হারিয়েছি নামপরিচয় পর্ব-১১+১২

0
237

#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃদিশা মনি

মেঘলা নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আছে।
‘না আমি রিফাতকে কিছু বলব না। ও যদি আমাকে ছেড়ে চলে যায় তাহলে যে আমি বাচতে পারবো না।’

রিফাত মেঘলাকে একমনে কিছু ভাবতে দেখে তার সামনে চুটকি বাজায়।

‘কি এত ভাবছ? ফাবিহা আমার অতিত। ওকে নিয়ে আমি আর কিছু ভাবছি না। এখন আমি শুধু তোমাকে নিয়ে থাকতে চাই। শুধু তোমার কথা ভাবতে চাই। আই লাভ ইউ রোদেলা।’

মেঘলা আচমকা উঠে চলে যায়। রিফাত বুঝতে পারে না মেঘলা এমন করছে কেন। তাই সেও মেঘলার পিছন পিছন যায়। মেঘলা রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে রাস্তার ফুটপাত ধরে হাটতে থাকে। বিভিন্ন রকম চিন্তায় তার মাথা আর কাজ করছে না। জিবনে প্রথম কাউকে ভালোবাসলো এখন তাকে হারিয়ে ফেলার ভয় খুব গভীরভাবে অনুভব করছে মেঘলা। এই যন্ত্রণা যে কতটা গভীর সেটা মেঘলা অনুধাবন করতে পারছে।

মেঘলা এটাও খুব ভালো করে জানে, সে যতোই চেষ্টা করুক না কেন সত্যটা বেশিদিন লুকিয়ে রাখতে পারবে না। একদিন না একদিন রিফাত জানতে পারবেই যে সেই মেঘলা। অন্য কারো কাছ থেকে জানার চেয়ে মেঘলার থেকে জানাই ভালো। তাই মেঘলা ভাবল আজকেই রিফাতকে সবকিছু বলে দিবে৷

মেঘলা এসব ভাবছিল জন্য কোনদিকে কোন খেয়াল ছিল না তার। ফুটপাত থেকে কখন রাস্তায় এসে গেছে সেটা একেবারেই বুঝতে পারে। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই আচমকা একটি গাড়ি দ্রুতবেগে তার দিকে ছুটে আসে। রিফাত দূরে দাড়িয়ে দেখতে পায় একটি গাড়ি মেঘলার দিকেই আসছে। সে চিৎকার করে মেঘলাকে ডাকতে থাকে। মেঘলা রিফাতের গলা শুনে পিছনে ফিরে তাকায়। রিফাত মেঘলাকে সরে আসতে বলে। মেঘলা সরে আসার আগেই গাড়িটি তাকে দ্রুতবেগে এসে জোরে ধা’ক্কা দেয়। মেঘলা দূরে গিয়ে ছিটকে পড়ে।

রিফাত মেঘলা বলে চিৎকার করে উঠে। মেঘলার কাছে এসে তার মাথা নিজের কোলে রেখে বলে,
‘রোদেলা তাকাও আমার দিকে। আমি তোমার কিছু হতে দিবো না। আমার কথা কেন শুনলে না তুমি? তোমায় তো বললাম সরে যেতে আত তুমি,,,,’

মেঘলার নিঃশ্বাস দ্রুত পড়ছিল। অনেক কষ্টে সে বলে,
‘আমি আপনা,,আপনাকে কিছু বলতে চাই,,,’

‘আমি তোমার সব কথা শুনব। তুমি শুধু আমাকে ছেড়ে যেও না,,,আমি এখনই তোমায় হসপিটালে নিয়ে যাব।’

‘আমি ঠকিয়েছি আপনাকে,,আমি ঠক,,,’

মেঘলা আর কিছু বলতে পারে না। তার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

রিফাতকে মেঘলার বলা কথাগুলো খুব ভাবাচ্ছিল। সে এসব ভাবনাকে পাত্তা না দিয়ে দ্রুত মেঘলাকে নিজের গাড়িতে তুলে হাসপাতালের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়।

২১.
রোদেলা মুবিনের জন্য অপেক্ষা করছে। মুবিন রুমে আসতেই তার শার্টের কলার ধরে বলে,
‘সবকিছু তোমার প্ল্যান তাইতো? তুমি সব নষ্টের মূল। তুমি প্ল্যান করে আমাদের দুই বোনকে এরকম সমস্যায় ফেলেছ।’

মুবিন দৃঢ়তার সাথে বলে,
‘আমি কিছু করিনি। তুমি আমাকে বুঝেছ। আমি কিছুই করিনি। যা হয়েছে সব রিফাতের জন্য।’

‘একেই তো নিজে অন্যায় করেছ। এখন অন্যের উপর দোষ চাপাচ্ছ। তোমার তো লজ্জা থাকা দরকার।’

মুবিন রোদেলাকে একটা ভিডিও দেখায়। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রিফাত মুবিনকে বলছে,
‘তোকে আর তোর পরিবারকে আমার একদম সহ্য হয়না। তোর মা আমার মায়ের থেকে তার স্বামীকে কেড়ে নিয়েছে, তুই আমার থেকে আমার বাবাকে কেড়ে নিয়েছিস। আমিও এবার রিভেঞ্জ নেবো। তোর থেকে আমি তোর ভালোবাসার মানুষকে কেড়ে নেব। রোদেলাকে কেড়ে নেব তোর থেকে।’

রোদেলা ভিডিওটা দেখে ভীষণ অবাক হয়। মুবিন বলে,
‘দেখলে তো রোদেলা। এটাই রিফাতের আসল রূপ। যখন সে জানতে পারে তোমার আর আমার ব্যাপারে তখন আমাদের আলাদা করার জন্য সে এতকিছু করেছে। আমাদের ব্রেকআপের পেছনে ওর হাত ছিল। ও আমাদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করেছিল। তোমার পরিবারের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে আব্বুকে বলে তোমাকে বিয়ে করার কথা নিয়ে নেয়। সবকিছু ও করেছে আমার থেকে তোমাকে কেড়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের ভালোবাসা সত্য। তাই দেখো শেষপর্যন্ত ও সফল হয়নি। আমরা আজ এক হয়েছি।’

সবকিছু শুনে রোদেলার কাছে ধীরে ধীরে সবকিছু পরিস্কার হয়। তার শুধু একটা ব্যাপারই খারাপ লাগছিল। তার বোনের জন্য, কারণ মেঘলা এসব কিছুর মাঝে ফেসে গেছে। অন্যের প্রতিশোধ, অন্যের রোষানলের স্বীকার হতে হয়েছে বেচারি মেয়েটাকে। সবাই তাকে শুধু নিজের জন্য ব্যবহার করেছে।

রোদেলা ভাবছিল,
‘যখন আমার বোনটা সবকিছু জানতে পারে তখন ওর কি হবে? এমনিতে অনেক কষ্ট পেয়েছে মেঘ। আপনজনের থেকেই সব কষ্ট পেয়েছে। এখন রিফাতকেও ভালোবেসে ফেলেছে। যদি রিফাতের ব্যাপারে এসব কিছু জানতে পারে তাহলে যে ও একেবারে শেষ হয়ে যাবে।’

এসব কিছু ভেবে রোদেলা মুবিনকে বলে,
‘এসব কথা যেন আমরা ছাড়া আর কেউ না জানে। মেঘলা যেন একেবারেই না জানে। এটা আমার রিকোয়েস্ট।’

২২.
রিফাত মেঘলাকে নিয়ে হসপিটালে এসেছে। ভিতরে মেঘলার চিকিৎসা চলছে। ডাক্তার বলেছে তার অবস্থা বেশি ভালো না। অনেক ব্লিডিং হওয়ায় রক্ত লাগবে। মেঘলার রক্ত এ নেগেটিভ। রক্তটা কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই রিফাত খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রক্তের প্রয়োজন।

রিফাত অনেক ব্লাড ব্যাংকে যোগাযোগ করেছে, চেনাজানা অনেককেও বলেছে, ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপেও পোস্ট করেছে। কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না।

রিফাত কিছু একটা ভেবে মুবিনকে ফোন করে। রোদেলা মুবিনের সাথে ছিল। মুবিন ফোনটা রিসিভ করতেই রিফাত বলে,
‘মেঘলা কি তোর পাশে আছে? ওকে প্লিজ ফোনটা দে। অনেক জরুরি কথা আছে।’

মুবিন রোদেলাকে ফোনটা দেয়। রোদেলা ফোনটা ধরতেই রিফাত কান্নাভেজা কন্ঠে বলে,
‘মেঘলা তুমি কোথায়? তাড়াতাড়ি সিটি হসপিটালে চলে এসো। রোদেলার,,,,রোদেলার এক্সিডেন্ট হয়েছে। ওর জন্য এ নেগেটিভ ব্লাড প্রয়োজন। তোমরা তো দুই বোন। তোমাদের ব্লাড গ্রুপ নিশ্চয়ই এক।’

রোদেলা মেঘলার এক্সিডেন্টের খবর পেয়ে ভয় পেয়ে যায়।

‘কি হয়েছে মেঘ,,,রোদেলার? কিভাবে হলো? আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।’

ফোনটা রেখে দিয়েই রোদেলা কান্নাকাটি শুরু করে। মুবিন রোদেলাকে কাদতে দেখে জানতে চায়,
‘তুমি কাদছ কেন? কি হয়েছে?’

‘মুবিন তাড়াতাড়ি সিটি হসপিটালে চলো। মেঘলার এক্সিডেন্ট হয়েছে। ওর ব্লাড প্রয়োজন। আমার বোনটার কিছু হয়ে যাওয়ার আগেই আমাদের ওখানে যেতে হবে।’

মুবিন রোদেলাকে নিয়ে দ্রুত বেড়িয়ে পড়ে।

হসপিটালে পৌছে রোদেলা মেঘলার জন্য ব্লাড দেয়। একজন ডক্টর বলে,
‘আপনি একদম সঠিক সময়ে এসেছেন। আরেকটু দেরি হলে অনেক বড় সমস্যা হয়ে যেত। পেশেন্টের যা ব্লাড লস হয়েছে। লাইফ রিস্ক হতে পারত।’

মুবিন রিফাতের কাছে জানতে চায়,
‘কিভাবে কি হলো? তুমি তো রোদেলার সাথে ছিলা। নিজের স্ত্রীর প্র‍তি খেয়াল রাখতে পারো না। কেমন স্বামী তুমি?’

রিফাত মুবিনের শার্টের কলার ধরে বলে,
‘চুপ,,,একদম চুপ। আমার স্ত্রীর খেয়াল আমি ভালোভাবেই রাখতে পারব। ভুলে যাস না রোদেলা এখন আমার বউ, তোর গার্লফ্রেন্ড নয়। ওকে নিয়ে তোর না ভাবলেও চলবে।’

মুবিন হালকা হাসে। সে রিফাতের অবস্থা দেখেই বুঝতে পেরেছে সে এখন কতটা ভালোবাসে তার স্ত্রীকে। রিফাতের চোখে মেঘলাকে হারানোর ভয় স্পষ্ট দেখেছে সে। মুবিন মনে মনে বলে,
‘তুমি কিছু না জেনেই এত ভালোবেসেছ মেঘলাকে। যখন সত্যটা জানতে পারবে তখন প্লিজ দূরে ঠেলে দিও না ভাইয়া। তুমি আমাকে নিয়ে যাই ভাবো, আমার যতই ক্ষতি চাও না কেন আমি তোমার ভালো চাই। আমি এটাই চাই যে তুমি মেঘলাকে নিয়ে ভালো থাকো। তোমাদের দুজনের ভালোবাসা পূর্ণতা পাক।’


মেঘলার জ্ঞান ফিরে আসে। যদিও এখন তার অবস্থা খুব একটা ভালো না। দূর্ঘটনার কারণে পুরো শরীরে অনেক ক্ষত তৈরি হয়েছে। অনেক ব্যাথা করছে সেগুলো। রিফাত সারারাত নির্ঘুম কা’টানোর জন্য একটু বাইরে গেছে। মেঘলার জ্ঞান ফেরার কথা শুনে তাই রোদেলা মেঘলার কাছে আসে।

মেঘলা জ্ঞান ফিরে রোদেলাকে দেখে। রোদেলা বলে,
‘এত অসাবধানী কিভাবে হলি তুই? যদি বড় কোন বিপদ হতো তাহলে কি হতো ভাবছিস।’

মেঘলা কাপা কাপা গলায় বলে,
‘আমি আর মিথ্যা নাটক করবো না রোদ। আমি চাই রিফাতকে এটা জানাতে যে আমিই আসলে কে। আমি রোদেলা নই মেঘলা।’

রিফাত হসপিটালে ফিরে মেঘলার জ্ঞান ফেরর কথা শুনে এসেছিল তার সাথে দেখা করতে। কেবিনের দরজায় দাড়িয়ে থেকে রোদেলা আর মেঘলার কথোপকথন সে শুনে ফেলে। রিফাত জেনে যায় যে সে যাকে রোদেলা ভাবত সে আসলে মেঘলা! তার স্ত্রী রোদেলা নয় মেঘলা।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ১২(বোনাস পর্ব)
#লেখিকাঃদিশা মনি

রিফাত জেনে যায় যে সে যাকে রোদেলা ভাবত সে আসলে মেঘলা! তার স্ত্রী রোদেলা নয় মেঘলা।

সত্যটা জেনে রিফাত বিন্দুমাত্র খুশি হয়না। রিফাতের মনে হতে থাকে তাকে ঠকানো হয়েছে। তার সাথে ছলনা করা হয়েছে। রাগে ক্রোধে রিফাত আর এক মুহুর্ত সেখানে না দাড়িয়ে বেরিয়ে আসে। মুবিন রিফাতকে এভাবে যেতে দেখে ভাবে,
‘ভাইয়ার আবার কি হলো? এভাবে কোথায় যাচ্ছে।’

মুবিন কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই রিফাত লিফটে উঠে যায়। লিফটে করে একেবারে নিচে নেমে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায়। গাড়িতে উঠে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে জোরে ড্রাইভ করতে থাকে।

কিছুদূর গিয়ে অল্পের জন্য বড় একটি দূর্ঘটনার হাত থেকে বেচে যায়। আরেকটু হলেই একটা বাসের সাথে ধাক্কা খেতে যাচ্ছিল রিফাত। আশেপাশের অনেক মানুষ জড়ো হয়ে যায় রিফাতের সামনে। এমন উদভ্রান্তের মতো ড্রাইভ করার জন্য লোকজন তাকে অনেক কথাই শোনায়।

রিফাতের কানে সেসব কোন কথাই ঢোকে না। তার মাথায় শুধু এই কথাগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছিল যে তাকে ঠকানো হয়েছে। যেই মেয়েটাকে সে সবথেকে বেশি বিশ্বাস করেছিল, সবথেকে বেশি ভালোবেসেছিল সেই তাকে ঠকিয়েছে। মিথ্যা পরিচয়ে থেকেছে এতদিন। এতবড় একটা সত্য লুকিয়েছে রিফাতের থেকে। নিজের নামপরিচয় লুকিয়েছে। রিফাত যাকে রোদেলা ভেবে এত ভালোবাসল, যত্ন করল সে আসলে মেঘলা। এই সত্যটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না রিফাত। তাই গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়। পাশে একটি দোকানে গাড়ি থামিয়ে এক প্যাকেট সি’গারেট কিনে নেয়। নিজের সব কষ্ট কমানোর জন্য বেছে নেয় নেশাকে। একের পর এক সি’গারেট খাচ্ছিল রিফাত। ধোয়ার সাথে উড়িয়ে দিচ্ছিল বিশ্বাস ঘাতকতার গ্লানি।

২৩.
মেঘলা হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছিল। তার এক্সিডেন্টের খবর পেয়ে তার মা-বাবা,রোজিয়া, মেহের, মুন্নি সবাই দেখা করতে এসেছে। সবার মাঝে থেকেও মেঘলা শান্তি পাচ্ছিল না। তার চোখ শুধু একজনকেই খুজছিল। জ্ঞান ফেরার পর থেকে মানুষটাকে একবারের জন্যেও দেখেনি মেঘলা। অথচ রোদেলার কাছে শুনেছিল তার এক্সিডেন্টের কারণে সবথেকে বিচলিত ছিল সেই মানুষটা। সারারাত এখানে ওখানে ছোটাছুটি করেছে। মেঘলার সুস্থতার জন্য দোয়া করেছে। আর এখন যখন মেঘলা সুস্থ হয়ে গেছে তখন রিফাত একবার দেখা করতেও এলোনা। ব্যাপারটা বেশ ভাবাচ্ছে মেঘলাকে।

মেঘলাকে বিচলিত দেখে রোদেলা তার পাশে এসে বসে। মেঘলার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
‘তোর শরীর এখন ভালো নেই। এখন এত টেনশন করিস না তো। এটা তোর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। ডক্টর বলেছে তোকে রেস্ট নিতে। এখন আর না ভেবে শুয়ে পড়।’

‘রিফাত কোথায় রোদ? আমার জ্ঞান ফেরার খবর কি ও পায়নি? যদি পেয়ে থাকে তাহলে একটিবার আমার সাথে দেখা করতে এলো না কেন?’

এই ব্যাপারটা রোদেলাকেও বেশ ভাবাচ্ছিল। যেই রিফাত কাল অব্দি মেঘলার সুস্থতার জন্য কত কি করল এখন যখন মেঘলা সুস্থ হলো তখন একবার দেখা করতেও এলো না। তবুও মেঘলাকে বোঝানোর জন্য বলে,
‘হয়তো কোন জরুরি কাজ পড়ে গেছে তাই আসতে পারে নি। তুই তো জানিস মেঘ তোর স্বামীর কত কাজ।’

‘সেই কাজটা কি আমার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ?’

বেশ অভিমানী সুরে প্রশ্নটি করল মেঘলা। রোদেলা কি উত্তর দেবে কিছু বুঝতে পারছিল না। অনেক ভেবে বলল,
‘তুই তো এতটা অবুঝ না মেঘ। ছোট থেকে তুই কতো বুঝদার আর ধৈর্যশীল। এখন হঠাৎ এরকম করে অধৈর্য কেন হয়ে গেছিস?’

‘প্রসঙ্গ যখন ভালোবাসার তখন ধৈর্য্য আসে না রোদ। আমি জানি তুই আমার থেকে ৫ সেকেন্ডের বড়। কিন্তু তাই বলে এই না তুই আমার থেকে সবকিছু ভালো বুঝিস। আমি সবটা বুঝি জন্য এভাবে বলছি। রিফাত যে কাল অব্দি নাকি অস্থির ছিল, আমার জন্য চিন্তিত ছিল, আজ সকাল থেকে আমার সাথে একবার দেখা করতে এলো না। আচ্ছা দেখা করার কথা বাদ দিলাম। ফোন করে একটা খবরও নিল না। এসব এত সহজ মনে হয় তোর কাছে?’

রোদেলা জানে মেঘলার প্রত্যেকটা কথাই যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু এখন যে করেই হোক তাকে মেঘলাকে শান্ত করতে হবে। ডক্টর মেঘলাকে স্ট্রেস নিতে মানা করেছে। তাই রোদেলা বলে,
‘বললাম তো রিফাত হয়তো কোন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সময় সুযোগ পেলে ঠিকই খোজ নেবে। এখন তুই রেস্ট নে।’

মেঘলা নরম গলায় বলে,
‘আমি আজই রিফাতকে সব বলে দেব দেখিস। আর অপেক্ষা করব না। রিফাত আমার জিবনে ঠিক কতোটা মূল্যবান সেটা আমি বুঝে গেছি। তাই আমি ওকে আর ঠকাতে পারব না। তাছাড়া আমাদের বিয়েটাও তো জায়েজ না। আমি চাই রিফাতকে সব সত্য বলে ওকে বিয়ে করে নিতে। এই মিথ্যা সম্পর্ক আর টেনে নিয়ে যাবো না আমি।’

২৪.
রোজিয়া বসার ঘরে বসে দুশ্চিন্তা করে চলছিল। ঘড়ির কা’টায় তখন রাত ১২ টা। সকাল থেকে রিফাতের কোন খোজ নেই। কল করলে ফোনও তুলছে না। সবমিলিয়ে ভীষণ চিন্তার মধ্যে ছিলেন রোজিয়া। সমানে পায়চারি করে চলেছেন আর নিজের ছেলের কথা ভাবছেন। এমন সময় কলিং বেজে ওঠায় তার মনে আশার সঞ্চার হয়। তড়িঘড়ি করে দরজাটা খুলে দেন রোজিয়া। দরজা খুলেই রিফাতকে দেখতে পেয়ে তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সব দুশ্চিন্তা তার মন থেকে দূর হয়ে যায়।

রিফাতকে ভালোভাবে খেয়াল করতেই রোজিয়ার মুখের হাসি মিলিয়ে যায়। ভীষণ অগোছালো লাগছিল রিফাতকে। তার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে সারাটা দিন কিভাবে কা’টিয়েছে। রোজিয়া অধৈর্য হয়ে প্রশ্ন করে,
‘কি হয়েছে তোর রিফাত? এমন দেখাচ্ছে কেন? রোদেলার ব্যাপারটা নিয়ে কি তুই চিন্তিত? আর চিন্তা করিস না। রোদেলা একদম ঠিক আছে।’

রোজিয়ার কথাটা শুনে রিফাত পাগলের মতো হাসতে থাকে। রোজিয়ার ভ্রু কুচকে আসে।

‘এভাবে পাগলের মতো হাসছিস কেন রিফাত?’

রিফাত হাসি থামিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলে,
‘কে রোদেলা? রোদেলা নামের কেউ তো আমার জিবনে নেই৷’

‘তুই এসব কি বলছিস? রোদেলা তোর স্ত্রী।’

‘মিথ্যা মিথ্যা সব মিথ্যা রোদেলা বলে কেউ আমার জিবনে নাই, কখনো ছিলনা। আমাকে ঠকানো হয়েছে। ঠকে গেছি আমি।’

রিফাত রোজিয়াকে সকালের ঘটনাগুলো বলে। সব শুনে রোজিয়া হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়।
‘আমার ছেলেকে ঠকিয়েছে ঐ মেয়ে। আমি ওকে ছাড়বোনা। আমার আসল রূপ ও দেখেনি। এবার দেখিয়ে দেব। তুই যা রিফাত নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়। এসব কিছু আমি সামলে নেব।’

দূর থেকে দাড়িয়ে মা-ছেলের সব কথোপকথন শুনে নেয় মেহের। তার মনে অজানা ভয় কাজ করতে থাকে। রোজিয়ার ভয়ানক রূপ দেখেছে মেহের। তাই জানে মেঘলার সাথে ঠিক কি হতে পারে। মেয়েটার জন্য খুব খারাপ লাগে মেহেরের। পরক্ষণেই মনে পড়ে তার ছেলেও তো জড়িয়ে গেছে এসবে। যদি রিফাতের স্ত্রী মেঘলা হয় তারমানে মুবিন যাকে বিয়ে করেছে সে রোদেলা!

মেহের বলে ওঠে,
‘এবার কি করব আমি? না, যা করার ঠান্ডা মাথায় করতে হবে।’

মেহের নিজের রুমে চলে যায়। বিছানায় শুয়ে অনেক কিছু ভাবনা চিন্তা করতে থাকে।


মেঘলা আজ এক সপ্তাহ হলো হাসপাতালে আছে। এই কয়েকদিনে তার মা-বাবা আর রোদেলা ছাড়া কেউই তার খোজ নেয়নি। এই নিয়ে মেঘলা অনেক দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে।

আজ মেঘলাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করা হবে। মেঘলা রোদেলাকে বলে,
‘রিফাত আজও কি আমাকে নিতে আসবে না?’

‘আমি কি করে জানব বল? আমিও তো অনেকদিন থেকে ঐ বাড়িতে যাইনা। মুবিনও খুলনা চলে গেছে। এই মুহুর্তে তাই ঐ বাড়ির কোন খবর আমি জানি না।’

মেঘলা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
‘নিশ্চয়ই কোন বড় সমস্যা হয়েছে। আমার আর দেরি করলে চলবে না। আজই আমি ঐ বাড়িতে ফিরে যাব।’

মেঘলা রোদেলার উঠে দাড়ায়। এরপর তাকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

কলিং বেল বাজাতেই মেহের এসে দরজা খুলে দেয়। দরজা খোলামাত্রই মেঘলা রিফাত রিফাত বলে চিৎকার করতে থাকে।

মেঘলার ডাকে রিফাত চলে আসে। মেঘলা ও রিফাত মুখোমুখি হয়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨