হোম পলিটিক্স পর্ব-১০

0
247

#হোম_পলিটিক্স

#আফসানানীতু

#পর্ব_১০

নাফিসা চোখ খুলে প্রথমটায় বুঝতে পারে না, সে কি এখনো ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখছে না সত্যি সত্যি পিয়া এসেছে? পিয়া তাকে আরো জোরে ঝাকুনি দিয়ে বলে,
– হ্যাবলার মতো হা করে তাকায় আছিস কেন?
নাফিসার ঘোর কাটে। যাক বাবা স্বপ্ন না বরং অপ্রিয় বাস্তবতা!
– ঘুম থেকে উঠেই তোর চাঁদ মুখ দেখব ভাবি নাই তো তাই ক্যাবলা বনে গেছিলাম। তা এতো সকালে?
হাই তুলে আড়মোড়া ভাঙ্গে নাফিসা।
– সকাল দেখলি কই তুই? বেলা বাজে দশটা।
– কালকে পৌনে চারটা পর্যন্ত পড়াশোনা করছি তো এখন ঘুমাবো না?
– বাপরে! তুই তো দেখি সত্যি সিরিয়াসভাবে পড়াশোনা করতেছিস!
– সেটা আর তুই হতে দিবি কই? খুব তো রাগ দেখায় চলে গেছিলি আবার ফেরত আসছিস কেন?
– বুঝলি, আমি সারারাত তোর কথাগুলা নিয়ে ভাবছি। তুই ঠিকই বলছিস, এই ছেলে আসলে একদম আমার যোগ্য না! একটা ব্যাপার ভাব, পাঁচ দিন চলে গেছে এখন পর্যন্ত সে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে নাই!
উত্তেজনায় নাফিসা বালিশে কিল মেরে বলে,
– সেটাই তো!
– তুই ভাব… একবার যদি ছবিগুলা ভাইরাল হয় তার তো কিছু আসবে যাবে না। মান সম্মান তো যাবে আমার আর আমার বাপ মার!
নাফিসার মনটা ভালো হয়ে যায়, সে লাফিয়ে উঠে বলে,
– এইতো এতক্ষণে তোর বুদ্ধি খুলছে! বুঝছিস তাইলে।
– আর বলতে! আজকে সকালে দেখা করছি, করে অনেক ঝগড়া করে আসছি। দোস্ত, ঝগড়ার পরে খালি তোর মুখটাই মনে পড়তেছিল। এই পৃথিবীতে একমাত্র তুই ছাড়া কেউ আমারে ভালোবাসে না।
– হইছে হইছে! এইবার একটু বেশি বেশি হয়ে যাইতেছে।
নাফিসা ট্রাফিক পুলিশের মত হাত উঁচিয়ে পিয়ার তেলের গাড়িতে লাগাম টানে।
– যাই হোক, তুই যে বুঝতে পারছিস জাফর ভাই কোন কাজের না এতেই আমার হয়ে গেছে। আমার উপর ভরসা করছিস তো? আর ভাবনা নাই ব্যবস্থা একটা হবেই।
– কী ব্যবস্থা হবে দোস্ত?
পিয়া উদ্গ্রীব কন্ঠে জানতে চায়।
– তুই আম খা ময়না, গুটলি গুনিস কেন? আজকে রাত্রের মধ্যেই একটা ব্যবস্থার প্ল্যান আছে, দেখি কি হয়। এখন যা তো, রান্নাঘরে গিয়ে দুই কাপ চা বানায়া নিয়ে আয়। চল চা নিয়া ছাদে যাই। আমি দেখি আম্মা কি নাস্তা বানিয়েছে।
পিয়া ঘর থেকে বের হতে যেতেই নাফিসা ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– তোদের কি তাইলে ব্রেকআপ হয়ে গেছে?
পিয়া মিনমিনে কন্ঠে বলে,
– কেমনে সম্ভব দোস্ত? এখনো ভালবাসি তো!
নাফিসা রাগের চোটে হাতের বালিশটা পিয়ার দিকে ছুঁড়ে মারে। লক্ষ্য ব্যর্থ হয়ে সেটা থ্যাপ করে দেয়ালে বাড়ি খেয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। আর পিয়া আত্মরক্ষার্থে রান্নাঘরের দিকে দৌড় দেয়।

টেবিলে কয়েকটা আটার রুটি আর হালুয়া ডিম ভাজি ঢাকনা দিয়ে রাখা। সেদিকে তাকিয়ে কপালে কিঞ্চিৎ ভাজ পরে নাফিসার। এমন সময় তার সামনে পাপড় ভাজার প্লেট রাখেন তার দাদি খোদেজা। মুহূর্তেই চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে যায় তার।
– দাদী, তুমি আসলেই গ্রেট!
– কুয়ারা না কইরা শিগগির এইডা লইয়া এইখান থেইকা ভাগ, তোর মায়ে দেখলে আমারে তোরে দুইজনরেই ছেচা দিব।
– আরে নাহ্, সে যতই বসগিরি দেখায় মনে মনে আসলে তোমাকেই ভয় পায়।
– কচু পায়! তোর মায়ে যেমনে মহিলাদের সঙ্গে দল বাইন্ধা মিছিল করতে যায়, তারে দেইখা মনে হয় যে সে দুনিয়ার কাউরে ডরায়?
নাফিসা হাসে তারপর তার দাদির কুঞ্চিত গালে একটা লম্বা চুমু এঁকে দিয়ে পাপড় ভাজা নিয়ে সোজা ছাদের সিড়ির দিকে রওনা হয়। যেতে যেতে গলা উঁচিয়ে পিয়াকে বলে,
– আমি ছাদে গেলাম, জলদি জলদি চা নিয়ে আয়।

রুচিতা গেস্ট রুমের খাটের গদিটা ছাদে নিয়ে এসেছে ভালো করে ঝেড়ে রোদে দেবে বলে। গেস্ট রুমে অনেকদিন হয় কারো থাকা হয় না, তাই গদিতে রোদ না লাগিয়ে ওটাতে শোয়া যাবেনা। গতকাল সালেহার বলা কথাগুলো তার খুব মনে ধরেছে। সে ঠিক করেছে একটু ভাব ধরে থাকবে। যতদিন না শফি তাকে নিজ থেকে ডাকবে সে গেস্ট রুমেই শোবে। সে বারবার আবেগের বশবর্তী হয়ে তার কাছে ছুটে যাবে আর শফি তাকে দূর দূর করবে এই সুযোগ তাকে আর দেয়া যাবে না।
ছাদে উঠে নাফিসাকে দেখে রুচিতা ডাক দেয়,
– কি, আজকে কলেজ নেই?
– না আপু, বন্ধ দিয়েছে তিন দিনের।
– বাহ্, তাহলে তো তোমার জন্য বেশ হয়েছে!
– তা হয়েছে বৈকি। এতক্ষণ ঘুমালাম।
– ঘুমাও ঘুমাও… নাকে তেল দিয়ে যত পারো ঘুমিয়ে নাও! বিয়ের পরে স্কুল কলেজ খোলা থাকুক কিংবা বন্ধ, ঘুমাবার ভাগ্য হবে না।
– এজন্য আমি বিয়েই করবো না।
এমন সময় পিয়া চা নিয়ে ছাদে আসে। রুচিতাকে দেখে বলে,
– আরে ভাবী আপনি? কেমন আছেন?
রুচিতা বেশ অবাক হয়।
– তুমি আমাকে চেনো?
– আপনি করে বলছেন কেন আপু, ও তো আমার ফ্রেন্ড। ওকে তুমি করেই বলবেন।
– আচ্ছা বলবো। কিন্তু তুমি আমাকে চেনো কি করে?
– আপনার ননদের ছেলের বার্থডে পার্টিতে গিয়েছিলাম ওইখানে আপনার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। ওই যে আপনার হাত কেটে গেল, তখন জাফর দৌড়ে গিয়ে ডাক্তার নিয়ে এসেছিল।
– জাফর… হ্যাঁ হ্যাঁ, এখন মনে পড়েছে। ওই যে ঝাঁকড়া চুলের হ্যান্ডসাম ছেলেটা? তা জাফর কে হয় তোমার?
– আমার?
পিয়াকে আমতা আমতা করতে দেখে নাফিসা জবাব দেয়,
– ওর বয়ফ্রেন্ড।
– বয়ফ্রেন্ড? বাব্বাহ!
– না না, আমার বড় ভাই হয়। ওর বয়ফ্রেন্ড।
বলে পিয়া আঙ্গুল উঁচিয়ে নাফিসাকে দেখায়।
রুচিতা বেশ অবাক হয়।
– তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে নাফিসা?
– না আপু বয়ফ্রেন্ড না, ফ্রেন্ড… শুধু ফ্রেন্ড!
নাফিসা অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে পিয়াকে ভষ্ম করতে চায়। জবাবে পিয়া মিষ্টি করে হেসে বলে,
– ওই হল তো! ফ্রেন্ড যখন বয় হয় তখন তাকে বয়ফ্রেন্ডই বলে। এমনিতে আমাদের কারো কোন প্রেম ভালোবাসা নেই ভাবী, আমরা এইসব কুঅভ্যাস থেকে মুক্ত।
– এটা তো ভালো কথা না! প্রেম-টেম করা উচিত, নইলে ছাত্র জীবনের মজা আছে?
মনের মত জবাব পেয়ে পিয়া কিছু না ভেবেই বলে ফেলে,
– তাইতো ভাবী, এই নিরামিষ জীবনে প্রেমই তো একমাত্র রুচি আনে। তাই না?
নাফিসা তাড়াতাড়ি পিয়াকে থামিয়ে দিয়ে মুখ পেঁচা করে বলে,
– সেটাই! কিন্তু কি করবো বলেন, আমাদের ভাগ্যে নাই!
রুচিতা ওদের দুই বন্ধুর এই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার প্রচেষ্টার কতটুকু কি বুঝলো বোঝা গেল না, তবে ওদের দুইজনের ভাবভঙ্গি দেখে সে হেসে ফেলে।
– যাই হোক, তুমি নাফিসার সঙ্গে আমাদের বাসায় এসো। এখন যাই, অনেক কাজ পড়ে আছে। আজ আবার তোমাদের ভাই বাসায় চলে আসবে।
– ও তাই নাকি?
প্রসঙ্গ বদল হাওয়ায় নাফিসা হাফ ছেড়ে বাঁচে।
– হ্যাঁ, বাবা-মা গেছে ওকে আনতে। আচ্ছা, আমি আসি।
রুচিতা নিচে নেমে যেতেই নাফিসা পিয়ার উপরে প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে।
– ওই, তুই তোর ঘাড়ের বলদ আমার ঘাড়ে চাপালি কেন? একটু আগেই না বললি… “ভালোবাসি তো!”
– ইচ্ছা করে চাপাই নাই দোস্ত, আল্লাহর কসম! একবার ভেবে দেখ, তোদের পাশের বাসার ভাবী যদি জানে আমি প্রেম করি সেটা তোর আম্মা জানবে আর তোর মা জানলে আমার মা জানবে।
– সেইজন্য তোর হুতুম পেঁচারে আমার মাথায় চাপায় দিবি?
– আরে কুল দোস্ত! তুই প্রেম করিস, সেইটা খালাম্মা জীবনেও বিশ্বাস করবে না। তোর সমস্যা হবে না।

পিয়া পাপড় ভাজা তুলে নিয়ে তাতে কামড় দেয়। তারপর বলে,
– দোস্ত, তোর দাদি একটা জিনিয়াস! যা মজার পাপড় বানাইছে!
জবাবে নাফিসা ওর হাত থেকে পাপড়ের প্লেট ছিনিয়ে নিয়ে বলে,
– তুই শুধু চা পাবি, এই পাপড় শুধু আমার। তুই না তোর পিৎলা বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করে আসছিস, খাওয়ায় নাই তোরে কিছু? আইসা আবার হা ভাতের মত আমার খাবারে নজর দেস!
নাফিসা পিয়ার হাতের পাপড়টাও ছিনিয়ে নেয় নিষ্ঠুরের মতো। তারপর কুড়মুড়ে শব্দ তুলে পাঁপড় খেতে থাকে পিয়াকে দেখিয়ে দেখিয়ে।

***
সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে চা পর্ব সেরে বিছানায় আয়েশ করে গড়াগড়ি খায় অভি। হাসপাতাল থেকে শফিদের সাথে ইয়ামিনও এসেছিল। সে বসে খানিকক্ষণ অভির সঙ্গে গাল গল্প করে চলে যায়। আপাতত কিছুই করার নেই বলে অলস চালে ইনস্টাগ্রাম ঘাঁটাঘাঁটি করে অভিরূপ। এমন সময় নাফিসা নক দেয়।
– কী করছেন?
– আপনি ভার্চুয়ালি যেই ডিমটা পেরেছেন তার ওপর নজরদারি করছি, কখন আবার ডিম ফুটে বাচ্চা বেরিয়ে যায় ঠিক নেই। ইচ্ছে আছে বাচ্চাটা দেখতে চিকেনের মত হলে সঙ্গে সঙ্গে ধরে ফ্রাই করে খেয়ে ফেলার।
– নাফিসার বাচ্চা ফ্রাই করে খাওয়া এত সোজা না! তাছাড়া আমার বাচ্চা দেখতে চিকেনের মত হবে কেন?
– তা-ও বটে! আপনার বাচ্চা হবে কচ্ছপের মত!
– হোয়াট!
– এই যে আপনি একবার কোন বিষয় কামড়ে ধরলে আর ছাড়েন না, এটাতো কচ্ছপের স্বভাব! তো আপনার বাচ্চা তো দেখতে কচ্ছপের মতই হবে, তাই না?
জবাবে অদ্ভুত সব হাসির ইমোজি দেয় নাফিসা।
– আপনাকে দেখতে রামগরুড়ের ছানা মনে হলেও আপনার সেন্স অফ হিউমার খারাপ না!
– আর আপনাকে দেখতে গো বেচারা টাইপের মনে হলেও স্বভাবে আপনি মারদাঙ্গা একেবারে!
– বাহ্, বুঝতে পেরেছেন দেখি! তা আমার কাজটার কতটুকু এগুলো?
– কাজ? ওহ্ সরি! আসলে এখনো ওটা ধরাই হয়নি। কিন্তু আমি মেসেজগুলো শুনেছি, শুনে বেশ অবাক হলাম! আপনাকে কি কেউ ব্ল্যাকমেইল করছে?
– ওগুলো আমার মেসেজ না।
– তাহলে কার? আপনি এগুলোর ভেতরে জড়াচ্ছেন কেন? পুলিশকে জানান।
– অবশ্যই জানাবো, ওইটা নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না। আপনি শুধু আমাকে মেসেজের পেছনের কথাগুলো একটু উদ্ধার করে দিন, বাদবাকিটা আমি দেখব।
– আমার কাছে লুকাতে চাচ্ছেন? কেউ যদি আপনাকে ব্ল্যাকমেল না’ই করবে তাহলে এই মেসেজ নিয়ে আপনার এতো মাথা ব্যাথা কিসের?
– কারণ যাকে পাঠিয়েছে তার মাথা নাই, কিন্তু আমার মাথা আছে। খুশি হয়েছেন জেনে? আপনি এত প্রশ্ন করেন কি জন্য? কাজ করে দিতে পারলে বলেন আর নইলে চললাম… টাটা বাই বাই খতম!
নাফিসা অভিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অফলাইনে চলে যায়। অভি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে নাফিসার প্রোফাইলের ছবিটার দিকে তাকায়। সরল হাসিতে উদ্ভাসিত নাফিসার ছবিটাতে হাত বুলিয়ে অভিরূপ বিড়বিড় করে আপনমনে বলে,
– এই ছবি দেখে বোঝার উপায় আছে যে আমার মত ছেলেকেও নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাবার ক্ষমতা রাখে এই মেয়ে? সুযোগ পেয়ে নেই মেয়ে, তোমাকে যদি আষ্টেপৃষ্ঠে না বেঁধেছি তো আমিও অভিরূপ না!
যত যাই বলুক অভি নিজেও জানে যে এই ক্ষমতা শুধু নাফিসারই আছে।

***
বাড়ি ফেরার পর থেকে রুচিতার ব্যবহারে বেশ অবাক হচ্ছে শফি। সত্যি বলতে বাড়ি ফেরার পথে সে বারবার ভাবছিল কিভাবে একই ঘরে সে রুচিতার সঙ্গে থাকবে? কিন্তু আসার পরে তার সঙ্গে ঠিকমতো কথা পর্যন্ত বলেনি মেয়েটা। একবার শুধু জিজ্ঞাসা করেছিল, “ভালো আছো?” শফি হ্যাবোধক মাথা নাড়তেই রুচিতা সেখান থেকে চলে যায়।

এমনিতেও রুচিতা যে তার খুব গা ঘেঁষে চলতো এমনটা নয়, তবে সে যতক্ষণ বাড়িতে থাকতো তার আশে পাশেই থাকতো। তাই আজকে তার ব্যবহারে ভীষণ অবাক হয় শফি।

রাত এগারোটা বাজে, এখন নিশ্চয়ই বাড়ির সব কাজ সেরে রুচিতা শুতে আসবে। একটু পরেই তার অনুমানকে সঠিক প্রমাণিত করতে রুচিতা ঘরে ঢোকে।তবে তাকে অবাক করে দিয়ে একজনের বিছানা ঠিক করে দিয়ে বেশ শান্ত কন্ঠে তাকে বলে,
– শুয়ে পড়ো। তোমার ওষুধ আর পানি বেড সাইড টেবিলে রাখা আছে। তারপরও কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে কল দিও। আমি পাশের গেস্ট রুমেই আছি। তুমি তো আমাকে সহ্য করতে পারছ না তাই ভাবলাম তোমার রাতের ঘুমটা একটু সহজ করে দেই। কিছু লাগলে আমাকে জানিও, মা-বাবাকে অযথা ডাকাডাকি করো না। উনারা এমনিতেই সারাদিন হসপিটালে দৌড়াদৌড়ি করেছেন। এখন তাদের রেস্ট প্রয়োজন।
শফির বিস্মিত দৃষ্টিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে রুচিতা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। শফি একা বসে থাকে স্হানুর মতো। খানিক বাদে ধীরে ধীরে উঠে গিয়ে ঘরের দরজা লক করে। হাজার চেষ্টা করেও সে তার মাথা থেকে রুচিতার শীতল ব্যবহার তাড়াতে পারছে না।

আশ্চর্য, তবে কি এতদিন রুচিতা তার সঙ্গে ভালোবাসার অভিনয় করেছে? সত্যি সত্যি তার বিয়ের আগে কারো সঙ্গে সম্পর্ক ছিল? আর সেজন্যই এত সহজে একটা ছুতো ধরে তাকে রেখে অন্য ঘরে শুতে গেল?
এমন নানান সব কথা ভাবতে ভাবতে মোবাইলটা হাতে তুলে নেয় শফি। কম্পিত হাতে হোয়াটসঅ্যাপের সেই অভিশপ্ত মেসেজটা ওপেন করে। সেদিন অফিসে আসা ভিডিও মেসেজটা দেখবে না দেখবে না করেও আবার চালু করে।
ভিডিওতে, রুচিতা শুধু একটা টাওয়েল পরে আছে। তার বড় চুলগুলো পিঠময় ছড়ানো। দেখেই বোঝা যায় যে সে মাত্র গোসল করে বেরিয়েছে। কেউ একজন একটা বার্থডে কেক নিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। স্ক্রিনে শুধু কেকটা দেখা যাচ্ছে। একটা পুরুষালী কণ্ঠ শোনা যায়, “হ্যাপি বার্থডে রুচি বেইব!” রুচিতা সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে ওঠে,” এই কি হচ্ছে এসব?”
“আহ্, উইশ করতে চাচ্ছিলাম।” পুরুষ কন্ঠের জবাব শোনা যায়।” অসভ্যতার একটা সীমা থাকা দরকার! তার উপর এগুলো ভিডিও হচ্ছে নাকি?” রুচিতা এক হাতে পরনের টাওয়েল সামলে অন্য হাতে মোবাইলটা বন্ধ করে দেয়।

ভিডিও এতটুকুই… কিন্তু এতোটুকুই শফির বুকে আগুন ধরাতে যথেষ্ট! রুচিতার সঙ্গে তার সাত মাসের বিবাহিত জীবনে কখনোই সে এতটা খোলামেলা ভাবে তার সামনে ঘোরাফেরা করেনি। এমনকি তার সামনে কখনো কাপড় পর্যন্ত বদলায় না মেয়েটা! সব সময় বেশ শান্ত আর চুপচাপ মেয়ে বলেই মনে হয়েছে তাকে। অথচ ভিডিওতে তার চটুলতা চোখে পড়ার মতো। তবে কি এই ছেলের জন্যই রুচিতা তার সঙ্গে এতটা দূরত্ব বজায় রেখে মিশে?
রুচিতার জীবনে অন্য কোন পুরুষ আছে ভাবতেই শফির ইচ্ছে হয় মোবাইলটা আছড়ে ভেঙে ফেলতে। নিজেকে বহু কষ্টে সামলে রাখে সে। কেননা রুচিতার কাছ থেকে সে জবাব চাইবে,
কেন এভাবে সে তার জীবনটা নষ্ট করল?
কেন সে তার সঙ্গে এতটা ছলনা করল?
এর জবাব তাকে দিতেই হবে। রুচিতার বিশ্বাসঘাতকতায় শফির ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে একাকার হয়ে যায়। বাচ্চা ছেলের মত ডুকরে কেঁদে ওঠে শফি, আর তার সেই কান্নারা ঘরের চার দেয়ালে প্রতিধ্বনি তুলে তাকেই আঘাত করে বারংবার।

চলবে।