#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা : মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ১৯
রায়হান , অভিদ বাড়িতে ফিরে এসে ফ্রেশ হয়ে আবার কাজে লেগে পরে। সন্ধ্যার আগেই সব কাজ শেষ হয়ে যায়। অভিদরা সবাই তৈরি হতে চলে যায়।
অভিদ রুমে এসে দেখে বিছানার উপর একটা নতুন শেরওয়ানী রাখা রয়েছে। অভিদ শেরওয়ানী
টা হাতে নিয়ে দেখতে থাকে। শেরওয়ানীর সাথে রুহির জন্য কেনা লেহেঙ্গাটার মেচিং রয়েছে। অভিদ ভেবেনিলো এটা রুহি রেখেছে। ভেবেই প্রশান্তির হাসি হাসলো। পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে দেখলো রুহি নেই, ওয়াসরুম থেকেও পানির আওয়াজ আসেছে। রুহি ওয়াসরুমে রয়েছে। অভিদ শেরওয়ানীটা পড়ে তৈরি হতে থাকলো।
রুহি ওয়াসরুম থেকে বের হয়েই দেখতে পেলো অভিদ মিররের সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছে। রুহি গিয়ে অভিদের পেছনে দাঁড়ালো। আয়নায় অভিদকে দেখেই রুহি হা করে তাকিয়ে থাকে। শেরওয়ানীটা অভিদের গায়ে খুব মানিয়েছে। খুব সুন্দর লাগছে। হয়তো অভিদ পরেছে বলেই এতো সুন্দর লাগছে। রুহি মুচকি হাসি দিয়ে অভিদের পাশে দাঁড়ায়।
রুহিকে দেখে অভিদের তার হাত চলা বন্ধ হয়ে গেলো। অভিদ হাত থেকে পারফিউম রেখে রুহির দিকে ঘুরে তাকালো। অভিদ এক পা এক পা করে রুহির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
রুহি অভিদকে এগোতে দেখে ভ্রু কুচকে পেছাতে থাকলো। বুঝতে পারছে না অভিদ এগোচ্ছে কেনো। অভিদের চোখ দেখে বুজতে পারছে না কি চাইছে !! পেছতে পেছতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো রুহির।
অভিদ তবুও থামেনি, রুহির দিকে আনেক খানি ঝুকে গেলো। রুহি দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে খিঁচে চোখ বন্ধ করে নেয়।
অভিদ বাকা হেসে রুহির অধর জোড়া আয়ত্তে নিয়ে নিলো। রুহির খিঁচে বন্ধ করে রাখা চোখ স্বাভাবিক হয়ে যায়। অভিদ রুহির কোমড়ে হাত রেখে রুহিকে কাছে নিয়ে আসে। রুহি অভিদের কাধের শেরওয়ানী খামছে ধরে রাখে। কিছুক্ষণ পরে অভিদ রুহিকে ছেড়ে রুহির ঘাড়ে মুখ রেখে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে। রুহি জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে নিজেকে ঠিক করে।
অভিদ ঠিক হয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে রুহির মুখের সামনে থেকে চুল সরিয়ে ধীর কন্ঠে বলে
” তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে এসো আর বেশি সাজবে না। ” রুহি হালকা মাথা নাড়িয়ে ওকে বলে। অভিদ রুহিকে ছেড়ে মিররের সামনে গিয়ে তৈরি হয়ে নিচে চলে যায়।
রুহি বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে মিররের সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হতে থাকে।
পার্টির ইনভাইটেট রুহির পরিবার ছাড়া সব মানুষ এসে পরেছে। অভিদ, রায়হান, তুষার সবার সাথে কথা বলছে আর রুহির মা, বাবাদের অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পরে রুহির মা, বাবাদের আসতে দেখে অভিদ হাসি মুখে তাদের কাছে গেলো। সবাইকে সালাম দিয়ে রুহির আব্বুকে বলে
” আব্বু আপনাদের আসতে দেড়ি হয়েছে কেনো?”
রুহির আব্বু হালকা হেসে বলে
” আসলে আমরা মিশুকে পিক করে নিয়ে এসেছি আর একটু জ্যাম ছিলো তাই। ”
” ওও আচ্ছা সবাই ভেতরে আসুন, বসুন। রুহি এখনও আসেনি তবে এখনি এসে পরবে। আপনারা আসুন ” অভিদ ওদের নিয়ে ভেতরে আসে। ওরা বসতেই দেখলো রুহি, অনি এসে পরেছে। দুজনকেই খুন সুন্দর লাগছে। অভিদ হেসে আবার গেস্টদের কাছে চলে গেলো।
রুহি ওর মা, বাবাকে দেখে খুশি হয়ে ওদের কাছে এসে সালাম দিয়ে মা, বাবার সাথে কথা বলে। রুহি মিশু, রাইমা আর নিলাকে জড়িয়ে ধরে। তারপর রুহি, মিশু , রাইমা, নিলা, অনি কথা বলতে থাকে।
রুহির বিয়ের পর রুহিদের বাড়ি একদম খালি হয়ে যায়। পরে রুহির বাবা নিলার বাবাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিলাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। ভার্সিটিতে অনার্স ফার্স্ট এয়ারে এডমিশন করিয়ে দেয়। অনিও নিলার সাথে পরে।
রুহিদের কথার মাঝে মিশু রায়হানকে দেখলো। মিশু রুহিকে বলে
” রুহি আমি একটু আসছি ”
রুহি ভ্রু কুচকে বলে
” কোথায় যাবি তুই ?? আমাকে বল আমি নিয়ে যাই”
মিশু দুষ্টু হেসে বলে
” নারে তোর যাওয়া লাগবে না। আমি একটু মি. কিপটের সাথে কথা বলে আসি ” বলে
যেতে নিলেই রুহি মিশুর হাত ধরে হালকা রেগে বলে
” আচ্ছা তুই কি পাগল ?? এতো মানুষের মাঝেও তোর রায়হানকে কিপটে বলতে হবে ?? সব সময় মজা করিস ঠিকাছে কিন্তু আজকে মানুষ আছে এখানে। আর তুই না ওকে পছন্দ করিস তাহলে এই নামে ডাকিস কেনো ??”
মিশু বিরক্তিকর মুখ করে বলে
” ধুর বাবা !! তুই বুঝিস না কেনো ?? আমি পছন্দ করি তো কিন্তু তাকে তো আর এটা বলতে পারি নি । তাই তো এই ভাবেই কথা বলতে চাই।আর আমাকে কে কি তোর তেমন মনে হয় ?? আমি জানি কোথায় কি বলতে হয়। ওকে ?? এখন আমার হাত ছাড় আর আমাকে যেতে দে ” রুহি মিশুর হাত ছেড়ে দিয়ে অনিদের সাথে কথা বলতে থাকে।
রায়হান দুজন বিজনেস পার্টনারের সাথে কথা বলছিলো তখন ওর চোখ যায় দুজন লোকের পেছনে। মিশুকে আসতে দেখে রায়হান বড়সড় একটা ঢোক গিললো। এখন যদি মিশু এসে ওদের সামনেই কিপটে বলে ডাকে !! তাহলে মান-সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে সেই চিন্তাই রায়হান করছে। ভাবতে ভাবতে মিশু এসে ওদের কাছে এসে দাঁড়িয়ে গেলো। মিশু রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলে
” hlw Mr. K. Can i talk to with you ??” রায়হান অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো। বুঝলো না এই Mr. K টা আবার কে !! রায়হান ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। রায়হানের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা লোক দুজনও বুঝলো না মিশু কাকে “কে”
বলেছে।
তাদের মধ্যেই একজন চিন্তিত হয়ে বললো
” sorry to say, but who is Mr. K ?? এখানে এই নামের তো কেউ নেই ”
মিশু মেকি হেসে বলে
” আরে আংকেল আপনাদের ডাকিনি আমি। আমি তো ওনাকে ডেকেছি। ” মিশু রায়হানকে দেখিয়ে বলে। রায়হান দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে
” exuse me !! I will talk to later ” বলে মিশুকে নিয়ে সেখান থেকে সরে আসে।
মিশু হাসি মুখে রায়হানকে বলে
” কেমন আছেন মিস্টার “কে” !! ”
রায়হান মুখ কুচকে বলে
৩” এই মিস্টার “কে ” টা কে?? আমার নাম রায়হান ওকে ?? আর এতোদিন তো কিপটে ডাকতে এখন আবার নতুন নাম লাগিয়েছো কেনো। ”
মিশু মিটমিট করে হেসে বলে
” আপনাকে তো নতুন নাম দেইনি আমি।আজকে এখানে পার্টিতে অনেক মানুষ রয়েছে তাই তো আমি আপনার নামকে সংক্ষেপে মিস্টার কে দিয়েছি । বুঝেছেন।”
মিশুর কথায় রায়হান রেগে গেলো। মনে মনে ভাবলো
“এই মেয়ে শুধরাবে না। এই নাম ধরে ডাকবেই ডাকবে। কিপটে না ডাকলে পেটের ভাত হজম হয় না, হুহ ”
রায়হান রেগে বলে
” এই তোমার বয়ফ্রেন্ড নেই ?? তার পেছনে পড়ে থাকো না !! আমার পেছনে কেনো পরে আছো।”
মিশু গোমড়া মুখ করে বলে
” নেই তো !! তাই তো আপনার কাছে আসি। নাহলে তো বয়ফ্রেন্ড নিয়েই ঘুরতাম ” রায়হান একটু মায়া লাগলো মিশুর মুখ দেখে। তাই শান্ত কন্ঠে বললো
” ওও তাহলে বয়ফ্রেন্ড খুজে নিন ”
মিশু কিছুক্ষণ রায়হানের দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ মুখে খুশির হাসি ফুটিয়ে বলে উঠে
” আচ্ছা আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড হবেন ?? আপনারও তো কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই। তাহলে তো আমরা রিলেশনে যেতেই পারি তাই না ??”
রায়হান মিশুর দিকে হতভম্ব হয়ে তাকালো। মনে মনে খুশিও হলো। রায়হান মিশুকে পছন্দ করে কিন্তু কিপটে ডাকটা শুনলেই সব পছন্দ কয়লার মতো গুড়ো গুড়ো হয়ে যায়।
রায়হান আড়চোখে মিশুর দিকে তাকিয়ে আবার অন্যদিকে তাকিয়ে তাছিল্য হেসে লে
” আমাকে কিপটে বলে আবার আমার সাথেই রিলেশন করতে চাইছো ?? না আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হবো না। ” বলে অন্যদিকে চলে যায়। মিশু মন খারাপ করে রুহির কাছে এসে পরে।
পার্টি শেষে রুহির মা,বাবা সহ সবাই চলে যায়। রাত ১টায় পার্টি শেষ হাওয়ায় অভিদরাও সবাই ক্লান্ত তাই রুমে গিয়ে ফ্রেশ ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে রুহির ঘুম ভাঙতেই পাশে অভিদকে দেখতে পায়। সাধারণত অভিদকে ঘুমন্ত অবস্থায় রুহি কখনো দেখেনি। কারণ অভিদ রুহির আগেই উঠে পড়ে। রুহি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে অভির দিকে। রুহির মনে হচ্ছে ঘুমন্ত অবস্থায় অভিদকে আরও সুন্দর লাগছে। এভাবেই কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে থাকতেই রুহির মনে একটা ইচ্ছে জাগলো। রুহি তার ইচ্ছেটা দমিয়ে না রেখে পুরোন করার সাহস করে ফেললো। অভিদের গালে একটা চুমু বসিয়ে দিলো। অভিদ গভীর ঘুমে থাকায় টের না পেলেও কিছুটা নড়ে উঠে। রুহি ভয় পেয়ে উঠে বসে। অভিকে জাগতে না দেখে সস্তির নিশ্বাস ফেললো।
রুহি উঠে আলমারি খুললো শাওয়ারের জন্য কাপড় নেবে তাই। আলমারি থেকে কাপড় দেখতে দেখতে হঠাৎ একটা লাল শাড়ির মধ্যে চোখ আটকে গেলো। রুহির হঠাৎ ইচ্ছে জাগলো আজকে লাল শাড়ি পরবে। তাই রুহি শাড়িটা নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে পড়ে।
শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়েই চুল ঝাড়তে থাকে।
অভিদের মুখে চুলের পানি পড়তেই অভিদ বিরক্তিতে চোখ, মুখ কুচকে নিলো। আরেকবার একই কাজ হতেই অভিদ উঠে বসলো। কিছু বলতে নিলেও আয়নার দিকে চোখ পরতেই সব বিরক্তি পানি হয়ে গেলো। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলো রুহির দিকে।
রুহি চুল ঝাড়া শেষ করে কাজল হাতে নিয়ে চোখে কাজল দিয়ে নিলো। নিজেকে একবার দেখে রুম থেকে বের হতে নিলেই হাতে টান পড়ে। রুহি পেছনে তাকিয়ে দেখে অভিদ ওর হাত ধরে আছে। রুহি একটু এগিয়ে গিয়ে বলে
” আপনি উঠে গিয়েছেন !! তাহলে আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি নিচে যাচ্ছি ” বলে পেছনে ঘুরতেই আবার হাতে টান পরে। এবার রুহি একদম অভিদের বুকে গিয়ে পড়ে।
অভিদ রুহির মুখ তুলে রুহির মুখের সামনে থাকা চুল গুলো সরিয়ে কানের পেছনে গুজে দেয়। অভিদ রুহির ঘাড়ে মুখ গুঁজে চুলের ঘ্রাণ নিতে থাকে। রুহি কেপে উঠে অভিদের বাহু খামছে ধরে। অভিদ অনেক্ষণ এমন থেকে রুহির ঘাড়ে নাক ঘষা দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। রুহির আচল ধরে মাথায় দিয়ে দেয়। রুহি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। অভিদ মুচকি হেসে রুহিকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে বলে
” তোমাকে একদম বউ বউ লাগছে।” রুহি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলে। অভিদ ঘোর লাগা ধীর কন্ঠে বলে
” তোমার লজ্জা মাখা হাসিটাও অসম্ভব সুন্দর ”
রুহি এবার বেশি লজ্জা পায়। অভিদের দিকে ঘুরে নিচের দিকে তাকিয়ে বলে
” নিচে আসুন আমি যাচ্ছি ” বপে একমুহূর্ত দেড়ি না করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
অভিদ বাকা হেসে ফোন হাতে নিয়ে কাউকে ফোন করে
“……… সব কিছু আমার রাতের আগেই রেডি চাই।” বলে ফোন কেটে ওয়াসরুমে চলে যায়।
রুহি নিচে এসে দেখে রায়হান, তুষার, অনি সোফায় বসে আছে। রুহি তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অনি রুহির দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। রুহিকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে বলে
” ওয়াও ভাবি তোমাকে তো একদম বউ বউ লাগছে। আচ্ছা প্রতিদিন কামিজ না পরে শাড়িই তো পরতে পারো। ”
রুহি কিঞ্চিত হেসে বলে
” অভ্যেস নেই তাই সবসময় পরে রাখতে পারিনা। কিন্তু আজকে ইচ্ছে হলো তাই পরলাম ”
রায়হান, তুষারও রুহির প্রশংসা করলো।
কিছুক্ষণ পরে অভিদ আসতেই সবাই ব্রেকফাস্ট করতে বসলো।
চলবে…wait for next part….