হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব-১০+১১

0
711

#হৃদয়ের_স্পন্দন
#পর্ব_১০
নন্দিনী_চৌধুরী

[১৬.]
আজকে আরো একটা মেয়ের মিসিং রিপোর্ট আসছে শিশিরের কাছে।মেয়েটা তার কলেজ থেকে নিখোঁজ হয়েছে।মেয়েটার ফ্যামিলি জানিয়েছে আগামি পরশু তার বিয়ে হবার কথাছিলো।শিশির টেবিলে বসে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে এই নিয়ে ৩৪জন মেয়ে।কি হচ্ছে এসব কিছুই বুজতে পারছেনা শিশির।শিশিরের সামনে তার জুনিওর অফিসার মেহেদি দাঁড়ানো।মেহেদি প্রচুর ভালোবাসে আর সম্মান করে শিশিরকে।মেহেদি শিশিরকে এভাবে বসে থাকতে দেখে বলে,

মেহেদি:স্যার কি হয়েছে আপনাকে চিন্তিত লাগছে খুব?
শিশির:হ্যা মেহেদি চিন্তায় তো আছি।এই নিয়ে ৩৪জন মেয়ে নিখোঁজ।আর আমরা এখনো একজন কেও উদ্ধার করতে পারলাম না।যখনি কেস এগোচ্ছে নতুন একটা করে আরো মেয়ে নিখোঁজ হচ্ছে।আমি ভুজতে পারছিনা যে এমন কেন হচ্ছে।কিভাবে আমি মেয়েগুলোকে উদ্ধার করবো কিভাবে এই মেয়েপাচারকারিদের ধরবো।
মেহেদি:স্যার কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি।
শিশির:হ্যা বলো।
মেহেদি:স্যার আমার বাবাকে আমি কেসের ব্যাপারটা বলেছি।আমার বাবা আমাকে জানিয়েছে আপনার বাবার সময় এই ররম সেম কেস ছিলো।আমার বাবা আপনার বাবার সাথে সেই কেসে ছিলো।তখন ও এরকম ভাবে মেয়ে নিখোঁজ হচ্ছিলো।তখন আপনার বাবা কেস তদন্ত করছিলেন আপনার।উনি নাকি তদন্ত করে বের করেই ফেলেছিলেন কারা এর পিছনে ছিলো।আপনার বাবা তাদের ধরার জন্য যেদিন আরো কিছু অফিসারদের নিয়ে যায় সেদিন তিনি মারা যান।বেচেঁ যান আমার বাবা।কারন আপনার বাবা তাকে রেখেগেছিলেন।কারন সেদিন আমার মায়ের লেভার পেইন উঠে ছিলো বলে।আমার বাবা আমাকে বলেছে হয়তো অই কেসের সাথে এই কেসের কোনো সংযোগ আছে।স্যার বাবা অই কেসটা আবার রিওপেন করতে বলেছে।তার ধারনা সেখান থেকে কিছু আমরা পেতে পারি।
শিশির:আংকেল যখন বলেছেন তাহলে আমি আজকে বিকেলেই হেডকোয়াটার যাচ্ছি।বাবাএ অসমাপ্ত কেসটা রিওপেন করে দেখি হয়।
মেহেদি:জি স্যার আমি তাহলে এখন যাচ্ছি।
শিশির:হুম।

মেহেদি চলে যাওয়ার পর শিশির তার ড্রাইভারকে কল দেয় আর জানায় শুভ্রতার কলেজ ছুটি হবার সময় হয়েছে তাকে যেনো আনতে যায় একদম ঠিক সময় একটুও যেনো দেড়ি না করে।শিশির এখন বিজি থাকায় শুভ্রতাকে ওদের ড্রাইভারকে দিয়ে আনা নেওয়া করে।আর একদম সঠিক সময় মতো পাঠায় যেনো এক মিনিট ও লেট না হয়।

শুভ্রতা ইদানিং খুব মনমরা থাকে আয়নার জন্য খুব মন খারাপ লাগছে তার।মেয়েটা কই হারিয়েগেলো আল্লাহ জানে।শুভ্রতা সেদিন রাতে শিশিরের থেকে সবটা শুনে অবাক হয়েছিলো।চেয়েছিলো অই বাড়ি যেতে কিন্তু আবার যায়নি।শুভ্রতা কলেজ করে বাসায় আসলো।এখন সে সাবিনার সাথে রান্নায় অনেক হেল্প করে।সাবিনার শুভ্রতাকে অনেক পছন্দ হয়েছে।মনে মনে সে চায় শিশিরের বউ করতে ওকে।কিন্তু শিশির রেগে ভাবে ভেবে বলেনা।শুভ্রতা এসে সাবিনার সাথে রান্না করে গোসল করে খেয়ে নিলো সবার সাথে।তারপর একটু ঘুমিয়ে নিলো।

শিশির বিকালে হেডকোয়াটার এসেছে।সেখানে এসে সে তার সিনিওর অফিসারের সাথে কথা বলছে।

আলম:শিশির তুমি এতো পুরানো একটা কেস রিওপেন করতে চাইছো কেন?
শিশির:স্যার আমি কেসটা রিওপেন করতে চাই।আমার বিশ্বাস এই কেস্টা ওপেন হলে এখনের কেস্টাও সমাধান হবে।প্লিজ স্যার আমাকে কেস রিওপেন করার পারমিশোন দিন স্যার প্লিজ আই বেগ টু ইউ।
আলম:ওকে শিশির আমি তোমাকে পারমিশন দিচ্ছি তুমি কেস রিওপেন করো।তুমি তোমার যা যা করা লাগে এই কেসে সব সাহায্য তুমি পাবে।তোমার বাবাও অনেক সৎ মানুষ ছিলেন।সততার সাথে কাজ করতেন।আমি জানি তুমিও একজন সৎ অফিসার।বেস্ট অফ লাফ এই কেসের জন্য।
শিশির:ধন্যবাদ স্যার।

শিশির হেডকোয়াটার থেকে ফাইল নিয়ে চলে এসেছে।আজকেই সে কেস রিওপেন করবে।

মৌ আর হাসান ছদ্মরূপ নিয়ে শুভ্রতাদের এলাকায় এসে খোজ নিচ্ছে।অনেক চমকে দেওয়া তথ্য তারা পেয়েছে।আরো কিছুদিন খোজ নিয়ে তারপর তারা এখান থেকে যাবে।

সায়ান আজ অনেকদিন পর কলেজে এসেছে।এই কয়েক সপ্তাহ সে প্রিয়ার থেজে ধোকা পেয়ে একদম চুপচাপ হয়ে গেছিলো।কিন্তু এখন সে নিজেকে সামলে নিয়েছে।সে এখন শুভ্রতার কাছে ক্ষমা চাইতে চায়।অনেক বড় ভুল সে করে ফেলেছে।শুভ্রতার ভালোবাসা সে বুজেনি।তাকে সে কষ্ট দিয়েছে।তাকে মাফ চাইতে হবে শুভ্রতার
কাছে।কিন্তু শুভ্রতা কই আছে তা সে জানেনা।
সায়ানের ফোনে দুইদিন ধরে প্রিয়া ফোন করছে।সায়ান বুজতে পারছেনা এখন কেন প্রিয়া তাকে কল দিচ্ছে আর কি চাই তার সায়ানের কাছে।রাহাত তো আছে তার কাছে তবুও কেন তা কল দিচ্ছে।সায়ান বিরক্ত বোধ করে প্রিয়ার নাম্বার ব্লক করে দিয়েছে।কোনো বেইমানের সাথে সে কথা বলতে চায়না।ক্লাস শেষ করে সায়ান গেটে এসে দেখে প্রিয়া দাঁড়ানো।তাকে দেখে প্রিয়া ওর কাছে আসতে নিলে সায়ান ওকে এড়িয়ে চলে আসে।প্রিয়া ডাক দিলেও তা শুনেনা।

শিশির সারারাতকেস্টা স্টাডি করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে থানায় নিজের রুমেই।বাসায় ও যায়নি সকালে।কন্সটেবল এসে শিশিরকে জাগিয়ে তুলেছে।শিশির ফাইল নিয়ে বাসায় আসে।ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নেয় তারপর একটা ঘুম দেয়।শুভ্রতা আজকাল দেখছে শিশির অনেক বিজি।বাসায় আসার সময় টুকুও পায়না।

শুভ্রতা কলেজে চলে যায়।শিশির ঘুম থেকে উঠে ১টায়।ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয় তারপর রেডি হয়ে বেরিয়ে যায় থানার যাওয়ার জন্য।ইদ্দানিং দেখা হচ্ছেনা তার সাথে শুভ্রতার।শিশির চাইলেও দেখা করতে পারছেনা।সময় পাচ্ছেনা সে।শিশির থানায় সে আবার ফাইল গুলো নিয়ে বসে।

এদিকে,,,,
একটা গোডাউনে মেয়েদের বেধে রেখে দেওয়া হয়েছে কারো মুখ হাত পা বাধা। তো কেউ কেউ আবার সেন্সলেস হয়ে পরে আছে।ফিরোজ আর তার বোন জামাই বসে কথা বলছে,
ফিরোজ:আর ৬টা মেয়ে হলে ৪০জন হয়ে যাবে।
আব্বাস:হ্যা আমাদের ছেলেরা আরো ৩টা মেয়ে নিয়ে আসছে আর ৩টা মেয়ে লাগবে।
ফিরোজ:তাহলে তো ভালোই।আর তিনটা মেয়ে আগের এলাকা থেকেই তুলবো।
আব্বাস:তাহলে তুলে ফেলি?
ফিরোজ:তুলে ফেলো।তবে একজন করে।
আব্বাস:আচ্ছা।

আব্বাসা তাদের লোকেদের জানিয়ে দিলো আজকে আগের এলাকা থেকে মেয়ে আরেকটা তুলে আনতে।

সাবিনা রান্না ঘরে রান্না করছে তখন খেয়াল হলো আজকে বাসায় চিজ নেই।শিশিরের জন্য চিজ পাস্তা বানাতে চিজ লাগবে।বাসায় এখন কেউ নেইও যে এনে দিবে।সাবিনা চাঁপা কে ডাক দিলো।

সাবিনা:চাঁপা মা শুনে যা তো।

চাঁপা ডায়েনিং টেবিলে প্লেট রাখছিলো সাবিনার ডাকে রান্না ঘরে যায়।
চাঁপা:হ্যা খালাম্মা বলেন।
সাবিনা:চাঁপা একটু সামনের দোকান থেকে চিজ কিনে নিয়ে আসবি শিশিরের জন্য চিজ পাস্তা বানাবো কিন্তু চিজ বাসায় নাই।আর কেউ নাইও এনে দেওয়ার তুই একটু যাবি মা।
চাঁপা:হ খালাম্মা আমি অহোনি যাইতাছি।

চাঁপা মাথায় ওড়না টেনে বের হলো বাহিরে।বাসার সামনের দোকানে চিজ না পাওয়ায় চলে আসে সামনের এড়িয়াতে।ফিরোজের ছেলেরা এখনো কোনো মেয়ে মিল করতে পারেনি তাই মাথায় দুইটার পিছনে দিয়ে হেটে হেটে যাচ্ছে।সামনে চাঁপা কে দেখে তারা থেমে গেলো আর একজন আরেকজনকে বললো,

একজন:মামা এহোনো কাউরে পাইনাই এইডারেই নিয়া যাই আর কেউ নাই এ দিকে ভালো সুযোগ।
২য়জন:হো মামু তাই কর।

ছেলে দুইজন আড়ালে এসে দাঁড়ালো খাম্বার।চাঁপা যেইনা তাদের ক্রস করে যাবে পিছন থেকে একজন এসে চাঁপার মুখে বিষাক্ত মেডিসিন চেপে ধরে আর চাঁপা ধস্তা ধস্তি করতে করতে জ্ঞান হারায়।ছেলে দুইটা চাপাকে একটা বস্তায় ভরে মেইন রোডে আনে।সেখানে ওদের গ্যাং এর অন্য লোকেরা গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে ছেলেদুইটা তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে গেলো।

শুভ্রতা বাসায় আসার পর দেখলো সাবিনা সোফায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।শুভ্রতা তার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,

শুভ্রতা:মামনি কি হইছে তুমি এভাবে বসে আছো কেন?
সাবিনা:শুভ্রতা ২ঘন্টা হইছে চাঁপাকে চিজ আনতে পাঠিয়েছি কিন্তু এখনো ফেরেনি বাসায়।চিজ আনতে তো এতো সময় লাগার কথানা।কোনো বিপদ হলো নাতো।
শুভ্রতা:কি বলছো মামনি।এখনো ফিরেনি।
সাবিনা:না আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।
শুভ্রতা:চাঁপার কাছে তো ফোন ও নেই যে কিছু হলে ফোন করবে।হায় আল্লাহ মেয়েটা কই গেলো।

রাতে,

শিশির বাসায় এসে দেখে মহুয়া শুভ্রতা সাবিনা বসে আছে।শুভ্রতা কান্না করছে মহুয়া তাকে সাম্লাচ্ছে।শিশির মায়ের কাছে জানতে চাইলো কি হয়েছে,

সাবিনা:চাঁপা সেই যে দুপুরে চিজ আনতে বেরিয়েছে আর বাড়ি ফেরেনি বাবু।আমার খুব চিন্তা হচ্ছে মেয়েটার কোনো বড় বিপদ হলোনাতো।বাবু তুই একটু খোজ না।
শুভ্রতা:এমনি ও অনেক বকাটাইপের তার উপর ওর কাছে কোনো ফোন নেই।আল্লাহ জানে কোনো বড় বিপদে পরলে আমাদেএ তো জানাতেও পারবেনা।
শিশির:দুপুরে এসব আর তোমরা এখন জানাচ্ছো আমাকে।মিসিং এর অলরেডি ৯ঘন্টা হয়ে গেছে।উফফ দাঁড়াও আমি মেহেদিকে কল দিচ্ছি।
শিশির মেহেদিকে কল লাগায়।

শিশির:হ্যালো মেহেদি এখোনি আমার বাসায় চারজন অফিসারকে পাঠাও ফার্স্ট।
মেহেদি:জি স্যার আচ্ছা।

কিছুক্ষনের মাঝে চারজন অফিসার সহ শিশির চাঁপাকে খুজতে বের হয়।অলিগলি সব খুজে যাচ্ছে কিন্তু চাপার হদিস নেই কোনো।শিশির আর বাকি অফিসারেরে সব জায়গা খুজে বেরাচ্ছে আসে পাশের লোকদের জিজ্ঞেস করছে কিন্তু কেউ কিছুই বলতে পারছেনা।

#চলবে
#হৃদয়ের_স্পন্দন
#পর্ব_১১
#নন্দিনী_চৌধুরী

[১৭.]
পুরা এলাকা খুজেঁও চাঁপাকে খুজে পায়নি শিশির।ব্যার্থতা নিয়ে ক্লান্ত শরীরে বাসায় এসে আসলো।রুমে এসে সোজা ওয়াশরুমে গেলো।লম্বা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসলো শিশির।একটা টাউজার আর গেঞ্জি পরে বসে পরলো সোফায়।ঘড়িতে এখন ৩ বেজে ২০মিনিট হয়েছে।পুরাটা রাত তারা চাঁপাকে খুজেছে।আশে পাশের পুলিস অফিসেও খবর দিয়ে দিয়েছে সে।চাঁপাকে সেও খুব ভালোবাসে নিজের ছোট বোনের মতো।মেয়েটা এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাবে তা সে ভাবতে পারেনি।শিশির সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে।হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে শিশিরের রুমে আসলো শুভ্রতা।শুভ্রতা ভালোই জানে শিশির যে না খাওয়া।বাড়িতে এসেই চলে গেছে চাঁপাকে খুজতে।শুভ্রতা খাবার নিয়ে শিশিরের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,

শুভ্রতা:শুনছেন।
শিশির চোখ বন্ধ করে রেখেছিলো।শুভ্রতার ডাকে চোখ মেলে তাকায় সে।

শিশির:এতো রাতে তুমি।এখনো ঘুমাও নি কেন তুমি?
শুভ্রতা:আপনার জন্য খাবার এনেছি।সেই দুপুর থেকে আমি জানি আপনি না খাওয়া।বাসায় এসেই বেরিয়েগেছিলেন।নিন খেয়ে নিন।নিজে যদি সুস্থ না থাকেন।তাহলে অন্য সবাইকে কিভাবে ভালো রাখবেন।
শুভ্রতা শিশিরের সামনে খাবার গুলো রাখলো।শিশিরের পেটেও খুদা থাকার কারনে সেও চুপচাপ খেয়ে নিলো।শুভ্রতা পাশের সোফায় বসে শিশিরের খাওয়া দেখছে।খাওয়া শেষে শুভ্রতা সব প্লেট নিয়ে চলে যেতে নিলে শিশির বলে,

শিশির:মা, মহুয়া তুমি খেয়েছা?
শুভ্রতা:মামনিকে কিছুটা খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়েছি।মহুয়া আপু খেয়ে এসেছিলো বান্ধুবিদের সাথে তাই আর খায়নি।
শিশির:আর তুমি?
শুভ্রতা:ভালো লাগছেনা।জানেন আমাকে যেদিন আমার মামি না খাইয়ে রেখেছিলো সেদিন এই চাঁপা ওর ভাগের খাবারটা আমাকে খেতে দিয়েছিলো।আজকে মেয়েটা দুপুর থেকে নিখোঁজ।এখনো তার কোনো খোজ আমরা পাইনি এখনো।জানিনা ও আদৌ ভালো আছে কিনা।
শিশির:আই এম সরি।আমি সব জায়গায় খুজেছি ওকে।আমাদের অফিসাররা খুজে চলেছে ওকে।আই প্রমিস আমি চাঁপাকে সুস্থ ভাবে তোমার কাছে নিয়ে আসবো।
শুভ্রতা:সত্যি আপনি চাঁপাকে নিয়ে আসবেন।
শিশির:হ্যা।এখন যাও কিছু খেয়ে নেও তারপর ঘুমিয়ে যাও।
শুভ্রতা:ঠিক আছে।

শুভ্রতা চলে যাওয়ার পর শিশির পুনরায় আবার সোফায় বসে বলতে লাগলো,

-~তোমার চোখেতে দেখেছি মায়াবি নেশা-~
-~মনেতে জেগেছে তাই ভালোবাসার আশা-~
-~কি নজরে তাকিয়েছিলে হয়েছি দিশেহারা-”
-~স্বপ্ন জুরে তুমি এখন
মনের রাজ্যে নীল কন্যা-~
দিন নেই রাত নেই
তোমার ভাবনায় ঘুম নেই-*
হয়ে যে গেলো ভালোবাসা জীবনের নেশা
এইটাই যেনো এখন জীবনে বেচেঁ থাকার শেষ আশা”

একবার এই কেস আমি সমাধান করে নেই।তারপর তোমাকে আমি আমার মনের কথা জানাবো।ইয়েস আই ফিল ইন লাভ ফোর ইউ।জানিনা কিভাবে আমার মনে তুমি এভাবে জায়গা করে নিলে।তোমাকে কিভাবে আমি এতো ভালোবেসে ফেলেছি।শুধু জানি আমি তোমাকে ভালোবাসি।

কলেজের ক্যান্টিনে বসে আছে সায়ান।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে সে।এখন আর প্রিয়ার জন্য কোনো মন খারাপ নেই তার।সায়ান রাফির সাথে কথা বলছিলো। তখন সেখানে প্রিয়া এসে হাজির হলো।প্রিয়াকে দেখেও সায়ান না দেখার ভান করে এবার ও চলে যেতে নিলে প্রিয়া সায়ানের হাত ধরে ফেলে।সায়ান তাতে রেগে যায় প্রিয়ার দিকে ঘুরে ওর গালে লাগিয়ে দেয় এক থাপ্পড়।

সায়ান:হাউ ডেয়ার ইউ?আমাকে টাচ্ করার সাহস পেলে কই।
প্রিয়া চোখ মুছতে মুছতে বলে,

প্রিয়া:তুমি আমাকে মারো সমস্যা নাই।কিন্তু একবার আমার কথাটা শুনো।বেশি না ৫টা মিনিট আমাকে দেও প্লিজ সায়ান।

সায়ান:কেন তোমার ধনি বয়ফ্রেন্ড রাহাত কই যে আমার কাছে ৫মিনিট চাইতে আসছো?
প্রিয়া:রাহাত আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
সায়ান:ও আই সি এই জন্য তুমি আমার কাছে এসেছো।তো তোমার ধনি বয়ফ্রেন্ড তোমাকে ছাড়লো কেন।অন্য মেয়ে পেয়ে তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে তাইতো?
প্রিয়া:রাহাত শুধু আমাকে না আমার শরীরটাকে ভালোবেসে।আমাকে ইউজ করে এখন আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।আমি প্রেগন্যান্ট শুনে আমাকে অনেক অপমান করে বাচ্চা নষ্ট করতে বলে চলে গেছে।
সায়ান:ওহো।দেখলেতো প্রিয়া যার জন্য তুমি আমাকে ঠকালে সেই তোমাকে ছেড়ে চলে গেলো।আমি প্রিয়া তোমার সাথে কোনোদিন কিছু জন্য জোর করিনি।আর তুমি রাহাতের বেড পর্যন্ত চলে গেলে।আর এখন তার বাচ্চা পেটে নিয়ে ঘুরছো।এখন রাহাত তোমাকে ছেড়ে দেওয়ায় তুমি আমার কাছে এসেছো এই আশায় তাইতো যেনো আমি বাচ্চাটাকে নিজের পরিচয় দেই।কিন্তু তোমার ধারনা একদম ভুল আমি বাচ্চাকে তো দূর তোমাকেই আমার জীবনে আনবোনা।তোমার মতো লোভী মেয়েদের সাথে এমনটাই হয়।তোমরা শুধু টাকা চেনো।ভালোবাসা বলতে তোমাদের মাঝে কিছু নেই।আর আমিই ও তোমার মতো তোমার অন্ধ ভালোবাসাকে বিশ্বাস করে আমার আসল ভালোবাসার মানুষটাকে হারালাম।যাই হোক তোমাকে যেনো আমি আর আমার আশে পাশে না দেখি।আমি এখন শুধু তোমাকে ঘৃণা করি।আমার মনে তোমার মনে কোনো ভালোবাসা আর নেই।এখন তুমি আসতে পারো।

সায়ান প্রিয়ার হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে রাফির সাথে হাটা দিলো।আর প্রিয়া সেখানেই দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলো।সে সায়ানের কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছিলো।সেতো বাচ্চাটাকে নষ্ট করে ফেলেছে।এখন তাকে তার বাবা মা বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে এক অন্য জায়গায়।তবুও শেষ বারের মতো বেহায়ার মতো এসেছে সে সায়ানের কাছে।জানতো সায়ান তাকে এভাবেই অপমান করবে।কিন্তু তবুও খুব কষ্ট লাগছে তার।

একটা বন্ধ রুমের ভেতর আটকে রাখা হয়েছে চাঁপাকে।চাঁপার হাত পা দুইটোই বাধা।চাঁপা কাল থেকে সেন্সলেস হয়ে পরে আছে।অনেক ভাড়ি ডোজের ড্রাগ তাদের শরীরে দেওয়া হয়েছে ওর।প্রত্যেকটা মেয়েকে আনার পরেই এভাবে নেশা গুলো শরীরে ডুকানো হয়।বাহিরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে ফিরোজ।

ফিরোজ:তাহলে ৪০টা মেয়ে রেডি।
আব্বাস;হ্যা তাহলে এদের পাঠাবো কবে?
ফিরোজ:পরশু শুক্রুবার।পরশুদিন পাঠাবো।
আব্বাস:ঠিক আছে।
ফিরোজ:আর শোন কাজটা রাতেই করতে হবে পুলিশ চারিপাশে পাহারা দিচ্ছে।রাতের দিকেই কাজ করতে হবে।
আব্বাস:ঠিক আছে।

শিশির সকালে এসে লেগে পরেছে কাজে।

শিশির সব অফিসারদের একত্র হতে বললো,

শিশির:আগামি শুক্রবার আমাদের খুব গুরুত্বপুর্ন একটা মিসন আছে।৪০টা মেয়ে এক সাথে পাচার হবে শুনেছি।আমাদের মেয়েগুলোকে উদ্ধার করতেই হবে যেকোনো মুল্যে।
মেহেদি:স্যার আপনি কি জানতে পেরেছেন কারা আছে এসবের পিছনে?
শিশির:ধরে নেও তেমনি কিছু।আমাদের যেভাবেই হোক সব গুলো মেয়েকে উদ্ধার করে আনতে হবে।এট এনি কোস্ট।সো সবাই বি প্রিপেয়ার।
সবাই:ওকে স্যার।

সবাই চলে যাওয়ার পর শিশির মৌকে কল লাগায়।

মৌ:জি স্যার।
শিশির:যা বলেছিলাম সব হয়েছে?
মৌ;জি স্যার আমরা তাকে একদম চোখে চোখে রেখেছি।পালানোর কোনো সুযোগ নেউ।
শিশির:ওকে আগামি শুক্রবার রেডি থাকবেন।আর হ্যা অবশ্যই সাবধানে কাজ করবেন।
মৌ:জি আচ্ছা স্যার।

শুক্রুবার রাতে,,,,,

প্রত্যেকটা মেয়েকে অজ্ঞান অবস্থায় গাড়িতে তোলা হচ্ছে।৪০টা মেয়েকে জাহাজে করে পাচার করা হবে দুবাই।সেখানে আর দল আছে তারা মেয়েগুলোকে নেবে।ফিরোজ বসে বসে সিগারেট টানছে।তখন তার ফোন বেজে উঠলো।ফিরোজ ফোন রিসিভ করতেই আজমির কান্না কন্ঠে বললো,

আজমির:ফিরোজ ভাই আমার মেয়েটারে ছেড়ে দেন ভাই।আমার একটা মাত্র মেয়ে।আমার মেয়েটাকে পাচার কইরেন না দয়া করেন ভাই।

ফিরোজ:দেখ ভাই তোকে তো বলছি তো ৫০লাক্ষ টাকা আমারে দে আর মাইয়া নিয়া যা।
আজমির:ফিরোজ ভাই আমি এতো টাকা কই পামু।আমার কাছে এতো টাকা নাই।দয়া করেন ভাই।আমার মেয়েটারে ছেড়ে দেন।
ফিরোজ:দেখ আজমির তুই জানস এই সব ধান্দায় মা বইন বলতে কিছু নাই।তোর মনে নাই আমার বউরেও তো বেইচ্চা দিছিলাম।এহন আবার কত বিয়া করছি।আর তোর মাইয়া একটা হইলেও পোলা তো আছে একটা তাইলে সমস্যা কি।দেখ ভাই হুদা কেচাল করিস না।এক ঘন্টা পর সব মাইয়া জাহাজে পাডামু।এহন রাহি ফোন।

ফিরোজ কল কেটে আবার সিগারেট টানতে লাগলো।আজমির কান্নায় ভেংগে পরেছেন।আর কোনো উপায় নেই মেয়েটাকে বাচাঁনোর।

সব মেয়ে ট্রাকে উঠানো শেষ।এবার জাহাজে যেখানে আছে সেখানে যাওয়ার জন্য বের হয়ে যাচ্ছে সবাই।প্রত্যেকটা গাড়িতে ৫জন করে লোক দেওয়া হয়েছে।একে একে প্রত্যেকটা ট্রাক বের হয়ে গেলো।

#চলবে