হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব-১২+১৩

0
663

#হৃদয়ের_স্পন্দন
#পর্ব_১২
#নন্দিনী_চৌধুরী

[১৯.]
১মাস ৪দিন পর,,,,
শিশিরদের বাড়ি এখন আর আগের মতো নেই।বাড়ির সেই হাসিখুশি প্রানবন্দতা নেই।একদম নিশ্চুপ হয়ে গেছে ওদের বাড়ি।বাড়ির আসল প্রানটাই যে নেই।প্রানভ্রমরা ছাড়া প্রানহীন হয়ে আছে বাড়িটা।

খাবার টেবিলে নাস্তা দিচ্ছে চাঁপা।জানে যে কেউ খাবেনা নাস্তা তবুও সে দিচ্ছে নাস্তা।চাঁপা নাস্তা সাজাতে সাজাতে দেখে মহুয়া নিচে আসছে।মহুয়া চলে যেতে নিলে চাঁপা মহুয়াকে ডেকে বলে,

চাঁপা:আফা কিছু খাইয়া যান।
মহুয়া:না রে ক্ষুদা নেই।তুই মাকে খাইয়া মেডিসিন দিস।

মহুয়া কথাটুকু বলে চলে গেলো।চাঁপা একটা ছোট শ্বাস ফেলে স্যুপ হাতে সাবিনার রুমে গেলো।সাবিনা রুমের খাটে হেলান দিয়ে বসা।চাঁপা স্যুপ এনে তাকে খাইয়ে দিয়ে মেডিসিন দিয়ে চলে আসতে নিলে সাবিনা বলে,

সাবিনা:শুভ্রতা মহুয়া আজকেও খেয়ে যায়নি?
চাঁপা:না আম্মা খায়নাই।
সাবিনা:আর কত এভাবে চলবে।আচ্ছা যা তুই।
চাঁপা চলে যেতে সাবিনা হুহু করে কেদেঁ দেয় আর বলে,

“আল্লাহ এ কোন পাপের সাজা তুমি আমায় দিলে।প্রথমে আমার স্বামীকে নিয়ে গেলে।যখন স্বামী চলে গেলো ভাবলাম ছেলে মেয়ে দুটোকে নিয়ে বেচেঁ থাকবো। কিন্তু এ কি করলে তুমি আল্লাহ আমার শিশিরকেও নিয়ে গেলে তুমি।আল্লাহ আমি মা হয়ে কি করে মেনে নেবো এটা।আল্লাহ আমার শিশিরকে ফিরিয়ে দেন।এই মায়ের কান্না ফেলে দিয়েন না।”

শুভ্রতা আজকেও কোনোরকম ক্লাস করে বাসায় আসলো।কোনো কিছুর প্রতি তার আগ্রহ আসছেনা।সব কেমন এলোমেলো লাগছে তার।শুভ্রতা বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে গেলো।রান্না ঘরে গিয়ে দেখে চাঁপা রান্না করছে।তাই সে সাবিনার রুমে গেলো।সাবিনা হুইল চেয়ারে বসে আছেন।শুভ্রতা গিয়ে তার সামনে হাটু গেড়ে বসে কোলে মাথা রাখলো।সাবিনা শুভ্রতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।শুভ্রতা চুপচাপ হয়ে আছে।সাবিনা শুভ্রতাকে চুপচাপ দেখে নিজে বলতে শুরু করলেন,

“জানিস আমার বিয়ের পর প্রায় ৩বছর পর আমার কোল জুরে শিশির আসে।শিশিরের জন্মের পর ওর বাবার প্রমোশন হয়।খুব ভালো যাচ্ছিলো আমাদের জীবন।শিশিরকে ওর বাবা অনেক ভালোবাসতো।শিশির ও বাবা বলতে পাগল।আবার শিশিরের ৫বছরের মাথায় মহুয়া আমার পেটে আসে।মহুয়া হবার পর আমরা একদম একটা সুখি পরিবার ছিলাম।শিশির সব সময় চাইতো ওর বাবার মতো পুলিশ অফিসার হতে।শিশিরের বাবাও ছেলের ইচ্ছাকে প্রধান্য করতো।শিশিরের বয়স যখন ১২ আর মহুয়ার ৭ তখন ওদের বাবা একটা কেস সামলাতে গিয়ে মারা গেলো।শিশিরের বাবা চলে যাওয়ার পর অনেক ভেংগে পরেছিলাম আমি।তবুও ছেলে মেয়েকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি।শিশিরের ওর ইচ্ছা মতো পুলিশ অফিসার হলো।খুব ভয় হতো যদি ওর কিছু হয়ে যায় এউ ভয়ে।আর দেখ আজ সেই ভয় সত্যি হলো।আমার শিশির ওর বাবার মতো চলে গেলো।আমি এখন বেচেঁ আছি তোদের মুখ চেয়ে।সেই তোরা যদি এমন হয়ে থাকিস তাহলে আমি ভালো থাকি কি করে।তুই মহুয়া একদম চুপচাপ হয়েগেছিস।তোরা কি আগের মতো আবার হতে পারিস না।বলনা শুভ্রতা।

সাবিনার চোখ ভিজে গেছে শুভ্রতার চোখ ও ভিজা।শুভ্রতা মাথা উঠিয়ে সাবিনার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,

শুভ্রতা:মামনি তুমি চিন্তা করোনা।আমি একদম ঠিক আছি আর মহুয়া আপু উনি ভাইয়ের চলে যাওয়ায় এমন হয়ে গেছে।কিছুদিন আরো যাক ঠিক হয়ে যাবে দেখো।
সাবিনা:তাই যেনো হয়রে মা তাই যেনো হয়।এভাবে আর তোদের দেখতে পারছিনা আমি।
শুভ্রতা সাবিনার থেকে উঠে চলে আসে।

রাতে,,
শুভ্রতা শিশিরের রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।শিশিরের খুব পছন্দের জায়গা এটা।শুভ্রতা দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।কোনোদিন সে সেই কালো রাতের কথা ভুলবেনা।সেই কালো রাত সব কেড়ে নিয়েছে তাদের।সব সুখ শান্তি হাসি খুশি সব।

সেদিন শুক্রুবার রাতে,,,,,,
সব মেয়েদের নিয়ে জাহাজে এসে পৌছে গেছে ফিরোজেরা।একে একে সব গুলো মেয়েকে জাহাজে উঠানো হচ্ছে।পরিকল্পনা মতোই সব হচ্ছে।কিছুক্ষনের মাঝেই জাহাজ ছাড়বে।সব মেয়েদের হিসাব আরেকবার দেখেনিলো ফিরোজ।জাহাজ ছেড়ে দেবে এমন সময় শুরু হয় ফায়ারিং।আচমকা হামলা হওয়ায় প্রস্তুত ছিলোনা ফিরোজেরা।প্রথম ফায়ারিং এ দুইজন আহত হয় ফিরোজের লোকেরা।শিশিররা পুরো ঘেরাও করে ফেলেছে ফিরোজদের।ফায়ারিং করেই যাচ্ছে তারা।ফিরোজরাও এভার পালটা ফায়ারিং দিচ্ছে।কিন্তু শিশিরদের কোপ্স বেশি থাকায় ফিরোজের লোকেরা পেরে উঠছেনা।শিশির সহ ছয় জন জাহাজে উঠে লুকিয়ে গেছে আর ফায়ারিং করছে। তাদের পালটা জবাব দিচ্ছে ফিরোজ আর তার ৪জন সাথি।বাকি পুলিশ কপ্স মেয়েদের উদ্ধার করতে লেগে পরেছে।ফায়ারিং এর এক পর্যায় ফিরোজের বন্ধুক থেকে বেরিয়ে আসা গুলি লেগে যায় শিশিরের বুক বরাবর।শিশির আর ফিরোজেরা ছাদের উপর ছিলো জাহাজের।জাহাজের একদম কোণার পিলারের পিছনে ছিলো শিশির।তার সামনের দিকেই ছিলো ফিরোজ।গুলি লাগায় নিজেকে সামলাতে না পেরে শিশির পরে যায় পানিতে।শিশিরকে পরে যেতে দেখে মেহেদি চিৎকার দিয়ে ওদিকে যায়।ততক্ষনে শিশির পানিতে পরে যায়।ফিরোজের পায়ে গুলি করে অন্য অফিসার তারপর তাকে ধরে ফেলে।সব মেয়েদের উদ্ধার করে ফিরোজসহ সবাইকে নিয়ে যায় বাকি অফিসাররা।শিশিরকে খোজার জন্য ডুবুরি নামানো হয়েছে পানিতে।সমুদ্রের পানির স্রোত প্রবল এবং অনেক গভীর।ডুবুরিসহ অন্য সার্চ লোকেরা কেউ শিশিরকে খুজে পায়নি।২ঘন্টা পানিতে খুজেও শিশিরকে উদ্ধার করা যেতে পারেনি।ডুবুরিরা উঠে আসে।সবাই আবার কাল সকালে খোজার আশা করে।পরেরদিন সকালে ৬ডুবুরি সহ ২সার্চটিম মিলে শিশিরকে খোজে কিন্তু কোনো হদিস মেলেনা।সবাই এটাই মানছে বডি পানির স্রোতে ভেসে গেছে।শিশিরের বাসায় দুপুরে মেহেদি গিয়ে খবর দেয়।সাবিনা এটা শুনে সিড়ি থেকে মাথা ঘুরে পরে যায়।মহুয়া ধপ করে সোফায় পরে যায়।আর শুভ্রতা একদম স্তব্ধ হয়ে যায়।বিকালের দিকে চাঁপাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়।অনেক পরিমান ড্রাগ তার শরীরে যাওয়ায় শরীর দুর্বল তার।আয়নাকেও উদ্ধার করে দিয়ে আসা হয় বাড়িতে।পুলিশ অফিসারদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।মৌ চুপেচুপে কাদেঁ শিশিরের জন্য।শিশিরের বাড়িতে সাবিনা শিড়ি দিয়ে পরে যাওয়ায় পায়ে অনেক আঘাত পায়।ডাক্তার জানায় ৬মাসেও হাটতে পারবেনা না তিনি।সাবিনা প্রথমে মানতেই চায়নি শিশির নেই।কিন্তু পরে সব প্রমান পেয়ে তিনি অনেক কাঁদেন।মহুয়া নিরবে কাদেঁ।শুভ্রতা নিজেকে সামলে শক্ত রেখে সবাইকে দেখে রাখে।মহুয়া প্রথমে অনেক কাঁদলেও পরে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ থাকে কিন্তু তবুও নিজ ঘিরে বসে অনেক কাদেঁ সে।শুভ্রতা সবাইকে সামলে নিলেও এক অজানা শুন্যতা তাকে গ্রাস করেছে।শুভ্রতা রাতের আধারেঁ এসে শিশিরের রুমে বসে থাকে।কেন সে শিশিরের শুন্যতা অনুভোব করছে সে জানেনা।তবুও ভয়ংকর শুন্যতা তার ছেয়ে গেছে।

শুভ্রতা আয়নার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলো একবার।পরে আবার কি ভেবে যায়নি।শুভ্রতা মহুয়া মিকে সাবিনা চাঁপার খেয়াল রেখেছে।১মাসের মাথায় চাঁপা সুস্থ হয়ে যায়।চাঁপা সুস্থ হবার পর শুভ্রতা কলেজে যাওয়া শুরু করে।কিন্তু কোনো কিছুতেই সে ভালো থাকতে পারছেনা।

বর্তমানে,,,

শুভ্রতা চুপ করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।

“শিশিরহীনা শরৎশুভ্রতা হয়ে গেলাম আমি”

শিশিরহীনা হয়ে গেছে সে।হারিয়েগেছে শিশির তার জীবন থেকে।

“আমি জানিনা আপনাকে আমি ভালোবাসি কিনা তবে আপনার শুন্যতা ভয়ংকর ভাবে পোড়াচ্ছে আমায়।আপনি চলে গেলেন কেন এভাবে।এই বাড়ি যে আপনাকে ছাড়া অপুর্ন।সবাই যে আপনিহীনা একা।ফিরে আসুন না ভোরশিশির।”

পুলিশ স্টেশনে,,,,

সবাই নিজেকে সামলে কাজে মন দিয়েছে।আদালতে ফিরোজক সহ বাকি ২৫জনকে নারী শিশিপাচার করার কারনে ২০বছরের জেল দেওয়া হয়েছে।

হাতে হেডকোয়াটার এর চিঠি নিয়ে বসে আছে মেহেদি।মৌ তাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে মেহেদির কাছে এগিয়ে এসে বলে,

মৌ:কি হয়েছে মেহেদি তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
মেহেদি:হেডকোয়াটার থেকে চিঠি আসছে শিশির স্যারের জায়গা আমাকে তারা দিতে চেয়েছিলো। আমি না করার নতুন একজনকে শিশির স্যার এর জায়গায় আজকে পাঠাচ্ছেন তারা।একটু পরেই নতুন আইজি স্যার আসবেন।
মৌ:এতো তাড়াতাড়ি নতুন কাউকে না আনলে হতো।স্যার আমাদের ছেড়ে গেলেন ১মাস হলো সব এর মাঝেই নিয়ে আসলেন।
মেহেদি:আমাদের কাজটা বসে থাকার নয় যে।শত আপনজন হারিয়েও আমাদের কাজ করতে হবে।এটাই যে আমাদের গায়ের এই পোশাকটার নিয়ম।আচ্ছা চলো নতুন স্যার এলো বলে।
মৌ:হ্যা চলো।

কিছুক্ষনের মাঝে সাদা বিএম ডাব্লু গাড়িতে করে একজন সুদর্শন যুবক এসে থানার সামনে নামে।সবাই তাকে স্বাগতম জানাতে বাহিরে দাঁড়ানো।নিউ আইজিকে দেখে সবাই চমকে যায়।শিশিরের মতোই বয়সের একজন আইজি অফিসার।

নতুন অফিসারকে সবাই স্বাগতম জানায়।নিউ আইজি সবাইকে উদ্দেশ্য করে নিজের পরিচয় দেয়।

“আমি আপনাদের নিউ আইজি স্যার আরিয়ান মাহমুদ।আজ থেকে আপনারা আমার আন্ডারে কাজ করবেন।আশা করি আপনাদের কাজ করতে ভালো লাগবে আমার সাথে।”

#চলবে

#হৃদয়ের_স্পন্দন
#পর্ব_১৩
#নন্দিনী_চৌধুরী

[২০.]
“কেনো মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে”
“তোমারে দেখিতে দেয়না”
“মোহমেঘে তোমারে দেখিতে দেয়না”
“মোহমেঘে তোমারে অন্ধ করে রাখে ”
“তোমারে দেখিতে দেয়না”
“মাঝে মাঝে তবো দেখা পাই”
“চিরদিন কেনো পাইনা”
“মাঝে মাঝে তবো দেখা পাই”
“চিরদিন কেনো পাইনা”

“ওহে কি করিলে বলো পাইবো তোমারে”
“রাখিবো আখিঁতে আখিঁতে”
” ওহে এতো প্রেম আমি কোথা পাবো নাহ্”
“তোমারে হৃদয়ে রাখিতে,আমার সাধ্য কি বা”
“তোমারে দয়া না করিলে কে পাবে”
“তুমি আপনি না এলে কে পারে হৃদয়ে রাখিতে”
“মাঝে মাঝে তবো দেখা পাই চিরদিন কেনো পাইনা”

হাতে গিটার নিয়ে বারান্দায় বসে গানটা গাচ্ছে আরিয়ান।চোখ দুটো বন্ধ করে আছে সে।নিজের জীবনে কত কিছু ঘটে যায় যা আমরা বুজিনা।মাঝে মাঝে নিজে ইচ্ছা করেও হারিয়ে যেতে হয়।আপন মানুষ গুলোকে ছেড়ে নিজ ইচ্ছা না থাকলেও চলে যেতে হয়।আরিয়ানের মা আরিয়ানের রুমে আসলো।

আরিয়ানের মা:কিরে বাবু আজকে তোর প্রথম দিন কেমন গেলো থানায়?
আরিয়ান:হুম মা ভালোই গেছে।
আরিয়ানের মা:তোর বাবা তোকে এখানে এনে দিয়ে ভালোই করেছে।কত দূরে আগে ছিলি। এখন ঘরের ছেলে ঘরে এসে গেছে এতে আমি খুব খুশি।আচ্ছা তুই খেতে আয় আমি খাবার দিচ্ছি।
আরিয়ান:আচ্ছা মা।

আরিয়ানের মা রুম থেকে চলে গেলো।আরিয়ান গিটার রেখে রুম থেকে চলে আসে।

আরিয়ান মাহমুদ।ইকলবাল মাহামুদের এক মাত্র ছেলে।মা বাবার খুব আদরের ছেলে।ইকবাল মাহামুদ একজন আইজি অফিসার।ছেলেকেও তিনি আইজি বানিয়েছেন।আরিয়ান এতোদিন সিলেটে কর্মঅধিন ছিলো।মাত্র তিনদিন আগে ঢাকা এসেছে।আরিয়ানের ফ্যামিলি শুধুই ওর মা আর বাবা।

কলেজে যাওয়ার জন্য রিকশা খুজতেছে শুভ্রতা।এখন আর সে গাড়িতে যায়না কলেজে।শুভ্রতা রিকশা খুজতেছিলো তখন পিছন থেকে ওর নাম ধরে একজন ডাক দেয়,

“শুভ্রতা!”

শুভ্রতা কন্ঠটা শুনে পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে সায়ান দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে।সায়ানকে দেখে অনেক অবাক হয়ে যায় শুভ্রতা সাথে কিছু ভয় ও পেয়েগেছে।শুভ্রতাকে হচকিয়ে যেতে দেখে সায়ান মলিন হেসে বলে,

সায়ান:কেমন আছো শুভ্রতা?

শুভ্রতা আমতা আমতা করে বলে,

শুভ্রতা:জি আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি আপনি?
সায়ান:হ্যা আছি ভালো।এই রোডে কি করছো।আর বাড়ি আসছোনা কেন তুমি?
শুভ্রতা:এই রোডে আমার কলেজ।আর বাড়ি বলতে আপনি ঠিক কোন বাড়ি বুজাচ্ছেন।আমার জন্য অই বাড়ি সেদিনই বন্ধ হয়ে গেছে যেদিন আমাকে আপনার মা একটা বুড়ো লোকের সাথে বিয়ে দিচ্ছিলো। আর তাও আবার সে একজন নারী পাচার কারি।আমাকে ১০লাক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিচ্ছিলো আপনার মা।ধন্যবাদ মামাকে আমাকে আর চাঁপাকে পালাতে দিয়েছিলো।নাহলে আজ আমার জীবন কোন নড়কে যেতো আমি নিজেও জানতাম না।তো আপনি এখানে কেন।আর আমার সাথে কথা বলছেন কেন।আমার মতো মেয়ের সাথে আপনার কথা বলা কি মানায় সায়ান ভাই।
সায়ান:আম সরি শুভ্রতা।আমি আমার ভুল বুজতেপেরেছি।আমি তোর মন ভেংগেছিলাম তাই আল্লাহ আমাকেও তার শাস্তি দিয়েছে।প্রিয়া আমাকে ধোকা দিয়েছে।আমাকে ও ভালোবাসেনি।বিশ্বাস কর আমি প্রতিশোধ নিতে চাইলেও তোর প্রতি কিছুটা দুর্বলতা অনুভব করেছি।কিন্তু প্রিয়ার জন্য সেসব পাত্তা দেইনি।এখন আমি বুজতে পারছি আমি প্রিয়াকে না তোকেই ভালোবাসি।হ্যা রে শুভ্রতা আমি তোকে অনেক ভালোবাসিরে।প্লিজ আমাকে আর একবার সুযোগ দে।তোকে কথা দিচ্ছি তোকে আমি কোনো কষ্ট আর পেতে দেবোনা।

সায়ানের কথায় শুভ্রতা পেট চেপে জোরে জোরে হাসে তারপর হাসতে হাসতে বলে,

শুভ্রতা:সায়ান ভাই মানুষ যে কত সার্থপর তা আপনাকে না দেখলে জানতাম না।আপনাকে আমি ভুল করে একটা থাপ্পর মেরেছিলাম বলে আপনি দুই বছর আমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করেন।আমি আপনার জন্য অনেক পাগল ছিলাম।অনেক ভালোবাসতাম আপনাকে তা জানার পরেও আপনি আমার সাথে অভিনয় করে গেলেন।বিয়ে করবেন বলে কাজী অফিসে নিয়ে সবার সামনে আমাকে কয়লার ড্রাম কালী ফক্কিনির বাচ্চা বলে অপমান করেছেন।আমার কি যোগ্যোতা আছে আপনার বউ হবার তাও বলেছেন।আমাকে হাজার অপমান করেছেন।আপনি প্রিয়াকে ভালোবাসেন বললেন।এখন আজ সে আপনাকে ভালোবাসেনা বলে আপনাকে ঠকিয়েছে বলে আপনি এখন অনুভব করলেন আপনি আমায় ভালোবাসেন।আপনার মনে হলো আপনি আমার প্রতি দুর্বল।কিন্তু আসল কথাটা কি জানেন সায়ান ভাই।আসল কথা হচ্ছে আপনি প্রিয়ার সাথে টক্কর দিতে আমার কাছে এসেছেন।প্রিয়া এখন অন্য কারো সাথে আছে সেটা আপনি সয্য করতে পারছেন না তাই এখন আমার কাছে এসেছেন।এখনো সময় আছে সায়ান ভাই।একজন ভালো মানুষকে ভালোবাসুন।নিজেকে পরিবর্তন করুন।এভাবে অহংকার নিয়ে বেচেঁ থাইকেন না।এভার অন্তত ভালো হোন।আর বললেন সুযোগ সেটা আমি কোনোদিন আপনাকে দেবোনা।আমি আপনাকে অনেক বিশ্বাস করেছিলাম।কিন্তু আপনি আমাকে ঠকিয়েছেন।আর সব থেকে বড় কথা আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি সায়ান ভাই।তাই আপনাকে সুযোগ দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসেনা আর সুযোগ সেতো দুরের কথা।আমি আসি সায়ান ভাই।ভালো থাকবেন।

শুভ্রতা কথা গুলো বলে একটা রিকশা ধরে চলে গেলো।আজ আর সে কলেজ করবেনা।শুভ্রতা বাড়িতে এসে সোজা শিশিরের রুমে চলে গেলো।এক আলাদা শান্তি সে পায় এই রুমে আসলে।আলাদা ভালোলাগা।

শুভ্রতা শিশিরের ছবির সামনে এসে দাঁড়ালো।ছবিতে শিশির একটা ব্লাক ডেনিম প্যান্ট পরা সাথে হোয়াইট টি শার্ট।চোখে সানগ্লাস পরা।শুভ্রতা শিশিরের ছবিটা ছুয়েঁ ছুয়েঁ দেখছে।

“শুনেছি মানুষ যাকে ভালোবাসে তার শুন্যতা নাকি তাকে অনেক পোড়ায়।আচ্ছা ভোর শিশির আপনাকে কি আমি ভালোবাসি।যদি ভালো না বাসি তাহলে আপনার শুন্যতা আমাকে এতো পোড়ায় কেন।আমি তো আর নিতে পারছিনা এটা।ফিরে আসুন না একদম সকালের নতুন ভোরের মতো আমার জীবনে।শীতের সকালের শিশিরের মতো আপনার শরৎশুভ্রতার জীবনে ফিরে আসুন দয়া করে।”

থানায়,,,,,,

আরিয়ান সকালেই চলে এসেছে থানায়।অফিসাররা তাকে সালাম দিয়ে শুভ সকাল জানিয়ে যার যার ডিউটিতে চলে যায়।আরিয়ান আশা মাত্র একজন মহিলা আর পুরুষ আসে তার রুমে।কন্সটেবল তাদের নিয়ে এসেছে ওর রুমে।

কন্সটেবল:স্যার ওনারা আপনার সাথে কথা বলতে এসেছে।
আরিয়ান:ঠিক আছে ওনাদের ভিতরে আসতে বলো।
কন্সটেবল ওদের ভিতরে দিয়ে চলে যায়।

আরিয়ান:বসুন আপনারা আর বলুন কি সমস্যা?
লোকটা:স্যার আমার নাম জহির আর এই আমার স্ত্রী মালা।স্যার আমাদের দুই ছেলে মেয়ে আমার বড় মেয়ে রাহি আজিকে ৪দিন নিখোঁজ।
আরিয়ান:৪দিন ধরে নিখোঁজ আর আপনারা আজকে এসেছেন রিপোর্ট লিখাতে?
জহির:না স্যার আমরা আগেও গেছিলাম রিপোর্ট লেখাতে।আমি সিলেটে থাকি এখানে এসেছিলাম বোনের বাড়িতে।আসার দুইদিন পরেই আমার মেয়ে নিখোঁজ।আমি এখানে রিপোর্ট লেখাতে আসলে আপনার অফিসার আমার মেয়েকে বাজে অপবাদ দিয়ে রিপোর্ট লেখে না।স্যার বিশ্বাস করেন আমার মেয়ে একদম ভালো।স্যার দয়া করে আমার মেয়েকে খুজে দেন।স্যার দয়া করেন।
আরিয়ান:আপনি শান্ত হোন।আমি কথা দিচ্ছি আপনার মেয়েকে খুজে দেবো।আপনার মেয়ের একটা ছবি আর ইনফোরমেশন গুলো আমাকে দিন।
জহির:এইযে স্যার নেন এইখানে সব।
আরিয়ান:ঠিক আছে আপনি আসুন।আমি খুজা শুরু করছি।
জহির:ধন্যবাদ স্যার অনেক ধন্যবাদ।

জহির চলে যাওয়ার পর আরিয়ান বাহিরে এসে সব অফিসারদের ডাকে।আরিয়ানের ডাকে সবাই এসে হাজির হয়।আরিয়ান সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,

আরিয়ান:”আমাদের গায়ে এই পোশাকটা দেওয়া হয়েছে আইনের রক্ষার জন্য।সাধারন মানুষকে রক্ষা করতে।তাদের সাহায্য করতে।এই পোশাকটা এই জন্য দেওয়া হয়নি।যে এটা দিয়ে আমরা যা ইচ্ছা তাই করবো।এই পোশাক গায়ে দেওয়ার আসল লক্ষ্য একটাই অন্যায় কারীকে ধরা।তাদের শাস্তি দেওয়া।সাধারন জনগন আমাদের কাছে নিজেদের সুরক্ষিত ভাবে।কিন্তু আমরা তাদের সেই সুরক্ষা দেইনা।এই পোশাকটা গায়ে জরিয়ে নিজেকে নিজে রাজা ভাবী।চারদিন আগে এক মেয়ের মিসিং কেস আসছিলো।কিন্তু আপনারা তার কেস না লিখে তার বাবাকে মেয়েটার নামে খারাপ কথা বলেছেন।হোয়াই?কে করেছেন এটা আন্সার মি!!

হাসান:স্যার শফিক স্যার করেছেন

শফিক ভয়ে ঘামছে এতোটুকু সে বুজেগেছে যে এ শুধু দেখতে কিছুটা শিশির নয় শিশিরের মতোই রাগি।আরিয়ান শফিকের কাছে এসে বলে,

আরিয়ান:আপনাকে আমি ২মাসের সাসপেন্ট দিলাম।যদি ২মাসে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারেন তবে এখানে আসবেন।আর যদি না পারেন তবে ২মাস পর রিজাইন লেটার নিয়ে শেষবারের মতো এখানে আসবেন।নাউ গেট আউট।
শফিক:স.সরি স্যার।
আরিয়ান:আই সে গেট আউট!!!!(চিল্লিয়ে)
শফিক চলে যায় মাথা নিচু করে।আরিয়ান সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,

এই মেয়েটাকে ২৪ঘন্টার ভেতরে হদিস করতে হবে।অলরেডি ৪দিন হয়ে গেছে মেয়েটা নিখোঁজ।সবাই কাজে লেগে পরুন।

সবাই:ইয়েস স্যার।

আরিয়ানের নির্দেষ মতো সবাই কাজে লেগে পরে।

#চলবে