হৃদমাঝারে শুধু তুমি পর্ব-০৭

0
435

#হৃদমাঝারে_শুধু_তুমি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পার্ট:০৭(বোনাস পার্ট)

সেদিন আমি অরিন কে ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য ফেক ভিডিও তৈরি করি।ভয়েস টা অরিনের হলেও মেয়েটা অরিন ছিল না আর না ছেলেটার সাথে ওর যোগাযোগ। একই ভাবে নুহা কে দিয়ে বাকি কাজ করাই। ও ইচ্ছে করে আদ্রিয়ান এর সাথে ধাক্কা খায় আর ফুল নিচে ফেলে ।আদ্রিয়ান ওটাই তুলে দেয় কিন্তু ব্যাপারটা এমন ভাবে প্রেজেন্ট করি যে অরিন ভেবেছিল আদ্রিয়ান নুহা কে প্রপোজ করছে।
বলেই থামলো হৃদিতা।সাগর আর মমি বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে।
সাগর:ছি!এটা কি করলে তুমি হৃদিতা?

মমি:তুই আর অরিন তো বেস্ট ফ্রেন্ড,তাহলে?

হৃদিতা:আমাদের শুরু থেকেই মনোমালিন্য ছিল।অরিন আমার প্রত্যেকটা কাজে বাধা দিতো।এমনকি আমাকে থাপ্পড় ও মেরেছে।সেই থেকে ওর উপর রাগ ।আর রাগের বশে এত বড় ভুল করে ফেলি।

অরিন:তোর কাছে এটা ভুল?

হৃদিতা ,মমি ,সাগর চমকে গেলো।এই মুহূর্তে অরিন কে কেও আশা করে নি এখানে।

হৃদিতা:অরিন!

অরিন:কেনো করলি এমনটা?কি পেলি? বল!কি পেলি?

হৃদিতা:আমি ভুল(আর কিছু বলার আগেই সজোরে থাপ্পড় মারলো অরিন)

হৃদিতা গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।

অরিন:তুই জানিস আদ্রিয়ান আমার জন্য কি?কেনো করলি?কেনো!!!

বলেই উঠানে বসে পড়লো।তখন রুমে অরিন বসে ছিল আর তনয়া আসলো।

তনয়া:আপু!

অরিন:কি?

তনয়া:এই নাম্বারটা সেভ করো তো তোমার ফোনে।

অরিন: কার নাম্বার এটা?

তনয়া:আরে বিথী আপুর হবু বর আদ্রিয়ান ভাইয়ার বোন আরিফার নাম্বার। ও ক্লাস নাইন এ পড়ে।ওর সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে । তাই নাম্বারটা নিলাম।কিন্তু আমার ট্যাব চার্জে তাই তোমারটাতে নিবো।

অরিন কিছু না বলে ফোন খুঁজতে লাগলো কিন্তু পেলো না ।তখনই মনে পড়লো ও উঠানেই রেখে এসেছে।এক মুহুর্ত দেরি না করে দৌড় লাগালো।কারণ স্ক্রিনে ওর আর আদ্রিয়ান এর ছবি বিথী দেখলে সর্বনাশ।কিন্তু এসে এমন কিছু শুনবে ভাবে নি।

হৃদিতা:অরিন আমি সরি বলছি..

অরিন:সরি বললে কি সব আগের মত হবে?

হৃদিতা চুপ করে রইলো।অরিন কিছু না বলে উঠে দাড়ালো।
অরিন:এই কথা যেনো আদ্রিয়ানের কানে না যায়!

মমি:মানে? আদ্রিয়ানকে না বললে এই বিয়ে হয়ে যাবে!

অরিন:বিয়ে হতে দে।

সাগর:তুমি পাগল হয়ে গেছো?

অরিন:প্লিজ ভাইয়া,এই কথা আদ্রিয়ান এর কানে যেনো না যায় ।এই বিয়ে আমার জন্য ভাঙলে নিজেকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবো না।

বলেই ফোন নিয়ে ঘরে চলে গেলো। অরিনের চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছেনা।অরিন চাইলেই অদ্রিয়ানকে বলে দিতে পারে সত্যি টা ,কিন্তু এতে বিথীর বিয়ে আটকে যাবে ।ওর মনে পড়লো ওর মায়ের কথা।যখন ও নাইনে পড়ত।

মা: জানিস তোর বাবা আর আমার বিয়েতে অনেক ঝামেলা হয়েছে।

অরিন:কিরকম?

মা:তোর বাবা বেকার ছিল,তাই কেও মেনে নেয় নি।আর এদিকে আমি আর তোর বাবা একে অপরকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।কিন্তু সবাই বিপক্ষে ছিল।তখন তোর মেজো খালা আর বড় খালা আমায় সাহায্য করে ।আর তোর খালুরা অনেক উপকার করে।আমার জন্য তারা বাড়ি ছাড়া হয়েছিল।
বলতেই মুখ মলিন হয়ে গেলো মায়ের।আবার বলা শুরু করলো,
মা:তাও একটা অভিযোগ করে নাই তারা।তাই বলি সবসময় খেয়াল রাখবি,আমাদের কারণে যেনো ওদের কিছু না হয়।দরকার পড়লে নিজে বিসর্জন দিবি।ঠিক আছে?

অরিন :আচ্ছা আম্মু।

সেইদিনের কথা আজও মনে আছে।কি করে পারবে ও সবার সুখে পানি দিতে।আর বিথী ও তো আদ্রিয়ানকে ভালোবাসে।ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল।বিকেলে ঘুম ভাঙ্গল ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো।দেখলো হৃদিতা মন মরা হয়ে এক কোণায় চুপ করে বসে আছে।অরিন কিছু না বলে বাইরে চলে গেলো।হৃদিতা তা দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।মমি এসে ওর পাশে বসলো।

মমি:তুই ওকে সহ্য করতে পারতিস না,তাহলে এত ভালো বন্ধুত্ব কি করে হলে?

হৃদিতা বলতে লাগলো।
ঐদিনের ঘটনার পর হৃদিতা অরিনকে মন মরা থাকতে দেখে বেশ খুশি হতো।এমনভাবেই দিন যেতে লাগলো।একদিন হৃদিতার ব্যাগে ড্রাগস পাওয়া গেছে। তা দেখে প্রিন্সিপ্যাল হৃদিতা কে টিসি দিচ্ছে।

হৃদিতা: স্যার বিলিভ মি এগুলো আমার না।

স্যার:প্রমাণ করো।

হৃদিতা বুঝছেনা কি করবে।কারণ ওর কাছে প্রমাণ নেই।আর কে এটা করলো তাও জানে না।

অরিন: স্যার?

সবাই অরিন এর দিকে তাকালো।
স্যার:কিছু বলবে?

অরিন কিছু না বলে স্যার কে নিজের মোবাইল এর ভিডিও প্লে করে দিলো।যেখানে দেখা যাচ্ছে নুহা হৃদিতার ব্যাগে ড্রাগস রাখছে।হৃদিতা অবাক চোখে তাকালো।

হৃদিতা:এসব কি নুহা?

স্যার:তুমি এমন কেনো করলে?

নুহা: ও শুধু আমাদের কলেজ থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়।তাই চেয়েছিলাম ও যেনো বের হয়ে যায়।

ব্যাস সব সমাধান ।নুহা কে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হলো।অরিন বের হয়ে মাঠে বসলো ।দিনরাত শুধু আদ্রিয়ান ভাবনায় থাকে ওর।
হৃদি:তুমি চাইলেই আমাকে ফাঁসাতে পারতে!তাহলে ফাসালে না কেনো?

অরিন:কেনো ফাসাবো?

হৃদিতা:আমি এতদিন তোমার সাথে খারাপ বিহেভ করেছি,নানা ভাবে অপমান করেছি।সেই হিসেবে রিভেঞ্জ।

অরিন:অন্যায় দেখে চুপ করে বসে থাকার মতো মেয়ে আমি না।অন্যায় দেখি বলে তোমার বিরুদ্ধে যাই।কিন্তু আজকে তোমার দোষ ছিল না,সেই হিসেবে বিনা দোষে কেনো শাস্তি পাবে।আর আমি তো বললাম ই অন্যায় আমি সহ্য করি না।

হৃদিতা অবাক হয়ে রইলো।নিজের অজান্তেই ওকে বললো,

হৃদিতা:ফ্রেন্ড হবে?

অরিন মুচকি হেসে সম্মতি জানালো।সেই থেকে ওরা বন্ধু ,ইভেন বেস্ট ফ্রেন্ড।এর মাঝে হৃদিতা চেয়েছিল অরিন কে সব সত্য বলে ওদের এক করতে কিন্তু ব্যর্থ ।কারণ আদ্রিয়ান চলে গেছিলো । হৃদিতা অরিন কেও বন্ধুত্ব নষ্টের ভয়ে সত্যি টা বলে নী।আজ অরিন সব জেনে গেছে ভেবে ভালো লাগলেও,অরিন যে ওকে আর নিজের বেস্ট ফ্রেণ্ড ভাববে না তা সিওর।
বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। মমিও কিছু বললো না।
রাতে সবাই খেলেও অরিন আসে নি। ও বললো ওর খিদে নেই। হৃদিতাও খায় নি। খাবে কিভাবে?অনুভূতি হারিয়ে গেছে।হৃদিতা চুপ করে এসে শুয়ে পড়লো।অরিন দেখেও না দেখার ভান করলো। যা হৃদিতা বুঝতে পেরেছে।তখনই সামান্তা আসলো।
সামান্তা :তোরা কি খাবি না?

অরিন:বললাম তো খিদে নেই।

সামান্তা:হৃদি তোর ও?

হৃদিতা:হুমম।

অরিন আড়চোখে তাকিয়ে নিচে চলে গেলো। হৃদিতা অরিনের এই আচরণ মানতে পারছেনা।কিন্তু কি করার।সব ওর কর্মের ফল।১০ মিনিট পর খাবার প্লেট হতে প্রবেশ করলো অরিন।সামান্তা লামিয়ার সাথে থাকবে।আজকে মমি,হৃদিতা আর অরিন একসাথে থাকবে।তনয়া,সোহা আর আরিফা এক রুমে।লামিয়া আর সামান্তা এক রুমে।

অরিন কিছু না বলে হৃদিতার পাশে বসলো।মমি সোফায় বসে কাণ্ড দেখছে।

অরিন:খাবার পর কারো মেডিসিন আছে ,সে যেনো খেয়ে নেয়।

হৃদিতা বুঝতে পারলো ওকে বলছে,কারণ ওর জায়গা চেঞ্জ হলে জ্বর আসে।সেই জন্য ডক্টর ওষুধ দিয়েছে।হৃদিতা কিছু বললো না।
গুটিশুটি মেরে শুয়ে রইলো।

অরিন:আপনি কি উঠবেন না?

হৃদিতা:আমার খিদে নেই!

অরিন:উঠতে বলেছি!

হৃদিতা:আমি খাবো না!

অরিন এবার ধমক দিয়ে বললো,

অরিন:মারবো টেনে এক চড়।উঠ বলছি।নাহলে তোকে কেটে লবণ দিয়ে মাখিয়ে ফ্রাই করে ওই নদীর মাছ দের খাবার হিসেবে দিবো।
হৃদিতা ঝাড়ি খেয়ে উঠে পড়ল।লক্ষ্মী মেয়ের মত অরিনের হাতে খাচ্ছে।

হৃদিতা:তুই খাবি না?

অরিন:কেও খাইয়ে দিল খেতেই পারি।

হৃদিতা মুচকি হেসে অরিন কে খাইয়ে দিলো।হুট করে ও অরিন কে জড়িয়ে ধরলো।

হৃদিতা:সরি সব আমার জন্য হলো।

অরিন:হৃদি রিলাক্স। যা হওয়ার হয়ে গেছে।

হৃদিতা:কিন্তু..

অরিন:ভাগ্যে থাকলে আদ্রিয়ান আমারই হতো।হয়তো নেই তাই হয় নী।এতে তোর দোষ নেই।তাই ভাবিস না।ঘুমিয়ে পর।
মমি এতক্ষণ ওদের কান্ড দেখছিল।
মমি:হুমম হেব্বি ঘুম পাচ্ছে।

দুইজন ফিক করে হেসে দিল।

#চলবে