হারিয়েছি নামপরিচয় ১৫+১৬

0
232

#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃদিশা মনি

মেহের রিফাতকে এসে বলে,
‘তুমি মেঘলাকে সম্পূর্ণ ভুল বুঝেছ। মেয়েটা কোন পরিস্থিতিতে কি করেছে সেটা তোমার জানার দরকার ছিল।’

রিফাত মেহেরের কথাটা শুনে রেগে গিয়ে বলে,
‘আপনার থেকে কোন পরামর্শ আমি চাইনা। আমি যা করেছি একদম ঠিক করেছি। মেঘলার মতো মেয়ে একদম এইরকম ব্যবহারই ডিজার্ভ করে। আমাদের সবাইকে মিথ্যা বলেছে ও। মিথ্যা পরিচয়ে আমার জিবনে এসেছে। সবকিছু জানার পরেও তাকে আমি নিজের জিবনে রাখব। এটা যদি ভেবে থাকেন সেটা ভুল ভেবেছেন।’

‘তুমি আমাকে নিয়ে যাই ভাবো আমি সবসময় তোমাকে নিজের ছেলের মতোই দেখেছি রিফাত। আমার চোখে তোমার আর মুবিনের মধ্যে কোন পার্থক্য নই। আমিও এটা মানছি যে, মেঘলা যা করেছে সেটা অন্যায় কিন্তু ওর পরিস্থিতিটা তুমি একবার জানার চেষ্টা করলা না।’

মেহের রিফাতকে মেঘলার ব্যাপারে সবকিছু খুলে বলে। সবকিছু শুনে রিফাত হতবাক হয়ে যায়। মেহের বলে,
‘এবার নিশ্চয়ই তুমি একটু ধারণা করতে পারছ। আর একটা কথা আমি কিন্তু তোমার ব্যাপারেও সব জানি। মুবিন আমায় বলেছে সব। তুমি শুধুমাত্র মুবিনের থেকে রোদেলাকে আলাদা করতে চেয়েছিলে। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে তুমিও অন্যায় করেছিলে। দুজনেই যখন অন্যায় করেছ তখন শাস্তি একা মেঘলা কেন পাবে? তোমরা দুজনই তো সমান অপরাধী। তোমাদের উচিৎ ছিল একে অপরের থেকে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে সবকিছু ঠিক করে নেওয়া। কিন্তু তুমি কি করলে,,,,যাইহোক তোমার ব্যাপার তুমিই বুঝে নাও। আমি তোমার ব্যাপারে কি বলব। আমার পরামর্শ একটাই তুমি সবকিছু ঠিক করে নেও।’

মেহের চলে যায়। রিফাত মেহেরের বলা কথাগুলোই ভাবতে থাকে। রিফাতের মেঘলার মুখটা মনে পড়ে যায়। কিছু একটা মনে করে রিফাত নিজের ড্রয়ার থেকে হাতে আকা একটি ছবি বের করে। তিন বছর আগে প্রথম যেদিন রোদেলাকে সে দেখেছিল সেইসময় ছবিটা একে ছিল।

রিফাত ছবিটার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে। চশমা পড়া, খোপা করা চুল। এই মেয়েটাকে দেখে তো তার মনে প্রেমের সঞ্চার ঘটেছিল। ফাবিহার থেকে প্রতারণার শিকার হয়ে রিফাত ভেবেছিল আর কোনদিনও সে ভালোবাসতে পারবে না। কিন্তু সেই বৃষ্টির দিনে এই মেয়েটাকে দেখে তার মনে অন্যরকম অনুভূতি খেলে যাচ্ছিল। এরপর মেয়েটার কত খোজ করেছে কিন্তু পায়নি। শেষপর্যন্ত মেয়েটার ছবি একেছিল। আর সেই ছবি দেখেই অদ্ভুত প্রশান্তি লাগত তার মনে।

যেদিন মুবিনের সাথে রোদেলাকে প্রথম দেখেছিল সেদিনই মনে হয়েছিল এটাই তো সেই মেয়ে। তাই রিফাত যে করেই হোক রোদেলাকে নিজের করে পেতে চেয়েছিল। এখন রিফাত বুঝতে পারল সে কতবড় ভুল করেছে।

রোদেলা ও মেঘলা যমজ হওয়ার তার এই ভুলটি হয়েছিল। আসলে যেই মেয়েকে দেখে রিফাতের ভালো লেগে গিয়েছিল সে মেঘলা!

রিফাত আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে তাড়াতাড়ি নিজের গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।

২৯.
মেঘলা ও রোদেলা বাসের মধ্যেই ছিল। বাস এখনো চট্টগ্রামে পৌছায় নি। এরমধ্যে একটা ছেলে এসে রোদেলাকে বলে,
‘আমাকে একটু আপনার সিটে বসতে দেবেন?’

রোদেলা ছেলেটার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে দেয়। ছেলেটার কাধে একটা গিটার। দেখতে অনেক বেশি সুন্দর। তবুও রোদেলার ছেলেটাকে সুবিধার মনে হয়না।

‘এটা আমার সিট। আপনাকে বসতে দেব কেন?’

ছেলেটা আফসোস করে বলে,
‘আজকাল মানবিকতা বেচে নেই। একটা ছেলে এভাবে এত মোটা একটা গিটার কাধে নিয়ে এতদূর দাড়িয়ে যাবে আর আপনার একটুও কষ্ট হচ্ছেনা।’

রোদেলার খুব রাগ হয় ছেলেটার কথা শুনে। রোদেলা একপ্রকার রেগে গিয়েই বলে,
‘আপনার গিটার, আপনার সমস্যা। এটা আমার সিট। আমি টাকা দিয়ে টিকেট কিনেছি। এখন আপনি যদি সিট না পান তাহলে আমি কি করব? আর আপনাকে গিটার নিয়ে আসতেও আমি বলিনি। তাহলে শুধু শুধু সেক্রিফাইজ করব কেন?’

মেঘলা এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল। রোদেলা এত জোরে কথা বলছিল যে তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠেই রোদেলাকে বলে,
‘কি হয়েছে রোদ?’

‘আরে দেখ না মেঘ। এই ছেলেটা এখানে এসে কিরকম ঝামেলা করছে। আমি এবার বাসের হেলপারকে ডাকছি। আমি টাকা দিয়ে ছিট কিনব আর অন্য কেউ এসে বসতে চাইবে।’

মেঘলা একপলক ছেলেটার দিকে তাকায়। ছেলেটা নিষ্পাপ মুখ করে তাকিয়ে ছিল। ছেলেটার মুখের দিকে তাকাতেই মায়া হয় মেঘলার।

‘ এত ঝামেলা করার দরকার নাই রোদ। ছেলেটাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে বললেই তো হয়। ভাইয়া আপনি প্লিজ একটু কষ্ট করে চলুন। দেখবেন একটু অপেক্ষা করলেই ফাকা ছিট পেয়ে যাবেন। আমরা আসলে চট্টগ্রাম যাব তো। এতদূর দাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না। সামনে কোথাও কোন প্যাসেঞ্জার নেমে গেলে সেখানে বসে পড়িয়েন।’

ছেলেটা মৃদু হেসে বলে,
‘হাউ সুইট। আপনি দেখতে যেমন মিষ্টি আপনার ব্যবহারও তেমন মিষ্টি। আর আপনার টুইন সিস্টার তো,,,’

রোদেলা চোখ পাকিয়ে তাকাতেই ছেলেটা চুপ করে দূরে সরে যায়।

মেঘলা এসব দেখে অজান্তেই হেসে দেয়। সেই হাসি দেখে রোদেলারও ভালো লাগে।

৩০.
রিফাত মেঘলাদের বাড়িতে এসে জানতে পারে তারা কেউই বাড়িতে নেই। রিফাতের বাবা আমিনুল হক মেঘলাদের বাড়ি, ব্যবসা সব কেড়ে নিয়েছে। যার কারণে তারা সবাই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। কোথায় গেছে সেটাও কেউ বলতে পারছে না।

রিফাত অসহায় হয়ে এদিক সেদিক খুজতে থাকে। কিন্তু কোন লাভ হয়না। রিফাতের নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হতে থাকে। মেঘলার ফোনে কল করে। কিন্তু মোবাইলও নট রিচেবেল বলছে। মেঘলা নিজের সিমকার্ড সব বদলে ফেলেছে। তাই এমনটা হচ্ছে।

রিফাত এইসব কিছু নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। এখন তার কি করণীয় সেটাই ভাবতে পারছিল না। রিফাত অবশেষে কোন উপায় না পেয়ে নিরাশ হয়ে বাড়িতে ফিরে যায়।


শেষপর্যন্ত চট্টগ্রাম এসে পৌছায় বাস। দীর্ঘ যাত্রার পর চট্টগ্রামে পৌছায় মেঘলা ও রোদেলা। চট্টগ্রামে পৌছে নেমে পড়ে বাস থেকে। রোদেলা বলে,
‘আমি এখানে বেশিদিন থাকব না। আপাতত কয়েকদিন থাকব। দেন আমি মুবিনের কাছে খুলনায় চলে যাব। তার আগে তোর মেডিকেলে ভর্তির সব ব্যবস্থা করে দেব। তুই মেডিকেল হোস্টেলেই থাকতে পারবি।’

মেঘলা ও রোদেলা দুজনে প্রথমে হোটেলে যায়। মেঘলার মেডিকেলে ভর্তির সব ব্যবস্থা হয়ে যায়। মেঘলা মেডিকেল হোস্টেলে সিটও পেয়ে যায়। রোদেলা মুবিনের কাছে খুলনায় চলে যায়। মেঘলা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করতে থাকে। এখন তার জিবনে একটাই লক্ষ্য ডাক্তার হওয়া।

অন্য কোন কিছু নিয়ে ভাবতে চায়না মেঘলা। তাই নিজের পড়াশোনায় ফোকাস করে। মেডিকেল কলেজে কিছু ভালো বন্ধুও হয়ে যায় মেঘলার। যার মধ্যে আখি নামের একটি মেয়ের সাথে তার অনেক ঘনিষ্ঠতা হয়ে যায়।

অপরদিকে রিফাতও নিজের জিবনে এগিয়ে গেছে। মেঘলাকে যদিও এখনো ভুলতে পারে নি সে। অনেক যায়গায় মেঘলার খোজ করেছে কিন্তু কোন লাভ হয়নি। মুবিনকেও জিজ্ঞেস করেছিল কিন্তু মুবিন বলেছিল জানে না। রোদেলাই মুবিনকে বলতে নিষেধ করেছিল।

রিফাত মেঘলাকে ছাড়া এখন একদমই ভালো নেই। এখনো আফসোস করে নিজের কাজের জন্য। যদি মেঘলাকে দূরে ঠেলে না দিত তাহলে এরকম কিছুই হতো না। এভাবে মেঘলার থেকে আলাদা হতে হতো না তাকে।

রিফাত এখন চেষ্টা করে কাজের মধ্যে ডুবে থেকে নিজের কষ্ট কমাতে। রোজিয়াও নিজের ছেলের এইরকম অবস্থা দেখে কষ্টে আছে। রিফাতের মুখের হাসি এখন যেন হারিয়ে গেছে।

সবকিছু আবার স্বাভাবিক হবে নাকি এভাবেই সবকিছু চলবে?
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মেঘলার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে একবছর পেরিয়ে গেছে। এখন পড়াশোনাতেই খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সে। মাঝে মাঝে রোদেলার সাথে আর নিজের মা-বাবার সাথে কথা বলে। অন্য কোন দিকে তাকানোর সময় তার নেই। মেঘলা নিজের অতীত যথাসম্ভব ভুলে থাকার চেষ্টা করে। রিফাত নামের কেউ যে তার জিবনে ছিল এটা মনেই করতে চায়না।

মেঘলার এখন আখির সাথে খুব ভাব হয়ে গেছে। তাদের ঘনিষ্ঠতা চোখে পড়ার মতো। একমাত্র আখিকেই সে নিজের অতীত জিবনের সবকিছু বলেছে।

আজ ক্লাস শেষে আখির সাথে হোস্টেলে ফিরছিল মেঘলা। বিভিন্নরকম আলাপ আলোচনা করছিল। এমন সময় একটা ছেলে এসে তাদের সামনে দাড়ায়। ছেলেটিকে দেখে আখি বলে,
‘ভাইয়া তুই। এতবছর পর বোনের কথা মনে পড়ল।’

আরিয়ান মুচকি হেসে বলে,
‘প্রতিদিনই তো তোকে ফোন করে খোজখবর নেই। জানিস তো আমি কতটা বিজি মানুষ। আজ সুযোগ পেয়েই তোর সাথে দেখা করতে এলাম।’

আখি মেঘলাকে বলে,
‘তোকে আমার ভাইয়ার কথা বলেছিলাম না মেঘ। এই হলো আমার ভাইয়া আরিয়ান খান। তোর কাছে তো আমার ভাইয়ার গানের প্রশংসাও করেছিলাম। গিটারে সুর তুলে অনেক সুন্দর গান গাইতে পারে আমার ভাইয়া।’

আরিয়ান মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘হ্যালো মেঘলা। কেমন আছ?’

‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া।’

‘আখি আমি এখানে একটা হোটেলে উঠেছি। আমার কিছু কাজে এখানে আসতে হয়েছে। একটা গানের প্রতিযোগিতার অডিশনে। তো তুই যা এখন। পরে আবার দেখা করে নিব।’

আখি মেঘলাকে নিয়ে চলে যায়। আরিয়ান মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ভাগ্য আবার আমাদের দেখা করিয়ে দিল। এক বছর আগে বাসে তোমার সাথে দেখা হয়েছিল। সেদিন তোমার মিষ্টি ব্যবহার দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। একবছর ধরে নিজের মনে রেখে দিয়েছিলাম তোমায়। আশায় ছিলাম একদিন ঠিকই দেখা হবে আমাদের। আজ দেখা হয়েও গেল। অবশ্য আখির সাথে অনেক আগেই তোমার ছবি দেখেছিলাম ফেসবুকে। সাহস করে কিছু বলতে পারিনি। তবে এবার আমি সাহস করে এসেছি। দেখি তোমার মন জয় করতে পারি কিনা।’

৩১.
মেঘলাকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিচ্ছে আখি। কি কারণে এভাবে সাজিয়ে দিচ্ছে সেটা মেঘলার ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। আর থাকতে না পেরে জিজ্ঞেসা করেই ফেলে,
‘আমাকে এভাবে সাজাচ্ছ কেন?’

আখি মৃদু হেসে বলে,
‘আজ তোমাকে নিয়ে একটু বাইরে যাব। এখানে আসছি থেকে দেখছি তুমি কিরকম একঘেয়ে জিবন কা’টাচ্ছ। মানুষ লাইফটাকে কত সুন্দর ভাবে ইনজয় করে। এই যে চট্টগ্রাম দেখছ এখানে ঘোরার জন্য কত সুন্দর স্থান আছে জানো না? প্রকৃতিটাকে ইনজয় করতে শিখ দেখবে অনেক ভালো লাগবে৷ আজ আমার ভাইয়ার অডিশন। সেখানে যাই চলো। তাছাড়া আজ তো আমাদের তেমন গুরুত্বপূর্ণ ক্লাসও নেই।’

মেঘলা প্রথমে যেতে চাচ্ছিল না। আখি অনেক জোরাজোরি করলে তারপর গিয়ে রাজি হয়। মেঘলা আজ কালো রংয়ের একটি চুড়িদার পড়েছিল। খুব সুন্দর লাগছিল তাকে দেখে। আখি মেঘলাকে নিয়ে যায় আরিয়ানের অডিশনের ওখানে।

পুরো স্টেজ অনেক সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। কত মানুষ এসেছে অডিশন দিতে। মেঘলা আখির সাথে দর্শকদের জন্য বরাদ্দকৃত আসনে বসে পড়ে। একজন লোক অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিল। এই অডিশনের প্রধান বিচারক হিসেবে রয়েছে বিখ্যাত গায়ক আরমান খান।


মুন্নি চট্টগ্রামে এসে নামে। ঘড়ি বের করে দেখে সময় প্রায় হয়ে এসেছে। দ্রুত একটি সিএনজি নিয়ে সেখানে উঠে পড়ে মুন্নি।

‘উফ দেরি হয়ে গেল। সব হয়েছে আম্মুর জন্য। আম্মুকে রাজি করাতেই আমার সময় শেষ হয়ে গেল। আমাকে একা আসতেই দিতে চাচ্ছিল না। আমি কি আর ছোট আছি নাকি? এইচএসসি পাস করে ভার্সিটিতে অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ি। আমার আরমানের সাথে দেখা করার সু্যোগ কিভাবে মিস করি? সেইজন্য তো অডিশনে নাম লিখিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে চলে এলাম। চান্স পাই বা না পাই, কাছ থেকে আরমানকে তো দেখতে পাবো।’

অডিশন এখনো চলছে। একের পর এক প্রতিযোগি এসে গান বলছে। মেঘলার মনটা খুব ভালো হয়ে যায় গানগুলো শুনে।

এমন সময় আরিয়ানকে স্টেজে ডাকা হয়। আরিয়ান তার গিটার নিয়ে স্টেজে উঠে পড়ে। তাকে গান গাইতে বলা হয়। আরিয়ান গিটারে সুর তুলতে তুলতে খুব সুন্দর একটি গান বলতে থাকে।
❝তুমি না ডাকলে আসবোনা
কাছে না এসে ভালোবাসবো না
দূরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়
নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরোনো,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।❞

মেঘলাকে মনে করেই গানটি গায় আরিয়ান। মেঘলা বসে বসে গানটি শোনে এবং গানের মাঝেই হারিয়ে যায়। কেন জানি হঠাৎ করে তার রিফাতের কথা খুব মনে পড়ে। রিফাতের কথা মনে আসতেই মেঘলা ভাবতে থাকে,
‘না আমি আর ওনার কথা ভাবব না। যার কাছে আমার কোন মূল্য নেই তাকে নিয়ে আমিও ভাবব না।’

আরিয়ানের গানটি শেষ হলে সে স্টেজ থেকে নেমে যায়।

৩২.
আরিয়ানের পর মুন্নিকে স্টেজে ডাকা হয়। মুন্নি নামটা শুনেই মেঘলার মুন্নির কথা মনে পড়ে। নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে বলে,
‘মুন্নি এখানে কিভাবে আসবে। নিশ্চয়ই এখন ভার্সিটিতে পড়ে মেয়েটা। পৃথিবীতে একই নামে কত মানুষ আছে।’

মুন্নি হাফাতে হাফাতে অডিশনের স্থলে চলে আসে। স্টেজে উঠে আরমান খানের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। নিজের ক্রাশকে নিজের চোখের সামনে দেখলে যে কিরকম অনুভূতি হয় সেটা বলে বোঝানো সম্ভব না। মুন্নি একধ্যানে শুধু আরমান খানের দিকেই তাকিয়ে থাকে।

সঞ্চালক তাকে গান বলতে বললে তার হুশ ফেরে৷ মেঘলা হতবাক হয়ে মুন্নির দিকে তাকায়। সে ভাবছিল যে মুন্নি এখানে কিভাবে এলো? মুন্নি এসেছে তারমানে কি রিফাতও এসেছে? মেঘলা মনে মনে বলে,
‘রিফাত আসলেও বা কি। এতদিনে মনে হয় ফাবিহাকে বিয়েও করে নিয়েছে। থাক আমি আর ওদের নিয়ে ভাবব না।’

মুন্নি সঞ্চালকের কথায় গাইতে শুরু করে,
❝তু আতাহে ছিনেমে
যাব যাব সাছে ভারতি হু
তেরে দিল কি গালিয়ো ছে
ম্যায় হার রোজ গুজার তি হু
হাওয়া কি জেইসে
চালতা হ্যায় তু
ম্যায় রেত কি জেসি উড়তি হু
কন তুঝে ইউ পেয়ার কারেগা
জেইসে ম্যায় কারতি হু❞

পুরো গানটাই আরমানের দিকে তাকিয়ে বলে। মুন্নিকে এভাবে আরমানের দিকে গান বলতে দেখে ফেলে মেঘলা।

‘মেয়েটা ভার্সিটিতে উঠেও পাগলই রয়ে গেল।’

গান শেষ করে স্টেজ থেকে নামে মুন্নি। আরো কিছু প্রতিযোগি তাদের গান পরিবেশন করে। সবশেষে, সঞ্চালক আরমান খানকে কিছু বলতে বলেন। আরমান খান প্রতিযোগিদের প্রশংসা করে এবং তাদের ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানায়।

সঞ্চালক আরমানকে অডিশনে যারা চান্স পেয়েছে তাদের নাম বলতে বলল। সবার বুক কাপছে৷ মুন্নিও একটু একটু ভয় পাচ্ছে। যদিওবা সে এই অডিশনে শুধুমাত্র আরমানের জন্য এসেছিল কিন্তু এখন সে চায় তার আইডলের মতো একজন সিঙ্গার হতে। তাই মুন্নি প্রার্থনা করতে থাকবে যেন সে টিকে যায়।

আরমান খান একে একে উত্তির্ন হওয়া প্রতিযোগীদের নাম ধরে ডাকতে থাকে।

আরিয়ানের নাম নিতেই আরিয়ান স্টেজে চলে যায়। আরিয়ান স্টেজে উঠতেই আখি খুশি হয়ে যায়।

‘দেখলি তো মেঘ আমার ভাইয়া কত টেলেন্টেড। এত এত মানুষের মধ্যে চান্স পেয়ে গেল। আমি তো আগে থেকেই জানতাম আমার ভাইয়া চান্স পাবে। দেখবি এই প্রতিযোগিতার মূল মঞ্চে গিয়েও আমার ভাইয়াও জয়ী হবে ইনশাআল্লাহ। ‘

মেঘলার মুন্নির জন্য মন আকুপাকু করতে থাকে। মেয়েটা কত শখ করে এসেছে। অনেকের নাম নিলেও মুন্নির নাম নেয়নি। তাই মেঘলার চিন্তা হচ্ছিল মুন্নির জন্য।

মুন্নি ভেবে নিয়েছিল সে বুঝি চান্সই পাবে না। ঠিক সেই সময়েই আরমান খান মুন্নির নাম ধরে ডাকে। মুন্নি নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না। একেই তো নিজের ক্রাশের মুখে নিজের নাম শুনেছে তার উপর এই প্রতিযোগিতার মূল মঞ্চে উঠতেও পেরেছে। মুন্নি খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। মেঘলাও খুশি হয় মুন্নির এই সাফল্যে।

মুন্নি দৌড়ে গিয়ে স্টেজে ওঠে। আরমান খান প্রতিযোগিদের অনুপ্রেরণা জোগায় এবং পরবর্তী ধাপের জন্য শুভকামনা জানায়।


আরিয়ান স্টেজ থেকে নেমে আখি ও মেঘলার কাছে আসে। আখি নিজের ভাইয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। মেঘলার আরিয়ানের গানের প্রশংসা করে। মেঘলার মুখে প্রশংসা শুনে আরিয়ানের মন গার্ডেন গার্ডেন হয়ে যায়।

মুন্নি স্টেজ থেকে নামতেই নজর যায় মেঘলার উপর। সে চিৎকার করে বলে ওঠে,
‘ভাবি তুমি এখানে,,’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨