হারিয়েছি নামপরিচয় পর্ব-১৩+১৪

0
240

#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃদিশা মনি

মেঘলা ও রিফাত মুখোমুখি হয়। রিফাতকে দেখে খুশি হয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে মেঘলা।
‘কেমন আছেন আপনি রিফাত? এতদিন আমার খোজ নেননি কেন? আপনি জানেন আপনাকে কত মিস করেছি আমি।’

রিফাত কোন প্রশ্নেরই উত্তর দেয়না। সে নিজের মতোই দাড়িয়ে থাকে। রিফাতকে চুপ থাকতে দেখে মেঘলা বলে,
‘আমার সাথে কথা বলছেন না কেন আপনি? আমি তো ফিরে এসেছি আপনার কাছে। আপনি খুশি হননি আমাকে দেখে?’

রিফাত আর চুপ থাকে না। মেঘলাকে ধা’ক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

ধা’ক্কা সামলাতে না পেরে মেঘলা পড়ে যায়। অসুস্থ শরীরে এই ধা’ক্কায় পড়ে গিয়ে অনেক আঘাত পায়। ব্যাথায় আহ করে ওঠে। রোদেলা এসে মেঘলাকে টেনে তুলে।

মেঘলার কান্নাভেজা চোখে রিফাতের দিকে তাকায়। রিফাত নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। মেঘলা আহত কন্ঠে বলে,
‘আমাকে এভাবে কেন নিজের থেকে দূরে ঠেলে দিলেন রিফাত?’

রিফাত কোন কথা না বলে নিজের রুমে চলে যায়। মেঘলাও রিফাতের পিছন পিছন যায়। রোদেলা আটকানোর চেষ্টা করলেও তার কোন কথা শোনে না মেঘলা।

রোদেলা কোন উপায় না পেয়ে মেহেরের কাছে গিয়ে বলে,
‘রিফাত এরকম ব্যবহার কেন করল? আপনি কি কিছু জানেন?’

মেহের রোদেলাকে রাগী গলায় বলে,
‘কেন করছে জানো না? দুই বোন মিলে তো কম নাটক করলা না। আমার ভাবতেও কেমন লাগছ ছি! তুমি রোদেলা আর যার সাথে রিফাতের বিয়ে হয়েছে সে তোমার বোন মেঘলা৷ এতদিন ধরে কি নাটক করলে তোমরা?’

রোদেলা মেহেরকে সব ঘটনা খুলে বলে।
‘আপনি তো সবই শুনলেন। এখানে আমার বোন মেঘলার কোন দোষ নেই। সব দোষ আমার আর আমার মা-বাবার। ও বেচারি তো সবকিছুর মাঝে বাজেভাবে ফেসে গেছে।’

সবকিছু শুনে মেহেরের খুব মায়া হলো মেঘলার জন্য।

‘আমি বুঝতে পারছি মেঘলা হয়তো পরিস্থিতির স্বীকার। তবে ওকে একেবারে নির্দোষও বলা যায়না। ও চাইলে এসব আটকাতে পারত, এই মিথ্যা খেলায় অংশ না নিলেও পারত মেঘলা। এখন তো এর পরিণাম মেঘলাকেই ভোগ করতে হবে।’

২৫.
মেঘলাকে নিজের পিছনে আসতে দেখে রিফাত বিরক্ত হয়। মেঘলা দৌড়ে এসে রিফাতের সামনে দাড়ায়।

‘আমাকে এভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন কেন রিফাত? আমার দোষটা বলুন।’

রিফাত মেঘলাকে বলে,
‘নিজের অন্যায় আপনি জানেন না মিস রোদ,,,সরি মেঘলা।’

মেঘলার কাছে এবার পুরো ব্যাপারটা পরিস্কার হয়। তার মানে রিফাত কোনভাবে সত্যটা জানতে পেরেছে। তাই মেঘলার সাথে এমন ব্যবহার করছে। মেঘলা রিফাতকে সবকিছু বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করে। রিফাত সরাসরি বলে দেয়,
‘আমি আপনার মতো ঠকবাজের মুখ থেকে কোন কথা শুনতে চাইনা। ভালো চাইলে এখনই আমার সামনে থেকে চলে যান। নাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। আপনি একজন মেয়ে জন্য আমি আপনার গায়ে হাত তুলিনি। যদি আর এক মুহুর্ত এখানে থাকেন তাহলে সেই কাজটাও করব।’

রিফাত হনহন করে নিজের রুমে চলে যায়। রিফাত যাওয়ার পর রোজিয়া মেঘলার সামনে আসে। মেঘলার হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ি থেকে বের করে বলে,
‘আর কোনদিন যেন তোমায় এই বাড়ির ত্রিসীমানায় না দেখি। আমি চাই না আমাদের বাড়ির কোন বদনাম হোক৷ যদি এসব কথাবার্তা জানাজানি হয় তাহলে আমরা লোকসমাজে আর মুখ দেখাতে পারব না। এই কারণে তোমরা এই যাত্রায় বেচে গেলা। নাহলে তোমাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করে সবাইকে জেলে পাঠাতাম। তবে ভেবো না এত সহজে তোমাদের ছেড়ে দেব। আজ রিফাতের বাবার ফেরার কথা। এতদিন ব্যবসায়িক কাজে বাইরে ছিলেন। আজ উনি ফিরলেই আমি ওনাকে সবকিছু বলব। তারপর দেখ তোমাদের সাথে আর কি কি হয়।’

রোদেলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে মেঘলাকে বলে,
‘চল এখন। এখানে থেকে আর কোন লাভ নেই।’

মেঘলা কোনভাবেই যেতে রাজি হয়না। রোদেলা অনেক চেষ্টা করেও মেঘলাকে এক পা নড়াতে পারে না। মেঘলা সমানে বলে চলেছে,
‘আমি এভাবে যাবো না। আগে রিফাতকে সবকিছু বলব তারপর যেখানে যাওয়ার যাবো। রিফাতকে আমার কথা শুনতেই হবে। সব শোনার পর উনি যা সিদ্ধান্ত নেবেন আমি হাসি মুখে ওনার সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেব।’

রোদেলা মেঘলাকে আর জোর করে না। মেঘলা রিফাতদের বাড়ির বাইরেই বসে থাকে। রোদেলাও তাকে ছেড়ে যায়না। একপর্যায়ে মেঘলাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘তুই তো আগে কত আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন ছিলি। আজ তাহলে এভাবে বেহায়ার মতো কেন আছিস তুই মেঘ?’

মেঘলা মৃদু হেসে বলে,
‘আত্মসম্মান তো আমি সেদিনই হারিয়ে ফেলেছিলাম যেদিন নিজের নামপরিচয় হারিয়ে রোদেলা হয়ে বাচতে শুরু করেছি। কতগুলো মানুষকে ঠকিয়েছি। এখন যা হচ্ছে সেসব তো আমারই কর্মফল। রিফাতের যায়গায় অন্য যে কেউ থাকলে আজ ঠিক একই ব্যবহার করত। যখন অন্যায় করেছি তখন কিভাবে আত্মসম্মানবোধ দেখাবো বলবি আমায়?’

রোদেলা কোন উত্তর দিতে পারে না মেঘলার প্রশ্নের। তাই চুপ করে বসে থাকে মেঘলার পেছনে।

২৬.
মেঘলা ও রোদেলা অনেকক্ষণ বাইরে বসে ছিল। মুন্নি কলেজ থেকে ফিরে দুই বোনকে এভাবে বাইরে বসে থাকতে দেখে হতবাক হয়ে যায়।

‘ভাবি তোমরা এভাবে বাইরে বসে আসো কেন? এসো ভেতরে এসো।’

মেঘলা ও রোদেলা একে অপরের দিকে তাকায়। কেউ কিছু বলতে পারছিল না। মুন্নি তাদের এভাবে চুপ করে থাকতে দেখে বলে,
‘কি হলো চলো। রোদেলা ভাবি তুমি না অসুস্থ। এই অবস্থায় এভাবে বাইরে থাকা ঠিক না। চলো ভেতরে।’

এবারো কারো কোন সাড়া না পেয়ে মুন্নি বাড়িতে প্রবেশ করে। মেহেরকে গিয়ে বলে,
‘আম্মু তুমি জানো রোদেলা ভাবি ও মেঘলা ভাবি দুজনে বাইরে বসে আছে। আমি তাদের কতবার বললাম ভেতরে আসতে কিন্তু আমার কোন কথা শুনছে না। তুমি গিয়ে ওদের বোঝাও না।’

মেঘলা ও রোদেলা বাইরে বসে আছে কথাটা শুনে মেহের হতবাক হয়ে যায়।
‘আচ্ছা মুন্নি আমি দেখছি। তুই যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। কলেজ থেকে ফিরলি জামাকাপড় পালটে ফ্রেশ হয়ে নে।’

মুন্নি নিজের রুমে চলে যায়। মেহের বাইরে এসে মেঘলা ও রোদেলাকে বসে থাকতে দেখে। বেশ বিরক্তির সাথেই বলে,
‘এখানে বসে আছ কেন তোমরা? কি ভেবেছ এভাবে বসে থাকলেও ওদের মন পেয়ে যাবা? কখনো পারবা না। ওদের মন পাথরের মতো শক্ত।’

রোদেলা কৌতুহলি হয়ে বলে,
‘আপনি কি করে বুঝলেন যে এসব করে কোন লাভ নাই?’

মেহের তার জিবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বলতে থাকে,
‘আমি না খুব গরিব ঘরের মেয়ে ছিলাম জানো। আমার বাবা গ্রামের একজন সাধারণ কৃষক ছিল। আমার তখন সবমাত্র ১৬ বছর বয়স। স্কুলে পড়াশোনা করতাম। শহরের ব্যবসায়ী আমিনুল হক আমাদের গ্রামে আসে। আমার আব্বা তার থেকে অনেক টাকা ধার নিয়েছিল৷ সেই টাকা শোধ করতে পারেনি জন্য আমাদের বাড়ি ভিটা কেড়ে নিতে চায়। আমরা চার ভাইবোন ছিলাম। তাদের মধ্যে আমি সবথেকে বড় আর সুন্দরী ছিলাম। আমিনুল হকের নজর পড়ে আমার উপর। আমার আব্বাকে প্রস্তাব দেয় আমাকে যদি তার সাথে বিয়ে দেয় তাহলে সে আর কিছু করবে না। আমার আব্বা সেইসময় স্বার্থপর হয়ে গেছিল। তাই মেনে নেয় তার প্রস্তাব। আমিনুল হকের বয়স তখন ছিল ২৫। তার সম্পর্কে কোন খোজ খবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে নি আমার আব্বা। আমাকে তার হাতে তুলে দেয় বিনা দ্বিধায়। বিয়ের পর তার আসল রূপ আমার সামনে আসে। সে বিবাহিত ছিল এমনকি তার এক বছরের একটা বাচ্চাও আছে। আমাকে এই বাড়িতে নিয়ে এসে কাজের লোকের মতো খাটিয়ে নিত। আমাকে শুধু নিজের শারীরিক চা’হিদা পূরণের জন্যই বিয়ে করেছিল৷ আমার প্রতি কোন ভালোবাসা তার ছিল না। রোজিয়া আপা কোনদিনও আমায় ভালো ভাবে দেখেনি। ভেবেছে আমি হয়তো তার স্বামীকে কেড়ে নিয়েছি তার থেকে। কিন্তু তোমরাই বলো আমার কি আদৌ কোন দোষ ছিল? কি করতে পারতাম আমি বলো? ধীরে ধীরে সবকিছু বদলাতে লাগল। আমার কোল আলো করে মুবিন, মুন্নি ওরা এলো। তখন থেকে রোজিয়া আপা তাদেরকেও পছন্দ করত না। এমনকি রিফাতের মনেও আমাদের জন্য ঘৃণা ঢুকিয়ে দেয়। বোঝাতে থাকে আমরা তার থেকে তার স্বামী, রিফাতের বাবাকে কেড়ে নিয়েছি। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি কারো অধিকার কেড়ে নিতে চাইনি কখনো।’

কথাগুলো বলে আচল দিয়ে মুখ ঢেকে কাদতে থাকেন।

‘ তোমরা চলে যাও। এদের মন পাবা না।’

আর না দাড়িয়ে চলে যায় মেহের।

মেহের যাওয়ার পর রোদেলা মেঘলাকে অনেক কিছু বলে। কিন্তু মেঘলা কিছু না শুনে ঠায় দাড়িয়ে থাকে। অল্প সময় পর রিফাত বাড়ি থেকে বের হয়।

মেঘলার রিফাতের সামনে গিয়ে বলে,
‘একবার আমার কথাটা শুনুন।’

রিফাত দাড়িয়ে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃদিশা মনি

মেঘলার রিফাতের সামনে গিয়ে বলে,
‘একবার আমার কথাটা শুনুন।’

রিফাত দাড়িয়ে যায়। মেঘলার বুকে একটু আশার সঞ্চার হয়। সে রিফাতের সামনে এসে বলে,
‘ধন্যবাদ আপনাকে। আমি বেশি সময় নেবো না। শুধু আপনাকে বলতে চাই যে কোন পরিস্থিতিতে আমি,,,’

মেঘলার কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই সে দেখতে পায় ফাবিহাকে। ফাবিহা এসে রিফাতকে বলে,
‘আমাকে পুনরায় একবার সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমি জানতাম তুমি আবার আমাকে কাছে টেনে নিবে।’

রিফাত ফাবিহাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘আমি ভেবে দেখলাম তুমি আমার জন্য ঠিক। অন্তত মিথ্যা পরিচয়ে আমার জিবনে এসে আমার মন নিয়ে তো খেলোনি। তোমাকে তাই ক্ষমা করাই যায়।’

ফাবিহা খুশিতে লা’ফিয়ে ওঠে। মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘এই ঠকবাজ মেয়েটা এখনো এখানে কি করছে? ওকে তুমি ক্ষমা করে দিয়েছ নাকি রিফাত? এই ভুলটা করো না। এখনই সিকিউরিটি দেখে বের করে দাও এই বিশ্বাসঘাতকটাকে।’

মেঘলার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছিল কথাগুলো শুনে। রিফাত কোন প্রতিক্রিয়া না করে চুপচাপ দাড়িয়ে ছিল৷ রোদেলা আর চুপ করে থাকে না। রিফাতের দিকে আঙুল তুলে বলে,
‘আপনি মেঘলার সাথে এমন ব্যবহার করতে পারেন না। আর কেউ না জানলেও আমি খুব ভালো করেই জানি আপনি ধোয়া তুলসীপাতা নন। আপনিও সমানভাবে দোষী। আপনি আমাকে কেন বিয়ে করতে চেয়েছিলেন সেটা কি আমি জানি না ভেবেছেন? মুবিনের থেকে আমাকে আলাদা করার জন্য। আপনি ভেবেছিলেন যে মুবিন আপনার থেকে আপনার বাবাকে কেড়ে নিয়েছে তাই আপনিও আমাকে ওর থেকে কেড়ে নিয়ে প্রতিশোধ নেবেন। এখন যখন জানলেন আপনি নিজের কাজে সফল হন নি তখন খুব রাগ হচ্ছে। মনে হচ্ছে আপনি হেরে গেছেন। তাই সব রাগ মেঘলার উপর দেখাচ্ছেন।’

মেঘলা পুরো কথাগুলো শুনে হতবাক হয়ে যায়। এখন মেঘলার মনে হতে থাকে রিফাত তার সাথে এতদিন শুধু অভিনয় করে গেছে। ভালোবাসা,কেয়ার সবকিছু ছিল লোক দেখানো। আসলে সে মেঘলাকে রোদেলা ভেবে এমন করছিল শুধুমাত্র মুবিনের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দ্যেশ্যে।

মেঘলা রোদেলার হাত ধরে বলে,
‘রোদ চল এখান থেকে। একটু আগে আমাকে সবকিছু বলে দিতি তাহলে এতক্ষণ এখানে বসে থাকতাম না।’

যাওয়ার সময় রিফাতের সামনে এসে বলে,
‘আপনার জন্য আমার মনে যত ভালোবাসা ছিল সব এখন থেকে ঘৃণায় পরিণত হলো। হ্যা এটা ঠিক ভুল আমারও ছিল কিন্তু আপনার মতো কারো উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য, কারো ভালো বাসা কেড়ে নিতে চাইনি, কারো সাথে ভালোবাসার মিথ্যা নাটক আমি করি নি।’

কথাগুলো বলে আর একমুহূর্ত না দাড়িয়ে চলে যায় মেঘলা।

২৭.
মেঘলা নিজের বাড়িতে ফিরে আসে। তার বাবা-মা ইতিমধ্যে সবকিছু জেনে গেছে। এখন তাদের নিজেদের পরিস্থিতির কথা ভেবে ভয় করছে। মুনিয়া তো রোদেলাকে সমানে দোষ দিয়ে যাচ্ছে,
‘সব হয়েছে তোর জন্য। না তুই বিয়ের দিন ওভাবে পালিয়ে যেতি আর না মেঘলাকে এভাবে বিয়ে করতে হতো। সবকিছুর মূলে আছিস তুই। এখন আমাদের কি হবে? রিফাতের বাবা এখন নিশ্চয়ই আমাদের সবকিছু কেড়ে নেবে। শেষপর্যন্ত রাস্তায় গিয়ে বসতে হবে আমাদের।’

রোদেলা নিজেও বুঝতে পারছিল না কি করবে। এখন সত্যিই তাদের সামনে অনেক বড় বিপদ। এমন সময় তাদের বাবা মঞ্জুরুল ইসলাম তাদের সামনে আসে। তাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছিল। মঞ্জুরুল ইসলাম রোদেলার হাতে একটা খাম ধরিয়ে বলে,
‘এই নে। তোদের দুই বোনের জন্য ব্যাংকে কিছু টাকা জমা রেখেছিলাম। এরমধ্যে ১৫ লাখ টাকা আছে। তোরা দুইবোন এই টাকা নিয়ে দূরে কোথাও চলে যা। আমি জানি আমিনুল হক আজই আমাদের সবকিছু কেড়ে নিবে। আমি আর তোর মা নাহয় গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাব। সেখানে যা একটা করে হোক চালিয়ে নেব। তুই একটা কাজ কর মেঘলাকে নিয়ে চট্টগ্রামে চলে যা। মেঘলা তো চট্টগ্রাম মেডিকেলে চান্স পেয়েছিল৷ ওখানে গিয়ে নিজের পড়াশোনা সম্পূর্ণ করুক। আমার মেয়েটার কত ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়ার। শুধুমাত্র আমার স্বার্থপরতার জন্য মেয়েটাকে এমন দিন দেখতে হলো।’

মুনিয়া স্বামীর এই কাজকে সমর্থন করে।
‘ঠিক বলেছ তুমি। আমরা খুব স্বার্থপর হয়ে গেছিলাম। নিজেদের মেয়েদের কথা ভাবিনি। এখন আমাদের ওদের কথা ভাবতে হবে। রোদেলা আর দেরি করিস না। আজই মেঘলাকে নিয়ে চট্টগ্রামে চলে যা। নিজেদের খেয়াল রাখিস। আমি চাই না, তোরা আর কষ্ট পা। এখান থেকে দূরে গেলেই তোরা ভালো থাকবি।’

রোদেলা তার মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকে। রোদেলা নিজের রুম থেকে তার মা-বাবার সব কথা শুনতে পায়। যদিও সে তার মা-বাবার উপর খুব রেগে ছিল। কারণ তাদের জন্যই আজ মেঘলার জিবনটা এমন হয়ে গেল। তবুও আজকের কথাগুলো শুনে তার নিজের মা-বাবাকে ক্ষমা করে দিতে ইচ্ছা করছে।

মেঘলা নিজের রুম থেকে দৌড়ে বাইরে এসে নিজের মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে। কাদতে কাদতে বলে,
‘আমার সাথে কেন এমন হলো? আমি যে পারছিনা এত কষ্ট সহ্য করতে।’

মঞ্জুরুল ইসলাম মেঘলার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
‘আর কষ্ট করতে হবে না তোকে। দেখবি তোর ভবিষ্যত সুখের হবে। এখন তুই নিজের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ কর গিয়ে।’

২৮.
মেঘলা ও রোদেলা তাদের মা-বাবার থেকে বিদায় নেয়। আজ সব ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবে তারা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী একটি বাসে উঠে পড়ে দুজনে। রোদেলা মেঘলার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘তুই এখনো মন খারাপ করে থাকবি মেঘ? একটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা কর।’

‘রোদ একটা কথা বলবি।’

‘হুম বল।’

‘তুই আমার সাথে কেন যাচ্ছিস? আমি নাহয় সবকিছু হারিয়ে চলে যাচ্ছি কিন্তু তুই তো কিছু হারাস নি। মুবিন তো তোকে সত্যি ভালোবাসে। তোদের বিয়েও হয়ে গেছে। তোরা দুজন তো সুখে থাকতেই পারিস।’

‘আমাদের নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। মুবিন এমনিতেও এখানে থাকে না। ও তো খুলনায় থাকে। পরে ওর সাথে যোগাযোগ করে নেব। এখন আপাতত আমার তোকে সামলাতে হবে। তোর জিবনটা গুছিয়ে দিয়ে তবেই আমি শান্তিতে থাকতে পারব। হাজার হোক এটা অস্বীকার করার তো উপায় নাই যে আমার জন্য তোর জিবনটা এমন এলোমেলো হয়ে গেছে।’

মেঘলা আর কিছু বলে না। চুপচাপ বসে থাকে। কিছুক্ষণ পরে বাস চলতে শুরু করে।


রিফাতের মনটা আজ সকাল থেকে কেমন ছটফট করছে। মেঘলার কথা খুব মনে পড়ছে তার। বিশেষ করে মেঘলার বলা শেষ কথাগুলো তাকে ভীষণ ভাবাচ্ছে। মেঘলা রিফাতকে ঘৃণা করবে এই কথাটাই তার কানে বাজছে বারবার।

‘ঐ মেয়েটার এত সাহস হয় কি করে? নিজে অন্যায় করে আবার আমাকে কথা শোনায়। একটা ঠক মেয়ে। ওর কথা আমি আর ভাবব না।’

রিফাত না চাইতেও মেঘলাকে ভুলতে পারছিল না। মেঘলার অভাব খুব করে বোধ করতে লাগছিল সে। মেঘলার স্মৃতি খুব কষ্ট দিচ্ছিল। রিফাত নিজেকে বোঝাচ্ছিল একটা চিটার মেয়ের কথা ভাববে না কিন্তু তার মন মানতে চাইছিল না। রিফাতের মনে হতে থাকে,
‘আমার উচিৎ ছিল মেঘলা কি বলতে চাইছিল সেটা শোনা। তা না করে শুধুমাত্র নিজের রাগ মেটানোর জন্য ফাবিহাকে এভাবে ডেকে এনে এরকম একটা নাটক করলাম। এটা একদমই ঠিক হয়নি।’

এমন সময় মেহের রিফাতের রুমের সামনে এসে বলে,
‘ভেতরে আসব?’

রিফাত মেহেরকে দেখে বিরক্ত হয়ে বলে,
‘হ্যা আসুন।’

মেহের রিফাতকে এসে বলে,
‘তুমি মেঘলাকে সম্পূর্ণ ভুল বুঝেছ। মেয়েটা কোন পরিস্থিতিতে কি করেছে সেটা তোমার জানার দরকার ছিল।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨