হৈমন্তীকা পর্ব-২২+২৩

0
488

হৈমন্তীকা

২২.
কড়া রোদে আশপাশ খা খা করছে। কারেন্টের তারে চুপচাপ বসে আছে কালো কুচকুচে একঝাঁক কাক। মাত্র গোসল সেরে এসেছে তারা। শরীর ঝাঁকিয়ে দেহের সমস্ত পানি ঝেড়ে ফেলতে চাইছে বারংবার। হৈমন্তী ঘরের এককোণে থাকা টেবিলটা পরিষ্কার করছিল। ইদানিং পড়াশোনা সব লাঠে উঠেছে তার। টেবিলের ধারের কাছেও ঘেঁষে না সে। ফলস্বরুপ, টেবিলের জায়গায় জায়গায় ধুলোবালি বিরাট আস্তানা গেড়ে রেখেছে। উপরের তাকটা পরিষ্কার করতেই কোত্থেকে হন্তদন্ত পায়ে উপস্থিত হলো হেমন্ত। কণ্ঠে হাজারো ভয় আর উত্তেজনা নিয়ে চেঁচালো,
— “আপু? বাবা কেমন যেন করছে। কথা বলতে পারছে না। বিছানায় শুয়ে কেমন কাতরাচ্ছে…”
এটুকু শুনে উত্তেজিত হলো হৈমন্তীও। দ্রুত বাবার রুমে ছুটতে ছুটতে বললো,
— “মা বোধ হয় ছাদে হেমন্ত। মাকে ডেকে আন। আমি বাবার কাছে যাচ্ছি।”

হেমন্ত ছাদের উদ্দেশ্যে দৌঁড় লাগালো। বাবার রুমে প্রবেশ করতেই হৈমন্তীর নজর প্রথমেই আসরাফ সাহেবের ঘর্মাক্ত মুখখানায় আটকালো। পুরো শরীর ঘেমে একাকার উনার। সটান হয়ে শুয়ে কেমন হাসফাস করছেন। হৈমন্তী দৌঁড়ে বাবার মাথার কাছটায় হাঁটু গেড়ে বসল। দু’হাতে উনার একহাত চেপে ধরে আতঙ্কিত গলায় জিজ্ঞেস করলো,
— “কি হয়েছে বাবা? এমন করছো কেন? খারাপ লাগছে?”
আসরাফ সাহেব মেয়ের দিকে ঝাপসা চোখে তাকালেন। কণ্ঠ যেন অচল তার। বহু কষ্টে থেমে থেমে অস্পষ্ট স্বরে বললেন,
— “বুকে কষ্ট হচ্ছে মা। খুব কষ্ট হচ্ছে।”

হৈমন্তী আরও ব্যস্ত হয়ে পরলো। আসরাফ সাহেবকে উঠানোর চেষ্টা করে বললো,
— “একটু কষ্ট করে উঠার চেষ্টা করো বাবা। আমরা হাসপাতালে যাবো।”

আসরাফ সাহেব প্রায় অজ্ঞান। তাকে উঠাতে গিয়ে হৈমন্তী টের পেল, তার শক্তি ফিকে পরে যাচ্ছে। শত চেষ্টা করেও উনাকে উঠাতে পারছে না। এদিকে রাবেয়া এসেই হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিয়েছেন। নিরুপায় হৈমন্তী হেমন্তকে বললো,
— “পাশের বাসার আঙ্কেল আছে কি-না দেখে আয় হেমন্ত। উনাকে ডেকে আন।”
— “উনারা নেই আপু। আসার সময় দেখে এসেছি আমি। দরজায় তালা মারা।”

‘বিপদে যখন আসে সবদিক থেকেই আসে’ — প্রবাদটি একদম সত্য মনে হলো হৈমন্তীর। বড্ড অসহায় লাগছে নিজেকে। কি করবে বুঝতে করছে না। মস্তিষ্ক একদম শূণ্য! হঠাৎ তুষারের কথা মনে পরলো তার। একবার ফোন করবে কি? চটজলদি রুমে গিয়ে ফোন হাতে নিলো সে। তুষারের নম্বরে ডায়াল করলো। দু’বার রিং হতেই রিসিভ হলো ওপাশ থেকে। তুষার প্রথমেই নরম স্বরে ডাকলো, “হৈমন্তীকা?”

এতক্ষণ শক্ত হয়ে থাকা হৈমন্তী যেন নিমিষেই গুড়িয়ে গেল। নিশ্বাস ঘন হলো তার। চোখ থেকে গড়িয়ে পরতে লাগলো বিন্দু বিন্দু জল। অশ্রুসিক্ত গলায় সে বললো,
— “বাবা কেমন করছে তুষার। আমি বুঝতে পারছি না কি করবো। আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি আসুন। আমার ভীষণ ভয় লাগছে।”

ওপাশে অসহ্য রকমের নীরবতা। সে চুপচাপ শুনছে হৈমন্তীর কান্নার শব্দ। খানিক্ষণ পরেই উত্তর এলো, “আমি আসছি, হৈমন্তীকা।”

_____

আসরাফ সাহেবকে কেবিনে নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত গরমে হার্ড এট্যাক করেছে তিনি। কেবিনের সামনে লাল, নীল, হলুদ রঙের ছোট্ট চেয়ারগুলোর একটিতে চুপচাপ বসে আছে হৈমন্তী। মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে আছে। ভেতরটা হাহাকারে চিৎকার করছে বারবার। তুষার মাত্র ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে এসেছে। নিঃশব্দে হৈমন্তীর পাশে বসলো সে। অনেক্ষণ কিছু বললো না। নির্নিমেষ চেয়ে রইলো প্রিয়তমার লালচে মুখপানে। পরক্ষণেই আস্তে আস্তে হৈমন্তীর হাত নিজের হাতের ভাঁজে নিয়ে নিলো। কোমল স্বরে আওড়ালো,
— “কান্না চেপে রেখেছেন কেন হৈমন্তীকা? বুকে আসুন। ভেতরকার কষ্টে ভিঁজিয়ে দিন আমার বুক।”

হৈমন্তীর কি যেন হলো। এক অক্ষরও অমান্য করলো না কথার। ঝাপিয়ে পরলো তুষারের প্রশস্ত বুকে। তুষার সযন্তে আগলে ধরলো প্রিয়তমাকে। ছোট্ট মাথাটা চেপে ধরলো বুকের বা’পাশটায়। হৈমন্তী কেঁদেই গেল। যতক্ষণ না কষ্ট কমলো ঠিক ততক্ষণ কাঁদলো। ফাঁকা ফ্লোরের অল্প কিছু নার্স আর রোগী অবাক চোখে দেখতে লাগলো ওদের।

কান্না থামলো বেশ কিছুক্ষণ পর। আলতো হাতে হৈমন্তীর আঁখিজোড়া মুছে দিলো তুষার। বললো,
— “আঙ্কেলকে দেখে আসুন হৈমন্তীকা। যান!”

হৈমন্তী বাধ্য মেয়ের মতো মাথা দুলালো। কেবিনে গিয়ে বাবার পাশে দাঁড়াতেই শক্ত মুখে অন্যদিকে ফিরে তাকালেন তিনি। হৈমন্তী বিস্মিত হলো। কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
— “কি হয়েছে বাবা? মুখ ফেরালে কেন?”

আসরাফ সাহেব জবাবহীন। সে আরেকবার জিজ্ঞেস করতেই দূর্বল গলায় ধমক দিয়ে উঠলেন,
— “এত অপমান, লাঞ্চনার পরও তুই কিভাবে ঐ তুষার ছেলেটার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিস? লজ্জা করলো না তোর? দরকার হলে আমি মরে যেতাম। তবুও কেন ওই ছেলেকে সাহায্যের জন্য ডাকলি তুই? আর কোনো মানুষ ছিল না?”

আসরাফ সাহেব থামলেন। হৈমন্তী অসহায় চোখে মায়ের দিকে চাইলো। তিনি নিশ্চুপ হয়ে বসে আছেন। সে কাঁপা গলায় বলতে নিলো,
— “বাবা…”
আসরাফ সাহেব বলতে দিলেন না সম্পূর্ণ কথা। কাঠকাঠ গলায় আবার বললেন,
— “ভাববি না ওই ছেলের সঙ্গে তোর বিয়ে কখনো দেব আমি। এক্ষুণি ওর সাথে সব যোগাযোগ বিছিন্ন করবি তুই। তোর পরীক্ষা শেষ হলেই নাওয়াজের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিবো আমি। যদি না মানতে চাস, তাহলে বাবাকে ভুলে যা আজীবনের জন্য।”

গলায় কথা দলা পাকিয়ে গেল হৈমন্তীর। কিছু বলতে পারল না। একবার করুণ নয়নে বাবাকে দেখে কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেল সে। চেয়ারগুলোর দিকে নজর যেতেই দেখল, তুষার নেই এখানে। আশেপাশে তাকিয়েও তুষারের দেখা মেললো না। হৈমন্তী বেদনাদায়ক এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এগিয়ে গিয়ে শরীরের ভর ছেড়ে দিলো চেয়ারে।


এর আধাঘণ্টা পরই কোত্থেকে এক কাগজ নিয়ে হৈমন্তীর পাশে ধপ করে বসে পরলো তুষার। কাগজ আর কলম এগিয়ে দিয়ে বললো,
— “এখানে সাইন করুন হৈমন্তীকা।”

হৈমন্তী পিটপিট করে তাকালো। তুষারের মুখশ্রী গাম্ভীর্যে ভরপুর। কণ্ঠস্বরও গম্ভীর ভীষণ। সে প্রশ্ন ছুড়লো,
— “কি এটা? সাইন করবো কেন?”
তুষার আগের ন্যায়ই বললো,
— “হাসপাতাল থেকে দিয়েছে। সাইন করুন।”

হৈমন্তী কিছু না বলে কাগজটা পড়তে নিলেই ধমকে উঠলো তুষার,
— “পড়তে বলিনি আপনাকে হৈমন্তীকা। সাইন করুন!”
হৈমন্তী বিমূঢ় হলো। স্তব্ধ হয়ে তাকালো। বলতে চাইলো, “পড়লে কি অসুবিধে…?”
— “বেশি কথা বলছেন হৈমন্তীকা। সাইন করুন। দেড়ি হচ্ছে আমার।”

একরাশ দ্বিধা নিয়ে সাইন করে দিলো হৈমন্তী। সাইন করার সময় খেয়ালে এলো, পাশে টি(T) দিয়ে আরও একটি সাইন করা। হয়তো নার্স তুষারকেও বলেছে সাইন করতে। সাইন করার সাথে সাথেই কাগজটা ছিনিয়ে নিলো তুষার। তার অদ্ভুদ আচরণে হতবিহ্বল হৈমন্তী তখন আরও একবার প্রশ্ন করলো,
— “এবার তো বলুন, এটা কিসের কাগজ? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন সাইন করতে বলেছে? পড়তে দিন আমাকে।”
— “এটা রেজেস্ট্রি পেপার ছিল।”
তুষারের এক বাক্যে থমকে গেল হৈমন্তী। চোখ বড় বড় করে চেঁচিয়ে উঠলো, “কি বলছেন এসব? মাথা ঠিক আছে আপনার?”

এতক্ষণে তুষারকে শান্ত দেখালো। এগিয়ে এসে হৈমন্তীর গলায় কপাল ঠেকালো সে। ঢিমে যাওয়া স্বরে বললো, “আমি ক্লান্ত, হৈমন্তীকা।”

_______________

চলবে~

হৈমন্তীকা

২৩.
জড়োসড়ো হয়ে চুপচাপ বসে আছে হৈমন্তী। দৃষ্টি মেঝের দিকে সীমাবদ্ধ। বেশিক্ষণ এক জায়গায় তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ কেমন জ্বালা করছে তার। ঘোলা হয়ে আসছে। হৈমন্তী নিজের দৃষ্টি ফেরালো। দু’চেয়ার দূরত্বে নিশ্চিন্তে বসে থাকা তুষারকে পরখ করে নিলো একবার। মন বলছে, তুষার সত্য বলছে। আবার মস্তিষ্ক বলছে, তুষার মিথ্যে বলছে। তুষার এমন করতেই পারে না। হৈমন্তী জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজালো। নিজ মস্তিষ্কের ধারণা সত্য প্রমাণের ক্ষীণ প্রচেষ্টা করে জিজ্ঞেস করলো,
— “আপনি… আপনি মজা করছেন, তাই না তুষার?”
তুষার নির্বিকার স্বরে ছোট্ট জবাব দিলো, “না।”

চোখের জ্বালা ভাবটা যেন দ্বিগুণ বাড়লো তার। তুষারের দিকে এগিয়ে তার শার্টের কলার শক্ত করে টেনে ধরল হৈমন্তী। ক্ষীপ্ত স্বরে চেঁচিয়ে উঠলো,
— “আপনি ধোঁকা দিয়ে বিয়ে করেছেন আমায়। মানি না আমি এই বিয়ে! মিথ্যুক, ধোঁকাবাজ!”

তুষার খুব শান্ত নজরে চারপাশটা একবার দেখল। কলারে থাকা হৈমন্তীর হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বললো,
— “কলার ছাড়ুন হৈমন্তীকা। নার্সগুলো দেখছে।”
— “দেখুক!”
— “আঙ্কেল জেগে যাবেন।”
— “জেগে যাক! আপনি আমাকে রেজিট্রি পেপারটা দিন। আমি এক্ষুণি ছিঁড়ে ফেলব ওটা।”

তুষার দিলো না। অল্প শক্তিতে কলার থেকে হৈমন্তীর হাত ছাড়িয়ে নিজের হাতের মুঠোয় ভরে নিলো। চোখের নিচটায় বৃদ্ধা আঙুল বুলিয়ে পানির অদৃশ্য অস্বস্তিটুকুও বিলীন করে দিলো যেন। কোমলস্বরে আওড়ালো,
— “আপনাকে বেঁধে রাখার একমাত্র মাধ্যম ওই কাগজ, হৈমন্তীকা। ছিঁড়ে ফেলতে দেই কিভাবে?”
জবাবে হৈমন্তী তখন অধৈর্য হয়ে বললো, “আপনি বদ্ধ উম্মাদ হয়ে গেছেন তুষার। কি করেছেন এখনো বুঝে উঠতে পারেন নি। এখনো সময় আছে, ভুল সুধরে নিন!”
ওপাশ থেকে তার একরোখা উত্তর, “ইচ্ছাকৃত ভুলগুলো কখনো শুধরানো যায় না হৈমন্তীকা।”

হৈমন্তী হাল ছেড়ে দিলো। যে বুঝতে চায় না তাকে বোঝানো মূর্খতা বৈ কিছুই না। হতাশ মনে তুষারের পাশ ছেড়ে উঠে কেবিনের দিকে এগোলো সে। পর্দার ফাঁকে আসরাফ সাহেবের ঘুমন্ত মুখশ্রী দেখা যাচ্ছে। কেমন নির্জীব হয়ে ঘুমিয়ে আছেন তিনি। ফ্যাকাশে ঠোঁটখানার চামড়াগুলো কেমন ভেসে ভেসে আছে। হৈমন্তী উদাস মনে সেদিকে তাকিয়ে রইলো প্রায় অনেক্ষণ। থেমে থেমে দীর্ঘশ্বাস ফেললো বহুবার।

রাবেয়া হৈমন্তীকে দরজার কাছে দেখে ধীর-স্থির পায়ে এগিয়ে এলেন। সেবারের মতো এবারও তুষারকে নিয়ে একটি প্রশ্নও করলেন না। শুধু আলতো ভাবে গালে হাত বুলিয়ে দিলেন একটু। শাড়ির আঁচল থেকে পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে হাতে গুঁজে দিয়ে বললেন,
— “রাত হচ্ছে। তোকে কেবিনে দেখলে তোর বাবা বকবেন। বেশি অভিমান করেছেন তো! বাইরে থাকাটাও নিরাপদ না। তুই বাসায় চলে যা। কাল সকালে নাহয় আবার চলে আসবি।”
কষ্ট হলেও হৈমন্তী মেনে নিলো মায়ের কথা। জিজ্ঞেস করলো,
— “হেমন্ত যাবে না?”
— “না। ও থাকুক।”

জবাবে হৈমন্তী মাথা দুলালো মাত্র। সেখান থেকে সরে এসে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। দৃষ্টি ফেললো আঁধারে ঢাকা খোলা নভস্থলে। জ্বলজ্বল করতে থাকা চাঁদটির দিকে। তুষারও হৈমন্তীর পাশে এসে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। তবে সে আকাশের চাঁদটির পানে একবার চোখ তুলে চাইলো না পর্যন্ত! বক্ষস্থলে দু’হাত আড়াআড়ি ভাবে গুঁজে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখল তার চাঁদটিকে! তার হৈমন্তীকাকে!

_____

রাত এগারোটা বেজে দুই মিনিট.
হৈমন্তীদের ফ্ল্যাটে পৌঁছাতেই হৈমন্তীর জন্যে আনা বিরিয়ানির প্যাকেট দু’টো ডাইনিং টেবিলের ওপর রাখল তুষার। হৈমন্তী ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিল। হাসফাস করছে সে। তুষার ঘুরে দাঁড়াতেই ভীতুগ্রস্ত কণ্ঠে আমতা আমতা করে প্রশ্ন করলো,
— “আপনি কি আজ এখানেই থাকবেন?”
শুনে দূর্বোধ্য হাসলো তুষার,
— “আইনত এখন আপনি আমার স্ত্রী, হৈমন্তীকা। ধর্মীয় ভাবে নন। বিয়েটা সুষ্টুভাবে হোক! জামাই আদর পেতে অবশ্যই থাকব।”

তুষার থামলো। তপ্ত নিশ্বাস ফেলে আবার বলতে লাগলো, “এই বিল্ডিয়ের দু’বিল্ডিং পরের বাড়িটা আমার বন্ধুর। আমি আজ রাত ওখানেই থাকব। আপনি বিরিয়ানিটুকু খেয়ে নেবেন। দরজা, জানালা ভালো করে আটকে রাখবেন। রাতে যদি কেউ দরজায় নক করে ভুলেও খুলবেন না। আমাকে কল করবেন। আমি এলে আপনাকে মেসেজ করে তারপর আসবো।”
হৈমন্তী সম্মতি দিয়ে বললো “আচ্ছা।”

তুষার হুট করে কাছে এসে হৈমন্তীর ললাটে অধরযুগল ছুইয়ে দিলো। পিঠ অব্দি এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে বললো, “কেঁদেকেটে রাতের ঘুম নষ্ট করবেন না হৈমন্তীকা। কিছু লাগলে ফোন দেবেন। আমি কাল সকাল সকাল চলে আসবো।”


তুষার চলে যাওয়ার অনেক্ষণ হয়ে গেছে। বিছানায় শুয়ে অন্ধকার রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছে হৈমন্তী। কেমন ভয়, ভয় লাগছে তার। পুরো ফ্ল্যাটে সে একা! ভাবতেই ভয় যেন আরও দ্বিগুণ বাড়লো। চটজলদি উঠে রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিলো সে। চারিদিক আলোকিত হতেই ভয়টা যেন একটু কমলো। তবে জানালার পর্দা সরাতে গিয়ে হঠাৎ-ই নজরে এলো, কয়েকজন লোক বাইক নিয়ে তাদের বিল্ডিংয়ের সামনেই আড্ডা দিচ্ছে। তাদের মধ্যে একজন হৈমন্তীর ফ্ল্যাট বরাবর আঙুল দিয়ে ইশারা করে কি যেন বলছে অন্যদের। হৈমন্তীর কেমন যেন লাগলো ব্যাপারটা। ভেতরটা আতঙ্কিত হয়ে উঠলো। ঘাড় ঘুরিয়ে বদ্ধ রুমগুলো দেখে বড্ড একা একা লাগছে নিজেকে। এই নির্জন স্থানটা কোনো জ্বিন-ভূতের আস্তানা বৈ কিছুই মনে হচ্ছে তার। হৈমন্তী অশান্ত মনে বিছানায় গিয়ে বসলো। বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে কল করলো তুষারকে। রিং হলো। সেকেন্ডের মাঝেই রিসিভ করলো সে। পুরুষালী গলার শান্ত আওয়াজে বললো, “কি হয়েছে হৈমন্তীকা? ঘুম আসছে না?”
হৈমন্তী আমতা আমতা করলো, “আসছে।”
— “তাহলে?”

হৈমন্তী জবাবহীন। তুষার আবার প্রশ্ন করলো,
— “ভয় লাগছে?”
সে আস্তে করে জবাব দিলো, “হু।”

ওপাশ থেকে নিঃশব্দে হাসলো তুষার। কয়েক সেকেন্ড কিছুই বললো না। এরপর কণ্ঠ মিইয়ে, অত্যন্ত মোলায়েম স্বরে আওড়ালো, “ভয় নেই হৈমন্তীকা। আমি আছি। আপনি ফোন কানে রেখে শুয়ে পড়ুন। আমি কথা বলবো, আপনি ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। ঠিকাছে?”

_______________

চলবে~
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা