তুই তারারে ভিনদেশী পর্ব-১৮ এবং শেষ পর্ব

0
1510

গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী❣️💫

লেখিকাঃ- konika islam (sanju)

পর্বঃ18

ভালোবাসার সংজ্ঞা আমার জানা নেই। যদি কাউকে দেখার জন্য বারবার মন আনচান করার নাম ভালোবাসা হয়, তবে আমি আপনাকে ভালোবাসি। যদি শয়নে স্বপনে তাঁকে নিয়েই হৃদয় মাঝে ছবি আঁকানোর নাম ভালোবাসা হয় তবে আমি আপনাকে ভালোবাসি। যদি অনুমতি পাই সারাজীবন ভালবাসতে চাই। আদিত্য যেন নিজের উত্তর পেয়ে গেলো। আদিত্য উঠে দাড়িয়ে আফরিনকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে । আহান কৌশাল সবাই একসাথে হাত তালি দেয়। হঠাৎ করে কেউ আফরিনের মাথায় মোটা রড দিয়ে বাড়ি দিতে……… যায় তখনই আদিত্য নিজের ডান হাত দিয়ে ধরে ফেলে। আর কৌশাল গিয়ে সেই ছেলেটার বুকে লাথি মারে। আর তখনই আদিত্য কে পিছন থেকে আলফাজ মারতে আসলে আহান গিয়ে ধরে ফেলে। আফরিন সাময়িক ব্যাপারে পুরাই চুপ। আদিত্য জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলে

—– Boy’s….. আর আদিত্যর গ্যাংগ চলে আসে। তারপর শুরু হয় ফাইট। আদিত্য আফরিনদের সেফ জায়গায় রাখে আর তাদের কিছু ছেলেদের সেখানে রেখে যায়। আদিত্য নিজের পান্ঞ্জাবির হাতা উঠাতে উঠাতে এগিয়ে যাচ্ছে সেই ছেলেটার দিকে,,,, যে আফরিনকে মারার৷ চেষ্টা করেছিল। আদিত্য নিচে পড়ে থাকা রডটা নিয়ে বারি লাগিয়ে দেয় সেই ছেলেটার মাথায়। মুহূর্তেই মাথা বেয়ে রক্ত গড়াতে থাকে তার। ধীরে ধীরে সে লুটিয়ে পরে মাটিতে। আদিত্যকে পিছন থেকে আলফাজ মারতে আসলে আদিত্যর আগেই কৌশাল আর আহান গিয়ে মাথায় বারি লাগিয়ে দেয়। আহান বলে

—- জানে মেরে ফেলবো তোকে। কৌশাল আলফাজের হাতের রডটা নিয়ে বারি লাগিয়ে দেয় ওর পায়ে। আর রেগে বলতে থাকে

—- তোর সাহস তো কমনা,,, আমরা থাকতে আদিত্যর দিকে চোখ তুলে তাকাস। কিছু সময় পর আশে পাশের লোকেরা এসে ওদের থামায়। আদিত্য আলফাজের কানে কানে বলে

—- সিংহ একটু চুপ হলেই বিড়াল রা নিজেদের জঙ্গলের রাজা মনে,,, তোর এড়িয়াতে এসে তোকে মেরে গেলাম এর থেকে লজ্জার ব্যাপার আর আছে। নেক্সট টাইম যদি তোকে আসে পাশেও দেখি আমাদের জানে মেরে ফেলতে তোকে ২ বার ভাব বো না। মাইন্ড ইট।

_______

আদিত্য গিয়ে দেখে আফরিন ওরা পপকর্ণ খাচ্ছে। আফরিন আদিত্য কে বলে

—- আমি একটু মেরে আসি? আদিত্য চোখ রাঙিয়ে বলে
—- খুব শখ না!! অহনা বলে

—- ভাইয়া এতখন বলছিল বিয়ের পর আপনার সাথে ফাইট করবে। আহান বলে

—- তুমি না করলেই হইছে। অন্যা দৌড়ে যায় কৌশালের কাছে। হাত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে অন্যা গিয়ে কৌশালের হাত দেখে একরকম কেঁদে দিয়েছে। কৌশাল বলে

— ধূর পাগলী,, কিছু হয়নি। সেদিনের মতো তারা বাসায় চলে গিয়েছিল

________

সময় কখন কোথায় কোনদিক দিয়ে চলে যায় তা বুঝা বড় দায় দেখতে দেখতে কেটে যায় আরো ৪ টি বছর৷ সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সব বদলে গেলেও বদলায়নি,, আফরিন, আদিত্যের ভালেবাসা। সময়ের টানা কড়ায় ঝগড়া হয়েছে কিন্তু কখনো কেউ কাউকে ছেড়ে যায়নি। অন্যা আর অহনার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩ বছর একটা ছোট মেয়ে হয়েছে তাদের। কৌশালের সাথে দিব্যি আছে অন্য। আফরিন আর আদিত্য অপেক্ষা করছে অহনা আর আহানের জন্য। আজ আদিত্য আর আফরিনের রিসিপশনের পার্টি সবাই উপস্থিত থাকলেও অহনা এখনো আসেনি। অন্য তো সেই কখন থেকে ছবি তুলেই যাচ্ছে বেচারা ক্যামারা ম্যানের অবস্থা শেষ। কৌশাল বলে

—- বউ তুমি না আফরিন,, আর যেই ছবি তুলছো মনে তো হয়না তোমার নাতী-নাতনী দেখে শেষ করতে হবে। অন্যা বলে

—- এই তুমি চুপথাকোতো। যখন আমার বাচ্চা হবে আর আমার এলবাম টা দেখবে,, এবং বলবে ইয়ার আম্মু কি একটা চিজ ছিল নিজের জামানায়। তুমি বকবক কম করে ছবি তুলো৷। তখনই অহনা আর আহান হাজির। আফরিনের তো ইচ্ছে করছে যেয়ে অহনাকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু যেই ভাড়ি লেহেঙ্গা পরে আছে। আদিত্য আফরিনের মনের ভাব বুঝতে পেরে। আফরিনের পাশ থেকে উঠে দাড়ায়। আর আফরিনের দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দেয়। আফরিনও হাতটা আকরে ধরে। আফরিন গিয়ে অহনাকে আকড়ে ধরে তারপর শুরু হয় পার্টি।

___________

নিয়ম অনুযায়ী আফরিন আর আদিত্য আজ যাবে আফরিনদের বাসায়। কাল অব্দি যে বাসার মেয়ে ছিল সে আজ এই বাড়ির মেহমান। ভাবা যায়। আদিত্য আর আফরিনের বিয়েটা হয় খুব সুন্দর ভাবে। আদিত্য নিজে তার পরিবারকে দিয়ে প্রস্তাব পাঠায় আফরিনের বাসায় আফরিনও রাজী হয়ে যায়। সব কেমন জলদি হয়ে গেলো বুঝায় যাই না।

আফরিন নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে চলে আসে। আদিত্যও ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে যায় কারণ রুমে আফরিন ছিল না আফরিন আকাশে দিকে একমনে তাকিয়ে আছে। আদিত্য গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আফরিনকে। কিন্তু এতে যেন আফরিনের হেলদুল নেই। সে জানে এটা কে, স্পর্শ টা তার চিরচেনা। আফরিন আদিত্যর হাতের উপর হাত রেখে বলে

—- কখন আসলেন? আদিত্য বলে

—- তুমি যখন এই রাতের আকাশ দেখছিলে। আফরিন বলে

—- আজ যদি আকাশে তারা থাকতো কত ভালো হতো তাই না!! আদিত্য বলে

—– আমার তারাতো তুমি। হায় আমি নিজের থেইকা বেশি আমি তোরে ভালোবাসি আমার মনেরই আকাশে #তুই_তারারে_ভিনদেশী ❤️❤️ আফরিন বলে

—– ভাবা যায় প্রায় ৫ টা বছরের উপরে আমরা এক অপরের সাথে জড়িয়ে আছি। আপনার করা সেই পাগলামো। আমাকে কোথায় কোথায় রাগানো। হুট করে খুব কাছে চলে আসা। নিজের পরিচয় গোপন করা,,, সব কেমন যেন মনে হচ্ছে এই তো কিছু দিনের আগের কথা। সত্যি সময় কখন কোন দিক দিয়ে চলে যায় ভাবা যায় না। আদিত্য বলে

—– আমিতো চাই তোমার সাথে প্রতিটা সময় খুব সুক্ষ্ম ভাবে খুদাই করে ডায়রির পাতায় লিখে রাখতে। তখনই আদিত্যর ফোন বেজে উঠে। আদিত্য গিয়ে ফোনটা নিয়ে এসে দেখে আহান আর কৌশাল গ্রুপ কল দিয়েছে। আদিত্য কল ধরে বলে

—- এতো রাতে ফোন দিয়েছিস কারণ কি। কৌশাল হাসি দিয়ে বলে

—- না মামা এমনি আমাদের ঘুম আসতাছিল না। আহান বলে

—- তুই কি করিস রে আদিত্য। আদিত্য বলে

*—- আকাশের তারা গুনি। কৌশাল বলে

—- আসতাগফিরুল্লাহ্ বিয়ে কইরা মাথাটা গেছে। আজকে তো আমাবস্যা। তখনই অহনা আহানকে বলে

—- কি শুরু করছো ছাড়াতো ওদের মতো ওদের থাকতে দাও। আর তুমি তোমার মেয়েকে সামলাও। ওর ডাইপার চেন্ঞ্জ কর। আমি হাতে নেইলপালিশ লাগিয়েছি। আহান বলে

—- কেন যে বিয়ে করতে গেছিলাম। আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ ভোর রাতে ফোন দিমুনে। আর সবাই হেসে দেয়। কৌশালও কিছু সময় কথা বলে রেখে দেয়। আদিত্য আফরিনকে বলে

—- ঘুমাবে না? আফরিন মুচকি হাসি দিয়ে বলে

— চলুন। আফরিন রুমে ঢুকার সাথে সাথে আদিত্য আফরিনের হাত ধরে দাঁড় করায় আয়নার সামনে আর নিজের পকেট থেকে একটা চেন বের করে সেখানে খুব সুন্দর করে লেখে মিসেস,, আদিত্য। একটু অন্য রকম তাইনা। আদিত্য আফরিনের কানে ফিস ফিস করে বলে

—- এটা কালকে রাতে দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু কালকে অনেক ক্লান্ত থাকায় দেওয়া হয়নি। আমি কিন্তু তোমার কাবিন নামার সব টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। জানিনা সেটা তোমার হাতে এসেছে কিনা। আফরিন বলে

—- এত টাকা দিয়ে আমি কি করব!! আদিত্য বলে

—- সেটা তোমার হক তোমার ইচ্ছে কি করবে তুমি। আফরিন আদিত্য কে হাগ করে বলে

—- আই লাভ ইউ। আদিত্যও বলে

—- লাভ ইউ মোর। আদিত্য আফরিন থাকুক সুখে আগুন জ্বলুক আমাদের সবার বুকে।

সমাপ্ত

বিদ্রঃ গল্পটা কেমন হয়েছে জানাতে ভুলো না। ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।