তুমি আমারই পর্ব-১১

0
2568

#তুমি_আমারই
#পর্ব_১১
#Sumaia_Jahan

সেই সকাল থেকে শপিং করতে করতে আমি পুরো ক্লান্ত হয়ে গেছি। রুহির এখনো শপিং শেষ হয়নি।তাই ও এখনো শপিং করতেছে।আর আমি শপিংমলের একটা রেস্টুরেন্টে বসে বসে জুস খাচ্ছি। আমি সামনেই বসে আছে রোদ্দুর। উনি বসে বসে ফোন টিপতেছে আর মাঝে মাঝেই আমার দিকে আরচোখে দেখছে।আমার কাছে ব্যপার টা ভিষণ বোরিং লাগছে।

বাপি আজ সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে কিসের যেন একটা অনুষ্ঠান রেখেছিলো না! সেখানে আবার এ বাড়ির সাবাইকে একসাথে যেতে বলেছিলো।তার জন্যই সকাল সকাল আমাকে সহ রোদ্দুরের পুরো পরিবার এসেছে শপিং করতে। ওরা একটার পর একটা শপিং করেই যাচ্ছে। সবাই খুব আনন্দের সাথে সেই সকাল থেকেই শপিং করতেছে।কিন্তু আমার শপিং করতে একদমই বোরিং লাগে।আমি কিছুক্ষন ওদের সাথে শপিং করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি।তাই থেকেই আমি এই রেস্টুরেন্টে বসে এবাবে জুস খেয়ে যাচ্ছি। রোদ্দুর এবার বিরক্তি নিয়ে বললো,

—- এই যে বউ সাহেবা আপনার কি জুস খাওয়ার পর্ব শেষ হয়েছে? নাকি আরো ডজন খানেক খেতে চান?

আমিও বিরক্তি নিয়ে বললাম,

—- আমাকে এসব উল্টো পাল্টা নামে ডাকবেন না। আমার তো একটা সুন্দর নাম আছে ওই বলেই ডাকবেন হুম।আর আমাকে আপনি জুস খাওয়ার জন্য খোটা দিচ্ছেন। এতো কিপটে কেন আপনি?

রোদ্দুর বিরক্তি নিয়ে বললো,

—- হ্যাঁ হ্যাঁ মিসেস আশপিয়া খান এখনতো আমাকে কিপটেই বলবেন।তোমার খেয়াল আছে তুমি এই পর্যন্ত কয়টা জুস খেয়েছো?একবার গুনে দেখো তো কয়টা জুস খেয়েছো?

আমি মনে মনে গুনার চেষ্টা করলাম কয়টা জুস খেয়েছি।কিন্তু মনে পরছে আমি ঠিক কয়টা জুস খেয়েছি। কিছুক্ষন ভেবেও কোনো উত্তর পেলাম না।কিন্তু একথা তো আর মুখে বলা যাবে না।তাই একটু ভাব নিয়ে বললাম,

—- কয়টা আবার হবে দুটো কি তিনটে।

রোদ্দুর বললো,

—- আগগে না আপনি এই পর্যন্ত সাতটা জুস খেয়েছেন। এটা নিয়ে আটটা খাচ্ছেন।

আমার মুখ হা হয়ে গেলো আমি সাত আটটা জুস খেয়ে ফেলেছি।আমার মুখ থেকে আপনাআপনি বেরিয়ে এলো,

—- এ্যাঁ!

রোদ্দুর বিরক্তি নিয়ে বললো,

—- এ্যাঁ না হ্যাঁ।আমি বুঝতে পারছি না তুমি এই টুকু শরীরে এতো জুস খেলে কি করে?বাড়ি থেকে সকালে কিছু খেয়ে আসোনি নাকি?

আমার মেজাজ টা গরম হয়ে গেলো।না-হয় বেখেয়ালি ভাবে কয়েকটা জুস খেয়েই ফেলেছি তাই বলে এভাবে অপমান করবে।ডিরেক্ট খাওয়ার খোটা!আমি রেগে বললাম,

—- আমি কি করবো ওরা সেই কখন থেকে শপিং করছে আমি এখানে বসে বসে বোর হচ্ছিলাম।তাই বেখেয়ালি ভাবে কয়েকটা জুস খেয়ে ফেলেছি। তার জন্য আপনি আমাকে এভাবে খোটা দিচ্ছেন। যান আপনার টাকায় আর কিছু খাবো না আজ তো বাড়ি যাচ্ছি তো বাড়ি গিয়ে বাপির কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসবো।তখন আপনার টাকায় যা যা খেয়েছি সব টাকা ফেরত দিয়ে দেব হুম।

কথা গুলো বলে মুখ গোমড়া করে বসে থাকলাম। আর বাকি জুস টুকু খেলাম না।এতক্ষণে বাকি সবাই চলে এসেছে।শ্বাশুড়ি মা আমার গোমড়া মুখ দেখেই আমাকে জিজ্ঞেস করলো,

—- আশপিয়া কি হয়েছে তোর? মুখ গোমড়া করে কেন রেখেছিস?নিশ্চয়ই রোদ্দুর কিছু বলেছে তাই না?এই রোদ্দুর তুই ওকে কি বলেছিস?

শ্বাশুড়ি মায়ের কথা শুনে রোদ্দুর কিছু বলতে না দিয়ে আমি একটু ন্যাকা কান্না করে বললাম,

—- মা তোমার ছেলে আমাকে খাওয়ার খোটা দিয়েছে।আমি নাকি অনেক বেশি বেশি খাই।

শ্বাশুড়ি মা আমার কথা শুনে রেগে রোদ্দুর এর দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করে বললো,

—- রোদ্দুর তুই কোন সাহসে আমার মেয়ে কে খাওয়ার খোটা দিয়েছিস?ও বেশি খায় তাই না! দেখ ওকে কতো পাতলা একটা মেয়ে গায়ে হাড্ডি ছাড়া এক টুকরো মাংস নেই।আর তুই ওকে বলেছিস ও বেশি খায়!কেউ যদি বেশি খায় তাহলে সেটা তুই খাস আমার মেয়ে না হুম।

রোদ্দুর একনাগাড়ে কথা গুলো বলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো শ্বাশুড়ি মা।বেশ হয়েছে এই লোকটার এভাবেই বকা খাওয়া উচিৎ হুম। আমার তো বেশ খুশি খুশি লাগছে রোদ্দুর কে এভাবে বকা খেতে দেখে।কিন্তু মুখে কিছু বললাম না মুখ টাকে একটু ইনোসেন্ট ফেইস করে রাখলাম।যাতে বোঝা যায় আমি খুব কষ্টে আছি।রোদ্দুরের মুখ টা এখন দেখার মতো হয়েছে। ও মুখ গোমড়া করে বললো,

—- মা একটু আশেপাশে তাকিয়ে দেখো সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আর তুমি নিজের ছেলেকে সবার সামনে অপমান করতে পারলে?

রোদ্দুর কথায় শ্বাশুড়ি মা আবার কিছু বলতে যাবে তার আগেই রোদ্দুর উনাকে থামিয়ে আবার বললো,

—- থাক মা তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না। তুমি যে পুরোপুরি ভাবে ওর দলে আমি বুঝে গেছি আর তোমাকে কষ্ট করে বোঝাতে হবে না।তোমাদের শপিং শেষ তো তাহলে এবার বাড়ি চলো।তোমরা যা শুরু করেছো এখানে আর কিছুক্ষন থাকলে লোকজন ভিডিও করে ভাইরাল করে দেবে।তাই প্লিজ এভার চুপচাপ বাড়ি চলো।

আমরাও আর কিছু বললাম না।সত্যি আশেপাশের সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। যেন কোনো সিনেমার শুটিং চলতেছে।তাই সবাই আর কিছু না বলে বাড়ি চলে এলাম।

বিকেল থেকে সবাই রেডি হয়ে নিলাম।আমি একটা ব্লু কালারের ভিতরে গোল্ডেনের কাজ করা একটা শাড়ী পরেছি।আর রোদ্দুর ব্লু কালারের পাঞ্জাবি পরেছে।রুহি একটা পিংক কালারের ড্রেস আর রাহাত গ্রিন কালারের পাঞ্জাবি পরেছে। শ্বশুর মশাই আর শ্বাশুড়ি মা অফ হোয়াইট কালারের মেসিং শাড়ী আর পাঞ্জাবি পরেছে। ব্যস খান বাড়ির পুরো পরিবার রেডি আমার চৌধুরী ভিলাতে যাওয়ার জন্য।

আমরা চৌধুরী ভিলা মানে আমার বাড়ি যেতে যেতে সন্ধ্যা ৬ টা বেজে গেলো। আমি বাড়ির সামনে গিয়ে পুরো অবাক।আমার চিরচেনা বাড়ি টাকে আজ আমি চিনতে পারছি না।বাড়িটাকে প্রচুর জাঁকজমক ভাবে সাজানো হয়েছে।আমাদের বাড়িতে অনুষ্ঠান হলে আগে কখনো এতোটা জাঁকজমক ভাবে সাজানো হয়নি।দেখে মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়ি।আমি আস্তে আস্তে বাড়ির ভিতরে ডুকছি আর দেখছি।আজকে বাড়িতে প্রচুর গেস্টও এসেছে। কিছুদুর যেতেই দেখি বাপি আর মা কয়েকজন গেস্ট এর সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে।ওই দিনের ঘটনার পর থেকে আমার বাপির সাথে কথা বলতে ভিষণ ভয় করে।শতো ভয় থাকা সত্বেও আমি বাপি ডাকলাম,

—- বাপি বাপি…..

দুই বার ডাকতেই বাপি আমাদের দিকে তাকালো।আমার দিকে তাকিয়েই একটা হাসি দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলো।আমার তো ভয়ে হাত পা কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে। না জানি এসে আমাকে বকা বকি করে।তবে যদি আজকে আমাকে এই রোদ্দুর নামক মানুষটার থেকে নিয়ে নেয় তাহলে কিন্তু আমার জন্য ভালোই হয়। বাপি তো উনাকে মেনেই নেয়নি তাহলে মনে হয় এমন কিছু একটাই করবে।তাহলে তো এখানে এখন একটা বড়সড় ঝড় উঠবে।কিন্তু আমার ধারণা উল্টো করে দিয়ে আমাদের সবার উদ্দেশ্যে বললো,

—- আপনাদের আসতে অসুবিধা হয় নি তো?আর বেয়াই সাহেব আপনি ভালো আছেন তো?

শ্বশুর মশাই বললো,

—- আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি আপনি ভালো আছেন তো বেয়াই সাহেব?

বাপি একটু মন খারাপ করে বললো,

—- কি করে ভালো থাকবো আমার ভালো থাকার প্রান ভোমরা টা তো আপনাদের বাড়ি তে ছিলো। কিন্তু এখন আমি খুব ভালো আসি আমার প্রান ভোমরা টা যে এখন আমার সামনে আছে।

শেষের কথা গুলো হাসি মুখে বললো।শ্বশুর মশাই বললো,

—- তা তো ঠিক আশপিয়া মা যেখানে থাকবে সেখানেই সবাই ভালো থাকবে।এ কয়দিনে আমরা কতোটা মায়ায় পরে গেছি ওর।যেদিন থেকে ও আমাদের বাড়িতে আসে সেইদিন থেকেই বাড়িটার প্রান ভোমরা হয়ে গেছে।যেন ওকে ছাড়া আমাদের বাড়িটা অসম্পূর্ণ।

তারপর দুজনের মধ্যে কুশল বিনিময় হলো আর খুব হাসিখুশি ভাবে কথা বলছে।দেখে মনে হচ্ছে শতো জনমের চেনা।কিছুক্ষন ওভাবে কথা বলার পর আমাকে আর রোদ্দুর কে নিয়ে সবার মাঝে গিয়ে দাড়ালো।তারপর বাপি যা বললো আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। বাপি সবার উদ্দেশ্যে বললো,

—- আজকে আপনাদের সাথে আমার একমাত্র মেয়ে আশপিয়া আর আমার জামাই রোদ্দুর খানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।ওদের বিয়েটা তারাহুরোর মধ্যে হওয়ায় আপনাদের সাথে ওদের পরিচয় করানো হয়নি। তাই আজকে ওদেরকে এক সাথে আপনাদের সাথে পরিচয় করালাম।আপনারা সবাই দোয়া করবেন ওদের নতুন জীবনের জন্য।

আমার পায়ের নিচের থেকে মাটি সরে গেলো।বাপি কেন বললো এগুলো।বাপি তো জানতো আমার আদির কথা।তবে বাপি কেন এই বিয়েটা মেনে নিলো।বাপি আমার শেষ ভরসা ছিলো।এখন আমি কি করবো।আমার কি আর কখনো আদির কাছে যাওয়া হবে না।আদি কে কি আর কখনো খুজে পাবো না। নাহ আমি হাল ছাড়বো না।বাপি আমাকে সাহায্য না করলে আমি একাই আদি কে খুজে আদির কাছে চলে যাবো।আজ আমার ভিষণ কান্না পাচ্ছে।বাপি কি করে আমার সাথে এমনটা করতে পারলো এর জবাব বাপি কে দিতে হবে।……

চলবে,,,,,

[ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন।]