#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা :মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ২৪
অভিদ কঠোর গলায় বলে
” আবার এমন ব্যবস্থা করিস না যে নিজেই নিজের মাথা গুলি করে মরে যায়।” রায়হানের মুখে হাসি চলে গেলো। চোখ ছোট ছোট করে তাকায় অভিদের দিকে।
অভিদ রায়হানের দিকে না তাকিয়ে খেয়ে যাচ্ছে। রায়হান নাক ফুলিয়ে বলে
” তুই একটা খোটা কতোবার দিবি বলতো ?? একবার নাহয় ভুল হয়েছে তাই বলে কি সব সময় ভুল হবে ?? ”
অভিদ খেতে খেতে আড়চোখে একবার তাকিয়ে বলে
” ভুল হবে কেনো ?? ভুল করার জন্য তুই কাজ করিস ?? তুই খুব ভালো করেই জানিস ভুল কাজ শব্দটা আমার ডিকশনারি তে নেই। ”
রায়হান অসহায় মুখ করে বলে
” একবার ভুল করে ফেলেছি তাই বলে এতো কথা শোনাচ্ছিস ?? আমি কিন্তু তোর বন্ধু হই !!”
অভিদ কিছু না বলে ভাবলেশহীন ভাবে খেয়ে যাচ্ছে। রায়হান মুখ ফুলিয়ে খেতে থাকে।
অভিদ, রায়হান, গার্ড সবাই একটা গোডাউনের সামনে এসে দাঁড়ায়। সবাই গোডাউনের ভেতরে ঢুকে পড়লো। বাইরে থেকেই আগুন ধরিয়ে দিতো কিন্তু আসল মাথাকে টেনে সামনে আনার জন্য ভেতরে যেতে হবে। ভেতরে ঢুকতেই দেখলো সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো শব্দ পেয়েই বুঝতে পেরেছে কেউ এসেছে।
গোডাউনের ভেতরের লোক গুলোকে দেখে বেশির ভাগ লোকে নিউজিল্যান্ডেরই মানুষ মনে হলো। আর কিছু অন্য দেশের। এখানের সবাই অভিদ রায়জাদাকে চিনেছে। মাফিয়া কিং, এন্ড বাংলাদেশের বিজনেসম্যান হিসেবে। দুজন বাদে সবাই ভয় পেয়ে একে একে পিছিয়ে গেলো। অভিদ গার্ডদের ইশারা করতেই তারা সবাইকে ধরে নেয়। আর সেই দুজনকে বেধে গাড়িতে তুলে নেয়। অভিদ, রায়হান গোডাউন থেকে বের হয়ে বাকা হেসে আগুন ধরিয়ে দেয়।
অভিদ, রায়হান আয়েশ করে বসে আছে সেই দুটো লোকের সামনে। লোক দুজনের হাত বেধে ফ্লোরে হাটু ভেঙে বসিয়ে রাখা হয়েছে। রায়হান আপেলে বাইট দিয়ে তাদের ল্যাংগুয়েজে বলে
” তোদের বসের নামটা বল। তোদের বসের এতো এতো গোডাউন পুরিয়েছি কিন্তু তোদের বসের সাথে এখনও দেখা করার সৌভাগ্য টা হলো না। নামটাও জানতে পারিনি। জানিস !! খুব দুঃখ হয় আমার। আচ্ছা আজকে তোরা তোদের বসের নামটা বলে একটু হেল্প করে দেতো !!”
লোক দুজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে। অভিদ রায়হানের দিকে তাকাতেই রায়হান গলা ঝেড়ে ঠিক হয়ে বসে। অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” তোমাদের জন্য যতো তাড়াতাড়ি বসের নামটা বলবে ততোই ভালো। নাহলে অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে এখন বাকিটা তোমাদের ইচ্ছা।”
লোকদুটো কিছুই বলছে না চুপ করে আছে। রায়হান গার্ডকে ডাকতেই গার্ড হাতে করে কারেন্ট দেয়ার আর ছুড়ি নিয়ে আসে। অভিদ, রায়হানের কাছে গানও রয়েছে। লোক দুটো ঢোক গিলে এসব দেখে।
অভিদ গান হাতে ওদের সামনে বসে। একজনের কপাল থেকে গালে গান দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলতে থাকে
” বোবার মতো চুপ না থেকে সুন্দর করে নামটা বলে ফেলো। নাহলে গানের ৬ টা গুলি তোদের শরীরে যাবে। ”
কথাটা শুনে পাশের লোকটা কেঁদে উঠলো ভয়ে।
আর অভিদের সামনে থাকা লোকটা মাথা নিচু করে কাঁদতে কাঁদতে করে বলে
” পরিবার বাঁচাতে হলে আমাদের বোবার মতোই থাকতে হবে। আমরা যদি বসের নাম বলি তাহলে আমরা আমাদের পরিবারকে বাঁচাতে পারবো না। পরিবারকে বাঁচাতেই খারাপ কাজে জড়িয়ে ছিলাম আর আজকে বসের নাম বলে পরিবারের কোনো ক্ষতি হতে দিতে পারবো না।”
রায়হান ভ্রু কুচকে বলে
” মানে ?? পরিবার বাঁচাতে খারাপ কাজে কেনো জড়িয়েছ ?? অন্য কাজ করেও তো খেতে পারতে। জানো তোমাদের এইসব কাজের জন্য কতো ছেলে, মেয়ের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে ??”
লোকটা মুখ তুলে কঠোর গলায় বলে
” তো আমরা কি করতে পারি ?? আমরা নিজেরাই তো বাধ্য হয়ে অন্যের হয়ে কাজ করি। আমরা দুই ভাই।আমার নাম স্লোক আর ওর নাম মৈনাক । আমি মাস্টার্স পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি আরও করতাম কিন্তু ওই বস নামক শয়তানের জন্য আর পারিনি। আমাকে অনেক ভয় দেখিয়ে তার এই কাজে আনতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি না করেছি আর পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা বিশ্বাস করেনি আমার কথা। তারপর ওই শয়তান আমার পরিবারের এমন অবস্থা করলো যে পথে বসতে হচ্ছে ছিলো। আমি যেই চাকড়ির ইন্টার্ভিউ দিতাম সেই চাকড়িই খেয়ে নিতো। তারপর আমি বাধ্য হয়ে কাজে ঢুকেছিলাম। পরে যখন জানলো আমার একটা ভাই আছে তখন তাকেও ঢুকিয়ে দিলো।”
অভিদ আবার উঠে সোফায় বসলো। গান ঘোরাতে ঘোরাতে তাদের দিকে তাকিয়ে বলে
” তোমরা চাইলে আমি তোমাদের এখান থেকে বের করবো। তোমাদের পরিবারও বাচাবো আর তোমাদের চাকড়িও দেবো। তার বদলে তোমরা আমাকে তোমাদের বসের নাম টা বলবে।রাজি??”
স্লোক আর মৈনাক একে অপরের দিকে তাকালো। মৈনাক মাথা নেড়ে বলতে না করে। স্লোক সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বলে
” বলবো তবে আমাদের পরিবারের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়। ওরা এমনি সারাক্ষণ আমাদের পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।”
রায়হান চটপট করে বলে
” ডান, ডান, ডান। এখন নামটা বল।”
স্লোক একবার তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আবার অভিদের দিকে বলে
“আমাদের বস হচ্ছে যাবেদ খান আর তার ছেলে সিহাব খান দুজনের এই ব্যাবসা অনেক বছর ধরেই করছে। তবে কেউ জানে না কারণ তার এই ব্যাবসা খুবই গোপনীয়। তার লোক ছাড়া আর কারো জানার সাধ্য হবে না যে কালো ব্যাবসা করে। এখনও সরকারি অফিসে চাকড়ি করে। সবাই তাকে ভালো, গুনি, সাধু হিসেবে জানে। তার ভালো মানুষি চেহারা দেখে কেউ বলতে পারবে না যে যাবেদ খান এসব কাজের সাথে জড়িয়ে আছে। উলটো যে আঙুল তুলবে সে নিজেই ভুল প্রমাণ হবে আর সবার আড়ালে প্রাণ হারাবে। যাবেদ খানের বাংলাদেশে অনেক গোডাউন ছিলো যেগুলো সব আপনি নষ্ট করেছেন। এতে তার কোটি কোটি টাকা লস হয়েছিলো। এখন বাংলাদেশে আর কোনো গোডাউন নেই। তবে তার আরও কয়েকটা গোডাউন রয়েছে আর তার সাথে নারী পাচারকারির ব্যাবসা রয়েছে। এখনও অনেক অনেক মেয়েকে অন্য দেশে পাচার করা হয়। আমার জানামতে কালকেও অনেক মেয়েকে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়া হবে।
অভিদ শান্ত ভাবে সব শুনলো। রায়হান গার্ড দের বললো দুজনের হাতের বাধন খুলে দিতে। গার্ড এসে দুজনের হাতের বাধন খুলে দিতেই দুজন দাঁড়িয়ে গেলো। অভিদ দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে
” রায়হান তোমাদের সব কাজ দেবে। এখন আপাতত তোমরা কয়েকদিন ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরে এসো। মন্টা ফ্রেশ করে নাও তারপর কাজ শুরু করবে।” দুজন অবাক হয়ে যায় অভিদের কথায়। এই ঝামেলার মাঝে ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরতে যাবে।
এটা দুজনের জন্যই অবাক হাওয়ার কথা।
রায়হান দুজনের চেহারা দেখে হেসে দিলো।
অভিদ হালকা হেসে বলে
” তোমরা এখন বাংলাদেশে যাবে কয়েকদিনের জন্য। এখন এখানে থাকা তোমার পরিবারের জন্য একটু রিস্কি। তাই তোমরা এখন বাংলাদেশে যাবে সেখানে তোমাদের একটা ফ্ল্যাট দেওয়া হবে। তোমরা সেখানেই থাকবে। ঘুরবে খাবে যা ইচ্ছে করবে কিছু হলে আমার গার্ডরা থাকবে তাদের বলবে। তারপর এই যাবেদ খানের ব্যবস্থা করে তোমাদের এখানে আনা হবে। তোমাকে আমার অফিসে চাকরি দেওয়া হবে। তবে তুমি চাইলে বিডি তে যতদিন থাকবে আমার অফিসে জয়েন করতে পারবে। আর পরে আবার এখানে করে নেবে। কালকে বিকেলে তোমরা বিডি ফ্লাইটে উঠবে। ”
স্লোক কৃতজ্ঞতার সাথে বলে
” স্যার আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেবো বুঝতে পারছি না। আমি যদি কোনোদিন সুযোগ পাই তাহলে আমার জান দিয়ে হলেও আপনার প্রাণ বাচাবো। কোনো হেল্প লাগবে স্যার আমাকে বলবেন।” অভিদ হালকা হাসলো। গার্ডরা দুজনকে নিয়ে চলে গেলো বাড়িতে দিয়ে আসবে বলে।
রায়হান তাকিয়ে দেখলো অভিদ কিছু নিয়ে ভাবছে। রায়হান ভ্রু কুচকে বলে
” তুই কি ভাবছিস ?? ”
অভিদ সামনের দিকে তাকিয়ে ক্ষীণ সুরে বলে
” এই যাবেদ আর সিহাবের সব ডিটেইলস বের করতে হবে আর কালকে ওই মেয়েদের কখন নিয়ে যাওয়া হবে সেটা তুই জেনে নে। আমি যাবো সেখানে আর আমার মন বলছে কোনো না কোনো ক্লু তো পাবোই আমি। ” রায়হান হুম বলে।
রায়হান লোক লাগিয়েছে যাবেদ আর সিহাবের ব্যাপারে জানার জন্য। রায়হান আখিলের সাথে কথা বলে। তাকেও সব জানায়। রায়হান আখিলের সাথে কথা বলে অভিদের কাছে আসে। অভিদ ল্যাপটপ ঘাটছে। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। অভিদকে দেখে রায়হান বুঝতে পারলো অভিদ রেগে আছে। রায়হান অভিদের সামনের সোফায় বসে একটা ফাইল নিয়ে বলে
” কিরে তুই রেগে আছিস কেনো ?? ”
অভিদ দাত কিড়মিড় করে রেগে বলে
” তোর কোনো সমস্যা হয়েছে?? আমি রাগ্লে তোর কি !! আমার উপর তোর কোনো খেয়াল আছে নাকি ?? তা তোর বন্ধুর সাথে কথা বলা শেষ ??”
রায়হান ঠোট চেপে হাসলো। অভিদের কথায় বুঝতে পারলো রেগে আছে কেনো। রায়হান অভিদকে আরও রাগানোর জন্য বলে
” কি বলছিস কি বন্ধু মানে প্রাণ প্রিয় বন্ধু। আমার তো আরও কথা ছিলো তবে ওর কাজ আছে তাই আজকে অল্পই কথা বললাম। ” অভিদ রেগে সামনের গ্লাসটা নিয়ে উড়িয়ে ফেলে দেয়। রায়হান লাফিয়ে উঠে।
পরে বুকে থু থু দিয়ে বলে
” উফফ ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি। আচ্ছা তুই এতো রাগছিস কেনো ?? আমি তো মজা করছিলাম। আমার প্রাণ প্রিয় বন্ধু তো তুই। তোর জায়গা অন্য কেউ পাবে না। তুই শুধু শুধু রাগ করছিস ” অভিদ এবার একটু শান্ত হয়। নরমাল ভাবে কাজ করতে থাকে। রায়হান মুচকি হাসলো।
চলবে… wait for next part….