বাবুই পাখি🌿
#পর্ব_৩৬
Writer-Afnan Lara
.
বাসায় ফেরার পর পুতুলের মন খারাপ দেখেই ইমাদ বুঝেছে কিছু একটা হয়েছে তাও মাকে নিয়ে।বাবা আর বলতে আসেননি।মা তো তার রুমেই।খাবারগুলো টেবিলে রেখে ইমাদ নিজেই সব প্লেটে প্লেটে সাজালো।পুতুলের প্লেটটা নিয়ে ওর পাশে এসে বসলো সে।পুতুল ব্যস্ত হয়ে বললো,’আমি করতাম।আপনি করতে গেলেন কেন?’
-‘চুপ করে বসো।আমি খাইয়ে দেবো’
-‘না।লাগবে না আমি নিজেই খেতে পারবো।আপনি চলুন সবার সাথে বসে খাবেন’
ইমাদ পুতুলের হাত ধরে ফেলেছে।ঘুরিয়ে এনে আবারও বসিয়ে দিয়ে বললো,’তোমার সাথে কিছু কথা আছে’
পুতুল জবাব শুনতে বসলো চুপচাপ।ইমাদ পরোটা এক টুকরো আর ভাজি নিয়ে পুতুলের মুখে দিয়ে বললো,’জানি মায়ের ব্যবহার তোমার ভালে লাগে না।কষ্ট লাগে।কিন্তু দেখো এই দিন থাকবে না।মা তোমায় অনেক ভালোবাসবে।আমার মা যাকে একবার বুঝে তাকে ভালোবাসে মন দিয়ে।বাবার সাথে এত কিছুর পরেও দিনশেষে তার কেয়ার কিন্তু মা নিজেই করে।তোমার ক্ষেত্রেও তাই হবে।একটু সবুর করো।আই এম সরি।আমার জন্য তোমার এত কিছু সহ্য করতে হচ্ছে।হয়ত অন্য একটা ছেলের সঙ্গে বিয়ে হলে তার মা নিশ্চয় তোমাকে মেনে নিতো শুরু থেকেই।’
-‘চুপ করবেন আপনি?এত জ্ঞান দিতে বলিনি আপনাকে।আমি আপনাকে পছন্দ করতাম বলেই আপনার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে শুনে খুশি হয়েছিলাম।আপনাকে পছন্দ করতে পেরেছি,আপনার রাগের বশে বলা কথা মেনে নিতে পেরেছি তাহলে আপনার পরিবারের লোকদের উল্টো চোখে দেখবো কেন?তিনি আমাকে বকেন কারণ তিনি আমায় জায়গায় সিনথিয়া আপুকে বসাতে চেয়েছিলেন।তার জায়গায় আমি বসে গেছি।আপনার বোঝা উচিত’
-‘হুম।থ্যাংকস,আমার মাকে বোঝার জন্য।নাও হা করো’
ইমাদ পুতুলকে খাইয়ে দিয়ে মায়ের রুমের দিকে গেছে।পুতুল দরজার চৌকাঠ ধরে ইমাদকে দেখছে।এত ভাল একটা মানুষকে নিজের বর হিসেবে পেয়ে আজ তার গর্ব করতে ইচ্ছে হয়।
-‘মানুষটা একই ডোরে দুদিক সামলাচ্ছে।এমনটা কজনে পারে?কি সুন্দর তিনি আমায় আমার হয়ে বোঝাচ্ছেন।আবার তার মাকেও।আমার দাঁত কেলানো সফল তাহলে’
মা জানালেন আজ নাকি তার এক কলিগের মেয়ের বিয়ে।হালকা সুস্থ লাগছে বলে ওখানে যেতে চান তিনি।সকালেও না করে দিয়েছিল উনাদের।
কিন্তু তারা ফোন করে করে মাথা খাচ্ছে।তাই না গেলেই নয়।
ইমাদ চমকে বললো,’সেকি!আমি আরও তোমার জন্য আজ অফিসে ফেরত যাব না বললাম বসকে”
বাবা পাঞ্জাবি চয়েস করতে করতে বললেন,’তুই তো সীতাকুণ্ড যাবি বলে অলরেডি ছুটি নিয়েছিলি তাহলে আর কি।বসকে বল সীতাকুণ্ডের জ্যামে আটকেছিস।’
—–
মা আর বাবা রেডি হয়ে চলে গেলেন এক ঘন্টার মাঝা মাঝি সময়ে।পুতুল চায়ের কাপ হাতে ওদের চলে যাওয়া দেখে জিজ্ঞাসু চোখে তাকালো ইমাদের দিকে।ইমাদ নিচের ঠোঁট উল্টে বললো,’দাওয়াত’
পুতুল মুচকি হেসে বললো,’আমরা যাব না?”
-‘অনলি বাবা মাকে দিয়েছেন।মিঃ এন্ড মিসেস কে।তাদের ছানাপোনাকে দেয়নি।’
পুতুল ভেংচি কেটে চায়ের কাপটা টেবিলের উপর রেখে বললো,’নিন।খেয়ে নিন’
ইমাদ পুতুলের হাতের কব্জি মুঠো করে ধরে ওকে আটকে বললো,’আমার পাশে বসো না’
পুতুল মাথা ঘুরিয়ে বললো,’আমার অনেক কাজ।ফ্রিজ থেকে মাছ নিয়ে ভেজাতে হবে’
-‘আজ ডাল, ভাত আর ভর্তা খাব।মাছ বাদ দাও’
-‘আপনার মা রেগে যাবেন।’
-“বিয়ে বাড়ির হাইফাই খাবার খেয়ে রাতে মা বাবা দুজনেই এসিডিটির ঔষুধ খেয়ে গাপটি মেরে বসে থাকবে।মুখে কিছুই তুলবে না’
পুতুল অনেকক্ষণ কিছু একটা ভাবলো।তারপর ইমাদের কথামতন আলু সিদ্ধ করতে দিয়ে চলে আসলো চা খেতে।ইমাদ চায়ে চুমুক দিয়ে টিভিতে চোখ রেখেছে।পুতুল ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ইমাদের হাতের ঘড়িটা বারান্দা দিয়ে আসা রোদ পড়ে চিকচিক করছে।ওর হাতের পশমগুলো যেন সোনালি রঙের।গায়ে কাঁটা দিচ্ছে পুতুলের।ইমাদ ওর দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো চোখ বড় করে কি যেন দেখছে।তাই সেও নিজের হাতটা দেখতে নিলো, এরপর কিছুই না বুঝে বললো,’কি ব্যাপার?কি দেখছো?’
পুতুল হকচকিয়ে চায়ের কাপ নিয়ে উঠে চলে গেছে।ইমাদ বিষয়টা খেয়াল করেছে ভেবে পুুতুল আবারও লজ্জা পেয়েছে।ইমাদ পারেই লজ্জা দিতে।আর কিছু পারে না।
আলুগুলোকে একবার নেড়ে দিয়েছে পুতুল।গরম পানিতে গবগব করে ফুটছে।আলু গুলো নড়ছে অনবরত ।কপালের ঘাম মুছে পুতুল হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।ঠাণ্ডা দেয়ালে পিঠ লাগতেই কেঁপে উঠলো সে।তারপর সরতে নিতেই আবারও থমকে গেলো।তার পাশেই দেয়ালে হাত রেখেছে ইমাদ।পুতুল চোখ বড় করে বললো,’আপনি! মানে এখানে”
-‘কেন আসতে পারি না?’
-‘না মানে কিসের জন্য আসলেন?কিছু লাগবে?’
-“হুম।এখানে একটা পুতুল আছে ওরে লাগবে’
পুতুল মাথা নিচু করে ফেললো।লজ্জার শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছে সে।যাকে বলে উইননার হয়ে গেছে।গাল আস্তে আস্তে লাল রঙ হচ্ছে।ইমাদ শুধু মিটমিট করে হাসছে।পুতুল চোখ তুলে ইমাদের হাতের দিকে তাকালো যে হাতটা সে দেয়ালের উপর রেখেছে।এমনটা ইমাদ আগে কখনও করেনি।পুতুলের গা কাঁপছে।ভয় করছে।
ইমাদ তার হাত সরিয়ে বললো,’দাও আলু কেটে দিই’
পুতুলের যেন দম ফিরে এসেছে।সে সরে দাঁড়িয়ে বললো,’আলুর ভর্তায় আলু কাটতে হয়না।সেদ্ধ দিছি’
ইমাদ মাথায় হাত দিয়ে বললো,’ওহ হো!তোমাকে দেখে ওসব ভুলেই গেলাম।’
কথাটা বলে ইমাদ চলে গেলো।পুতুল উঁকি দিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখে ভাবলো ইমাদের আবার কি হয়েছিল।রান্না করার সময় ইমাদের ভাবনায় ডুবে ছিল বলে পুতুল কখন যে গরম পানিতে হাত ডুবিয়ে বসলো।তাও ফুটন্ত গরম পানিতে।ওর চিৎকারে ইমাদ ছুটে এসেছিলো।এখন আপাতত রুমে বসে বসে ওর হাতে মলম লাগাচ্ছে সে।পুতুল শক্ত হয়ে বসে নিজের হাতটা উল্টে পাল্টে দেখছে।ইমাদ হাতে মলম লাগিয়ে উঠে যাবার সময় ওর কপালে চুমু দিয়ে গেলো।পুতুলের যেন নিমিষেই ব্যাথার পরিমাণ এক বিন্দুতে নেমে এসেছে।কপালে হাত দিয়ে সে নেশার চোখে ইমাদের চলে যাওয়া দেখলো।ইমাদ গেছে রান্নাঘরে।চুলা অফ করে আলুতে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পুতুলের জন্য পানি এক গ্লাস নিয়ে ফেরত আসলো সে।পুতুল শুধু ওর মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে।ইমাদ পানির গ্লাস ধরে দাঁড়িয়ে ছিল অনেকক্ষণ তাও সে ধরছেনা দেখে রেখে দিলো ল্যাম্পশ্যাডের সামনে।পুতুলের চোখের সামনে হাত নাড়াচাড়া করে বললো,’কি হলো তোমার?’
পুতুল চোখের পলক ফেলে মাথা নাড়িয়ে বললো,’না কিছু না’
ইমাদ পুতুলের পাশে বসে ওর হাতটা নিজের দুহাতের উপর এনে উল্টে পাল্টে দেখে বললো,’ইশ রে।অনেকটা ছ্যাঁকা খেলে।লাল হয়ে আছে কেমন।কদিন তো নিজ হাতে খেতেও পারবে না।কিছু ধরতেও পারবে না।একেবারে ডান হাতই পোড়ালে’
পুতুল বাম হাত দিয়ে চোখ মুছে বললো,’ধরলেন কেন?জ্বালা করছে।ওমনেই থাকুক”
এটা বলে সেটা হাতটাকে সরিয়ে আনলো।ইমাদ ভেংচি কেটে চলে গেছে।রান্নাঘরের ১২টা বাজিয়ে সে আলুর ভর্তা,ডাল,ভাত সব বানিয়ে নিয়েছে।পুতুল হাতের যন্ত্রনায় কাতর হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে একটা সময়ে।ইমাদ ওকে খেতে ডাকতে আসায় দেখলো সে ঘুমাচ্ছে।তাই সে চলে গেলো গোসলে।
কিছুক্ষণ পর পাশের বাসা থেকে বিকট একটা আওয়াজ আসতেই পুতুল জেগে গিয়ে উঠে বসে পড়েছে।ইমাদ গায়ে সাবানের ফ্যানা সমেত বের হয়ে বললো,’কোথায় আওয়াজ হলো?পুতুল তুমি ঠিক আছো?’
পুুতুল ইমাদকে দেখে চোখ বড় করে তাকিয়ে রইলো।ইমাদ বিষয়টা বুঝতে পেরে মাথার চুল থেকে ফ্যানা নিয়ে এগিয়ে এসে পুতুলের মাথায় দিয়ে বললো,’কি দেখো ওমন করে?আগে কখনও কোনো ছেলেকে এমন অবস্থায় দেখোনি নাকি?’
-‘আসাদ ভাইয়াকে দেখেছিলাম অনেকবার।ফোনে কথা বলত এমন বেশে থেকে’
-‘আচ্ছা।ভালো।আমি তো ভাবলাম প্রথমবার দেখছো তাই এমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছো’
পুতুল ভ্রু কুঁচকে বললো,’কেন?আমার হাসবেন্ডের দিকে তাকাতে কি আমার হাসবেন্ডের অনুমতি লাগবে?’
-‘হ্যাঁ অবশ্যই লাগবে।আমার বুঝি লজ্জা করেনা?’
পুতুল তাচ্ছিল্য করে হেসে বললো,’আপনার?লজ্জা?বিয়ের পর থেকে তো সেই আমাকেই লজ্জায় ফেলতেন সবসময়।আপনিও বুঝি লজ্জা পান?’
-“পাইতো।তবে তোমার মতন গাল লাল হয়না।আমরা ছেলেরা মনের ভেতর দুঃখ, কষ্ট, লজ্জা লুকিয়ে রাখতে জানি।তোমাদের মতন ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদি না’
পুতুল বিছানা থেকে নেমে ইমাদের সামনে গিয়ে ওর গায়ে কিল একটা বসিয়ে দিয়ে এখন নিজেই চেঁচাচ্ছে।কারণ পোড়া হাতটা দিয়েই মেরেছিল।ইমাদ হাসতে হাসতে ওর হাতটা ধরে বললো,’আমার দোষ নেই।তাও সরি”
-‘দোষ আপনারই।আমাকে না রাগালে আমি ছুটে মারতে আসতাম না।হাত শেষ আমার’
ইমাদ পুতুলকে বুকে আগলে ধরে বললো,’একটা ব্যাথার ঔষুধ কিনে আনবো।ঠিক হয়ে যাবে।আবারও সুন্দর করে মারতে পারবে আমায়’
পুতুল ইমাদের খালি বুকটাতে মুখটা গুজে চুপ করে রইলো।ইমাদ ও চুপ হয়ে আছে।পুতুল তার হাতটা ওর পিঠের উপর নিয়ে রেখে আবারও কেঁপে এক ঝটকায় সরে দাঁড়ালো।
ইমাদ কপাল কুঁচকে বললো,”আবেগে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছো ভালো কথা কিন্তু ঘুরেফিরে সেই পোড়া হাত দিয়েই ধরতে হবে?বাম হাত নেই তোমার?’
-‘মানুষ বাম হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে না।’
-‘তো আসুন।আপনার পোড়া ডান হাত দিয়েই জড়িয়ে ধরুন আমায়।আপনি তো আবার রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে,থুরি!নিয়মতান্ত্রিক পরিবারের মেয়ে।ডান বললে ডান।বাম বললে বাম’
পুতুল রেগে চলে আসতে নিতেই ইমাদ ওকে নিজ থেকেই আগলে ধরলো আবার।মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে বললো,”সব কথায় রাগ করতে হবে?’
-‘রাগের কথা বললে হাসতে হবে?’
-“আচ্ছা সরি!যাচ্ছি গোসল করতে।বসো।তারপর সকালের মতন এখনও খাইয়ে দেবো।কটা বাজে খবর আছে?’
পুতুল মাথা নাড়ালো।ইমাদ ওকে ছেড়ে গোসলে গেছে আবার।পুতুল নিজের হাতে আর গায়ে দেখলো ফ্যানা লেগে আছে।আজ দিনটা খুব সুন্দর।হাত পোড়া গেছে তা বাদ দিয়ে পুতুল ভাবছে ইমাদ তাকে কতটা কাছে টানলো আজ।কত সুন্দর মূহুর্ত উপহার দিলো।সে এসব ভাবতেই পারেনি।
-‘আর খালা বলেছিল ইমাদ কখনও নিজ থেকে এসে বলবে না সে আমায় ভালোবাসে।কে বলেছে বলবে না?এই যে সে আমায় প্রতিটা মূহুর্তে ফিল করাচ্ছে সে আমায় ভালোবাসে,আমার কেয়ার করে,আমার ব্যাথায় কষ্ট হয় তার।একটা মানুষকে পছন্দ হলে তাকে ভালোবাসার কাতারে আনতে বেশি সময় লাগেনা।ইমাদের হয়েছে তাই।’
এসব ভেবে গাল থেকে ফ্যানা সরিয়ে আঁচল দিয়ে মুছে ইমাদের অপেক্ষা করতে লাগলো পুতুল।ইমাদ আসছে না।ওদিকে ইমাদের মা বাবা এসে পড়বেন এসময়ে।ঠিক ঐসময়টাতে ইমাদের ফোন বেজে উঠলো।কল করেছেন ইমাদের মা।পুতুল ভয়ে ভয়ে রিসিভ করলো।
চলবে”
বাবুই পাখি🌿
#পর্ব_৩৭
Writer-Afnan Lara
.
শাশুড়ির সাথে ফোনে কথা বলতে মনে হয় কোনো পুত্রবধূর এতটা ভয় করে না যতটা পুতুলের করছে।থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে সে ফোন কানে ধরেছে।ওপাশ থেকে ইমাদের মা বললেন,’হ্যালো ইমাদ,খেয়েছিস?’
পুতুল ঢোক গিলে বললো,’এই তো এখন খাবো আমরা’
-‘ইমাদ কোথায়?’
-‘গোসলে গেছেন’
-‘ওহ।ওকে বলে দিও আমি আর ওর বাবা আজ ফিরবো না।শিরিন আপা আসতে দিচ্ছে না।
-‘আচ্ছা’
ইমাদের মা কল কেটে দিয়েছেন।পুতুল ফোন রেখে দাঁত কেলালো।খুব ভালো লাগছে।উনারা আসবেন না সে নিয়ে নয়।
-‘বরং উনারা আসলে যদি দেখতেন হাত পুড়িয়ে বসে আছি তাহলে ইমাদের আম্মু উল্টে আমাকেই বকতেন।তারপর আবার কাজ- টাজ করতে পারতাম না,সেই নিয়ে আবারও বকতেন।কতগুলো বকা থেকে বেঁচে গেলাম।কাল অবধি হাত একটু ভালো হয়ে যাবে।’
ইমাদ তোয়ালেতে তার ভেজা চুল ঘষতে ঘষতে বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো পুতুল ছাদের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলাচ্ছে।ওর কাছে এসে ইমাদ বললো,’কার ফোন ছিল?’
পুতুল হা করে এবার ইমাদকে দেখছে।ইমাদ বেশ বুঝেছে পুতুল তার এই প্রশ্নের জবাবটাও ১৪ঘন্টা পরে দেবে তাই সে নিজেই ফোন হাতে নিয়ে দেখলো মায়ের কল ছিল।পুতুল হা বন্ধ করে বললো,’উনারা আজ আসবেন না।ওখানেই থেকে যাবেন’
-‘জানতাম!
শিরিন আন্টি মাকে পেলে তার সব আত্নীয় ভুলে যায়’
পুতুল ব্রু কুঁচকে বললো,’তাহলে তার মেয়ের সঙ্গে আপনার বিয়ে দিলো না কেন?’
-‘উনি হলেন বড়লোক্স।বিসিএস ক্যাডার দেখে মেয়ে বিয়ে দিচ্ছেন।আমি তো সবে চাকরি পেলাম তাও বেসরকারি। তবে আমার উনার নাতিনের সঙ্গে বিয়ে হবার চান্স আছে’
পুতুল ইমাদের হাত থেকে তোয়ালে ছিনিয়ে পুনরায় ওর মুখের উপর ছুঁড়ে মেরে বললো,’বউয়ের সামনে এরকম করতে লজ্জা করে না আপনার?’
-‘কেন লজ্জা করবে?তুমি আমার বউ হয়ে এমন উদ্ভট চিন্তা করতে পারো আবার আমাকে বলতেও পারো আর আমি এইটুকু বলতে পারবো না?’
-‘যান এখান থেকে।সুন্দর একটা মুড নষ্ট করে দিলো আমার’
—-
ইমাদ প্লেটে ভাত নিতে নিতে বললো,’শুনলাম মানুষ অসুস্থ থাকলে খাবার কম খায়।জোর করেও খাওয়ানো যায় না।তাই আমি ভাত কমই নিচ্ছি।তার উপর ডাল ভাত,তোমাকে তিন লোকমা খাওয়াতে পারলেও লাভ আছে।ঔষুধ পেটে যাবে।’
পুতুল সোফায় বসে ইমাদের কথা শুনছে আর চ্যানেল পাল্টাচ্ছে।ইমাদ ওর পাশে বসে বললো,’কাল মা বাসায় এসে বলবে’শুনো মেয়ে,অনেক তো হলো এবার আমাকে নাতিপুতির মুখ দেখাও’
পুতুল মুখ ঘুরিয়ে বসে বললো,’কি বলছেন!’
-‘হ্যাঁ।বিয়ে বাড়িতে গিয়ে বাচ্চাকাচ্চা দেখলে মায়ের কত কি ভাবনা এসে মাথায় ঘুরপাক খায়।এতদিন আমায় ফোর্স করত বিয়ে করার জন্য।এবার তোমায় ফোর্স করবে বাবুটাবুর জন্য’
-‘কিন্তু উনি তো এখনও আমাকে মেনেই নেননি’
-‘ওটাই তো।মেনে নেননি বলেই তো আরও বেশি করে তোমাকে ফোর্স করবে’
পুতুল চোখ ছোট করে একটু নড়েচড়ে বসলো।তারপর বললো,’কি জানি!দেখি কি বলে।আমার কোনো সমস্যা নাই’
ইমাদ তাচ্ছিল্য করে হেসে লোকমা তুলে দিলো ওর মুখে।পুতুল ইমাদের হাঁটুর উপর হাত রেখে টিভি দেখছে আর ভাত চিবোচ্ছে।ইমাদ আলুর ভর্তা নিতে নিতে বললো,’লবণ কম হয়ে গেলো।আমি লবণ ঠিকঠাক দিতে পারিনা এই এক সমস্যা। পরে নিতে নিতে হরতুর হয়ে যাই তাও লবণ কম মনে হয়।’
পুতুল গোগড়াসে গিলে যাচ্ছে যেন অমৃত।ওকে খাওয়ানো শেষে ইমাদ নিজের খাবার খাচ্ছে এখন।পুতুল হাত উপরে করে রুমে গিয়ে আলমারিটা খুললো বাম হাত দিয়ে।তারপর কি মনে করে আবার বন্ধ করে ফেললো।ভাবলো দরকার নাই শাড়ী বদলানোর।
আলমারির দরজা বন্ধ করে পেছন ফিরতেই চমকে গেলো সে।ইমাদ ওর সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসু চোখে ওর দিকে চেয়ে আছে।
পুতুল কাঁপা ঠোঁটে বললো,’কি?’
-“আমার ও একই কথা।কি?’
-‘ওহ।না কিছু নয়।এমনি আলমারিটা দেখতে মন চাইলো।দেখলাম আবার দরজা লাগালাম’
-‘শাড়ী বদলে দেবো?’
পুতুল ঠাস করে আলমারি সাথে লেগে গিয়ে চোখ ইয়া বড় করে বললো,’না জীবনেও না।আমি ঠিক আছি।এই শাড়ীতে আমাকে জোস লাগছে”
কথাটা বলে জায়গা ছেড়ে সে পালিয়ে গেলো।একেবারে গেস্ট রুমে।ইমাদের মাথায় দুষ্টুমি ঘুরছে।সে পুতুলের পিছু নিলো।পুতুল গেস্ট রুমে এসে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে লজ্জায় লাল হচ্ছিলো ঠিক সেময়ে ইমাদ এসে পাশে দাঁড়িয়েছে এবার বুঝি সে মরেই যাবে।ইমাদ আলতো করে ধাক্কা মেরে বললো,’চলো আরও জোস একটা শাড়ী পরিয়ে দেই’
পুতুলের উত্তরের আশায় সে বসে থাকেনি।ফট করে পুতুলকে কোলে তুলে নিয়েছে।পুতুল দুহাত খিঁচিয়ে ইমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।তারপর যখন হুস আসলো হাত দিয়ে ইমাদের বুকটা ঠেলতে ঠেলতে বললো,’না প্লিজ।আমার শাড়ী বদলানোর দরকার নেই’
ইমাদ হাসছে শুধু আর ধীরে ধীরে হেঁটে চলেছে তার রুমের দিকে।পুতুলের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
-‘ইমাদের হাবভাব সুবিধার ঠেকছে না।হুট করে মানুষটার হলো কি।আমার রণচন্ডি শাশুড়ী আম্মা আপনি দয়া করে চলে আসুন।আপনার ছেলের মাথা গেছে।’
ইমাদ পুতুলকে বিছানায় নামিয়ে দিতেই পুতুল বিছানার শেষ সীমানায় চলে গিয়ে বললো,’আমি ঠিক আছি।হাত ব্যাথা করছে না’
ইমাদের ঠোঁটের দুষ্টু হাসি পুতুলের মনে ভয়টা আরও আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।এটাকে ভয় বলা যাবে না ঠিক।নতুন কিছুর সঙ্গে পরিচিত হলে যেমন ফিল হয়।ঠিক সেই ফিলটা পুতুলের হচ্ছে।
ইমাদ গায়ের হালকা নীল রঙের টিশার্টটা খুলে পুতুলের ঠিক পাশে লম্বা করে চিত হয়ে শুয়ে পড়েছে।পুতুল ভয়ে আঁতকে ছিল এতক্ষণ।ইমাদের এখন স্বাভাবিক ব্যবহার দেখে তার দম আবার ফিরে এসেছে।হাঁপাতে হাঁপাতে পাশ থেকে গ্লাস নিয়ে পানি খেলো সে।ইমাদ বললো,’গরম অনেক।’
পুতুল ফ্যানের দিকে তাকিয়ে কপালের ঘাম মুছে বললো,’আসলেই’
—-
দুপুর তিনটা বাজে।ইমাদ গভীর ঘুমে এখন।পুতুল ওর খালি পিঠটা দেখছে গালে হাত দিয়ে।আজকের দিনটা সে কখনও ভুলবে না।
-‘আজ মানুষটা এক এক করে শুধু অবাক করে দিচ্ছে আমায়।তার ছোঁয়া পাচ্ছি বিন্দু বিন্দ পরিমাপে।এটার চেয়ে সুখ আর কিসে হতে পারে।’
মুখে এক রাশ হাসি নিয়ে ডান হাতটা ইমাদের পিঠের উপর রেখে পুতুল এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো,’অনেক বেশি ভালোবাসি’
ঠিক সেসময়ে হঠাৎ করে ইমাদ মাথা তুলে বললো,’প্লিজ আমাকে চড় মারবেন না।আমিও আপনাকে ভালোবাসি’
পুতুল চট করে হাত সরিয়ে ফেলেছিল।পরে ইমাদের কথা শুনে হেসে ফেললো।ইমাদ আবারও মাথা লুকিয়ে ফেলেছে বিছানার সাথে।পুতুল ইমাদের পাশে মাথা রেখে বললো,’কখনও চড় মেরেছি?’
-“আর আমি ভাবতাম তুমি মারবে তাই এটা বলেছিলাম প্রথমবার যেদিন তোমায় দেখেছিলাম’
-‘আমার এতো সাহস নেই অচেনা একটা ছেলেকে চড় মারার’
ইমাদ উঠে বসে বললো,’পিঠ টিপে দেবে?’
পুতুল ডান হাত উপরে করে বললো,’ব্যাথা’
-‘বাম হাত?’
পুতুল চোখ দুটো ছোট করে বললো,’আগে টি শার্ট পরুন তাহলে দিব।’
ইমাদ চুপচাপ টি শার্টটা পরে নিয়ে পুতুলের দিকে পিঠ দিয়ে বসেছে।পুতুল বাম হাত দিয়ে ওর পিঠটা টিপতে টিপতে বললো,’বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন।চুল পাকছে।হাত, পা, পিঠ ব্যাথা করছে’
-‘আর মনটা বউ বউ করছে’
পুতুল মুচকি হাসলো কিন্তু কিছু বললো না।ইমাদ মাথা ঘুরিয়ে বললো,’আর আমার বউ সুন্দরী হচ্ছে।মন বলছে এখন তো সময়,ভালোবাসার।’
পুতুল বেশ সুন্দর করে ইমাদের পিঠটা টিপে দিলো।ইমাদ মাথা নিচু করে ছিল।অনেকদূর পর্যন্ত কিসব ভেবে বললো,’জানো পুতুল? দিন শেষে ক্লান্তি পরিত্রানে কিন্তু স্ত্রী মোক্ষম ভূমিকা পালন করে।স্ত্রীর এই টুকু সেবা একজন স্বামীর কাছে কিসের সমান বলে বোঝানো যাবে না।দিনশেষে এই টুকু ভালোবাসা অনেক মাইনে রাখে বুঝলে মিসেস হাসান?’
-‘বুঝলাম।তাহলে প্রতিদিন এমন করবো।বদলে কি দেবেন?’
-‘হুমমম।কঠিন কথা বললে।কি দেওয়া যায়?তুমি ঠিক করো’
-“আমার হাতে মেহেদি লাগিয়ে দেবেন?’
-‘বাজে হবে।তাও যখন বললে অবশ্যই দিব।’
-‘একদিন এক আবদার থাকবে আমার’
চলবে””