হ-য-ব-র-ল পর্ব-৪+৫

0
2453

#গল্পের_নাম:|| হ-য-ব-র-ল ||
#লেখনীতে:অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব______ (০৪+০৫)

‘রোদ্দুর হিম,আপনি কি সত্যি সত্যি চোরের ভূমিকায় অভিনয় করবেন এবং থাপ্পড় খাবেন?’

রোদ্দুর প্রফুল্ল চিত্তে বলল,

‘ক্ষতি কি!আগেই লাফ দিয়ে তো নারকেল গাছে উঠা যায় না!আগে কচু গাছে উঠতে হয়,ডালিম গাছে উঠতে হয়,আম গাছে উঠতে হয়।তারপর নারকেল গাছ!কি বলো?’

‘কিছু বলি না।গেট আউট!এক্ষুণি আমার সিট ছাড়ুন!’

‘এমন করছো কেন অজান্তা?’

অহি জোড় গলায় বলল,

‘আমি আপনার মুখ দেখতে চাই না!’

‘এত হ্যান্ডসাম একটা মুখ তুমি দেখতে চাও না অজান্তা?কি দুঃখ!আমি এক্ষুণি এসিড ঢেলে মুখ পুড়িয়ে ফেলবো।তোমার কাছে এসিড হবে?’

অহি হতাশ!হতাশের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে সে।এই ছেলের পিছু ছাড়াতে চাইলে টোটালি ইগনোর করতে হবে।সে আর কথা বাড়াল না।চুপ করে সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করলো।

অহির এমন চুপ হয়ে যাওয়াতে রোদ্দুর চমকিত হলো।সে বেশ আয়েস নিয়ে অহির দিকে ঘুরে বসলো।গালে হাত রেখে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অহির মুখের দিকে চেয়ে রইলো।

কিছুক্ষণ পর অহি বিরক্তি নিয়ে এক চোখ খুললো।উদ্দেশ্য রোদ্দুরের কর্মকান্ড পরখ করা!চোখ খুলতে বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো।রোদ্দুর অনেকটা কাছে চলে এসেছে তার!রোদ্দুরকে এভাবে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে অস্বস্তিতে ভরে গেল!হিমশিম খেয়ে দু চোখ খুললো সে।রোদ্দুরের চোখ দুটোর সাথে চোখ পড়তে তার ভেতরে কেমন একটা অজানা স্রোত বয়ে গেল।ভেতরে কিছু একটার পরিবর্তন হলো।সেই কিছু একটা যে কি তা বোঝার আগেই রোদ্দুরের কাঁধে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।তোতলানো স্বরে বলল,

‘ক-কি করছেন?’

রোদ্দুর যেন নিজের মাঝে ফিরলো।আড়মোড়া ভেঙে একটা লম্বা হাই তুলল।হেলাফেলা স্বরে বলল,

‘কিছু করছিলাম নাকি?’

অহি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।এলোমেলো দৃষ্টিটা রোদ্দুরের উপর থেকে সরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে নিক্ষেপ করলো।মুখটা জানালার কার্নিশে রাখতেই মুখে অযাচিত হাসির বন্যা বয়ে গেল।তার হার্টবিট বেড়ে গেছে।বুকের দুই ইঞ্চি নিচে থাকা মন নামক বস্তুটার নড়নচড়ন টের পাচ্ছে।অবাক হয়ে লক্ষ্য করছে যে, রোদ্দুর হিম নামক এই ঝামেলাটাকে তার ভালো লাগছে,তার পাগলামি ভালো লাগছে,খাপ ছাড়া কথা ভালো লাগছে,সব ভালো লাগছে।তার দীর্ঘ ২৬ বছরের জীবনে কোনো ছেলেঘটিত বিষয় ঘটেনি।ছোটবেলা থেকে ভীষণ পড়াকু মেয়ে বলে ছেলেরা একটু দূরে দূরেই থাকতো।এই প্রথম একটা ছেলে তাকে এতভাবে ডিস্টার্ব করছে।তার মনে হলো,এরকম নিশুতি রাতে,কারো কাঁধে মাথা চেপে,কারো আঙুলের ভাঁজে আঙুল রেখে ট্রেন জার্নি করার জন্য হলেও একটা নিজের মানুষ চাই!খুব আপন মানুষ চাই।হৃদয়ের খুব কাছে যার বসবাস হবে!

পাশের সিট থেকে কোনো আওয়াজ আসছে না।রোদ্দুর কথা বলছে না কেন?অহি আস্তে করে মাথা তুলে আড়চোখে একবার তাকাল।দেখলো রোদ্দুর ঘুমিয়ে পড়েছে।

ওড়নাটা ঠিক মতো গলায় জড়িয়ে অহি সোজা হলো।এতটা সময় ধরে উপরে অনেক স্ট্রং থাকলেও ভেতরে ভেতরে লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছিল সে।ঠিকমতো রোদ্দুরের দিকে লজ্জায় তাকাতে পারেনি!

সে সিটে মাথা রেখে রোদ্দুরের ঘুমন্ত মুখের দিকে অপলক চেয়ে রইলো।ছেলেটা ঠিকই বলেছে।এমন হ্যান্ডসাম মুখের দিকে কেউ তাকিয়ে না থেকে পারবে না!

ফর্সা ত্বক, কুঞ্চিত ভ্রু যুগল,খাড়া নাক,পাতলা ঠোঁট,খোঁচা খোঁচা দাড়ি,গালের একপাশে টোল খাওয়া অনিন্দ্য সুন্দর মুখোশ্রী!মাথার চুলগুলো এলোমেলো বাতাসে অগোছালো হয়ে আছে।পরণে মেরুন রঙের শার্টের উপর কালো ব্লেজার দেখা যাচ্ছে!অহির হার্টবিট দ্বিগুণ বেড়ে গেল।না চাইতেই মন দরজায় ইচ্ছেরা কড়া নাড়লো।একবার রোদ্দুরের চুলগুলো ছুঁয়ে দেয়ার ইচ্ছে, তো একবার গালে হাত ছোঁয়ার ইচ্ছে!ইচ্ছেদের পাত্তা দিল না সে।দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল।

ঠোঁট কামড়ে সে হাসি থামানোর চেষ্টা করছে।মনের ভেতর নতুন অনুভূতির জোয়ার।সে জোয়ারে পাল তোলা নৌকার মতো ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে সূদূরে।রোদ্দুর হিমের গন্তব্যে!

অহি আবার মুখ ঘুরিয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকালো।কি অদ্ভুত মানুষের অনুভূতি।মাত্র চার-পাঁচ ঘন্টার মতো ছেলেটার সাথে তার পরিচয়।তার পাগলাটে আচরণের সাথে পরিচয়! অথচ এই মুহূর্তে তাকে সবচেয়ে আপন মনে হচ্ছে। সবচেয়ে কাছের মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে এর বসবাস হৃদয়ের খুব কাছে!এই যে মানুষটা তার পাশে বসে গভীর ঘুমে,এই ঘুমকেও তার হিংসে হচ্ছে।

মেডিকেলের দ্বিপক স্যার একবার সাইকোলজি নিয়ে কথা বলেছিল।কথা বলেছিল মানব মন নিয়ে।বলেছিল, মানব মন বড় অদ্ভুত!এর উপর ফিজিক্সের সূত্র খাটে না!খাটে না মডার্ণ সাইন্স বা ওল্ড সাইন্স।এর সমীকরণ গুলো বড় বিচিত্র।যা যন্ত্রপাতিতে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবে,তোমার পায়ে পা ফেলে দীর্ঘ একটা পথ পাড়ি দেয়া মানুষটার প্রতি তোমার আলাদা কোনো অনুভূতি জন্মাবে না।বছরের পর বছর একত্রে চলাফেরা করেও তার মায়ায় জড়াবে না।আবার হুট করে মাত্র কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিটের ব্যবধানে একটা মানুষের প্রতি অদ্ভুত ফিলিংস জন্মাবে।তাকে বড্ড কাছের মনে হবে,আপন মনে হবে!তাকে নিয়ে ভাবনা সাজাতে ভালো লাগবে।এসব ব্যাপার সাইন্সের সূত্র দিয়ে বোঝানো মুশকিল!

অহি বড় করে দম নিল।সে কি সত্যি সত্যি অনুভূতির জালে ফেঁসে গেল?হয়তো!এত সুখ সুখ কেন অনুভূতি হচ্ছে?সে ঠোঁটের কোণে অথই হাসি নিয়ে রোদ্দুরের কাছাকাছি এগিয়ে এলো।

ট্রেনের আশপাশের যাত্রীদের দিকে এক পলক চেয়ে সে ডান হাতটা উঁচু করলো।খুব সাবধানে সে হাতটা রোদ্দুরের মাথার চুলে রাখলো।তার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠলো।যদি রোদ্দুর জেগে যায়?কি উত্তর দিবে?

তার ভাবনার মাঝে সমস্ত বগির কারেন্ট বন্ধ হয়ে গেল।হয়তো সম্পূর্ণ ট্রেনেই!চারিদিক থেকে তুমুল হইচই এ কান ঝালাপালা অবস্থা।সে তুমুল হল্লা রোদ্দুরের কানে যেতে সে অস্ফুট একটা শব্দ করলো।এক ঝটকায় অহিকে জড়িয়ে ধরে কম্পমান কন্ঠে বলল,

‘অজান্তা,কি হয়েছে?ক-কি হয়েছে?ডা-ডাকাত পড়েছে নিশ্চয়ই!’

রোদ্দুরের শরীর থরথর করে কাঁপছে।ভয়ে নাকি অন্য অনুভূতিতে তা অহি বুঝতে পারছে না।সে স্পষ্ট সুর তুলে বলল,

‘আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?’

রোদ্দুর উত্তর দিল না।তবে তার হাত দুটো আরো শক্ত হয়ে আসলো।অহির চোখ দুটো অন্ধকারে বড় বড় হয়ে গেল।জীবনে প্রথম কোনো পুরুষের এতটা কাছাকাছি এসে দমবন্ধ অবস্থা।সব কথার খেই হারিয়ে ফেললো যেন।এলোমেলো সুরে কোনো রকমে বলল,

‘ছাড়ুন!দূরে যান।প্লিজ!’

রোদ্দুর ছাড়লো না।আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে নিল।দেড়-দুই মিনিটের মাথায় সমস্ত বগি আলোকিত করে লাইট জ্বলে উঠলো।রোদ্দুর ঝট করে অহিকে ছেড়ে আশপাশে নজর বুলাল।অহি ঝিম মেরে বসে আছে।আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিল।

রোদ্দুর বুকে হাত চেপে বিড়বিড় করে কিছু একটা বললো।তারপর টেনে টেনে বলল,

‘অজান্তা,আর ভয় নেই!কারেন্ট চলে এসেছে।ভয় পেও না।’

অহি চমকে রোদ্দুরের মুখপানে তাকাল।সে ভয় পেয়েছিল নাকি?কই!নাতো!ভয় যা পেয়েছিল সেটা তো রোদ্দুরের আচমকা স্পর্শে।সে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

‘আপনার কি মনে হয় অন্ধকার আমি ভয় পাই?মৃত মানুষের হার্ট,ফুসফুস,কিডনি, হাড়গোড় আর কঙ্কাল নিয়ে রাতের পর রাত জেগে পড়েছি।কখনো কখনো ঘুম থেকে উঠে দেখেছি হাতে মৃত মানুষের চোখ!মর্গে মানুষ কেটেছি!এসব করার পরও আপনার মনে হয় আমি কারেন্ট চলে গেলে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যাব?’

রোদ্দুর মিইয়ে গেল।অহিকে সে কি করে বলবে যে আচমকা হইচই এ সে নিজেই ভয় পেয়ে গেছিল।ভয় পেয়ে একমাত্র অবলম্বন অহিকে জড়িয়ে ধরেছিল!

সে হাঁসফাঁস করতে বাচ্চা একটা ছেলে এসে তাকে উদ্ধার করলো।পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল,

‘পানি লাগবো আপনাগো?’

রোদ্দুর টাকা বের করে বাচ্চাটির হাতে গুঁজে দিল।বিনিময়ে একটা পানির বোতল নিল।বোতলের ছিপি খুলে অহির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

‘পানি খাও অজান্তা।’

অহি নির্দ্বিধায় পানির বোতল হাতে নিল।বোতল উঁচু করে কয়েক ঢোক পানি খেল।খোলা বোতলটা রোদ্দুরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

‘আমার বাবা কোথায় জানেন?’

‘হুঁ জানি!আমার বাবার সাথে লুডু খেলছে।আঙ্কেলই তো বললো যে তুমি এখানে আছো এবং তোমাকে দেখেশুনে রাখতে বলেছে।’

শেষের কথাটি লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বললো রোদ্দুর।বলেই সে এক চুমুকে সম্পূর্ণ বোতল খালি করে ফেলল।

মিষ্টি একটা মহিলা কন্ঠ বেজে উঠলো।মিহি সুরের ঝংকার তুলে কথা বলছে।কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রেন স্টেশনে থামবে।কয়েক মিনিটের যাত্রা বিরতি!

রোদ্দুর অহির দিকে চেয়ে বলল,

‘অজান্তা,আমায় উঠতে হবে।এই স্টেশনে শ্যুটিং হবে!তুমি কি যাবে আমার সাথে?’

‘না!’

‘ঠিক আছে।ইয়ে মানে তুমি না গেলেই আমার জন্য সুবিধা।আশপাশে তুমি থাকলে আমি লজ্জা পাব।’

‘আমাকে দেখে লজ্জা পাওয়ার কি আছে?’

রোদ্দুর তার উত্তর দিল না।উপদেশ দেয়ার ভঙ্গিতে বলল,

‘অজান্তা,জানালা দিয়ে প্রচুর বাতাস আসছে।জানালার সিট ছেড়ে এপাশে এসে বসো।আর এখানে ঘুমিয়ে পড়ো না।মা তোমায় দেখা করতে বলেছে।একটুপর কেবিনে যেও!আমি আসছি!আর এটা গায়ে দাও!’

অহিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রোদ্দুর গায়ের ব্লেজারটা খুলে ফেলল।অহির পাশের সিটে রেখে হাত নেড়ে বগি থেকে বের হলো।

৫.

স্টেশনে ট্রেন থেমেছে।প্রচুর মানুষ ছোটাছুটি করছে।এসি বগির সামনে আরো বেশি ভিড়!চিত্র নায়িকা পলি মজুমদারকে পাবলিক প্লেসে দেখার লোভ সামলাতে পারছে না কেউ। সাথে ফ্রি তে শ্যুটিং দেখার পর্বটা কেউ মিস করতে চায় না।সেজন্য উপচে পড়া ভিড়!

স্টাফের লোকজন লাইট,ক্যামেরা,যন্ত্রপাতি ঠিকঠাক করছে।তাদের থেকে কয়েক হাত দূরে চেয়ারে বিরস মুখে বসে আছে ডিরেক্টর আলতাব মৃধা!চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ!ইনিও একজন নামকরা ডিরেক্টর।তার ছবি মানেই হিট!

সাদা পোশাকের এটেনডেন্ট মোখলেছুর রহমান এসে বিনিত কন্ঠে বলল,

‘স্যার,চা বা কফি জাতীয় কিছু পান করবেন?’

আলতাব মৃধা বিরক্তি নিয়ে বললেন,

‘আপনাদের তো বললাম এনাউন্সমেন্ট করে দিন যে ট্রেনে কিছু টেকনিক্যাল ত্রুটি দেখা দিয়েছে।ঠিক করতে আধ ঘন্টা সময় লাগবে।এ সময়ে কেউ বাইরে বের হবেন না।কিন্তু আপনারা কি করলেন?এই ট্রেন থেকে সবাই এসে ভিড় জমাচ্ছে সাথে আশপাশের আত্মীয় স্বজনকে ফোন দিয়ে আসতে বলছে।কি বিদঘুটে পরিস্থিতি!’

মোখলেছুর রহমান বিনীত স্বরে মাফ চাইলেন।তারা তাদের চেষ্টার ত্রুটি করেননি।কিন্তু পাবলিক ঠিক টের পেয়ে গেছে।এরা বাঙালি জাত!ছুঁচো জাত!গন্ধ শুকে বলে দিতে পারে কোথায় কি ঘটছে।

মোখলেছুর রহমান বিদায় হতে আলতাব মৃধা উঠে দাঁড়ালেন।স্টাফকে ধমকে ধামকে কাজ তাড়াতাড়ি করতে বললেন।প্রায় সঙ্গে সঙ্গে পলি মজুমদার এসে হাজির হলো।তার মেক-আপ কমপ্লিট!একজন স্টাফ এসে চেয়ার এগিয়ে দিল।নায়িকা চেয়ারে বসতে পাবলিক দের মধ্যে হুল্লোড় পড়ে গেল।সেই চেঁচামেচি ছাপিয়ে কেউ একজন বলল,

‘স্যার আমি হাজির!’

আলতাব মৃধা তাকিয়ে দেখলেন রোদ্দুর নামের সেই ছেলেটা।এত সুন্দর মুখোশ্রীর একটা ছেলে চোরের ভূমিকায় অভিনয় করবে বলে তিনি কিছুটা ব্যথিত হলেন।তার এই ছবির নায়কের চেয়ে এই ছেলের চেহারা সুরত সুন্দর।তিনি পকেট থেকে সিগারেট বের করে বললেন,

‘লাইটার হবে?’

‘স্যার আমি সিগারেট খাই না।তবে আপনি চাইলে লাইটার যোগাড় করে দিতে পারি!’

‘থাক,লাগবে না।রিহার্সেল করেছ তো?’

‘জ্বি স্যার!’

শ্যুটিং শুরু হয়ে গেছে।চারিদিকে পিনপতন নিরবতা।এর মধ্যে আলতাব মৃধা চেঁচিয়ে বললেন,

‘সবাই রেডি?’

সবাই একসঙ্গে মাথা নাড়তে তিনি বললেন,

‘লাইট,সাউন্ড,রোল….’

পলির মুখের উপর এসে আলো পড়লো।সঙ্গে সঙ্গে আলতাব চিৎকার করে বললেন,

‘স্পিড,অ্যাকশন!’

রোদ্দুর চুপিচুপি এসে পলির পাশে থেকে ট্রলি নিয়ে দিল ভো দৌঁড়।পেছন পেছন পলি দৌঁড়াচ্ছে।ওর পিছে পিছে স্ক্রিপ্ট হাতে ছুটছে প্রম্পটার।মৃদুস্বরে ডায়লগ মনে করিয়ে দিচ্ছে।শ্যুটিং স্পটের দৃশ্য যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে।দূর থেকে সেই দৃশ্য দেখে অহি মনে মনে ভাবলো,রোদ্দুরের মতো এত নিঁখুত অভিনয় কেউ করতে পারবে না!

৬.

ট্রেন চলছে মৃদু ঝংকার তুলে।লিরা আপুর কেবিন থেকে বের হয়ে অহি নিজের কেবিনের দিকে এগোল।রোদ্দুরের পরিবারের প্রতিটি মানুষ তাকে এতটা আপন করে নিয়েছে যে সে কেমন ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে।এত ভালো মানুষ হয়?একটা পরিবারের সবাই একত্রে কি করে এতটা ভালো হয়?

প্রসন্ন চিত্তে সে দরজা টেনে নিজের কেবিনে ঢুকলো।সঙ্গে সঙ্গে তার পিলে চমকে উঠলো।রোদ্দুর গালে হাত রেখে বসে আছে।অহি বিস্মিত কন্ঠে বলল,

‘আপনি?’

রোদ্দুর দুঃখী কন্ঠে বলল,

‘অজান্তা,আমার গাল দুটো ব্যান্ডেজ করে দাও!এক গালে তুমি থাপ্পড় মেরেছো,আরেক গালে পলি মজুমদার।তোমার টাতে ব্যথা পাইনি।কিন্তু ওই বেহায়া মেয়ে এমন জোরে থাপ্পড় মেরেছে যেন এটা শ্যুটিং নয়।আমি সত্যি সত্যি ওর ট্রলি চুরি করেছি।তুমিই বলো!এত বদমাইশ মেয়ে হয়?’

(চলবে)