হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব-১৮+১৯

0
706

#হৃদয়ের_স্পন্দন
#পর্ব_১৮
#নন্দিনী_চৌধুরী

[২৪.]

বারান্দায় বসে সিগারেট খাচ্ছে শিশির।এই নিয়ে এক প্যাকেট সিগারেট শেষ করলো সে।যখন অনেক চিন্তায় থাকে সে তখন সিগারেটের ক্রেভিং হয় তার।শিশির সিগারেট শেষ করে ফোন বের করে মেহেদিকে কল লাগায়।কিছুক্ষন রিং হবার পর কল ধরলো মেহেদি।

শিশির:কোনো খবর পেলে?
মেহেদি:স্যার অতি দুঃখের সাথে এটা বলতে হচ্ছে কোনো খোজঁ এখনো আমরা পাইনি শুভ্রতা মেডামের।আমাদের সব ফর্স মেডামেএ খোজঁ করছে কিন্তু কোনো খোজঁ মিলছেনা।
শিশির আর কোনো কথা না বলে কল কেটে দিলো।ফোনটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে পাশে থাকা ওয়াইন এর বোতলটা হাতে নিলো।দুই চুমুক খেয়ে জোরে চাপ দিলো বোতলটায় যে বোতলটা ভেংগে গেলো আর ঝরঝরিয়ে রক্র বের হলো শিশিরের হাত থেকে।শিশির রক্তের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

“এই রক্ত ঝরাতেও এতো কষ্ট পাচ্ছিনা।যতটা তোর হারিয়ে যাওয়ায় পুড়ছি আমি।তোমাকে আমি খুজে নিয়ে আসবো শরৎশুভ্রতা।যেই তোমাকে আমার থেকে আলাদা করুক না কেন তাদের আমি কিছুতেই সফল হতে দেবোনা।মিস ইউ শুভ্রতা।কোথায় হারিয়ে গেলে টুমি।”

কথা টুকু বলতে বলতে শিশিরের চোখ ভিজেঁ এসেছে।আজ ১দিন পুরা হলো শুভ্রতা নিখোঁজ।কোথাও শুভ্রতার খোজ মিলছেনা।বিগত ২সপ্তাহ সব ভালোই যাচ্ছিলো।কিন্তু হঠ্যাৎ সব বদলে গেলো।শুভ্রতা হারিয়ে গেলো।

একদিন আগে,

শুভ্রতা আরিয়ানের বিয়ে হয়েছে ২সপ্তাহ হয়েছে।শুভ্রতা এখনো আরিয়ানের সাথে স্বাভাবিক না।তবে সে আরিয়ানের কোনো কিছুতে অযত্ন রাখেনা।সব কিছুর খেয়াল রাখে।আরিয়ান ও শুভ্রতার সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করে।রোজ সকালে শুভ্রতা উঠে আরিয়ানের জন্য নাস্তা বানায়।আরিয়ান ঘুম থেকে উঠলে ওকে কফি করে দেয়।তারপর নাস্তা দেয়।আরিয়ান চলে যাওয়ার পর শুভ্রতা আর আরিয়ানের মা খাবার খায়।শুভ্রতা আসার পর কাজের চাপ একদম কম হয়ে গেছে তার।দুপুরে শুভ্রতা রান্না অরে বক্সে করে ড্রাইভারকে দিয়ে খাবার পাঠায় আরিয়ানের জন্য।রাতে আরিয়ান আসলে দুজনে এক সাথে খায়।শুভ্রতা আরিয়ানকে ভালোবাসতে পারেনি কিন্তু দায়িত্বের কোনো কমতি সে রাখেনি।শিশিরের জায়গাটা এতো সহজে কাউকে দেওয়া সহজ ব্যাপার নয়।তবুও শুভ্রতার মনে কেন জানি মনে হয়ে এই তার শিশির।কিন্তু তেমন কোনো প্রমান তার হাতে আসেনি।তাই তার এই মনে করাটা মনের মাঝেই থাকে।

সেদিন দুপুরে,,শুভ্রতা আজকে রান্না করে নিজে খাবার নিয়ে যাবে আরিয়ানের জন্য।ড্রাইভার গেছে আরিয়ানের বাবার সাথে।তাই যেমন ভাবা তেমন কাজ। শুভ্রতা রান্না করে গোসল করে একটা নীল কালারের শাড়ি আর হিজাব বেধেঁ খাবার নিয়ে বেরিয়ে পরলো।টেক্সি করে যাবে ভাবছে শুভ্রতা।কিন্তু রোডে কোনো টেক্সি সে পাচ্ছেনা।শুভ্রতা টেক্সির জন্য অপেক্ষা করছিলো যেই রাস্তায়।সেই রাস্তাটা দুপুরে একটু নির্রজন থাকে।শুভ্রতা দাঁড়িয়েই ছিলো তখন কথা থেকে একটা কালো রং এর গাড়ি আসলো।তার ভেতর থেকে ৪জন লোক বেরিয়ে আসলো।একজন শুভ্রতার মুখে একটা কাপড় চেপে ধরলো।বাকিরা শুভ্রতাকে চেপে ধরে গাড়িতে উঠালো।ঘটনা এতো তাড়াতাড়ি হলো যে শুভ্রতা চিল্লানোর সময়াটাও পেলোনা।এর মাঝেই ঘটে গেলো সব কিছু।রাতে আরিয়ান বাসায় আসার পর ওর মায়ের থেকে জানতে পারে শুভ্রতা তার কাছে যাবে বলে বেরিয়েছে কিন্তু এখনো বাড়ি ফেরেনি।আরিয়ান এই কথা শুনা মাত্র শুভ্রতাকে খোঁজার জন্য যায়।কিন্তু কোথাও হদিস মেলেনি তার।সব পুলিশ অফিসারদের নামিয়ে দিয়েছে শুভ্রতাকে খোঁজার জন্য কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।এখনো কোনো খোজ মেলেনি।কাল থেকে আজ পুরো একদিন হয়েগেছে শুভ্রতা নিখোঁজ।

🌸

শুভ্রতার মামা বাড়ির সব পালটে গেছে শুভ্রতার নানা মারা গেছেন এক মাস হলো।আজমির কে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়েগেছে ২মাস হলো।শুভ্রতার বড় মামা তাদের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছে।শুভ্রতার মেঝ মামা আর মামি এখন আগের মতো নেই।মেয়ে পাচার কারীর ফ্যামিলির পরিচয় হয়ে গেছে তাদের পাড়ায়।তাই মেয়ের বিয়ের সমন্ধ আসলেও তা হচ্ছেনা।অথচ তার মেয়ে দেখতে কত সুন্দর।সারাজীবন শুভ্রতাকে কালো বলে অবজ্ঞা করার সাজা আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন তিনি।
ছোট মামি এখন তার ভুল গুলো বুজতে পারছে।আয়না আগের মতো স্কুলে গেলেও।এখনো ভয়ে ভয়ে থাকে সে।সায়ান এখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।সে আর ২য়বার শুভ্রতার কাছে যায়নি আর না প্রিয়াকে সুযোগ দিয়েছে।সে জানে সে সুন্দর্যের মোহে পড়ে জীবনে কি ভুল না করেছে।প্রিয়ার বিয়ে হয়েতো গেছে কিন্তু স্বামীর ঘরে সুখে নেই সে।মাঝে আবার সায়ানকে সে কল দিয়েছিলো।সায়ান কল রিসিভ করে অনেক অপমান করে দিয়েছে প্রিয়াকে।সায়ানের মতে,
আজ এই কালনাগীনির জন্যেই তার শুভ্রতাকে পাওয়া হলোনা।

শুভ্রতার মা অনেকবার এসেছিলেন শুভ্রতার খোজ নিতে কিন্তু কেউ তাকে খোজ দেয়নি।মেয়ের জন্য তার বুক ও কম পুড়ছেনা।মেয়ের বিয়ে হয়েছে শুনে সেই বাড়িতে গিয়েছিলো ঠিকই কিন্তু মেয়ে তার সাথে দেখা করতে আসেনি।শুভ্রতার মা বুজতে পারছেনা তিনি তার অজান্তে তার মেয়েটার মনে কত অভিমানের পাহার জমিয়েছেন।শুভ্রতার মা মেয়ের কাছে একবার মাফ চেয়ে নিতে চান।এই ভোজা আর সে সইতে পারছেনা।

সকালে খাবার টেবিলে খাবার দিচ্ছে আরিয়ানের মা।শুভ্রতার চিন্তায় তার ও মন ভালোনা।তার উপর তার ছেলেও একদম চুপ হয়েগেছে।আরিয়ানের জন্য কফি নিয়ে রুমে আসলো আরিয়ানের মা।রুমে এসে দেখে রুমে আরিয়ান সোফায় শুয়ে আছে।কফিটা টেবিলে রেখে আরিয়ানকে ডাকতে লাগলেন তিনি।কয়েকনার ডাকার পর চোখ খুলে তাকালো আরিয়ান।মাকে দেখে মায়ের কোলে মাথা দিয়ে আবার শুয়ে পড়লো।আরিয়ানের মা বুজতে পারছে স্ত্রীর চিন্তায় তার ছেলে চুপসে গেছে।আরিয়ানের মা আরিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে,

আরিয়ানের মা:বাবু চিন্তা করিস না।আল্লাহকে ডাক দেখ তিনি ঠিক শুভ্রতাকে ফিরিয়ে দেবেন।
আরিয়ান:মা আমার শুভ্রতা কোথায় হারিয়ে গেলো বলোনা।ওকে তো আমি কোথাও খুজে পেলাম না।আমার শুভ্রতাকে কিভাবে ফিরে পাবো আমি মা।(কান্না করে কথা গুলো বলছে আরিয়ান)
আরিয়ানের মা:বাবু এভাবে কাঁদিস না।তোকে শক্ত হতে হবেতো।তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।থানায় যাবিনা আজকে?
আরিয়ান:হ্যা যাবো।তুমি যাও আমি ফ্রেশ হচ্ছি।
আরিয়ানের মা:আচ্ছা আয় তাহলে।

আরিয়ানের মা চলে যাওয়ার পর আরিয়ান চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো।পুরো রুম জুরে শুভ্রতার শুন্যতা অনুভব হচ্ছে তার।আরিয়ান জলদি ফ্রেশ হয়ে ইউনিফর্ম পরে নিচে আসলো।না খেয়েই চলে গেলো থানায়।ওর মা এতো বললো খেয়ে যেতে কিন্তু খেলোনা।

থানায় সবাই শুভ্রতাকে খোঁজার কাজে ব্যস্ত।কিন্থ কোনো হদিসই মিলছেনা।এটা যেনো কেউ আশা করছেনা।একটা মেয়ে কোথায় এভাবে উধাও হতে পারে।মৌ শুভ্রতার ফোন ট্রেস করছে কিন্তু ফোন ট্রেস হচ্ছেনা।আরিয়ান আসার পর সব আপডেট পেয়ে চুপ করে কিছুক্ষন বসে থাকলো।তারপর নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো,

এভাবে সারাদিন খুঁজলেও আমি পাবোনা শুভ্রতাকে।কারন আমি জানি এই কাজ তাদের ছাড়া কারো না।তারা চায় আমি তাদের কাছে ধরা দেই।তাই তারা শুভ্রতাকে নিয়ে গেছে।এভার সময় এসেছে এই খেলার আসল মাস্টার মাইনকে ধরার।শুভ্রতাকে আমার সেফলি ফিরিয়ে আনতে হলে।আমাকে এভার ওদের কাছে যেতে হবে।হ্যা আমার শুভ্রতাকে বাঁচাতে।আমি নিজে ওখানে যাবো।

অন্ধকার রুমে বন্ধি করে রাখা হয়েছে শুভ্রতাকে।কাল থেকে অজ্ঞান ছিলো সে।সকালে জ্ঞান এসেছে তার।জ্ঞান ফিরে নিজেকে একটা বন্ধ অন্ধকার রুমে আবিষ্কার করে।চেয়ারের সাথে বাধা অবস্থায় পরে আছে সে।শুভ্রতার খুব পানির পিপাসা পেয়েছে।কিন্তু তার হাত পা সব বাধা।শুভ্রতা মুখ দিয়ে আসতে আসতে আওয়াজ করতে লাগলো।

শুভ্রতা:কেউ কি এখানে আছেন।কেউ শুনতে পাচ্ছেন আমাকে।আমার খুব পানির পিপাসা পেয়েছে।একটু পানি দিন প্লিজ।

কেউ শুভ্রতার কথা জবাব দেয়না।বেশ কিছুক্ষন পর একটা ছেলে পানির গ্লাস হাতে করে নিয়ে আসে।শুভ্রতার সামনে পানির গ্লাস ধরতেই সে পুরা পানিটা খায়।পানি খাইয়ে ছেলেটা চলে যায়।শুভ্রতা এভার ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখে আসে পাসটা।এতোক্ষন তেস্টায় চোখ মেলতে পারছিলোনা সে।এখন কিছুটা ভালো লাগছে।

শুভ্রতা:এই আমি কোথায়।আমিতো রাস্তায় ছিলাম। আরিয়ানের জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছিলা।তাহলে এই আমি কোথায় আসলাম।আমাকে এখানে কারা নিয়ে আসলো।আল্লাহ এ আমি কোথায় আটকা পরলাম।

শুভ্রতার এসব চিন্তার মাঝেই রুমের দরজা আবার খুলে গেলো সাথে রুমের লাইট গুলো সব আবার জ্বলে উঠলো।শুভ্রতা সামনে তাকিয়ে যাকে দেখলো তাকে দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা।শেষে কিনা এই লোকটা এমন বের হলো।শুভ্রতা অবাক নয়নে বললো,

“শিশিরের চাচ্চু সায়িদ!!”

#চলবে

#হৃদয়ের_স্পন্দন 💙
#পর্ব_১৯
#নন্দিনী_চৌধুরী

[২৫.]

সায়িদকে দেখে চমকে গেলো শুভ্রতা।সায়িদ এখানে। তার মানে সায়িদ তাকে এখানে নিয়ে এসেছে।শুভ্রতাকে চমকে যেতে দেখে সায়িদ পাশে থাকা চেয়ারটা টেনে শুভ্রতার মুখোমুখি বসলো। নিজের লোকেদের ঈশারা করতে তারা শুভ্রতার হাতের বাধন খুলে দিলো। শুভ্রতা অবাক নয়নে তখন প্রশ্ন ছুড়ে দিলো সায়িদের দিকে,,

শুভ্রতা:আংকেল আপনি?
সায়িদ:হ্যা আমি।কেন অবাক হচ্ছো নাকি আমাকে দেখে।
শুভ্রতা:আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেনো?
সায়িদ:কি করবো বলো মামনি।তোমার স্বামী যে আমাকে বাধ্য করেছে আমাকে এখানে তোমাকে নিয়ে আসতে।
শুভ্রতা:আরিয়ান!আরিয়ান আপনাকে বাধ্য করেছে মানে?
সায়িদ:আরিয়ান নয় শিশির।অবশ্য তোমার কাছেতো সে আরিয়ান।শুধু তোমার কাছে নয় সবার কাছে সে শিশির।সে যাই হোক তোমার স্বামী আমার পথে বার বার বাধা হয়ে দাঁড়ায়।তাই তোমাকে এইবার নিয়ে এসেছি।তোমাকে এখন তার থেকে দুরে করে দেবো।তাহলে সে বুজবে আমার পিছনে লাগার ফল।
শুভ্রতা:শিশির!আরিয়ান তাহলে শিশির।আর সে যদি শিশির হয়ে থাকে তবে সে আপনার ভাইয়ের ছেলে।সে আপনার পথে বাধা মানে?
শুভ্রতা:এই যে এতো নারী দেশ থেকে উদাও হচ্ছে এর পিছনেইতো আমিই আছি।আমারই ধান্দা এগুলো।কিন্তু তোমার অই শিশিরের জন্য আমার এই ধান্দা বার বার বিপদের মুখে পরে।প্রথম তোমার অই শশুড় আমার বাধা ছিলো এখন ওটাকেতো মেরেছি কিন্তু এখন আবার তার ছেলেরা আমার বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে কি বলতো ব্যাপার না।বাপ আর এক ছেলেকে তো মেরেছি এভার মরবে শিশির আর তারপর তুমি হুসসস হয়ে যাবে দুবাইয়ে।
শুভ্রতা:তার মানে এই নারী পাচার চক্রের পিছনে আপনি ছিলেন।
সায়িদ:হ্যা আমিই ছিলাম।
শুভ্রতা:আপনি, আপনি আমার মামাকে ফাঁসিয়েছেন।আপনার জন্য উনি জেলে।
সায়িদ:হাহাহাহা বোকা মেয়ে।আমি তাকে ফাঁসাইনি।আজমিরতো আমাদের হয়ে কাজ করতো।নতুন নতুন মেয়ের হদিস দিতো।আর ফিরোজ তাদের বিয়ে করতো,বা আমার অন্য ছেলেরা প্রেমের প্রলোবন করে,কাজ দেওয়ার নাম করে সেই মেয়েগুলোকে তুলে আনতো।তোমার মামা তার নিজের দোষেই জেলে।
শুভ্রতা:ছিহ্ কতটা জঘন্য আপনি।

সায়িদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই গোলাগোলির আওয়াজ পেলো।সায়িদের সাথের লোকেরা বাহিরে এসে দেখে পুলিশ সব দিক থেকে ওদের ঘেরাও করে ফেলেছে।ছেলেগুলো সায়িদের কাছে যেতে নিলে আরো কিছু পুলিশ এসে ওদের ধরে ফেলে।

সায়িদ কিছু বুজতে পারছেনা কি হচ্ছে।
সায়িদ:বাহিরে কি হচ্ছে এসব।
সায়িদ উঠে যেতে নেবে তখন দেখে শিশির আসছে।শিশিরকে দেখে ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে ওঠে শুভ্রতার।শিশির এসে সায়িদের সামনে দাঁড়ালো।

সায়িদ:ওহ তাহলে চলে এসেছিস।
শিশির:কি করবো একমাত্র চাচা ডেকেছে না এসে পারি।তবে মানতে হবে আসলেই আপনি খুব সাহসী নাহলে কি আর একটা নারী পাচারের মতো কাজের বস হতে পারেন।কিন্তু কি বলুনতো অনেক চালাক মানুষও কোথাও না কোথাও ছোট একটা ভুল করে ফেলে।আর সেই ভুল তাকে তার পাপের সাজা দেওয়াতে অবদান রাখে।
সায়িদ:মানে?
শিশির:মানে আপনি কি ভাবছেন আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন।উহুম বরং আমি আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছি।আমিতো অনেক আগে থেকেই জানতাম শুভ্রতা আপনার কাছে আছে।ইভেন ভালোই আছে।
সায়িদ:মানে তুই কিভাবে জানলি?
শিশির:হাহাহা,আমি আগেই জানতাম আপনি শুভ্রতাকে কিডন্যাপ করবেন।তাইতো আমি শুভ্রতাকে সেভাবেই রেডি রাখছি যেনো আপনি ওকে কিডন্যাপ করলেই আমি তা জানতে পারি।
সায়িদ:মানে?
শিশির:মানে,, মানে এইযে শুভ্রতার চেইনে একটা ছোট স্পিকার লাগানো আছে।আর ওর কানের দুলের সাথে একটা হিডেন ক্যামেরা লাগানো আছে।যেটার মাধ্যমে আমি জানতে পারি শুভ্রতা কোথায় আছে কি করছে।আমি আগেই জানতাম এমন কিছু হবে। তাই আগে থেকেই আমি তৈরি ছিলাম।তোমার সামনে শুধু নাটক করেছি আমি।আমি জানিতো তোমার লোকেরা আমাদের অফিসারদের মধ্য মিলে আছে।তাই আরকি একটু কান্না কাটি করছিলাম।
সায়িদ:অহ মানে আমার চালের ওপর চাল চেলেছিস তুই?
শিশির:হ্যা কিছুটাই তাই বলতে পারেন।কিন্তু আমার জানা বাকি আছে কেনো আপনি আমার বাবাকে শুভ্রতার বাবাকে মারলে।একবার কি হাত কাপেনি নিজের বড় ভাইকে মারার সময়।আর আমার ভাই।তাকে কেন মারলেন?

সায়িদ:যাক সব যখন তুই জেনেই গেছিস তাহকে এটুকু কেন আমি বাকি রাখবো বলে দিচ্ছি।

আমি আর তোর বাবা কোনোদিন এক ছিলাম না।আমাদের বাবার আমার থেকে বেশি ভালোবাসা আর প্রিয় ছিলো তোর বাবা।এর কারন এটাই আমি ছিলাল প্রচুর খাপছাড়া।কোনো কিছু তেমন গুরুত্ব দিতাম না।কিন্তু তোর বাবা ছিলো একদম লেজেন্ডারি।সব কিছুতে তার একটিভিটি ছিলো।এভাবেই বড় হতে লাগি আমরা।আমি দিন দিন মদ ড্রাগস নারী নেশাতে ডুবে যাচ্ছিলাম।তোর বাবা আমাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু আমি ভালো হইনি।দেখতে দেখতে তোর বাবা হলো পুলিশ আর আমি হলাম একজন বেকার।যার কারনে বাবা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।আর আমার সাথে দেখা হয় নারী পাচার কারী দলের বস জসিফের সাথে।জসিফ খ্রিষ্টান ছিলো।জসিফ আমাকে ওর দোলে নিয়ে নেয়।তারপর আমরা শুরু করি নারী পাচার করা সাথে বাচ্চাও করতাম।এরপর জসিফ মারা যায় আর দলের বস হই আমি।আমার লিডে গ্রুপ চলতো।একটা সময় বাচ্চা পাচার করা রিস্ক হয়ে যাচ্ছিলো।এর মাঝে আমাদের একটা কন্টাক্ট আসলো ২০টা বাচ্চার।আমারা ১৮টা বাচ্চা জোগার করলাম কিন্তু বাকি দুইটা বাচ্চা পাচ্ছিলাম না।তখন ঠিক করলাম হাসপাতাল থেকে নিবো।কাজ মতো গেলাম হাসপাতালে।অই রাতে এক সাথে দুইটা ডেলিবারি হইছে।সেখানে জানতে পারি আমার ভাইয়ের বউও আছে।তখন মাথায় বুদ্ধি আসলো।ভাইয়ের বাচ্চাটা নেবো।সেই মত ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানতে পারি ভাইয়ের দুইয়া জমজ ছেলে হইছে।বাচ্চা দুইটা আপাদত বেবি রুমে আছে।আমি ডাক্তারকে টাকা দিয়ে ওদের দুইজনকে দিতে বলি।কিন্তু ডাক্তার যতক্ষনে বাচ্চা আনবে তার আগে ভাইয়ার কোলে তার এক ছেলেকে দিয়ে দেওয়া হয়।তাই ডাক্তার আমাকে অন্য বাচ্চাটা দিতে চেয়েছিলো।কিন্তু অই সময় পুলিশ জেনে যায় এসবের কথা রেট মারলো আমাদের ওখানে আমি তাই আমার দলবল নিয়ে পালিয়ে আসলাম সব বাচ্চা ওখানে রেখে।পরবর্তিতে অই আরেকটা বাচ্চা কি হয় সেটা আমি জানতে পারিনি।এরপর একঅ বছর আমরা ঠান্ডা থেকে আবার কাজ শুরু করি।এভার শুধু মেয়ে পাচার করা আমাদের উদ্দেস্য ছিলো তাই করছিলাম।তখন আমাদের দলে এসে যোগ দেয় আজমির।আজমির কে কাজ দিতো ফিরোজ।কখোন কোথায় কোন মেয়ে তুলতে হবে।নতুন মেয়ের খোজ দেওয়ার দায়িত্ব ছিলো ওর।ভালোই চলছিলো কাজ।কিন্তু এর মাঝে আবার পুলিশের লোকেদের হানা দেওয়ার কথা জানতে পারি।আর জানতে পারি আমার ভাই তাতে আছে।আমার ভাইয়ের হাতে আমার বিরুদ্ধে জোরালো প্রমান ছিলো।সেই প্রমান দিয়েছিলো শুভ্রতার বাবা।শুভ্রতার বাবা কোনোভাবে দেখে ফেলেছিলো আমাদের নারী পাচার করতে যেটা সে তার ফোনের ক্যামেরায় ধারন করে ফেলে আর সেটা আমার ভাইকে দেয়।আমি জানতাম এটা আমার জন্য কত বড় বিপদ।তাই আমি আগে শুভ্রতার বাবাকে মেরে ফেলি।এমন ভাবে মারি যে বুজাই যায়না জেনো ওটা মাডার।এরপর আমি ভাইয়াকে মারলাম সেটাও খুব প্ল্যানিং করে।আমি ভেবেছিলাম এরপর আর কোনো সমস্যা আমার থাকবেনা।কিন্তু তুই তোর বাপের মতো আমার কাজে নাক গোলালি।আমাদের মেয়ে পাচারকারী ব্যবসা চলছিলো ভালো কিন্তু তুই আবার ইনভেস্টিকেশন শুরু করলি।ভেবেছিলাম সেদিনে এনকাউন্টারে তুই মরে গেছিস।কিন্তু তুই যে আরিয়ান হয়ে ফিরে আসবি ভাবিনি।আর দেখ কি ভাগ্য তোর ভাইকে আমি কিডন্যাপ করলাম।সেই জায়গায় তুই গেলি।আরিয়ানকে মারার ইচ্ছা ছিলোনা।কিন্তু তোর জন্যেই ওকে মেরেছি।তবে আজ তুইও মরবি আমার হাতে।ইউ নো আমি কোনো রিস্ক নেবোনা।

শিশির:মানুষ কতটা খারাপ হতে পারে তা আপনাকে না দেখলে জানতাম না।একটা অপরাধ ডাকতে কতগুলা অপরাধ করেছেন আপনি।আফসোস ও হচ্ছেনা আপনার।

সায়িদের সব কথা শুনে শুভ্রতা চুপ হয়ে গেছে। এই নোংড়া কাজে তার বাবার প্রান গেছে।এই লোকটার কারনে সে বাবা হারা হয়েছে।শুভ্রতা সব শুনে চোখের পানি অজরে গড়িয়ে পরছে।

#চলবে