হয়তো_তোরই_জন্য পর্ব-১৬+১৭

0
2505

Part 16+17
#হয়তো_তোরই_জন্য
#পার্ট_১৬
#নিশাত_জাহান_নিশি

—“বাঃহ্ পাক্কা গিন্নি হয়ে গেছিস তো! কি সুন্দর বরের খেয়াল রাখছিস!”

তমা মুখটা বাংলার পাঁচ এর মতো করে বলল,,,,,,

—-“গিন্নি না ছাই। চাঁপে পরে তোমার খেয়াল রাখতে হচ্ছে। না হয় আম্মু ঝাড়ু পেটা করবে।”

—-“ব্যাপার না। এখন হয়তো লোকের ভয়ে আমার খেয়াল রাখছিস। কিছুদিন পর দেখবি ভালোবাসার টানে মন থেকে আমার খেয়াল রাখবি।”

তমা নাক, মুখ কুচকে বলল,,,,,

—-“হয়েছে হয়েছে। ছাড়ো আমায়। নিচে যেতে হবে। সবাই খাবার নিয়ে ওয়েট করছে আমাদের জন্য।”

জায়ান তমাকে ছেড়ে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলটা সেট করছে আর বলছে,,,,,,,

—-“তমু….শাফিন আর তাহাফ ভাইয়ার ব্যাপারটা আপাতত কাউকে বলিস না। কজ আমরা পাকাপোক্ত প্রমাণ ছাড়া তাহাফ ভাইয়াকে ধরতে পারব না। তাহাফ ভাইয়ার বিরুদ্ধে আমাদের অনেক প্রমাণ জোগাড় করতে হবে। সো এই পর্যন্ত তুই এক্টু সবুর কর। তাহাফ ভাইয়া নিশ্চয়ই উনার কৃতকর্মের উপযুক্ত শাস্তি পাবে। সাথে আকাশ ও। আমার ভাবতে জাস্ট অবাক লাগছে আকাশ কিভাবে পারল সবটা জানার পরে ও তোর সাথে প্রেমের অভিনয় করতে? আকাশ তো আগে থেকেই জানত তোর আর আমার রেজিস্ট্রি ম্যারেজ হয়ে আছে। সবটা জানার পরে ও আকাশ এতো বড় জঘন্য কাজটা কিভাবে করতে পারল। আমি কাউকেই ছাড়ব না। আকাশকে ও না, তাহাফ ভাইয়াকে ও না। এখন তো মনে হচ্ছে জয়ার লাইফ ও সেইফ না। আদৌ আকাশ জয়ার সাথে মানিয়ে নিবে কিনা আই ডোন্ট নো। আকাশকে এক্টা উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। আর কোনোদিন ও যেনো কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে না তাকায়!”

—-“আমি ও চাই ওরা দুজনই চরম শাস্তি পাক। সাতটা বছর আমাকে মানসিক ভাবে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছে ওরা। তুমি নিশ্চিন্ত থাকো জায়ান ভাইয়া আমি এখন কাউকে কিছু বলব না। সব প্রমাণ জোগাড় করার পর আমি মুখ খুলব। আকাশকে বড় সড় এক্টা শাস্তি দিতে হবে। আকাশের ক্যারেক্টার ঠিক করতে হবে। না হয় জয়া আপু ওর বিবাহিত জীবনে সুখী হবে না।”

জায়ান মলিন হেসে সোজা বিছানায় উঠে শটান হয়ে শুয়ে পড়ল। তমা কিছুটা অবাক হয়ে তেড়ে গিয়ে জায়ানের কলার চেপে ধরে বলল,,,,,

—-“শুয়ে পড়লে কেনো? আমার কথা তোমার কানে যায় না?”

জায়ান কপাল কুচকে মুখটা কালো করে বলল,,,,,,

—-“খাবো না তমু। আমার একদম ভালো লাগছে না। শরীরটা কেমন ম্যাচ ম্যাচ করছে। বোধ হয় জ্বর এসেছে!”

তমা কিছুটা পেরেশান হয়ে জায়ানের কপালে হাত দিয়ে দেখল জায়ানের শরীরটা অসম্ভব রকম গরম হয়ে আছে। তমা তাড়াতাড়ি করে জায়ানের কলারটা ছেড়ে এক্টা ছোট্ট তোয়ালে ভিজিয়ে এনে জায়ানের কপালে জলপট্টি দিতে লাগল। জায়ান চোখ দুটো বন্ধ করে রেখেছে। এতো টুকু সময়ের মধ্যে জায়ানের মুখটা কেমন নেতিয়ে গেছে। তমা জায়ানের মাথার কাছে বসে বেশ চিন্তিত হয়ে তোয়ালেটা বার বার ভিজিয়ে কপালে পট্টি দিচ্ছে।

প্রায় দশ মিনিট পর জায়ানের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসল। থরথর করে পুরো শরীর কাঁপছে। তমা বসা থেকে উঠে কাবার্ড থেকে এক্টা মোটা কম্বল বের করে জায়ানের গাঁয়ে জড়িয়ে দিলো। জ্বরের তাড়নায় জায়ানের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। জায়ান কম্বলটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে একনাগাড়ে কাঁপছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,,,

—-“প্লিজ তমু…তুই আমাকে ছেড়ে কোথাও যাস না। আমি তোকে প্রচন্ড রকম ভালোবাসি। তুই ছাড়া আমার জীবনটা পুরোপুরি অন্ধকার। প্লিজ তুই আলো হয়ে আমার জীবনে থেকে যা।”

জায়ানের মুখের কাছে কান লাগিয়ে তমা এতোক্ষন কথা গুলো শুনছিলো। অজান্তেই তমার চোখ বেয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। তমা জায়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বলল,,,,,,

—-“পাগল ছেলে এক্টা। হাঁড় কাঁপা জ্বরে ও তমু তমু করছে। এই পাগলটা কখনো শুধরাবে না।”

কথা গুলো বলেই তমা যেই না সামনের দিকে পা বাড়াল অমনি জায়ান তমার হাতটা ধরে চোখ গুলো আধখোলা করে মিনমিনিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“আমাকে ছেড়ে যাস না তমু। প্লিজ আমার পাশে বসে থাক। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দে। আমি এক্টু আরামে ঘুমোতে চাই।”

—-“এক্টু ওয়েট করো জায়ান ভাইয়া। আমি মেডিসিন নিয়ে আসছি। ঐ সময় ড্রইং রুমের সোফার উপর মেডিসিন গুলো রেখে এসেছিলাম। আমি এক্ষনি নিয়ে আসছি।”

কথাগুলো বলেই তমা জায়ানের হাতটা ছাড়িয়ে যেই না রুমের দরজার দিকে পা রাখল অমনি মিসেস আন্জ্ঞুমান তমার রুমে এসে হাজির হয়ে গেলো। উনি এদিক সেদিক না তাকিয়ে তেজী কন্ঠে তমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—-“সেই কখন তোকে উপরে পাঠিয়েছি। এসেই তুই ফেবিকলের মতো চিপকে আছিস। আমার জামাই রাজা হয়তো ক্ষিদেয় চুপসে গেছে। এই তোর কি কোনো আক্কেল জ্ঞান নেই?”

তমা মাথাটা নিচু করে মিসেস আন্জ্ঞুমানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—-“তোমার জামাইয়ের জ্বর উঠেছে আম্মু। ১০৩ ডিগ্রী তো হবেই। তাই ওকে ছেড়ে নিচে যেতে পারছি না।”

মিসেস আন্জ্ঞুমান কিছুটা পেরেশান হয়ে তমাকে ক্রস করে জায়ানের পাশে বসে তমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-” জ্বর উঠেছে কখন?”

—-“কিছুক্ষন আগে আম্মু। তুমি এক্টু জায়ান ভাইয়ার পাশে বসো। আমি নিচ থেকে মেডিসিন গুলো নিয়ে আসছি।”

কথাগুলো বলেই তমা দৌঁড়ে রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে গেলো। মিসেস আন্জ্ঞুমান জায়ানের পাশে বসে জায়ানের মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে। উনি ও বেশ চিন্তিত জায়ানের জ্বর নিয়ে। এরই মাঝে তমা চলে এলো হাতে মেডিসিন নিয়ে। তমাকে দেখে মিসেস আন্জ্ঞুমান জায়ানের পাশ থেকে উঠে তমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,

—-“ভালো করে যত্ন নে ছেলেটার। জ্বরটা বেশ গাঢ়। আশা করছি তোর সেবা পেলেই সুস্থ হয়ে উঠবে।”

কথাগুলো বলেই মিসেস আন্জ্ঞুমান রুম থেকে বের হয়ে গেলো। তমা রুমের দরজাটা লাগিয়ে জায়ানের পাশে বসে জায়ানের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,

—-“জায়ান ভাইয়া উঠো। তোমার জন্য মেডিসিন নিয়ে এসেছি। দেখবে, মেডিসিন টা খাওয়ার পর পরই তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে।”

জায়ান চোখ গুলো আধখোলা করে হুট করে তমাকে ওর নিজের সাথে মিশিয়ে কম্বলের নিচে ঢুকিয়ে নিলো। তমা চোখ বড় বড় করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান তমাকে বুকের সাথে চেপে ধরে মিনমিন করে বলছে,,,,,,

—-“আমার মেডিসিন তো তুই। তুই পাশে থাকলেই আমি সুস্থ হয়ে উঠব। ঐসব এক্সট্রা ঔষধ আমার লাগবে না।”

তমা মোচড়ামুচড়ি করছে আর বলছে,,,,,

—-“বাচ্চামো করো না জায়ান ভাইয়া। তাড়াতাড়ি উঠে ঔষধটা খেয়ে নাও। তোমার গাঁ জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।”

—-“পুড়ে খাক হয়ে যাক। এরপর ও আমি তোকে ছাড়ব না। তুই আমার পাশ থেকে উঠে গেলেই আমার জ্বর আরো বেড়ে যাবে।”

তমা রাগ দেখিয়ে জায়ানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ডেস্কের উপর থেকে পানি ভর্তি গ্লাসটা নিয়ে জায়ানকে আস্তে করে শুয়া থেকে উঠিয়ে বসিয়ে দিলো। জায়ান ঢুলুঢুলু চোখে তমার দিকে তাকিয়ে আছে। তমা ঔষুধের প্যাকেট থেকে পর পর কয়েকটা ঔষধ ছাড়িয়ে পানির গ্লাস সহ জায়ানের মুখের কাছে ধরে বলল,,,,,,,

—-“ঔষধ টা খেয়ে নাও। দেখবে জ্বর কমে গেছে।”

জায়ান মুখটা ফুলিয়ে তমার হাত থেকে ঔষধ নিয়ে গড়গড় করে পানি দিয়ে ঔষধ গুলো গিলে নিলো। তমা মৃদ্যু হেসে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“তুমি এক্টু বসো। আমি এক্টা তোয়ালে ভিজিয়ে আনছি। তোমার গাঁ টা মুছে দিতে হবে।”

জায়ান মাথা নাঁড়িয়ে সায় জানালো। তমা দৌঁড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে এক্টা তোয়ালে ভিজিয়ে এনে জায়ানের পাশে বসল। জায়ান বসে বসে ঝিমুচ্ছে আর কি যেনো মনে মনে বিড়বিড় করছে। তমা তোয়ালে টা ডেস্কের উপর রেখে জায়ানের মুখোমুখি বসে মাথাটা নিচু করে জায়ানের শার্টের বোতম গুলো এক এক করে খুলছে। জায়ান এখনো ঢুলছে আর মনে মনে হাজারটা কথা বলছে। শার্টের বাটন খোলা শেষে তমা মাথাটা তুলে জায়ানের দিকে তাকালো। জায়ানের উন্মুক্ত শরীরটা তমার গায়ে শিহরণ তুলে দিচ্ছে। তমা তাড়াতাড়ি জায়ানের থেকে চোখ সরিয়ে ডেস্কের উপর থেকে ভেজা তোয়ালে টা নিয়ে জায়ানের গাঁ মুছতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। জায়ান কিছুক্ষন পর পর ঠান্ডায় কেঁপে কেঁপে উঠছে। তমা খুব দ্রুত জায়ানের গাঁ টা মুছে দিয়ে জায়ানকে আস্তে করে বিছানায় শুইয়ে দিলো। জায়ান কম্বল আঁকড়ে ধরে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ল। তমা তোয়ালে টা বারান্দায় ছড়িয়ে দিয়ে রুমের লাইট টা অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিলো। ধীর পায়ে হেঁটে তমা বিছানায় এসে বসল। জানালা দিয়ে আসা মৃদ্যু চাঁদের আলোয় জায়ানের মুখটা আবছা দেখা যাচ্ছে। চাঁদের স্নিগ্ধ আলোতে জায়ানের ফর্সা মুখটা মুক্তোর মতো জ্বলজ্বল করছে। তমার কেমন ঘোর লেগে আসছে। তমা কখনো জায়ানকে এতোটা কাছ থেকে দেখে নি। আজ সে খুব সুক্ষ্মভাবে জায়ানকে দেখছে। জায়ানের ঠোঁটের নিচে এক্টা কালো কুচকুচে তিল আছে। তিলটা তমাকে খুব টানছে। এই মুহূর্তে তমার ইচ্ছে করছে তিলটাতে এক্টা বাইট বসিয়ে দিতে। তমা নিজের বেখেয়ালী মনের সাথে না পেরে এক্টু ঝুঁকে জায়ানের ঠোঁটের কাছের তিলটাতে কুটুস করে এক্টা বাইট বসিয়ে দিলো। সাথে সাথেই জায়ান এক্টু নড়েচড়ে উঠল। তমা তাড়াতাড়ি জায়ানের পাশ থেকে উঠে লজ্জায় মুখটা ঢেকে বলল,,,,,

—-“ছিঃ এ আমি কি করলাম? নিজের লাজ লজ্জা বিসর্জন দিয়ে বেহায়ার মতো হ্যাংলামী করে বসলাম?”

তমা এসব বলছে আর লজ্জায় মুর্ছা যাচ্ছে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর তমা মুখ থেকে হাতটা সরিয়ে জায়ানের পাশে শুয়ে পড়ল। জায়ান বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। জায়ানের প্রতিটা নিশ্বাসের আওয়াজ তমার কানে বারি খাচ্ছে। তমা চোখ জোড়া বন্ধ করে জায়ানকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে জায়ানের বুকে মাথা রেখে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।

পরের দিন……

সকাল আটটা। জানালা দিয়ে আসা সূর্য্যের তীর্যক আলোয় জায়ানের ঘুম ভাঙ্গল। জায়ান চোখ দুটো পিটপিট করে খুলল। বুকের দিকে নজর দিতেই জায়ানের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। জায়ান অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে ওর বুকের দিকে তাকিয়ে আছে। কজ তমা জায়ানের বুকের উপর গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে।

হুট করেই জায়ানের চোখ দুটো মুগ্ধতায় ভরে উঠল। ঠোঁটে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে জায়ান তমার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে। তমা আরাম পেয়ে জায়ানকে আরো টাইট করে জড়িয়ে ধরে ঘুমে কাত হয়ে গেলো।

এর মাঝেই দরজায় কট কট আওয়াজ শোনা গেলো। তমার টনক এবার নড়ল। তমা খানিক নড়ে চড়ে বড় এক্টা হাই তুলে চোখ খোলে নিজেকে জায়ানের বুকে আবিষ্কার করল। সাথে সাথেই তমা ধরফরিয়ে জায়ানের বুক থেকে উঠে খাট থেকে নেমে গেলো। জায়ান বাঁকা হাসি দিয়ে তমার দিকে তাকিয়ে আছে। তমা কপাল কুঁচকে জায়ানের দিকে হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে দৌঁড়ে দরজার কাছে ছুটে গেলো। দরজার খিল খোলার সাথে সাথেই মিসেস আন্জ্ঞুমান উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“জামাইয়ের জ্বর টা কমেছে তো?”

তমা বড় এক্টা হামি দিয়ে বলল,,,,,,,

—-“এখনো চেইক করি নি।”

মিসেস আন্জ্ঞুমান চোখ রাঙ্গিয়ে তমার মাথায় এক্টা ঠুয়া দিয়ে বলল,,,,,,,

—-“দিনের আটটা পর্যন্ত পড়ে পড়ে ঘুমাস। বরের ভালো মন্দ খেয়াল রাখার সময় কই? এখনো সময় আছে ঘুমটা কমা। পরে জামাইয়ের বাড়িতে গিয়ে আমার মান সম্মান ডুবাস না।”

মিসেস আন্জ্ঞুমান বকবক করতে করতে নিচে নেমে গেলো। তমা মুখটা কাঁদো কাঁদো করে ঠাস করে রুমের দরজাটা লাগিয়ে জায়ানের কাছে তেড়ে এসে বলল,,,,,,,

—-“শুধুমাএ তোমার জন্য এই সাত সকালো আম্মুর হাতে মার খেয়েছি+কথা শুনেছি। সব দোষ তোমার। তোমার জন্যই আজ আমার দিনটা খারাপ যাবে।”

জায়ান বাঁকা হাসি দিয়ে তমাকে হেচকা টান দিয়ে ওর বুকের সাথে মিশিয়ে বলল,,,,,,

—-“আজ তোর দিনটা খুব ভালো যাবে। মিলিয়ে নিস। কজ আজ তুই ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে জায়ানের মুখটা দেখেছিস!”

তমা বেকুব হয়ে জায়ানের বুকের সাথে মিশে আছে। জায়ানের শরীরের তাপটা কমে গেছে। শরীরটা শীতল হয়ে এসেছে। তমা মুখ তুলে জায়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“কেমন লাগছে এখন? শরীর ঠিক আছে তো?”

—“শরীর ঠিক না হয়ে জো আছে? সারা রাত আমার বদরাগী বউটার সেবা পেয়েছি। নিজেকে এখন কেমন “বর বর” ফিল হচ্ছে!”

তমা ভেংচি কেটে বলল,,,,,,,

—-“কথাটা “বর বর”‘হবে না গো। “বর্বর” হবে। তুমি খুব “বর্বর” এক্টা লোক।”

জায়ান হু হা করে হেসে বলল,,,,,,

—-“দাঁড়া বর্বর কাকে বলে তোকে এখনি বুঝাচ্ছি!”

কথাটা বলেই জায়ান তমাকে উল্টিয়ে খাটের উপর ফেলে দিয়ে তমার গায়ের উপর উঠে গেলো। তমা কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে জায়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“স্যস্যস্যরি….আর কখনো তোমাকে বর্বর বলব না। প্লিজ এবারের মতো আমায় মাফ করে দাও।”

জায়ান বাঁকা হেসে বলল,,,,,,,

—-“জায়ানের ডিকশেনারী তে স্যরি নামের কোনো ওয়ার্ড নেই। সো আজাইরা প্যাচাল ফাইরা লাভ নাই। আমার এখন যা মন চাইবে তাই করব।”

কথাটা বলেই জায়ান ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তমার ঠোঁটের দিকে তাকালো। তমা বেশ বুঝতে পেরেছে জায়ান এখন তমার ঠোঁটের বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে। তাই সে তৎক্ষনাত হাত দিয়ে ওর ঠোঁট জোড়া চেঁপে ধরল। জায়ান কিছুটা বিরক্ত নিয়ে ঠোঁট থেকে তমার হাতটা সরিয়ে কপাল কুঁচকে বলল,,,,,,,,

—-“আর একবার বাঁধা দিতে আসবি তো শ্বাশুড়ী আম্মুকে ডেকে এনে তোর নামে নালিশ দিবো!”

তমা থতমত খেয়ে কিছুটা রেগে বলল,,,,,

—-“হোহোহোয়াট? কিকিকি নালিশ দিবে?”

জায়ান বাঁকা হেসে বলল,,,,,,

—-“এই যে….. তুই আমাকে বিরক্ত করছিস। আমার কথা শুনছিস না!”

—-“তুমি না আস্ত এক্টা খারাপ লোক। আম্মুকে এসব বললে আম্মু কি ভাববে?”

জায়ান কিছুটা ব্যঙ্গ করে বলল,,,,,,

—-“আমি তো আর ভেঙ্গে বলব না যে শ্বাশুড়ী আম্মা আপনার মেয়ে আমাকে আদর করতে দিচ্ছে না। আমি বলব সম্পূর্ণ অন্যভাবে।”

—-“কিভাবে বলবে শুনি?”

—-“তোর জেনে কাজ নেই।”

কথাটা বলেই জায়ান তমার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। তমা চোখ দুটো বন্ধ করে জায়ানকে টাইট করে আঁকড়ে ধরল। আজ তমা ছোটাছুটি করছে না। উল্টো জায়ানকে সায় দিচ্ছে।

প্রায় দশ মিনিট পর জায়ান তমার ঠোঁট জোড়া ছেড়ে ঘন ঘন কয়েকটা শ্বাস ফেলে তমার বুকে মাথা রেখে বলল,,,,,,,

—-“তমু আজ মেবি তাহাফ ভাইয়া আসবে। আজ ই তো উনাদের বাড়ি ফেরার কথা। সাথে উনার আম্মু, আব্বু ও আসবে। কয়েকটা দিন হয়তো উনি পরিবারের সাথে সময় কাটাতে চায় তাই শাফিনকে বারণ করেছে এক সপ্তাহ যেনো উনার সাথে কোনো রকম যোগাযোগ না করে।”

—-“হুম। আমার ভীষণ ভয় লাগছে। তোমাকে এই বাড়িতে দেখে যদি তাহাফ ভাইয়া আরো ভাইলেন্ট হয়ে যায় তখন?”

#পার্ট_১৭
#নিশাত_জাহান_নিশি

—-“হুম। আমার ভীষণ ভয় লাগছে। তোমাকে এই বাড়িতে দেখে যদি তাহাফ ভাইয়া আরো ভাইলেন্ট হয়ে যায় তখন?”

—-“ভাইলেন্ট হলেই তো ভালো। নিশ্চয়ই আবার কোনো ক্রাইম করতে চাইবে। আর তখনই আমরা তাহাফকে হাতে নাতে ধরব। পরিবারের সবার সামনে তাহাফের নোংরা মুখোশটা টেনে খুলব। এক ঢিলে দুই পাখি শিকার হবে!”

—-“আমরা যদি আগে থেকে উনার ফন্দি ধরতে না পারি তখন?”

—-“তাহাফকে সর্বক্ষন চোখে চোখে রাখতে হবে। আমার মাথায় এক্টা আইডিয়া ঘুড়ছে।”

তমা অধিক আগ্রহ নিয়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“কি আইডিয়া?”

—-“সিসি ক্যামেরা!”

—-“মানে?”

—-“সিম্পল। তোদের পুরো বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে। এতে করে আমরা তাহাফের প্রতিটা মুভমেন্ট সম্পর্কে জানতে পারব। তাহাফ কোনো ক্রাইম করার আগেই আমাদের চোখে ধরা পড়ে যাবে। আর স্বাক্ষীস্বরূপ রয়ে যাবে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ।”

তমা অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“তোমার মাথায় এতো আইডিয়া কীভাবে আসে? আমি রীতিমত অবাক হয়ে যাচ্ছি।”

জায়ান বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,,,,,

—-“তোর জামাই বলে কথা আইডিয়া তো থাকবেই!”

—-“ধ্যাত, আমি তো আস্ত এক্টা উল্লুক। তোমার অতো জিনিয়াস না।”

—-“আমি জিনিয়াস হলে আমার বউ ও জিনিয়াস। কিভাবে জানিস?”

—“কিভাবে?”

—“লোক যদি আমাকে জিনিয়াস বলে তাহলে তুই কি হবি?”

—-“জিনিয়াসের বউ!”

—-“তো কথাটা কি দাঁড়ালো?”

—-“আমি ও জিনিয়াস?”

—-“অভেয়েসলি। আমি জিনিয়াস হলে আমার বউ ও জিনিয়াস। কজ, আমার বউ আমার অর্ধাঙ্গিনী।”

তমা মুচকি হেসে জায়ানের দিকে তাকালো। জায়ান তমার কপালে চুমো খেয়ে সোজা বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো। তমা বিছানা থেকে ছেড়ে উঠে কম্বলটা ভাঁজ করে বিছানা গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। এর মাঝেই তমার ফোন বেজে উঠল। তমা ফোনটা ডেস্কের উপর থেকে তুলে চোখের সামনে ধরতেই ফোনের স্ক্রীনে লিমা নামটা জ্বলজ্বল করে উঠল। তমা এক গাল হেসে কলটা রিসিভ করে এক নিশ্বাসে বলে উঠল,,,,,,,,,

—-“হায় লিমা। কেমন আছিস?”

লিমা কিছুটা রেগে বলল,,,,,,,

—-“ওহ্ আচ্ছা এখন আমি ফোন দেওয়াতে হায় লিমা, কেমন আছিস, কি করছিস এসব বলতে মন চাইছে? কই এর আগে তো নিজের থেকে আমাকে ফোন দিলি না!”

—-“আর বলিস না বাড়িতে আসার পর থেকেই একের পর এক লেগে আছে। এক্টু যে শান্তিতে বসে তোর সাথে কথা বলব ঐ সময়টা ও পাচ্ছি না!”

—-“কি এমন লেগে আছে যার জন্য তুই এতো ব্যস্ত?”

—-“সে অনেক কথা। ফোনে এতো কিছু বলা যাবে না। দেখা হলে সামনাসামনি বলব।”

—-“ধ্যাত কবে না কবে দেখা হয়।”

—-“হ্যাঁ রে। আমার তো মনে হচ্ছে আর কোনোদিন দেখা ই হবে না!”

—-“মানে কি? বাড়ি থেকে বিয়ে টিয়ে দেখছে নাকি?”

তমা মুখটা ভাঁড় করে বলল,,,,,,

—-“আর দেখা। বিয়ে তো সেই সাত বছর আগেই হয়ে গেছে।”

লিমা চরম আশ্চর্যিত হয়ে বলল,,,,,,

—-“হোয়াট?”

—-“হ্যাঁ রে সত্যি বলছি। আমি ও এতো বছর আমারে বিয়ের সম্পর্কে কিছু জানতাম না। কাল জানতে পারলাম!”

—-“উফফফ আমার মাথা ঘুড়ছে। তোর কথার মাথা মন্ডু কিছুই বুঝছি না!”

—“সেজন্যই তো বললাম দেখা হলে সব বলব। ফোনে বললে কিছু বুঝবি না।”

—-“এই চল না চল একদিন দেখা করি। আমার আর তর সইছে না।”

—-“দোস্ত এখন না। কয়েকদিন পর। এখানে কিছু কাজ আছে। কাজ গুলো সেরে একদিন জায়ান ভাইয়াকে নিয়ে তোর সাথে দেখা করতে যাবো!”

—-“জায়ান মানে তোর হাজবেন্ড?”

—-“হুম।”

—-“নামটা খুব চেনা চেনা লাগছে। কোথায় শুনেছি বল তো?”

—-“আমার মুখ থেকেই শুনেছিস। জায়ান ভাইয়া আমার ফুফাতো ভাই!”

—-“ওহ্ আচ্ছা…….. মানলাম আপাতত জিজুর সাথে দেখা করাবি না অন্তত এক্টা ছবি তো দিবি? দেখে এক্টু প্রাণটা জুড়াই।”

—-“দাঁড়া হোয়াটস অ্যাপে সেন্ড করছি।”

—-“কাপল পিক ওকে?”

—-“এই না না। উনার সিংগেল পিক দিচ্ছি।”

—-“না বনু হবে না। কাপল পিক সেন্ড করবি। তাও আবার পাঁচ মিনিটের মধ্যে। না হয় তোর খবর আছে।”

কথাগুলো বলেই লিমা কলটা কেটে দিলো। তমা ফোনটা কান থেকে সরিয়ে কপাল চাপড়াচ্ছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,,

—-“হায় কপাল। এখন কিনা ঐ জায়ানের সাথে কাপল পিক তুলে বেস্টুকে সেন্ড করতে হবে। আমি সিউর পাঁজি জায়ান এখন দারুন ভাব নিবে। বলা যায় না….. হয়তো হরেক রকম কনডিশন ও ছুড়ে দিতে পারে।”

তমার বিড়বিড়ানির মাঝেই জায়ান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে গেলো। টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে জায়ান আয়নার সামনে দাঁড়ালো। জায়ান এখনো উন্মুক্ত শরীরেই আছে। আয়নার দিকে ভালো করে তাকাতেই জায়ানের চোখ গেলো ঠোঁটের কাছে তমার দেওয়া বাইটার কাছে। জায়ান চোখ দুটো বড় বড় করে পিছু ঘুরে তমার দিকে তাকালো। তমা ফোনে কিছু এক্টা করছে। হয়তো ছবি তোলার ফন্দি খুঁজছে। জায়ান বাঁকা হেসে তমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,,

—-“প্রকাশ্যেই তো রোমান্স করতে পারিস, কি দরকার লুকিয়ে লুকিয়ে ওসব করার? জামাই তো তোর ই। যখন মন চায় তখন আদর করবি। আমি অবশ্য রাগ করব না। উল্টো এন্জয় করব।”

তমা ফোন থেকে চোখ তুলে জায়ানের দিকে তাকালো। জায়ান হাত দিয়ে কামড়ের দাগটা তমাকে দেখালো। সাথে সাথেই তমা জিভ কেটে অন্য পাশে ফিরে গেলো। জায়ান বাঁকা হেসে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে তমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে তমার ঘাঁড়ে মুখ ডুবিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বলল,,,,,,,

—-“ভালো লাগছে খুব। জানিস আমার বিশ্বাস ই হচ্ছে না, তুই আমাকে আদর করে বাইট দিয়েছিস।”

তমা মাথাটা নিচু করে লজ্জামাখা কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“আমি কি ইচ্ছে করে দিয়েছি নাকি। হয়তো ঘুমের মধ্যে ওসব উল্টো পাল্টা করে ফেলছি।”

—-“ভুল করেই হোক বা ভালোবেসে বাইট তো দিয়েছিস। এতেই আমি সন্তুষ্ট।”

তমা অনেকক জোরাজুরি করে জায়ানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“আমার বেস্টু তোমাকে দেখতে চায়। তাই বলেছে এক্টা কাপল পিকচার সেন্ড করতে। তুমি কি রাজী?”

—-“রাজী তবে এক্টা শর্তে!”

তমা দাঁত কিড়মিড় করছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,

—-“জানতাম এই শয়তানটা নিশ্চয়ই কোনো না কোনো শর্ত রাখবে। যা পাঁজি এই ছেলে। আল্লাহ্ ই জানে এখন কি শর্ত দিয়ে বসে!”

তমা গলাটা ঝাঁকিয়ে মলিন হেসে বলল,,,,,

—-“কি শর্ত জায়ান ভাইয়া?”

জায়ান তমার দিকে এগিয়ে গিয়ে তমার কাঁধে দুহাত ঝুলিয়ে বলল,,,,,,

—-“আমাকে অনলি জায়ান বলতে হবে। ভাইয়া ওয়ার্ডটা কেটে দিতে হবে।”

তমা মুখটা কাচু মাচু করে বলল,,,,,,

—-“এতোদিনের অভ্যেস। পারব না আমি।”

—-“পারতে হবে তমু। বর কে ভাইয়া ডাকা যায় না।”

তমা মুখ ফুলিয়ে বলল,,,,,,

—-“আচ্ছা চেষ্টা করব।”

জায়ান মুচকি হেসে তমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে ক্যামেরা অপশনে গিয়ে তমাকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে পর পর দুটো ছবি তুলে ফোনটা তমার হাতে ধরিয়ে দিলো। এরপর জায়ান ওর ফোনটা পকেট থেকে বের করে সোজা বারান্দায় চলে গেলো। তমা হি হি করে হেসে লিমার হোয়াটস অ্যাপে দুটো ছবিই সেন্ড করে দিলো। ফোনটা বিছানার উপর রেখে তমা সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।

জায়ান বারান্দার গ্রীলে হাত রেখে খুব মনযোগ দিয়ে কারো নাম্বারে কল করছে। প্রথম কল করার সাথে সাথেই ঐ পাশ থেকে পুরুষালি কন্ঠে কেউ বলে উঠল,,,,,

—-“আসসালামু আলাইকুম ভাই। কেমন আছেন?”

—-“ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?”

—-“আলহামদুলিল্লাহ্। তো ভাই কি মনে করে ফোন দিলেন?”

—-“খুব ইর্মাজেন্সি এক্টা দরকারে তোমাকে কল করেছি। আই হোপ তুমি আমার হেল্প করবে!”

—-“অবশ্যই ভাইয়া। শুধু দরকার টা বলুন। দেখুন আমি কি করি!”

—-“বেশি কিছু করতে হবে না। তোমার শো রুম থেকে দশটা সিসি ক্যামেরা আমার শ্বশুড় বাড়িতে সেট করে দিতে হবে। হাতে বেশি সময় নেই। ধরো ঘন্টা খানিক!”

—-“চিন্তা করবেন না ভাই। ঘন্টা খানিকের আগেই আপনার কাজ হয়ে যাবে। আমি এক্ষনি শো রুম থেকে বের হচ্ছি। শুধু আপনি এড্রেসটা সেন্ড করেন!’

—-“থ্যাংকস ফারাবী। মেনি মেনি থ্যাংকস। আমি এক্ষনি এড্রেসটা ম্যাসেজ করে দিচ্ছি।”

—“ওকে ভাই। আল্লাহ্ হাফেজ!”

জায়ান কলটা কেটেই তমাদের বাড়ির এড্রেসটা ফারাবীর নাম্বারে সেন্ড করে দিলো। জায়ান ঠোঁট কাঁমড়ে বারান্দার গ্রীলে দাঁড়িয়ে আছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,,

—-“আশা করছি দশটা সিসি ক্যামেরা ফুটেজে পুরো বাড়িটা আমার চোখে চোখে থাকবে। দশটার বাইরে যদি আরো লাগে তাহলে না হয় ফারাবীকে ফোন করে কিছু এক্টা ব্যবস্থা করা যাবে। সবার আগে তাহাফদের ফ্ল্যাটে সিসি ক্যামেরা গুলো ফিট করে দিতে হবে। কজ তাহাফরা যে কোনো সময় চলে আসতে পারে। তাই যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।”

এসব চিন্তা ভাবনার মাঝেই তমা ওয়াশরুমের দরজা খুলে রুমে ঢুকল। তমা তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে জায়ানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,,

—“চলো নিচে যাই। ব্রেকফাস্ট করতে হবে।”

জায়ান কিছুটা ভাবুক হয়ে বলল,,,,,

—-“তুই যা। আমি আসছি।”

তমা কোমড়ে হাত দিয়ে নাক, মুখ কুঁচকে বলল,,,,,

—-“তোমাকে ছাড়া নিচে গেলে আম্মু আমার বারোটা বাজবে। কপালে আর ব্রেকফাস্ট জুটবে না।

জায়ান হু হা করে হেসে তমার কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,,

—-“চল। খেয়ে আসি। ক্ষিদে পেলে তুই আবার ভয়ংকরী হয়ে যাস। বলা যায় না হয়তো কাল রাতের মতো আমাকে কামড়ে কুমড়ে খেয়ে নিবি।”

তমা চোখ লাল করে জায়ানের মুখ চেঁপে ধরে বলল,,,,,,,

—-“চুপ করো। অসভ্য ছেলে। জাস্ট ডিসকাস্টিং লাগে। সবসময় শুধু উল্টো পাল্টা কথা মুখে লেগেই থাকবে।”

জায়ান ওর মুখ থেকে তমার হাতটা সরিয়ে বলল,,,,,

—“এতো রাগ হওয়ার কি আছে? ভুল তো কিছু বলি নি? কাল রাতে তো তুই আমাকে সত্যি সত্যিই কামড় দিয়েছিলি। অস্বীকার করতে পারবি?”

—“ধ্যাত।”

কথাটা বলেই তমা রাগ দেখিয়ে জায়ানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে শো শো বেগে রুম থেকে বের হয়ে সোজা নিচে চলে গেলো। জায়ান দাঁত বের করে হাসতে হাসতে তমার পিছু পিছু নিচে চলে গেলো। তমা আর জায়ানকে দেখা মাএই মিসেস আন্জ্ঞুমান টেবিলে ব্রেকফাস্ট সাজিয়ে দিলো। আজ ব্রেকফাস্টের আইটেম হলো মাটন বিরিয়ানী। বিরিয়ানী জায়ানের খুব পছন্দ। তাই মিসেস আন্জ্ঞুমান খুব ভালো করে স্পেশাল ভাবে বিরিয়ানীটা বানিয়েছে। বিরিয়ানী দেখা মাএই জায়ান হামলে পড়ল বিরিয়ানীর উপর। চেয়ার টেনে বসে জায়ান প্লেইটে বিরিয়ানী বাড়ছে আর লোভে জিভ চাঁটছে। তমা জায়ানকে এই রূপে দেখে নাক, মুখ কুঁচকে রেখেছে। জায়ান তমার দিকে একবার তাকিয়ে এক চামিচ বিরিয়ানী মুখে পুড়ে চোখ দুটো বন্ধ করে বলল,,,,,,,

—-“আঃহ্ গ্রেট। এওো টেস্টি বিরিয়ানী আমি বাপের জন্মে খাই নি। সাসু মা….আপনার হাতের জয় হোক। সেই লেবেলের টেস্ট হয়েছে বিরিয়ানীটা। পারলে আপনার হাত থেকে এক্টু জাদু আপনার মেয়ের হাতে ধার দিবেন। তাহলে রোজ এমন ইয়াম্মী বিরিয়ানী খেতে পারব।”

তমা মুখটা বাঁকা করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“উহহহ। বয়ে গেছে আমার রোজ উনাকে বিরিয়ানী রেঁধে খাওয়াতে।”

মিসেস আন্জ্ঞুমান এক গাল হেসে তমার মাথায় গাড্ডা মেরে বলল,,,,,,

—-“জামাই তো ঠিকই বলেছে। রোজ ই তো খাওয়াবি। আমার জামাইয়ের যখন মন চাইবে তখনই রেঁধে খাওয়াবী। এখন আর কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। তাহাফ রা এক্টু পরেই চলে আসবে। রান্না বসাতে হবে। তুই হাতে হাতে এক্টু কাজ করে দিস। আমি একা একা সামলাতে পারব না।”

তমা মুখে বিরিয়ানী পুড়ে চোখ দুটো বড় বড় করে জায়ানের দিকে তাকালো। জায়ান চোখ মেরে তমাকে ইশারা করে বুঝালো টেনশান না করতে। জায়ান সব ব্যবস্থা করে রেখেছে।

প্রায় পনেরো মিনিট পর,,,,,,

জায়ান দ্রুত খেয়ে দেয়ে সিঁড়ি বেয়ে সোজা রুমে ঢুকে গেলো। পকেট থেকে ফোনটা হাতে নেওয়ার সাথে সাথেই ফারাবীর কল এলো। জায়ান চট জলদি কলটা রিসিভ করার সাথে সাথেই ঐ পাশ থেকে ফারাবী বলে উঠল,,,,,,,,

—-“ভাই আমি তো গেইটের সামনে। গেইটের ভিতর কি ঢুকব?”

—-“ওয়েট, ওয়েট আমি আসছি। তুমি গেইটের বাইরেই থাকো।”

কথাগুলো বলেই জায়ান ফোনটা হাতে নিয়ে দৌঁড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা গেইটের বাইরে চলে গেলো। ফারাবীর হাত থেকে সিসি ক্যামেরা গুলো নিয়ে জায়ান ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে ফারাবীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে সোজা বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। জায়ান খুব সর্তকতার সাথে ড্রইং রুম ক্রস করে তিনতলায় উঠে গেলো। তাহাফদের ফ্ল্যাটের সব গুলো চাবি নিয়ে তমা জায়ানের পিছু পিছু তিন তলায় উঠে গেলো।

তমা ফ্ল্যাটের দরজা গুলো খুলে দিচ্ছে আর জায়ান রুমে ঢুকে ঢুকে খুব সর্তকতার সাথে সিসি ক্যামেরা গুলো ফিট করে দিচ্ছে। পর পর পাঁচটা সিসি ক্যামেরা তাহাফদের পুরো ফ্ল্যাটে ফিট করে দেওয়া হলো। এরপর জায়ান আস্তে করে তাহাফদের ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে তমার হাত ধরে দ্রুত পায়ে নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে গেলো। জায়ান এবার তমার রুম থেকে শুরু করে তমাদের পুরো ফ্ল্যাটে আরো পাঁচটা সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে দিলো। জায়ান আর তমা খুব সাবধানে ওদের কাজ করে যাচ্ছে। বাড়ির কাউকে কিছু বুঝতে দিচ্ছে না। কেউ কিছু বুঝতে পারলেই ক্যাচাল হয়ে যাবে। কারণ, দেয়ালের ও কান আছে।

তমা আর জায়ান যেই না ওদের কাজ শেষ করে ড্রইং রুমে সোফায় ধপ করে বসল অমনি তাহাফের পরিবার এসে ড্রইং রুমে হাজির হয়ে গেলো।

#চলবে…….