড়ির উঠানে কোনো পুকুর ছিল না, অনু পুকুরে ডুবে যায়নি তো ভেবেই ওর বুক শুকিয়ে গেল, আবার ডুব দিতে যাবে দেখে ওর থেকে অনেকটা দূরে অনু উঠে দাঁড়িয়েছে, অরিন্দম অনু কে উঠে দাঁড়াতে দেখে যেন প্রাণ ফিরে পেল, অনু একগাল হেসে বলল,,

________”বরবাবু তুমিও নেমেছ কেন পুকুরে? তোমারও কি সাঁতার কাটছে ইচ্ছা করছে?”

অরিন্দম চোখ লাল করে অনুর দিকে এগিয়ে যায়, তারপর দুহাতে তাকে জলের মধ্যে ভাসিয়া উপরে তুলে আনার জন্য পা বাড়ায়, অনু গলা জড়িয়ে বলে,

আমি এখন উঠবো না সাঁতার কাটবো,

অরিন্দম রাগী গলায় বলল,,

_____”কোন সাহসে তুমি পুকুরে নেমেছো, আর এক মিনিট, তুমি এত দূরে কিভাবে এলো?”

_______আমি হেসে বলল, সাঁতার কেটে,

________তুমি সাঁতার কিভাবে শিখলে,

অনু একটু থতমত খেয়ে যায়, কারণ ও যদি সত্যি বলে, তাহলে অরিন্দম ওকে বকবে তখন কি হবে,

অরিন্দম ধমক দিয়ে বলল,,___” কি হলো বলো?”

_____বাড়িতে শিখেছি, সুইমিংপুলে, বিকেলে রিনা মাসিমা বসে থাকতেন, তাই শিখে গেছি অনেক আগেই,

অরিন্দম হা করে তাকিয়ে আছে অনুর দিকে, ওই জন্য অফিস থেকে ফিরে সুইমিংপুলে আশেপাশে কত জল দেখতে পেত, অনু কে কিছু বলতে যাবে তার আগে উপর থেকে একটা ঠাকুমা বলে উঠলো,

_________এই ছেলে জলের মধ্যে বউ নিয়ে প্রেম-হচ্ছে, বলি লাজলজ্জা কি সব ধুয়ে খেয়েছ, এদিকে আছে আশেপাশের লোক যাচ্ছে সে খেয়াল কি আছে ।

অরিন্দম অনুকে নিয়ে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,

______”কি করবো ঠাম্মী, আমার বউটা এত মিষ্টি যে সব লাজলজ্জা ধুয়ে খেয়েছি, সবসময় প্রেম করার ইচ্ছে হয়!”

____________________

বাড়ি ফিরে দুজনকে ভিজে অবস্থা দেখে অরিন্দমের কাকিয়া দুজনকে বেশ বকা দিয়েছে।বকা খেয়ে রুমে এসে আগে অনু চেঞ্জ করে নিয়েছে তার পরে অরিন্দম,, কাকাইদের বাড়িটা বেশি বড় না হলেও ছোট বলা যায়না, নিচে তিনটে রুম আছে একটা কিচেন, আর উপরের ছাদ, অনু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভিজে চুল মুছতে ব্যস্ত, জানালার ফাঁক থেকে বয়ে আশা মৃদু ফুরফুরে হাওয়া, অনুর বেশ ভালই লাগছে, সন্ধ্যা প্রায় হয়েই এসেছে,, কিছুক্ষণ পর অরিন্দম পিছন থেকে এসে অনুকে জড়িয়ে ধরে চুলে নাক ডুবিয়ে ঘ্রান নিতে থাকে, অনু মুচকি হেসে অরিন্দমের হাতের উপর হাত রাখল, অরিন্দম নেশা ভরা কন্ঠে বলল,

_________”বউ তুমি চুলে কি দাও এত নেশা হয় কেন আমার?

অনু মুখে হাসি রেখে বলল,

_________বরবাবু সব শ্যাম্পুর কামাল!

অরিন্দম অনু কে নিজের দিকে ঘোরায়, অরিন্দমের এমন দৃষ্টি দেখে অনু চোখ সরিয়ে নেয়,বাতাসে উড়তে থাকা অনুর মুখে ছোট ছোট চুল গুলো উড়তে থাকে,অরিন্দম ঘোরলাগা দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে, বা হাত দিয়ে অনুর মুখে পড়ে থাকা কুচো চুল গুলো আস্তে আস্তে সরিয়ে দিতে লাগল, অরিন্দমের হাতে এমন শীতল স্পর্শে অনু খানিকটা কেঁপে উঠল, অরিন্দম অনুর কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,,,

_______ বউ তুমি জানো সাওয়ার নেয়ার পর তোমাকে আরো সুন্দর লাগে, আর এটাই আমাকে আরো পাগল করে তোলে, তুমি প্লিজ শাওয়ার নিয়ে ভিজে চুলে আমার সামনে আসবে না, তখন আর আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা,,, অরিন্দমের ঘোরলাগা কন্ঠে অনু শ্বাস ভারী হয়ে আসছে, অরিন্দম আবার বলল,,,, ঠিক যেমন এখন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিনা, বলে অনুর কপালে হালকা স্পর্শ করে,তারপর ওর ঠোঁটে দিকে এগিয়ে যেতেই অনু এক ধাক্কায় অরিন্দম কে সরিয়ে দরজার দিকে দৌড়ায়,,,, অরিন্দম বোকার মত ওর দিকে তাকিয়ে থাকে, অনু জোরে জোরে হেসে ওঠে, অরিন্দম বোকার মত বলল,

__________”বউ এটা কি হলো?এটা কিন্তু একদম ঠিক নয়!”

অনু দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,,

________ বরবাবু আমি এখনও অনেক বাচ্চা,,, বড় হয়নি তুমি বলেছ,,,, তাই এত বাচ্চা মেয়ের সাথে রোমান্স করা ঠিক নয় বুঝেছ!

অরিন্দম নিজের কথার জালে নিজেই ফেঁসে গেছে, সে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে বলল,,

_________”ভালো মানুষের দামই নেই!”

অনু দু হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে আফসোসের সুরে বললো,,

_________”খুব কষ্ট হচ্ছে বলো? আহ্হ্ সোনা গো আমার। কি করবে বলো?”

#চলবে

#হবে_কি_আমার💞
#writer_Ruhi_mondal
#পর্ব_23

উত্তরে হাওয়া বইছে, হাওয়ার তালে তালে গাছের সরু ডাল গুলো এদিক ওদিক দুলে বেড়াচ্ছে,, নদীর জল হাওয়া গতিতে ফুলেফেঁপে উঠছে,,নদীর অপর প্রান্তে নদীর পারে যে সব জায়গায় লাইট জ্বলছে যেন আলোর রোশনাই মনে হচ্ছে এই প্রান্ত থেকে, আকাশে অর্থ চন্দ্রিমা উঠেছে তার মধ্যে তারারা মিটিমিটি জ্বলছে, জোনাকি পোকা নদীর জলের উপর ভেসে বেড়াচ্ছে,, পিছনে জঙ্গল থেকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে,, নদী ভাঙ্গা পারে ঘাষের উপর অরিন্দমের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে অনু নদীর দিকে তাকিয়ে আছে,,, গ্রাম থেকে ফিরে এসেছে অনেক মাস আগেই,অনেক দিন ব্যস্ততার পর আজ ওরা ঘুরতে বেরিয়েছে, অনু কয়েকদিন আগেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে,, এখন ফ্রি আছে বলে তার বরবাবুর কাছে বাইনা ধরেছে নদীর পাড়ে আসবে, তাই সেও তার বউয়ের কথা রাখতে মাঝ রাতে তাকে নিয়ে এসেছে,, দুজনেই বসে আছে অনেকটা সময় ধরে নিরব ,, যেন কারো মুখে কোন কথা নেই,, তারা এই সুন্দর মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে ব্যস্ত,,

_________”নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস,, ওই পাড়েতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস!”

নিরবতার মাঝে ভাব সম্প্রসারণটি হঠাৎ করেই অনু বলে ফেলল, অরিন্দম একটু নড়েচড়ে ওর দিকে তাকাতে অনু কাঁধ থেকে মাথা তুলে নদীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,

___________দুঃখ-কষ্ট- আনন্দ-বেদনা- সুখ মানুষের জীবনের একটা অঙ্গ, সবার জীবনে আসে অপ্রত্যাশিত সুযোগ আবার অনেকেই এটা থেকে বঞ্চিত হয়,,,,এই সহজ সত্যটা অনেকে উপলব্ধি না করতে পেরে অন্যর উপলব্ধিতে ও ঈষরাপাত করে।

অরিন্দম অনুর কথাই কিছুক্ষণ ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ,

________বরবাবু এমন করে অবাক হওয়ার কিছু নেই আমি সত্যি কথাই বলছি,,, যেমন ধরো আমরা অনেকেই আছি যারা ভাবি আমার থেকে সামনে ব্যাক্তিটা বেশি সুখে আছে,,,,,কিন্তু আমরা কারোর মনের অবস্থা জানতে চাই,, আমার কারোর মনের অবস্থা না জেনেই বাহ্যিক দৃষ্টিতে তার ওপর নিজের জাজমেন্ট দিই,,,কিন্তু সত্যি কথা বলতে আমরা কেউ সুখী নই আবার কেউই দুঃখি না,

অরিন্দম যেন অনুর কথার কোনো মাথামুণ্ডু বুঝতে পারছে না, তাই সে জিজ্ঞাসা করল,,

_______সকলের কথা ছাড়ো বউ, তুমি বলো তুমি কি মন থেকে সুখী নও?

অনু মুচকি হাসলো,,

অরিন্দম এখনো উত্তরের আশায় ওর মুখোপানে তাকিয়ে আছে,,

অনু নদীর দিকে তাকিয়ে বলল,,

______ আমরা কেউই সবদিক থেকে সুখী না বরবাবু।

অনুর কথায় অরিন্দমের বুক কেমন করে উঠলো, ও তো নিজেকে সুখী ভাবে, তাহলে অনু কেনো এমন বলল?

অনু উঠে দাঁড়িয়ে বলল,,

_______অনেক রাত হয়েছে এবার বাড়ি চলো আমার ঘুম পাচ্ছে।

অরিন্দম উঠে দাঁড়িয়ে অনুর দুকাধে হাত রেখে বলল,,

______ বউ তুমি আমার কাছে সুখী না?

অনু মুচকি হেসে অরিন্দম কে জড়িয়ে ধরে বলল,

____জীবনে সুখ বলতে যদি কিছু হয়, সেটা শুধুই তুমি।।

___________________

পুরো ক্যাম্পাস হৈইচৈই মত্ত,চারিদিকে শুধু পাখির কিচিরমিচির শব্দের মতো ক্যাম্পাসের সদ্দ ভর্তি হওয়া ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্টের সাথে সিনিয়রদের কলহর,, নবীনবরণ উৎসবে আয়োজন চলছে ,, এত শব্দের মধ্যে অনুর কান ঝালাপালা হয়ে গেছে তাই সে নিরিবিলি জায়গায় ক্যাম্পাসে একটা গাছের নিচে সিমেন্ট করা গোল চাতালের ওপর উঠে বসে,, শুধু সে একা নয় মিলি তিশা আর অনুরাগ সাথে আছে,, ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস সবে মাত্র এক মাস করেছে ওরা,, নবীন বরণের জন্য এই দুইদিন ক্লাস হচ্ছে না ওদের,, অরিন্দম ওকে প্রতিদিন ক্যাম্পাসের বাইরে ছেড়ে দিয়ে যায় আবার নিয়েও যায়,, এত হৈ চৈ বলে চার বন্ধু মিলে একটা নিরিবিলি জায়গায় এসে বসলো, কিন্তু গল্প কেউ করছে না,অনু ফোনে লুডু খেলবে, মিলি ফোনে কথা বলে যাচ্ছে,,তিশা বইয়ের ভিতরে মুখ গুঁজে আছে, অনু অনুরাগে ফোনটা নিয়ে লুডু খেলছে অনলাইনে একাই, অনুরাগ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে,, অনু সিঁথিতে জ্বলজ্বল করতে থাকা সিঁদুর দেখে ওর চোখটা ছল ছল করে উঠছে,,অনু যখন ফোনে গেম খেলছে ওর হাতে থাকা শাখা পলা আর চুরি যে ঝংকার হচ্ছে তার শব্দের অনুরাগের বুকের ভেতর অজস্র যন্ত্রণা সৃষ্টি করছে,সে যে এসব কিছু ওর নামে সাজাতে চেয়েছিল ওকে,, নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো নামে সাজতে দেখে ওর বুক ফেটে যাচ্ছে,,,,অনু ফার্স্ট ইয়ারের অ্যাডমিশান থেকেই এইসব সাজ-সজ্জা প্রকাশ পাচ্ছে, প্রথম দিন অনুকে বধু বেশে দেখে অনুরাগের চোখ থেকে এক ফোঁটা নিজের অজান্তেই অশ্রু গড়িয়ে পড়েছিল, ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না,, তাই অনেক ভেবে আজ অনুকে জিজ্ঞাসা করল,,

_____”তুই এইসব কিছু এখন পড়ে আছিস কেন?”

অনু ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বলল,

_______”এইগুলো আমি আগে ও পরে থাকতাম!”

অনুরাগ আবার বলল,

_________”তুই এই গুলো কেন পরিস!”

অনু একবার ফোনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ওর দিকে তাকায় তারপর আবার ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

________,এটা আবার কেমন প্রশ্ন, আমি হিন্দু ধর্মের মেয়ে এগুলো স্বামীর চিহ্ন তাই আমি পড়ে থাকি, আর আমার এগুলো পড়ে থাকতে ভালো লাগে।

অনুরাগ আবার বলল,

________”তুই এই বিয়েটা মানিস?”

অনু যেনো এবার একটু বিরক্ত হলো বিরক্ত হয়ে বলল,,

________রাগী তখন থেকে কি সব বলছিস বলতো?কি হয়েছে কি তোর আজ,,সেই থেকে আরো কিছু বলতে যাবে তিশা পাশ থেকে বলে উঠলো,

_______এই যে মহারানী আপনার ফোন কখন থেকে বেজে চলেছে সে খেয়াল কি আছে?

অনু বসা থেকে উঠে ওদের কাছে গিয়ে ফোনটা বের করেই তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল,অনুর এমন অবস্থা দেখে মিলি তিশা আবাক হয়ে ওর ফোনের দিকে তাকাল 32 টা মিসকল বরবাবুর। ওরা দুজনেই দেখে জোরে হেসে বলল,,

_____তু তো গেয়া আজ,অনু কাঁদো কাঁদো ফেশ করে ওদের দুজনের দিকে তাকালো তারপর দুজন থাকে মাথায় গাট্টা মেরে বলল,,

______তোরা আমাকে আগে কেন বলিসনি আমার ফোন বাজছে কথা শেষ হওয়ার আগে আবার ফোন বেজে উঠলো স্কিনের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে ওড়না দিয়ে মুখটা মুছে ফোনটা রিসিভ করতে ঝাঁঝালো কন্ঠে ওপাশ থেকে বলল,

_______”ফোনটা কোথায় থাকে আর আপনি কোথায় থাকেন ম্যাডাম, কেউ যে আপনার অপেক্ষায় পাগল হচ্ছে সেটার কি আপনি খোঁজ রাখেন?”

অনু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো

____ওই যে

অরিন্দম বলল,,

______ওই যে হুম যে পরে হবে দু মিনিটের মধ্যে গেইটের বাইরে না আসো খবর আছে,,, ইউর টাইম স্টার্ট নাও,

অনু ব্যাগটা কোনো রকমে নিয়ে দৌড় লাগালো ওর অবস্থা দেখে ওরা দুজন হেসে উঠে ,

অনুরাগ ওর পিছনে দৌড়াল,,

অনু কোন রকমের দৌড়ে বাইরে এসে দেখল কিছুটা দূরে গাড়িতে ঠেস দিয়ে পায়ের উপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফোনের দিকে তাকিয়ে, অনু একটা শুকনো ঢোক গিলে গুটি গুটি পায়ে ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো, পাশে উপস্থিতিতে অনুর দিকে তাকাল তারপর অনুর পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভাল করে দেখতে লাগলো,, ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে মেয়েটা, পায়ের মধ্যে ধূলো,,, কপাল দিয়ে কানের পাশ থেকে ঘাম ঝরে ঝরে পরছে,, অরিন্দম কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শান্ত গলায় বলল,,

_____ফোন কোথায় ছিল তোমার আর চেহারা একই দশা করেছে, কি করছিলে এত ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছ, বলে পকেটে থেকে রুমাল বার করে অনুর মুখ মুছে দিতে থাকে।।

অনু হাসার চেষ্টা করে বলল,,

______কিছু করিনি বরবাবু বসেছিলাম, গরম তো বেশি সেই জন্য।

অরিন্দম কিছু বলতে যাবে তার আগে পিছন থেকে অনুরাগ চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

________পুতুল চলে যাচ্ছিস কেন? তোর এন্টি কার্ড তো আমার কাছেই আছে। কাল কি করে আসবি নবীন বরণের, না নিয়ে গেলে।

অনু অসহায় দৃশ্য অরিন্দমের দিকে তাকায়, অরিন্দম অনুরাগকে পছন্দ করে না সেটা স্পষ্ট ভাবেই জানে, শুধু দু একটা কথা বলার পারমিশন দিয়েছে ও, বেশি মেলামেশা করতে বারণ করেছে,অনু পিছন ঘুরে অনুরাগ এর দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে এগিয়ে গিয়ে বলল,,,

_______কতবার বলেছি তোকে যে এই নামে ডাকবি না।

অরিন্দম শক্ত চোখে অনুরাগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অনুরাগ একবার অরিন্দমের দিকে তাকিয়ে তারপর অনুর দিকে তাকালো।

অনু তাড়াতাড়ি করে ওর হাত থেকে এন্টি কার্ড নিয়ে মিনমিন করে বলল,

_______তোকে আমি কাল দেখে নেবো,, যা ভাগ এখান থেকে এখন আর একটা ও কথা বলবি না।

অরিন্দম অলরেডি গাড়িতে বসে পড়েছে ও তাড়াতাড়ি গেইট খুলে বসে পরলো।

অনুরাগের চোখের কোনে জল চিকচিক করছে ও ভালো করেই বুঝতে পারছে ও আর হয়তো অনু কে পাবে না।।

____________________

গাড়িতে একটাও কথা অরিন্দম বলেনি,অনু আড়চোখে একবার করে অরিন্দমের দিকে তাকাচ্ছে হলুদ ফর্সা মুখটা যেন ওর ভয়ঙ্কর লাগছে না জানি বাড়িতে গিয়ে কি করে, অরিন্দম নিশ্চয়ই সেই আগের মতই করবে ওর সাথে, ভয়ে ওর হয়ে যাচ্ছে,,,

অনুর অনুরাগ ছাড়া আর কোনো ছেলে ফ্রেন্ড নেই, তিন বছর একসাথে পড়ছে খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড হয়ে গেছে ওরা কি করে তাকে একা ছেড়ে দেয়।

অরিন্দম বাড়িতে গাড়ি পার্কিং করতেই অনু গেইট খুলে নিচে নামতে যাবে তার আগে অরিন্দম বলে,

_____”স্টপ!”

অনু গেইট খোলা ছেড়ে ভয়ে ভয়ে আবার অরিন্দমের দিকে তাকায়,

অরিন্দম বাইরে বার হয়ে অনুর দিকে গিয়ে অনুর সাইডে গেইট খুলে ওকে পাজা কোলে তুলে নিল অনু ভয়ার্ত দৃষ্টিতে অরিন্দমের দিকে তাকিয়ে আছে এই বুঝি তুলে আছার মারবে বলে কোলে তুলেছে, অনু ভয়ে ভয়ে অরিন্দমের দিকে তাকিয়ে ভালো করে দেখলো, তার চোখ গুলো অসম্ভব লাল হয়ে আছে অনু দেখে আবার চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিল,, কিন্তু অনেকটা সময় পর ও খেয়াল করলো ওর পা যেনো ভিজে আসছে চোখ খুলে চোখ বড় বড় হয়ে গেল অরিন্দম কে ভালো করে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে,

_______বরবাবু কি করছো,পুলে নামছো কেনো? ভিজে যাচ্ছিতো, তুমি কি আমাকে জলে ডুবিয়ে মারবে নাকি?

অরিন্দম শক্ত চোখে তাকাতে অনু চুপ করে যায়।

অরিন্দম পুলের জলের অনেকটাই মাঝখানে গিয়ে অনুকে নিজের পায়ের ওপর দাঁড় করিয়ে ,কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে রাখে,

অনু অবাক চোখের তাকিয়ে আছে,

অরিন্দম ডান হাতে ওর কোমর জড়িয়ে, বাম হাত দিয়ে অনুর মাথার পেছনে হাত দিয়ে নিজের মুখের কাছে নিয়ে আসে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,

_______”পুতুল তাইতো এই নামে ডাকে তো!”

অনু ভয়ে ভয়ে বলল,

__________”আসলে!”

___________”আসলে কি?”

অনু চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে বলতে থাকলো,

_________আসলে ও আমাকে ওই নামেই ডাকে কিন্তু বিশ্বাস করো আমি ওকে বারণ করেছি তবুও ও শোনে না,, এবার থেকে ওকে আরো ভালো করে বারন করে দেবো ও যেন আমার নাম ধরে ডাকে।আর

অরিন্দম কথা শেষ হওয়ার আগেই অনুর ও অধরযুগল নিজের আয়ত্তে এনে ওকে নিয়ে জলে ডুব দেয়, অনু জলের ভিতর দিয়ে চোখ বড় বড় করে অরিন্দমের দিকে তাকায় একে তো জলে ডুবে আছে তার উপর এমন অবস্থায় অনু ভাবছে এইবুঝি ওর আজ শেষ দিন , অরিন্দম 10 সেকেন্ড পর ওকে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়, অনু ভেসে উঠে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে অরিন্দম ওকে কাছে এনে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,

__________তোমাকে ভালবেসে নাম দেওয়ার একমাত্র অধিকার আমার আছে,আর কারো নয় !! সেটা তুমিও ভালো করে বুঝে নেবে,,আর তোমার আশেপাশের মানুষগুলো কে ও বুঝিয়ে দেবে।।

#চলবে