মাফিয়া ক্রাশ বর পর্ব-৩৫

0
2324

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা :মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ৩৫

রাতে সবাই ডিনার করে ঘুমাতে চলে যায়। অভিদ রুমে গিয়ে দেখে রুহি ঘামছে আর ছটফট করছে। অভিদের বুঝতে বাকি রইলো না রুহি ঘুমের মাঝে প্যানিক হয়ে গিয়েছে। অভিদ তাড়াতাড়ি রুহির পাশে শুয়ে রুহিকে বুকে জড়িয়ে নেয়। কিছুক্ষণ যেতেই আস্তে আস্তে রুহি ঠিক হয়ে যায়।

রুহির চেকাপ, সুস্থ করে তোলা। সবাই এক সাথে হাসি আনন্দ করা, অফিস সামলানো, যাবেদ আর সিহাবকে প্রতিদিন কোনো না কোনো ভাবে শাস্তি দেওয়া এভাবেই পনেরো দিন কেটে গেলো। অভিদরা কালকে সবাই বিডিতে রিটার্ন করার জন্য টিকিট বুক করেছে। অভিদের যাওয়ার একদম ইচ্ছে নেই। কারণ অভিদ চেয়েছিলো রুহিকে একদম সুস্থ করে দ্যান বিডিতে রিটার্ন করবে। কিন্তু রুহির জোড়াজুড়িতে হার মানতে হলো। অভিদ রুহিকে নিয়ে যেতে চাইছিলো না দেখে রুহি রেগে অভিদের সাথে দুইদিন কথা বলেনি। অভিদ রুহির সাথে রাগা-রাগি করে রাজি হয়েছে। রুহির খুশির শেষ নেই। অভিদ ওর সাথে রাগা-রাগি করেছে রুহি তাও কানে নিলো না। কারণ রুহি বাড়িতে যাওয়ার জন্য আর সবাইকে সামনে থেকে দেখার জন্য অনেক এক্সাইটেড। রায়হানরা বসে বসে শুধু অভিদের রাগ দেখতে থাকে। যদিও রায়হান জানে অভিদ কেনো যেতে চাইছে না কিন্তু চুপ করে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

সবাই লাঞ্চ করে সবার রুমে গোজগাজ করছে। অভিদ আলমারি থেকে ধুপধাপ করে সব জিনিস খাটে এনে রাখছে। রুহি বসে বসে অভিদের চেহারা দেখে শুধু মিটমিট করে হাসছে আর লাগেজে কাপড় গুছিয়ে রাখছে। অভিদ বিরবির করছিলো রুহিকে হাসতে দেখে রেগে দাত কিড়মিড় করে বলে
” তুমি হাসছো !! আমাকে দেখে খুব হাসি পাচ্ছে না !! আমি যে এদিকে চিন্তায় মরছি এটা কিছু না তাই না ?? খুব ভালো হাসো আরো হাসো।” রুহি অভিদের কথা শুনে শব্দ করে হেসে দিলো। হাসতে হাসতে বলে
” আপনি এমন করছেন কেনো ?? আমাদের বাড়িতেই তো যাচ্ছি। আপনি এমন করছেন!! মনে হচ্ছে আপনাকে আবার জোড় করে বিয়ে দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ” বলে ফিক ফিক করে হেসে দেয়। অভিদ রেগে সব ছুড়ে ছুড়ে ফেলতে থাকে বিছানায়। রুহি হাসি থামিয়ে বিরক্ত হয়ে বলে
” উফফ কি করছেন কি?? সমস্যা কোথায় আপনার !! আপনি বাড়ি যাওয়ার নাম শুনে এতো রেগে আছেন কেনো ?? বাংলাদেশে কি কোনোদিন জাননি আপনি !! ছোট থেকে সেখানেই তো বড় হয়েছেন। রায়হান ভাইয়া বললো আপনি নাকি এখানে আসতেই চাইছিলেন না এখন তো আমরা চলে যাচ্ছি তাহলে এতো কিসের রাগ ?? ”

অভিদ রুহির সামনে এসে ঠাস করে বসে পরে। কঠোর গলায় বলে
” শোনো !! আমি এখানে আসতে চাইনি কারণ তখন তোমাকে না পেয়ে আমি ডিপ্রেশনে ভুগছিলাম। তখন কিছুই ভালো লাগতো না তাই আসতে চাইনি। আর এখন তোমাকে পেয়েছি আমি। এখন সবই ঠিকাছে। তবে তুমি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছো একবারও ?? এখনও হাটতে তো দূরের কথা দাড়াতে পারো না তুমি। পায়ের নিউ ট্রিটমেন্ট চলছে। শরীরের দাগ গুলো এখনও হালকা হালকা রয়েছে। আগের মতো প্রতিদিন জ্বর, প্যানিক না উঠলেও মাঝে মাঝে উঠে। আর ডক্টর বলেছে পা ঠিক হতে আর বেশি সময় লাগবে না। এন্ড পা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত কোথাও জার্নি করতে না বলেছে। আমি চাইছি তুমি সুস্থ হলে যাবো। কিন্তু তুমি তো তুমিই !! আমার কথা বোঝার চেষ্টা করছো না কেনো আমি যেতে না করছি।” রুহি কপালে হাত দিয়ে বলে
” হায় !! আরে আমরা তো প্লেনে করেই যাবো। আর আমি তো সারাদিন বসেই থাকি জার্নি কোথায় করা হলো ?? এখান থেকে এয়ারপোর্টও বসে যাবো আর প্লেনে উঠেও বসে থাকবো এরপরেও বসেই থাকবো। এমন কেনো করছেন ?? আচ্ছা আর কোনো কারণ নেই তো !!”
সন্দেহ গলায় বলে রুহি তার কোলে থাকা কাপড়টা সড়িয়ে রেখে অভিদের হাত টেনে আরও কাছে নিয়ে আসে।
অভিদ রুহির দিকে ফিরে রুহির চুল গুলো কানে গুঁজে দিতে দিতে ধীর গলায় বলে
” রুহিপাখি !! তুমি ঠিক ধরেছো আমার এখানে থাকার অন্য একটা কারণও আছে। তবে আমি চাই তুমি তাড়াতাড়ি একদম সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরো। এখানের ট্রিটমেন্ট বিডি থেকে খুবই ভালো। প্লিজ একটা কথা রাখো !! এখানে থেকেই তুমি সুস্থ হও তারপর বাড়ি ফিরে যাই আমরা ??”

রুহি অভিদের প্রশ্নের উত্তর দিলো না। তবে শান্ত গলায় প্রশ্ন করে উঠে।
” এখানে থাকার আরেকটা কারণ কি ??” অভিদ রুহির প্রশ্নে থমকে গেলো। ভাবতে থাকে এখন যদি যাবেদ, সিহাবের নাম উঠায় তাহলে রুহি ভয় পেতে পারে। অভিদ অন্যদিকে মাথা ঘুড়িয়ে বলে
” না বলাই ভালো তবে সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ না। তোমার টাই বেশি ইম্পরট্যান্ট।” রুহি রাগ দেখিয়ে বলে
” বলবেন আপনি ?? না বললে কিন্তু আমি আজকে খাবার খাবো না !!” অভিদ চোখ ছোট ছোট করে রুহির দিকে তাকালো। এই মেয়েটা আগে অভিদকে ভয় পেতো কিন্তু এখন নিজের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে। অভিদকে রীতিমত সব কিছুতেই ব্লেকমেল করে। রুহি ঢোক গিলে বলে
” ককি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো ?? বলুন !!”
অভি গম্ভীর গলায় বলে
” যাবেদ আর সিহাব ১৫ দিন ধরে আমার কাছে বন্দি এখন আমক দুজনের আইনি শাস্তির জন্য সব প্রমাণ যোগাড় করেছি। এখন সেটা মিডিয়া আর আইনের লোকের হাতে পৌছে গেলেই চলবে। বাকিটা আমি আমার হাতে আনবো। সেটা দুইদিনের মধ্যেই হয়ে যাবে তবে তুমি সুস্থ হলে আমি বিডিতে ফিরতে চাই। এখন তুমি রাজি হয়ে যাও প্লিজ !!” রুহি মুখ ফুলিয়ে লাগেজে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে বলে
” জান যাবো না কালকে আমরা। খুশি !!” অভিদের চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। কিন্তু রুহিকে দেখে আবার হাসি মিশে গেলো। রুহি মন খারাপ করে খাটে হেলান দিয়ে দুই হাত গুজে বসে আছে। অভিদ লাফ দিয়ে রুহির কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পরলো। রুহি মুখ ঘুরিয়ে পাশ থেকে রিমোট নিয়ে টিভি অন করলো। কার্টুন চ্যানেল দিয়ে আড়চোখে অভিদের দিকে তাকালো। অভিদ রুহির দিকেই তাকিয়ে ছিলো রুহিকে আড়চোখে তাকাতে দেখে অভিদ বাকা হেসে রুহির মাথার পেছনে হাত দিয়ে রুহির মাথাটা নিচের দিকে টেনে রুহির ঠোট ছুঁয়ে কিছুক্ষণ সংস্পর্শে রেখে ছেড়ে দিলো। রুহি ঠিক হয়ে বসে ভাবতে লাগলো কি হয়েছিলো। এতো দ্রুত কিছু ঘটায় মাথায় কিছুই ঢুকলো না। সব খেয়াল আসতেই লজ্জায় পড়ে গেলো। আগের মতো কোণাচোখে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদ রুহির দিকেই বাকা হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে।

রুহি চোখ ঘুরিয়ে কার্টুন দেখায় মন দেয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু অভিদ তা পুরন হতে দিলো না। অভিদ রুহির পেটে মুখ গুঁজে বলে
” আমি খুশি হয়ে গিয়েছি। কিন্তু আমার বউ এর তো মন খারাপ হয়ে গিয়েছে।সেটা এখন ঠিক করতে হবে। তাই ঠিক করেছি আজকে আমরা বাওরে ঘুরতে যাবো আর বাইরে ডিনার করবো। আমার বউ কি এখন খুশি হয়েছে ?? নাকি আরও কিছু করতে হবে ??” রুহি অভিদের কথা শুনে টিভির দিকে তাকিয়েই মিষ্টি একটা হাসি দিলো। যার মানে সে খুশি। অভিদ উঠে রুহির পাশে হেলান দিয়ে বসে রুহির গালে স্লাইড করতে থাকে। রুহি কার্টুন দেখতে দেখতে কেপে কেপে উঠে চোখ বন্ধ করে অভিদের ছোঁয়া অনুভব করতে থাকে। অভিদ বাকা হেসে মুখটা এগিয়ে রুহির গলায় বাইট দিলো। রুহি সেখানে হাত দিয়ে মুখ কুচকে বলে উঠে
” আউউচচ !! এটা কি হলো ??” অভিদ আবার রুহির কানের লতিতে বাইট দিয়ে সেখানে চুমু দিয়ে বলে
” এটাকে লাভ বাইট বলে গো বউ। আচ্ছা ওয়েট করো আমি সবাইকে জানিয়ে দিয়ে আসি। তারপর সবাই রেডি হয়ে বেড়িয়ে পরবো। আর রাতে রোমেন্স করবো।” চোখ টিপ দিয়ে বলে বেড়িয়ে যায়। রুহির লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে গেলো।

কিছুক্ষণ সময় পার হয়ে গেলে অভিদকে আসতে না দেখে রুহি ভাবলো নিজেই তৈরি হওয়ার চেষ্টা করবে। ভেবে রুহি বিছানা থেকে নামতে থাকে। খাট টেবিল ধরে ঠোট কামড়ে পায়ের ব্যাথা সহ্য করে উঠে দাঁড়ায়। টেবিল ধরে এক পা সামনে এগিয়ে আর এগলো না। বিরবির করে বলে
” মা গো ভয় করছে। দাঁড়িয়ে তো গেলাম এখন বাকিটা পথ যাবো কি করে ?? ”
অভিদ রুমের ভেতরে আসতে নিলেই দেখতে পায় রুহি টেবিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। অভিদ চমকে যায় রুহিকে নিজ থেকে দাঁড়াতে দেখে। অনেক খুশি হয় । অভিদ সেখানেই দাঁড়িয়ে যায় রুহির হাটা দেখার জন্য। রুহি কিছুক্ষণ থেমে আবার এক পা বাড়ায়। এবার টেবিল ছেড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। টেবিল ছেড়ে এক অয়া এগোতে নিলেই পড়ে যেতে নেয়। রুহি ভয়ে চিৎকার করে উঠে। অভিদ দৌড়ে রুহিকে ধরে নেয়। রুহি ভয়ে অভিদের শার্ট আকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে কেঁদে দেয়। অভিদ রুহিকে কোলে উঠিয়ে নেয় রুহির দিকে তাকিয়ে ভাঙা গলায় বলে
” রুহি ঠিকাছো তুমি ?? বেশি ব্যাথা পেয়েছো ??” রুহি অভিদের বুকে মাথা গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে মাথা নাড়িয়ে বলে
” না ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।” অভিদ সস্তির নিশ্বাস ফেলে রুহিকে বিছানায় বসিয়ে দেয়। রুহি কাঁদতে কাঁদতে বলে
” আমার পা কবে ঠিক হবে ?? আমি কি সারাজীবন পঙ্গু হয়ে থাকবো ??” অভিদ রুহির গালে হাত রেখে রুহির চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে
” যে বলেছে তুমি পঙ্গু ?? তুমি তো একদম ঠিকাছো। শুধু তোমার পায়ে বেশি সমস্যা হয়েছে সেটাও ঠিক হয়ে যাচ্ছে। দেখেছো তুমি আজকে হাটতে পেরেছো। এভাবে আস্তে আস্তে ঠিক হহে যাবে। এখন কান্না বন্ধ করো আর চলো রেডি হবে।” বলে রুহিকে একটা ড্রেস দিয়ে ওয়াসরুমে বসিয়ে দিয়ে আসে। রুহিকে তৈরি করে নিজেও তৈরি হয়ে নেয়। রুহিকে নিয়ে নিচে গিয়ে দেখে সবাই তৈরি হয়ে বসে আছে। জোতি আর আগের মতো নেই। একদম সাধারণ মেয়ে হয়ে গিয়েছে। আগের মতো সাজেও না। একদম সাধারণ ভাবে সেজেছে রুহির মতো। অভিদ রুহি আর রায়হান এক গাড়িতে গেলো। আর আখিল, আশিক, জোতি এক গাড়িতে উঠে। অভিদ আর আখিলের সম্পর্কও অনেকটা উন্নতি হয়েছে।

নিউজিল্যান্ড শহরের ব্রেকিং নিউজের মূল ব্যাক্তি হচ্ছে যাবেদ খান এবং সিহাব খান। দুজনের প্রত্যেকটা কাজের ভিডিও, ছবিসহ সব প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। সাথে রয়েছে দুজনের নিজেদের দেওয়া অপরাধ স্বীকার করার একটা ভিডিও। যেখানে তারা নিজেরা তাদের সব কালো ব্যবসা অনৈতিক কাজ সম্পর্কে স্বীকার করেছে।

চলবে…wait for next part….