#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা :মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ২৭
আমি অবাক হয়ে সিহাবকে ছেড়ে ওদের দিকে তাকাই। সিহাব পেছন থেকে আমাকে সেখানে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। আমি নিচে পরে যাই। আমি সিহাবের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে
” তুমি আমাকে ধাক্কা দিলে কেনো??” সিহাব শয়তানি হাসি হাসলো। আমি হাতে ভর দিয়ে উঠে সিহাবের সামনে গিয়ে দাড়াই রেগে বলি
” তুমি আমাকে এই নোংরা জায়গায় ধাক্কা দিলে কেনো ?? ইশ আমার গায়ে নোংরা লেগে গিয়েছে। আর এখানে এতো মেয়েকে বেধে রাখা হয়েছে কেনো ?? এটা তুমি কোথায় নিয়ে এসেছো আমাকে ?? রুহিকে এখান থেকে নিয়ে চলো। রুহিকে এখানে রাখার দরকার নেই।” সিহাব
আমার কথা শুনে অট্টহাসি দিয়ে উঠলো। আমি ভাবছি আমি কি এমন বললাম যে সিহাব এতো হাসছে। সিহাব হাসতে হাসতে বলে
” রুহিকে নিয়ে যাবো ?? রিয়েলি ?? রুহি আর তোমাকে তো এখানে আনার জন্যই এতো কিছু করলাম। কতো প্ল্যান করলাম। you know what !! You ar so stupid. তবে বলতেই হবে তুমি একটু Stupid হওয়ায় একসাথে দুইটা মেয়ে পেলাম।”
আমি অবাক হয়ে বললাম
” পাগল হয়ে গিয়েছো নাকি ?? কি সব বলছো ?? আমি কিছু বুঝতে পারছি না। ”
সিহাব আমার কথা শুনে আবার হেসে উঠলো। পেটে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে বলে
” রিয়েলি ?? তুমি এতো বোকা ?? আমি তো জানতামই না। আমি ভেবেছিলাম তুমি একটু বোকা আর অনেক চালাক। যাই হোক আকি তোমাকে পুরো ঘটনা খুলে বলি তাহলে বুঝতে পারবে। ওকে ??? আমার আর আমার বাবার অনেক বড় বিজনেস। অনেক কারখানা রয়েছে। সেগুলোতে ড্রাগস সাপ্লাই করা হয়। তবে কারখানা গুলো সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশেই রয়েছে। সেখানে থাকায় অনেক লস হচ্ছে কারণ অভিদ রায়জাদা সব ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। আর এখানে যে মেয়ে গুলোকে দেখছো না ?? ওদের বাংলাদেশ থেকে এখানে পাচার করা হয়েছে। আরও অনেক মেয়ে আছে। তোমাকে এখানে আনার জন্য তোমার সাথে ভালোবাসার নাটক করতে হয়েছে এতোদিন। তুমি চিন্তা করো না। তুমি ভাল হয়ে থাকলে তোমাকে অনেক আদর যত্ন করা হবে। আর তোমার বোন রুহিকে সেই রুমেই রাখা হবে। ওকে প্রতিদিন স্পেসাল ভাবে আদর যত্ন করা হবে।”
আমি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। সিহাবের কথা শুনে চোখ থেকে পানি পরছিলো। রুহির নাম শুনে চমকে বললাম
” কি করবে তুমি রুহির সাথে ?? রুহির গায়ে যেন একটা আচও না লাগে !! রুহির কিছু হয়ে গেলে অভিদ তোমাকে ছাড়বে না। ওকে একদম টাচ করবে না। আমাকে আর রুহিকে এখান থেকে নিয়ে যাও।”
সিহাব হেসে আমার কাছে এসে আমার গাল চেপে ধরে বলে
“এই মুখটা থেকে যদি আর একটা শব্দ বের হয় !! তাহলে অনেক খারাপ হবে আর একটা কথা মাথা রাখবি। ওই অভিদের নাম আমার সামনে নিবিনা। ওকে আমি সহ্য করতে পারি না। ওর করা সব কাজের মাশুল ওর বউকে দিতে হবে। আমার মনে যতো ক্ষোভ আছে !! আমি সব মেটাবো রুহিকে দিয়ে। ওকে মেরে মেরে আমি আমার রাগ কমাবো।” বলে রাগে কাঁপতে কাঁপতে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। সিহাব বের হতেই একটা লোক বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়। আমি কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পরি। নিজের বোকামোর জন্য নিজেই বিপদে পরলাম সাথে রুহিকেও বিপদে ফেললাম ভেবে কাঁদছিলাম। রাতে লোক গুলো খাবার দিতে আসে। একে একে সবাইকে খাবার দিতে থাকে। আমি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি দরজা খোলা রয়েছে। আমি চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। আমার রুহিকে নিয়ে এখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান মাথায় এলো। আমি দরজার সামনে বসে ছিলাম আর ওরা খাবার দিচ্ছিলো। আমি আস্তে করে উঠে দরজা দিয়ে নিঃশব্দে বেড়িয়ে গেলাম। বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে সামনে রুহির রুমের দিকে দৌড় দেই। কিন্তু আমার ভাগ্যে সহায় ছিলো না তাই। সামনে সিহাব পরে যায়। আমি সাথে সাথে থেমে দাঁড়িয়ে গেলাম। ভয়ে বুক ঢিপঢিপ করতে থাকে। আমি ভয়ে পেছতে নিলেই সিহাব এসে আমাকে জোরে চেপে ধরে। আমি চিৎকার করে উঠি। আমার মুখ চেপে ধরে বলে
” খুব পালানোর শখ না তোর ?? এবার আমিও দেখবো কি করে তুই পালাস। তোকে আমি তোর বোনের সাথে এক সাথে বেধে রাখবো যাতে পালানো তো দূরের কথা নড়তেও পারবি না। ” বপে আমাকে টেনে রুহির রুমে নিয়ে যেতে থাকে। আমাকে রুমে এনে বেধে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে চলে যায়।
আমি কাঁদতে কাঁদতে পাশে রুহির দিকে তাকিয়েই চিৎকার দিয়ে উঠলাম। রুহি অচেতন হয়ে পড়ে ছিলো। গায়ে অনেক মারের দাগ। রক্ত জমাট হয়ে আছে আবার অনেক জায়গা কেটে রক্ত পরছিলো। মাথার ব্যান্ডেজ থেকেও রক্ত পরছিলো। আমি কান্না গলায় অবাক হয়ে বলি
” এই অবস্থা কেনো তোর ?? কে মেরেছে তোকে এভাবে ??”
রুহির চোখ থেকে পানি পড়ছে। রুহি ক্লান্ত গলায় হালকা হাসির রেশ টেনে বলে।
” কেনো তুই তো এটাই চেয়েছিলি। আমাকে এভাবে দেখার জন্যই তো এখানে এনেছিস। আজকে এভাবে আমাকে দেখে খুব আনন্দ হচ্ছে তোর তাই না ?? কিন্তু আমার অভিদ খুব তাড়াতাড়ি আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে। ”
আমি ওর কথা শুনে ঢুকড়ে কেঁদে দিয়ে বলি
” আমাকে মাফ করে দিস। আমিও ক্ষমা চাওয়ারও যোগ্য না। তবু বলছি ক্ষমা করে দিস। আমি তোকে অভিদের কাছে ফিরিয়ে দিতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু সিহাবের কথায় এসে আমি তোকে এনেছি। তোকে আর আমি নিজেই নিজেকে বিপদে ফেললাম। ” রুহি ক্লান্ত আর কাতর কন্ঠে বলে
” আমার হাতটা একটু খুলে দিবি ?? আমার অনেক ব্যাথা হচ্ছে হাতে আর পায়ে।” আমার পা বাধা ছিলো না তাই সহজেই উঠে রুহির কাছে গিয়ে বসলাম। পেছন থেকে হাত বাধা ছিলো অনেক কষ্টে রুহির হাতের দড়ি খুলে দিলাম। রুহি উঠে পরে আমার হাতের বাধন খুলে দেয়। রুহি আবার শুয়ে পরে ব্যাথায়। আমি রুমের জগ থেকে পানি নিয়ে রুহিকে খাইয়ে দেই।
এরপর থেকে একদিন পর পর সিহাব এসে রুহিকে মারতো। আস্তে আস্তে সেটা প্রতিদিনে পরিণত হয়। রুহিক্ব মারতো আর বলতো অভিদের জন্য ওর হাজার কোটি কোটি টাকা লস হচ্ছে। রুহির পুরো শরীরে বেল্টের দাগ,চাবুকের দাগ, লাঠির দাগে ভরে যায়।রুহি চিৎকার করে কাঁদলেও ওর মায়া হতো না। আমি আটকাতে গেলে আমাকে সহ মারতো। আমি কয়েকবার রুহিকে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করি তবে আবার ধরা পরে মার খেতে হতো। একদিন আমি ওই পাহারা দেওয়া লোক গুলো থেকে লুকিয়ে একটা ফোন নেই অভিদকে ফোন করবো বলে। তবে সেটাও পারিনি ধরা পরে গেলাম। রুহির প্রতিদিন রাতে জ্বর আসতো। জ্বরের ঘোরে অভিদ, মা,বাবা সবার নাম নিতো।তবে সারাদিন অভিদের নাম বলতো। প্রতিদিন আশা করে থাকতো যে অভিদ আসবে। প্রতিদিন রুহিকে মারার কারণে রুহি অনেক অসুস্থ হয়ে পরে। রুহির জন্য একটা ডক্টর আনা হয়। কয়েকদিন পর ডক্টরের মেডিসিনে সুস্থ হতেই আবার আগের মতো মারতো। দুইদিন আগে রুহির অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায় হসপিটালাইট করতে হয়। আর রুহিকে সরানোর আরেকটা কারণ হলো অভিদ নিউজিল্যান্ড এসে পরেছে। কেনো এসেছে সেটা জানতো না তবে জানতো রুহিকে এখানে রাখলে ওকে অভিদ খুঁজে বের করবে তাই ওকে সিহাবরা নিজেদের গোপন জায়গায় নিয়ে যায়। গোপন জায়গা বলতে কোনো হসপিটালে নিয়ে গিয়েছে আর সেটা অনেক গোপনে যা ওরা ছাড়া আর কেউ জানে না। যাতে অভিদ জানতে না পারে। রুহির অবস্থা ক্রিটিকাল হওয়ায় এখনও হয়তো হসপিটালে রয়েছে রুহি। ”
জোতির কথা শেষ হতেই ওর গালে দুইটা থাপ্পড় পরে। জোতি ঠোট কামড়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। এটাই তাই প্রাপ্য হয়তো এর থেকে বেশি।
জোতি ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে।
থাপ্পড় দুইটা দিয়েছে অভিদ। অভিদের চোখে পানি। কি করবে বুঝতে পারছে না। রায়হানের চোখ মুখও লাল হয়ে আছে। অভিদ চিৎকার করে চেয়ারে লাথি মারে। চেয়ার উল্টে পাল্টে দূরে গিয়ে পরে। অভিদ তেরে এসে জোতির চুলের মুঠি ধরে শক্ত করে। কাঁপতে কাঁপতে বলতে থাকে
” আমার রুহির কিছু হলে তোকে ছাড়বো না আমি। আর ওই সিহাব !! ও আমার রুহির গায়ে ঘাত তুলেছে তাই না?? ওকে তো আমি মেরেই ফেলবো। ” বলে জোতিকে ছেড়ে দেয়। জোতি মাথা নিচু করে কেঁদেই যাচ্ছে।
রায়হান অভিদের কাধে হাত রেখে ভাঙা গলায় বলে
” এখন আমাদের রুহিকে খুঁজে বের করতে হবে। কোথায় খুঁজবি ??”
অভিদ কান্না গলায় বলে
” যেখানে খোঁজার দরকার হয় সেখানেই খুঁজব আজকে রুহিকে আমি খুঁজে বের করবোই। রুহিকে না পেলে আমি সব ধ্বংস করে দেবো, সবাইকে মেরে ফেলবো। তুই ওদের ব্যাবস্থা করে আয় আমি যাচ্ছি।” বলে বের হতে নিলেই রায়হান আটকে বলে
” তুই একা যাবি নাকি ?? আমিও যাবো। তুই গাড়িতে গিয়ে বস আসছি আমি। ” অভিদ কিছু না বলে দৌড়ে বেড়িয়ে যায়।
রায়হান গার্ডদের দিকে তাকিয়ে বলে
” তোমরা সব মেয়েদের নিয়ে যাও। ওদের জন্য যেই বাড়িটা ঠিক করা হয়েছে সেখামে নিয়ে যাও। আর জোতিকে আমাদের বাড়ির গেস্ট হাউজে নিয়ে যাও। আর ওর যা প্রয়োজন সব দেবে।” বলে আবার সব মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বলে
” তোমরা নিশ্চিন্তে ওদের সাথে যাও আর হ্যা তোমাদের কয়েকদিনের মাঝেই আমরা তোমাদের বাড়িতে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো”
বলে কয়েকজন গার্ড নিয়ে বেড়িয়ে যায়। জংগল থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে যেতে থাকে। আর ফোন করে আরও গার্ডকে আসতে বলে ওদের সাথে। রায়হান এসে দেখে অভিদ গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছে। রায়হান তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে উঠে বসে। অভিদ গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে। অভিদ প্রথমে কোনো হসপিটালে যাওয়ার কথা ভাবছিলো কিন্তু পরে ভাবলো আগে কাঙ্ক্ষিত যায়গা যেতে হবে।
অভিদ ড্রাইভ করতে করতে বলে
” তুই একটু হসপিটালের ডক্টরের সাথে কথা বলে তাকে রুহির ফোটো সেন্ড করে দে।” রায়হান ফোন বের করতে করতে বলে
” ঠিকাছে।” রায়হান নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে নামকরা হসপিটালের ডক্টরকে ফোন করে রুহিকে নিয়ে কথা বলে ছবি পাঠিয়ে দেয়।
ড্রাইভ করতে করতে অনেক জায়গা পেরিয়ে আসে। কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌছতে এখনও আধ ঘন্টা সময় লাগবে। অভিদ যতো দ্রুত পারছে ততো দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করছে। ড্রাইভ করতে করতে দুজনে দেখলো একটা গাড়ি খুব তাড়াতাড়ি পেছনের দিকে গেলো আর তার পেছনে আরও দুইটা গাড়ি। অভিদ গাড়ি থামিয়ে ফেললো। অভিদের একটু গাড়ি গুলো দেখে সন্দেহ হচ্ছে। আর ফার্স্ট গাড়িটা অভিদের গাড়ি ক্রোস করার সময় অভিদের অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগলো। রায়হান অভিদকে থামতে দেখে বলে
” কিরে তুই গাড়ি থামালি কেনো তাড়াতাড়ি চল।”
অভিদ রায়হানের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে বলে
” আচ্ছা আমার মনে হচ্ছে ওই গাড়ির মানুষ গুলো বিপদে পরেছে। ওদের আমাদের হেল্প করা উচিত”
রায়হান ভ্রু কুচকে বলে
” মানে তুই এখন রুহিকে না খুঁজে ওদের কাছে যাবি ?? তোর মাথা ঠিকাছে ?? আচ্ছা গার্ডারদের বলছি ওদের গার্ডরা দেখে নেবে। কিন্তু তুই চল”
অভিদ গলায় হাত রেখে বলে
” নারে আমার কেমন যেন লাগছে। মনে হচ্ছে ওদের হেল্প না করলে আমি কিছু একটা হারিয়ে ফেলবো। আমি যাবোই প্লিজ না করিস না।” বলে গাড়ি ঘুড়িয়ে নেয়। রায়হান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। অভিদ রুহিকে না খুঁজে অন্য কাউকে হেল্প করতে যাচ্ছে। সত্যি এটা অবাক হওয়ার বিষয়।
অভিদ তার গাড়ির স্প্রিড বাড়িয়ে দিলো। অভিদ সেই গাড়ি গুলোকে পেয়ে গেলো। অভিদ তাদের পার করে গিয়ে প্রথম গাড়িটার সামনে নিজের গাড়িটা দাড় করায়। গাড়ি থেকে একটা ছেলে বেড়িয়ে আসে। অভিদের গাড়ির সামনে এসে চেঁচিয়ে বলে
” গাড়িটা সরান প্লিজ আমরা বিপদে আছি। আমাদের এখান থেকে যেতে হবে তাড়াতাড়ি।” অভিদ আর রায়হান গাড়ি থেকে বের হয়ে ছেলেটার কাছে যায়। ছেলেটার কাছে যেতেই ছেলেটা অবাক হয়ে বলে
” অভিদ রায়জাদা !! ” অভিদ ছেলেটার কাছে গিয়ে বলে
” কি হয়েছে ?? কিসের বিপদে পরেছো ?? কোথায় যাবে??”
ছেলেটার চেহারায় আবার ভয় দেখা গেলো। ছেলেটা হন্তদন্ত হয়ে বলে
” যাবিদ খানের লোকরা আমাদের পিছু নিয়েছে। আমাদের মেরে ফেলবে। প্লিজ আমাদের বাচান !! আমাকে না ওই মেয়েটাকে বাঁচালেও হবে” অভিদ কিছু বলার আগেই সেই দুইটা গাড়ি এসে থামলো। গাড়ি থেকে অনেক গুলো গুন্ডা বেড়িয়ে আসলো। সবাই ছেলেটার দিকে যায়। একজন ছুড়ি মারতে নিলেই অভিদ তার হাত মুচড়ে ধরে গুন্ডাটার হাত থেকে ছুড়িটা নিয়ে গুন্ডাটার গলায় বসিয়ে একটা টান দেয়। অভিদের গার্ডরাও চলে আসে। গার্ডরা ওদের সবাইকে মারতে থাকে। অভিদ, রায়হান কয়েকজনকে শুট করে মারলো। গার্ডরা অনেককেই মেরে মাটিতে ফেলে রাখলো আর চার-পাচজন গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।
অভিদ, রায়হান এসে ছেলেটার সামনে দাঁড়ায়। ছেলেটার মুখে হাসি জ্বলজ্বল করছে। অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” তোমার নাম কি ?? এতো রাতে ওর কেনো তোমার পেছনে লেগেছে ?? ”
ছেলেটা অনুরোধ স্বরে বলে
” আমার নাম সামির।স্যার প্লিজ আমাকে একটা সাহায্য করবেন?? আমাকে একঅটা হসপিটালে নিয়ে চলুন আমার সাথে যে রয়েছে তার অবস্থা খুব ক্রিটিকাল। লাস্ট হেল্প করেদিন স্যার”
রায়হান অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” ঠিকাছে তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো তাকে।” সামির নামের ছেলেটা খুশি হয়ে দৌড়ে গাড়ির কাছে যায়। গাড়ি খুলে কাউকে কোলে তুলে নিয়ে আসে। অভিদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে
” ওর অবস্থা খুব খারাপ। একটু তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে চলুন।” অভিদ গম্ভীর মুখে কোলের ব্যক্তির দিকে তাকালো। সাথে সাথে অভিদের পৃথিবী থমকে গেলো। অভিদের চোখ জ্বলে উঠলো। রায়হান মহা আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে। সামিরের কোলে রুহি জ্ঞানহীন অবস্থায় শুয়ে আছে। অভিদ এক পা এক পা করে এগিয়ে গেলো। রুহির গাল স্পর্শ করলো সাথে সআথে চোখ বেয়ে নোনাজল গাড়িয়ে পরে। অভিদ রায়হানের দিকে তাকিয়ে আবার রুহির দিকে তাকিয়ে রুহির মুখ ছুঁয়ে ধরা গলায় বলে
” আমার র রুহ হি। আ আমার র রুহি।”
সামির অবাক হয়ে বলে
” উনি আপনার পরিচিত ??” রায়হান বিস্মিত চোখে সামিরের দিকে তাকিয়ে বলে
” তুমি ওকে কোথায় পেয়েছো ?? রুহি অভিদের স্ত্রী” সামির নির্বাক হয়ে গেলো। অনেক বড় শক লাগলো। আস্তে আস্তে হাত আলগা হয়ে আসে। অভিদ তাড়াতাড়ি রুহিকে ধরে নেয়। রুহিকে নিয়ে মাটিতে বসে পরে। রুহির গালে হাত রেখে বলতে থাকে
” রুহি !! রুহি দেখো আমি অভিদ !! তোমার অভিদ তোমার কাছে এসে পরেছি একবার চোখ খুলে দেখো প্লিজ ?? আমি তোমাকে আর কোনোদিন আমার কাছ থেকে আলাদা হতে দেবো না। একবার চোখ খুলো প্লিজ ” বলে কাঁদতে কাঁদতে রুহিকে ডাকতে থাকে। রায়হানও পানি এনে রুহির মুখে ছিটাতে থাকে আর ডাকতে থাকে অভিদের অনুরোধ ভরা কাতরানো কথা গুলো সামিরের কানে যেতেই সামির অভিদের সামনে বসে পরে। ভীতি স্বরে বলে
” প্লিজ তাড়াতাড়ি ওনাকে হসপিটালে নিয়ে চলুন। নাহলে অন্য কিছু হতে পারে। ওনার অবস্থা অনেক খারাপ আমি কোনো রকমে সেখান থেকে মুক্তি করে নিয়ে এসেছি।”
অভিদ কান্না থামিয়ে সামিরের দিকে তাকায়। আবার রুহির দিকে তাকিয়ে রুহিকে কোলে তুলে নেয়। রায়হান বলে
” অভিদ তুই রুহিকে নিয়ে পেছনে বস। আমি ড্রাইভ করছি আর সামির তুমি আমার সাথে বসো। গার্ড তোমরাও এসো আর জলদি ডক্টরকে ফোন করে কেবিন রেডি করতে বলো ” বলে গাড়িতে উঠে বসে। অভিদ রুহিকে নিয়ে পেছনে বসে।
চলবে…wait for next part….