তোমার হাতটি ধরে পর্ব-০৪

0
912

#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_৪
#Jechi_Jahan

আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি।বিয়ের মাত্র ২ দিন হলো আর এর মধ্যেই হানিমুন।বাহ বাহ বুড়ো তো খুব জলদিই বাবা হওয়ার প্ল্যান করছে।

জোবান-তো তোমরা কি বলো?

বাবা-হানিমুনে যাবি তা তো ভালোই।

জেরিন-বলছি যে ভাইয়া,,,বেশি জলদি হয়ে যাচ্ছে না।

জোবান-সব তো তুই ই বলিস।

জেরিন-ওহ,,,তো এই ব্যাপার।

বাবা-শিশির তোমার কি মত???

আমি-এত তাড়াতাড়ি,,,,

জোবান-ঠিক আছে আর কিছুদিন পরে যাব।তবে,,,,,,

জেরিন-তবে???

জোবান-তবে শিশিরকে তার আগে ওর বাবা বাড়িতেই থাকতে হবে।

আমি-কেনো???

জোবান-তোমার বাবা কিছুক্ষণ আগে ফোন দিয়ে বলে ছিলো তোমাকে নিয়ে ওখানে যেতে।বিয়ের পরে নাকি নিয়ম আছে বউকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার।

আমি-আমি যাবো না।

জোবান-আমি ও এটাই বলেছিলাম কিন্তু ওনারা তো মানছে না।

বাবা-না মানারই কথা,,,মনে আছে জেরিনের বিয়ের পর আমি শুধু আবিদকে বলতাম জেরিনকে যেনো এখানে নিয়ে আসে।তেমনি শিশিরের বাবা মাও বলছে।

জোবান-ওকে,,তাহলে যাওয়াই যাবে।

আমি-কিন্তু,,,,

জোবান-কোনো কিন্তু নয়,,,আমরা যাচ্ছি তাও আজকে (তুমি কেনো তোমার বাড়ীতে যেতে চাচ্ছো না সেটা তো আমার জানতেই হবে।আর এটা শুধুমাত্র তোমার বাড়ী তে গেলেই জানতে পারবো)

আমি-কি আজকেই???

জোবান-খুশি হয়েছো???

আমি-(কিছুই বললাম না)

নাস্তা করে আমি রুমে এসে আমার আর ওনার কাপড় গোছানো শুরু করি।আসলে রুমে আসার সময় এটা উনিই বলেছিলেন।আমি যখন কাপড় নিয়ে ব্যস্ত তখন উনি হুট করে এসে আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে।

আমি-উফফ ছাড়ুন তো।(ওনাকে ছাড়িয়ে)

জোবান-কি হয়েছে মন খারাপ নাকি???

আমি-মন খারাপ হলে আপনার কি???

জোবান-আমার কি মানে??(খাটে বসে)

আমি-মানে আমায় তো ভালোবাসেন না তাহলে আমায় নিয়ে চিন্তা করছেন কেনো???

জোবান-তুমি চাও আমি তোমাকে ভালোবাসি।

আমি-আমার চাওয়া,না চাওয়া তে আপনার কি কিছু এসে যায়।

জোবান-বলেই দেখো না।

আমি-বলবো???(ওনার পাশে বসে)

জোবান-বলো।

আমি-আমি বাড়ি যেতে চাই না।

জোবান-কেনো??

আমি-এমনিই।

জোবান-তাহলে চলো হানিমুনে যাই।

আমি-দূর দুইটাই ফালতু।

জোবান-তাহলে চলো বাড়িতেই যাই।

আমি-এখন দেখি বাড়ী থেকে হানিমুনই ভালো।

জোবান-শান্ত কিছুক্ষণ আগে ফোন দিয়ে কান্না করছিল তোমাকে দেখবে বলে।

আমি-(আসলে তো,,,শান্ত তো আমায় না দেখে থাকতে পারেনা।এই জন্য যখনই কোথাও যেতাম শান্তকে সাথে নিয়েই যেতাম।ঠিক তো,,,বাবা মায়ের উপর রাগ করে আমার ভাই বোনদের কষ্ট দেওয়া ঠিক হচ্ছে না।)

জোবান-এখন কি বলো,,,যাবে???

আমি-হুম যাবো।

জোবান-ঠিক আছে তাহলে কিছুক্ষণ পরে বের হবো।

আমি-আচ্ছা।

দুপুরের দিকে আমি আর জোবান বাড়ীতে গেলাম।বাড়ী এসে দেখি আমার পরিবারের সদস্য ছাড়া আর কেও নেই।আমি ঘরের ভেতর ডুকে সোজা সোফায় গিয়ে বসে পরি।আমার কাজে উপস্থিত জোবান অবাক।

জোবান-(বিয়ের পর মেয়েরা যে বাবার বাড়ী আসলে এমন করে সেটা তো জানা ছিলো না।)এটা কি???

আমি-কোনটা???

জোবান-মানে এসেই বসে গেলা বাবা মা কে সালামও করছো না।

আমি-ওয়েট আমি আসছি।

জোবান-কিসের ওয়েট আসো।

ওনার কথায় আমি উঠে বাবা আর মাকে সালাম করি।আর এর মধ্যে শান্ত আর শিরিন ও আমাদের কাছে আসে।শান্ত আমাকে সালাম করে জরিয়ে ধরে।শান্তকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও খুব খুশি আমাকে দেখে।আজকে না আসলে হয়তো শান্তর এমন হাসি খুশি মুখটা দেখতে ই পারতাম না।বাবা মা আমাদের কে ফ্রেশ হতে রুমে পাঠিয়ে দিলো।আমি আর উনি একসাথে রুমে আসি।উনি রুমে এসেই ওয়াও বলে উঠলেন।

আমি-ওয়াও কেনো???

জোবান-তোমার রুম টাতো খুব সুন্দর।

আমি-ওহ।

জোবান-ওয়াও বারান্দা ও আছে।(যেতে নিয়ে)

আমি-ওই,,,বারান্দায় একদম যাবেন না।

জোবান-কেনো???

আমি-আমি আমার বারান্দায় কাওকে যেতে দিই না।

জোবান-তাই বুঝি।(আমার কাছে এসে)

আমি-হুম।(মুচকি হেসে)

শিরিন-আপু,,,,

আমি-হুম।(ওনার থেকে সরে গিয়ে)

শিরিন-মা তোমাদের নিচে ডাকছে।

আমি-আসছি।

আমরা নিচে গেলে মা আমাদের খাবার দিয়ে দেয়।আমরাও খাওয়া দাওয়া করে নিই।খাবার শেষে আমি শিরিন আর শান্তর কাছে যাই।আর জোবান বাবার সাথে বসে কথা বলতে থাকে।

আমি-শান্ত।(দরজার কাছে দাঁড়িয়ে)

শিরিন-আরে আপু।

শান্ত-ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো ভেতরে আসো।

আমি-হুম।

শান্ত-তা কেমন আছো???

আমি-এই তো ভালো।তুই কেমন আছিস???

শান্ত-আমিও ভালো আছি।

আমি-আচ্ছা তুই কালকে শিরিনের সাথে যাসনি কেন?

শান্ত-আমাকে নেয়নি বলে।

আমি-ওহ।

শিরিন-আপু তোমার জন্য একটা নিউজ আছে।

আমি-কি নিউজ।

শান্ত-সুমন ভাই আছে না???

আমি-হুম,,,কি করেছে ও??

শান্ত-কালকে বিকালে আমি যখন বাইরে হাঁটতে গেলাম তখনই ওকে আর ওর দলবলকে দেখলাম।

আমি-তোকে কিছু করেনি তো???

শান্ত-না,,,কিন্তু ও তোমার বিয়ের খরব জেনে গেছে।

আমি-জানলে জানুক তাতে আমার কি???

শিরিন-কিন্তু আপু আমার ভয় করছে,,,ও যা ছেলে।তোমাকে তো কম বিরক্ত করেনি।

আমি-আচ্ছা এসব বাদ দে।

শান্ত-কি বাদ দিবো আপু,,,তুমি তো এখনো পুরো কথা টাই শুনোনি।

আমি-কি কথা।

শান্ত-ও আমাকে দেখে তোমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে ছিল।আর আমিও সব বলে দিই শুধু তোমার শ্বশুর বাড়ির ঠিকানা বাদে।

আমি-ওহ,,আর কি কিছু বলেছে???

শান্ত-বলেছে বিয়েটা করে নাকি তুমি অনেক বড় ভুল করেছো।এর জন্য নাকি তোমাকে প্রস্তাতে হবে।আমার তো এখন চিন্তা হচ্ছে তোমার ও নিশ্চয়ই চিন্তা হচ্ছে।

আমি-ওর কথায় আমার ঘন্টা চিন্তা হবে।

শিরিন-আপু তুমিও না।

আমরা তিন ভাই বোন একসাথে বসে অনেকক্ষণ গল্প করলাম।গল্প করতে করতে জোবানের কথা ভুলেই গেছিলাম।হঠাৎ করে শান্ত বলে উঠলো।

শান্ত-আপু চলনা দুলাভাইয়ের কাছে যাই।

আমি-চল।

আমরা তিনজন সোফার রুমে গিশে দেখি ওখানে শুধু জোবানই বসে আছে বাবা নেই।আমরা গিয়ে ওনার কাছে বসি।জোবান এবার আমাদের বলে।

জোবান-কই ছিলা তোমরা???

আমি-কই ছিলাম মানে বাড়ীতেই ছিলাম।

জোবান-আমি যে এতোক্ষণ একা ছিলাম সেদিকে কোনো খেয়াল আছেন তোমাদের।

শান্ত-সরি দুলাভাই।

জোবান-ওকে বাদ দাও,,,আচ্ছা এখানে কোনো ঘুরার জায়গা আছে।

আমি-হুম আছে তো।

জোবান-তো চলো আজকে ঘুরতে যাই।

শান্ত-না,,,আজকে হাঁটতে যাবো।

জোবান-তো চলো।

আমরা চারজন একসাথে হাঁটতে বের হলাম।জোবান আমার পাশে ছিলো বিদায় আমার হাতটা ধরে হাঁটছে।হাঁটতে হাঁটতে আমরা কিছুটা সামনে চলে এলাম।আর সামনে গিয়েই দেখতে পেলাম সুমন আর ওর দলবল কে।আমি ওকে দেখে ভয় পেয়ে যাই।

আমি-জোবান চলুন না আমরা ওদিকে যাই।

জোবান-কেনো??

আমি-ওদিকে একটা বাগান আছে। চলুন আপনাকে দেখাব।

জোবান-না আগে এদিকে যাবো তারপর।(বলে আমাকে নিয়ে হাঁটতে লাগলো)

শিরিন-তুমি একদম নরমাল থাকবে।সুমন কে একদম বুঝতে দিবেনা যে তুমি ভয় পাচ্ছো।(কানে কানে)

আমরা সুমনের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি কিন্তু ওরা খেয়াল করেনি।ওদের ফেরিয়ে আসার পর সুমন আমাকে ডেকে ওঠে।

সুমন-আরে শিশির না???

আমি-(ভয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম)

জোবান -তোমাকে ডাকছে।

আমি-থাক সামনে চলুন।।

জোবান-আরে ডাকছে চলো তো।(বলে আমাকে সুমন এর কাছে নিয়ে গেলো)

সুমন-কেমন আছো শিশির??

আমি-এই তো ভালো।

সুমন-তা ইনি বুঝি আমাদের দুলাভাই।(জোবানকে দেখিয়ে)

জোবান-হুম।

সুমন-কেমন আছেন???

জোবান-আমিও ভালো আছি।

আমি-আচ্ছা সুমন ভাই আসি আজকে।

সুমন-আরে দাঁড়াও তোমার স্বামীর সাথে একটু কথা বলে নিই।

জোবান-হুম।

সুমন-ভাইয়া বলতে হবে আপনার ভাগ্য আছে।

জোবান-কেনো???

সুমন-কারণ আপনি শিশিরকে পেয়েছেন।আসলে শিশিরকে পেতে হলে ভাগ্য লাগে যা আপনার ছিলো।

জোবান-ধন্যবাদ।

সুমন-হুম।

আমি-জোবান,,,আমাদের এখন বাড়ী যেতে হবে অনেক দেরি হয়ে গেছে।

জোবান-ওদিকে যাবেনা।

আমি-কালকে যাবো।

আমরা ওখান থেকে বাড়ী এসে পরলাম।বাড়ী এসে আমি সোজা রুমে গিয়ে শুয়ে পরলাম।এত ভয় লাগছে যে মনে হচ্ছে এমন ভয় কোনোদিন পাইনি।আমি বিছানায় শোয়ার কিছুক্ষণ পরই ঘুমিয়ে পরি।একে বারে রাতে জোবানের ডাকে আমার ঘুম ভাঙ্গে।

আমি-কি??

জোবান-তুমি এটা কোনো কাজ করলা??

আমি-কি করলাম আমি???

জোবান-তুমি কেনো ঘুমিয়ে গেছো।

আমি-মানে??

জোবান-তুমি ঘুমিয়ে ছিলে তাই আমি একা একা বসে ছিলাম।বোরিং লাগছিলো খুব তোমাকে ছাড়া।

আমি-তো জাগিয়ে দিতেন।

জোবান-জাগাতে ইচ্ছে করেনি।

আমি-ওহ,,আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

জোবান-হুম।

আমি ওয়াশরুমে এসে শাড়ীটা খুলে একটা কামিজ পরে ফেললাম।হাত মুখ ধুয়ে রুমে এসে জোবানের সাথে ডিনার করতে গেলাম।ডিনার করে এসে আমি আর জোবান কিছুক্ষণ কথা বলতে লাগলাম।আমাদের কথার মাঝেই উনি সুমন ভাইয়ের কথা তুললেন।

জোবান-তোমার সুমন ভাইয়ের কথাগুলো সুন্দর।

আমি-হঠাৎ ওনার কথা তুললেন।

জোবান-ওই মনে পরে গেলো।

আমি- আমার না ঘুম আসছে না।

জোবান-আমারও।

আমি-হুম,,,

জোবান-চলো একটা গেম খেলি।

আমি-কি খেলবেন???

জোবান-সাপলুডু।

আমি-ওয়াও,,,ওয়েট আমি বোর্ড আনি।

আমি দৌড়ে গিয়ে আলমারির উপর থেকে বোর্ড আনি।বোর্ড আনলে উনি খেলা শুরু করে।সাপলুডুতে আমি তিন বার জিতি আর জোবান পাঁচ বার জিতে।খেলার মাঝখানে আমার ঘুম চলে আসে।তাই আমি ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়ে শুয়ে পরলাম আর ঘুমিয়ে গেলাম কিছুক্ষণ পরে জোবানও আমার সাথে শুয়ে পরে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি আর জোবান একসাথেই নামাজ পরি।উনি নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে পরেন।আমি উঠে আমাদের বাড়ীর সামনের পুকুর পাড়ে যাই।পুকুর পাড়ে বসে রইলাম।হঠাৎ পেছন থেকে সুমনের আওয়াজ শুনি।পেছনে ফিরে দেখি সত্যিই সুমন দাঁড়িয়ে আছে।

সুমন-কালকে তো পালিয়ে গিয়েছিলে আজকে কি করবে।

-চলবে।