#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part_11+12
ডে,নাইট রেস্টুরেন্ট এন্ড হোটেলে বিভিন্ন রঙের বাতি জ্বলছে। ফুল দিয়ে হোটেলের ভেতরটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে । আলতাফ চৌধুরীর তিন নাতির বিয়ে বলে কথা। আলতাফ চৌধুরী আজ ভীষন খুশি।
.
.
বক্স খুলে শুধু মাত্র একটি পেনড্রাইভ দেখতে পেল। হাতে উঠিয়ে এপার,ওপার ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো সিমি । কপাল বাজ করে নিধি,রিমিও তাকিয়ে আছে।
-“এটা কী?” রিমি বলে অবাক কন্ঠে ।
-“এটা দিতে চেয়েছিল নীল।” সিমি বলে।
-“বুঝতে পারছি না কিছু?” নিধি বলে।
-“এটা অন করে দেখি, কী বলিস?” রিমি বলে।
-“হ্যাঁ! চল,এটা অন করে দেখি। কিন্তু কিভাবে? ল্যাপটপ তো নেই?” সিমি ওঠে দাঁড়িয়ে বলে।
-“কেন? টিভি আছে না ।”
-“ওহ হ্যাঁ! দে আমাকে আমি লাগাচ্ছি।” বলেই নিধি পেনড্রাইভ নিয়ে টিভির পিছনের ডিশেরলাইনের তার খুলে,পাশের ফাকা জাগায় পেনড্রাইভ লাগিয়ে দিল। রিমুট চেপে টিভি অন করার সাথে সাথে একটি মাক্স পড়া লোকের চেহারা ভেসে ওঠে। ওরা বিস্ময় চোখে তাকায় লোকটির দিকে। লোকটির মুখে মাক্স ও কালো রঙের পোশাক পড়া ছিল। ওরা একজন আরেক জনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। হুট করেই লোকটির কন্ঠের স্বর ভেসে আসল,
-“হ্যালো গার্লস। হ্যাঁ! তোমাদের তিনজন কেই বলছি। তোমাদের নাম রিমি,সিমি,নিধি। এই হোটেলে সিমি ও নিধি তোমরা দু’জন কাজ করো।আর রিমি ফুলের ডেকোরেশনের কাজ করে মেবি। তোমরা এতিম। আর আজ তোমাদের বিয়ে হচ্ছে।”
আশ্চর্যের চড়ম পর্যায় পৌঁচ্ছে গেছে ওরা তিন জন। কে এই লোকটি? ফট ফট করে ওদের সম্পর্কে কিভাবে বললো? আগে থেকেই কী লোকটি ওদের বিষয় জানত? নাকি ওদের চিনে?
লোকটি চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়িয়ে দু কদম হেঁটে বলল,
-“জানি অবাক হচ্ছো তোমরা? আমি ক্লিয়ার করে বলছি শোনো? তার আগে এটা বলে নেই! তোমাদের যার সাথে বিয়ে হচ্ছে তারা কিন্তু ক্ষ্যাত নয়? না তারা গরিব? তার হলো থ্রি গ্যাংস্টার। নাম তো জানোই। শুনেছো বোধহয়। তারপরও বলছি, রুদ্র,অভ্র,শুভ্র। আলতাফ চৌধুরীর তিন নাতি।”
দম যেন বন্ধ হয়ে গেছে। চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে এক জন আরেক জনের দিকে তাকাচ্ছে। ভয়তে দুই তিনটি ঢোকও গিলা হয়ে গেছে ।
লোকটি বিশ্রী ভাবে হেসে আরো বলে,
-“ভয় করছে। নাকি আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি তোমাদের দেখতে পাচ্ছি না। তবে,আমি শিওর তোমরা ভয় পাচ্ছো।”
সত্যিই ভয় পাচ্ছে ওরা। প্রচণ্ড ভয় করছে। রিমি হাত টিভির দিকে ইশারা করে কাপা কন্ঠে বলে,
-“এই লোকটি মিথ্যা কথা বলছে। বিয়ে ভাঙ্গার জন্য এটা বলছে।”
সিমি,নিধি কথাই বলছে না। চুপ করে লোকটির দিকে, আরেকবার রিমির দিকে চোখ পিট পিট তাকাচ্ছে ।
লোকটি আরো বলে,
-“ওরা অনেক লোককে নির্মম ভাবে মেরেছে। কয়দিন আগে এক পুলিশ অফিসারকেও মেরেছে। শুধু তাই নয়। আমার ছেলেকেও মেরে ফেলেছে ওরা তিন জন। কিন্তু টাকা,আর ওদের পাওয়ারের কারণে সব কিছু নিঁখুদ ভবে দামা চাপা দিয়ে দেয়।” এখন লোকটি জোরে জোরে হাসছে লাগলো। হেসে হেসে বলে,
-“তোমাদের কে ওরা বোকা বানিয়েছে। ওরা নিজেদের আসল পরিচয় গোপন রেখে তোমাদের বিয়ে করতে চাইছে। হয়তো বিয়ের পর তোমাদের মেরেও দিতে পারে।”
কথাটা শুনে আরো ভয় লাগছে ওদের । হাত-পা ক্রমশ ঠান্ডা হয়ে আসছে।
-“আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না এখনো। তাহলে প্রথম থেকে মিলিয়ে দেখো। আর হ্যাঁ! বাঁচতে চাইলে এখনি পালাও। পালাও,পালাও হা হা হা ।”
লাস্টের কথাটা বলার সাথে সাথে টিভি বন্ধ হয়ে যায়। রিমি,সিমি,নিধি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে ওরা । শূন্যে ভাসছে মনে হচ্ছে । এত দিন তাহলে ওদের সাথে নাটক করেছিল? সবটা অভিনয় ছিল? কত ঝাড়ি,কত বকা দিয়েছে ওদের। তারপরও চুপ ছিল ওরা? কিন্তু কেন? প্রশ্ন? প্রশ্ন? প্রশ্ন? মাথায় জেঁকে বসেছে হাজারো প্রশ্ন? নিধি স্তব্ধ হয়ে পিছাতে পিছাতে বিড়বিড় করে বলে,
-“পালাতে হবে,পালাতে হবে আমাকে ।”
সিমি নিধির দু বাহু ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলে,
-“নিধি,নিধি নিজেকে শান্ত কর নিধি।”
নিধি দু হাত মুখের উপর দিয়ে কেঁদে কেঁদে বলে,
-“পালাতে হবে আমাকে। এ বিয়ে করতে পারব না আমি। পারবো না ওমরকে বিয়ে করতে ।”
রিমির চোখ পানিতে টলমল করছে। কান্না জড়িত কন্ঠে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ধোঁকা! ধোঁকা দিয়েছে ওরা আমাদের । আমাদের মন নিয়ে খেলা করেছে। মিথ্যা অভিনয় করেছে আমাদের সাথে। এই সব চক্রান্ত দাদুর ।”
সিমি রিমির কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“এগুলা বলার সময় নয় রিমি। এটা মাথায় রাখতে হবে? ওরা যেমন আমাদের ধোঁকা দিয়েছে । আমরাও তেমনি ওদের সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। ওরা আমাদের ছেড়ে দিবে না এর জন্য।”
নিধি উত্তেজিত কন্ঠে বলে,
-“পালাবো! এখন পালাবো। এই মুহূর্তে পালাবো আমরা। চল তোরা ।”
-“কিন্তু কিভাবে? ওদের লোকেরা……।” সিমি বলতে গিয়েও থেমে যায় । তারপর আবার অবাক কন্ঠে বলে,
-“তার মানে ঐ লোক গুলো ওদেরি লোকছিল। সেদিন শপিং মলে সাব্বির ওদের লোকদের সাথেই কথা বলছিল। এই লোক গুলোই সেই লোকটিকে মেরেছে।”
-“তাহলে তো ওদের লোক রা এই হোটেলের আশেপাশেই আছে। পাহারা দিচ্ছে।” জোরে নিঃশ্বাস টেনে বলে নিধি।
-“তারপরও পালাতে হবে আমাদের । আমি বলি শোন? এই হোটেলের কারেন্টের মেইন সুইচ বোর্ড কোথায় আছে আমি সেটা জানি। রিমি,নিধি তোরা বাহিরে ওয়েট কর আমার জন্য ।আমি মেইন সুইচ অফ করেই বাহিরে চলে আসবো।” সিমি বলে।
-“কিন্তু! যদি তোর কোনো বিপদ হয়।” নিধি বলে কান্না কন্ঠে ।
-“ভয় পাশ কেন? যা বলেছি তাই কর। তবে, তার আগে সাব্বির কে ফোন দিয়ে বলতে হবে আমাদের রেডি হতে আরো আধা ঘন্টা লাগবে। আধা ঘন্টা পর আসতে বলতে হবে ও’কে ।” সিমি বলে।
-“আমি বলে দিচ্ছি । ” রিমি বলে।
কাপা কাপা হাতে ফোন নিয়ে সাব্বিরকে আধা ঘন্টা পর আসতে বলে। নিধি,রিমি মুখে রুমাল দিয়ে ডেকে লিফট বাদে সিঁড়ি দিয়ে নিচে যেতে লাগলো। সিমি অন্য সিঁড়ি দিয়ে হোটেলের মেইম সুইচ বোর্ড রাখা রুমে যেতে লাগলো। রিমি,সিমি শেষের সিঁড়িতে এসে দেয়ালে লুকিয়ে পড়ে। আশেপাশে অনেক মেহমানরা আছে। মিডিয়ার লোকদেরও দেখা যাচ্ছে । সিমি লাইট অফ করার সাথে সাথেই বের হবে হোটেল থেকে ।
সিমি সেই রুমে প্রবেশ করে। এই রুমে কারো আশা যাওয়া নেই বললেই চলে। এখন সবাই ব্যস্ত। তাই এই রুমে আসার কোনো কারণেই নেই। সিমি ওর হাতের ফোনের ফ্লাশলাইট অন করল। তারপর বোর্ডের কাছে এসে সুইচ অফ করে দিল। নিভে গেল হোটেলের সব লাইট! সবাই আতঙ্কের মধ্যে পড়ে যায়। এই সুযোগে রিমি,নিধি দৌঁড়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে যায়। সিমিও টর্চের লাইট অন রেখে দৌঁড়াতে লাগলো। কিন্তু কী যেনো মনে করেই থেমে গিয়ে সেখান কার জানালা খুলে নিচে ঝাপ দিল। বাহিরে বেড়িয়ে এলো সিমি । নিধি,রিমি হোটেলের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল। হোটেলের ভেতর থেকে মানুষ জন দের চিৎকার চেঁচামেচি শুনা যাচ্ছে। সিমি রিমি,নিধির কাছে আসে। সিমিকে দেখে ওদের জান ফিরে আসে। সময় বিলম্ব না করে হাত ধরে দৌঁড়াতে লাগলো। কোথায় যাবে জানে না?
এদিকে লাইট বন্ধ থাকায় রুদ্র,শুভ্র,অভ্র বাহিরে চলে আসে। হোটেলের ম্যানেজার লোক পাঠায় মেইন সুইচের থাকা রুমে। স্টাফ ছেলেটি দেখতে পায় বোর্ডের সুইচ অফ করা। প্লেট খুলে সুইচ অন করে দিল। চারদিক আগের ন্যায় আলোকিত হয়ে গেল। রুদ্র সাব্বিরকে বলে রিমিদের রুমে যেতে। দেখতে ওরা কী করছে? রেডি হয়েছে কি না। সাব্বির ফাহিমকে সাথে নিয়ে লিফট বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। রুমের সামনে এসে কিছুটা অবাক হয়। কারণ রুমের দরজা খোলা ছিল আগে থেকেই । সাব্বির,ফাহিম রুমের ভিতরে প্রবেশ করে চার দিক তাকিয়ে রিমি,সিমি,নিধিকে খুঁজতে লাগলো।
সাব্বির উত্তেজিত কন্ঠে বলে,
-“ফাহিম্মা? হেরা কই গেলো?”
-“কেমনে কমু ভাই? রুমে তো দেখতেছিনা।” এদিক সেদিক তাকিয়ে বলল ।
-“ভাইদের কইতে হইবো। তু..তুই যা ভাই গো ডাকদিয়া নিয়া আয় এই রুমে । যা তাড়াতারি ফাহিম ।”
-“হ ভাই যাইতাছি।”
ফাহিম বেড়িয়ে গেল রুম থেকে । সাব্বির আশে পাশের রুম গুলোতে খুঁজে আবার এই রুরে ফিরে আসলো। দ্রুত রুদ্র দের রুমে গিয়ে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো ফাহিম । আলতাফ চৌধুরী তখন এই রুমেই ছিল। শুভ্র,রুদ্র,অভ্র ফাহিমকে এভাবে হাপাতে দেখে শুভ্র বলে,
-“এভাবে হাপাচ্ছিস কেন? কী হয়েছে তোর?”
-“দৌঁড়ের রেস লাগিয়ে এলি নাকি?” আলতাফ চৌধুরী বলেন।
ফাহিম জোরে নিঃশ্বাস টানতে টানতে বলে,
-“ভা…ভাই আফারা রুমে নাই। কই গেছে জানি না।”
কথাটা শুনেই ওরা বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। রুদ্র,অভ্র,শুভ্র এক সাথে বলে,
-“হোয়াট?”
-“মাথা ঠিক আছে তোর?”অভ্র বলে ঝাড়ি দিয়ে।
-” কী বলছিস?” রুদ্র বলে উত্তেজিত কন্ঠে ।
-“ভাই আমি ঠিক কইতাছি। আফারা রুমে নাই। আপনারা চলেন সেই রুমে।”
-“চল তোরা।” বলেই আলতাফ চৌধুরী রুম থেকে বের হলো। ওরা তড়িৎগতিতে এই রুমে এসে থম মেরে যায়। কারণ,টিভিতে সেই লোকটির ভিডিও দেখাচ্ছে। যেটা সাব্বির চালিয়েছে। সন্দেহজনক মনে করে বাক্সটা দেখে সাব্বির হাতে ন্যায়। এই রকম ব্লু রঙের খালি বাক্স শুভ্রকে মজা করে দিয়েছিল সাব্বির। বাক্সটির ভেরতে পুরাই খালি ছিল। এখন অদ্ভুত বিষয় বাক্সটি এখানে কিভাবে এলো? তখনি পাশে টিভির রিমুট দেখতে পায় সাব্বির। হাতে নিয়ে রিমুট দিয়ে টিভি অন করে। তখনি অচেনা লোকটির ভিডিও অন হয়ে যায়। রুদ্র,শুভ্র,অভ্র রাগে বার বার হাত মুঠ করছে। ওদের বুঝতে বাকি থাকে না লোকটি কে? আলতাফ চৌধুরী রাগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
-“বিপলপ তালুকদারের কাজ এটা। পালিয়ে গেছে ওরা। ওদের ধরে নিয়ে আসো।”
রুদ্র,শুভ্র,অভ্র দের সাথে সাব্বির গেলে আলতাফ চৌধুরী থামিয়ে দেয়। বলে,
-“সাব্বির তুই থাক । রুদ্র,শুভ্র,অভ্র তোমরা তিনজন একাই যাবে। আর ওদের তিন জনকে খুঁজে নিয়ে আসবে।”
সাব্বির যাওয়ার জন্য বায়না করে না। দাদুর কথা শুনেই হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ওদের গায়ে ছিল কালো রঙের শেরওয়ানি। সেটা পড়েই হোটেল থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়।
বর্তমান…
রিমি,নিধি,সিমি তিন জন তিন জনার হাত শক্ত করে ধরে খুব জোরে দৌঁড়াচ্ছে। পরনে হলুদের শাড়ি। বুঝাই যাচ্ছে বিয়ের আসর থেকে পালাচ্ছে। রিমি,নিধি,সিমির মনের মধ্যে ভয় । বুকের মধ্যে ধুক ধুক শব্দটা ক্রমশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতটাই জোরে দৌড়াচ্ছে তিন জন,রাস্তার মানুষ রা যে তাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, সেদিকে ওদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তারা যে উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে । কেন? কী কারণে এভাবে দৌঁড়াচ্ছে সেটাই তারা ভাবছে। হঠাৎ সামনে একটি সাদা রঙের গাড়ির তীব্র আলো দেখে ওরা থেমে যায়। দাঁড়াতেই জোরে জোরে নিঃশ্বাসে শব্দ আসতে লাগলো ওদের ভেতর থেকে। নিধি বলল,
-“রিমি,সিমি এই রাস্তা দিয়ে আয়।”
নিধির কথা মতো ঐ রাস্তা দিয়ে যেতেই এই রাস্তার মাঝখানে ওই একি রঙের সাদা গাড়ি দাঁড়ান দেখে। ওরা এটা দেখার পর থেমে যায়নি। অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে শুরু করল। ঐ রাস্তাত পাশেই বড় খোলা মাঠ ছিল। সম্ভবত খেলার মাঠ। ওরা ভুল করে সেই মাঠের ভেতরে ঢুকে পড়ে। রিমি,নিধি,সিমি পিছনে তাকিয়ে দেখে পিছন থেকে সাদা রঙের গাড়ি ওদের দিকে ধেয়ে আসছে। ওরা দৌঁড়ের গতি বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু কতইবা দৌঁড়ান যায়। শাড়ি পড়ে যে ঠিক মতো দৌঁড়ান যায় না। কিছু দূর দৌঁড়াতেই সেই সাদা রঙের একটি গাড়ি ওদের সামনে চলে আসে। ওরা থেমে যায়। ঐ গাড়ির পিছনে আরো দুটি গাড়ি এসে ওদের চারপাশ দিকে গোলগোল ঘুরতে শুরু করে। ওরা তিন জন গাড়ি তিনটির মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ি তিনটি দেখে ওদের বুঝতে আর বাকি নেই এটা কাদের গাড়ি বা এরা কারা। ভয় জড়ানো চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছে গাড়ি তিনটির দিকে। পিঠের সাথে পিঠ ঠেকানো,হাত এখনো ধরে আছে তিন জন,তিন জনার। এতক্ষন দৌঁড়ানোর ফলে গা দিয়ে ঘাম ঝঁড়ছে। কপালে,নাকে,থুতনিতে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। আতঙ্ক চোখে মুখে লেপ্টে আছে। হাত-পা কাঁপছে। গাড়ি তিনটি এখনো আগের ন্যায় গোল গোল ঘুরেই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে বেশ ক্রোধ নিয়ে গাড়ির ভেতরে থাকা মানুষ তিনটি জোরে জোরে গাড়ি চালাচ্ছে। এখন কী করবে? কোথায় পালাবে ? আর কেনই বা বাঘের গুহা থেকে পালাতে গেল? ক্ষিপ্ত বাঘ আরো বেশি ভয়ংকর রূপ ধারন করেছে। ফুটে উঠছে তাদের হিংস্রতা । ভয়তে আপনা আপনি পানি গড়িয়ে পড়ছে ওদের তিন জনার চোখ থেকে।
দৌঁড়ে ওরা বেশি দূর যেতে পারেনি। তার আগেই ধরে ফেলে ওরা। ফট করেই গাড়ি থেমে যায়। লাথি মেরে গাড়ির দরজা খুলে বেড়িয়ে আসে রুদ্র। তারপর শুভ্র বের হয়। শেষে অভ্র । ওদের তিন জনার সামনে এসে দাঁড়ায়। এতক্ষণ তো বুক ধড়ফড় করেছিল। এখন ভয়তে হার্ট বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে। রিমি,সিমি,নিধি খুব কাছ থেকে ওদের তিন জনকে দেখছে। এই কী সেই রাফি,নীল,ওমর? যারা কিনা ক্ষ্যাত সেজে থাকত! কথা না বলেই রুদ্র,শুভ্র,অভ্র ওদের তিন জনার হাত চেপে ধরল । জোরে টেনে গাড়ির কাছে নিয়ে আসে। রিমি,সিমি,নিধি কথা বলছে না। এই মুহূর্তে কথা বলা মানেই নিজের জান কুরবান করা। গাড়িতে বসিয়ে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাতে লাগলো রুদ্র। রিমি শক্ত হয়ে বসে আছে। যেভাবে গাড়ি চালাচ্ছে মনে হচ্ছে এক্সিডেন্ট হবে ।
অভ্র সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। রাগে ভেতর থেকে ফোস ফোস শব্দ বের হচ্ছে । নিধি মাথা নিচু করে বসে আছে। অভ্রর রাগ দেখে ওর খুব ভয় করছে।
সিমি চোখের পাতা পিটপিট করে পানি লুকাচ্ছে। সমানে কী হতে চলেছে সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছে। শুভ্রের চেহারা হিংস্র বাঘের রূপ ধারন করেছে। সেটা ওর দিকে না তাকালেও বুঝতে পারছে সিমি।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
Continue To……
#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part_12.
নদী ভাঙন দৃশ্য চোখে পড়তেই বুকের মাঝে হাহাকার করে ওঠে। ভাঙ্গা নদীর যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই পানি শুধু থৈ থৈ করে। রিমি,সিমি,নিধির বুকে আজ নদী ভাঙনের ন্যায় পুরো মনটাই ভেঙে গেছে। হ্যাঁ! ভালোবেসেছিল ওরা? নীল,রাফি,ওমরকে ভালোবেসেছিল। কোনো থ্রি গ্যাংস্টারদের নয়। একটু আগেই ওদেরকে হোটেলে নিয়ে এসেছে ওরা। ৪০০ নাম্বার রুমে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে রিমি,সিমি,নিধি। চোখের পানি ফোট কেঁটে গাল বেয়ে পড়ছে। ওদের সামনের সোফায় বসে আছেন আলতাফ চৌধুরী । রদ্র,শুভ্র,অভ্র অগ্নিমুর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাব্বির,ফাহিম তার অপর পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-“দাদু ওদের জিজ্ঞেস করো? কেন পালালো ওরা? সত্যিইটা আমাদেরকে জিজ্ঞেস করতে পারতো। পালানোর সিদান্ত কেন নিলো?”
-“জিজ্ঞেস করো দাদু ওদের।” ঝাড়ি দিয়ে বলে শুভ্র।
-“থামো! যাও এখান থেকে । আমি ওদের সাথে একা কথা বলতে চাই।”আলতাফ চৌধুরী গম্ভীর কন্ঠে বলে ।
-“যাব! বাট ওদের ভালো মতো বলে দিও । বিয়ে আমাদেরকেই করতে হবে। পালানোর চেষ্টা যেন না করে।” অভ্র রাগী কন্ঠে কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ওর সাথে শুভ্র ও রুদ্র বেরিয়ে যায়।
আলতাফ চৌধুরী ওঠে দাঁড়ায়। রিমি,সিমি,নিধি সামনে এসে প্রথমে রিমির হাত ধরে বিছানার উপর বসায়। তারপর সিমির হাত ধরে বিছানার বসায়। লাস্টে নিধিকে বসায়। ওরা তখনো হেচকি টেনে কেঁদে যাচ্ছে। সাব্বির সোফাটা একটু সামনে এগিয়ে দেয়। আলতাফ চৌধুরী বসে একটি দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়েন। তারপর ধীরে বলতে শুরু করেন,
-“আমার ভুল হয়েছে আমি এটা মানছি। কিন্তু রুদ্র,শুভ্র,অভ্র ওরাবোধ হয় তোমাদের ভালোবেসে ফেলেছে। এখন যদি তোমরা বিয়েটা না করো তাহলে ওরা জোর করে করবে সেটা বুঝতেই পারছো ওদের কথা শুনে। তাই………।”
আলতাফ চৌধুরীকে থামিয়ে রিমি ওঠে দাঁড়িয়ে বলে,
-“তাই? তাই কী দাদু? তাদেরকে বিয়ে করতে হবে? কেন? কেন করলেন আমাদের সাথে এমন? ও আমরা এতিম বলে? আমাদের কেউ নেই বলে? ভেবেছেন আমাদের সাথে এমন গেম খেললে বলার মতো কেউ থাকবে না? এটাই ভেবেছেন আপনি?”
-“এমন কোনো উদ্দেশ্যে আমার ছিল না। তোমরা খুব ভালো। তোমাদের সম্পর্কে আমি লোক লাগিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছি। ভালো লেগেছে আমার কাছে তোমাদের তিন জনকে। তাই আমার নাতিদের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। এ ছাড়া আমার বা আমাদের কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে ছিল না।” আলতাফ চৌধুরী মনিল মুখে কথা গুলো বলল।
-“দাদু! আমরা তো চাই না তাদের বিয়ে করতে । কেন বুঝতে পারছেন না আপনি।” কান্না জড়িত কন্ঠে বলে নিধি।
-“প্লিজ দাদু! আপনার নাতিদের বুঝান। আমরা আগের মতো জীবন কাঁটতে চাই। তাদের বিয়ের করার ইচ্ছে আমাদের নেই।” রিমি বলে কান্না কন্ঠে ।
-“এটা বোলো না। ওরা শুনতে পেলে…..। তোমরা যতটা খারাপ মনে করছো ওদের।ততটা খারাপ ওরা না। বিয়েটা হোক। আস্তে আস্তে সব কিছু জানতে পারবে।”
-“না দাদু! কোনো খুনিদের আমরা বিয়ে করতে পারবো না। অনেক লোকের প্রান তারা নিয়েছে। আমরা চাই না কোনো গ্যাংস্টার আমাদের স্বামী হোক। এ বিয়ে কথা সম্ভব নয় আমাদের পক্ষে।” নিধি চোখ মুছে বলে।
আলতাফ চৌধুরী দু হাত এক সাথে মিশিয়ে বলে,
-“আমি তোমাদের কাছে হাত জোর……..।”
-“না দাদু!” বলেই সিমি ওঠে দাঁড়ায় । হেঁটে জানালার সামনে এসে কার্নিশ ধরে অশ্রুশিক্ত নয়নে আকাশের দিকে তাকায় । রিমি ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে। নিধির কান্নার বেগ বেড়ে যায়। কী করবে বুঝতে পারছে না। দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় ওরা। সাব্বির, ফাহিম মুখ কালো করে তাদের কথা শুনছে। আলতাফ চৌধুরী মাথা নিচু করে ফেলে। এমন একটি পরিস্থিতিতে পড়বে সেটা তার জানা ছিল না। মনে মনে নিজেকেই দোষারোপ করছেন।কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি সামনে রিমি নাক টেনে বলে,
-“আমরা তোমার নাতিদের বিয়ে করব।”
সিমি,নিধি অশ্রুচোখে তাকায় রিমির দিকে। ওদের কিছু বলার নেই। এটা করা ছাড়া ওদের কাছে আর কোনো উপায় নেই। তাই রিমির উপর থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।
আলতাফ চৌধুরী কিছুটা খুশি হয়। খুশি মুডে বলে,
-“ধন্যবাদ তোমাদের। ধন্যবাদ! সাব্বির,ফাহিম রুদ্র,শুভ্র,অভ্র দের ট্রেজে যেতে বল। আমি সাথে করে নাতবউদের নিয়ে আসছি। ”
-“আইচ্ছা দাদু।” ফাহিম এক গাল হেসে কথাটা বলেই নিচে চলে যায় ।
আলতাফ চৌধুরী রিমি,সিমি,নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
কিছুক্ষণ পর….
রুদ্র,শুভ্র,অভ্র ট্রেজের সোফায় বসে আছে । ওদের পাশে রিমি,সিমি,নিধি মাথা নিচু করে বসে আছে। দাদু প্রথমে ওদের গালে হলুদ ছুঁয়ে দেয়। তারপর মেহমানরা একে একে ওদের গালে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে । সাব্বির,ফাহিমের নাচ কে দেখে! দু’জনই একে অপরের হাত ধরে নেচে যাচ্ছে । আহ! সে কী নাচ! তাও আবার ‘বাবা তোমার দরবারে সব পাগলের খেলা’ এই গানে। ওদের নাচ দেখে অনেকেই হাসা হাসি করছে। রুদ্র,শুভ্র,অভ্র রাও হাসছে। রিমি রা তো মাথা নিচু করে বসেছে তো বসেই আছে। উঠাবার নাম নেই। আলতাফ চৌধুরীও শেষে ওদের সাথে নাচে তাল মিলায়। বুড়ো মানুষ আর কতটুকোই বা নাচতে পারে। একটু পরে হয়রান হয়ে যাওয়ার যায়। নাচা বন্ধ করে দেয়। অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে প্রায় এগারোটা বেজে যায়। রিমি,সিমি,নিধি কোনো এক বাহানা দিয়ে রুমে চলে আসে। তারপর আর বের হয় না। রুমে এসেই রিমি,সিমি,নিধি হাতের চুড়ি,গলার সেট,নাকের নথ খুলে ছুঁড়ে মারছে ফ্লোরে। ভীষন রাগ হচ্ছে ওদের।
-“শুধু ওই দাদুর জন্যই রাজি হলাম বিয়েতে। আর না হলে। অভ্রকে বিয়ে করার কোনো শখ আমার নেই ।” রেগে কথা গুলো বলে নিধি।
-“পালাতেও পারবো না। আর না হলে ওদের কাছ থেকে পালিয়ে অনেক দূরে চলে যেতাম।” রিমি বলে।
-“শেষমেষ গ্যাংস্টার দের সাথেই বিয়ে হচ্ছে আমাদের । ভাবতেই মাথা ঘুরাই।” ধপ করে বিছানায় শুয়ে বলে সিমি।
-“ওদের জীবনটা তেজপাতা করে দিবো দেখিস।” রিমি নাক,মুখ ফুঁলিয়ে বলে।
-“আমার তো এটা ভেবে মাথা ঘুরাচ্ছে যদি কাল আমার সাথে উল্টা-পাল্টা কিছু করে বসে।” নিধি মাথায় হাত রেখে বসে।
-“ভালো কথা মনে করেছিস । কাল তো আমাদের বাসর। এখন?” রিমি বলে করুন কন্ঠে ।
-“এ্যা… এ্যা… এ্যা… এটা কী মনে করিয়ে দিলি রে? এখন কী করব আমি?” কান্না করে বলছে সিমি ।
-“কান্দে না বোন। একটা উপায় বের করতে হবে।” রিমি বলে ।
-“হ্যাঁ! উপায় বের কর। আর না হলে……শেষ।” নিধি গলায় হাত রেখে বলে।
-“কিন্তু এখন ঘুমাতে হবে। ঐ ভদ্রর বাচ্চা ভদ্রর জীবটা শুকনা পাতা বানাইয়া দিমু হু।” নিধি আঙুল জাগিয়ে বলে।
-“কিন্তু কিভাবে?” সিমি ভ্রু উঁচু করে ঘাড় কাত করে বলে।
-“ধুৎ! জানি না। ” নিধি বলে।
-“সর ঘুমাইয়া নেই আগে। ঘুম পাইয়াছে আমার ।” ওদের দু’জন কে সরিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল রিমি।
সিমি,নিধিও পাশে শুয়ে পড়ল।
.
.
.
কাঁচের টেবিলের উপরে সজোরে একটি ফুলের টপ আঁচাড় মারলো বিপলপ তালুকদার । ভেঙে চূর্ণ-বিচূর হয়ে ফ্লোরে বিছিয়ে গেছে।
-“আমরা প্লান সাকসেস হলো না। কেন? কিভাবে? বল,বল,বল?” রাগে চিৎকার করে বলে বিপলপ তালুকদার ।
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে তালুকদারের লোকেরা। জবাব তাদের কাছে নেই।
তালুকদার সান্ত কন্ঠে সোফায় বসে বললেন,
-“বিয়ে হবে,বিয়ে হবে ওদের। হোক! আমি দেখতে চাই ওরা সংসার কিভাবে করে। ওদের বউ তিনজনার মৃত্যু নিশ্চিত । মৃত্যু নিশ্চিত ।”
_________________________
সাব্বির ক্লান্ত শরীর নিয়ে কোনো রকম রুমে ঢুকে কম্বল মুড়ি দিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে।
গুন,গুন করে গান গাইতে গাইতে ইশা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে লাইট অফ করে বিছানায় এসে শোয়। এসি ছাড়া তাই হালকা ঠান্ডা লাগছে নিধায় গায়ে কম্বল টেনে নিল। ঘুমিয়ে যায় ইশা । কিছুক্ষণ পর সাব্বির অনুভব করে ওর গায়ের কম্বল সরে গেছে। চোখ বন্ধ করা অবস্থায় হাতিয়ে কম্বল জোরে টান দিয়ে বলে,
-“ফাহিম্মার বাচ্চা তোর গুষ্টি শষ্টি কম্বল দে হারামজাদা।”
ফট করে চোখ মেলে তাকায় ইশা। মনে হলো কোনো ছেলের কন্ঠের স্বর শুনেছে। শোয়া থেকে ওঠে গায়ে ওড়না জড়িয়ে রুমের লাইট অন করে। বিছানার দিকে চোখ যেতেই দেয় জোরে এক চিৎকার । সাব্বির তো চিৎকার শুনেই ঠাস করে শোয়া থেকে ওঠে কুম্ফু স্টাইলে বিছানার উপর দাঁড়িয়ে বলে,
-“কোন হারামজাদায়,কোন পিছা মারায় রে চিৎকার দিছে।” কথাটা বলেই ইশার দিকে তাকিয়ে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় ওর। ফট করেই কম্বল মুড়ি দিয়ে চেহারা টুকু বের করে রাখে।
ইশার চিৎকার শুনে বাকি রুমের মেম্বার রা ওর রুমের সামনে এসে দরজা ধাক্কাতে লাগলো। ইশার রুমের পাশেই ফাহিমের রুম ছিল। ফাহিম সবার আগেই এসে দরজা ধাক্কাচ্ছে আর খুলতে বলছে। সাব্বির ইশারায় ইশাকে দরজা খুলতে না করে,ইশা সেটা না শুনেই দরজা খুলে দেয়। হড়মুড় করেই সবার আগেই ফাহিম রুমে ঢুকেই ব্যাঙের মতো লাফাতে লাফাতে বলে,
-“হইছে কী? হইছে কী? চোর ঢুকছে নাকি? ”
ইশা ইশারায় বিছানার দিকে দেখালো। সাব্বির তখন পুরো মুখ ডেকে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।
ফাহিম ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“চোর, চোর?”
ইশা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দেয়।
-“ও হারামজাদা! কইথেকা আইলি তুই। তোরে আজনা। সবাই মারেন।” বলতে দেরি সাব্বিরের পিঠে তাল পড়তে দেরি হলো না। যে যেমন পারছে কিল,ঘুষি দিয়ে যাচ্ছে। ফাহিম কিছুক্ষণ মেরে থেমে যায়। কিন্তু মাইর থামে না ওর। একটু পর,পরি সাব্বিরের পিঠে কিলের জাগায় জোরে একটি চিমটি কাঁটছে। যেটা মারের চেয়ে বেশি ব্যাথা লাগছে ওর। সাব্বির মুখ চেপে ধরে সহ্য করে নিচ্ছে। চিৎকার দিতেও যে কষ্ট হচ্ছে ওর।
কিছুক্ষণ পর ফাহিম এক হাত জাগিয়ে বলে,
-“সবাই থামেন!”
সবাই থেমে যায়। ফাহিম পিছনে দু হাত নিয়ে বলে,
-“আপনের লগে কী হইছিল আফা? এই চোরটায় কী করছে?”
-“কিছু করে নি। কিন্তু আমার রুমে চুপি, চুপি এসে বিছানায় শুয়ে ছিল। আমি তার কন্ঠের স্বর শুনে জোরে চিৎকার করি।” ইশা চোখ পিটপিট করে বলে।
-“কন কী আফা? কিছু না করতেই হুদা মিছা চিৎকার দিছেন। চোর হালায় আমাগো মাইরের চোড়ে ভর্তা হইয়া গেছে। ” বলেই ফাহিম কম্বল সরাতেই সাব্বিরের শার্ট দেখে কেমন চেনা চেনা লাগছে ওর। কাঁধ ধরে উল্টো পিঠ করতেই ফাহিম জোরে চিৎকার করে কান্না জুড়ে বলে,
-“ভাই আপনি? হায়,হায়….ওরে মোর ভাই মইরা গেছে রে। মোর ভাইরে মাইরা হালাইছে রেএএএএ।”
সাব্বির মৃদু কন্ঠে উত্তর দেয়,
-“ফ…ফাহিম্মা মরি নাই আমি ।”
-“ওরে মোর ভাই মরে নাই রে, কেবল আধা মরা হইছে রে। কেউ হেতিরে হাসপাতালে লইয়া যা রেএএ।” কান্নার ভান করে বলে ফাহিম।
-“হাপার পুত! চুপ থাক। আমারে ধইরা ওঠা।” কোমড়ে হাত দিয়ে ব্যাথার কুঁকড়িয়ে বলে সাব্বির ।
ফাহিম সাব্বিরকে উঠিয়ে বসায় । কোমড়ে হাত রেখে সাব্বির ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমি কেমনে এই রুমে আইছি জানি না। আপনার পাশের রুমটা আমার । শরীর প্রচুর ক্লান্ত থাকায় ভুলে আমার রুম থুইয়া এই রুমে ঢুইকা পড়ছি। আপনি এর জন্য এভাবে মাইর খাওয়াইলেন আমায়।”
ইশা কোমড়ে হাত রেখে বলে,
-“বেশ করেছি । চোখ কোথায় থাকে রুমে ঢোকার সময়। পরের বার যেনো এমন ভুল না । এখন আমার রুম থেকে বেরিয়ে যান।”
কথাটা শুনে সাব্বিরের রাগ হচ্ছে। ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“আপনি কেডা?”
-“আমি রুদ্র ভাইয়ার খালাত বোন ইশা। ভাইয়ার বিয়েতে এসেছি।” মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে বলে।
-“ও আচ্ছা! দরজা ঠিক মতো লাগাতে পারেন নাই। চাবি দেওয়ার আগেই দরজা খুইলা খেছে। বালের ইশা না জানি খিশা।” লাস্টের টুকু বিড়বিড় করে বলল।
-“ঠিক মতোই লাগিয়েছিলাম। হেই লাস্টের টুকু কী বললেন?”
-“কইছি ফাহিম। আমারে ধরে ওঠা। রুমে নিয়া চল।”
-“হ ভাই লন।”
-“কিন্তু তোর খবর আছে। আগে রুমে চল?” ফাহিমের দিকে তাকিয়ে কিছুটা রাগী কন্ঠে বলে সাব্বির ।
-“ক্যা ভাই?”
-“একটু আগে যে পিটুনি দিলি না। হের শোদ নিমু।”
ফাহিম করুন কন্ঠে বলে,
-“ভাল মুই জানতাম না আপনি ছিলেন। মোরে ক্ষেমা কইরা দেন ভাই।”
সাব্বির একবার চোখ বন্ধ করে মেলে বিরক্তি নিয়ে বলে,
-“ক্ষেমা না ক্ষমা হবে।”
-“হ ভাই ক্ষমা কইরা দেয়। ইশ আফা আপনি কিছু কন না?”
-“হোয়াট? ইশ!” নাক ছিটকিয়ে বলে ইশা।
সাব্বির হো হো করে হাসতে লাগলো । হাসির মধ্যে রুমের বাকি লোকদের হাতের ইশারায় বের হয়ে যেতে বলল। বাকিরা চলে গেল । সাব্বির,ফাহিম আর ইশা রুমে আছে।
-“নাইচ নাম দিছস ফাহিম,ইশ!”
-“হেই মি.ডোন্ট কল মি ইশ। আমার নাম ইশা।”
-“ঐ হইলো।” মাথা দুলিয়ে বলে সাব্বির ।
-“ভাই!”
-“ইশ নামটা দেওয়ার জন্য তোরে মাফ কইরা দিলাম ফাহিম। চল এবার রুমে চল।”
-“আহেন ভাই ।”
সাব্বির ফাহিমের কাঁধে হাত রেখে আস্তে আস্তে হেঁটে হেঁটে রুম থেকে বের হতে লাগলো। যাওয়ার আগে ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,”ইশশ! আমার কোমড়টা গেলো রে”। এটা শুনে ইশা রেগেমেগে দরজা ঠাস করে বন্ধ করে দেয়। সাব্বির হাসে,ফাহিমও হাসছে। এই ঘটনার ব্যাপারে রুদ্র রা জানে না। আলতাফ চৌধুরীর কাছেও অজানা ।
সকালে…..
সাব্বির ও ফাহিমের ডাকে রিমি,সিমি,নিধি দের ঘুম ভাঙে। ঘুম ঘুম চোখে সিমি বিছানায় ওঠে বসে। চোখ ঢলতে ঢলতে ঘড়ির দিকে তাকায়। তখনি মনে পড়ে আজ ওদের বিয়ে। বুকের মধ্যে ধুক করে ওঠল । রিমি,নিধির গায়ে হাত দিয়ে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো।
-“ওই তোরা ওঠ। আরে ওঠ! ওঠস না।”
-“সর পরে উঠমু।” রিমি ঘুম জড়িত কন্ঠে বলে ।
-“জ্বালাবি না সিম।” এপাশ ফিরে শুয়ে বসে নিধি।
-“হারামজাদি দুইটা আজকে আমাগো বিয়া মনে আছে তোগো।”
চট করে বিছানায় ওঠে বসে রিমি,নিধি । চোখের ঘুম কোথায় পালিয়ে গেছে কে জানে? নিধি কান্না ফেস বানিয়ে বলে,
-“আজকে আমাগো কুরবানির দিন।”
-“হয়,হয়।”
তখনো সাব্বির,ফাহিম বাহিরে বসে ডাকতে ডাকতে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পালা।
-“ঐ শয়তান দুইটারে থামাইয়া আয় সিমি।” নিধি নাক ফুলিয়ে বলে।
বিছানা থেকে ওঠে সিমি দ্রুত দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলে দেওয়ার সাথে সাথে সাব্বির,ফাহিম ধুপাশ করে ফ্লোরে কাত হয়ে পড়ে যায়। হাতের বাদাম গুলো ছিটকে ফ্লোরে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ওদের পড়ে যাওয়া দেখে রিমি,সিনি,নিধি হেসে গড়াগড়ি গাচ্ছে। বিছানায় থাপ্পড় দিয়ে রিমি,নিধি হাসছে। আর সিমি হাসতে হাসতে পেট ধরে ফ্লোরে বসে পড়েছে।
সাব্বিরের লজ্জা লাগছে ওদের হাসি দেখে। ফাহিম আহত কন্ঠে বলে,
-“এরাম কইরা হাসেন ক্যা? ভাই আপনাগো ডাকতে কইছে। আপনাগো এক ঘন্টা ধইরা ডাকটাছি। কিন্তু আপনারা ওঠেন না। শেষমেশ দিশাবিশা না পাইয়া দু’জনেই দরজার সাথে হেলান দিয়া বাদাম ছিলাইয়া খাইতাছিলাম। এমন সময় দিছেন দরজা খুইলা। হেরপর(তারপর)……. ।”
ফাহিমের কথা শুনে ওরা আরো জোরে জোরে হাসতে লাগলো। কিছুক্ষনের জন্য ভুলেই গেল আজ ওদের থ্রি গ্যাংস্টার দের সাথে বিয়ে। থামাবে কে হাসি ওদের। এমন হাসি দেখে কে ওদের?
.
.
.
.
.
.
.
.
Continue To……