#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_৩
#Jechi_Jahan
বিকালে আমি,জেরিন আপু,আর হূর বসে গল্প করছি।আসলে কিছুক্ষণ আগে ওনার চাচারা আর মামারা চলে গেছে।হূরকে আমরা অনেক কষ্টে এখানে রেখেছি।এখন বাসায় শুধু আমরা তিন জন,জোবান,নানু আর কিছু সারভেন্ট আছে।আমরা কিছুক্ষণ গল্প করে যে যার রুমে চলে গেলাম।আমি রুমে এসে দেখি আমার স্বামী খুব আরাম করে ঘুমাচ্ছে।ওনাকে এভাবে ঘুমাতে দেখে আমার রাগ উঠে গেলো।আমাকে কালকে রাতে ঘুমাতে না দিয়ে উনি এখানে আরাম করে ঘুমাচ্ছে।আমি রাগে দুঃখে পাশে থাকা গ্লাস ভর্তি পানি ওনার মুখে ছুড়ে মারি।যার কারণে উনি ধরপরিয়ে ঘুম থেকে উঠে যায়।
জোবান-Are you crazy?(মুখের পানি ঝেড়ে)
আমি-(কিছু বলি না)
জোবান-এই মাথা কি পুরা গেছে,,,,,দেখোনি আমি ঘুমাচ্ছিলাম।(রেগে)
আমি-তো???
জোবান-তো মানে??তোমার সাথে কেউ এরকম করলে তোমার কেমন লাগতো???(রেগে)
আমি-আমার সাথে এরকম হয়েছে,,,তাই তো রেগে আপনার গায়ে পানি ডেলেছি।
জোবান-মানে!!!
আমি-আপনার না জান।লেও চলবে।(বলে আমি যেই চলে আসতে যাবো উনি অমনি আমাকে টেনে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে)
জোবান-আমার না জানলেও চলবে তাই না,,,
আমি-হুম।
জোবান-আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিবে??
আমি-কি??(নিচের দিকে তাকিয়ে)
জোবান-তুমি আমাকে কেনো বিয়ে করলে??
আমি-(চুপ করে আছি)
জোবান-আচ্ছা আমার বয়স তো বেশি,,,,বলতে পারো প্রায় বুড়োই।তবুও আমায় কেনো বিয়ে করলে???
আমি-আমার ও তো একই প্রশ্ন,,,আপনি আমায় কেনো বিয়ে করলেন???(অনেক সাহস করে বলি)
জোবান-মানে??(আমাকে ছেড়ে)
আমি-মানে আমিও তো আপনার থেকে ছোট।হিসাব করে দেখলে ৫ নয়,১০ নয় পুরো ১৭ বছরের ছোট।তো আপনি কেনো আমাকে বিয়ে করলেন???
জোবান-তুমি না বলেছিলে তোমার বয়স নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।
আমি-হ্যাঁ বলেছিলাম,,,কিন্তু তাই বলে এটা বলিনি যে একই কথা আপনি আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করবেন।
জোবান-আমি জাস্ট সত্যিটা জানার চেষ্টা করছি।
আমি-কেনো??সত্যিটা জানলে কি আমার অনুমতি নিয়ে স্বামীত্ব ফলাবেন।তাছাড়া আপনার যা করার না আপনি আমার সাথে করে ফেলেছেন।সো প্লিজ এখন আমাকে একটু রেহাই দিন।
জোবান-শিশির।(রেগে)
আমি-(রেগে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।আর বের হওয়ার সাথে সাথেই জেরিন আপুর সাথে ধাক্কা খেলাম।)
জেরিন-আরে ভাবী কি হইছে এত জোরে হাঁটছো কেন?
আমি-সরি সরি আপু,,,আমি খেয়াল করিনি।
জেরিন-আরে কিছু হবে না,,,তা কই যাচ্ছো??
আমি-(কোথাও তো যাওয়ার নেই এবার কি বলি)
ওহ,,, আমি কফি বানাতে যাচ্ছি।
জেরিন-কিছুক্ষণ আগে না কফি খেলাম।
আমি-আব মানে,,,ওনার জন্য বানাতে যাচ্ছি।
জেরিন-ওহ তো সারবেন্টকে বলে দাও।
আমি-না আমি নিজেই বানাবো।
জেরিন-ওহ তো যাও।
আমি-আচ্ছা?(বলে চলে এলাম)
জেরিন-(ভাইয়ার রুমে এসে)ভাইয়া।
জোবান-ওহ জেরিন,,,আয় ভেতরে আয়।
জেরিন-তুমি এসব কোনো কাজ করলে???
জোবান-কি করলাম??
জেরিন-তুমি শিশিরের সাথে এমন কেনো করছো???
জোবান-কি করলাম???
জেরিন-কি করেছো তুমি জানোনা।
জোবান-ওহ,,,
জেরিন-আমি মাত্র তোমাদের কথা শুনলাম।
জোবান-তো???
জেরিন-ভাইয়া তুমি কেন অতীতকে বর্তমানে আনছো,,,
ভাইয়া শিশির ওর মতো নয়।
জোবান-ভুলে গেছিস,,,সে ও মধ্যবিত্ত ছিলো।
জেরিন-ভাইয়া,,,সব মধ্যবিত্ত মেয়েরা এক হয়না।
জোবান-তুই আসলে কি বলতে চাচ্ছিস বলতো।
জেরিন-তুমি শিশিরের সাথে এরকম করা বন্ধ করো।
জোবান-কি রকম করা বন্ধ করবো।
জেরিন-ভাইয়া,,,ফারদার যদি তুমি শিশিরের সাথে কোনো বাজে ব্যবহার করো তাহলে,,,
জোবান-তাহলে???
জেরিন-তাহলে আমাকে এ বাড়ীতে আর কোনদিন দেখবে না।(বলে রুম থেকে চলে গেলাম)
জোবান-আরে,,,,জেরিন যাহ চলে গেলো।
—+—
শিশির-আপু তুই দুলাভাই এর জন্য কফি বানাচ্ছিস,,, বিশ্বাসই হচ্ছে না।(দুই বোন ফোনে কথা বলছে)
আমি-আরে চাপে পরে বানাচ্ছি।নাহলে ওই সাইকোটার জন্য কফি বানাবো তাও আমি।
শিশির-আচ্ছা আপু যাই হোক,,, এখন তো উনি তোমার স্বামী।তাই একটু কষ্ট করে সম্পর্কটা মেনে নিও।
আমি-আমি কি সম্পর্কটা মানতাম না বল,,,ওনার এমন কাজের জন্যই তো ওনার উপর থেকে আমার মনে উঠে গেলো।(কফি নিয়ে রুমে যেতে যেতে)
শিশির-আচ্ছা যাই হোক,,,এখন গিয়ে কফিটা দিয়ে এসো।
আমি-হুম,,,আচ্ছা কিছুক্ষণ পরে কথা বলবো।
শিশিন-হুম রাখি।
আমি রুমে এসে দেখি উনি রুমের কোথাও নেই।এবার হতাশ হয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।বের হয়ে একটা সারভেন্টকে দেখতে পাই তাই জিজ্ঞেস করি।
আমি-শুনো,,,
সারভেন্ট-জ্বি ম্যাডাম কিছে লাগবে।
আমি-তোমাদের স্যার কোথায় দেখেছো??
সারভেন্ট-ম্যাডাম স্যার তো কিছুক্ষণ আগে ছাঁদে গেছে।কোনো দরকার আছে,,,,ডাকবো???
আমি-না না,আমিই যাচ্ছি।
সারবেন্ট-ওকে।
আমি অবশেষে ছাদে উঠেই যাই।ছাদে উঠে দেখি উনি ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে।আমি আস্তে আস্তে ওনার কাছে যেতে লাগি।কিন্তু ওনার কাছে গিয়ে আমি যা শুনি তাতে আমি অবাক হয়ে যাই।
জোবান-জেরিন আমি ওকে খুব ভালোবাসি রে।ওকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে ইচ্ছে করে না।কিন্তু এখন শিশিরের কথা ও তো।(পিছনে ফিরে দেখি শিশির দাঁড়িয়ে আছে।ইস,,,আমি তো ভেবেছিলাম জেরিন এসেছে।কত বড় ভুল করতে যাচ্ছিলাম এখন।)
আমি-আপনার কফি।(কফিটা এগিয়ে দিয়ে)
জোবান-হুম,,তুমি কখন এসেছো এখানে??
আমি-যখন আপনি এসব বলা শুরু করেছেন তখন।
জোবান-কি বলেছি আমি???(ওর থেকেই জেনে নিতে হবে ও ঠিক কি শুনেছে আর কি বুঝেছে।)
আমি-আমি নিচে যাচ্ছি।(বলে তাড়াতাড়ি চলে এলাম)
জোবান-না জানি তুমি কি শুনেছে,,,,তবে এটা সত্যি যে আমি তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিলেও ভালোবাসার মানুষ হিসেবে হয়তো মেনে নিতে পারবো না।
রাতে আমরা একসাথে বসে ডিনার করে যে যার রুমে চলে যাই।আমি রুমে এসে বিছানাটা একটু ঘুছিয়ে শুয়ে পরলাম।কিছুক্ষণ পর জোবানও এসে আমার পাশে শুয়ে পরে।বেশ কিছুক্ষণ এভাবে নিরবতায় কেটে যায়।
জোবান-শিশির,,,,
আমি-(চুপ করে আছি)
জোবান-এই শিশির,,,
আমি-(তাও চুপ করে আছি)
জোবান-শিশির,,,,আমি জানি তুমি এখনো ঘুমাওনি।
আমি-কি???
জোবান-আমার দিকে ফিরো।
আমি-(আগের মতই শুয়ে আছি)
জোবান-ফিরতে বলেছি না।(ওনার দিকে ফিরিয়ে)
আমি-এমন করছেন কেনো??(বিরক্ত হয়ে)
জোবান-আজকে ছাদে কি শুনেছে?
আমি-কিছু শুনিনি।
জোবান-সত্যিটা বলো।
আমি- আপনি বলেন,,,আপনি কি সত্যি অন্য কাওকে ভালোবাসেন???
জোবান-ভালোবাসলে???
আমি-ভালোবাসলে তাকে বিয়ে করতেন।শুধু শুধু আমাকে বিয়ে করে আমার লাইফটা না নষ্ট করলেও পারতেন।(রেগে)
জোবান-তোমাকে বিয়ে করে তোমার লাইফ কিভাবে নষ্ট করলাম???
আমি-অন্য একজন কে ভালোবেসে আপনি আমায় বিয়ে করেছেন তো আমাকে কি স্ত্রীর অধিকার দিতে পারবেন???
জোবান-আমি স্ত্রীর অধিকার দিই নি???
আমি-স্বামীত্ব ফলালেই স্ত্রীর অধিকার দেওয়া হয়ে যায়না।(বলেই আবার উল্টো দিকে ফিরে গেলাম)
জোবান-আমার আসলেই ভুল হয়েছে তাই না।(পেছন থেকে শিশিরকে জরিয়ে ধরে কথাটা বললো)
আমি-নিশ্চুপ।
জোবান-ওকে ঘুমাও।(বলে আমাকে জরিয়ে ধরেই শুয়ে রইলো।আর আমিও কিছুক্ষণ পরে ঘুমিয়ে গেলাম)
সকালে আমি ঘুম থেকে উঠে নাস্তা বানাতে যাই।কাল রাতে ঠিক করেছিলাম আমিই সকালে নাস্তা বানাবো।আমি রান্নাঘরে নাস্তা বানিয়ে মাত্র শেষ করলাম।হঠাৎ দেখি একজন মাঝবয়সী লোক সোফায় এসে বসেছে।লোক টা বসেই কাওকে চা দিতে বলছে।কেও ছিলোনা বিদায় আমিই ১ কাপ চা নিয়ে ওনার কাছে যাই।
আমি-আসসালামু আলাইকুম,,,আপনার চা।
লোকটা-ওয়ালাইকুম আসসালাম,,,আরে বউ মা যে।
আমি-জ্বী।
লোকটা-তুমি কেনো চা আনতে গেলে কাওকে বললেই তো হতো।
আমি-বাকিরা কাজ করছিলো তাই আমিই,,,
লোকটা-তা বউমা তোমার এখানে মন টিকছে তো???
আমি-জ্বী।(এনাকে তো আমি চিনতেই পারছিনা।আমার শ্বশুর কে ও তো আমি বিয়ের দিন থেকে দেখিইনি তাছাড়া আমি ওনাকে আগেও দেখিনি।তবে শুনেছি উনি নাকি বিয়েতে ছিলেন।তবে কি ইনি আমার কোনো চাচাশ্বশুর বা মামাশ্বশুর হবে।কিন্তু ওনারাও তো কালকে চলে গেছে।তাহলে উনি কে??)
লোকটা-বাবা মায়ের কথা মনে পরে।
আমি-হুম।(যা করেছে মনে রাখার প্রশ্নই উঠেনা)
লোকটা-মনে পরলে সোজা আমার কাছে চলে এসো কেমন।মনে রেখো আমি শুধু তোমার শ্বশুর না তোমার বাবাও বটে।
আমি-(ওওও তার মানে ইনিই আমার শ্বশুর।দূর বিয়ে তে মত ছিলোনা বলে ওনার পরিবারের কারোর কথাজানতে চাইনি শুধু জেরিন আপু বাদে)জ্বী বাবা।
লোকটা-আসো তোমার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করি।
আমি আর বাবা বসে বসে গল্প করতে লাগলাম।বেশ কিছুক্ষণ পরে ওনারা নাস্তা করতে আসে।আমি সবাই কে নাস্তা দিয়ে নিজেও খেতে বসি।নাস্তা করার সময় জোবান হঠাৎ করে একটা কথা বলে।যা শুনে আমার রাগ উঠে যায়।
-চলবে