হৃদয়ের ছোঁয়া পর্ব-১২

0
323

#পর্ব১২
#হৃদয়ের_ছোঁয়া
#অর্ষা_আওরাত

সন্ধ্যা নেমে গেছে বেশ কিছুক্ষণ আগেই। সামাদ চলে যাবার পরেই সোহা, হৃদয় আর ছোঁয়া তিনজন মিলে বাড়ি চলে গেলো। পুরো রাস্তায় সোহা একটা কথাও বলেনি কারো সাথে। নির্বিকারভাবে পথ চলেছে। ছোঁয়া আর হৃদয় যথেষ্ঠ চেষ্টা করছে সোহার সাথে কথা বলতে কিন্তু সোহা আগের ন্যায় তার ভিতরে নির্বিকারই ভাবটাই বিদ্যমান বহাল রেখেছে। বাড়ি ফিরেই সবার আগে সোহা নিজের রুমে গিয়ে ধপ করে দরজা বন্ধ করে দেয়! সোহার রুম নিচে হওয়ার কারনে সবারই দৃষ্টিগোচর হলো ব্যাপারটি। পরিবারের সবাই সন্দিহান চোখে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে যার অর্থ ছোঁয়া বুঝতে পেরে সবাইকে খোলসা করে বলে। সব কথা শুনে সবাই বিস্মিত হয়ে ছিলো কিয়ৎক্ষন কিন্তু সব ভুল বোঝাবুঝি অবসান যখন ঘটেছে তখন এই নিয়ে আর কোনো কথা না বাড়ানোই শ্রেয় মনে করলো সবাই। সারাদিনের ধকল সেড়ে ছোঁয়া আর হৃদয় নিজেদের রুমে গেলো ফ্রেশ হতে। সোহা রুমে গিয়েই দরজার নিচে বসে কাঁদছে! যে কান্নার কোনো শব্দ নেই একেবারে নিশ্চুপ কান্না। হয়তো যে যখন কোনো কিছু বলার থাকে না তখন মানুষ এভাবে নিশ্চুপ কান্না করে! কিছুক্ষণ এভাবে থেকে সেখানেই দরজার পাশ ঘেঁসে ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়লো সোহা। ক্লান্ত শরীরে এক নিমিষেই ঘুমের রাজ্য এসে ভড় করলো। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে বিছনায় গা এলালো ছোঁয়া। হৃদয় বাজারে গিয়েছে তার শশুড়মশাইয়ের সঙ্গে হয়তো কোনো কিছু কেনার জন্য। ছোঁয়া বিছানায় শুতেই ক্লান্ত শরীর বিশ্রামের জন্য ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো। ছোঁয়ার মা এসে দেখলো ছোঁয়া ঘুমিয়ে পড়েছে বিধায় ছোঁয়াকে না ডেকে তিনি চলে গেলো নিজ কর্মে। ওদিকে সোহা দরজা বন্ধ করেই যে ঘুমিয়েছে আর খোলার নাম নেই।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
শীতের পৌষ মাসের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। সজল দৃষ্টি যতোদূরই যায় কেবল কুয়াশাচ্ছন পরিবেশ। পাখিগুলো ডেকে যাচ্ছে একনাগাড়ে কিচিরমিচির শব্দ করে। রাস্তা দিয়ে মানুষজন নিজেকে গরম কাপড়ে বেষ্ঠিত করে নিজ গন্তব্য যাচ্ছে। পায়ের নিচের ঘাসগুলো ও শিশিরে ভিজে গেছে পুরো। যদিও বা ঘাসগুলো হীমশীতল ঠান্ডা হয়ে রয়েছে শিশিরের কারনে তবুও সেই হিমশীতল ঘাসগুলোকে নিজের হস্ত দ্বারা ছুয়ে দিতে বেশ ইচ্ছে জাগলো ছোঁয়ার। কুয়াশাজড়ানো সকাল দেখতে বেশ ভালোই লাগছে ছোঁয়ার। ভোর বেলায়ই ঘুম ভেঙেে যাওয়ার কারনে বাড়ির সামনের দিকটায় একটু বেরিয়েছে। কালকে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর ফলে আজকে ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি ভেঙে গিয়েছে। চুলোর পাশে মা আর কাকিমারা মিলে পিঠে বানাচ্ছে হয়তো।
চুলো থেকে গরম ভাব আছড়ে পড়ছে। পিঠের মিষ্টি সুবাস নাকে আসতেই খাওয়ার ইচ্ছে জাগলো মনে। ইচ্ছে কে প্রাধান্য দিয়ে বাড়ির সামনের মাটির চুলোর কাছে যাওয়ার জন্য হাঁটা ধরলো। হঠাৎই ঠান্ডা বাতাস এসে গায়ে দোলা দিয়ে গেলো। একে তো শীত তার উপর ঠান্ডা বাতাসে কাঁপাকাপি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে সব মিলিয়ে। এই হিমশীতল সকালে গরম কাপড় না পরায় নিজেই নিজেকে গাল দিতে লাগলো। বাতাসের তীব্রতার কারনে সামনের দিকে হাঁটতে পারছে না। হঠাৎই ছোঁয়া গা একটা পুরো চাঁদরে আবৃত হয়ে গেলো। পিছন ফিরে হৃদয়কে দেখে অবাক হলো না ছোঁয়া। হৃদয় ছোঁয়ার গায়ে চাদরটি বেশ ভালো করে পেচিয়ে দিয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত কন্ঠস্বরে বলে ওঠলো,

–“এই সকাল বেলা গায়ে গরম কাপড় না দিয়ে বাহিরে বেরিয়েছো কোনো সাহসে? আক্কেল বলতে কিছু নেই তোমার নাকি? আজকেইতো বাড়ি ফিরতে হবে সেই খেয়াল আছে তো নাকি তোমার?”

হৃদয়ের ধমকানি শুনে ছোঁয়ার মুখে বিরক্তিকর রেশ ফুটে ওঠলো। ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ পরিমান বাঁকিয়ে হৃদয়কে বললো,

–“ভুল হয়ে গেছে তাই বলে তুমি এই সকালবেলা আমাকে বকতে চলে এলে? আমাকে এতো কথা না বলে নিজে রুমে গিয়ে আগে ফ্রেশ হয়ে নাও।”

ছোঁয়ার কথার পিঠে হৃদয় আর কোনো কিছু বলবে এর আগেই ছোঁয়ার মা ছোঁয়ার উদ্দেশ্য বলে ওঠলো,

–“তুই একটু সোহার রুমে গিয়ে ওকে ডেকে তুলে আনতো এদিকে। কালকে যে দরজা বন্ধ করেছে তো আর খোলার নাম নেই। রাত্রেবেলা না খেয়েই শুয়েছে তুই একটু ডেকে ওঠিয়ে দে তাড়াতাড়ি।”

মায়ের কথা কানে পড়তেই ছোঁয়া ছুট লাগালো সোহার রুমের উদ্দেশ্য। যাবার সময় হৃদয়কে রুমে চলে যেতে বললো। আপাততো এখন ছোঁয়া সোহার রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে বেশ অনেকক্ষন ডাকবার পর সোহা দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই ছোঁয়া রুমে ডুক সোহাকে দেখতে পেলো। মাত্র এক রাত্রেই চোখগুলো কেমন ভিতরে ঢুকে গেছে! কালসিটে পড়ে গেছে চোখের নিচে। বোধহয় রাত্রে ঘুমোয়নি ভালো করে। নাক মুখও ফুলা ফুলা দেকা যাচ্ছে যা অনেকক্ষন ধরে কান্না করলে হয়। ছোঁয়ার বোঝার বাকি রইলো না সোহার এই অবস্থা কেনো। সোহার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো ছোঁয়া।

–“কালকে সবটা জানার পরেও তুই এখনো কেনো সামাদের কথা ভাবছিস সোহা? যে তোকে ভালোবাসে না তার তিক্ত স্মৃতি মনে রেখে মনাে বিষাদময় করে রাখার চেয়ে তাকে মন থেকে ঝেড়ে ফেলে হাসিখুশি থাকাই উত্তম নয় কি?”

ছোঁয়ার প্রশ্নের উত্তের সোহা বললো,

–“আজ থেকে এই সকালই হবে আবার নতুন সকাল। যেখানে থাকবে না কোনো তিক্ত স্মৃতি। তুই নিচে যা আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

-বোনের কথায় বেশ খুশি হলো ছোঁয়া। সোহা যে সব ভোলার কথা বলেছে এতেই খুশি সে। দিনশেষে তার বোন ভালো থাকুক এটাই চায় সে। কিছুক্ষন সময় অতিবাহিতো হবার পর সোহা নিজেকে ফ্রেশ করে একেবারে ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে নিচে নামলো। নিচে যেতেই তাড়াহুড়ো করে খাবার শেষ করে ভার্সিটির উদ্দেশ্য হাঁটা ধরলো। পরিবারের সবাই ভেবেছিলো কালকে অতোকিছু ঘটবার পরে হয়তো সোহা মনমরা হয়ে থাকবে। কিন্তু সোহা যে আগের মতনই খেয়েদেয়ে চলে গেলো এতে সবাই বেশ খুশি হয়েছে। যেরকম ভাবেই হউক সামাদের স্মৃতি ভুলে সোহা নতুন করে বাঁচুক এটাই সবার কাম্য।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
প্রতিদিনের ন্যায় ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ির অপেক্ষা করছে সোহা। ছোঁয়া থাকাকালীন দু বোনে বেশ গল্প করতে করতেই বাড়ি ফিরতো তখন যে সময় কিভাবে কেটে যেতো সেটা দু’জনের কেউই টের পেতো না। এখন ছোঁয়া না থাকার কারনে সোহা প্রতিদিন গাড়ি করেই বাড়ি ফিরে। কিন্তু আজকে যেনো কোনো গাড়ি খালি আসছে সহসা। মাথার উপরে সূর্য্য মামা বেশ চড়া করেই তার তাপ ছড়িয়ে দিচ্ছে চারদিকে। সেই তাপ যে খুব একটা ভালো লাগছে না সোহার সেটা তার বিরক্তিমাখা মুখ তেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। মাথার উপর কাকগুলোও সমানতালে কা কা করে ডেকে যাচ্ছে যার দরুন সোহার বিরক্তির মাত্রা আরো বেড়ে যাচ্ছে। এবার বিরক্তির মাত্রা শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেলো এবার সোহা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে গাগির জন্য অপেক্ষা না করে সে নিজেই হেঁটে বাড়ি যাবে। এতো অপেক্ষা করতে করতে শেষেমেষ দেরি হয়ে যাবে বাড়ি পৌঁছতে। সোহা যেই না দু কমদ হাঁটা ধরলো ওমনি তখনি সেহার সামনে মোটরসাইকেলে করে হেলমেটে মুখ আচ্ছাদন করে একজন পুরুষ এসে থামলো। লোকটি যে কে সেটা বুঝতে সোহার কিঞ্চিৎ পরিমানও সময় লাগলো না। কারন এই মানুসটিকে সে আগেও দেখেছে। মানুষটি হলো সুমন। সুমন তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে সোহার উদ্দেশ্য যার অর্থ হলো তুমি ওঠো। কিন্তু সোহা সেটা প্রত্যাখান করে নিজের সাহায্য নিয়েই মোটরসাইকেলে উঠে বসলো। আজকে কোনো কথা তর্ক ছাড়াই সোহা পিছনে ওটে বসায় সুমন বেশ জোড়ো সোরে একটা ঝটকা খেলো! সোহাকে বললো

–“আজ সুর্য্য কোনদিকে ওঠেছিলো বলতো সোহা?”

–“আপনি জানেন না সুর্য্য কোনদিনে ওঠে?”

–“হ্যাঁ জানি তো। কিন্তু তুমি আজকে কোনো তর্ক না করে কোনো কথা না বলে আমি বলার আগেই তুমি নিজে থেকে ওঠে গেলে! ব্যাপারটি অস্বাভাবিক না বলো? তাই তো জিগেস করছি আজ কি সূর্য্য অন্যদিকে উঠলো?”

–“এই ভর দুপুরে আমার সামনে এসে বাইক থামিয়েছেন নিশ্চয়ই আমার চেহারা দেখবার জন্য নয়? যদি তাই হয় বলুন আমি নেমে যাচ্ছি আমি কল্পনায় আমার চেহারা দেখুন বসে বসে।”

-“আরে আরে এতো রেগে যাচ্ছো কেনো? এমনি রোদ্রের উত্তাপে সব গরম তারউপর আবার তুমি গরম হলে তো আর বাঁচার উপায় নেই। তুমি বসো আমি স্টার্ট করছি।”

#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।