পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ পর্ব-১৩+১৪

0
5980

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব – ১৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফারহাজ খেয়াল করে নিলয়ের সাথে কথা বলতে বলতে ফিহা নজর একটি ড্রেসের দিকে আটকিয়ে যায়। কালো একটি বারবি গাউন দেখেই মনে হচ্ছে অনেক এক্সক্লুসিভ। ফিহা ভেবে উঠে নাহ নাহ এই ড্রেস তার জন্য নাহ। কেননা তা মা তাকে শিখিয়েছে সবসময় ভালো বাবা আর মামনি যা দেয় তাতেই তার সন্তুষ্ট থাকা উচিৎ। ফারহাজ কিছুটা হলেও বোধহয় বিষয়টি বুঝতে পারছে তবুও সে চুপ থাকে।
ইরিনা তাঁকিয়ে দেখে ফারহাজ ফিহাদের সাথে কথা বলছে। নাহ এখন ফারহাজকে আলাদা ডেকে সব সত্যি কথা বলে দিবে। ভেবেই ফারহাজ এর দিকে পা বাড়ালো ইরিনা তখনি একটা লোক তাকে ধাক্কা দিলো। ইরিনা একটু হলেই পড়ে যেতো। নিজেকে কোনোরকম সামলালো সে। লোকটা তাকে সরি বলে তাড়াতাড়ি হুড়া করে চলে গেলো। ইরিনা বলে উঠলো–কেমন লোকরে বাবা! আরেকটু হলেই পড়ে যেতাম। তখনি ইরিনা খেয়াল করে নীচে একটি ছোট্ট চিরকুট পড়ে আছে। ইরিনা আগ্রহ বশত চিরকুট টা খুলে দেখলো সেখানে তারই জন্য একটি মেসেজ রয়েছে। চিরকুট টা পড়ে ভয়ে ইরিনার হাত-পা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেলো কেননা চিরকুট লেখা আছে—
ইরিমনি এন্গেজমেন্ট এর শপিং করতে এসেছো বুঝি? ভালো ভালো খুব ভালো! ভালো করে শপিং করে নাও তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই! কিন্তু সমস্যাটা আমার কখন হয় জানো? উমম তুমি গেস করো নাহ থাক তুমি পারবেনা! আচ্ছা আমিই বলে দেই আমার সমস্যাটা তখন হয় যখন আমাদের পার্সোনাল কথা তুমি একটা বাইরের লোককে বলে দিতে চাও হ্যা আমি ফারহাজকেই উদ্দেশ্য করে বলছি! আমার আর তোমার মাঝে ফারহাজ থার্ড পার্সন ছাড়া আর কিছুই নাহ! তুমি কি ভেবেছো ফারহাজকে সব কিছু বলে সব তুমি সবকিছু থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে? ফারহাজ এর মতো অইরকম ইন্সপেক্টরদের শায়েস্তা করা আমার বা হাতের খেলা! অইরকম ২-৪ টা পুলিশ আমার পকেটেই থাকে সো এতো পিনিকড হইয়ো নাহ বেবস! ফারহাজ মির্জা আমার কিচ্ছু করতে পারবেনা। উড়তে দিয়েছি বলে এতোটাও উড়োনা যাতে পরবর্তিতে তোমার ডানা আমাকে কেটে দিতে হয়! ভালো থেকোএন্ড এইসব সস্তা চালাকি করার আগে এক্টিবার আমার কথাগুলো মনে রেখো আর হ্যা ভালো করে শপিং করো ওকে গুড বাই!

চিরকুট টা পড়ে কিছুক্ষন থম মেরে রইলো ইরিনা!

তখনি মিসেস প্রিয়া ইরিনার কাছে এসে বলে উঠলো–

—-ইরিনা তুমি এইখানে? ফারহাজ কোথায়?

মিসেস প্রিয়াকে দেখে ইরিনা যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক করার চেস্টা করলো।চিরকুট টাও লুকিয়ে ফেললো!

ইরিনা বলল- অইতো ফারহাজ নিলয়দের সাথে!

মিসেস প্রিয়া ফারহাজ দের দিকে তাঁকাতেই দেখে ফারহাজ আর নিলয় অই আশ্রিতার মেয়েটার সাথে কথা বলছে যা মোটেও ভালো লাগছেনা মিসেস প্রিয়ার!

তিনি ইরিনার হাত ধরে বলে উঠে–

চলো! ফারহাজ কে ডেকে আনি

ইরিনাঃ কিন্তু!

ইরিনার কথা গরুত্ব না দিয়ে মিসেস প্রিয়া ফারহাজ দের কাছে গিয়ে দেখে নিলয় মুখটা কেমন কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। আর ফিহা ও ফারহাজ হেঁসে যাচ্ছে। নিলয়েও কোনোরকম কৃতিম হাঁসি ঝুলিয়ে রেখেছে।

মিসেস প্রিয়া( ফারহাজ এর মা) কিছুটা আদুরে কন্ঠে বলে উঠে—
তুমি এইখানে?? আর অইদিকে ইরিনা একা একা দাঁড়িয়ে ছিলো ফারহাজ। তাড়াতাড়ি চলো তোমাদের আংটির মাপ দিতে হবে!

ফারহাজঃ ঠিক আছে চলো!

নিলয় ঃ লিটেল প্রিন্সেস চলো তুমি আমাদের সাথে!

প্রিসেস প্রিয়া নিলয়কে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠে–

নাহ নাহ ওকে আবার যেতে হবে কেন?
আমরা যাচ্ছি ও থাকুক!

ইরিনাঃ ফিহা কি একা থাকবে?
নাহ মানে বাকিরা তো শাড়ির স্টলে! আমাদের সাথে ফিহা যাক তাহলে!

মিসেস প্রিয়াঃ নাহ নাহ নিলয় আছে তো!

ফারহাজ কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিসেস প্রিয়া ফারহাজকে থামিয়ে বলে উঠে–

নিলয় না হয় ফিহার সাথে থাকুক । তাহলেই তো হয়।

নিলয়ঃ আমার কোনো সমস্যা নেই ( হেঁসে)

ফিহাঃ কুটনি মহিলা একটা হুহ! এই বাঁচাল এর বকবক সহ্য করতে হবে। ইচ্ছে করছে কুটনি মহিলাটার সাথে ঝগড়া পারি কিন্তু মা মানা করে দিয়েছে।

( মনে মনে)

ফিহা গাল ফুলিয়ে ফেলে।

ইরিনা ও ফারহাজ আন্টির মাপ দিতে চলে যায়।

নিলয় বলে উঠে–

লিটেল প্রিন্সেস সবাই তো নিজেদের কেনাকাটায় ব্যস্ত চলো আমরাও একটু নিজেদের জন্য কিছু কিনে নেই!

ফিহাঃ লাগবে নাহ হুহ!

নিলয়ঃ চলো আমার বরং তোমাকে একটা ড্রেস চুজ করে দেই। প্লিয চলো নাহ আমার সাথে

সে কিছু বলবে তার আগেই নিলয় তাকে শপটার নিয়ে যায়।

এদিকে,

ইরিনার হাতে মিসেস প্রিয়া বিভিন্ন ডায়মন্ড এর রিং দেখাচ্ছে ইরিনার প্রচন্ড টেনশন তাও সে মুখে মিথ্যে হাঁসি ঝুলিয়ে রেখেছে।

ফারহাজ এর এইসবে কিচ্ছু ভালো লাগছেনা। আচ্ছা অই পুচকি টা কি করছে।

ফারহাজ মিসেস প্রিয়ার কাছে গিয়ে বলে উঠলো–
তোমরা তাহলে আরো কিছু কেনাকাটা করো আমি আসছি! একটু কাজ আছে

মিসেস প্রিয়াঃ সেকি?
এখন কোথায় যাবি? নাহ তোর কোথাও যাওয়ার দরকার নেই।

ফারহাজ কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো–
মা প্লিয এখন আমাকে আর আটকিয়ো নাহ!

মিসেস প্রিয়া ছেলের এমন কন্ঠে আর কিছু বলার সাহস পেলেন নাহ!

ছেলেটা এমনিতেই একটু বদমেজাজী টাইপের!

ফারহাজঃ ইরি তাহলে আমি আসছি তুমি থাকো,

নিলয় ফিহার দিকে একটি ছোট্ট বারবি ডলের গাউন এগিয়ে দিয়ে বলে উঠে—
পার্ফেক্ট লিটেল প্রিন্সেস ! তোমাকে একেবারে এই গাউনে আমার স্বপ্নের থুড়ি রিয়েল প্রিন্সেস লাগবে।

গাউন টা বড্ড ছোট্ট ফিহা কখনোই এতো ছোট্র ড্রেস কখনো পড়েনা!

ফিহা কিছুটা মুখ ছিটকিয়ে বলে—
ইসস এইটা নাকি গাউন নাকি ২ -৩ বছরের বাচ্ছাদের ফরাক!

নিলয়ঃ মানে কি?( অবাক হয়ে)

ফিহা কিছুটা গলা খাকড়ি দিয়ে বলে উঠলো–
মানে টা খুবই সিম্পল! এইরকম সাইজের গাউন
২-৩ বছরের বাচ্ছারাই পড়ে ওকে!
আর ফিহা বাচ্ছাদের ড্রেস পড়েনা!

নিলয় ফিহার হাত ধরে বলে উঠে–
ঠিক আছে চলো!
অন্য কোনো শপের দিকে যায়।

তখনি সেখানে ফারহাজ চলে আসে। নিলয় ফিহার হাত ধরা অবস্হায় দেখে ফারহাজ এর কেনো জেনো প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।

নিলয়ের স্পর্শে ফিহার প্রচন্ড অসস্হি হচ্ছে।

ফিহা কিছু বলবে তার আগেই ফারহাজ তাদের মাঝখানে এসে নিলয়ের থেকে ফিহার হাত ছাড়িয়ে নেয়।

নিলয়ঃ ব্রো তুমি এখানে??

ফারহাজঃ তুই এইখানে কি করছিস??

নিলয়ঃ আমি তো লিটেল প্রিন্সেস এর সাথে কয়েকটা ড্রেস চুজ করছিলাম!

ফারহাজ বলে উঠে—
কাকি তোকে ডাকছে যা তুই এখন কাকির কাছে!

নিলয়ঃ কিন্তু ভাইয়া লিটেল প্রিন্সেস!

ফারহাজঃ আমি তোকে যেতে বলেছি নিলয় ( শান্ত কন্ঠে)

নিলয় কিছু বলতে গিয়েও ফারহাজকে বলতে পারলো নাহ। কেননা ফারহাজ প্রচন্ড কেনো যেনো প্রচন্ড রেগে আছে।

নিলয়ঃ ঠিক আছে ভাই আমি তাহলে আসি।

এই বলে নিলয় চলে যায়।

ফিহা ফারহাজ এর দিকে তাঁকিয়ে দেখেরাগে একেবারে নাকের ঢগা লাল হয়ে গেছে।
ফিহা ভয়ে শুকনো ঢুক গিলল।

ফিহা কিছু বলবে তার আগেই ফারহাজ বলে উঠে—

চুপ আর একটা কথাও নয়!

এই বলে সে ফিহার হাত ধরে নিয়ে যায়।

ফিহার কেন যেনো ফারহাজ এর স্পর্শে অসস্হি লাগছেনা।

ফারহাজ ফিহাকে বাইরে এনে বলে উঠে—
তোমার যখন এতোটাই অসস্হি লাগছিলো তাহলে সেখানে চুপ করে ছিলে কেন??
এমনি তো আমার সাথে ঠিকই পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করতে পারো!

ফিহা চুপ!

ফারহাজ নিজেকে কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠে–
ফিহা আমি জানি কিছুটা হলেও তোমার মধ্যে ম্যাচুরিটি আছে
আমি৷ এইটাও জানি নিলয়ের তেমন খারাপকোনো ইন্টেনশন ছিলো নাহ কিন্তু যখন তোমার অসস্হি লাগবে তখন বলাটাই শ্রেয়! চুপ করে থাকবেনা

ফিহা মাথা নাড়ায়!

ফারহাজঃ বাইরে ঘাড়ি দাঁড়িয়ে আছে!
তোমার জন্য বোধহয় সবাই ওয়েট করছে।
তুমি এখন যেতে পারো! আর হ্যা

ফারহাজ ফিহার দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দেয়।

ফিহা ফারহাজ এর দিকে জিজ্ঞাসু দৃস্টিতে তাঁকায়।

ফারহাজঃ বাসায় গিয়ে দেখবে কেমন। ছোট্ট একটা সারপ্রাইজ!

ফিহা খুশি হয়ে বলে উঠে–
আমার জন্য সারপ্রাইজ লাটসাহেব?

ফারহাজ ঃ হুম

ফিহা ঃআমাকে কেউ এর আগে সারপ্রাইজ এ দেইনি

ফিহা থ্যাংকু বলে খুশিতে লাফাতে লাফাতে চলে যায়।

ফারহাজ ঃ মেয়েটা সত্যিই পারে। গিফট পেয়ে একটু আগে কি হয়েছিলো তা ভুলেই গিয়েছে।

তখনি ফারহাজ এর ফোনে একটা কল আসে।

ফারহাজ— ওয়াট???
রুপ তুমি রেডি থাকো আমি এখুনি আসছি।






।চলবে কি?

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব – ১৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফারহাজ হন্তদন্ত হয়ে শপিং মল থেকে বেড়িয়ে যায় গাড়ি নিয়ে কাউকে কিছু না বলে। ফারহাজ দ্রুত ড্রাইভ করে যাচ্ছে। ফিহার মা ফিহার কাছে এসে বলে উঠে–কিরে তুই কোথায় ছিলি? ফিহা বলে উঠলো-
আমি তো ইরিয়াপুদের সাথে ছিলাম। ফিহার মা ফিহার হাতে একটা শপিং ব্যাগ দেখে বলে উঠে–
তোর হাতে এইটা কী? কে দিয়েছে? ফিহা কিছু বলবে তার আগেই ইরিনা আর মিসেস রিহা এসে বলে উঠে–
ফাতেমা আমাদের হয়ে গিয়েছে চলো আমরা বরং যাই।

ফাতেমা ঃ ঠিক আছে চলুন!

ফারহাজ কোনোরকম গাড়ি থামিয়ে থানার ভিতরে
গেলো। সব অফিসাররা মাথা নিচু করে আছে।
ওসি সাহেব এসেছেন।
ওসি সাহেবকে দেখে ফারহাজ তাকে স্যালুট জানালো তাকে।

ওসি সাহেব ফারহাজ কে দেখে বলে উঠে–
ফারহাজ বসো!

ফারহাজ জ্বী স্যার বলে নিজের আসনে বসলো।

ওসি সাহেব গম্ভির সুরে বলে উঠে-
তুমি নিশ্চই নিউজ টা পেয়েছে??

ফারহাজঃ জ্বী স্যার!

ওসি সাহেবঃ আমি তোমাকে একটা দায়িত্ব দিয়েছিলাম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খুনিকে ধরতে।
আজকে সে ৮ টা মার্ডার করেছে।
দিনের পর দিন সেই একি অন্যায় করেই যাচ্ছে অথচ আমরা কি করছি?
উপর মহল থেকে আমার কত প্রেশার আসছে ফারহাজ তুমি তা জানো???

ওসি সাহেবের কথায় সবাই মাথা নিচু করে আছে।

ফারহাজ নিচু স্বরে বলে উঠলো—
আমরা নিজেদের বেস্টা টা দেওয়ার চেস্টা করছি কিন্তু খুনির একটা ক্লু পাচ্ছিনা।
তার চেহারার বর্ননাও কেউ দিতে পারছেনা।
কিন্তু আমরা আমাদের যথাসম্ভব চেস্টা করছি।

ওসি সাহেব কিছুটা রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলো–
আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা ফারহাজ!
১০ দিন আমি শুধু তোমাকে ১০ দিন দিলাম।
এর মধ্যে এই কেসের আমি কোনো কিনারা চাই।

ফারহাজ কিছু বলবে তার আগেই ফারহাজকে থামিয়ে ওসি সাহেব বলে উঠলেন–
আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাইনা ফারহাজ।

তুমি আর তোমার টিম কীভাবে কি করবে সেইটা একান্ত তোমার ব্যাপার। কিন্তু আমি এই কেসের একটা কিনারা চাই গট ইট??

ফারহাজঃ জ্বী স্যার!

ওসি সাহেব গটগট করে বেড়িয়ে গেলেন।

ফারহাজ নিজেত কেবিনের দিকে গেলো।

ফারহাজ এর পিছনে রুপ ও গেলো।

ফারহাজ নিজের ডেস্কে গিয়ে একের পর এক ফাইল চেক করছে।

রুপঃ স্যার!

ফারহাজঃ সারা শহরে প্রত্যেকটি মালবাহি ট্রাক চেক করো। আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাইনা।

রুপঃ কিন্তু স্যার! কেন?

ফারহাজঃ খুনি অন্তত নিজে এসে তো আর খুন গুলো করছেনা। নিজের লোকেদের দিয়ে করাচ্ছে।তাও কোনো মেশিং গান জাতীয় কিছু দিয়ে নয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে
দিনের বেলায় কারো সাধ্য নেই ধারালো অস্ত্র সাপ্লাই করবে। তার মানে খুনি তার লোকদের নিশ্চই ধারালো অস্ত্র সাপ্লাই করছে কিন্তু রাতের বেলা
আর হতে পারে মালবাহী ট্রাকজাতীয় কিছু দিয়ে।

রুপঃ জ্বী স্যার আপনার আইডিয়াটা সঠিক হতে পারে।
আর ওসি স্যার তো আমাদের যেকোনো স্টেপ নিতে
পারমিশন দিয়েই দিয়েছে।

ফারহাজ কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলে উঠে–
আমাদের প্ল্যান ফ্লপও হতে পারে। কেননা খুনি কিছুটা অদ্ভুদ আর চালাক প্রকৃতির।
সে বড় বড় ব্যক্তিদের টার্গেট করছে। তার মানে সে অনেক কিছু করার ক্ষমতা রাখে।
জানি না কি করে এই কেসের কিনারা করবো।

রুপঃ যত দিন যাচ্ছে এই কেস রহস্যময় হয়ে যাচ্ছে।
আমরা যেনো দিনের পর দিন এই কেসের গভীরে ঢুবে যাচ্ছি।

ফিহা নিজের ঘুড়ে ঢুকে পড়ে।
সে খুব এক্সাইটেড। আচ্ছা তার লাটসাহেব তার জন্য কি দিয়েছে?

ফিহা আর ওয়েট করতে পারছেনা। সে তাড়াতাড়ি প্যাকেট টা খুলে ফেলে।

ফিহা প্যাকেট টা খুলতেই সে অবাক! একটা সুন্দর ড্রেস

এই ড্রেস ই তো সে ড্রেস যেইটা সে অই শপে দেখেছিলো। ফিহার খুব পছন্দ ও হয়েছিলো কিন্তু
অনেক এক্সক্লুসিভ ছিলো বিদায় সে কিনতে পারিনা।

ফিহা ঃ কিন্তু লাটসাহেব জানলো কী করে?
এই ড্রেস টা আমার পছন্দ হয়েছিলো।

ফিহা কিছুক্ষন বসে থেকে আবারও বলে উঠে–
সত্যি লাটসাহেব বদমেজাজী হলে কি হয়েছে।
মনটা অনেক ভালো। মা ঠিকই বলে যাদের রাগ বেশি তাদের মন থাকে সুন্দর। লাটসাহেব কে থ্যাংকু তো দিতেই হবে। কিন্তু কীভাবে?? থাক পরে দেখা হলে দিয়ে দিবো হি হি হি।

ফিহা ড্রেসটা নিজের গাঁয়ে জড়িয়ে নেয়। এই ড্রেসটা ফিহার গাঁয়ে একেবারে মানিয়েছে। যেনো এই ড্রেস টা ফিহার জন্যই তৈরি।

তখনি ফিহার মা ডেকে উঠে–
ফিহা মা খেতে আয়? কত বেলা হয়েছে।

ফিহা ড্রেস টা নিজের আলমারিতে রেখে বলে উঠে–

আসছি মা!

আজকে ফিহা নিজের হাতে দিয়ে রান্নাঘরে গাজরের হালুয়া বানিয়েছে।

হালুয়ার গন্ধে যেনো চারেদিকে মৌ মৌ করছে।

ফিহার মা ফিহার কাছে এসে বলে উঠে–
আমার ফিহা মা আজ রান্নাঘরে কী ব্যাপার?

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

ফিহা মুচকি হেঁসে বলে উঠে—
হালুয়া রান্না করছি!
ভাবছি আজকে বন্ধুদের খাওয়াবো (ডাহা মিথ্যে কথা)
আসলে ফিহা আজকে ফারহাজ এর জন্য হালুয়া বানিয়েছে বলতে গেলে ফারহাজ কে ধন্যবাদ বলার এক অন্যরকম প্রন্হা। ইরিনার থেকে শুনেছে ফারহাজ এর গাজরের হালুয়া খুব পছন্দের।

ফিহার মাঃ তোর হালুয়া মানেই বেস্টা হালুয়া।
তুই একেবারে আ…. কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলো ফিহার মা।

ফিহার মা তার দিকে জিজ্ঞাসু দিকে তাঁকিয়ে আছে—

ফিহাঃ কি বলছিলে তুমি মা?

ফিহার মাঃ নাহ নাহ কিছুনা।
তাড়াতাড়ি কর ফিহা। স্কুলের সময় হয়ে গেছে।

স্কুলে,,,,

পটকা, ফিহা, টিউপ আর সিমি অংক ক্লাস করছে।
আর কিছুদিন পরেই তাদের বার্ষিক পরিক্ষা।
কিন্তু অংক ক্লাস করতে তাদের মোটেও ভালো লাগছেনা। অংক ক্লাস মানেই তাদের কাছে বিরক্তিকর। এদিকে অংক স্যার মশাই একটা অংক করতে দিয়ে এইযে ঘুম একটা দিয়েছে তার আর উঠার নাম নেই।

পটকাঃ আমার প্রচন্ড বোরিং লাগছে।

তখনি ছুটির ঘন্টা বেজে যায়।

সব স্টুডেন্টরা হুই-হুল্লড় শুরু করে দিলো।

ফিহা ও বাকিরা মাঠে চলে এলো।

পটকা কিছুক্ষন ঘ্রান নিয়ে বলে উঠলো–/

এরা তোরা একটা ঘ্রান পাচ্ছিস???

সিমিঃ কিসের?

টিউপঃ গাজরের হালুয়া।

ফিহাঃ এইরে এই পিটুক গুলো জানতে পারলে সব খেয়ে শেষ করে ফেলবে।
(মনে মনে)

সবাই ফিহার দিকে তীক্ন দৃস্টিতে তাঁকায়।

ফিহাঃ এই তোরা এইদিকে কি দেখছিস??

পটকাঃ দোস্ত তুই আজকে আমাদের জন্য
গাজরের হালুয়া বানিয়েছিস?
বাহ দোস্ত তোর ভালোবাসা দেখে আমাদের কান্না চলে আসলো।

টিউপ তো কেঁদেই দেয়।

সিমি ঃ কিরে বলদ তুই কাঁদিস কেন??

টিউপঃ ফিহার ভালোবাসা দেখ চোখের জল আটকাতে পারলাম নাহ।

ফিহাঃ চুপ বান্দররা। তোদের জন্য আনেনি।
অন্য আরেকজন এর জন্য এনেছি।

পটকাঃ তুই এতো স্বার্থপর কবে হয়ে গেলি?

ফিহাঃ যেদিন তোরা আমাকে অই খুড়ো বুড়ির বাগানে একা ফেলে গিয়েছিলি।
তোদের মতো পেটুক দের আমি একটুও হালুয়া দিবো নাহ

এই বলে ফিহা দেয় দৌড়।

সিমি, পটকা, টিউপ হা হয়ে রয়েছে।

ফারহাজ নিজের কেবিনে এসে চেয়ারে বসে পড়লো।
আজকে অনেক ক্লান্ত লাগছে তার।
সারাদিন শুধুই অন ডিউটিতে ছিলো এখন লাঞ্চ টাইম।

ফিহা স্কুল ড্রেস পড়ে থানায় এসেছে।

রুপ ফিহাকে দেখে বলে উঠে–

আরে তুমি সেইনা যে আম চুরি করো!

ফিহা মুখ ফুলিয়ে বলে —হ্যা তে কি হয়েছে??
একবার ই চুরি করেছি ওকে? তাও একা নাহ বন্ধুরা মিলে

রুপঃ তুমি এখানে কি করছো?

ফিহাঃ লাটসাহেব এর সাথে একটু দরকার ছিলো।

রুপঃ স্যার কিছু কাজ শেষ করে মাত্র নিজের কেবিনে গিয়েছে তুমি গেলে এখন ডিস্টর্ব ফিল করবে।

ফিহা ঃ এইযে আপনি জানেন আমি কে?

রুপঃ কে?

ফিহাঃ লাটসাহেব এর একমাত্র হবু শালিকা ওকে??
আমাকে যেতে দিন বলছি।

রুপকে কিছু বলতে না দিয়ে ফিহা হনহন করে ঢুকে গেলো কেবিনে।

কেবিনে কারো উপস্হিতি টের পেয়ে চোখ তুলে তাঁকায় ফারহাজ।

ফিহাকে দেখে ফারহাজ কিছুটা অবাক হয়

ফারহাজঃ তুমি এখন এখানে?

ফিহা এগিয়ে গিয়ে বলে উঠে–

এইসব কথা পড়ে হবে।
আপনার জন্য কিছু এনেছি।

এই বলে ফিহা একটা বাটি এগিয়ে দেয় ফারহাজ এর কাছে।

ফারহাজ কে থামিয়ে ফিহা আবারও বলে উঠে–
গাজরের হালুয়া
বলতে পারেন এক প্রকার ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই হালুয়া দিয়ে।৷ ফিহা তো সবসময়ই আলাদা হুহ 😉
আপনার জন্য গাজরের হালুয়া করেছি তাও নিজের হাতে হুহ । বন্ধুদেরোও দেইনা। আমি আপনার এই হালুয়া দেওয়ার জন্য একেবারে সোজা স্কুল থেকে চলে এসেছি। আপনি কত্ত লাকি ফিহার হাতের গাজরেরে হালুয়া খেতে পারছেন।

ফারহাজ চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে উঠে–
বাহ পুচকি দেখি রান্নাও পারে। তা এই হালুয়া খাওয়া যাবে তো??

ফিহা ঃ খেয়ে তো দেখুন 😒( গাল ফুলিয়ে)

ফারহাজ বাটি টা নিয়ে বলে উঠে-
তুমি কি করে জানলে আমার হালুয়া ফেভারিট!

ফিহাঃ ইরিপুর থেকে। এখন খেয়ে দেখুন।

ফারহাজঃ পুচকি যখন রান্না করেছে।
খেয়ে দেখাই যায়।

ফারহাজ মুচকি হেঁসে খাওয়া শুরু করে।

ফারহাজ হালুয়াটা মুখে দেওয়ার সাথে সাথেই কেমন যেনো থমকে গেলো সেই একি স্বাদ এতো বছর পর।

ফিহা ফারহাজ এর দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে।


।।।

চলবে!
(কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু)