হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব-১৪+১৫

0
271

#হারিয়ে_চাইছি_তোমাকে –[১৪]
#নিহা (মুনিয়া)
_____________________

-‘ আমি উত্তর দিবো কিন্তু আপনার মুখ থেকে সবটা শোনার পর! আপনি কিছু একটা বোঝাতে চাইছিলেন না? আজকে আপনার কথা শেষ হবে তো তারপরে আমি মুখ খুলবো।’

-‘ বেশ তাহলে শোন বেশ ভালো করে শুনবি কিন্তু। আমি নিলাকে ভালোবা**

আহানের কথা সম্পূর্ণ হতে পারলো না। এর আগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো আহান! মা’থা থেকে র’ক্ত বেরোচ্ছে!! র’ক্তে লাল হয়ে গেছে বিছানার কাপড়। আমি স্তম্ভিত হলাম। পাথরের ন্যায় তাকিয়ে রইলাম আহানের নিথর পড়ে থাকা শরীরের দিকে! আমার দৃষ্টি এখন আহানের দিকেই স্থগিতো। চোখ দু’টো বন্ধ করে মাটিতে পড়ে রয়েছে আহান! পিছনে কালো কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকা দু’জন লোক রয়েছে। আমি আহানের কাছে যাবার জন্য অগ্রসর হলাম। আহানের মা’থাটুকু ধরলাম বেডে ওঠানোর জন্য তৎক্ষনাৎ লোকগুলো আমার চোখে মুখের সামনে কিছু একটা স্প্রে করলো যার দরুন জ্ঞা’ন হারালাম! (আমি ব্যাতীত আমার গল্প অন্য কোনো গ্রুপ বা আইডিতে পোস্ট করা নিষিদ্ধ!)

-‘ উফ সামাদ! তুমি আহানকে এতো জো’রে মা’র’লে কেনো? ওর কতোখানি চো’ট লেগেছে বলোতো? আমি তোমাকে বলেছি না মৃদুলাকে নিয়ে যা ইচ্ছে করো তুমি কিন্তু আমার আহানের গায়ে যেনো একটা আঁচড় ও না পড়ে? তারপরেও কেনো তুমি আহানকে মা’র’লে?’

নিলার চি’ৎ’কা’রে পুরো রুম যেনো কেঁপে ওঠলো এমন অবস্থা! সামাদ ভ’য় পেয়ে গেলো কিছুটা। তবুও নিজেকে শক্ত রেখে বললো……

-‘ আরে এটা তো তোমারই প্ল্যানের একটা অংশ ছিলো নাকি বলো? আজকে যখন আহান মৃদুলাকে সব সত্যি বলে দিতে যাচ্ছিলো তখন তো তুমিই আমাকে ফোন করে বললে আহানকে সব সত্যি বলা থেকে আটকাতে হবে নইলে আমি মৃদুলা আর তুমি আহানকে পাবে না। সেই মোতাবেকই তো আমি আহানকে মা’রি। ‘

-‘ তাই বলে তুমি আহানকে এভাবে মা’র’বে? মানছি যে প্ল্যানটা আমারই ছিলো কিন্তু সেটা তো করেছি আহান আর মৃদুলাকে আলাদা করার জন্য বলো? ‘

-‘ হ্যাঁ আমরা তাতে সফলও হয়েছি। এবার মৃদুলাকে আমার করে নিবো আমি আর আহানকে তুমি তোমার করে নিবে। ‘

নিলার মুখে এবার বিজয়ীর হাসি। যেনো এই দিনটার জন্যই সে এতোদিন অপেক্ষা করেছে…

-‘ উফফ সামাদ আমার এতোদিনের অপেক্ষা শেষ হলো বুঝলে? আমি সেদিন তোমার সেই আহানের প্রতি রাগান্বিত দৃষ্টি দেখে বুঝে গেছিলাম তুমি মৃদুলাকে ভালোবাসো। তাই তোমাকে সঙ্গে নিলাম সাহায্যের জন্য। ‘

-‘ হ্যাঁ। আমি মানতে পারিনি সেদিন যখন মৃদুলা বলছিলো আহানের সঙ্গে ওর বিয়ে হয়েছে। ছোটো থেকে দেখে আসছি মৃদুলাকে। কি করিনি আমি ওর জন্য বলো? ওর সকল সমস্যার সমাধান করে দিতাম আমি। মন প্রান উজার করে সবটা ভালোবেসে এসেছি এতোকাল। অবশেষে কি পেলাম? কিচ্ছু না! আমার সহজ সরল মনটা নিয়ে খেলেছে মৃদুলা। ওর স্বার্থে ব্যাবহার করেছে আমাকে। ভালোবাসেনি কোনোদিনও। যখনি আমি ভালোবাসি বলেছি তখুনি এড়িয়ে গেছে আমাকে। আমি ভেবেছি ওর সঙ্গে মিশে সবটা ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু এর আগেই বলা নেই কওয়া নেই হুট করে বিয়ে হয়ে যায় মৃদুলার! আমি তো ভালোবাসি মৃদুলাকে বলো? নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি মৃদুলাকে। এবার আহানের জীবন থেকে মৃদুলাকে একেবারের জন্য সরিয়ে দিয়ে আমার কাছে নিয়ে আসবো। কিন্তু কি করে করবো সেটা? সবাই তো মৃদুলাকে খোঁজাখুঁজি করবে বলো? পু’লি’শ কে’স করলে তখন? তখন কি হবে নিলা? ‘

নিলা টেবিলের কাছে গিয়ে উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো! যেনো কিছুই হয়নি এরকম ভাব। সামাদ ও বুঝতে পারলো না নিলার এরূপ হাসার কারন…

-‘ সামাদ মৃদুলাই সবটা করে দিয়েছে! এই দেখো এই টেবিলে ডির্ভোস পেপার! আর আমি নিশ্চিত এটা মৃদুলাই করেছে কারন আহান কখনোই মৃদুলাকে ডির্ভোস দিতো না। আমার মনে হয় যখন আমার সম্পর্কে মৃদুলাকে বলেছিলো বো’কা মেয়ে সেটা ধরেই ডির্ভোস পেপার রেডি করে গিয়েছে আর আজকে পিছন থেকে অর্ধেক কথা শুনেছিলো ভেবেছে হয়তো আহান আমাকেই কথা গুলো বলছে তাই হয়তো আজকে ডির্ভোস দিতে এসেছিলো আহানকে! দেখলে? মেয়েটা কিরম বো’কা? নিজেই কতো সহজ করে দিয়েছে আমাদের কাজটুকু? আপাততো আহানকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দাও আর মৃদুলাকে আমি দেখে নিচ্ছি। ‘

-‘ দেখে নিচ্ছি মানে কি করবে তুমি? মৃদুলার কোনো ক্ষতি করবে না বলে দিচ্ছি (সামাদ)

-‘ চিল! কোনো কিচ্ছু করবো না আমি কিন্তু মৃদুলা যে একেবারে চলে গেছে সেটা প্রুভ করতে হবে না? তুমি আহানকে নিয়ে যাও বললাম না বাকিটুকু আমি দেখছি। কাহিনীতে এখনো টুইস্ট বাকি আছে তো।’
________________________

হাসপাতালের বেডে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো আহান!! অক্ষি জোড়া খুলেই সামনে পরিচিতো মুখ দেখতে পেলো। সকল মুখেন ভীড়ে আহান খুঁজে চলেছে সেই চেনা প্রিয় মুখ কিন্তু পুরো রুম জুড়ে চোখ বুলিয়েও কোথাও নজরে পড়লো না সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে! হ্যাঁ রুমের সর্বত্র কোথায় দেখতে পেলো না তার নুড়ি পাথরকে।
আহানকে চোখ খুলতেই আহানের মা ছেলের দিকে অগ্রসর হলেন।

-‘ কিরে আহান বাবা ভালো লাগছে তোর?’

আহানের মা’থায় ব্যা’ন্ডে’জ করা। শোয়া থেকে হেলান দিয়ে একটু ওঠে বসতেই মা’থায় টান অনুভব করে। তবুও আধশোয়া হয়ে বসলো।

-‘ মা আমি এখন ঠিক আছি। কিন্তু আমি এই হাসপাতালে কখন এলাম বলোতো? ‘

আহানের মায়ের চোখে বিস্ময়ের ছাঁপ! সে বুঝে ওঠতে পারছে না কোনো কিছু।

-‘ তুই কালকে রাত থেকে এই হাসপাতালে আছিস আহান। কালকে দুপুরের পর নিলা তোকে এই হাসপাতালে ভর্তি করে এনেছে। ‘

-‘ কিন্তু মা নুড়ি মানে মৃদুলা কোথায় বলো? ওকে তো দেখতে পাচ্ছি না আশেপাশে কোথাও? ‘

-‘ তুই হাসপাতালের বেডে শুয়েও এখনো ওই মেয়ের কথা ভাবছিস!’

আহান কিঞ্চিৎ প্রহর অবাক হলো। বুঝতে পারলো না তার মায়ের এরূপ কথা বলার ধরন। আহানের মা তো মৃদুলাকে বেশ ভালোবাসতো তাহলে কি এমন হলো যে মৃদুলাকে ওই মেয়ে বলে সম্মোধন করছে তার মা?

-‘ কি হয়েছে মা? খুলে বলবে তো আমায় সবটা বলো?’

-‘ আমি বলছি তোমাকে আহান ঠিক কি হয়েছে?’ (নিলা)

আহান উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নিলার দিকে ঠিক কি হয়েছে সেটা জানার জন্য।

-‘ এই যে নাও ডির্ভোস পেপার। এটা মৃদুলা রেখে গেছে তোমার জন্য। আর এই চিরকুট। এটা পড়ার পর নিশ্চয়ই তোমার আর মৃদুলাকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকবে না। ‘

আহান ডির্ভোস পেপারটা হাতে নেওয়া মাত্রই হাত দু’টো যেনো তার থরথর করে কেঁপে ওঠছে! সে তো সবটা বলতে চেয়েছিলো মৃদুলাকে কিন্তু মাঝপথে এই ডির্ভোস পেপার? তার মানে সত্যিই কি মৃদুলা আহানের ভালোবাসা বোঝেনি কিংবা আহানকে আদৌও কোনোদিন ভালোই বাসে নি? যার জন্য এতো বছর অপেক্ষা করলো সে চলে গেলো এভাবে ফাঁকি দিয়ে গেলো? বুকের ভেতর চাপা কষ্ট অনুভব করলো আহান! প্রকাশ করতে পারছে না কারন ছেলেদের যে কাঁদতে নেই? কৌতুহল নিয়ে চিরকুটটি খুললো।

আহান…..
আপনাকে প্রিয় বলে সম্মোধন করার মতন সম্পর্ক আমাদের মধ্যে গড়ে ওঠেনি এই এতোদিনে। তাই আপনার নাম ধরেই বলছি। আপনাকে আমি ভালোবাসতে পারিনি এতোদিন একসঙ্গে থেকেও। কারন আমার মনে অন্য একজন আছে ঠিক আপনারই মতন। তাই আমাকে আমার মতন থাকতে দিন আর আপনিও আপনার মতন থাকুন। আমি বিয়েটা করতে চাইনি। হুট করেই একপ্রকার আমাকে জো’র করে বিয়েটা করানো হয়েছিলো। আর জো’র করে কোনো কিছু টিকে থাকে না। আপনার আর আমার মধ্যে সারাজীবন একসঙ্গে কাটানোর মতন কোনো সম্ভাবনা নেই। আমি পারছি না আপনার সঙ্গে থাকতে। যার প্রতি কোনো মায়া, ভালোবাসা নেই তার সঙ্গে সারাজীবন কি করে থাকা যায় বলুন? এতোদিন থেকেছি কিন্তু আর নয়। আমি পারবো না জোর করে আপনার সঙ্গে সারাজীবন থাকতে। আপনার আর আমার বিয়ে বেশি লোক জানাজানি হয়নি যার দরুন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না আপনাকে। আর আমিতো ডির্ভোস পেপার বানিয়ে দিয়ে গেলাম সই করে দিবেন। তারপর থেকে আপনার আর আমার পথ পুরোপুরি ভাবে আলাদা হয়ে যাবে। যেটুকু জোড়ায় ছিলাম আমরা এই সম্পর্কের সুত্র ধরে সেই জোড়া ছেড়ে দিন! সই করে দিয়েন ডির্ভোস পেপারে। যদি কোনো কিছু ভুল করে থাকি তো সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি আমার মতন করে চলে যাচ্ছি। আমাকে খুঁজবেন না কেউ।

মৃদুলা ইসলাম নিরা…..

আহান চিঠিটা পড়ে নিথর দৃষ্টিতে ডির্ভোস পেপারের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ! উপস্থিত সবাই আগের মতনই রয়েছে কারোর মধ্যে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই যেনো সবাই-ই সত্যি টা জানে। সে জন্যই আহানের মা এভাবে মৃদুলাকে কথাগুলো বলছিলো। এবার সবটা পরিষ্কার আহানের সামনে। কিন্তু আহানের নুড়ি পাথর আহানকে এভাবে ধো’কা দিলো? মানতে পারছে না আহান অপরদিকে বেডে পড়ে থাতা ডির্ভোস পেপারটি বলে দিচ্ছে এটা সত্যি হলেও হয়তো সত্যি!

#চলবে?

#হারিয়ে_চাইছি_তোমাকে [১৫]
#নিহা (মুনিয়া)
____________________

-‘ দেখলি তো আহান ঠিক এইজন্যই তখন ওভাবে কথাগুলো বলছিলাম তোকে আমি। নিলা যখন এই কথাগুলো বলে প্রথমে আমরা কেউই ওকে বিশ্বাষ তো দূর উল্টে কতো কথা শোনাই কিন্তু যখুনি ডির্ভোস পেপার আর চিঠিটা দেখায় তখন সবটা পরিষ্কার হয়ে যায় আমার সামনে। আমি বুঝতে পারছি না মৃদুলার এতো আপত্তি থাকলে আমাদের বলে দিতো আজকে কিন্তু এভাবে চলে যাওয়াটা কি ঠিক করলো ও বলতো?’

আহান মায়ের কথার কোনো প্রতুত্তর করলো না চুপটি করে রইলো। ওদিকে মৃদুলার বাবা সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে মা’থা নিচু করে বেরিয়ে গেলো হাসপাতাল থেকে। উনার মুখ দেখে বোঝাই যাচ্ছে মেয়ের জন্য কতোটা অপ’মা’নি’তো হতে হয়েছে তাকে। শুধু অ’প’মা’নি’তো হয়েছে তা তো না? ক’দিন পর ওদের বিয়ে ছিলো আর মৃদুলা পালিয়ে গেছে। লোকসমাজে যখন কথাটা জানাজানি হবে তখন ল’জ্জা’য় মা’থা কা’টা যাবে একেবারে।

-‘ মা, তোমরা সবাই একটু চলে যাও আমাকে একলা থাকতে দাও কিছুক্ষণের জন্য। ‘

আহানের কথায় আহানের মা-ও কিছু না বলে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। বুঝতে পেরেছে ছেলের এখন কিছু সময় একলা থাকা খুব প্রয়োজন।
★★★★★★

কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরতেই আস্তে আস্তে চোখ খুল খুলে তাকালো মৃদুলা। জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে আবিষ্কার করলো একটি রুমের ভেতর। যার পুরোটা জুড়ে রয়েছে দেয়াল আর সামনে শুধু একটা দরজা! মৃদুলা দরজার কাছে গিয়ে দেখে দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ। মৃদুলা চি’ৎ’কা’র করতে থাকে দরজা খোলার জন্য। মৃদুলার চিৎকারের আওয়াজ শুনে সামাদ আর নিলা রুমের ভেতর যায়। মৃদুলা সামাদ আর নিলাকে দেখে অবাক হয়ে যায়!

-‘ তোমরা দু’জন এখানে? তার মানে তোমরাই আমাকে এখানে ধরে এনেছো? ‘

মৃদুলার কথা শুনে নিলা হেসে ওঠলো।

-‘ বুঝেছো। তার মানে যতোটা বো’কা তোমাকে ভেবেছি ততোটাও বো’কা তুমি নও। কিন্তু আজকে তো চরম বো’কামি করে ফেলেছো। ‘

-‘ কি বলছেন কি আপনি নিলা? আমি তো আহানের সঙ্গে কথা বলছিলাম তখন-ই জ্ঞা’ন হারাই কি হয়েছে কিচ্ছু মনে পড়ছে না ভালো করে। আহান তো আমাকে কিছু বলার চেষ্টা করছিলো কিন্তু ওকে বলতে পারেনি আর আমিও অ’জ্ঞা’ন হয়ে যাই। এখন বুঝতে পারছি এইগুলো সমস্ত কিছু আপনাদের প্ল্যান ছিলো। ‘

-‘ মৃদুলা, এতো কথা কেনো বলছো তুমি? চুপচাপ থাকতে পারো না?

-‘ সামাদ ভাইয়া আপনি! আপনিও আছেন নিলার সঙ্গে? কিন্তু কেনো? কি ক্ষ’তি করেছি আমি আপনাদের? কেনো এরকম টা করছেন আমার সঙ্গে? ‘

মৃদুলার কথা শুনে সামাদ ঘরে থাকা একটা ফুলদানি মাটিতে সজোরে আছড়ে ফেলে! ফুলদানি ভা’ঙা’র আওয়াজে মৃদুলা কেঁ’পে ওঠে।

-‘ আমি কি ক্ষ’তি করেছি তোমার মৃদুলা? তুমি কেনো আমার হলে না? কম ভালোতো বাসিনি তোমাকে তারপরও কেনো এরকম করলে? কেনো আহানকে বিয়ে করলে? কেনো আমাকে ভালোবাসলে না তুমি?’

-‘ ভালোবাসা মন থেকে হয় জোর করে না। আপনার জন্য আমার মনে ভালোবাসা আসে নি কোনোদিন। এই সোজা কথা মেনে নিন। ‘

-‘ হা, মেনে নিবো? কখনোই না। তুমি শুধু আমার মুদৃলা শুধুই আমার তুমি। তোমাকে আমি আমার করেই ছাড়বো! তুমি হবে আমার আর ওই আহান হবে নিলার!

এবার নিলা আসলো মৃদুলার সামনে ।

-‘ চল তোকে সব সত্যি বলে দিই এবার। আর ক’দিন পর জানতে পারবি না। তখন আফসোস থাকবে।

-‘ কি সত্যি বলার কথা বলছো তোমরা?’

-‘ তুই তো জেনেছিলি আহান মিলা মানে আমাকে ভালোবাসে পাঁচ বছর ধরে তাই তো?’

-‘ হ্যাঁ তাই তো জেনে এসেছি।’

নিলা এবার হেঁসে ওঠলো! মৃদুলা ভ’য় পেয়ে গেলো।

-‘ সেটা ভুল! আহান মৃদুলা মানে মিলাকে ভালোবাসতো আর সেই মিলা হচ্ছিস তুই! ভেবে দেখ আহান তোকে কখনোই তোর পুরো নামে ডাকেনি লাইক নিরা থেকে নুড়ি তেমনি মৃদুলা থেকে মিলা! আর সেই পাঁচ বছর আগে আহান তোকেই প্রপোজ করতে গেছিলো ও যখন এটা নিয়ে ওর বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিলো তুই পেছন থেকে শুনে নিয়ে ওকে ভুল বুঝিস। ধরে নিয়েছিলি মিলা বলে অন্য কেউ আছে যাকে আহান ভালোবাসে! কিন্তু সেই মিলা যে তুই নিজে সেটা একবারো বুঝিস নি। আর তুই এতোটা বোকা আহান তোকে ছলে বলে বোঝাতো তাও তুই বুঝতিস না তাই তো আমাকে নিয়ে মিলা সাজিয়ে মিথ্যা বলছিলো তোকে বোঝার জন্য। তুই তাও যখন বুঝলি না বেচারা আহান হ’তা’শ হয়ে আজকে দুপুরে আমাকে বলেছিলো তোকে সব বলে দিবে কিন্তু তুই এতোটাই বো’কা যে আবার ভুল বুঝলি আর সেই সুযোগ টাই আমি, সামাদ নিয়েছি।’

নিলার কথা শুনে মা’থায় আকাশ ভে’ঙে পড়েছে এরূপ অবস্থা! মানে আহান আমাকে ভালোবেসে এসেছে এই এতোগুলো বছর! এই জন্যই উনাকে যখন আমি বলতাম মিলার কাছে যান উনি বলতেন মিলা আমার সঙ্গেই আছেন! এতোটা বো’কা’মো আমি কি করে করতে পারলাম। আহানকে বুঝলাম না আমি? মনে হচ্ছে এখুনি গিয়ে ছুট্টে যাই উনার কাছে! বলে দিই ভালোবাসি। উনি যে উত্তরের অপেক্ষায় ছিলেন জিগেস করেছিলেন উনার নুড়ি পাথর উনাকে ভালোবাসে কিনা? আমি সেই উত্তরটুকুও দিই নি। বলা হয়নি উনাকে উনার নুড়ি পাথর উনাকে ভালোবাসে!

-‘ কিন্তু নিলা আপনি এসব করলেন কেনো? আপনি কো আহানের বন্ধু তাই না?’

-‘ বন্ধু মাই ফুট! হ্যাঁ তুই ভুল কিছুও বলিস নি। আহান আমার বন্ধুই ছিলো যখন পাঁচ বছর আগে তোর কাছ থেকে প্র’ত্যা’খা’ন হয় লন্ডনে গেছিলো তখন আমিই ওকে বুঝিয়েছি। তারপর বাংলাদেশে আসার পর ভেবেছি তোরা একসঙ্গেই থাকবি কিন্তু যখন তোদের বিয়ে হয় আমি বুঝতে পারি আহানকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি। ওর থেকে দূরে যাওয়া সম্ভব নয় কখনোই। তাই তোকে আলাদা করে দিলাম আমি!’

-‘ ছিহঃ! আপনাকে তো আহানের বন্ধু বললেও ভুল হবে দেখছি। তবে আপনাদের এই কু’ৎ’সি’ত পরিকল্পনা সফল হবে না। আমি ভালোবাসি আহানকে! আজকেই বলে দিবো ওকে। এতোদিন বলিনি ভেবেছি ও অন্য কাউকে ভালোবাসে তাই সড়ে আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু আজকে সত্যিটা জানার পর আর কোনো প্রশ্নই আসে না আহানের থেকে দূরে যাবার! ‘

নিলা আর সামাদ একে অপরের দিকে চেয়ে হাসতে থাকে। মৃদুলা বুঝতে পারে না ওদের এরুপ হাসার মানে।

-‘ তুই কি ভেবেছিস এতোটা সহজ? তোর বানানো ডির্ভোস পেপার দিয়ে এসেছি আহানকে। তোর নামে মি’থ্যা চিঠি লিখেছি আহানকে। ওকে বলে দিয়েছি তুই ওর সঙ্গে থাকতে চাস না বলে ডির্ভোস পেপার দিয়েছিস। এবার বল আহান কি তোর জন্য অপেক্ষা করবে? পরশু তোদের বিয়ে না? সেদিন বিয়ে হবে আমার আর আহানের। তোর সঙ্গে বিয়ে হবে সামাদের বুঝলি?’

নিলার কথা শুনে আর চুপ করে থাকতে পারলাম না! এবার অশ্রুগুলোকে ছেড়ে দিলাম। এতোটা খারাপ কেউ হতে পারে? নিজের বন্ধুর সাথে এতোটা? আর সামাদ উনি এতোটা খারাপ! আগে ধারনাও ছিলো না আমার।কি করবো এখন আমি? আহানকি আমায় ভুল বুঝবে? নিলা তো চলে গেলো আমি এই চারদেয়ালে ব’ন্দি হয়ে রইলাম। এইখানে তো এই একটা খাট আর টেবিল, পুরো রুম জুড়ে কিছুই নেই! শরীরটা বড্ড ক্লা’ন্ত লাগছে। বিছানায় একটু বসতেই চোখ পড়লো আমার ব্যাগের দিকে। যেটা আমার কাঁধেই ছিলো। ব্যাগটার একপাশের চেন খুলে পানির বোতল থেকে একটু পানি খেলাম। অপর পাশের চেনের দিকে একটু ভারী লাগছে বিধায় খুলতেই আহানের সেই ডায়েরীটা পেলাম! এইত্তো এটাই সেই ডায়েরি এটাই তো এতোদিন খুঁজেছি আমি অথচ এই ব্যাগে রেখে দিয়ে আমি পুরো ঘর খুঁজে বেরিয়েছি! এইবার পড়ে দেখার পালা এই ব্যাগে ঠিক কি রয়েছে(আমি ব্যাতীত আমার গল্প অন্য কোনো গ্রুপ বা আইডিতে পোস্ট নিষিদ্ধ! মানা করার পরেও অনেকে এরকম করছেন প্লিজ যারা গল্পটা পড়বেন তারা দয়া করে আমি যেখানে পোস্ট করি সেখানে পড়বেন অন্য কারো আইডি বা গ্রুপে পড়বেন না।
_______________________

সবাই চলে যেতেই আহান আরো একবার চোখ বোলালো সেই চিঠিটাতে। নিরব অশ্রু কনা গিয়ে পড়লো সাদা চিঠিটার উপর। আহান ভাবছে সত্যিই কি তার নুড়ি পাথর তার সঙ্গে এরকমটা করলো। হঠাৎই আবারো লেখাগুলো পর্বযবেক্ষন করতে লাগলো আহান। লেখাগুলো বেশ ছোটো অক্ষরের এবং অক্ষরগুলো অনেকটাই পেঁচানো লেখা! এই লেখা তো আহান আরোও অনেক বার দেখেছে। আহান মস্তিষ্কে চা’প প্রয়োগ করলো মনে করার জন্য।

-‘ এই লেখা তো নিলার! হ্যাঁ নিলা বাংলা লেখাতো এইরকমই। আর এই কাগজটাও নিলাই এনে দিয়েছিলো তার মানে কি নিলাই? ভাবতে পারছি না কোনোকিছু। যদি নিলা এটা না লিখে থাকে তো মৃদুলা এটা লিখবে? আমি তো মৃদুলার লেখাও চিনি ও তো কতোবারই আমার চোখের সামনে লিখেছে এটা মৃদুলা লিখেনি আমি ১০০% শিওর! এটা নিলারই লেখা আর তখন তো মৃদুলা আমাকে সবটা বলতে বলেছিলো তাহলে সবটা বলতে বলে কেনো ও মাঝপথে চলে যাবে এই ডির্ভোস পেপার দিয়ে? চলে গেলে তো আমাকে বলতে বলতো না। আর তখন আমার মা’থায় কে আ’ঘা’ত করেছিলো মৃদুলা? সম্ভব নয় ও আমার সামনে বসা ছিলো তার মানে পেছন থেকে কেউ এরকমটা করেছে! আর যে-ই এটা করেছে।সে এসব লিখেছে আর লেখার ধরন তো বলে দিচ্ছে এটা নিলার লেখা আর নিলাই তো আমাকে হাসপাতালে এনেছে তার মানে নিলা! উফফ ভাবতে পারছি না আর! আমাকে এখুনি সবটা জানতে হবে।

#চলবে?