হৈমন্তীকা পর্ব-২৪+২৫

0
484

হৈমন্তীকা

২৪.
সুদূর পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে। ছোট্ট আয়তাকার উঁচু জানালা গলিয়ে তেজস্বী আলো তেরছাভাবে পরছে ধুলোবালি, ময়লাযুক্ত পাকা সিমেন্টের মেঝেতে। হাত উঁচিয়ে একবার সময়টা পরখ করে নিলো তুষার। ঘড়ির মাঝারি কাটাটা আটটায় এসে ঠেকেছে। মিনিটের কাটা অস্থির হয়ে ছুটছে ২০ থেকে ২১ মিনিটের দিকে। কলিংবেলের সুইচবোর্ডের ওপর পরপর দু’বার চাপ দিলো সে। দরজা খুললো না। তৃতীয়বার দিতেই ওপাশ থেকে হৈমন্তীর ঘুমুঘুমু কণ্ঠ শোনা গেল, “আরে আসছি তো! এতবার কলিংবেল চাপা লাগে?”

এর পরপরই খুলে গেল দরজা। হৈমন্তীর ঘুমন্ত এলোমেলো চুল, আধবোজা চোখ। ওড়না আঁটসাঁট করে গায়ে জড়ানো। তুষারের বক্ষস্থল ক্ষীণ অস্থির হয়ে উঠলো। অশান্ত হলো মন। কিছুপলক নির্নিমেষ চেয়ে থেকে সে বললো,
— “আমাদের হাসপাতালে যেতে হবে হৈমন্তীকা। রুমে গিয়ে তৈরি হয়ে নিন। আমি অপেক্ষা করছি। যান!”

হৈমন্তী মাথা দুলিয়ে সায় দিলো। ঘুমটা এখনো কাটেনি তার। পাঁপড়িগুচ্ছ আঠার মতো একে অপরের সঙ্গে লেগে যেতে চাইছে বারংবার। রুমে গিয়ে মুখে পানি ঝাপটালো সে। ঘুমের রেশ একটু কমতেই চটজলদি তৈরি হয়ে নিলো।
তুষার সোফায় বসে ফোন চাপছিল। হৈমন্তী এলে একবার আড়দৃষ্টি ফেলল সে। আবারো ফোনের স্ত্রীনে নিজ তীক্ষ্ম দৃষ্টি মেলে টেবিলে থাকা খাবারগুলো দেখিয়ে বললো,
— “এখানে নানরুটি আর ডাল আছে। খেয়ে নিন। আমরা এখনি বেড়বো।”

হৈমন্তী ছোট্ট টি-টেবিলটির দিকে তাকালো। খুব সুন্দর, পরিপাটি করে ট্রে-তে নানরুটি আর ডাল সাজানো। দেখতে খুবই সুস্বাদু লাগছে। ক্ষুধায় পেট চো চো করলেও খেতে ইচ্ছে করছে না একদমই। হৈমন্তী দিরুক্তি করে বললো,
— “আমার ক্ষুধা নেই তুষার। বাবার কাছে যাবো, চলুন।”
সঙ্গে সঙ্গে কড়া ধমক দিয়ে উঠলো সে, “চুপ! কি ক্ষুধা নেই? আমি জানি আপনি কালও ঠিক ভাবে খান নি। এদিকে আসুন। আমি খাইয়ে দিচ্ছি। আপনাকে এদিকে আসতে বলেছি হৈমন্তীকা!”

হৈমন্তী চমকালো, ভড়কালো। জড়সড় পায়ে আস্তে আস্তে তুষারের দিকে এগোতে লাগল। কাছাকাছি আসতেই তাকে টেনে নিজের পাশে বসালো তুষার। অল্প নানরুটি ছিঁড়ে তাতে ডাল নিয়ে তার ঠোঁটের সামনে ধরলো। হৈমন্তী খেতে না চাইলে আবারও শক্ত চোখে তাকিয়ে বললো,
— “হা করুন, হৈমন্তীকা!”

হৈমন্তী তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল শুধু। অচেনা, বদলে যাওয়া ছেলেটিকে। যে কি-না এখন কথায় কথায় শাসন করে তাকে। বাচ্চাদের মতো মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, স্বযত্নে তার পরে যাওয়া ঘোমটাটি কপাল অব্দি টেনে দেয়। মাঝে মাঝে এমন সব কাজ আর কথা বলে, যে হৈমন্তীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে লজ্জা মিশে যায়। চোখ তুলে তাকাতে পারে না সে। বুক কেঁপে কেঁপে উঠে। কান, গাল একদম গরম হয়ে যায়। খাওয়ানো শেষে যখন তুষার ধ্যান ধরে হৈমন্তীর মুখপানে নিমেষহীন চেয়ে ছিল, হৈমন্তী তখনও কাঁপছিল। তখনও কান, গাল ভীষণ ভাবে গরম হয়ে যাচ্ছিল তার। সে খুব করে টের পাচ্ছিল, নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি ঝুঁকে যাচ্ছে সে। যা তাকে ধ্বংস করতে একটুও সময় নেবে না। একটুও না।

_____

লিফট থেকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে নাওয়াজকে। তাকে দেখা মাত্র চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো হৈমন্তী। পিটপিট নয়নে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ-ই তার কাছে এসে দাঁড়ালো নাওয়াজ। তুষারকে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। অনেকটা গম্ভীর ভাবে প্রশ্ন করলো,
— “এই ছেলে এখানে কেন হৈমন্তী?”

হৈমন্তী ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তুষারকে দেখল। আরাম করে চেয়ারে বসে আছে সে। ফোনে এমন ভাবে ডুবে আছে যেন আশেপাশের বিন্দু মাত্র খেয়াল নেই। হৈমন্তী চোখ ফেরালো। নতজানু হলো। আমতা স্বরে বললো,
— “বাবাকে তুষারই হাসপাতালে এনেছে।”

নাওয়াজ যেন একটু তাচ্ছিল্য করলো। যা তার অহেতুক হাসি দেখেই বোঝা যায়। হৈমন্তীকে বললো, “আচ্ছা তাহলে চলো। আঙ্কেলের কেবিন কোনটা?”
— “সামনেরটা। আপনি যান। আমি যাবো না।”
— “যাবে না কেন?” কপাল কুঁচকে বললো নাওয়াজ। হৈমন্তী ম্লান হাসলো, “এমনি। আপনি যান। আমি পরে গিয়ে দেখে আসবো।”

নাওয়াজ শুনলো না। হৈমন্তীর হাত টেনে কেবিনের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। ইতস্তত হৈমন্তী পেছন ফিরে আবারও তুষারকে দেখল। সে তখনও ফোনে ডুবে আছে। আশ্চর্য! এমনিতে তো কোনো ছেলের সঙ্গে তাকে দেখলে মারপিট করে তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে ফেলে। আজ কি হলো এই ছেলের? বিরক্তিতে কপালে ভাঁজ পরলো হৈমন্তীর।

রাবেয়া ফল কেটে কেটে আসরাফ সাহেবকে খাওয়াচ্ছিলেন। বেডে আধশোয়া হয়ে বসে ছিলেন তিনি। নাওয়াজ কেবিনে প্রবেশ করেই হাহুতাশ করে বলতে লাগলো,
— “সরি আঙ্কেল। আমি আসলে একটা কাজে শহরের বাইরে গিয়েছিলাম। তাই আপনাকে দেখতে আসতে পারিনি কাল…”

নাওয়াজের কথা শেষ হওয়ার পূর্বের অত্যন্ত রাশভারি গলায় আসরাফ সাহেব চেঁচিয়ে উঠলেন,
— “ও এখানে কি করছে? ওকে যেতে বলো। আমি বলেছি না ওই ছেলের সঙ্গে যতদিন না সম্পর্ক ছিন্ন করছে ততদিন আমার সামনে না আসতে?”

হৈমন্তীর টলমলে চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে গেল। ঘন ঘন নিশ্বাস নিতে লাগলো সে। শরীর কাঁপছে তার। কার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বলছেন তিনি? তুষারের সঙ্গে? আদৌ কি তা সম্ভব? চোখ মেলে একবার নাওয়াজের দিকে তাকালো হৈমন্তী। পরপরই ছুটে চলে গেল কেবিন থেকে। নাওয়াজ অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো সেদিকে।


হেনা ফোন করেছেন তুষারকে। মায়ের কল দেখে আর না ধরে থাকতে পারলো না সে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে হেনা চিন্তিত গলায় বলে উঠলেন,
— “তুষার? তুষার তুই কোথায়? কাল রাতে বাসায় আসিস নি কেন? ঠিক আছিস তুই?”

তুষার শান্ত ভাবে জবাব দিলো, “ঠিক আছি। রাতে বন্ধুর বাসায় ছিলাম।”
— “এখন কোথায় আছিস? বাসায় আসছিস না কেন? তোর বাবা কিন্তু অনেক রেগে আছে। এক্ষুণি আয় বাসায়।”

তুষার কিছু বলবে, তার আগেই ক্রন্দনরত হৈমন্তীকে কেবিন থেকে চলে আসতে দেখল সে। কপালে সূক্ষ্ণ বলিরেখার ভাঁজ পরলো তার। ঠোঁট নাড়িয়ে কোনোমতে হেনাকে বললো, “রাখছি মা। পরে কথা বলবো।”

বলেই ফোন কেটে দিলো সে। হৈমন্তীর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। আলতো ভাবে কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো,
— “কি হয়েছে হৈমন্তীকা? কাঁদছেন কেন? আঙ্কেল কিছু বলেছেন?”

হৈমন্তী তাকালো। কিন্তু কিছু বলতে পারলো না। নেত্রকোণ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে তার। বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে নিজেকে শান্ত রাখতে। চোখ লাল হয়ে আছে। বহু কষ্টে শুকিয়ে যাওয়া গলায় সে বিড়বিড়ালো, “বাবা আর আমাকে দেখতে পারেন না তুষার। বাবা আর আমাকে ভালোবাসেন না।”

তুষার ধাতস্ত হলো। আরেকধাপ এগিয়ে হৈমন্তীর দু’গালে হাত রাখলো। নোনাজল গুলো মুছে দিয়ে কোমল স্বরে বললো, “হুসস! কান্না থামান হৈমন্তীকা। কিচ্ছু হয় নি। আপনার বাবা আপনাকে এখনো ভালোবাসেন। সবাই ভালোবাসেন। আমিও খুব খুব ভালোবাসি। আর কাঁদবেন না। কান্না থামান। হৈমন্তীকা…”

________________

চলবে~

হৈমন্তীকা

২৫.
দু’হাতে মুখ ঢেকে কাঁদছে হৈমন্তী। কান্নার ক্ষীণ শব্দ কাঁপিয়ে তুলছে পুরো করিডোর। কেঁপে কেঁপে উঠছে শরীর। তুষার পাশেই নীরব হয়ে বসে আছে। গম্ভীর নজরে চেয়ে চেয়ে দেখছে তার হৈমন্তীকাকে। সময় একটু পার হতেই কান্নার দমক অল্প কমলো। তবে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে হৈমন্তীর। ঘনঘন নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে সে। চোখ দু’টো কেমন ফুলে গেছে। নাকে রক্তিম আভা। তুষার দূরত্ব কমালো। স্বস্নেহে গাল দুটো মুছে দিতেই তা আবারও পানিতে ভিঁজে গেল। সে আবারও মুছে দিলো গাল। মুখ এগিয়ে কপালে অধরযুগল ছোঁয়াতেই ছিটকে সরে গেল হৈমন্তী। থেমে থেমে বললো, “ছুঁবেন— ছুঁবেন না আমাকে!”

তুষার ভ্রু কুঞ্চিত করলো। তবে কোনোরুপ প্রশ্ন ছুড়লো না। নিশ্চুপ হয়ে হৈমন্তীর অদ্ভুদ আচরণের মানে খুঁজতে লাগল। হৈমন্তীর ফুঁফানোর শব্দ বাড়লো। একহাতে পরনের জামা খামছে ধরে হাহাকার করে উঠলো,
— “আপনি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল তুষার! আমার ভুল, আপনার সঙ্গে আগ বাড়িয়ে কথা বলা। আমার ভুল, আপনাকে ছোট ভাবা। শুধুমাত্র আপনার জন্য আমার আগের হাসি-খুশি জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে। আমার বাবা আমাকে দেখতে পারেন না। মা কথায় কথায় এখন আর বকেন না। বাবা মা থাকতেও আপনি আমাকে এতিম করে দিলেন তুষার। যন্ত্রণায় ভেতরটা ধ্বংস করে দিলেন। আমি প্রতিনিয়ত আপনার জন্যে কাঁদছি। এত— এত কষ্ট কেন দিচ্ছেন আমাকে তুষার? চলে যান না আমার জীবন থেকে। প্লিজ!”

তুষারের মুখশ্রী শক্ত হয়ে এলো। বক্ষস্থলের ভারি ভাবটা উপচে আসতে চাইলো যেন! অনড় দৃষ্টিতে হৈমন্তীর মুখপানে তাকিয়ে রইল সে। চোখের কোণাংশ ক্ষীণ কেঁপে উঠতেই উঠে দাঁড়ালো তুষার। একপলক হৈমন্তীকে দেখে গটগট পায়ে চলে গেল করিডোর থেকে। সঙ্গে সঙ্গে হৈমন্তীর ভরসার স্থানটা ফাঁকা হয়ে গেল। শূণ্যতায় ভরে উঠল মন, মেজাজ, মস্তিষ্ক। সে কাঁদল। খুব করে কাঁদল। কেউ এলো না বলতে, “হৈমন্তীকা, আর কাঁদবেন না। আমার ভালো লাগে না।”

নিজেকে একটু সামলাতেই হৈমন্তীর কান্না পুরোপুরি থেমে গেল। মেঝের দিকে দৃষ্টি ফেলে কি যেন ভাবতে লাগলো সে। ততক্ষণে আসরাফ সাহেবের সঙ্গে কথা মিটিয়ে কেবিন থেকে মাত্র বেড়িয়েছে নাওয়াজ। হৈমন্তীকে একা বসে থাকতে দেখে তার পাশে গিয়ে বসল। হৈমন্তীর ফোলা চোখ,মুখে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে একটু সময় নিয়ে বললো,
— “কেঁদেছ হৈমন্তী? আঙ্কেল রাগের মাথায় বকেছেন তোমাকে। তাই বলে কান্না করবে?”

হৈমন্তী উত্তর দেয় না। নাওয়াজকে তার পছন্দ নয়। একদম শুরু থেকে। এই পরিস্থিতে তো আরও অসহ্য লাগছে। নাওয়াজ আবার বললো,
— “আঙ্কেল যখন বলেছে তৈমুরের সাথে যোগাযোগ না রাখতে, তাহলে কেন রেখেছ? তাছাড়া শুনেছি তোমাদের বাসায়ও এসেছিল নাকি! তাও আবার আঙ্কেলের সামনে। মানতে হবে, ছেলেটার সাহস আছে কিন্তু!”
বলে হু,হা করে হাসতে লাগল নাওয়াজ। হাসতে হাসতে একসময় একদম চুপ হয়ে গেল। ম্লান স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
— “ছেলেটার সঙ্গে যোগাযোগ কেন রাখছো হৈমন্তী?”
হৈমন্তী শক্ত গলায় জবাব দেয়,
— “আপনাকে ভাবতে হবে না আমাকে নিয়ে।”
— “আমাকে ভাবতে হবে হৈমন্তী। তোমাকে পাওয়ার একটুখানি সুযোগ এখনো আছে আমার।”

বিরক্তিতে কপাল কুঁচকালো হৈমন্তী। রোষপূর্ণ গলায় বললো, “আপনি যান তো এখান থেকে। আপনাকে বিরক্ত লাগছে আমার।”
নাওয়াজ যেন একটু অবাকই হলো। থম মেরে বসে রইলো আরও কিছু সময়। পরপরই ধীরস্থির পায়ে চলে যেতে লাগল। যাওয়ার আগে মৃদু স্বরে বলে গেল,
— “নিজের খেয়াল রাখবে। আসছি।”

হৈমন্তী বোধহয় শুনলো না। কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালো না।

_____

চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকতে থাকতে কখন ওভাবেই ঘুমিয়ে পরেছে, খেয়াল নেই হৈমন্তীর। যখন ঘুম ভাঙলো, তখন প্রায় বিকালের শেষভাগ। গোধুলি লগ্ন। চোখ মেলতেই নিজেকে কারো প্রশস্ত বুকে আবিষ্কার করলো হৈমন্তী। তৎক্ষণাৎ খেয়ালে এলো, কানের কাছে হৃদপিন্ডের ঢিপঢিপ শব্দ শুনতে পাচ্ছে সে। হৈমন্তী মাথা উঁচিয়ে তাকালো। সঙ্গে সঙ্গে তুষারের ক্লান্ত মুখখানা ভেসে উঠল সামনে। একহাতে চা খেতে খেতে, অন্যহাতে হৈমন্তীকে আগলে রেখেছে। হৈমন্তী একটু নড়াচড়া করতেই তাকে ছেড়ে দিলো সে। চায়ে এক চুমুক দিয়ে তা একপাশে রেখে দিলো। তবে হৈমন্তীর দিকে তাকালো না। অন্যদিকে চেয়ে গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন ছুড়লো,
— “দুপুরে খাবার পাঠিয়ে ছিলাম। খান নি কেন?”

হৈমন্তীর মনে পরলো, দুপুরের দিকে হেমন্ত তাকে একটা খাবারের প্যাকেট দিয়ে গিয়েছিল। সে খায় নি। ওই যে, তিনহাত দূরের চেয়ারে এখনো রাখা আছে প্যাকেটটি। হৈমন্তী সেদিকে একবার তাকালো। ঢিমে যাওয়া স্বরে বললো, “ইচ্ছে করে নি।”

সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ালো তুষার। চেয়ার থেকে খাবারের প্যাকটটা উঠিয়ে প্রবল শক্তিতে ছুঁড়ে মারলো ডাস্টবিনে। মৃদু মৃদু শরীর কাঁপছে তার। রাগে কিছু ভাঙ্গতে ইচ্ছে করছে। বড় বড় শ্বাস নিয়ে মুহুর্তেই নিজেকে আবারও আগের মতো শান্ত করতে চাইলো সে। কিন্তু হচ্ছে না। সশব্দে আগের জায়গায় বসলো তুষার। উঁচু গলায় আওড়ালো,
— “আমার রাগ কমছে না হৈমন্তীকা। আমার রাগ কমিয়ে দিন।”

হৈমন্তী নির্বিকার রইলো। চুপচাপ দেখতে লাগল তুষারের কান্ড। তার বুক ভীষণ ভাবে উঠা-নামা করছে। এক একেকটা নিশ্বাসের শব্দ খুব করে শুনতে পাচ্ছে হৈমন্তী। তুষার আবার বললো, “কিছু করছেন না কেন? আমার রাগ বাড়ছে।”

সে আগের মতোই চুপ। আস্তে ধীরে অনেক্ষণ লাগিয়ে তুষারের হাতটা নিজের হাতে মুঠোয় নিলো। জলে উজ্জ্বল চোখ জোড়া থেকে এক ফোটা পানি তুষারের হাতের পিঠে পরতেই আটকে আসা কণ্ঠে বললো,
— “আমি অনেক, অনেক ভেবেছি! আমার মনে হয় আমি বোধহয় আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি তুষার। তাই সুযোগ দিচ্ছি। সবাইকে মানানোর দায়িত্ব দিচ্ছি। কিন্তু যদি ব্যর্থ হন, তবে হৈমন্তীকাকে ভুলে যেতে হবে আপনার।”

হৈমন্তী থামলো। তুষার অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে। এখনো বুঝে উঠতে পারে নি কথাগুলো। শুধু হাতের বাঁধনটুকু ভীষণ শক্ত করে ধরে রেখেছে। এ ভেবে, এই হৈমন্তীকা যদি স্বপ্ন হয়? কথাগুলো যদি মিথ্যা হয়?

_________________

চলবে~
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা