#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা :মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ৪৬
এতোকিছু করেছে এতেই যথেষ্ট আর কিছু চায় না। কিছুক্ষণ পরে আখিল আর আশিক এসে উপস্থিত হলো। সবাই ওদের নিয়ে রিং পরিয়ে কাজ শেষ করলো। আর পার্টি শুরু হলো।
রায়হান, মিশু, তুষার, নিলা, রুহি সবাই সোফায় বসে গল্প করছে। গল্পের মাঝে রুহি রাইমার কাধে কনুই রেখে সবার দিকে তাকিয়ে ক্ষীণ সুরে বলে
” আচ্ছা একটা কথা বলো !! তোমরা দুজন আমার বোনকে আর বান্ধবীকেই কেনো পছন্দ করলে ?? অন্য কোনো মেয়েকে পছন্দ করতে পারলে না ??” রায়হান মিশুর দিকে তাকিয়ে বলে
” ভালোবাসি তো তাই। ভালোবাসা যখন তখন যেই কারো সাথেই হয়ে যেতে পারে। সেটা বন্ধুর বোন হোক আর বোনের বান্ধবী হোক।” রুহি মুচকি হাসলো। অভিদ এসে বলে
” কিরে এখানে বসে থাকবি নাকি ?? এখন কাপল ডান্স শুরু হবে। সবাই সবার পার্টনার নিয়ে তৈরি হয়ে যাও।” রায়হান উঠে বলে
” তুই আর রুহি ডান্স করবি না ??” অভিদ ভ্রু কুচকে গম্ভীর গলায় বলে
” তোদের জন্যই না রুহি বেশি মাথায় উঠছে। জানিস না ওর পা ভাঙা !! তাহলে নাচবে কি করে ?? তোর কথা শুনে দেখ এখন আবার বলবে নাচ করার জন্য। তোরা জলদি যা।” রায়হান ঢোক গিলে একবার রুহির দিকে তাকিয়ে তাড়াহুড়ো করে সবাইকে নিয়ে নেমে গেলো। রায়হান যেতেই রুহি এসে বলে
” আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো ?? আপনিও জান !!” অভিদ অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে বলে
” আমি কেনো যাবো ?? তুমি তো নাচতে পারবে না তাহলে আমি কার সাথে ডান্স করবো ??”
রুহি ঠোট উল্টে সামনে সবার দিকে তাকিয়ে বলে
” সামনে কতো মেয়ে আছে তাদের কারো সাথে নাচুন !! আমি তো নাচতে পারবো না তাই বলে কি আপনিও বসে থাকবেন নাকি।” রুহির কথা শুনে অভিদ রেগে গেলো
” মানে কি ?? আমি এখন ডান্স করার জন্য কি অন্য মেয়েদের কাছে যাবো ?? তুমি আমার ওয়াইফ হয়ে কি করে এটা বলতে পারছো ??”
রুহি মন খারাপ ক!১ থেকেছি এখনও থাকতে পারবো এতে মুদ অফ করার কিছু নেই। আর একদিন এমন কথা বললে ধরে সত্যি সত্যি থাপ্পড় মেরে দেবো। চুপ করে বসে থাকো।” ধমক দিয়ে বলে কথাটা বলে রুহিকে নিয়ে সোফায় বসে পরে। অভিদের কথা শুনে রুহির মনে এক প্রকার প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেলো। রুহি মুচকি হেসে অভিদের হাত জড়িয়ে ধরে বসে সামনে ডান্স দেখতে থাকে। রুহিদের পাশে জোতি আর জিহান বসে আছে।
ডান্স ফ্লোরে অনেক কাপল ডান্স করছে। সামনের সারিতে রায়হান – মিশু, তুষার – নিলা, অনি – আখিল ডান্স করছে। রায়হান ডান্স করতে করতে বলে
” আজকে আমাদের এনগেঞ্জমেন্ট সেটা তুমি জানতে তাই না ?? আমাকে জানাওনি কেনো আর অভিদ কবে এসব ঠিক করেছে ?? আমি কিছুই টের পাইনি।” মিশু হেসে বলে
” ভাইয়া পাঁচদিন আগে আমাদের বাড়িতে গিয়েছিলো। বাবা, মার সাথে সব কথা বলেছে। সেইদিনই সব ঠিক করে এসেছে। আর তোমাকে জানাতে না করেছে। তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো তাই। তাই তুমি ছাড়া সবাই জানতো। তবে তুষার ভাইয়ার এনগেঞ্জমেন্ট নিয়ে কেউ কিছু জানতো না।” রায়হান হেসে আর কিছু না বলে ডান্স করতে লাগলো।
আখিল অনিকে অনেক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণ করছে। অনি মুড অফ করে আছে। বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আখিল অনির নিজের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে
” কি হয়েছে তোমার মুড অফ কেনো ??” অনি মুখ গোমড়া করে বলে
” ভাইয়া আমাকে তুষ ভাইয়ার এনগেঞ্জমেন্ট এর ব্যাপারে কিছুই সেয়ার করলো না !!” আখিল অবাক হয়ে বলে
” কেনো তুমি জানতে না ??” অনি মাথা নাড়িয়ে না বলে। আখিল বলে
” হয়তো সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য কাউকে জানায় নি। আর রুহি ভাবিও তো মনে হয় কিছু জানতো না। ভাবি জানলে তো তোমাকেও জানাতো। আর মন খারাপ করে থেকো না।” অনি এবার মুখ ফুলিয়ে বলে
” আপনি এতো দেড়ি করলেন কেনো আসতে।পার্টি তে তাড়াতাড়ি আসলে হতো না !!” আখিল ইনোসেন্ট মুখ করে বলে
” তোমাকে তো আমি বলেই দিয়েছিলাম। আজকে আমার একটা মিটিং ছিলো তাই দেড়ি করে আসতে হবে। তাও তুমি মুখ ফুলিয়ে রেখেছো কেনো ?? একটু মুচকি মুচকি হাসো !! কতো বছর ধরে তোমার মুখের হাসি দেখি না।” আখিলের কথা শুনে অনি হেসে উঠলো। আখিল প্রশান্তির হাসি দিলো। অনির এই হাসিটা তার সবচেয়ে প্রিয়। অনির মুখে হাসি না দেখলে আখিলের বুকে কেমন হাহাকার করে।
পার্টি শেষ হয়ে গিয়েছে।সব গেস্টরাও চলে গিয়েছে। রুহির, মিশুর বাড়ির লোকরা রয়েছে। আর আখিল, আশিক রয়েছে তারাও কিছুক্ষণ পরে চলে যাবে। মিশুর বাবা ফুপিকে বলে
” তো আপা বিয়ের ডেট কবে ঠিক করার কথা ভাবছেন ??” ফুপি হেসে বলে
” আরে এতে ভাবার কি আছে ?? আমরা তো ভাবে ঠিকও করে রেখেছি এখন শুধু আপনারা রাজি হলেও ডেট ফিক্সড।” মিশুর মা হালকা হেসে বলে
” কবে ঠিক করেছেন ??” অভিদ ফুপির দিকে একপলক তাকিয়ে আবার সবার দিকে তাকিয়ে বলে
” আমরা ঠিক করেছি নতুন মাসের প্রথম শুক্রবারে বিয়ে হবে তার আগে হলুদ আর পরে রিসিপশন। আর এতো দিনের মাঝে সব বিয়ের ব্যবস্থা সব করবো। আমরা ধীরেসুস্থে, ভালোভাবে সব কিছু করতে চাই। এখন আপনারা যা বলবেন। আপনাদের প্রবলেম হলে আমরা ডেট আরো পেছনে নিতে পারি।” মিশুর বাবা আপত্তি স্বরে বলে।
” না, না কি বলছো বাবা আর পেছনো লাগবে না। এতো সময় দিয়েছো এটাই যথেষ্ট।” ফুপি সৌজন্যতার হাসি দিয়ে বলে
” আপনারা আপনাদের সাধ্য মতো সব করুন। আমরা শুধু আমাদের বাড়ির বউকে ঘরে তুলে নিতে চাই আর কিছু না।” মিশুর মা, বাবা মুচকি হাসলো। ওদের কথার মাঝে হঠাৎ তুষার বলে উঠে
” আচ্ছা সবাই আমার বিয়ে নিয়েও কিছু কিথা বলো !! তোমাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে শুধু রায় ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে আমারও তো এনগেঞ্জমেন্ট হয়েছে। আমার বিয়ে নিয়ে কথা বলো আমি শুনি।” আশিম মেকি হেসে বলে
” জি না আজকে শুধু রায়হান এর বিয়ের কথা হবে। কারণ রায়হানের বিয়ে কয়দিন পরে আর তোমার বিয়ে তিন বছর পরে !! ওহ মাই আল্লাহ !! তুষার তুমি এতো ছোট ?? তোমাকে তো আরো তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে এখন তুমি এতো দিন কি করে অপেক্ষা করবে ??” তুষার কাঁদোকাঁদো মুখ করে সবার দিকে তাকিয়ে বলে
” তিন বছর ?? এতো বছর কি করে অপেক্ষা করবো আমি ?? আমি তো ঘাস ও কাটতে পারি না যে গরুর ঘাস কাটবো বসে বসে।” তুষারের কথায় সবাই হেসে উঠলো। অভিদ হাসি থামিয়ে গম্ভীর গলায় বলে
” সেটা তোর আগে ভাবা উচিত ছিলো। কারণ তুই একটা ছোট মেয়েকে ভালোবেসেছিস। নিলার অনার্স শেষ হলে তারপর বিয়ে হবে তোমাদের। এতোদিন মনোযোগ দিয়ে অফিস সামলাবি আর কোনো ভুল হলেই বিয়ে ভেঙে দেওয়া হবে।” তুষার অসহায় মুখ করে বলে
” that’s not fair vaiya. আমি ছোট মেয়েকে কোথায় ভালোবাসলাম ?? আমাদের থেকেও ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে দের প্রেম করে বিয়ে হয়ে তিন চারটা বাচ্চা হয়ে গিয়েছে।” অভিদ আগের ন্যায় গম্ভীর গলায় বলে
” সেটা ওরা নিজেদের ভুলের কারণেই নিজেদের লাইফ নষ্ট করে ফেলে। আমরা তোমাদের ভালোর কথা ভেবেই সব ঠিক করেছি।” তুষার মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে।
আখিল উঠে সবাইকে দেখে বলে
” আচ্ছা তাহলে আজকে আমি উঠি। আবার অন্য একদিন দেখা হবে।” অভিদ উঠে বলে
” এখনি চলে যাবে ?? পরে যাও!!” আখিল হেসে বলে
” নাহ অনেক রাত হয়েছে আজকে আসি। see you soon everyone. ফুপি, আংকেল, আন্টি আসছি আমি।” রুহির বাবা উঠে বলে।
” আমরাও তো চলে যাবো। চলো এক সাথেই যাই।” আখিল হালকা বলে
” হ্যা চলুন।” রুহির মা, বাবা, মিশির মা, বাবা, রাইমা, নিলা, জোতি, মিশু সবাই আখিল, আশিকের সাথে বেড়িয়ে গেলো। ফুপিরা সবাইকে এগিয়ে দিতে বাইরে গেলো।
অভিদ বাইরে না গিয়ে উপরে চলে গেলো। রুহি অনেক আগে পার্টির শেষ হওয়ার আগেই চলে গিয়েছে। মেডিসিন টাইম হওয়ায় মেডিসিন খেয়ে ঘুমিয়ে পরেছে। অভিদ রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে রুহির পাশে শুয়ে রুহিকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পরলো। অভিদের ফুপি, অনি, রায়হান, তুষার সবাই এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
সবার ব্যস্ততা, হাসি-আনন্দের মাঝে আরো বিশ দিন কেটে গেলো। পাঁচদিন পরে রায়হান, মিশুর বিয়ে। দুই বাড়িতে তোরজোড় চলছে। সবাই ব্যস্ততায় সময় কাটাচ্ছে।
চলবে…wait for next part….