#খুব_ভালোবাসি_তোকে
#লেখকঃ- Tamim
#পর্বঃ- ৩০ (শেষ পর্ব)
,,
,,
,,
,,
–আপা যদি তামিম আর নীলার বিয়েতে মত দেন তাহলে আমি রাজি।। কারণ আপা তো চাচ্ছিলেন রাফির সাথে নীলার বিয়ে দিতে।। কিন্তু তামিম আর নীলা যেহেতু বিয়ে করে ফেলেছে তাহলে আপা ই ভালো জানেন উনি কি করবেন।।
তামিমের আব্বুর এমন কথা শুনে তামিম আর নীলা অসহায়ের মতো তাদের ফুপির দিকে তাকালো আর মনে মনে ভাবতে লাগলো না জানি এখন ফুপি কি বলে।। তামিমের আব্বুর কথা শুনে রাহিমা বেগম বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ কিছু বলতে যাবেন তখনই উনার ছেলে রাফি উনাকে থামিয়ে দিয়ে বলে…
রাফিঃ Wait Mom আগে আমি কিছু বলতে চাই, যদি তুমি Permission দাও।।
ফুপিঃ আচ্ছা দিলাম Permission বল এবার কি বলবি.?
রাফিঃ I Don’t Know তুমি এখন কি বলবে But আমি কিছু কথা বলে ফেলি।। তুমি যদি চাও নীলার সাথে আমার বিয়ে দিতে তাহলে আমি নীলাকে বিয়ে করতে পারবো না।। কারণ সে এখন অন্য একজনের Wife, আর আমি অন্য একজনের Wife কে তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে কিছুতেই বিয়ে করতে পারবো না।। যদিও আমি এখনো শিওর না যে তাদের বিয়ে হয়েছে কি, তারপরও আমি নীলাকে বিয়ে করবো না।। কারণ তামিম আর নীলা দুজন একে অপরকে ভালোবাসে।। আমার মনে হয়না এখন আমার সাথে নীলার বিয়ে দিলে নীলা জীবনে সুখী হবে বা আমি হতে পারবো।। তামিমের সাথে নীলার পরিচয় ছোটবেলা থেকেই।। ছোটবেলা থেকেই তারা দুজন একে অপরের সাথে থেকে এসেছে, তাহলে নিশ্চয়ই তারা দুজন দুজনের ব্যাপারে খুব ভালো করেই জানে।। আমার সাথে তো নীলার পরিচয় মাত্র কয়েকদিনের।। এই কয়দিনে না আমি নীলার ব্যাপারে কিছু জানতে পেরেছি আর না নীলা আমার ব্যাপারে কিছু জেনেছে।। আর Main কথা হলো এই বিয়েতে নীলা মত নেই কারণ সে আমাকে বিয়ে করতে চায়না।। আর আমিও নীলাকে নিয়ে আগে কখনো এইসব ভাবি নি But তুমি যখন বললে যে নীলাকে তুমি আমার বউ বানাতে চাও তখন থেকে আমি নীলাকে হালকা ভাবতে শুরু করি।। But তামিম হয়তো নীলাকে নিয়ে সেই ছোটবেলা থেকেই ভেবে এসেছি So আমি চাইনা আমার জন্য ২ জন মানুষের জীবন নষ্ট হোক।। So আমি নীলাকে বিয়ে করতে পারবো না (একদমে কথাগুলো বলে রাফি থামলো)।।
রাফির কথাগুলো শুনে তার আম্মু রাহিমা বেগম সাথে সাথেই বলে উঠলেন…
ফুপিঃ হ্যাঁ আমিও এটাই বলতে চাচ্ছিলাম যে নীলার যেহেতু এই বিয়েতে মত নেই সেহেতু তোর সাথে নীলার বিয়ে দিব না।। কারণ এতে তোরা কেউ-ই জীবনে সুখী হতে পারবি না।। আর নীলা যেহেতু তামিমকে ভালোবাসে তাহলে তামিমের সাথেই নীলার বিয়ে দেওয়া হোক।। এতে তারা দুজনেই জীবনে সুখী থাকবে।।
রাফিঃ Yes Mom তামিমের সাথেই নীলার বিয়ে দেওয়া হোক।।
রাহিমা বেগম আর তার ছেলের কথাগুলো শুনে তো তামিম আর নীলা বেজায় খুশি।। এবার তামিমের আব্বু কি বলেন এটাই শোনার পালা।।
তামিমের আব্বুঃ তা আপা তুমিও চাচ্ছ যে তামিমের সাথেই নীলার বিয়ে হোক তাইতো.?
ফুপিঃ হ্যাঁ আমিও এটাই চাচ্ছি।।
তামিমের আব্বুঃ কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে যা নীলা মামনিকে মানতে হবে, তাহলেই আমি তাদের বিয়েতে মত দিব।।
নীলাঃ কি শর্ত চাচ্চু.?
তামিমের আব্বুঃ এখন থেকে আমাকে আর চাচ্চু বলে ডাকা যাবে না, আব্বু বলে ডাকতে হবে।।
নীলাঃ আমি রাজি চাচ্চু, সরি আব্বু (লজ্জায় মাথা নিচু করে)।।
তামিমের আব্বুঃ তামিমের আম্মু বউমা কি পছন্দ হয়েছে তোমার.?
তামিমের আম্মুঃ হবে না কেন অনেক পছন্দ হয়েছে, এমন লক্ষি মেয়েই তো আমার ছেলের জন্য খুজতেছিলাম (নীলার কাছে এসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে)।।
নীলাঃ আর খোজার দরকার কি পেয়েই তো গেছ, এবার তোমার ছেলের বউ বানিয়ে আমাকে গ্রহণ করে নাও (মজা করে)।।
নীলার কথা শুনে সেখানে উপস্থিত সবাই একসাথে হেসে দিল।।
তামিমের আম্মুঃ ওরে শয়তান মেয়ে (নীলার কান ধরে)।।
নীলাঃ আহ্ চাচি লাগছে তো।।
তামিমের আম্মুঃ চাচি কি হে.? এখন থেকে আম্মু বলে ডাকবি আমায় নাহলে কিন্তু এইভাবে কান মলে দিব।।
নীলাঃ আচ্ছা আম্মু আর চাচি বলে ডাকবো না এবার তো কান ছাড়।।
তামিমের আম্মুঃ হুম ছাড়লাম লক্ষি মেয়ে আমার (নীলাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে)।।
নীলাঃ আমার ভালো আম্মুটা (তামিমের আম্মুকে জড়িয়ে ধরে)।।
নীলার আম্মুঃ বাহ্ শ্বাশুড়ি পেয়ে এখন মাকে ভুলে গেলি.!
নীলাঃ না আম্মু তোমাকে কীভাবে ভুলি আমি.? (বলেই তার আম্মুকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো)
ফুপিঃ আচ্ছা তাহলে এবার এদের বিয়ের তারিখ ঠিক করা যাক।।
নীলার আব্বুঃ আগামী শুক্রবারে বিয়ের তারিখ ফেললে কেমন হয় ভাইজান.?
তামিমের আব্বুঃ হ্যাঁ ভালোই হয়।।
ফুপিঃ তাহলে আগামী শুক্রবারেই তামিম আর নীলার বিয়ে এটাই ফাইনাল।। এবার খাবারের আয়োজন কর অনেক খিদে পেয়েছে।।
অবশেষে আগামী শুক্রবারে তামিম আর নীলার বিয়ের তারিখ ঠিক হলো।। এটা শুনে তামিম আর নীলার মনে তো লাড্ডু ফুটছে।। তারা দুজনেই আজ বেশ খুশি কারণ তাদের সম্পর্কটা আজ তাদের পরিবার নিয়েছে।। আজকের দিনটা হয়তো তাদের জন্য সবচেয়ে আনন্দের দিন।। ওইদিনের মতো সবাই রাতের খাবার খেয়ে যার যার রুমে চলে গেল।। কিন্তু তামিম নিজের রুমে না গিয়ে সোজা নীলার রুমে চলে এলো।।
তামিম নীলার রুমে এসে দেখলো নীলা তার ব্যাগ থেকে তার কাপড়গুলো বের করে গুছিয়ে রাখছে।। তামিম আস্তে আস্তে নীলার কাছে গিয়ে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।। তামিমের এমন কাজে নীলা প্রথমে কিছুটা ভয় পেলেও পরক্ষণেই সে বুঝে গেল যে এটা তামিম।।
নীলাঃ এই কি করছ কেউ দেখে ফেলবে তো, দেখি ছাড় আমার কাজ আছে।।
তামিমঃ উঁহু কাজ পরে এখন একটু আমার বউয়ের সাথে রোমান্স করে নেই।।
নীলাঃ যা রোমান্স করার বিয়ের পর করিয়েন এখন ছাড়েন।।
তামিমঃ বিয়ে তো আমরা একবার করেছি ই আর ওই বিয়ের তো অনেক দেড়ি আছে।। এতদিন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না আমি।।
নীলাঃ না পারলেও করতে হবে কারণ আমি যে তোমাকে কথাটা বলেছিলাম
তামিমঃ ওইটার ডেট ওভার হয়ে গেছে।। কারণ তুমি বলেছিলে তোমাকে আমি ততদিন পর্যন্ত ছুঁতে পারবো না যতদিন পর্যন্ত আমাদের পরিবার আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিচ্ছে।। এখন তো আমাদের পরিবার আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিয়েছে & আমাদেরকে আবার বিয়েও করাতে চাচ্ছে।। সো জানপাখি এখন আর আমি তোমার কোনো কথা শুনছি না।।
নীলাঃ আচ্ছা মানলাম আমার ওই কথার ডেট ওভার, কিন্তু এখন তুমি কিছু করতে পারবে না।। যা করার বিয়ের পর করিও এবার রুম থেকে যাও।।
তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে এখন আমি কিছুই করবো না।। এখন আমায় একটা কথা বল তো, আমাদের পরিবার যে আমাদের সম্পর্কটা এতো তাড়াতাড়ি মেনে নিলেন এতে তুমি কতটুকু খুশি হয়েছ.?
নীলাঃ অনেক খুশি হয়েছি যা বলে বুঝাতে পারবো না।। কিন্তু আমার একটা কথা মাথায় ঢুকছে না, চাচ্চু আমাদেরকে এতো তাড়াতাড়ি কীভাবে মেনে নিলেন.?
তামিমঃ সেইটা তো আমারও মাথায় ঢুকছে না।। যাইহোক আমি এই বিষয়ে কিছু ভাবতেও চাইনা।। শেষ মেশ আব্বু যে আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিয়েছেন এতেই অনেক।।
নীলাঃ হুম, এবার রুম থেকে যান আমি কাপড় গোছাব।।
তামিমঃ আমি হেল্প করি.?
নীলাঃ থাক লাগবে না।।
তামিমঃ ওকে তাহলে কাপড় গুছিয়ে ঘুমিয়ে পরিও কেমন বাই (বলেই নীলার গালে একটা চুমু খেয়ে তামিম সেখান থেকে বেরিয়ে তার রুমে চলে আসে)।।
নীলাঃ পাগল একটা।।
আপনাদের মনেও হয়তো এখন প্রশ্ন জাগছে যে তামিমের আব্বু এতো তাড়াতাড়ি তাদের সম্পর্কটা কীভাবে মেনে নিলেন.? তাহলে বুঝিয়ে বলি শুনেন…
গতকাল যখন নীলার আম্মু-আব্বু একে অপরের সাথে তামিম আর নীলার বিষয় নিয়ে কথা বলছিলেন তখন তামিমের আম্মু নীলার আম্মুকে ডাকতে ওদের রুমের কাছে এসেছিলেন।। কিন্তু ভিতরে উনি উনার ছেলে আর নীলার বিষয় নিয়ে কথা বলা শুনতে পেয়ে দরজার কাছে কান পেতে দাঁড়িয়ে পরেন আর তাদের কথা শুনতে লাগলেন।। নীলার আম্মু-আব্বুর মধ্যকার কথাগুলো শুনে তামিমের আম্মু দ্রুত উনার রুমে আসেন আর তামিমের আব্বুকে সবকিছু বলেন।।
তামিমের আম্মুঃ তাহলে তোমার জন্য আজ তাদের এই অবস্থা, তুমি যদি তাদের মধ্যে বাঁধা হয়ে দাড়াতে না তাহলে আজ আমাদেরকে এই দিনের সম্মুখীন হতে হতো না।। তুমি একজন বাবা হয়ে কীভাবে নিজের ছেলের সাথে এমন করতে পারলে.?
তামিমের আব্বুঃ বিশ্বাস কর তামিমের আম্মু আমার জন্য যে তারা এতো কষ্ট পাবে তা আমি আগে বুঝতে পারিনি।। আসলে আমার মাথায় তখন একটাই চিন্তা ছিল যে নিজেদের মধ্যে যদি এইসব সম্পর্ক হয় তাহলে হয়তো আমরা দুই ভাই আলাদা হয়ে যাব।। বাবা তো মরার আগে বলে গেছিলেন আমরা দুই ভাই যেন সবসময় একসাথে থাকি।। কিন্তু এইসব সম্পর্কের কারণে যদি কখনো আমরা ভাই ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া মারামারি অথবা বিচ্ছেদ হয় তখন তো আমরা বাবার শেষ ইচ্ছাটা আর টিকিয়ে রাখতে পারবো না।।
তামিমের আম্মুঃ তুমি কি পাগল.? এইসব সম্পর্কের কারণে কি নিজেদের মধ্যে কখনো ঝগড়া, মারামারি হতে দেখেছ.?
তামিমের আব্বুঃ হ্যাঁ আমার এক বন্ধুর সাথে এমনটা হয়েছে।। সেও তার চাচাতো বোনকে বিয়ে করেছিল।। বিয়ের পর তারা সবাই সুখেই ছিল কিন্তু হঠাৎ তার বাপ চাচার মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে মারামারি লেগে যায়।। তার চাচা ভাবে সম্পত্তির জন্য সে তার মেয়েকে বিয়ে করেছে আর তার বাবা ভাবে সম্পত্তির জন্য তার চাচা তার মেয়েকে তার কাছে বিয়ে দিয়েছে।। তাই আমিও ওর বিষয়টা চিন্তা করে নিজেদের মধ্যে এইসব সম্পর্কে
তামিমের আম্মুঃ একজনের সাথে এমনটা হয়েছে বলে যে সবার সাথেই এমনটা হবে এটা তো নয়।। দেখ নীলার আম্মু-আব্বু তামিমকে কতো ভালোবাসে।। তামিম আর নীলাকে পালাতে তার চাচি হেল্প করেছেন এমনকি তাদের খরচের জন্য যত টাকা লাগছে সব টাকা উনিই দিচ্ছেন।। তোমার কি মনে হয়না যে নীলার আম্মু তামিমকে ভালোবাসে আর বিশ্বাস করে দেখেই তামিমের কাছে নীলাকে তুলে দিয়েছে.? আর আমরাও তো নীলাকে কতো ভালোবাসি একদম নিজের মেয়ের মতো ভাবি নীলাকে।। নীলার মতো ভালো একটা মেয়ে কি আর তুমি কোথাও খুজে পাবে.?
তামিমের আব্বুঃ হ্যাঁ কথাগুলো তুমি ঠিকই বলেছ, একজনের সাথে এমনটা হয়েছে বলে যে সবার সাথেই এমনটা হবে এটা তো নয়।। আসলে তখন আমার মাথায় এতো কিছু ছিল না নাহলে আমি তাদের সাথে এমনটা করতাম না।। আচ্ছা এখন আমার কি করা উচিত তুমিই বল.?
তামিমের আম্মুঃ নীলার আব্বু বলেছে কাল কক্সবাজার গিয়ে তাদেরকে বাসায় নিয়ে আসবে।। তুমি তাদের সম্পর্কটা মেনে নিও আর তাদের দুজনের আবার বিয়ে দেওয়ার কথা বলিও।।
তামিমের আব্বুঃ আচ্ছা তাহলে সেটাই হবে কিন্তু তুমি এই বিষয়ে কাউকে কিছু বলিও না।।
তামিমের আম্মুঃ আচ্ছা
এই হলো তামিম আর নীলার সম্পর্কটা মেনে নেওয়ার ঘটনা, এবার গল্পতে আসি।।
এদিকে তামিম তার রুমে এসে মোবাইলটা হাতে নিয়ে একে একে তার সবকটা বন্ধুকে কল করে আজকের ঘটনাটা জানালো আর শেষে এটাও বললো যে আগামী শুক্রবার তার আর নীলার বিয়ে তারা সবাই যেন বিয়ের দিন উপস্থিত থাকে।। কথা বলা শেষে ওইদিনের মতো তামিম ঘুমিয়ে পরে।।
এইভাবেই কেটে গেল বেশ কিছুদিন।। এরই মধ্যে তামিম আর নীলার বিয়ের দিনও ঘনিয়ে আসলো।।
আজ শুক্রবার মানে তামিম আর নীলার বিয়ের দিন।। বাসার একমাত্র ছেলে আর একমাত্র মেয়ের বিয়ের উপলক্ষে পুরো বাসাটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।। ইতিমধ্যে তামিম আর নীলার নানু বাড়ি থেকে তাদের খালা, খালু, খালাতো ভাই-বোন আর মামা-মামী আর মামাতো ভাই-বোনেরাও তাদের বাসায় এসেছে।। বাসাটা এখন বেশ জমজমাট হয়ে পরেছে।। পুরো বাসায় ছোট বাচ্চাদের হৈচৈও পরে গেছে।। আজ যেন সবার মনে একটা আনন্দের বন্যা বইছে।।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় খাওয়া দাওয়ার আয়োজন পরে গেল।। খাওয়া দাওয়া শেষে শুরু হলো বিয়ের কাজ।। বাসার ড্রয়িংরুমের বড় সোফার এক সাইডে তামিম আর অন্য সাইডে নীলা বসে আছে।। নীলা আজ একটা গাঢ় লাল শাড়ি পরেছে আর তামিম পরেছে একটা নীল কালারের পাঞ্জাবী।। তাদের দুজনের সামনে একজন কাজি বিয়ের দলিল নিয়ে বসে আছেন।। কাজি লোকটা এবার বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।। প্রথমে কাজি তামিমকে কবুল বলতে বললো এরপর নীলাকে।। তামিমের কবুল বলা শেষে নীলাও কবুল বললো।। তারপর কাজি তাদের দুজনকে সেই দলিলের দুই জায়গায় সাইন করতে বললেন।। তারা দুজনেই কাজির কথামতো সেই জায়গায় সাইন করে দিল।। ব্যস এর মধ্যে তাদের বিয়েটাও সম্পন্ন হয়ে গেল।। এরপর সারা বাসায় মিষ্টি বাটা হলো আর নীলার কয়েকটা কাজিন নীলাকে নিয়ে উপরে চলে গেল।। তামিমের বন্ধুরাও তামিমকে নিয়ে তাদের বাসার ছাদে চলে আসলো।।
শুভঃ মামা বিয়ে তো করলি কিন্তু আমাদের ট্রিট কোথায়.?
তামিমঃ এতো খাবার খেয়েও তোদের পেট ভরেনি যে এখন এসে ট্রিট চাচ্ছিস.!
শুভঃ পেট তো ভরেছেই, কিন্তু বিয়ের উপলক্ষে আমাদেরকে একটা আলাদাভাবে ট্রিট দিবি না সেইটাই বলছি।।
তামিমঃ আচ্ছা যা একদিন সময় করে দিব নে।।
শুভঃ মনে থাকে যেন।।
তারপর তামিম আর তার বন্ধুরা মিলে গল্প করতে লাগলো।। গল্প করতে করতে কখন যে রাত হয়ে আসলে সেদিকে কারও খেয়ালই নেই।। হঠাৎ ছাদে তামিমের আম্মু এসে তামিমকে ডাক দেন।।
তামিমের আম্মুঃ তুই এইখানে কি করছিস.? রুমে যা নীলা তো সেই কখন থেকে রুমে একা একা বসে আছে।।
তামিমঃ হ্যাঁ আম্মু তুমি যাও আমি যাচ্ছি।।
তামিমের আম্মুঃ তাড়াতাড়ি যা (বলেই উনি ছাদ থেকে নেমে গেলেন)।।
তামিমঃ আচ্ছা মামারা তাহলে আমি এখন যাই আর তোরা কিন্তু রাতের খাবার খেয়ে যাস।।
রনিঃ আরে মামা যাওয়ার জন্য এতো পাগল হচ্ছিস কেন তোর বউকে কি কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবে নাকি.?
তামিমঃ হ্যাঁ যদি কেউ নিয়ে যায় তাহলে আমি আজ রোমান্স করবো কার সাথে.? (মজা করে)
রনিঃ শালা হারামি
তামিমঃ তোর তো কোনো বোন নাই আর আমারও বিয়ে হয়ে গেছে তাহলে আমি তোর শালা হলাম কি করে.?
রনিঃ আরে ব্যাটা ওইটা তো একটা কথার কথা, তুই যা এখন আর Best Of Luck.
তামিমঃ আচ্ছা গেলাম তাহলে।।
তারপর তামিম ছাদ থেকে সোজা নিজের রুমের দরজার কাছে চলে আসলো।। সেই প্রথম দিনের মতো রুমে ঢুকতে তামিমের যেমন নার্ভাস ফিল হচ্ছিলো আজও তেমন হচ্ছে।। তারপরও তামিম বুকে সাহস নিয়ে রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো।। ভিতরে ঢুকে তামিম নীলার দিকে তাকাতেই দেখলো নীলা বিছানার উপর শুয়ে আছে।। এরপর সে রুমের দরজাটা ভিতর থেকে লাগিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে নীলার সামনে গিয়ে দাড়ালো।।
তামিমঃ নীলু এই নীলু এই কি হয়েছে তোমার.?
নীলাঃ নিশ্চুপ (কোনো নড়াচড়া নেই)।।
তামিমঃ এই নীলু কি হয়েছে তোমার কথা বলছ না কেন.? এই নীলু প্লিজ কথা বল.? (নীলাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে)
নীলাঃ উফ কে রে ধাক্কাচ্ছে আমায়.? (তাকিয়ে দেখে তামিম) ওহ তুমি কি হয়েছে এইভাবে ধাক্কাচ্ছ কেন শান্তিতে ঘুমাতেও দিবে না নাকি.?
নীলার এমন কথা শুনে তামিম যেন ভেবাচেকা খেয়ে যায়।। আজ তাদের বাসর রাত আর নীলা এইসব কি বলছে তামিমের যেন কিছুই বুঝে আসছে না।।
নীলাঃ কি হলো চুপ করে আছ কেন কিছু বললে তো বলবে।।
তামিমঃ আজ আমাদের বাসর রাত আর তুমি এই রাতে এইভাবে ঘুমাচ্ছ.!
নীলাঃ তো কি আমি নাচবো.?
তামিমঃ নাচবে কেন.?
নীলাঃ তাহলে কি করবো বল.?
তামিমঃ ওই যে বাসর রাতে স্বামী-স্ত্রী যা করে (লজ্জার ভান ধরে)।।
নীলাঃ সরি জানু আমি এখন এইসবে জড়াব না।।
তামিমঃ কিন্তু কেন.?
নীলাঃ এবার শুয়া থেকে উঠে বসলো আর তামিমকে টেনে তার পাশে বসিয়ে তার এক হাত জড়িয়ে ধরলো আর বললো, দেখ আমি সবেমাত্র ভার্সিটিতে উঠেছি, আমার আরও পড়াশোনা করার ইচ্ছা রয়েছে।। কিন্তু আমরা যদি এখনই এইসবে জড়াই তাহলে আমার ইচ্ছাটা শেষ হয়ে যাবে।। কারণ আমরা যদি এখনই বেবি নিয়ে নেই তাহলে আমি বেবি সামলাবো নাকি আমার পড়াশোনা।। আর এখন থেকে তোমাকেও সবসময় অফিসেই দিন কাটাতে হবে।। তাহলে বেবিকে আমারই সামলাতে হবে আর এর জন্য আমার পড়াশোনাও বন্ধ করে দিতে হবে।। এখন তুমিই বল তুমি চাউ যে আমি পড়াশোনা ছেড়ে দেই.? বল তুমি কি চাও.?
তামিমঃ নীলার কথাগুলো শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, তোমার কথাগুলো আমি বুঝতে পেরেছি।। আর আমিও চাই তুমি আরও পড়াশোনা কর।। কারণ আমরা তো আর আলাদা থাকবো না যে তোমাকে সংসারের কাজ করতে হবে।। তাহলে কেন তুমি শুধু শুধু নিজের পড়াশোনা বন্ধ করবে।। আর বেবি নাহয় আমরা আরও পরেই নিব যখন তুমি চাও।। আমি কিন্তু কখনো তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করবো না এই তোমায় কথা দিলাম (নীলার হাত জড়িয়ে ধরে)।।
নীলাঃ কথাগুলো মন থেকে বলছ তো নাকি আমার কথা
তামিমঃ না কথাগুলো আমি মন থেকেই বলছি।।
নীলাঃ সাথে সাথে তামিমকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো, সত্যি তুমি অনেক ভালো।। তোমাকে স্বামী হিসেবে পেয়ে আমার জীবন সার্থক।।
তামিমঃ তুমিও অনেক ভালো (নীলাকে জড়িয়ে ধরে)।।
নীলাঃ তো মিস্টার আজ কি ঘুমাবেন না নাকি সারারাত গল্প করবেন কোনটা.?
তামিমঃ উমম আমরা তো একে অন্যের ব্যাপারে মোটামুটি সবকিছু জানিই তাহলে কোন বিষয়ে গল্প করবো.? এর চেয়ে ভালো ঘুমিয়েই পরি।।
নীলাঃ ওকে বাট একটা কথা।।
তামিমঃ কি বল.?
নীলাঃ এখন থেকে বিছানায় বালিশ থাকবে একটা আর সেই বালিশে তুমি ঘুমাবে।।
তামিমঃ আর তুমি.?
নীলাঃ তোমার এই বুকে।।
তামিমঃ শুধু বুকের মধ্যে ঘুমালে হবে না, জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে হবে হুম।।
নীলাঃ ওকে জানু।।
তামিমঃ তাহলে এবার ঘুমানো যাক নাকি.?
নীলাঃ হুম
তারপর তামিম বিছানায় থাকা বালিশের মধ্যে শুয়ে পরলো আর নীলা তামিমের বুকের মধ্যে মাথা রেখে তামিমকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো।। তামিমও নীলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমের রাজ্যে পারি জমালো।।
৫ বছর পর…
মিমঃ আব্বু আব্বু আম্মু তোমাকে দাকে (ডাকে)।।
তামিমঃ তাই নাকি মামনি, তা তোমার আম্মু আমায় কেন ডাকে.? (মিমকে কুলে নিয়ে)
মিমঃ আমি দানি(জানি) না কেন দাকে(ডাকে), তুমি গিয়ে তুনে(শুনে) আত(আস)।।
তামিমঃ আচ্ছা মামনি চল তোমার আম্মুর কাছে।।
তারপর মিমকে নিয়ে সোজা রান্নাঘরে চলে এলো (মিম হচ্ছে তামিম আর নীলার মেয়ে, বয়স এখনো ২ বছর হয়নি তারপরও অনেক পাকনা পাকনা কথা।। সারা বাসার নয়নের মনি হচ্ছে মিম)।। রান্নাঘরে এসে তামিম দেখলো নীলা রান্না করছে (এখন নীলাই সবসময় বাসার সবার জন্য রান্না করে)।।
তামিমঃ কি হয়েছে নীলু তুমি নাকি আমায় ডাকছ.?
নীলাঃ হুম কোথায় ছিলে তুমি এতক্ষণ.?
তামিমঃ রুমেই তো ছিলাম।। তা কেন ডাকছ বল.?
নীলাঃ কেন ডাকছি জান না.? প্রতিদিন কি এক কথা মনে করিয়ে দিতে হবে.? (রাগী চোখে)
তামিমঃ ওহহ সরি সরি দাড়াও আমি মিমকে আম্মুর কাছে রেখে আবার আসছি।।
তারপর তামিম তার আম্মুর ঘরে গিয়ে মিমকে তার আম্মুর কাছে রেখে আবার রান্নাঘরে চলে আসলো আর নীলাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।।
তামিমঃ সরি জানপাখি ভুলে গেছিলাম আর এমন হবে না।।
নীলাঃ এটা তো প্রতিদিনই বল, আচ্ছা যাও আজ শেষবারের মতো মাফ করলাম।। এরপর যদি আর কোনোদিন ভুলেছ তো
তামিমঃ না কলিজা আর কখনো ভুলবো না।।
নীলাঃ মনে থাকে যেন দেখি এবার ভালো করে ধর আর চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক।।
আসলে নীলা রান্নার কাজে ঢোকার আগে তামিমকে বলেছিল সে যেন রান্না করার সময় তামিম তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে থাকে নাহলে তার নাকি রান্না করতে ভালো লাগে না।। যদিও রান্না করার জন্য তার আম্মু আর তামিমের আম্মু আছেন তারপরও নীলা তাদেরকে রান্না করতে দেয়না।।
মিমঃ আব্বু তুমি আজ আমায় তুমু(চুমু) দিলে না কেন.? দাও(যাও) তোমাল সাথে আলি(আড়ি), (হঠাৎ মিম রান্নাঘরে এসে কথাটা বললো)
মিমকে রান্নাঘরে দেখে তামিম নীলাকে ছেড়ে দিল আর মিমের কাছে গিয়ে তাকে নিজের কুলে নিয়ে তার দুই গালে ২টা চুমু খেল।।
তামিমঃ এবার হয়েছে তো মামনি.?
মিমঃ হুম আমাল ভালো আব্বু (বলেই তামিমের গালে একটা চুমু দিল)।।
নীলাঃ শুধু কি মেয়েকেই চুমু দিবে, মেয়ের আম্মুকে চুমু দিবে না.?
তামিমঃ ওহহ হে ভুলেই গেছিলাম (বলেই তামিম নীলার কাছে গিয়ে নীলার গালে একটা চুমু খেল)।।
নীলাঃ মামনি আম্মুকে চুমু দিবে না.?
মিমঃ দিব বলেই নীলার গালে একটা চুমু দিল।।
নীলাও মিমের গালে একটা চুমু খেয়ে বললো…
নীলাঃ এবার ধর নাহলে কিন্তু আমি কাজ করবো না (তামিমকে বললো)।।
তারপর তামিম মিমকে কুল থেকে নামিয়ে দিয়ে আবার নীলাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।। এইভাবেই তাদের দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে তাদের দিন কাটতে লাগলো।। বেঁচে থাকুক এইরকম হাজারো পবিত্র ভালোবাসা 🥰
.
.
.
.
.
The End…….