#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা : মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ২০
রায়হান, তুষারও রুহির প্রশংসা করলো।
কিছুক্ষণ পরে অভিদ আসতেই সবাই ব্রেকফাস্ট করতে বসলো।
ব্রেকফাস্ট শেষ হতেই অভিদ সবাইকে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর গলায় বলে,
” আমার আজকে রুমে কিছু কাজ আছে। তাই সন্ধ্যা না হওয়া পর্যন্ত কেউ রুমে যাবে না। আর রুহি তুমি অনির ঘরেই থেকো। কিছু দরকার হলে আমাকে ফোন করে বলবে কিন্তু রুমে যাবে না। আর একটু পরে দুই, তিনজন লোক আসবে কিছু বক্স নিয়ে তাদের উপরে পাঠিয়ে দেবে। আমি রুমে যাচ্ছি ” বলে উপরে চলে যায়।
অভিদ যেতেই রুহি, অনি, রায়হান, তুষার গালে হাত দিয়ে ভাবতে থাকে অভিদের এমন কি কাজ আছে যে কেউ রুমে যেতে পারবে না ?? আর কালক রাতের পার্টির পর দুইদিন অফিস বন্ধ। আজকেও অফিসের কোনো কাজ নেই। এসবই ভাবছে সবাই। রুহি ভাবনা বাদ দিয়ে বলে
” আচ্ছা এতো ভেবে কি হবে। হয়তো দরকারি কোন কাজ করছে। আর আমরাও বসে না থেকে কোনো গেইম খেলি ”
তুষার চমকে উঠে বলে
” গেইম ?? আমরা কি গেইম খেলবো ??”
রুহি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে অনির রুম থেকে লুডু নিয়ে আসলো। সোফায় বসে বলে
” লুডু খেলবো সবাই আসো। ” রায়হান, অনি, তুষার সবাই এসে সোফায় বসলো। চারজনের খেলা জমে উঠতেই হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠে। চারজন খেলা বন্ধ করে সেদিকে তাকায়। সার্ভেন্ট দরজা খুলে দিতেই দুই জন লোক ভেতরে ঢুকলো। রুহি ভালো করে দেখে নিলো লোক দুজনকে। দুজনের হাতের একটা করে বক্স রয়েছে। ওদের হাতে বক্স দেখে চারজনই বুঝতে পারলো ওদের কথাই অভিদ বলেছে
তবু রায়হান উঠে গিয়ে দুজনের সামনে দাঁড়ায়। শার্টের হাতা কনুইয়ের উপর উঠাতে উঠাতে এক ভ্রু উচু করে নাচিয়ে গম্ভীরভাবে বলে
” কারা আপনারা ??”
লোক দুজন রায়হানকে একটু ভয় পেয়েছে সেটা চেহারা দেখেই বুঝতে পারেছে। তাদের মধ্যে একজন ভয়ে ভয়ে বলে
” আ আসলে স্যার আমাদের কাছে কিছু জিনিস অর্ডার করেছে। সেগুলোর ডেলিভারি দিতে এসেছি ”
ওদের কথা শুনে রায়হান কোমড়ে হাত রেখে একটু গলা ঝেড়ে বললো
” দেখি কি জিনিস আছে এতে ?? আমাকে তো চেক করতে হবে নাহলে উপরে পাঠাতে পারবো না ”
লোক দুজন অনুনয় সুরে বললো
” প্লিজ স্যার যেতে দিন আমাদের। স্যার বলেছে কেউ এসব দেখতে চাইলে দেখাতে না। আর দেখালে আমাদের প্রাণ নিয়ে নেবে। দয়া করুন স্যার। ” ওদের অনুরোধ শুনে রায়হান চুপসে গেলো। অভিদ যে সত্যি এটা করতে পারে সেটা জানে তাই আর কিছু না বলে অভিদের রুমের পথ বলে দিলো। দুজন যেতেই চারজন আবার খেলা শুরু করে।
চার রাউন্ড খেলে রুহি বিরক্ত হয়ে বলে
” উফফ আর খেলবো না। এখন অন্যকিছু করি !!”
রুহির কথায় তুষার, অনি সস্তির নিশ্বাস ফেলে সোফায় হেলান দিলো। কারণ দুজনই লুডু খেলায় কাচা। রুহির হুট করে কিছু মনেপড়তেই রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলে
” আচ্ছা ভাইয়া আপনার আর ওনার ফ্রেন্ডসিপ কখন হয়েছে ?? মানে পরিচিত হয়েছেন কি করে ?? ”
রায়হান মুচকি হেসে বললো
” হঠাৎ এই প্রশ্ন যে ?? ”
রুহি উৎসাহ হয়ে বললো
“আমাকে বলবেন অলিজ !! আসলে আমি অনেক আগে থেকেই জানতে চাইছিলাম কিন্তু ভুলে যাই। এখন হঠাৎ মনে পরলো। আপনাদের দুজনের বন্ধুত্ব দেখে আমার মনে এই প্রশ্ন জাগলো। ”
রায়হান হালকা হেসে বলা শুরু করলো
” আমার মা, বাবার একমাত্র ছেলে ছিলাম। মা, বাবা দুজনই একটা এক্সিডেন্টে মারা যায়। আমার তখন ১১ বছরের ছেলে ছিলাম। ভাগ্যবশত সেদিন চাচা, চাচির সাথে বাড়িতেই থাকায় আমার কিছুই হয়নি। তারপর মা,বাবার কবর দেওয়ার পর ফয়সালা হয় আমি চাচা, চাচির কাছে থাকবো। আমি তাদের কাছেই থাকতাম। পরের বছর আমার স্কুল চেঞ্জ করা হয়। আমি আর অভিদ একই ক্লাসে পরতাম।পরতাম বলতে আমি নতুন ছিলাম সেই ক্লাসে। পরে আমাদের দুজনের বন্ধুত্ব হয়। সময়ের সাথে সাথে বন্ধুত্বটাও অনেক গাড় হয়। কলেজ শেষ করে অভিদ লন্ডন যাওয়া ডিসিশন নেয়। আমি, অভিদ দুজনই কাউকে ছাড়া থাকতে পারবো না ভেবে অভিদ আবার ডিসিশন চেঞ্জ করে। কিন্তু আমি চাইনি আমার জন্য অভিদ ডিসিশনস চেঞ্জ করুক তাই আমিও অভিদের সাথে লন্ডন চলে যাই। ওখানে থেকেও চাচা, চাচির সাথে যোগা যোগ ছিলো। আমার চাচা, চাচি কোনোদিন আমায় অত্যাচার করেনি। আমি যা চেয়েছি তাই দিয়েছে। ভার্সিটি ওঠার পর একদিন খবর আসে। চাচা মারা গিয়েছে আমি কয়েকদিনের ছুটিতে বাংলাদেশে আসি। চাচা মারা চাওয়ার প্রায় কয়েক মাস পরে চাচিও মারা যায়। ওদের ছেলে, মেয়ে আমার বয়সেরই ছিলো। চাচাতো ভাই আর আমার মাঝে বন্ধুত্ব থাকলেও চাচা, চাচি মারা যাওয়ার পর আস্তে আস্তে সেটাও শেষ হয়ে যায়। তার বোনের বিয়ে দিয়ে নিজেও পছন্দ মেয়ে দেখে বিয়ে করে নেয়। তারপর একবছর যেতেই আবার আমাদের মাঝে আগের মতো যোগা যোগ হয়। এদিকে ভার্সিটি লাইফ শেষ করে অভিদ ব্যাবসা দেয়। আমাকে এসিস্টেন্ট করে। যদিও আমার ইচ্ছে ছিলো কোনো চাকড়ি করবো কিন্তু অভিদের বন্ধুত্বের অনুরোধে অভিদের সাথেই যোগ দেই। অভিদ আমাকে হেল্প করতো আর আমি অভিদকে হেল্প করার চেষ্টা করতাম। এখনও আমরা একই রকম ভাবে রয়েছি। একজন অন্যজনের পাশে সবসময় থাকি। সেই ভাইয়ের সাথেও মাঝে মাঝে কথা হয়। এইভাবেই আমাদের বন্ধুত্ব। দেখেছো বন্ধুত্বের কথা বলতে গিয়ে পুরো লাইফ স্টোরি বলে ফেলেছি। ”
রুহি মুচকি হেসে বলে,
” তো কি হয়েছে ভাইয়া ?? আমরা তো এখন পরিবারই। যাই হোক আপনাদের বন্ধুত্বটা সত্যি গভীর।” রায়হান কৃতজ্ঞতার হাসি দেয়। রুহি পাশে তাকিয়ে দেখে অনি নেই আর তুষার কানে হেডফোন লাগিয়ে মোবাইল টিপছে। রুহি আবার রায়হানের দিকে তাকিয়ে দেখে রায়হান মোবাইল টিপছে। রুহি একটু সাহস জুগিয়ে রায়হানের দিকে তাকিয়ে মিনমিম গলায় রায়হানকে ডাকে। রায়হান রুহির দিকে তাকাতেই রুহি ভিজ দিয়ে তার শুষ্ক ঠোট গুলো ভিজিয়ে একটা শ্বাস নিয়ে বললো
” ভাইয়া একটা বলবো আপনাকে ”
রায়হান স্মিত হেসে বলে
” হ্যা বলো না কি বলবে ” রুহি আমতা আমতা করতে থাকে। কিভাবে বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
রুহিকে এমন করতে দেখে রায়হান শান্তনা দিয়ে বলে
” কি বলবে নিশ্চিন্ত হয়ে বলো। এতো hesitetad করার কোনো কারণ নেই। বলো ”
রুহি আমতা আমতা করতে বলেই ফেললো
” আসলে মিশু আপনাকে অনেক পছন্দ করে। কিন্তু বলতে পারছে না। কালকে আপনার সাথে কথা বলার পর থেকে মন খারাপ করে আছে। কালকের প্রপোজালে আপনি না বলাতে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। যদিও মজার ছলেই বলেছিলো কিন্তু মন থেকেই বলেছে। আমি বলেছিলাম আপনাকে বলতে কিন্তু মিশু বলেনি। আমি যে আপনাকে এটা বলে দিয়েছি সেটাও জানে না। কালকে ওকে মন খারাপ করতে দেখে আজকে আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না। ”
রায়হান স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। মিশু যে ওকে পছন্দ করে সেটা রায়হান বুঝতেই পারেনি। বোঝার কোনো সুযোগ ছিলো না রায়হানের। মিশু সবসময় রায়হানের সাথে মজার ছলে কথা বলতো। রায়হান নরমালই ভাবতো কিন্তু সত্যি সত্যি মিশু রায়হানকে পছন্দ করে সেটা বুঝতেই পারেনি। রায়হানকে চুপ দেখে রুহি বললো
” ভাইয়া আপনি আপনার উওর বলতে পারেন। আমি কিছু মনে করবো না। এখন বাকিটা আপনার ইচ্ছা।”
রায়হান কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাথা নিচু করে চোরের মতো রুহির দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে
” আমিও মিশুকে পছন্দ করি। ” রুহি ড্যাব ড্যাব করে তাকালো রায়হানের দিকে। পরে অবিশ্বাসও গলায় বলে,
” সত্যি ভাইয়া ??” রায়হান মাথা চুলকে মাথা নাড়ালো। রুহি অনেক খুশি হলো। পরে অবাক হয়ে বলে,
” তাহলে ভাইয়া কালকে আপনি মিশুকে না করেছিলেন কেনো। তখনি তো হ্যা করতে পারতেন ”
রায়হান বিরক্তিকরভাবে বলে
” আর বলো না তোমার ওই বান্ধবী আমাকে কিপটে বলে ডাকে দেখে আমি রেগে না বলেছিলাম ” রুহু ফিকফিক করে হেসে দিলো। রায়হানও হালকা হাসলো।
রুহি হাসতে হাসতে সিরির দিকে তাকাতেই দেখলো সেই দুজন সিরি দিয়ে লোক নামছে। রায়হানও তাকালো। এই দুজনের কথা রুহি, রায়হান দুজনই ভুলে গিয়েছিলো। ওদের দেখে আবার মনে পরলো আর অবাকও হলো কারণ দেড় ঘন্টা পরে নিচে নেমে এসেছে দুজন।
রায়হান দুজনের সামনে গিয়ে ভ্রু কুচকে বলে
” তোমরা এতোক্ষণ ধরে অভিদের রুমে কি করছিলে ??”
একজন অসহায় চেহারা করে বলে
” স্যার আমাদের দিয়ে কিছু কাজ করতে দিয়ে ছিলো সেগুলোই করছিলাম। স্যার সন্দেহ হলে স্যারকে ফোন করতে পারেন।”
রায়হান হাত উচিয়ে বলে,
“ঠিকাছে আমি কথা বলছি যাও” বলতেই দুজন বেড়িয়ে যায়।
দুজন আবার সোফায় বসে পড়ে। রুহি খুশির খবরটা দিতে মিশুকে ফোন করে। পাশে রায়হান বসে বসে মোবাইল টিপছে। টিপছে না ভান করছে।আসলে রুহির কথা শুনছে।
রায়হান কথা শুনতে শুনতে দেখলো একজন ছেলে সার্ভেন্ট ট্রে তে করে কফি নিয়ে যাচ্ছে। রায়হান তার কাছে গিয়ে বললো।
” উপরে যাবে না অভিদের নিষেধ রয়েছে ”
সার্ভেন্ট সোজাসাপটা বলে
” কিন্তু স্যার অভিদ স্যার বলেছে কফি নিয়ে দিয়ে আসতে।” রায়হান আর কিছু বলার আগেই সার্ভেন্টা চলে যায়। সার্ভেন্টের ব্যবহারে রায়হানের সন্দেহ হয়। কালকে থেকেই এই সার্ভেন্টকে দেখতে পাচ্ছে আগে কোনোদিন বাড়িতে দেখেনি। তাই আগে থেকেই সন্দেহ হচ্ছিলো তবে এখন সেটা আরও বেড়ে গেলো। রায়হান রুহিকে বলে কন্ট্রোল রুমে গেলো।
কালকে থেকে একে একে সব ভিডিও রেকর্ড চেক করলো। সব দেখে রায়হানের চোয়াল শক্ত হয়ে গিয়েছে। আবার দেখলো সার্ভেন্টটা অভিদের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আর ফোনে কথা বলছে ফিসফিস করে।
রায়হান রেগে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। অভিদকে ফোন দিয়ে বললো নিচে আসতে। অভিদ হুম বলে কেটে দেয়। দুই মিনিট পরে সেই সার্ভেন্টকে নামতে দেখলো। রায়হান তার পথ আটকে কফি মগের দিকে তাকিয়ে বললো।
” কি হলো কফি দিয়ে আসোনি অভিদকে ??”
সার্ভেন্ট জোড় পূর্বক হেসে বলে
” আসলে অভিদ স্যার বললো কফি খাওয়ার ইচ্ছে চলে গিয়েছে। তাই আবার দেইনি।” বলে রায়হানকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পরে অভিদ নিচে নামলো।
রায়হান অভিদের কাছে গিয়ে রেগে বলতে লাগলো
” তুই জানিস আমাদের বাড়িতে কেউ লোক পাঠিয়েছে।”
অভিদ গম্ভীর গলায় ভাবলেশহীন ভাবে বললো।
” জানি আমি। আর সেটা আখিলের লোক। ”
রায়হান অবাক হয়ে বলে,
” মানে তুই জানিস ?? আমাকে বলবি তো নাকি। আর এখনও চুপ করে আছিস কেনো। কিছু করবি তো নাকি ”
অভিদ এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বলে
” কালকেই দেখেছি শুধু কে পাঠিয়েছে সেটা জানার জন্য চুপ করেছিলাম। একটু আগে সেটাও জানতে পেরেছি গার্ড বলেছে আখিল লোক পাঠিয়েছে আর আমি এখন আমার দরজার বাইরে ওর ফিসফিসানো কথা শুনতে পেয়েছি। যাই হোক সব সার্ভেন্টকে ডাক এখানে।”
রায়হান ভ্রু কুচকে বলে
” কেনো সবাইকে ডাকবো কেনো ?? ওই লোকটি কেই ডাকছি ”
অভিদ বিরক্ত চোখে তাকাতেই রায়হান বলে
” ওকে, ওকে ডাকছি ”
রায়হান উঁচু গলায় সব সার্ভেন্টকে ডাকলো। মুহূর্তেই সবাই এসে হাজির হলো। অভিদ গান নিয়ে সবার সামনে দিয়ে হাটতে হাটতে রাগি গলায় চেচিয়ে বলে
” আমি জানি তোমাদের মধ্যে এখানে কেউ আখিলের লোক। এক কথায় বেড়িয়ে এসো নাহলে জীবিত ফিরবে না ” অভিদের কথায় সেই লোকটার পা কাপতে লাগলো। অভিদ লোকটাকে সামনে আসতে না দেখে ধমক দিয়ে বলে
” সামনে এসো নাহলে সব কয়টাকে গুলি করে দেবো।” অভিদের কথায় সবাই মাথা নিচু করে থাকলো কিন্তু সেই লোকটা দরজার দিকে খিচে দৌড় দেয় পালানোর জন্য। অভিদ রেগে বাকা হেসে লোকটার পায়ে গুলি করে। লোকটা সামনের দিকে পরে যায়। গার্ড এসে লোকটাকে তুলে অভিদের সামনে নিয়ে আসে। অভিদ পরপর আরও দুইটা গুলি করে গার্ডদের উদ্দেশ্য করে চয়াল শক্ত করে বলে
” ওকে আখিলের বাড়ির সামনে ফেলে আসবে।”
বলে হনহন করে উপরে চলে যায়।
এদিকে রুহি গুলির বিকট শব্দ শুনে অনির রুম থেকে বের হয়। আর এসব দেখে অনেক ভয় পেয়ে যায়। অনি রুহিকে ভয় পেতে দেখে আবার রুমে নিয়ে আসে। রুহিকে পানি খাইয়ে শান্ত করায়।
রাত সারে দশটা বাজে। এখন পর্যন্ত অভিদের রুমে কেউ ঢুকতে পারেনি। দুজন বসে বসে টিভি দেখছে আর রুহি, অনি সেখানেই সোফায় বসে বই পড়ছে। কিছুক্ষণ পরে অভিদ নেমে আসে। চারজনের দৃষ্টি অভিদের দিকে। অভিদ এসে রুহির সামনে দাঁড়ায়। রুহি ঘাড় উঁচু করে অভিদের দিকে তাকিয়ে আছে। অভিদ অনি, রায়হান, তুষারের দিকে তাকিয়ে বলস
” তোরা ডিনার করে নিস। আমরা উপরে যাচ্ছি।”
অনি উঠে বলে
” কিন্তু কেনো ?? তোমরা ডিনার করবে না ??”
অভিদ রুহির হাত চেপে ধরে রুহিকে দাড় করিয়ে বলে
” পরে করে নেবো তোরা করে নিস ” বলে রুহিকে উপরে নিয়ে যেতে থাকে। রুমের সামনে এসে রুহির চোখে কাপড় বেধে দেয়। রুহি অবাক হয়ে চোখের উপর হাত রেখে বলে
” এটা কেনো ?? ” অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” চুপচাপ চলো, পরে কথা বলবে ” রুহি চুপ করে অভিদের সাথে হাটতে থাকে।
অভিদ রুমের ভেতরে রুহিকে নিয়ে লাইট জ্বালিয়ে রুহির চোখের বাধন খুলে দেয়। রুহি চোখ ঝাপটা দিয়ে তাকায়। তাকাতেই রুহি অসম্ভব অবাক হয়ে যায়।
পুরো রুমে কালো আর সাদা বেলুন দিয়ে সাজানো। লাল, সাদা ক্যান্ডেল দিয়ে সাজানো। ফ্লোরে গোলাপের পাপড়ি রয়েছে। খাটের উপর লাল গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজানো।রুমের এক সাইডে মিনি টেবিল সুন্দর করে সাজানো। অভিদ লাইট অফ করে দিয়ে রুহির সামনে এসে দাঁড়ায়। রুহিকে আরও অবাক করে দিয়ে রুহির হাত ধরে রুহির চোখে চোখ রেখে বলতে শুরু করে
” অনি আর ফুপি ছাড়া কোনোদিন কোনো মেয়ের দিকে চোখ ফিরিয়ে তাকাইনি। মেয়েদের দেখলেই বিরক্ত লাগতো মাঝে মাঝে আমার মার কথা মনে পরলে খুব রাগ হতো। কিন্তু একদিন কাঠ ফাটা রোদে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটা মেয়েটার দিকে চোখ পরলো। অবাক হয়েছিলাম যে সেদিন মেয়েটাকে দেখে তার প্রতি রাগ, বিরক্ত কোনো কিছুই অনুভব হয়নি। এক রাশ ভালোবাসা অনুভব হয়েছিলো।সেই মেয়েটাই আজ আমার স্ত্রী। খুব ভালোবাসি তোমাকে। খুব ভালোবাসি। I love you ruhi. আজকে আমি তোমার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনতে চাই। প্লিজ আমাকে হতাশ করে দিও না। একবার শুনতে চাই শুধু ”
রুহি কিছুক্ষণ চুপ করে অভিদের দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ করে অভিদকে জড়িয়ে ধরলো। অভিদ একটু অবাক হলো। রুহি অভিদের বুকে মুখ গুজে বলে উঠে
” একবার কেনো হাজার বার বলবো। ভালোবাসি। ভালোবাসি আপনাকে। আমি আমার মাফিয়া ক্রাশ বরকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি।” অভিদ অবাক হয়ে রুহিকে সোজা করে দাড় করিয়ে বলে
” মাফিয়া ক্রাশ বর এটা আবার কে ??”
রুহি মুচকি হেসে বলে
” আপনি আমার #মাফিয়া_ক্রাশ_বর। ” অভিদ মুচকি হেসে আবার রুহিকে জড়িয়ে ধরে। অনেক্ষণ এভাবে থাকার পর অভিদ রুহিকে বলে ” চলো ” রুহি জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই অভিদ হেসে রুহিকে মিনি টেবিলে বসিয়ে দেয়।
খাবারের প্লেট থেকে ঢাকনা সরি রুহির প্লেটে আর নিজের প্লেটে সার্ভ করে। অভিদ চামচ দিয়ে রুহির সামনে খাবার ধরে। রুহি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে মুখে তুলে নেয়। রুহিও অভিদকে খাইয়ে দিলো।
খাওয়া শেষে অভিদ বলে উঠে
” চলো ছাদে যাবো ” রুহি অবাক হয়ে বলে
” এতো রাতে ছাদে ?? না বাবা দরকার নেই ” অভিদ একটু রেগে কথা না বলেই রুহিকে কোলে তুলে নেয়। রুহি অভিদের শার্ট খামছে ধরে।
অভিদ রুহিকে নিয়ে ছাদে এসে নামিয়ে দেয়। রুহি পুরো ছাদে তাকিয়ে নেয়। আকাশে আজকে চাঁদ উঠেছে। পূর্ণ রুপে। রুহি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থেকে আস্তে আস্তে রেলিং এর দিকে এগিয়ে গিয়ে রেলিং ধরে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকে। অভিদ পেছন থেকে এসে রুহিকে জড়িয়ে ধরে রুহির কাধে থুতনি রাখে। রুহি হালকা কেপে চোখ বন্ধ করে নেয়। মিনিট দুইএক পরিবেশটা উপভোগ করতেই অভিদের ফোনে কল আসে। অভিদ ভ্রু কুচকে আসে। অভিদ ফোন বের করে দেখে আননোন নাম্বার। অভিদ রুহির কানে চুমু দিয়ে বলে
” just wait some minute. I will back.” বলে সাইডে যায়। অভিদ ফোন রিসিভ করে হ্যালো করে কিন্তু কোনো উত্তর না পেয়ে হ্যালো হ্যালো করতে থাকে।
হঠাৎ দেখলো কারেন্ট চলে গিয়েছে। অভিদ বুঝলো না কিছুই। বাড়িতে আইপি এস থাকা সত্তেও কারেন্ট চলে গিয়েছে ব্যাপারটা সন্দেহজনক হয়ে উঠলো।
চলবে… wait for next part….