#তুমি_আমারই
#পর্ব_১০
#Sumaia_Jahan
রুহি আর রাহাত কে অনেকক্ষণ ধরে খুজতেছি। কিন্তু এই দুইটার একটাকেও পাচ্ছি না।ওদের রুমে এমকি পুরো বাড়ি খুঁজে পেলেছি কিন্তু এই দুইটার একটারও দেখা পেলাম না।এমনিতেও এরা দুজন আমার আশেপাশেই থাকে।আজকে আমাকে বিপদের মুখে একা ফেলে কি করে যেতে পারলো।আবার এখন লুকিয়েও আছে।একবার শুধু পাই এই দুটোকে! পুরো বাড়ি খোঁজা শেষ এখন শুধু ছাদে দেখা বাকি।মনে হচ্ছে ছাদেই আছে।
আমি ছাদে ওঠে দেখি রুহি আর রাহাত দুজনেই ছাদে দোলনায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।আমি ধীরে ধীরে ওদের সামনে এসে দাড়ালাম। ওরা আমাকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো।দুজনেই দাড়িয়ে পড়লো।রুহি জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে আমতা আমতা করে বললো,
—- ভাবিমনি তুমি এখানে কি করছো?তোমার কি কিছু লাগবে?
আমি বললাম,
—- হুম লাগবে তো! তোমাদের দুজন কে আমার লাগবে।সারা বাড়ি খুঁজে অবশেষে তোমাদের পেলাম।
রাহাত আর রুহি দুজনেই ভয়ে চুপসে গেলো। তারপর রুহি আবারও জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো,
—- কেন ভাবিমনি আমাদের কে কেন লাগবে তোমার? কিছু কি আনতে হবে?
রুহি বললো,
—- ভাবিমনি তুমি শুধু একবার বলো কি লাগবে আমি এক্ষুনি এনে দিচ্ছেি।
আমি বললাম,
—- তোমাদের তো দেখি আমার জন্য খুব চিন্তা! তখন কোথায় ছিলো এতো চিন্তা। তোমাদের হয়ে আমি কথা বলতে গেছিলাম আর তোমরা আমাকে একা ফেলে চলে এলে।জানো শুধুমাত্র তোমাদের জন্য আমাকে আজ চোরের মতো পালিয়ে আসতে হয়েছে। আর তোমরা এখানে এসে ঘাপটি মেরে বসে আছো।তোমাদের লজ্জা করলো না আমাকে এভাবে একা ফেলে চলে আসতে।তোমরা একবারও আমার কথা ভাবলে না।আজকে থেকে তোমাদের সাথে আমার আর কোনো কথা নেই। তোমারাও আমার সাথে আর কথা বলবা না।
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে থামলাম। ওরা দুুজনেই মাথা নিচু করে কথা গুলো শুনছিলো।আমার কথা শেষ হওয়ার পর রুহি মাথা নিচু করেই বললো,
—- তুমি যখন ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করছিলে ভাই তখন আমাদের কে ইশারা করে বেড়িয়ে যেতে বললো।আসলে আমরা মুখে ভাইয়ার সাথে সবসময় মজা করলেও আমরা দুজনই ভাইয়াকে প্রচন্ড ভয় পাই তাই ভাইয়ার ইশারায় আমরা দুজন তখন বেরিয়ে এসেছিলাম।বিশ্বাস করো ভাবিমনি আমরা তোমাকে একা ফেলে আসতে চাই।প্লিজ আমাদের কে ক্ষমা করে দেও।আমাদের সাথে কথা বলা বন্ধ করো না প্লিজ। আমরা আর এমন করবো না।তোমাকে আর একা ফেলে চলে আসবো না ভাইয়া ইশারা করলেও না।প্লিজ এবারের মতো ক্ষমা করে দেও।
রুহি কথা গুলো বলে আমার দিকে ছলছল চোখে আমার দিকে তাকলো।রাহতও খুব করুন ভাবে বললো,
—- প্লিজ ভাবিমনি এবারের মতো ক্ষমা করে দেও। প্রমিজ করছি আর করবো না এমন।প্লিজ করে দেও।
ওদের দেখে মায়া হলো।তাই গলাটা একটু গম্ভীর করে বললম,
—- ঠিক আছে এবারের মতো ক্ষমা করলাম।কিন্তু মনে রাখবে এটাই কিন্তু লাস্ট।নেক্সট টাইম এমন করলে কিন্তু আর ক্ষমা করবো না ওকে।
আমার কথায় দুজনের মুখটাই খুশিতে ভরে উঠলো। আর দুজনেই একসাথে মাথা নেরে সম্মতি জানালো।রুহি তো খুশিতে আমাকে জরিয়ে ধরে বললো,
—- আমার লক্ষী ভাবিমনি ! আমি জানতাম আমার ভাবিমনি আমার উপর রাগ করে থাকতেই পারবে না।আমাকে ঠিক ক্ষমা করে দেবে।
আমি একটু হেসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। সত্যি এদের উপর আমি রাগ করে থাকতেই পারি না।মাত্র কয়েক দিনে পরিচয়ে এরা আমার কতোটা আপন হয়ে গেছে।
আমি রুমের বেলকনিতে এসে পরন্ত বিকেলের সূর্য দেখেছিলাম।তখনই রোদ্দুর ফোনে কথা বলতে বলতে রুমে আসলো।আমি পিছনে ঘুরে উনি এখনো ফোনে কথা বলছেন।
—- হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই!আমরা ঠিক সময় পৌঁছে যাবো চিন্তা করবেন না।
কথাটা বলেই রোদ্দুর ফোনটা রেখে দিলো।তারপর আমার দিকে ঘুরে বললো,
—- আশপিয়া কালকে তোমাদের বাড়ি মানে আমার শ্বশুর বাড়ি যেতে হবে।
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
—- কেন?
রোদ্দুর বললো,
—- কালকে তোমাদের বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান রেখেছে তোমার বাবা। তাই আমাদের কে যেতে বলেছে তোমার বাবা।এর থেকে বেশি আর কিছু বলেনি আমাকে।
আমি চিন্তিত ভাবে বললাম,
—- কাল বাড়িতে অনুষ্ঠান করছে বাপি কিন্তু কিসের জন্য। আর বাপি তো আপনাকে মেনেই নেন নি তাহলে আমাদের কেন যেতে বললেন?
রোদ্দুর বললো,
—- সেটা না হয় কাল তোমার বাপিকেই জিজ্ঞেস করো।আচ্ছা তুমি কি তাহলে বাড়ি যেতে চাও না আমার কাছেই সারাক্ষণ থাকতে চাও।
আমি রেগে বললাম,
—- আদি আপনি কিসের মধ্যে কি ঢুকিয়ে দিলেন। আমি কখন বললাম আমি বাড়ি যেতে চাই না সারাক্ষণ আপনার কাছে থাকতে চাই? সবসময় উল্টো পাল্টা বকতে থাকেন কেন হে? উল্টো পাল্টা না বকলে আপনার পেটের ভাত হজম হয় না?
রোদ্দুর করুন মুখ করে ঠোট উল্টে বললো,
—- আমার কি দোষ তুমিই তো নিজের বাড়ি যাবে তা নিয়ে কতো প্রশ্ন কতো চিন্তা করছো?তাই আমার মনে হয়েছিলো তুমি বোধহয় আমাকে এতোটাই ভালোবাসে ফেলেছো এখন নিজের বাড়িও পর্যন্ত যেতে চাও না?
আমি চিন্তায় শেষ।বাপি তো উনাকে মেনে নেয়নি তাহলে কেন যেতে বলেছে।বাপি তো কাউকে এতো সহজে ছাড়ে না।আমি সেই চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছি। আর এই লোক তার ফালতু মার্কা কথা বার্তা চালিয়েই যাচ্ছে। আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,
—- আপনি আবার উল্টো পাল্টা কথা শুরু করেছেন।আপনাকে আমি আমি কোন দুঃখে ভালোবাসতে যাবো।আমার ভালোবাসার লোক শুধু এক….
ইস কথায় কথায় আমার আদির কথা বলে ফেলছিলাম।এক্ষুণি তো আমার আদির কথা জেনে যেতো।সব হয়েছে এই লোকটার জন্য। আমার এতো চিন্তার মধ্যে উল্টো পাল্টা বকতে ছিলেন তাই মুখ ফসকে আমার আদির নামটা বেরিয়ে গেলো।ভাগ্যিস পুরো কথাটা শেষ হওয়ার আগেই থেমে গেছি।নাহলে তো আজই সবকিছু জেনে যেতো। আমাকে চুপ থাকতে দেখে রোদ্দুর ভ্রু কুঁচকে বললো,
—- অর্ধেক কথায় থেমে গেলে কেন পুরো কথাটা শেষ করো।
হ্যাঁ আমি বলি আর আপনি গিয়ে আমার আদির কোনো একটা ক্ষতি করে দেন।দিয়াকে যেমন লুকিয়ে রেখেছেন আদিকেও তেমন একটা করেন।কিন্তু আমি তো তা হতে দিবো না দিয়াকে আমি আপনার হাত থেকে বাঁচাতে পারিনি কিন্তু আদি কে আর হারাতে দিবো না।তাই কাজের ওজুহাত দিয়ে বললাম,
—- আমাকে না মা অনেকক্ষণ আগে বলছিলো মায়ের ঘরে যেতে। আমি ভুলে গেছিলাম এখন তারাতাড়ি যেতে হবে।না হলে মা আবার রাগ করবে।আমি যাই।
কথা গুলো বলে এবারও চোরের মতো পালিয়ে আসলাম।রোদ্দুর আমাকে পিছন থেকে অনেক বার থামতে বলেছে কিন্তু আমি থামিনি।আমি থামলেই তো আমাকে গোয়েন্দার মতো প্রশ্ন করতে শুরু করবে।তার থেকে ভালো পালিয়ে আসাই ভালো। তারপর শ্বাশুড়ি মায়ের ঘরে গেলাম।উনার সাথে আমার একদিনে অনেকটাই ভাব হয়েছে।এখন উনাকে আমি তুমি করে বলি আর উনি আমাকে রুহির মতোই তুই করে বলে।
শ্বাশুড়ি মায়ের ঘুরে গিয়ে দেখি উনি খাটে বসে বসে ম্যগাজিন পড়ছেন।আমি গিয়ে উনার পাশে বসলাম।বসেই উনাকে বললাম,
—- মা তোমার ছেলে কি গোয়েন্দা টোয়েন্দা ছিলো নাকি কখনো?
উনি আমার প্রশ্নে হেসে বললেন,
—- নিশ্চয় তোকে গোয়েন্দাদের মতো মতো প্রশ্ন করছিলো তাই না!
আমি অবাক হয়ে উনাকে বললাম,
—- মা তুমি কি করে বুঝলে উনি আমাকে প্রশ্ন করছিলো।
শ্বাশুড়ি মা আবার হেসে বললেন,
—- তোর প্রশ্ন শুনেই আমি বুঝে গেছি রোদ্দুর তোকে গোয়েন্দাদের মতো প্রশ্ন করছিলো। আসলে ও ছোটো থেকেই এমন গোয়েন্দা দের মতো প্রশ্ন করে জালিয়ে মারে সবাই কে।তাই সবাই ওর থেকে পালিয়ে পালিয়ে থাকতো।আমাকেও প্রশ্ন করে করে কান ঝালাপালা করে ফেলতো।এখন তোকে করে।আমার কান দুটো এখন একটু শান্তিতে আসে।আচ্ছা বাদ এসব কাল সকালে কিন্তু আমরা সবাই একসাথে শপিং এ যাবো।
আমি আবারও অবাক হয়ে বললাম,
—- শপিংএ কেন যাবো?
শ্বাশুড়ি মা বললো,
—- কাল তো তোদের বাড়িতে সবাই কে যেতে বলেছে।তাই সবাই কে শপিং করতে হবে তো।
তারমানে শুধু আমাকে আর রোদ্দুর কে না এ বাড়ির সবাইকেই যেতে বলেছে বাপি।কাল কি এমন অনুষ্ঠান? যার জন্য সবাই কে একসাথে যেতে বলেছে।
চলবে,,,,,
[ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন। আশপিয়ার আদির সম্পর্কে খুব তাড়াতাড়ি জানতে পারবেন। 😊 ]