হৃদয়ের ছোঁয়া পর্ব-১৩

0
309

#পর্ব১৩
#হৃদয়ের_ছোঁয়া
#অর্ষা_আওরাত

বাড়ি আসতে আসতে একটু দেরি হয়ে যায় সোহার। ঘড়ির কাটা তিন এর ঘরে যখন পৌঁছেছে তখন সোহা বাড়িতে ঢুকলো। বাড়িতে হৃদয় দের পরিবার থেকে অনেক মেহমান এসেছে হয়তো একটু পরেই ছোঁয়াকে নিয়ে যাওয়া হবে হৃদয়ের বাড়িতে একবারের জন্য। ছোঁয়াকে আর কাছ থেকে দেখতে পাবে না ভেবেই খারাপ লাগা ছুঁয়ে গেলো মনের ভিতর। ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ছোঁয়ার রুমে গেলো সোহা। শেষবারের মতন কিছু কথা যে বলা আছে তার আপুকে। রুম থেকে বেরিয়েই সোহা দেখতে পেলো ছোঁয়া বাড়ির সামনে উঠোনে বসে আছে। ছোঁয়াকে দেখেই তার কাছে যায় সোহা। ছোঁয়ার সামনে এসে বললো,

–“আপু তুই একটু পর চলে যাবি। তোর বিয়েতে অনেক বিঘ্ন ঘটিয়েছি আমি আমাকে ক্ষমা করে দিস। সামাদের কথায় আসি সব করেছিলাম। তুই প্লিজ ওসব ভুলে যা?”

সোহার কথায় ছোঁয়া মুচকি হেসে বোনের হাত দু’টো নিজের হাতের মধ্যে খানে নিয়ে বলে ওঠলো,

–“তোর কোনো দোষ নেই। আমার ভুল বোঝাবুঝির জন্য সামাদের সব কথা তোকে শুনতে হয়েছে তাই যেমন তুইও দায়ী ঠিক তেমনি ভাবে আমিও দাযী আছি এ সবকিছুর পিছনে। তাই বলছি তুই ওসব মনে রাখিস না। মনে কর সেই দিন গুলো একটা দুঃস্বপ্ন ছিলো। ওগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল দেখি।”

ছোঁয়ার কথা শুনে সোহার মুখে হাসির রেখা দেখা দিলো। আজকে যেনো বুকের উপর থেকে টাথর টা সরে গেছে। নিজেকে এখন বড়ো হালকা মনে হচ্ছে সোহার। পরিবারের সবাই সবকিছু জানে কেউ এখন আর সোহাকে ওই দিনের কর্মের জন্য খারাপ চোখে দেখে না। স্বাভাবিক ভাবেই তার সাথে ব্যবহার করছে। আর নিজের বোনের সাথে যা করেে তার জন্য ছোঁয়াও তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। পরিশেষে সব কিছু পরিষ্কার হয়েছে। এখন সব ভুলে সোহার নিজের ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~

সেই বিদায় মুহুর্ত চলে এলো। ছোঁয়াকে রেডি করানো শেষ হয়ে গেছে এখন হৃদয়ের সাথে চলে যাবে। সবার মুখে বিষন্নতার ছাপ ছোঁয়া চলে যাবে বলে। ছোঁয়ার মা মেয়েকে ধরে খানিকক্ষণ পরপর কেঁদে ওঠছে। গাড়িতে ওঠানোর সময় ছোঁয়াকে হৃদয়ের হাতে সপে দিলো তারপর সেই শুভ্র রঙের গাড়িটি আস্তে আস্তে চলে গেলো ছোঁয়াকে সাথে নিয়ে। ছোঁয়া সবাইকে ছেড়ে চলে গেলো হৃদয়ের সাথে তার নতুন জীবনে।

আজও ছোঁয়া ভার্সিটি শেষে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে ঠিক তখনি আবারো আগমন ঘটলো সেই মটরসাইকেল আরোহীর! সুমন বাইকের ব্রেক কষতেই সোহা কোনো কিছু না বলে চুপচাপ বাইকে ওঠে বসে। ছোঁয়া সুমনকে আগেই বলে দিয়েছে সোহা সুমনের সাথে বন্ধুত্বের খাতিরে বাইকে ওঠে। সুমনও কিছু বলে নি আর। সোহা তাকে ভালোবাসে না কিন্তু কিছুসময় তো তার সঙ্গে থাকে এতেই সে সন্তুষ্ট। সুমনও খুশি হয় তাতে কিন্তু এখন আর সোহাকে বেশি কথা বলে বিরক্ত করে না কারন সে সবকিছুই জেনেছে এখন সোহার নিজেকে একা রাখা প্রয়জোন বলে চুপচাপ শুধু বাড়ির সামনে এনে সোহাকে নামিয়ে দিয়ে যায়।

দেখতে দেখতে কেটে যায় এক সপ্তাহ। এখন ছোঁয়া হৃদয়ের বাড়িতে নিজেকে বেশ মানিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে। সবার সাথে এক দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে ওঠেছে। সবার মনের মনিকোঠায় রয়েছে ছোঁয়া। কখনো কখনো মনে হয় না এটা তার শশুড়বাড়ি। দুপুরবেলায় ঘুমানোর পর যখন বিকেলে ঘুম থেকে ওঠলো তখন ছোঁয়া দেখলো পুরো রুম অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে আছে! ঘরের এক কোনে একটুও আলোর রেখা নেই। দরজা জানলা সব বন্ধ করা হয়েছে! ছোঁয়া অন্ধকার দেখেই ঘাবড়ে গেলো কিছুক্ষণ এর জন্য। তারপর সেই অন্ধকারেই একটা মানুষের অবয়ব দেখা যাচ্ছে যা আস্তে আস্তে ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে আসছে! মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে সব। ঘরে তো ছোঁয়া একা ছিলো তাহলে এই অন্ধকার কেনো? আর কে এগিয়ে আসছে তার দিকে? ছোঁয়া কিছু বুঝতে না পেরে জোড়ে এক চিৎকার দিয়ে ওঠলো ঠিক তখনি একজোড়া হাত এসে ছোঁয়ার মুখ বন্ধ করে দিলো! ছোঁয়া তো এবার আরো বেশি ভয় পেয়ে গেছে! ভয়ের চোটে চেহারা ফ্যাকাশা হয়ে গেছে। এই শীতের বিকেলেও তরতর করে ঘামছে ছোঁয়া! হঠাৎই পুরুষ কন্ঠে কেউ বলে ওঠলো,

–“আরে নিজের বউকে ধরতে গেলে যদি বউ চেচামেচি শুরু করে দেয় তাহলে তো দেখছি বউয়ের কাছেই আসা যাবে না আর।”

ছোঁয়ার কন্ঠস্বরের আওয়াজ কর্নকুহুরে প্রবেশ করা মাত্রই মস্তিষ্ক জানান দিলো এই কন্ঠস্বর শুধু একজনেরই। এবং সে আর কেউ না সে হলো হৃদয়! ছোঁয়া উমমম করছে মুখ বন্ধ থাকার কারনে কিছু বলে ওঠতে পারছে না। আস্তে আস্তে ছোঁয়ার মুখের বাধন আলগা হয়ে যেতেই ছোঁয়া বড়ো বড়ো দীর্ঘশ্বাস ফেলতে লাগলো! টেবিলে রাখা জগ থেকে আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে তৃষ্ণা মিটিয়ে নিলো। তারপর হৃদয়কে দেখতেই হৃদয়ের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে! যার অর্থ হৃদয় খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। ছোঁয়া বলে ওঠলো,

–“বিকেল বেলা হঠাৎ করে পুরো ঘর অন্ধকারময় করে রেখে আমাকে এভাবে ভয় দেখাবার কারন কি তোমার?”

হৃদয় ছোঁয়ার পাশ ঘেঁসে বসলো। ছোঁয়ার হাত দু’টি নিজের হাতের মধ্যে আবদ্ধ করে নিলো। চুপটি করে পলকহীন ভাবে কিয়ৎক্ষন ছোঁয়ার দিকে গভীর দৃষ্টিপাত করে বললো,

–“আজ খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তোমাকে নিয়ে একটু বাহিরে ঘুরতে যাবো। কিন্তু তুমি তো তুমিই! দুপুরবেলা ঘুমানোর পরে এখন একটু আগে কতোবার ডাকলাম তোমাকে কিন্তু তুমি? তুমি মরার মতন পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলে! তাই তো বাধ্য হয়ে এভাবে ভয় দেখাতে হলো তোমাকে।”

ছোঁয়া হৃদয়ের কথায় ভ্রুখানি কিঞ্চিৎ কুঁচকে হৃদয়কে বলে ওঠলো,

–“সেটা তো সুন্দর করে ডাকলেই পারতে বলো? এভাবে ভয় না দেখিয়ে।”

ছোঁয়া আরো কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু হৃদয় ছোঁয়ার ঠোঁটে তার আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে রেখেছে। ছোঁয়া কিছু বলতে পারছে না। হৃদয় একটা প্যাকেট ছোঁয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,

–“এখানে শুভ্র রঙের বেশ সুন্দর একটি শাড়ি আছে আমি পছন্দ করে কালকে বাড়ি ফেরার পথে নিয়ে এসেছিলাম তোমাকে দিবো বলে। এটা পড়ে এক্ষুনি রেডি হয়ে এসো আমি অপেক্ষা করছি তোমার জন্য।”

হৃদয়ের কথায় মুচকি হেসে ছোঁয়া রেডি হতে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর শাড়িটি পড়ে বেরিয়ে আসে। হৃদয় ছোঁয়ার সর্বাঙ্গে একবার তার চোখ বোলালো। তারপরেই ভ্রুজোড়া বাঁকিয়ে ছোঁয়াকে বলে ওঠলো,

–“শাড়িতে তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে কিন্তু চুলগুলো এভাবে পেঁচিয়ে রেখেছো কেনো?”

–“পেঁচিয়ে রাখিনি হাতখোপা করে রেখেছি। তুমি পাঁচ মিনিট সময় দাও? আমি রেডি হয়ে আসছি।”

–“পাঁচ মিনিট কেনো তুমি আর এক মিনিটও সময় পাবে না। বাকিটুকু আমি রেডি করে দিচ্ছি তোমায়।”

ছোঁয়া আর বারন না করে ড্রেসিং টেবিলের এর সামনে বসে পড়লো। হৃদয় প্রথমে তার চোখে কাজল পড়িয়ে দিচ্ছে তাও খুব সাবধানে লেটকে যাতে না যায়। কাজর দেওয়া শেষ করে ঠোঁটে লাল রঙের লিপস্টিক পড়িয়ে দিলো সুন্দর করে। চুলগুলো খোঁপা ছেড়ে সুন্দর করে আঁচড়িয়ে খুলে দিয়েছে। সবশেষে শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে সাদা রঙের একটি পাথরের টিপ দিয়ে দেয় কপালে। এবার ছোঁয়াকে আয়না থেকে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে এনে তার দু বাহু দ্বারা পরম আবেশে ছোঁয়াকে আলিঙ্গন করে! ছোঁয়ার ললাটে গভীর ভাবে তার ভালোবাসার পরশ একে দেয়। ছোঁয়া গভীর ভাবে অনুভব করছে হৃদয়ের পরশ। হৃদয় শুধু ছোঁয়ার ললাট পর্যন্তই থেমে থাকেনি আস্তে আস্তে করে ছোঁয়া ওষ্ঠদ্বয় পর্যন্ত এসে পরম আবেশে তার ওষ্ঠদ্বয়ের পরশ একে দিলো। ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে রেখে অনুভব করছে হৃদয়ের ভালোবাসার পরশ। হঠাৎই হৃদয় বলে ওঠলো,

–“বাড়ি ফিরে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে সারাক্ষন দেখো এখন চলো যাই? এভাবে তাকিয়ে থাকলে তো আজকে আর যাওয়া হবে না বলো? এতো সুন্দর করে সাজালাম এবার তাড়াতাড়ি চলো?”

ছোঁয়া আর কিছু না বলে হৃদয়ের সাথে বেরিয়ে গেলো। প্রথমে তারা একটি পার্কে গেলো। সেখান থেকে কয়েকটি গোলাপ ফুল এনে ছোঁয়ার কানে গুজে দিলো। সেখানে কিছুক্ষণ থাকার পরে হঠাৎই হৃদয় ছোঁয়াকে এক সুন্দর নদীর পারে নিয়ে যায়। নদীর পাড় ঘেঁসে দু’জনে হেঁটে যাচ্ছে একে অপরের হাত আঁকড়ে ধরে। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করার পর প্রায় সন্ধ্যা নেমে এসেছে তখনি হৃদয় ছোঁয়াকে নিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে যায় খাবারের উদ্দেশ্য। খাবার শেষ করে দু’জনে বাড়ির অন্যদের জন্য খাবার প্যাক করে বাড়ি ফিরে। বাড়ি ফিরেই খাবারগুলো বুঝিয়ে দিয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানাতে গা বুলালো দু’জন। ছোঁয়া ঘুমিয়ে যাবার পর হৃদয় আচমকাই ছোঁয়ার চুলগুলো দিয়ে ছোঁয়ার গালে মুখে সুরসুরি দিচ্ছে! ছোঁয়া বিরক্ত হলেও হৃদয় একই কাজ করে যাচ্ছে বারংবার। পরিশেষে ছোঁয়ার বিরক্ত না বাড়িয়ে ছোঁয়াকে তার দু বাহুতে আলিঙ্গন করে পাড়ি জমালো ঘুমের উদ্দেশ্য।
#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।