হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব-০৫

0
507

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৫
প্রিয়ার মামাতো বোন ওকে দেখে দৌঁড়ে আসে। মামাতো বোনটা ছোটোই। ক্লাস এইটে পড়ে কিন্তু অতিমাত্রায় বা*চাল! প্রিয়া নিজেও বা*চাল টাইপ তাই ওর মামাতো বোন রাহাকে ওর তেমনটা ভালো লাগে না। প্রিয়া চায় ওর সামনের মানুষটা ওর সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে। প্রিয়া বিছানায় ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে এসে বসে। তখন থেকে রাহা উৎসুকভাব তাকিয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কিছু বলতে চায়। প্রিয়া বলে,

“কিছু বলবি?”

“আসলে আপু, তোমাকে না বলতে পারলে পেটের ভিতর কেমন গুড়মুর করছে।”

প্রিয়া সেন্টি টাইপ হাসি দিয়ে বলে,
“তাহলে বল।”

“জানো? আমি এখানে কেনো এসেছি?”

প্রিয়া ঘার নাড়ায় মানে জানেনা। রাহা বলতে থাকে,

“আমি কালকে এক স্যারের নামে গসিপ করছিলাম আর সেই স্যার যে আমার পেছোনে দাঁড়িয়েছিল বুঝিনি। এখন তাই আজ স্কুলে যাবো না বলে এখানে চলে আসছি। শুধু হাসির ছলে এটুকু বলেছিলাম, ‘স্যার ম্যাথ করতে করতে মাথায় টা*ক বানিয়ে ফেলেছে।’ এখন কী করব বুঝতে পারছি না। বিশ্বাস করো আমি বুঝিনি স্যার ওখানে থাকবে আর ওইটুকু বাদে আর কোনো খারাপ কথা বলিনি। প্রসঙ্গটা এক বান্ধুবী তুলেছিল যে ওই স্যার নাকি অনেক কড়া। ম্যাথের মধ্যে একটা একক লিখতে ভুল করলে পুরো ম্যাথ কে*টে দেয়। স্যার আমার ক্লাস নেয় না তাও স্কুলে যেতে ভয় হচ্ছে। ক্লাস নাইনে নাকি ছেলেদের সেকশনে ম্যাথ ক্লাস নেয়। এখন যদি স্যার রাগ করে আমাদেরও ম্যাথ নিতে আসে তাহলে?”

প্রিয়া বেদনাতুর দৃষ্টিতে তাকালো। নিজের দুঃখ রাখার জায়গা নাই এখন আরেকজন। প্রিয়ার মনে হলো, ‘জারিফ স্যার যে স্যার এটা তো সে জানতো না। তাহলে তো স্যারের ব্যাপারটা ভুলে যাওয়া উচিত। সে অযথায় এতো ভয় পাচ্ছে। তার থেকে রাহার ব্যাপারটা গুরুতর। সে যে তাকেই মিন করেছে তার প্রমান কী?’

প্রিয়া সিদ্ধান্ত নিলো এই সপ্তাহে আর একটা ক্লাস। সেটা কা*টিয়ে নিয়ে সামনের সপ্তাহ থেকে আর লুকাবে না। রাহাকে বলে,

“স্যারের কাছে গিয়ে মাফ চেয়ে নিস। এখন কী আর করবি বল? আমিও একটা ঝামেলা করে ফেলেছিলাম তবে তোরটা শুনে মনে হচ্ছে আমারটা অতোটাও খারাপ ছিল না। আমি নিজেকে ডিফেন্ড করতে পারব।”

রাহা জানতে চাইলো কিন্তু প্রিয়া কথা কা*টিয়ে ওকে নিয়ে মুভি দেখতে বসলো।

____________

জারিফের কলেজের বন্ধুরা বলছে ট্যুরে যাবে। জারিফও রাজি হলো। দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটিতে একটু অ্যাডভেঞ্চার টাইপ ট্যুর দিবে। তার জন্য ওরা সুন্দরবন বেছে নিলো। সুন্দরবনে অ্যাডভেঞ্চার করার মতো তেমন কিছু নেই কিন্তু সেখানে টেন্টে রাত্রি যাপন করা আর মনের মধ্যে বন্য প*শুদের ভয় নিয়ে থাকাটাও একটা অ্যাডভেঞ্চারের মতো। জারিফের পরিবারও চাইছে একটা ফ্যামিলড ট্যুরের কথা। তবে তুতুলের জ্বর আর জায়ান এই সপ্তাহে ছুটি নিতে পারবে না কারণ অফিসে কাজ আছে। সামনের সপ্তাহেও হবে না। তাই সামনের সপ্তাহের পরের সপ্তাহে বৃহঃপতিবার, শুক্রবার, শনিবার এই তিনদিনের ট্যুর দিবে।

সন্ধ্যার পর বাসায় এসে শুনে জারিফের ফুফাতো বোন মুন্নি, যে কীনা ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। সে কলেজের কোচিং টেস্ট পরীক্ষা শেষ হলেই এখানে আসবে। জারিফের সাথে দেখা করতে সে খুব উৎসুক। মুন্নির একটা পরীক্ষা শেষ হয় তো আরেকটা শুরু হয় তাই সে এতোদিন আসতে পারেনি। কয়দিন পর কয়েকদিনের ছুটি পাবে সেই খুশিতে আসবে। জারিফ যখন কানাডা গিয়েছিল তখন মুন্নি ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়তো। মুন্নি এই বাসায় আসলে জারিফের পিছু লেগেই থাকতো যা জারিফের পছন্দ ছিল না। জারিফের বুকশেলফ অগোছালো করতো। সেই মুন্নির আগমনের বার্তা শুনে জারিফ যারপরনাই হতাশ। যদি ওর আগের মতোই স্বভাব থাকে তবে জারিফ কী করবে! হতাশ হয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

তামান্না আবার জারিফের মুখশ্রীর হতাশা কিছুটা ঠাওর করতে পারলো তাই সে তরুণীমা বেগমকে বলে,

“মা, মুন্নির সাথে জারিফের বিয়ে নিয়ে কি কিছু ভাবছেন?”

তরুণীমা বেগম ভ্রুঁকুটি করে বলেন,
“কেনো? জারিফ কি মুন্নিকে পছন্দ করে?”

তামান্না হড়বড়িয়ে বলে,
“আরে না না। জারিফকে তো মুন্নির আসার খবরে হতাশ হলো মনে হচ্ছে। আমি তো জারিফ কানাডা যাওয়ার আগে জারিফকে দেখিনি আর মুন্নির সাথে সম্পর্ক কীরকম তাও জানিনা। মুন্নি আমার বিয়ের পর যতোবার এখানে এসেছে সে জারিফের কথা বলতে বলতে মুখ দিয়ে ফেনা বের করে ফেলতো। আর এদিকে জারিফের চোখে-মুখে মুন্নির আসার খবরে হতাশা ও বিরক্তির ছাঁপ।”

তরুণীমা বেগম বলেন,
” মুন্নি জারিফকে বিরক্ত করতো। জারিফের জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করতো যা জারিফের পছন্দ না। তাই জারিফ ওকে আগেও পছন্দ করতো না। জারিফের বিয়ে নিশ্চয়ই আমরা ওর পছন্দের বাহিরে দিবো না। শুধু ভিনদেশী ও অন্য কালচারের মেয়েকে চাইনি জারিফের জীবনে আনতে। আমি ও তোমার বাবা ভেবেছিলাম জারিফের সাথে হয়তো মারিয়ার সম্পর্ক আছে।”

“আচ্ছা মা? যদি জারিফ আপনাদের কস্ট না দিতে নিজের অনুভূতি লুকিয়ে যায় তবে? যদি জারিফ সত্যি মারিয়াকে পছন্দ করতো বা করে তবে?”

তামান্নার কথায় তরুণীমা বেগম চিন্তায় পরে গেলেন। তামান্না শাশুড়ির চিন্তিত মুখাবয়ব দেখে উঠে গেলো আর কথা না বাড়িয়ে। তরুণীমা বেগম জারিফের সাথে এই বিষয়ে খোলসা করে কথা বলবেন বলে ভাবলেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। নিজে ছেলের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে গেলেন।

জারিফ সবে হাত-মুখ ধুয়ে বসেছে তখনি দরজায় নকের শব্দে দরজা খুলে মাকে দেখে হালকা হাসে। তরুণীমা বেগম কফির মগ হাতে ভেতরে ঢোকে। ছেলের হাতে কফির মগ দিয়ে পাশে বসে। জারিফ কফিতে চুমুক দিয়ে দেখে তার মা হয়তো কিছু বলতে চায়। উনাকে বিব্রত লাগছে। সে জিজ্ঞেস করে,

“কিছু বলবে মা?”

তরুণীমা বেগম ধীর স্বরে বলেন,
“হ্যাঁ আসলে কিছু বলতাম।”

“তো বলো। এতো ভাবতে হবে না তোমার। যা বলার বলো।”

জারিফের মা ইতস্তত করে বলেন,
“তুই কি সত্যি মারিয়াকে পছন্দ করতি? না মানে সত্যিটা জানতে চাই। তোর মনে যা আছে তাই বলবি।”

জারিফ এতক্ষণে বুঝলো আসল কারণ। জারিফ হালকা হেসে বলে,
“তুমি তো আমাকে চিনোই। কোনো মানুষের উপর আমার ফিলিংস থাকলে আমি সেটা সহজে ভুলি না। ফিলিংসটা ঘৃণার হোক বা ভালোবাসার। মারিয়া আমার শুধু ভালো বন্ধু। এমনকি মারিয়া এইনগেজড। তার ফিয়ন্সে অন্য শহরে থাকে চাকরিসূত্রে। ওর ফিয়ন্সের সাথেও আমার ভালো সম্পর্ক।”

তরুণীমা বেগম নিশ্চিন্ত হলেন। তিনি এবার ভাবলেন মুন্নির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবেন। মুন্নি যে জারিফকে পছন্দ করে সেটা সে মুন্নির কথাবার্তায় টের পেয়েছেন খানিকটা। তাছাড়া তামান্নাও বলল আজ।

“মুন্নিকে তোর কেমন লাগে?”

জারিফ ভ্রুঁকুটি করে মায়ের দিকে চাইলেন। মুন্নির নাম শুনতেই চেহারায় এক ধরণের বিরক্তির ভাব উদয় হয়েছে। জারিফ বলে,

“কাজিন হিসেবে যেমন লাগা উচিত। ততোটুকুই। হঠাৎ এই প্রশ্ন?”

“না এমনি। থাক তবে। গেলাম আমি।”

তরুণীমা বেগম চলে যান। জারিফ লম্বাশ্বাস নিয়ে কফিতে চুমুক দিয়ে দরজা লাগিয়ে ল্যাপটপ খুলে বসে। দুইদিন পর্যন্ত সবগুলো ক্লাসের ফার্স্ট ক্লাস থাকায় পড়ানো লাগেনি। আগামীকাল থেকে পড়ানো শুরু তাই নিজে পড়াটুকু তর্জমা করে নিচ্ছে সাথে বুঝানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব।

_____________

সকাল সকাল প্রিয়া আজকে নিজের কনফিডেন্স লেভেল বাড়িয়ে রেখেছে। সকাল থেকে কোনো ঝামেলাতেও পরতে হয়নি। ফ্রেন্ডদের সাথে আজকে নরমাল কথাবার্তা ছাড়া কোনো কথা বলেনি। জারিফের ক্লাসে মুখে মাস্ক লাগিয়ে কর্নারের সারিতে একদম ফার্স্ট সিটে বসেছে। আজকে ক্লাসে কনসেনট্রেট করবেই। তাও একটা সপ্তাহ যদি মুখ না দেখিয়ে থাকতে পারে তাহলে পরের সপ্তাহ থেকে আর মাস্ক পরতে হবে না।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,