হয়তো_তোরই_জন্য পর্ব-০৮

0
2231

#হয়তো_তোরই_জন্য
#পার্ট_৮
#নিশাত_জাহান_নিশি

—“ঐ কুওার বা** নিশ্চয়ই আমার ফোনটা ট্রেক করেছে।”

কথাটা বলেই জায়ান তমার হাত থেকে ফোনটা ছোঁ মেরে নিয়ে ফোনের সব গুলো পার্টস খুলে সিমটা টুকরো টুকরো করে ভেঙ্গে পা দিয়ে পিষিয়ে ফেলল। জায়ানের রক্তিম বর্ণের ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন দেখে তমা কিছুটা শিউরে উঠল। জায়ানের এই ভয়ংকর রূপ তমা কখনো দেখে নি। তাই সে কেমন ভয় পেয়ে গেছে।

জায়ান তমার হাত ধরে তমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিলো। তমার সাথে সাথে জায়ান ও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ির স্পিড ফুল বাড়িয়ে দিয়ে ছুটল পাহাড় তলী গ্রামের উদ্দেশ্যে। জায়ান উওেজিত কন্ঠে তমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“সিটবেল্ট টা ভালো করে বেঁধে নে। ঐ শয়তান গুলোর আগে শাফিনের কাছে আমাদের পৌঁছাতে হবে। শাফিনকে জীবিত অবস্থায় না পেলে আসল কার্লপ্রিট পর্যন্ত পৌঁছানো যাবে না।”

জায়ানের কথা মতো তমা সিটবেল্টটা টাইট করে বেঁধে নিলো। জায়ান রাগে ফুসছে আর ড্রাইভ করছে। ওর মাথায় বিভিন্ন চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। সন্দেহের তীর অনেক দিকেই ঘুরছে। বাট ঠিকঠাক নিশানা লাগাতে পারছে না। হুট করে জায়ানের মাথায় আকাশের কথাটা এলো। জায়ান নিজের রাগটাকে কিছুটা শান্ত করে তমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—“তমা এক্টা সত্যি কথা বলবি?”

তমা এক ভ্রু উঁচু করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“কি সত্যি?”

জায়ান আগ পাছ না ভেবে হুট করে বলে উঠল,,,,,,,

—-“তুই আকাশকে ভালোবাসিস তাই না?”

জায়ানের কথায় তমা কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো। তমা মাথাটা নিচু করে চোখের পানি ছেড়ে দিলো। তমার মৌণতা দেখে জায়ান নরম স্বরে বলল,,,,,,

—-“আমার কাছে কিছু লুকাস না প্লিজ! এতে হীতে বিপরীত হতে পারে। এই মুহূর্তে আমি কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছি না। সো প্লিজ যা জিগ্যেস করছি তার ঠিক ঠাক উওর দে।”

তমা হিচকি তুলে কেঁদে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—“আকাশ আমার সাথে চিট করেছে জায়ান ভাইয়া। ওর সাথে আমার দু বছরের সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু মাঝখান থেকে সে জয়া আপুকে বিয়ে করে নিলো। চোখের সামনে আমি এসব নিতে পারছি না। খুব কষ্ট হয়, যন্ত্রনা হয়।”

মুহূর্তেই জায়ানের শান্ত চোখ দুটো অশান্ত হয়ে উঠল। জায়ান এই চরম সত্যি গুলো নিতে পারছে না। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। ভিতরটা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। গলাটা ধরে আসছে। কন্ঠনালী দিয়ে কোনো সাউন্ড বের হচ্ছে না। শরীরটা কেমন অসার হয়ে আসছে। ড্রাইভিং করার শক্তি সে হারিয়ে ফেলছে। সে আন্দাজের বসে তমাকে এক্টু বাজিয়ে দেখছিলো। আন্দাজে ঢিল ছুড়াটা যে এমনভাবে সত্যি হয়ে যাবে তা জায়ান মোটে ও ভাবতে পারে নি। তমা এখনো হেচকি তুলে কাঁদছে। জায়ান নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে তমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“কাঁদিস না তমু। এর উপযুক্ত শাস্তি আকাশ পাবে। তুই শুধু এটা বল, আকাশের কোনো কাজে তুই কখনো সন্দেহমূলক কিছু পেয়েছিস কিনা!”

তমা কান্না থামিয়ে চোখের জল গুলো মুছে বলল,,,,,,

—-“না আমি তো তেমন কিছু বুঝি নি। আকাশকে আমার কোনো দিক থেকেই সন্দেহ হয় না। আচ্ছা….. তোমার কি আকাশকে কোনো কারণে সন্দেহ হচ্ছে?”

—-“হচ্ছে আবার হচ্ছে ও না। তবে আমার মনে হচ্ছে আকাশ কোথাও না কোথাও এক্টা জড়িত আছে। যে এতো নিখুঁতভাবে এক্টা মেয়ের মন ভেঙ্গে দিতে পারে তার দ্বারা কিন্তু সবই সম্ভব। শুন তমু…. চেষ্টা করবি আকাশের থেকে যথেষ্ট ডিস্টেন্স মেন্টেইন করে চলার। আকাশকে আমার সুবিধের লাগছে না।”

—-“আমার কেনো জানি না মনে হচ্ছে, উইদাউট রিজন তুমি আকাশকে সন্দেহ করছ না। নিশ্চয়ই কোনো রিজন আছে!”

—-“ঠিক ধরেছিস! প্রথমত, তুই বলেছিলি কেউ একজন তোর রুমের দরজা থেকে দৌঁড়ে পালানোর সময় শার্টের এক্টা অংশ দরজার হ্যান্ডেলের সাথে লেগে ছিড়ে গেছে এমনকি শার্টের ছেঁড়া অংশটা ও তোর কাছে প্রমাণ হিসেবে ছিলো। কিন্তু আপাতত সে প্রমানটা লোপাট হয়ে গেছে। তোর বর্ণনা অনুযায়ী ঠিক সেইমভাবে আকাশের পান্জাবীর কলারটা ও ছেঁড়া ছিলো। আউ ডোন্ট নো, এটা কাকতালীয় নাকি ইচ্ছাকৃত। তবে আমার ডাউট হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, আকাশের ওভার ভয়ংকরী ভাব। চোখের সামনে কোনো নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটে গেলো ও ছেলেরা এতোটা ভয় পায় না যতোটা ভয় আকাশ পেয়েছে। জাস্ট হাত, পা বেঁধে দিয়েছে এতে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে? তৃতীয়ত আকাশের ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুলের ব্যান্ডেজ! জাবেদ ভাইয়াকে আমি যখন আমার রুমে ডেকে এনে শার্টে লেগে থাকা রক্তের ব্যাপারে জিগ্যেস করি তখন আকাশের দিকে খেয়াল করে দেখলাম, আকাশ বার বার ওর ডান হাতটা লুকাচ্ছে। কেমন অস্থির চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। আকাশ রুম থেকে বের হওয়ার সময় আমি ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম, আকাশের ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুলটা ব্যান্ডেজ করা। অথচ, এর কিছুক্ষন আগে ও আমরা একসাথে ছিলাম। তখন কিন্তু ওর হাতে এমন কোনো ব্যান্ডেজ দেখা যায় নি। সম্ভবত ব্যান্ডেজটা সদ্য লাগানো হয়েছে। নিশ্চয়ই ধারালো কিছুর আঘাতে ওর হাতটা কেটেছে। আই থিংক বিড়ালের গলা গুলো সে নিজের হাতেই কেটেছে। বাকিটা গড নউজ।”

এসব কথার মাঝেই ওরা পাহাড়তলী গ্রামে পৌঁছে গেলো। এবার শুধু হোল্ডিং নং অনুযায়ী শাফিনের বাড়িটা খোঁজার পালা। জায়ান গাড়ি থেকে নেমে তমার হাত ধরে ছুটে চলল পাহাড়তলী গ্রামের বড় বাজারের দিকে। এখন প্রায় সন্ধ্যা সাতটা বাঁজছে। চারিদিকে রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে। সোডিয়ামের আলোতে চারিদিকটা সামান্য আলোকিত হয়ে আছে। বাজারে পৌঁছোতেই জায়ান হাফাতে হাফাতে এক্টা মুদি দোকানদারকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—“মামা…..আপনাদের এলাকার শাফিন নামের কাউকে চিনেন? হোল্ডিং নং ২০১? আসলে কোন দিক দিয়ে গেলে ওর বাড়িটা খুঁজে পাবো ঠিক বুঝতে পারছি না। আপনি যদি এক্টু হেল্প করতেন?”

—-“মাম্মা…এই পর্যন্ত দুই দফা লোক এসে শাফিনেরর বাড়িটা খোঁজ করে গেছে। একই এড্রেস বার বার বলতে বলতে মুখে ফেনা চলে এলো!”

জায়ান নাক, মুখ কুচকে কিছুটা উওেজিত কন্ঠে বলে উঠল,,,,,,

—-“হোয়াট? আমাদের আগে আরো দুই দফা লোক এসে শাফিনের খোঁজ করে গেছে?”

—-“হুম উনারা হয়তো এতক্ষনে দেখা করে চলে ও গেছে।”

জায়ান মাথায় হাত দিয়ে এক নিশ্বাসে বলে উঠল,,,,,

—-“প্লিজ মামা তাড়াতাড়ি বলুন শাফিনের বাড়িটা কোন গলিতে?”

—“সোজা হেটে বা দিকে যাবেন। হোল্ডিং নং তো আপনি জানেন ই!”

জায়ান আর দেরি না করে তমার হাত ধরে সোজা দৌঁড়াতে লাগল। কিছু দূর দৌঁড়ে ওরা বা দিকের গলিতে ঢুকে গেলো। হোল্ডিং নং ২০১ এর সামনেই পৌঁছাতেই ওরা কিছুটা অবাক হয়ে গেলো। কারণ, শাফিনের বাড়ির গেইটের খুব বড় এক্টা তালা ঝুলছে। তমার ফোনের ফ্ল্যাশ লাইটের আলোতে জায়ান তালাটা ভালো করে নেড়ে চেড়ে দেখল তালাটা বেশ পাকাপোক্ত, লোহা জাতীয় কিছু ছাড়া তালাটা ভাঙ্গা যাবে না। শাফিনদের বাড়ির আশে পাশে কোনো বিল্ডিং ও নেই। তবে কিছুটা দূরে এক্টা তিনতলা বাড়ি আছে। জায়ান তমার হাত ধরে দৌঁড়ে বাড়িটার সামনে গেলো। দুতলার বারান্দায় বসে একজন মধ্য বয়সী লোক পএিকা পড়ছে। জায়ান মৃদ্যু চিৎকার করে লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—“মামা….. আপনার প্রতিবেশী শাফিনদের বাড়িতে তালা ঝুলছে কেনো? ওরা কি বাড়িতে নেই?”

লোকটি নিচের দিকে তাকিয়ে জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“বাবা….ওরা তো এক মাস আগে এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। এইখানে আর থাকে না!”

—-“ওদের বর্তমান ঠিকানা টা কোথায় আপনি কি জানেন?”

—-“না বাবা, তা তো জানি না।”

—-“মামা আপনি যদি কিছু মনে না করেন আমি কি আপনার সাথে পার্সোনালী কিছু কথা বলতে পারি?”

লোকটা বসা থেকে উঠে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল, জায়ানদের এখানেই দাঁড়াতে। জায়ান এদিক সেদিক চোখ বুলিয়ে তমার হাত ধরে বাড়ির বাইরেই দাঁড়িয়ে রইল। লোকটা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেইটের বাইরে চলে এলো। জায়ান বিনয়ী হয়ে লোকটার সাথে মুচকি হেসে বলল,,,,,,

—-“আচ্ছা মামা…লাস্ট টাইম আপনি যখন শাফিনকে দেখেছিলেন তখন কি শাফিনের হাতত বা পা দুইটাই সুস্থ ছিলো?”

—-“না বাবা! ওর পা টা খোঁড়া ছিলো। লেংড়িয়ে লেংড়িয়ে হাঁটত।”

জায়ান মুচকি হেসে লোকটার সাথে হাত মিলিয়ে বলল,,,,,,,

—-“ওকে মামা থ্যাংকস। আমরা বরং আসি।”

জায়ান তমার কাঁধে হাত দিয়ে সামনের দিকে হাটছে আর জোরে জোরে চিৎকার করে তমাকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,,

—-“বুঝলি তমা, আমার মনে হয় না শাফিনকে এখানে খুঁজে কোনো লাভ হবে। আমাদের বরং অন্য রাস্তা খুঁজতে হবে। রাত, বিরাতে এখানে সেখানে দৌঁড়া দৌঁড়ি করে লাভ নেই। এর চেয়ে ভালো আমরা বাড়ি ফিরে যাই। কাল না হয় শাফিনকে আবার খুঁজতে বের হবো। শরীরটা ও বড্ড ক্লান্ত লাগছে।”

জায়ান কথা গুলো বলছে আর তমাকে নিয়ে শাফিনদের বাড়ি ক্রস করে সোজা গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট করে দিলো। তমা কিছুটা অবাক হয়ে জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“এটা কি হলো জায়ান ভাইয়া? শাফিনকে না খুঁজেই আমরা বাড়িতে চলে যাবো?”

জায়ান এক্টা ডেবিল স্মাইল দিয়ে তমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“শাফিনকে খুঁজার কি দরকার? শাফিন তো বাড়িতেই আছে!”

—-“মানে?”

—-“মানে হলো শাফিন ওর বাড়িতেই আছে। আমরা অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুড়ে শাফিনদের বাড়িতে ঢুকার ট্রাই করব। হয়তো বাড়ির পিছনে এক্টা গুপ্ত দরজা ও থাকতে পারে।”

তমা মাথায় হাত দিয়ে কপাল কুচকে জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“জায়ান ভাইয়া প্লিজ যা বলার ডিরেক্টলি বলো ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে বলো না। আমার মাথায় ঘুড়ছে!”

—-“তাহলে শুন….দোকানদার থেকে শুরু করে শাফিনদের প্রতিবেশী লোকটা দুজনই এতোক্ষন আমাদের সাথে অভিনয় করেছে। পুরোটা আমাদের বিভ্রান্ত করার জন্য। প্রথমত, দোকানদার যা বলেছে তা সম্পূর্ণ বানোয়াট কথা। আসলে কোনো লোকই শাফিনকে খোঁজ করতে আসে নি। শাফিনকে খোঁজ করতে আসার তো কোনো কারণ ই দেখছি না আমি। শাফিন যদি কোনো না কোনো ভাবে লোকগুলোর সাথে জড়িত থাকে তাহলে নিশ্চয়ই লোকগুলো শাফিনদের বাড়িতে সচরাচর আসা যাওয়া করত। সেক্ষেএে নিশ্চয়ই শাফিনের এড্রেস খোঁজ করতে আসবে না ওরা। দোকানদারটা আরো বলেছে, দুই দফা লোক এসে নাকি শাফিনের এড্রেস খোঁজ করে গেছে। এটা ও সম্পূর্ন ভিওিহীন কথা। দুই দফা লোক দ্বারা আমাদের এটাই বুঝাতে চেয়েছে যে, এক বা একাধিক লোক তোর আর আমার মাঝে জড়িত আছে। আমাদের মাইন্ডকে ঘুড়ানোর জন্য ওরা এই চালাকীটা করেছে। দুই দফা লোককে খুঁজতে গিয়ে আমরা নিশ্চয়ই আসল শত্রুকে গুলিয়ে ফেলব। মূলত আমাদের বিভ্রান্ত করার জন্য দুই দফা লোককে সাসপেক্ট হিসেবে আনা হয়েছে। আর তাছাড়া শাফিনরা যদি এই বাড়িতে নাই থাকত তাহলে নিশ্চয়ই দোকানদারটা আমাদেরকে প্রথমেই বলে দিতো যে, শাফিনরা এই বাড়িতে থাকে না। ওরা এই বাড়ি ছেড়ে এক বছর আগে চলে গেছে। কিন্তু না, উনি কিন্তু আমাদের এই ব্যাপারে কিছুই বলে নি। উল্টে শাফিনের ঠিকঠাক এড্রেসটা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে। এবার আসি শাফিনের প্রতিবেশীর প্রসঙ্গে। এখন রাত আটটা বাজছে। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। এমন সময় নিশ্চয়ই কেউ বারান্দায় এসে পএিকা পড়বে না! মূলত উনি বারান্দায় বসেছে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। উনাকে দেখে যেনো আমরা উনার কাছে যাই বা উনার সাথে শাফিনের ব্যাপারে কিছু জানতে চাই এর জন্যই লোকটা এখানে বসেছে। হয়তো বা ভুল বশত আমরা শাফিনের সম্পর্কে অনেক কিছুই বলে দিতে পারি যা আমাদের অদৃশ্য শত্রুদের খুব কাজে লাগতে পারে। আমি যখন ভদ্র লোকটাকে বললাম উনার সাথে আমার কিছু পার্সোনাল কথা আছে, তখন কিন্তু উনি আমাকে বাড়ির ভিতর আসতে বলেন নি বা আমাকে রুমে ঢুকতে বলে নি। উল্টে উনি নিচে এসেছে। তখনই আমার কেমন এক্টা ঘটকা লেগেছে। কারণ, সচারচর কেউ যদি আমাদের সাথে কোনো পার্সোনাল বিষয়ে কথা বলতে চায় তখন কিন্তু আমরা তাকে বাড়িতে আসতে বলি বা রুমে ঢুকে চা, কফি খেতে খেতে কথা বলার প্রপোজাল ও দেই। কিন্তু না এটা উনি করে নি। অবশ্য এর ও এক্টা নির্দিষ্ট কারণ আছে। আমার ধারণা অনুযায়ী উনার বাড়িতেই আমাদের অদৃশ্য শত্রু ঘাপটি মেরে বসে আছে। তাছাড়া উনি যখন আমার সাথে কথা বলছিলো কেমন আমতা আমতা করে কথা বলছিলো, উনার দৃষ্টি অস্থির ছিলো। উনি আদৌ ভয়ে কাঁপছিলো কিনা এটা চেইক করার জন্যই আমি উনার হাতে হাত মিলিয়ে ছিলাম। উনার হাত ধরেই বুঝে গেলাম উনি ভয়ে কাঁপছে। উনাকে থ্রেড দেওয়া হয়েছে এইসব কথা বলার জন্য। তাই উনি বাধ্য হয়ে আমাদের এসব বলেছে। আমি এখন কিছুতেই চাইছি না ঐ অদৃশ শত্রুর মুখোমুখি হতে কারণ আমার হাতে যথেষ্ট প্রমাণ নেই। প্রমান ছাড়া ঐ শত্রুর বিপক্ষে যাওয়া আদৌ সঠিক পথ নয়। তাই আমাকে আগে শাফিনের মুখোমুখি হতে হবে। যেকোনো ভাবেই হোক শাফিন অব্দি আমাদের পৌঁছাতে হবে। শাফিন ওর বাড়িতেই ঘাপটি মেরে বসে আছে। না হয় বন্দি অবস্থায় পড়ে আছে। শাফিন সাসপেক্ট ও হতে পারে আবার ভিকটিম ও হতে পারে!” এই বিষয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান।”

—-“সব বুঝলাম বাট শাফিনকে যে ওর বাড়িতেই আছে এটা কি করে বুঝলে?

—-“আমি যখন শাফিনদের গেইটে ঝুলানো তালাটার দিকে তাকালাম তখন দেখলাম তালাটা একদম নতুন। ফ্ল্যাশ লাইটের আলোতে তালাটা জ্বলজ্বল করছিলো। মনে হয়েছে সদ্য কেউ তালাটা এনে লাগিয়েছে। এক বছর আগে যদি শাফিনরা এই বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তাহলে নিশ্চয়ই তালাটায় এক্টু হলে ও ঝংকার ধরবে। কিন্তু না তালাটা একদমই ঝকঝক করছিলো। দোকানদার থেকে শুরু করে শাফিনের প্রতিবেশী এবং গেইটের ঝুলন্ত নতুন তালা সব গুলো ঘটনা যদি তুই এক এক সাজাস তাহলে তুই নিজেই বুঝতে পারবি শাফিন ওর নিজের বাড়িতেই আছে। কেবলমাএ আমাদের বিভ্রান্ত করার জন্য পর পর সাজানো ঘটানো গুলো একেকটা গুটির চাল ছিলো।”

তমা হাত তালি দিয়ে জায়ানের দিকে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,,,,

—“জায়ান ভাইয়া…. ইউ আর জাস্ট জিনিয়াস।”

#চলবে,,,,,,,,