হৃদমাঝারে শুধু তুমি পর্ব-০৬

0
424

#হৃদমাঝারে_শুধু_তুমি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পার্ট:০৬

বিথী:কেমন আছিস অরিন?

অরিন: আলহামদুলিল্লাহ তুই?

বিথী:বেশ আছি।

বাড়িতে পৌঁছে সবার সাথে দেখা করে বিথীর কাছে এসেছে অরিন।আলাপের মধ্যে হৃদিতা আসলো।

হৃদিতা:বিথী আপি,আকাশ ভাইয়া কোথায়?

বিথী:জানি না ,মনে হয় পুকুর পাড়ে ।

অরিন:আমি আর হৃদিতা গিয়ে দেখা করে আসি।

অরিন আর হৃদিতা গেলো।পুকুর পাড়ে পা ডুবিয়ে বসে আছে আকাশ। কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে ঘুরে তাকালো।

আকাশ:কিছু বলবি?

লামিয়া:কষ্ট হচ্ছে?

আকাশ:আমার আর কষ্ট।

লামিয়া:ভাইয়া।

আকাশ:আরে আমার কিছু হয় নি।

লামিয়া:তুই সবাইকে মিথ্যে বলতে পারিস কিন্তু আমাকে না।আমি জানি তুই কষ্ট পাচ্ছিস।এই ভাইয়া তুই বললে আমি বিথীর শাতেহ কথা বলি?

আকাশ এক হাতে বোনকে আগলে নিল।
আকাশ:বোন, ভালোবাসলে যে তাকে পেতে হবে এর মানে নেই।থাকুক না সে অন্য কারোর সাথে সুখী।আমরা না হয় দূর থেকেই ভালোবেসে যাই । ভালোবাসার মানুষের সুখের জন্য আমরা তাকেও ছাড়তে পারি।

লামিয়া আর কিছু বলল না।দূর থেকে অরিন আর হৃদিতা সব শুনলো।অরিন আগেই জানে আকাশ বিথী কে ভালোবাসে আর বিথী তার ফুফাতো ভাই কে, যার সাথে ওর বিয়ে।এক তরফা ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হিসেবে অরিন আকাশকে মনে করে। নিঃস্বার্থ ভাবে কাওকে যে ভালোবাসা যায় সেটা আকাশের মাধ্যমেই বোঝা যায়।আকাশ লামিয়ার বড় ভাই।কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ি মধ্যে বেশ চিল্লাচিল্লি শুনা গেলো । ব্যাপারটা বুঝার জন্য অরিন আর হৃদিতা ভিতরে গেলো।ভিতরে গিয়ে ওদের চক্ষু ছানাবড়া।আদ্রিয়ান,সাগর আর অনিক বসে আছে।আর সবাই ওদেরকে জামাই আদর করছে। আদ্রিয়ানদেরও ওদের দেখে সেম অবস্থা।

অরিন এর মা:আরে অরিন,এটা বিথীর হবু বর।(আদ্রিয়ানকে উদ্দেশ্য করে)

মুহূর্তেই অরিনের মুখ কালো হয়ে গেলো।মনে হচ্ছে কেও ওর মনে ছুরি দিয়ে বার বার আঘাত করছে। তাও হাসি মুখে সাক্ষাৎ করলো।করার পর নিজের রুমে, যেখানে ওদের থাকতে দেয়া হলো,সেখানে গেলো।সারাদিন আর বের হয় নি।সবাই ক্লান্ত ভেবে পাত্তা দিলো না।

মধ্যরাত হাজারো মানুষের অনুভুতি মঞ্জিল।এই সময় কেও নতুন প্রেমের আবেশে মেতে থাকে তো কেও কষ্টে ঘেরা স্মৃতিতে।অরিন জানালার পাশে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।হৃদিতা ও জেগে আছে কিন্তু ঘুমানোর ভান করছে।সামান্তা ঘুমাচ্ছে।তনয়া আর সোহা লামিয়ার সাথে।ঘুম নেই বিন্দু মাত্র অরিন এর চোখে।দূরের শুকতারার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

অরিন:আর কত?কতবার এভাবে ভেঙ্গে গুড়ো হবো।বাইরের থেকে সবাইকে দেখাই আই এম হ্যাপি,কিন্তু আমি যে মরে যাচ্ছি। যাই নিজেকে সামলে রেখেছি ,কিন্তু আজ ভেঙ্গে গেলাম আমি।পারছিনা আর অভিনয় করতে।আর পারছি না।কেনো এমন হলো আমার সাথে?কেনো ধোঁকা দিল আদ্রিয়ান আমায়?

ওদিকে আদ্রিয়ান ও ভাবছে কেনো করলে এমন অরিন?

ভ্যালেন্টাইন ডে!!প্রত্যেক কাপল দের জন্য স্পেশাল।তেমন অরিন আর আদ্রিয়ান এর জন্য ও।
নিশা:এত সেজে গুঁজে কোথায় যাচ্ছিস?

অরিন:আজকে ভ্যালেন্টাইন ডে!আজকে আদ্রিয়ান কে সারপ্রাইজ দিবো।

নিশা: তা কিভাবে?

অরিন নিশার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো।বসে বললো,

অরিন:ভালোবাসি তোমাকে,বড্ড ভালোবাসি!(ফুল এগিয়ে দিয়ে)

নিশা: এতটুকুই?

অরিন:এর বেশি বলতে পারবো না!

বলেই বেরিয়ে গেলো,ওদিকে আদ্রিয়ান অপেক্ষা করছে অরিনের।তখনই ফোন মেসেজ আসলো।
“যাকে এত ভালোবাসেন,সে কি আদো আপনাকে ভালোবাসে?”

আদ্রিয়ান সাথে সাথে কল দিল,কিন্তু রিসিভ করলো না।আবার মেসেজ আসলো।
“ফোন দিচ্ছেন কেনো, যা বলছি শুনুন।আপনার অরি পাখি অন্য কাওকে ভালোবাসে।”

আদ্রিয়ান রিপ্লাই করলো,
“কি যা তা বলছেন?”
আবার মেসেজ আসলো” ভিডিও টা দেখুন।”
আদ্রিয়ান ভিডিও ওপেন করলো,যেখানে অরিন কাওকে বলছে “ভালোবাসি ,ভালোবাসি বড্ড তোমাকে।”
ছেলের চেহারা বোঝা যাচ্ছে না।আদ্রিয়ান কিছু ভাবতে পারছে না।পার্ক থেকে বের হতে নিলে একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খায়।মেয়েটির হাতে ফুল ছিল তা পড়ে যায়।আদ্রিয়ান সেটা তুলে মেয়েটার হাতে দেয়,সেই মুহূর্তে অরিন দেখে ফেলে।তখনই তার মনে কালো মেঘের আবেশ এসে পড়ে।দূর থেকে কথা না শোনা গেলেও,মনে হচ্ছে আদ্রিয়ান মেয়েটাকে প্রপোজ করছে।অরিন এক ছুটে ওই স্থান ত্যাগ করলো।
দুইজন মানুষ দুইজনকে ভুল বুঝে চলে গেলো।সেদিনের পর কেও কারো সাথে যোগাযোগ রাখে নি।আদ্রিয়ান ভেবেছে অরিন নতুন মানুষের সাথে সুখে আছে।আর অরিন ভেবেছে আদ্রিয়ান অন্য কাওকে নিয়ে সুখে আছে।অথচ দুইজনের একবারও মাথায় আসলো না আদো যা হচ্ছে তা কি সত্য?

এভাবেই বিচ্ছেদ ওদের । দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শুয়ে পড়লো অরিন।

হৃদিতা:সব দোষ আমার(মনে মনে)

বিয়ের আমেজে পূর্ণ বাড়ি।কালকে এনগেজমেন্ট।আজকে সবাই মিলে ঠিক করেছে গেম খেলবে।সবাই ডিসাইড করছে,কি খেলবে।

অরিন:কি খেলা যায়?

তনয়া:ট্রুথ অ্যান্ড ডেয়ার।

সামান্তা:না তুই সবসময় ডেয়ার নিশ কিন্তু কমপ্লিট করিস না।

বিথী:একদম।

অরিন:সবসময় ঝামেলা করে ।

আদ্রিয়ান: যে নিজেই একটা ঝামেলা সে আবার অন্য কে ঝামেলা বলে!

অরিন:আমাকে বললে?

আদ্রিয়ান:কোনো সন্দেহ?
সবাই একসাথে হেসে দিল।

লামিয়া: এ তনয়া কে বলে।নিজেই তো ডেয়ার নিলে বাহানা করে ভেস্তে দেয়।

আদ্রিয়ান:তাই তো বললাম নিজেই ঝামেলা।

অরিন:ভালো হচ্ছে না কিন্তু!

সামান্তা:শুধু তাই নয়! কথায় না পারলে কেঁদে ভাসিয়ে দেয়।

তনয়া: হ্যাঁ আগের বার এমন করেছিল।

আদ্রিয়ান: ছিচ কাঁদুনি!!

অরিন:ভালো হচ্ছে না এডি!

বিথী:এডি?

আকাশ:এডি কি রে?

মুহূর্তেই মুখ চুপসে গেল অরিনের।আদ্রিয়ান মলিন চোখে তাকিয়ে রইলো।প্রায় দুই বছর পর এডি ডাক শুনলো।অরিন কিছু না বলে উঠে চলে গেলো ।

বিথী :এর কি হলো?

আকাশ:কে জানে ?আচ্ছা আমি যাই কাজ আছে।
বলে উঠে গেলো।আদ্রিয়ান ও হুট করে উঠে গেলো।তার পিছু পিছু অনিক।বাকি রইলো বিথী ,সাগর,মমি আর হৃদিতা।

বিথী:এদের কি হলো?
তখনি পাশে থাকা ফোনের স্ক্রিনে মেসেজের নোটিফিকেশন আসলো।বিথী চোখ বড় বড় করে তাকালো।মেসেজের জন্য নয়,ফোনের স্ক্রিনে আদ্রিয়ান আর অরিনের পিক দেখে।
বিথী ভাবতে লাগলো আদ্রিয়ান আর অরিন একসাথে কেনো?কি আছে ওদের মধ্যে?আর এডি ডাকার পর ওদের মুখ এমন দেখালো কেনো?বিথী আর ভাবতে না পেরে উঠে চলে গেলো।

মমি:আজ আদ্রিয়ান এর জন্য অরিন কষ্ট পাচ্ছে!
সাগর:কি?কি বললে?
মমি: যা শুনলেন তাই।
সাগর : ও রিয়েলি? আদ্রিয়ানএর জন্য অরিন কষ্ট পাচ্ছে?আপনার বান্ধবী আমার ভাই কে ঠকিয়েছে।
মমি:বাহ ,বন্ধুকে বাঁচাতে আরেকজন এর উপর দোষ দিচ্ছেন?
সাগর: লিসেন!আমি যা সত্যি তাই বলছি।অরিন একজন ঠক।
মমি:খবরদার ওর নামে বাজে কথা বলবেন না,আদ্রিয়ান ঠক, ও প্রতারণা করেছে অরিনের সাথে।
সাগর: হাহ,মিথ্যে বলা বাদ দিন।অরিন একটা ঠকবাজ ,প্রতারক ।

এতক্ষণ হৃদি সব শুনছিল,আর না পেরে বললো,

হৃদিতা: প্লিজ তোরা চুপ কর,না আদ্রিয়ান ঠক আর না অরিন ঠক। যা হয়েছে আমার জন্য হয়েছে।

মমি:মানে?

সাগর:কি বলছো হৃদি?

হৃদিতা: যা বলছি সত্যি বলছি।

মমি:তুই এর আগেও বলেছিস তোর কারণে ওরা আলাদা,আজকেও বলছিস।কিন্তু কেনো?অরিন যা বললো তাতে তোর দোষ কোথায়?অরিন তো নিজে দেখেছে আদ্রিয়ান অন্য কাওকে প্রপোজ করেছে।

সাগর: কিহ?

মমি: হ্যাঁ,অরিন বললো ভ্যালেন্টাইন ডে তে ও আদ্রিয়ান কে প্রপোজ করতে গিয়েছিল কিন্তু তখন আদ্রিয়ানকে অন্য কাওকে প্রপোজ করতে দেখেছে!

সাগর:কিন্তু আদ্রিয়ান বললো ওর কাছে ভিডিও এসেছে যেখানে অরিন অন্য কাওকে ভালোবাসি বলছে!

মমি: হোয়াট?মানে কি ?

হৃদিতা:সব আমার সাজানো!

মমি সাগর বিস্ময় নিয়ে তাকালো।

সাগর:মানে?

হৃদিতা:শুনো তাহলে….

#চলবে…