হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব-১৬+১৭

0
688

#হৃদয়ের_স্পন্দন 💙
#পর্ব_১৬
#নন্দিনী_চৌধুরী

[২২.]

পুরা জেল তন্ন তন্ন করে খুজা হচ্ছে।এদিক সেদিক অফিসাররা সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে।কেউ কেউ ফোনে কথা বলছে আর তল্লাসি করছে।আরিয়ান, মেহেদি,মৌ,হাসান ও সেখানে এসেছে।

আরিয়ান জেলোর সাহেবের কাছে গেলো।
আরিয়ান:কি হয়েছে জেলোর সাহেব?
জেলোর:আরিয়ান ফিরোজকে কেউ জেল থেকে ভাগিয়ে নিয়ে গেছে।
আরিয়ান:What!এটা কিভাবে হলো।
জেলোর:জানিনা আরিয়ান ভোরের দিকে জেলের দায়িত্বে থাকা অফিসার সবাইকে সকালে জাগাতে গিয়ে দেখে ফিরোজের সেল খালি।আর জেলের তালা ভাংগা।কেউ একজন ওকে বের করে নিয়েগেছে।
আরিয়ান:কিন্তু এতো কড়া সিকিউরিটি থাকার পরেও এটা হলো কিভাবে।
জেলোর:জানিনা বুজতে পারছিনা।আই এম সরি আরিয়ান।আমাদের আরো সিকিউর হওয়া দরকার ছিলো।
আরিয়ান:আপনি বুজতে পারছেন না ফিরোজ কত বড় অপরাধি।ওর বাহিরে থাকা মানে কোনো মেয়ে এখন সেফ নেই।অহ গোড এখন কি করে ওকে খুজে বের করবো আমরা।
মৌ:আচ্ছা জেলের সিসিটিভি ক্যামেরা চেক করেছেন আপনারা?
জেলোর:হ্যা করেছি কিন্তু কেউ সিসিটিভি ফুটেজ কেটে দিয়েছে।কাল রাতের কোনো ফুটেজ নেই।সকালের ফুটেজ আছে আমাদের তল্লাসির থেকে।
মৌ:তার মানে কাল রাতেই কেউ ফিরোজকে বের করে নিয়েগেছে।আর সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ নষ্ট করে দিয়েছে।
মেহেদি:হুম রাইট।কিন্তু এখন ওকে কিভাবে খুজে বের করবো আমরা।
আরিয়ান:শুনো সব জায়গায় চ্যাক পোষ্ট লাগিয়ে দেও।সব থানায় ওর ছবি পাঠিয়ে দেও।যে কেউ দেখা মাত্র যেনো আমাদের ইনফর্ম করে।
মেহেদি:আচ্ছা স্যার।

আরিয়ানরা চলে যেতেই জেলোর ফোন বের করে কাউকে কল দেয়,,,,

জেলোর:স্যার কাজ হয়েগেছে।আপনার কথা মতো আরিয়ানকে বলেছি যা বলার।
লোকটা:গুড।তোমার পেমেন্ট পেয়ে যাবে একটু পর।
জেলোর কল কেটে দিলো।লোকটা কল রেখে ফোন হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলে,

অই নিউ অফিসার ফিরোজকে কোনোদিন পাবেনা।হেহ্ একটা মশা এসেছে একটা বাজের পরিকল্পনা নষ্ট করতে।লোকটা একটা পৈষাচিক হাসি দিলো।

আরিয়ান শুভ্রতাদের বাসায় কল করে দিয়েছে শুক্রুবারের আগ পর্যন্ত যেনো ওদের বাড়ি থেকে কেউ বের না হয়।যা শপিং সব আরিয়ান করে পাঠাবে।টিভিতে ব্রেকিং নিউজ করে দেওয়া হয়েছে ফিরোজকে না পাওয়া পর্যন্ত কোনো মেয়ে যেনো বাড়ি থেকে একা না বের হয়।আরিয়ানের মাথায় এখন চিন্তা ডুকে গেছে।ফিরোজকে কে ছাড়িয়ে নিয়ে গেলো।

দেখতে দেখতে শুক্রুবার চলে আসলো।এর মধ্য আরো ৩জন মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে।এতো সতর্কতার পরেও মেয়ে নিখোঁজ হচ্ছে।

আজকে শুভ্রতার বিয়ে।কাল ঘরোয়া ভাবে হলুদ করেছে তারা।আজ এক সপ্তাহ শুভ্রতা নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে চলেছে।কোনো ভাবে সে শিশিরকে মনে করতে চায়না।কিন্তু বেহায়া মন কি তা মানতে চায়।শুভ্রতা শেষ বারের মতো এসেছে শিশিরের রুমে।এক সপ্তাহ সে এই রুমে আসেনি।কিন্তু আজ তো চলেই যাবে তাই শেষ বারের মতো এসেছে।

শুভ্রতা শিশিরের ছবির সামনে এসে দাঁড়ালো।

চলে যাচ্ছি আজকে আমি সারাজীবনের মতো আপনার থেকে অনেক দূরে।আর কোনোদিন আপনার এই রুমে আমার আশা হবেনা।আর আপনার রুমে আপনার ছবি দেখা হবেনা আমার।কারন আমি যে আজ অন্য কারো ঘরোনি হয়ে যাবো।আজ আমাদের শেষ দেখা।চলে যাচ্ছি।

শুভ্রতা চোখের পানি মুছে রুমে চলে আসে।মহুয়া এসে ওকে সাজাতে লাগলো।বিকালেই বিয়ে হবে ওদের।বিকালের দিকে আরিয়ানরা আসলো।যে কেউ প্রথম দেখায় আরিয়ানকে শিশির ভাব্বে।সাবিনা মহুয়া সেরকম ভেবে ফেলেছিলেন।কিন্তু পরে মনে পরে তাদের শিশিরতো আর নেই।সাবিনা চোখের পানি এড়িয়ে।আরিয়ানকে আপ্যায়ন করেন।কাজি চলে এসেছে।শুভ্রতাকে নিয়ে আসা হলো।একটা লাল বেনারশী পড়ানো হয়েছে ওকে।সাথে গোল্ডের জুয়েলারি।খোপায় বেলিফুল দেওয়া।আরিয়ান আর শুভ্রতার মাঝে একটা নেটের পর্দা দেইয়া।এপারের মানুষটা অপারের মানুষটাকে দেখতে পাচ্ছে।শুভ্রতা ঘোমটা দেওয়া।কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।প্রথম আরিয়ানের থেকে কাবিননামায় সাইন করালো আর কবুল বলালো।এখন শুভ্রতার পালা।শুভ্রতাকে কবুল বলতে বলা হয়েছে। কিন্তু শুভ্রতা চুপ করে আছে অনেকক্ষন চুপ করে থেকে কবুল বলে দিলো সে তারপর সাইন করে দিলো সেও।কবুল বলার পর সবাই আলহামদুলিল্লাহ বললো।সবাইকে খেজুর দিয়ে মিষ্টি মুখ করানো হলো।বউ বরের সামনের থেকে পর্দা সরিয়ে দেওয়া হলো।এখন আরিয়ান আর শুভ্রতাকে এক সাথে বসানো হলো।দুইজনে দুইটা আংটি দেওয়া হলো।দুজনকে পড়ানোর জন্য।দুইজন দুজনকে আংটি পরিয়ে দিলো।আরিয়ানের মা এসে শুভ্রতার হাতে দুইটা মোটা গোলাপবালা পরিয়ে দিলেন।সাবিনা এসে আরিয়ানকে একটা চেইন দিলেন আর শুভ্রতাকে একটা গলায় হাড় পরিয়ে দিলেন।এবার সবার খাওয়া দাওয়ার পালা।খাওয়া দাওয়া শেষ করে এভার শুভ্রতাকে বিদায় জানানো হবে।শুভ্রতার বিয়ের কথা তার মামাবাড়িতে জানানো হয়েছিলো কিন্তু কেউ আসেনি।শুভ্রতা সাবিনাকে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না করছে।চাঁপা মহুয়া সবাই কাঁদছে।অনেকক্ষন কান্নাকাটি করার পর শুভ্রতাকে গাড়িতে তোলা হলো।বিদায় নিয়ে যাচ্ছে শুভ্রতা।চলে যাচ্ছে এই চিরচেনা বাড়িটা থেকে।চলে যাচ্ছে তার শিশিরকে রেখে।

আরিয়ানদের বাসায়,,,,,
শুভ্রতা এখনো ভালো করে আরিয়ানকে দেখেনি।আসলে দেখার ইচ্ছা হচ্ছিলোনা বলেই দেখেনি।আরিয়ানদের বাসায় এসে আরিয়ানের কাজিনরা সবাই ধরেছে আরিয়ানকে।নতুন বউকে কোলে করে ঘরে আনতে হবে।এটা নাকি নিয়ম।বাধ্য হয়ে আরিয়ান শুভ্রতাকে কোলে নিলো।আরিয়ান মনে মনে খুশি হলেও বাহিরে তা প্রকাশ করলোনা।আর শুভ্রতা আরিয়ানের কোলে উঠে এক আলাদা শিহরণ বয়ে যাচ্ছে তার।এক আলাদা অনুভূতি হচ্ছে তার।আরিয়ানের গলা জরিয়ে ধরে রেখেছে সে।এভার একদম কাছ থেকে দেখছে।মনে হচ্ছে হুবাহুব শিশির।কিন্তু সেটা কিভাবে হবে।শিশিরতো মারা গেছে।এটাতো আরিয়ান।আরিয়ান শুভ্রতাকে নিয়ে একদম তাদের বাসর ঘরে এনে নামালো।এখানে কিছু রিচুয়াল শেষ করে আরিয়ানের থেকে মোটা টাকা নিয়ে আরিয়ানকে বাসর ঘরে ডুকালো সবাই।শুভ্রতার অনেক অসস্তি লাগছে।আরিয়ান সেটা বুজতে পেরে বলে,

আরিয়ান:যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।
শুভ্রতা আরিয়ানের কথা শুনে লাকেজ থেকে একটা কলাপাতা রং এর শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো।তারপর ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসলো।আরিয়ান নিজেও ফ্রেশ হতে গেলো।ফ্রেশ হয়ে এসে আলমারি থেকে দুটো জায়নামাজ আর একটা টুপি আর হিজাব আনলো।হিজাবটা শুভ্রতার দিকে এগিয়ে দিলো সে আর বললো,

আরিয়ান:নতুন জীবনের শুরু আল্লাহর ইবাদত দিয়ে শুরু করবো।চলো নামাজ পরে আল্লাহর কাছে দোয়া করি।

শুভ্রতার আরিয়ানের কথাটা খুব ভালো লাগলো।দুজনে নামাজ পড়তে দাঁড়িয়ে গেলো।নামাজ শেষে আরিয়ান শুভ্রতা দুজনে মোনাজাত করছে।আরিয়ান আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করছে,

“ইয়া আল্লাহ আজ থেকে আমার শুভ্রতাকে আমার করে নিয়েছি।আল্লাহ আমি যেনো ওকে সব সময় আগলে রাখতে পারি সব বিপদ থেকে।ওর কোনো বিপদে জেনো আমি ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারি।ওকে কোনো বিপদ ছোঁয়ার আগে তা যেনো আমি আমি রুখে দিতে পারি।হ্যা আল্লাহ আপনি আপনার রহমত আমাদের উপর রেখেন।আমিন।”

শুভ্রতা আল্লাহর নিকোট নতুন ভাবে সব শুরু করার জন্য শুকরিয়া জানালো।তারপর দুজনে নামাজ শেষ করে উঠে দাঁড়ালো।শুভ্রতা শুধু চেয়ে আছে আরিয়ানের দিকে।এটা কি আদৌ হয় একই চেহারার দুটো মানুষ।শুভ্রতাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরিয়ান বাকা হেসে বলে,

আরিয়ান:আমাকে এভাবে দেখার কিছু নেই। আই নো আই এম হ্যান্ডসাম বয়।
আরিয়ানের কথা শুনে শুভ্রতা লজ্জা পেলো তাই গাল ফুলিয়ে বললো,

শুভ্রতা:নিজের জিনিশ দেখাতে কোনো অন্যায় নাই বুজলেন।আর আপনি হ্যান্ডসাম কে বলে এই কথা।আপনার থেকে ওই মোড়ের দোকানের চা ওয়ালা বেশি সুন্দর।আপনার মতো পাথর মার্কা না

আরিয়ান:কিহ্।তুমি আমাকে অসুন্দর বলছো।তুমি জানো আমার জন্য কত মেয়ে পাগল।তুমার খুশি হবার কথা আমি তোমাকে বিয়ে করেছি।তানা তুমি আমাকে….।

শুভ্রতা:হেহ খুশি না ছাই কালো মুখো বান্দর।তাকে বিয়ে করে নাকি আমি খুশি হবো।ইসস শখ উতলে উতলে পড়ে আহা।

আরিয়ান:কালো মুখো বান্দর লাইক হোয়াট।
শুভ্রতা:এই রাখুন আপনার হোয়াট ফোয়াট।আমার ঘুম আসছে সরুন।
আরিয়ান:বাসর রাতে মানুষ রোমান্টিক কথা বলে🙂আর আমার বউ আমার লোগে ঝগরা করে।জীবন্ডা কলা পাতা।কই ভাবলাম বউয়ের লোগে লুমান্টিক কথা বল্মু তানা বউ আমায় কালো বান্দর বলে ঘুমিয়ে গেলো।আরিয়ান গাল ফুলিয়ে নিজেও শুয়ে পরলো।শুভ্রতা উঠে মাঝে একটা কোলবালিস দিয়ে দিলো।

শুভ্রতা:ইন্ডিয়া পাকিস্তানের বোর্ডার যদি ক্রস করে এদিকে আসেন আইজি সাহেব।তাহলে ৪২০ এর একটা পাঞ্চ খাবেন মনে রাখবেন।

আরিয়ান ভয়ে আর কিছু বলেনা।মনে মনে বল,

“কি দিন আসলো আমার।আমি পুলিশ হয়ে বউকে ভয় পাচ্ছি।নাহ এ মুখ কাউকে আর দেখাতে পারবোনা।”

গভির রাতে আরিয়ানের ঘুম ভেংগে গেলে পাশে তাকিয়ে দেখে শুভ্রতা তার বুকের উপর হাত দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।আরিয়ান মুচকি হেসে বলে,

“যে বুকেতে হাত তুই দিয়ে রেখেছিস প্রিয়”
“সেই বুকেতে বসবাস শুধুই যে তোর”
“তুই যে প্রিয় আমার এই বুকের মাঝের হৃদয়ের”

“হৃদয়ের স্পন্দন”।

#চলবে

#হৃদয়ের_স্পন্দন
#পর্ব_১৭
#নন্দিনী_চৌধুরী

[২৩.]
সকালের মিষ্টি রোদে ঘুম ভাংলো শুভ্রতার।আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসলো বিছানায়।আসে পাশে তাকিয়ে দেখলো।কিছুখনের ভিতরে মনে পরলো কাল তার বিয়ে হয়েছিলো।সে এখন তার শশুড়বাড়িতে আছে।শুভ্রতা পাশে তাকিয়ে দেখলো আরিয়ান নেই।সেদিকে পাত্তা না দিয়ে শুভ্রতা ফ্রেশ হতে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে একটা হলুদ কালারের জামদানি শাড়ি পরলো।মাথায় ঘোমটা দিয়ে নিচে আসলো।আরিয়ানের মা শুভ্রতাকে দেখে মিষ্টি একটা হাসি দিলো।

আরিয়ানের মা:আরে তুইতো দেখি চলে আসছিস।আমি আরো যাচ্ছিলাম তোকে ডাকতে।কোনো অসুবিধা হচ্ছে নাতো এখানে?
শুভ্রতা:না মা কোনো অসুবিধা হচ্ছেনা।
আরিয়ানের মা:আচ্ছা চল নাস্তা করে নে।আরিয়ান সকাল হতেই থানায় চলে গেছে।বাড়িতে যে নতুন বউ তার খেয়াল নেই।তুই কিছু মনে করিস না মা।
শুভ্রতা:না মা কি যে বললেন না।

তারপর আরিয়ানের মা আর শুভ্রতা নাস্তা করে নেয়।আরিয়ানের বাবা বাজারে গেছেন সকালে।শুভ্রতা নাস্তা করে রুমে আসে।আরিয়ানের রুমটা অনেক সুন্দর ঘুছানো।আরিয়ানের কয়েকটা ছবি দেয়ালো রাখা।আরিয়ানের ছোট বেলার ছবিও রাখা।শুভ্রতা ছবি গুলো দেখছে আর ভাবছে।

শুভ্রতা:কারো সাথে কারো চেহারার কি এতোটা মিল হতে পারে।এটাকি আসলেই কাকতালিও নাকি এর পিছনে অন্য রহস্য আছে।জানিনা কেন আমার মন বলে আপনি আমার শিশির।কিন্তু আপনি শিশির হলে কেন আমার থেকে দূরে দূরে ছিলেন।কেন এখানে আরিয়ান হয়ে আছেন।আর এই আরিয়ান!আসলে আরিয়ান আপনি নাকি আপনি শিশির।

শুভ্রতা এসব ভাবনার মাঝে ওর ফোনে কল আসে।ফোন হাতে নিয়ে দেখে সাবিনা কল দিছে।সাবিনার সাথে কিছু সময় কথা বলে আরিয়ানের মায়ের কাছে যায়।আরিয়ানের বাবা বাজার করে এনেছেন।শুভ্রতা তার কাছে গিয়ে রান্না ঘরে তাকে রান্নায় সাহায্য করে।আরিয়ানের না করার পরেও শুভ্রতা রান্না করে।

এদিকে,,,

আরিয়ান ওরফে শিশির বসে আছে একটা কফিনের সামনে।কফিনে একটা লাশ এসেছে আজকে সকালে।শিশিরের চোখে পানি চকচক করছে।কিন্তু ছেলে মানুষের তো সবার সামনে কাঁদতে নেই।মেহেদি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।আরিয়ান আর মেহেদি বর্তমানে একটা বাড়িতে আছে।আরিয়ানের বিষেশ ইনফর্মার তাকে জানিয়েছিলো আসল আরিয়ানের খোজ।কিন্তু শিশিরদের আসতে বড্ডো দেড়ি হয়ে গেছে।আসল আরিয়ান তাদের ফাকি দিয়ে দূর আকাশে চলে গেছে।আসল আরিয়ানকে কেউ মেরে এখানে কফিনে রেখে গেছে।শিশিররা এসে শুধু এখানে লাশটাই পেয়েছে।

মেহেদি:স.স্যার!
আরিয়ান:অনেক দেড়ি করে ফেললাম আমি মেহেদি অনেক দেড়ি করে ফেললাম।আমার ভাই.আমার ভাইয়কে ওরা মেরে ফেললো মেহেদি মেরে ফেললো।
মেহেদি:স্যার নিজেকে সামলান প্লিজ।আপনি ভেংগে পড়লে অই শয়তানরাতো জিতে যাবে।ওরাতো চায় আপনাকে ভেংগে দিতে।
আরিয়ান:মেহেদি আমার মা তো জানেই না তার যে আরেকটা নাড়িছেড়া ধন এই দুনিয়ায় ছিলো।আর মিসেস ইকবাল তাকে।তাকে আমি কিভাবে জানাবো এই কথা।
মেহেদি:স্যার।

শিশির মেহেদি যখন আসল আরিয়ানকে খুজে এখানে আসে এখানে এসে দেখে যে আসল আরিয়ানের লাস আর সাথে একটা লেটার,,

“বার বার বেচেঁ যে ফিরবি তার আশা রাখিস না শিশির।তুই কি মনে করেছিস তুই আমার চোখ ফাকি দিতে পারবি।তোর বাবার কাছে তোর ভাইকে পাঠিয়ে দিলাম।যদিও তুইতো জানতিস না এটা তোর।ভাই যাক আজকে জানিয়ে দিলাম এটা তোর ভাই।এভার নিজের পরিবারের দিকে নজর দে।আমার কাজে বাধা দিলে এভাবেই একজন একজন করে হারাবি তুই।”

মেহেদি:কিন্তু স্যার ওরা জানলো কিভাবে যে আপনি শিশির?
শিশির:ওদের লোক আমাদের মাঝেই আছে মেহেদি।তাইতো ওরা আমাদের সব পদক্ষেপ জেনে যাচ্ছে।আর আমাদের আগে সব কাজ করে ফেলছে।
মেহেদি:তাহলে স্যার এখন কি হবে?আর স্যার আরিয়ান আপনার ভাই কিভাবে আমি এখনো সেটা বুজতে পারছিনা।

শিশির:বলছি আমি,,,,

আমার মায়ের যখন প্রথম বাচ্চা হয় মানে আমি হই তখন আমার মায়ের অবস্থা অনেক খারাপ ছিলো।আমার মায়ের বিয়ের ৪বছরেও বাচ্চা হচ্ছিলোনা।কিন্তু একটা সময় আমি আমার মায়ের গর্ভে আসি।কিন্তু ডাক্তার জানায় যে আমার মায়ের এই প্রেগ্নেন্সিতে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।আর সেরকমই হয়।মায়ের শরীল ৫মাসে পরতেই অনেক সমস্যা দেখা দেয়।সেই সমস্যা নিয়েই মা আমাকে পেটে রাখে।কিন্তু ডেলিবারির সময় আমার পজিশন উলটা ছিলো।তাই আমার আর মায়ের অনেক রিস্ক ছিলো।মায়ের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো।কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি মা দুজনেই সুস্থ ভাবে বেচেঁ আসি।তখন ডাক্তার আমার মাকে জানায়নি যে আমার সাথে সাথে আরো একটা ছেলে বেবি মায়ের হয়েছে।মানে টুইন বেবি হয়েছে মায়ের।আমাকে মায়ের কোলে পরেরদিন সকালে দেওয়া হলেও আমার ভাইকে দেওয়া হয়নি।আমার মা বাবাকে বলাই হয়নি আমার ভাইয়ের কথা।আর আমার সেই ভাই আর কেউ না আরিয়ান।আরিয়ানকে মিস্টার আর মিসেস আহমেদ দত্তক নিয়েছিলো ওই হাসপাতাল থেকে।

মেহেদি:কিন্তু আরিয়ান ওনাদের কাছে গেলো কিভাবে আর ওই হাসপাতালের ডাক্তার আরিয়ানের কথা কেন জানালেন না আপনার মা বাবাকে।

শিশির:ডাক্তারকে কেউ এমনটা করতে বলেছিলো তার বদলে টাকা পেয়েছিলো সে।আমাকেও নাকি এভাবে সরিয়ে দিতে বলা হয়েছিলো।কিন্তু আমি হবার পরেই নার্স আমাকে আমার বাবার কাছে দিয়ে দিয়েছিলো তাই আমাকে সরাতে পারেনি।
আরিয়ান আমার ভাই সেটা আমি নিজেও জানতাম না কিন্তু শিশির থাকা অবস্থায় হেডকোয়াটার থেকে বাবার ফাইলটা যখন নেই তখন আমি বাবার ফাইলটা থেকে অনেক কিছু জানতে পারি।এটাও জানতে পারি কে এসবের পিছনে আছে।ইকবাল মাহমুদের কাছেই বড় হয়েছে আরিয়ান।ও একজন পুলিশ অফিসার হয়েছে।আরিয়ান ঈ এই নারী পাচার কারী চক্সটাকে ধরার কাজে লেগেছিলো।কিন্তু একদিন হঠ্যাৎ করেই আরিয়ান নিখোঁজ হয়ে যায়।হেডকোয়াটার থেকে ইকবাল স্যারকে জানানো হয় আরিয়ান একটা গোপন কেসে গেছে।কিন্তু আসলেতো আরিয়ান নিখোঁজ ছিলো।এরপর সেদিন যেদিন আমরা ফিরোজকে ধরতে যাই।সেদিন প্ল্যানিং ছিলো আমার।যে আমি ফিরোজের ফায়ারিং এ মারা যাবো আর আরিয়ান হয়ে আবার ফিরে আসবো।হেডকোয়াটার থেকে আমি সব ঠিক করে নিয়েছিলাম।সব প্ল্যানিং মতোই হলো।আরিয়ান হয়ে ফিরে আসলাম ইকবাল স্যারের কাছে।জয়েন হলাম থানায় শিশিরের পদে।তারপর তোমাকে সব জানালাম।

মেহেদি:এবার বুজতে পারছি স্যার।সবটা এবার ক্লিইয়া।শুভ্রতা ম্যাম এর মামা আজমির যাদের হয়ে কাজ করতো তারা ছিলো ফিরোজ।আর ফিরোজ যাদের হয়ে কাজ করে তারা হলো আপনার শত্রু।আজমির কে তো আমরা জেলে রেখেছি।কিন্তু ফিরোজকে কেউ বের করে নিয়ে গেছে।
শিশির:হ্যা আর তাতে জেলের কেউ জরিতো আছে।তবে এসবের সমাপ্তি খুব তাড়াতাড়ি আমি করতে চলেছি খুব তাড়াতাড়ি।

রাতে,,,,

রাতে আরিয়ান বাসায় আসলো।সারাদিনের এতো ক্লান্তি তার উপর আসল আরিয়ানের মৃত্যু সব মিলিয়ে একদম চুপসে গেছে আরিয়ান।আরিয়ান বাসায় আসা মাত্র ওর মা ওর কাছে এগিয়ে আসলেন।

আরিয়ানের মা:কিরে বাবু তোর চোখ মুখ এমন লাগছে কেন?
আরিয়ান মায়ের কথায় কি বলবে জানেনা।এই মা যখন জানতে পারবে যে তার আরিয়ান আর নেই তখন কি হবে।আরিয়ান মাকে জরিয়ে ধরে বলে,

আরিয়ান:কিছুনা মা একটু ক্লান্ত।তুমি কি খেয়েছো।শুভ্রতা খেয়েছে?
আরিয়ানের মা:হ্যা খেয়েছি।কিন্তু শুভ্রতা তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
আরিয়ান:আচ্ছা মা। তুমি তাহলে এখন ঘুমাও বাবা ঘুমিয়েছে।
আরিয়ানের মা:হ্যা।আচ্ছা যা রুমে যা।

আরিয়ান রুমে চলে আসলোশুভ্রতা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে।শুভ্রতা বৃষ্টি উপভোগ করছে।আরিয়ান এসে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়।রুমে কারো আসার শব্দ পেয়ে শুভ্রতা রুমে এসে দেখে বিছানায় গাড়ির চাবি মোবাইল ওয়ালেট পড়ে আছে।শুভ্রতা সেগুলো গুছিয়ে রাখে।কিছু সময় পর আরিয়ান গোসল করে রুমে আসে।শুভ্রতা তখন বিছানায় বসা।শুভ্রতাকে দেখে আরিয়ান বলে,

আরিয়ান:আমার জন্য অপেক্ষা করবেনা।আমার আসতে রাত হয় অনেক।খেয়ে নেবে মা বাবার সাথে।
শুভ্রতা:আপনি এতো রাত করে আসেন।না খেয়েই নাকি ঘুমিয়ে যান।এতে তো আপনার শরীল খারাপ করবে।দেখুন আমি আপনাকে ভালোবাসিনা বা স্বামী হিসাবে মানতে সময় লাগবে কিন্তু আমি একজন মানুষ।আর একজন মানুষ হয়ে কাউকে এভাবে থাকতে দেখতে পারবোনা।তাই আপনি আসলে আপনার সাথেই আমি খাবো।

আরিয়ান আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে পরলো খাটে।শুভ্রতা নিচে গিয়ে খাবার গরম করে নিয়ে আসলো।এসে দেখে আরিয়ান ঘুমিয়ে গেছে।শুভ্রতা গিয়ে দুইবার ডাক দিলো কিন্তু উঠলোনা।অনেক ক্লান্ত থাকায় গভীর ঘুমে আছে।শুভ্রতা খাবার ঢেকে রেখে আরিয়ানের পাশে বসলো।আরিয়ান ঘুমের ঘোরে বীড়বীড় করে বললো,

“সরি শুভ্রতা আমি সরি।আমি তোমাকে ইচ্ছা করে দূরে রাখছিনা।আমি চাইলে তোমাকে কাছে আনতে পারছিনা।পারছিনা তোমাকে সত্যিটা বলতে।আমি হেল্পলেস শুভ্রতা।আমি হেল্পলেস।আমি একজন ভালো ভাই হতে পারলাম না।পারলাম না ভালো ছেলে হতে।”

শুভ্রতা আরিয়ানের কথাগুলোর মানে কিছুই বুজতে পারছেনা।তবে এটা সে বুজতে পারছে এই আরিয়ান যে কতটা রহস্যময়।

#চলবে