হারিকেন পর্ব-০৭

0
1602

#হারিকেন (সাজু ভাই সিরিজ)
#পর্ব:- ০৭

চকবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যখন সাজুকে নিয়ে এলো তখন সাজুর কোন সাড়াশব্দ নেই। পুলিশকে জানানো হয়েছে আগেই তাই তো ডাক্তার সঙ্গে সঙ্গে জরুরি বিভাগে নিয়ে গেল। কবিতা ও রকি দুজনেই বাহিরে দাড়িয়ে চোখের পানি দিয়ে গাল ভাসাচ্ছে। ঘন্টা খানিক পরে যখন ডাক্তার বের হয়ে বললো, ” আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন, তিনি ছাড়া এখন আর কিছু করার নেই। ”

★★

হাসান সাহেব যখন চট্টগ্রামে আসলেন তখন রাত দশটা বেজে গেছে, সরাসরি হাসপাতালে গিয়ে সাজুর অবস্থা দেখে নিলেন। ডাক্তার সন্ধ্যা বেলা বলেছেন যে মোটামুটি বিপদ কাটতে শুরু করেছে সবাই দোয়া করুন। কবিতার দিকে তাকানো যায় না, যদিও মাত্র দুটো দিন তারা একসঙ্গে থেকেছে কিন্তু মেয়েটার দিকে তাকালে মনে হয় সে সাজুর জীবনসঙ্গী বা তারচেয়ে বেশি কিছু।

সজীব আজকে অফিসে না গিয়ে সারাদিন রকির সঙ্গে হাসপাতালে ছিল। রকি বারবার নিজেকেই অপরাধী করছে কারণ তার মাধ্যমে বামহাতি মেয়ে সাজুর সর্বনাশ করেছে। ওসি সাহেবের কাছে সাজু অজ্ঞান হবার আগে বলা কথা গুলো জানানো হয়েছে তাই তিনি এখানেও পুলিশ পাহারার ব্যাবস্থা করেছেন। আইসিইউতে চিকিৎসায় থেকে সাজু এখন জীবন মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছে।

সাড়ে বারোটার দিকে হাসপাতালের বারান্দায় বসেই সাজুর নোটবুক বের করা হয়েছে। সতেরো নাম্বার পাতা বের করা হলো, লেখা আছে:-.

আমার বাড়ি যাইও বন্ধু
সঙ্গে নিও হুধারে,
আমার কথা কোইও তাদের
জিজ্ঞেস করবা দাদারে।

পাঞ্জাবি পরে সাজলাম
যাদের বাড়ির লাগিয়া,
তাদের সকল সন্ধান লইও
মানুষ দেখবা খুঁটিয়া।

দ্বিতীয় জনের কে কে আছে,
সবার মুখ বাড়াইয়া,
হুধার সামনে ধোইরো তবে
ঢাকনা যাইবো খুলিয়া।

সজীব, রকি, কবিতা, হাসান সাহেব ও ওসি সাহেব সবাই এক এক করে পড়লেন। কিন্তু কারো মাথায় কিছু আসছে না, স্বয়ং হাসান সাহেব নিজে মাথায় হাত দিয়ে চুপচাপ বসে আছে আর একটু পর পর নোটবুক পড়ে দেখছে।

ওসি সাহেব চলে গেলেন, রকি সজীব আর কবিতা হাসপাতালে অপেক্ষা করছে। যেই লামিয়ার খোঁজ করার জন্য তারা তিন বন্ধু অনেক চেষ্টা করেছে আজ সেই মেয়ে তাদের সঙ্গে। কিন্তু নির্মম বাস্তব মুখোমুখি হয়ে এখন ওই বিষয় কারো মাথার মধ্যে আসছে না। ওরা সবাই শুধু সাজুর জন্য প্রার্থনা করে যাচ্ছে।

শুধুমাত্র হাসান সাহেব একা একা নোটবুক নিয়ে বসে আছেন, সবকিছু জট পাকিয়ে আছে কিন্তু খোলার উপায় নেই। হাসান সাহেব জানেন, তিনি অবশ্যই এই ছন্দের অর্থ বের করতে পারবে কারণ তা-না হলে সাজু কখনো তার কথা বলতো না।

ভোর চারটা বাজে।
চেয়ারে বসে দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে রকি ও সজীব। কবিতা ঘুমে টলছে কিন্তু ঠিকমতো সস্তি হচ্ছে না তাই অস্বস্তি নিয়ে আছে। এমন সময় হাসান সাহেব তাদের সামনে দাঁড়িয়ে একপ্রকার চিৎকার করে বললেন ” পেয়ে গেছি। ”

এমন জোরে চিৎকার করলেন, পাশেই আরেক ভদ্রলোক ঘুম থেকে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে গেল, তারপর আবার বিরক্তি নিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুম কে ডাকতে লাগলো।

– সজীব বললো, হাসান ভাই কি হয়েছে?

– আমি ছন্দের সমাধান পেয়েছি।

– আলহামদুলিল্লাহ, তাহলে তাড়াতাড়ি বলেন।

– রকি তোমার গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলাে দামুড়হুদা, তাই না?

– হ্যাঁ হাসান ভাই।

– তাহলে শোনো, সাজু তার নিজের গ্রামের বাড়ি যেতে বলেছে এবং রকিকে সঙ্গে নিতে বলেছে। কারণ সঙ্গে নিও হুধারে মানে দামুড়হুদার রকিকে সঙ্গে নিতে বলেছে। তারপর তার দাদা-দাদির কাছে তার শশুর বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করতে বলেছে, শশুর বাড়ি হচ্ছে যাদের জন্য পাঞ্জাবি পরে সাজলাম এটা। দ্বিতীয় জনের কে কে আছে মানে হচ্ছে, তার স্ত্রীর কে কে আছে? তাদের সকল মুখ দেখতে বলেছে। তারপর রকি তাদের মধ্যে যদি কাউকে চিনতে পারে বা আগে দেখেছে এমন কেউ থাকে তাহলেই খুনি ধরা সহজ হবে।

– রকি বললো, ওয়াও হাসান ভাই আপনাকে তো মেলা মেলা ধন্যবাদ দিতে হবে।

– হাসান সাহেব বললো, সজীব তোমার আার সাজুর বাড়ি তো বাগেরহাটে তাহলে তো তুমিই জানো তোমাদের এলাকার বাস কখন পাবো?

– সজীব বললো, প্রতিদিন বিকেলে অলংকার বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস ছাড়ে আর পরদিন ভোরে বা শেষরাত্রে গিয়ে পৌঁছে।

– এতো সময় আমাদের হাতে নেই, আমরা বরং এখনই ঢাকা রওনা দেবো। তারপর সেখান থেকে কালকে বিকেলে বা সন্ধ্যা বেলা পৌঁছে যাবো।

– কিন্তু আমার বাড়ি যেহেতু বাগেরহাট সেহেতু আমি আপনার সঙ্গে গেলে অনেক ভালো হতো। তবে সাজু যেহেতু আপনাকে আর রকিকে যাবার জন্য বলেছে সেহেতু নিশ্চয়ই কারণ আছে।

– হ্যাঁ ঠিক তাই।

★★

দুপুরের দিকে সজীব কবিতার কাছে এসে বললো, আপনি কিন্তু আমার বাসায় যেতে পারেন। যদিও আমরা ব্যাচেলর তবে বাড়িওয়ালার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো আছে তাই সমস্যা হবে না। আপনি বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হলে খুব ভালো হতো, একটা মেয়ে হয়ে এভাবে কষ্ট করতে হচ্ছে।

– কবিতা বললো, ঠিক আছে সমস্যা নেই তবে আজকে নয়। আজকের রাতটা কেটে যাক তবে দেখি সাজুর শারীরিক অবস্থা কেমন হয়।

– আচ্ছা ঠিক আছে।

– আপনারা দুই বন্ধু সাজুকে খুব ভালবাসেন তাই না ভাইয়া?

– হ্যাঁ, আমরা তিনজন খুব ভালো বন্ধু আরেকজন ছিল কিন্তু সে মারা গেছে।

– ওহ্, দুঃখিত আমি।

রুহির কাছে সাজুর অসুস্থতার কথা বলতেই রুহি অনেক অস্থির হয়ে গেল। যদিও সাজুর জন্য তার বাবার ফাঁসি হয়েছে কিন্তু তবুও সাজু ভাইয়ের প্রতি তার প্রচুর শ্রদ্ধা। মোবাইলে কথা বলার সময় সে বারবার সুস্থতা কামনা করতে লাগলো।

সাজু ভাইর দাদাবাড়ী যখন রকি ও হাসান সাহেব পৌঁছালেন তখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। রকি আগেও দুবার এসেছে সাজুর সঙ্গে তাই তেমন অসুবিধা ছিল না। সাজুর বন্ধুরা এসেছে দেখে তার দাদা দাদী সবাই আনন্দিত, কিন্তু সাজু হাসপাতালে ভর্তি সে খবর শুনে তার দাদী কাঁদতে লাগলাে।

– হাসান সাহেব বললো, সাজু আমাদেরকে তার প্রাক্তন স্ত্রী মারিয়ার বাড়ির সকলের সঙ্গে দেখা করতে বলেছে। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে দেখা করে কিছু একটা সনাক্ত করতে হবে।

– দাদা বললো, কিন্তু সেটা কি?

– সেটা পরিষ্কার করে বলে নাই তবে যেহেতু সাজু নোটবুকে লিখে গেছে তাই নিশ্চয়ই কারণ আছে।

– আচ্ছা ঠিক আছে, এখন তো রাত হয়ে গেছে আর তোমরা শহর থেকে আসছো। আগামীকাল সকাল বেলা আমি তোমাদের সঙ্গে একজনকে দেবো, সে তোমাদের নিয়ে যাবে।

– ঠিক আছে দাদু।

রাতের খাবার খেয়ে পাশাপাশি বিছানায় শুয়ে কথা বলছিলেন হাসান সাহেব ও রকি। হাসান তার মনের মধ্যে একটা বিষয় নিয়ে খুবই চিন্তিত কারণ সাজু একজন ডিটেকটিভ টাইপের মানুষ হয়ে কেন অপরিচিত মানুষের পানি খাবে?

– রকির কাছে বললো, তুমি তো সাজুর সঙ্গে ছিলে তাহলে বলো তো সাজু ওই মেয়ের পানি পান করে বোকামি করলো কেন?

– হাসান ভাই, সেই সময় আমাদের সামনে বিষাক্ত কোন গ্যাস ছাড়া হয়েছে বলে আমরা তিনজনই কাশতে থাকি। লামিয়া মানে সাজুর পুরনো বান্ধবী কবিতার হাতেও পানির বোতল ছিল আর দুজনেই একসাথে বোতল এগিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সাজু হয়তো এতটা বুঝতে পারে নাই যে কার হাতের বোতল সে গ্রহণ করেছে।

– বুঝতে পারছি, কিন্তু কি যে হবে। সজীব এর সঙ্গে কি কথা হয়েছে?

– হ্যাঁ একটু আগে কল দিলাম, ডাক্তার বলেছে যে মোটামুটি ভালো কন্ডিশন চলছে।

– আলহামদুলিল্লাহ, ঠিক আছে ঘুমাও তাহলে।

★★★

পরদিন দুপুরের দিকে সজীব আবারও কবিতার কাছে বাসায় যাবার প্রস্তাব করে। কবিতা যাওয়ার জন্য রাজি হয়েছে কিন্তু ডাক্তার বলেছে সাজুর সঙ্গে কথা বলা যাবে একটু পরে। তাই সে অপেক্ষা করছে কথা বলার জন্য। কথা বলতে পারলেই সে বাসায় যেতে পারে।

– হঠাৎ করে কবিতা বললো, একটা প্রশ্ন করতে চাই সজীব ভাই।

– জ্বি নিশ্চয়ই।

– সাজু বিয়ে করেনি?

– হ্যাঁ করেছিল।

– করেছিল মানে? তাহলে সেই স্ত্রী কোথায়?

– তার সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেছে, সেই মেয়ের স্বামী অসুস্থ আর সেজন্যই সাজু এই মামলায় জড়িয়ে গেছে।

– ডিভোর্স কেন হলো? আর সেই মেয়ে এখন কি নতুন করে বিয়ে করেছে?

– হ্যাঁ, মারিয়া আগে একটা ছেলেকে পছন্দ করত তাই তার জন্য সাজুকে ডিভোর্স দিয়েছে।

এমন সময় একটা নার্স দ্রুত তাদের সামনে এসে বললো, সাজু সাহেবের কে আছেন?

– জ্বি আমরা।

– আপনারা তার সঙ্গে দেখা করতে পারেন তবে বেশি কথা বলবেন না।

– সত্যি বলছেন?

– হ্যাঁ ডাক্তার এই মাত্র দেখে গেল আর তিনি বলে গেছেন আপনারা দেখা করতে পারবেন।

আইসিইউ থেকে কেবিনে রাখা হয়েছে সাজুকে, সজীব বললো ” আপনি আগে গিয়ে দেখা করে আসুন তাহলে সাজু বেশ খুশি হবে। ”

কোনরকম সঙ্কোচ না করে কবিতা কেবিনের মধ্যে ঢুকে গেল, বিছানায় শুয়ে তার দিকে তাকিয়ে যেন কতকিছু খুঁজে বেড়াচ্ছে সাজু ভাই।

– সাজু খুব আস্তে করে বললো, হিজাব পরে যদি আসতে তাহলে খুব ভালো লাগতো।

– তুমি এখন কেমন আছো?

– ডাক্তার কি বলেছে?

– বলেছে তুমি বিপদমুক্ত।

– তাহলে তো ভালো হয়ে যাবো।

– তবুও নিজের অনুভূতি কেমন? এমনিতেই মার খেয়ে তুমি অসুস্থ হয়ে গেলে তারমধ্যে আবার ওই মেয়ে কি থেকে কি করে দিল?

– সবই কপাল।

– তুমি যখন ওই মেয়ের হাত দিয়ে পানির বোতল নিয়ে মুখে দিচ্ছিলে তখন আমার খারাপ লাগছিল অনেক খারাপ লাগলো। কারণ তুমি আমার হাত দিয়ে পানির বোতল না নিয়ে তার হাতের বোতল নিয়েছ। কিন্তু যখনই দেখলাম একটু পরে তুমি অসুস্থ হয়ে গেলে তখন সেই অভিমান দুর হয়ে কষ্টে কান্না আসছিল।

– চেহারা দেখে সেটা বোঝা যাচ্ছে।

– আর কি বোঝা যায়?

– আচ্ছা তুমি এতটা কষ্ট না করে ঢাকা চলে যাও নাহলে তোমার উপরও বিপদ আসতে পারে।

– আমি তোমার রেখে যাবো না, আরেকটু সুস্থ হলেই আমি তোমাকে নিয়ে আমার বাসায় চলে যাবো।

– হাহাহা, পাগল নাকি? আমি তোমার সঙ্গে কেন যাবো বলে দাও।

– কেন? আমি বিধবা বলে কি আমার সঙ্গে যাওয়া যাবে না?

– আমি কিন্তু সেভাবে কিছু বলিনি।

– থাক বলতে হবে না কিছু।

– রাগ করলা? আচ্ছা আমাকে নিয়ে এতটা চিন্তা করার কি হয়েছে? তোমার সঙ্গে তো মাত্র এই কদিনের পরিচয়।

– জানি না আমি, আমার পূর্ব পরিচিত সকল চেনা মানুষের সঙ্গে কতবছর যোগাযোগ নেই। হঠাৎ করে তোমার সঙ্গে দেখা হলো আর তাই কেমন করে যেন খুব পাগল লাগে নিজেকে।

– মাথা ঠান্ডা করো, সজীব এর সঙ্গে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হলো আমি ঠিক আছি।

একটু পরে সজীব যখন প্রবেশ করলো তখন সাজু ভাই হাসান সাহেব ও রকির কথা জানতে চাইলো। কিন্তু তারা তার গ্রামের বাড়িতে গেছে শুনে সাজু খুব রেগে গেল, বললো:-

– আমি তো মারিয়ার স্বামীর পরিবারে কে কে আছে সেটা জানতে বলেছি। হাসপাতালে এমন কেউ ছিল যে লোকটা কোন কথা বলেনি কিন্তু চুপ করে অনেক কিছু প্রকাশ করেছে। রকিকে সঙ্গে নিয়ে গেলে সে চিনতে পারবে কারণ রকি আমার সঙ্গে ওই হাসপাতালে গেছিল।

– সজীব বললো, ঠিক আছে তাহলে আমি তাদের কল দিয়ে সবকিছু জানাচ্ছি, তুই শান্ত হ।

রাত আটটার দিকে বাসা থেকে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে হাসপাতালে আসলো সজীব ও কবিতা। আর এসেই কেবিনের সামনের চেয়ারে একটা মেয়েকে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে গেল সজীব। মনে হয় অপরিচিত কেউ তাই আশ্চর্য হচ্ছে, তাছাড়া মেয়েটার ঠোঁটের উপর ব্যান্ডেজ করা।

– কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ বললো, ইনি নাকি আপনাদের রোগীর পরিচিত তাই দেখা করতে এসেছে। কিন্তু আমরা চিনিনা বলে তাকে বসিয়ে রেখেছি, আপনি কি তাকে চেনেন?

– না, কতক্ষণ ধরে বসে আছে?

– মিনিট পাঁচেক হবে, আর সাজু সাহেব ঘুমাচ্ছেন বলে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারি নাই।

– ঠিক আছে আমি কথা বলছি।

তারপর সেই মেয়েটার সামনে দাঁড়িয়ে বললো:-

– আপনাকে ঠিক চিনতে পারছি না।

– মারিয়ার ঠোঁটে ব্যান্ডেজ থাকার জন্য তার কথা অস্পষ্ট আর বেঁধে বেঁধে শোনা যাচ্ছে। সে তার মুখ দিয়ে বহুকষ্টে বললো, আমার নাম মারিয়া।

– কি…? অনেকদিন, সেই পাঁচ বছর আগে তাকে দেখেছিল সজীব তাই চিনতে পারে নাই। তারপর স্বাভাবিক হয়ে বললো:- আসলে আমি আপনাকে চিনতে পারিনি, কখন এসেছেন?

– আবারও অস্পষ্ট করে বললো, বেশিক্ষণ হয়নি তবে সাজুর সঙ্গে দেখা করেই চলে যাবো। আমার স্বামীও তো হাসপাতালে তাই তার কাছে থাকতে হয় আমাকে। বিকেলে হাসপাতালের ফ্লোরে পা পিছলে পরে গিয়ে ঠোঁট কেটে গেছে তাই আমিও অসুস্থ।

– সাজুর ই অবস্থায় দেখা করা ঠিক হবে না, তাই আপনি বরং চলে যান।

– প্লিজ ভাইয়া, আমি শুধু একবার দেখেই চলে যাবো, এত কষ্ট করে আসলাম।

– আচ্ছা আমি ভিতরে ঢুকে দেখি সাজুর ঘুম ভেঙ্গেছে নাকি?

সাজু জেগে আছে, সজীবের কাছে মারিয়া আসার কথা শুনে ভিতরে প্রবেশ করতে বললো। মারিয়া ও কবিতা দুজনেই প্রবেশ করলো, কবিতা বারবার শুধু মারিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।

মারিয়া এসে দাঁড়াল, আর সজীব তখন বললো:- বিকেলে ঠোঁট কেটে গেছে তাই সেলাই করতে হয়েছে মনে হয়। তোকে দেখতে এসেছে কারণ তুই তো তার জন্যই এতো ঝামেলার মধ্যে।

– সাজু বললো, সজীব তোর পকেটে কলম আছে?

– না পকেটে নিয়ে কিন্তু তোর ফাইলের মধ্যে আছে, বিভিন্ন রিপোর্টের ফাইলে।

– আচ্ছা সেখানে থেকে একটা রিপোর্টের কাগজ দে যেটার অপর পৃষ্ঠে কিছু লেখা যাবে, আর কলমটা দে।

সাজু মনোযোগ দিয়ে কি যেন লিখছে, সজীব কবিতা আর মারিয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। মারিয়া বেশ কিছুটা দুরত্বে নিয়ে সাজুর পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে। কেবিনের এক কোণে একটা ভারি চেয়ার ছিল, মারিয়া সেটা তুলে এনে কাছে রাখল আর তখন মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে রইল সাজু। কারণ এই মারিয়ার বাম হাতটা বেশি কাজ করে এবং তার হাতের কনুইতে কোন কাটা দাগ নেই।

পাঁচ মিনিট পরে সাজু তার লেখা কাগজটা সজীব এর হাতে দিয়ে বললো, “এই ওষুধটা নিয়ে আয়।”

কাগজ নিয়ে বাইরে এসে সজীব দেখে অবাক হয়ে গেল কারণ সেখানে লেখা আছে;-

” এটা মারিয়া নয়, তুই তাড়াতাড়ি ওসি সাহেবকে কল দিয়ে আসতে বল আর বাহিরের পুলিশকে বল মেয়েটাকে গ্রেপ্তার করতে। মনে হয় মা ও শিশু হাসপাতালে মারিয়া কিডন্যাপ হয়েছে, আর তার মতোই মারিয়া সেজে এখানে এসেছে। মারিয়ার হাতের রহস্যের উন্মোচনের দারপ্রান্তে আমরা পৌঁছে গেলাম, তুই তাড়াতাড়ি এই মেয়েকে ধরার ব্যবস্থা কর। ”

সজীব তাড়াতাড়ি পুলিশ নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই চোখ কপালে উঠে গেল। চকচকে একটা ছুরি নিয়ে সাজুর মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছে নকল বেশধারী মারিয়া।

.
চলবে….
লেখা:-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)