#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:৩
#জুনাইনাহ_তাসনিম_অরহা
৪.
–উহু উহু..(আপুর গলা ঝাড়ার আওয়াজ করে ওঠে)
–আপু তুই যা আমার ভালো লাগছে না।
–আমি তো যাস্ট কফি আনছিলাম।
–আমি খাবো না।
–একটুখানি তো খা।প্লিজ.
(আপু আমার দুই বছরের বড়।তাসকিয়া আমিন সুমনা।ওউ আমাদের ভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং একটা সাবজেক্টে পড়ে।আমরা দুই বোনের অনেক মিল,কোনদিন ঝগড়াও হয় না।তবে আমার ছোট ভাই সৌরভের সাথে আমার খুব ঝামেলা হয় বান্দরটা এইবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে)
–……….(আমি কিছু বললাম না।আপু আমার পাশে এসে বসে আমার মাথাই হাত বুলালো)
–কি হয়েছে বোন??
(আমি আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না।আপুকে সমস্ত ঘটনা বলে দিলাম)
–এতো কিছু হয়ছে তুই আমাকে বলিসনি কেন??আর তুই ওই ছেলেটার সাথে এতোটা রুড না হলেও পারতিস বোন।দেখ ও তোর জীবন বাচায়ছে তাই না??
আপু আমাকে অনেক বুঝালো তারপর বাবা ডাক দেয়ায় ও চলে গেলো।আমি কফির কাপ হাতে নিয়ে ভাবছি কথাটা তো সত্যিই।আমি মারিয়াকে কল দিলাম,,
–হ্যালো মারু,ভুলটা আমারই রে,তার কোন ভুল না থাকা সত্বেও আমি অনেক রুড বিহেভ করে ফেলছি।আমার উচিত ছিলো তাকে অন্তত একটা থ্যাঙ্কস দেয়ার।কিন্তু এখন তো কোন উপায়ও নেই।আমি ওনার নাম,নাম্বার কিছুই জানি না।নাম অবশ্য বলেছিলো কিন্তু সেটাও তো মনে করতে পারছিনা।তোর কি মনে আছে??
–কার ভুল ছিলো না??কারে থ্যাকংস দিবি?আর কার নাম??তুই কার কথা বলছিস রে দোস্ত??
–আরে ওই যে ওই লোকটা।আজকে ক্যাফেতে ঝামেলা হলো না??উনি??
–ওহ,উনিইইই।
–হ্যা উনি।ওনার নাম মনে আছে কি তোর??
–হ্যা।আছে তো,,ইশরাক এহসান।
–ওকে,বাই।
আমি বাই বলার সাথে সাথেই কল কেটে দিলাম কারন,মারিয়া এখনি হাজারটা প্রশ্ন ছুড়ে দিতো যদি আমি আরো বেশি প্রশ্ন করতাম তো।আমি ফেসবুকে ঢুকলাম।ইশরাক এহসান নামে অনেক সার্চ করলাম,একশ আইডি আসলো এর মধ্যে কোনটা ওনার আইডি তা কিছুতেই ঠিক করতে পারলাম না।হতাশ হয়ে ফোনটা রেখে দিলাম।
৫.
বিকেল ৫টা।আপু এসে জানালো,সে নাকি কি কেনাকাটা করবে তার সাথে মার্কেটে যেতে হবে।আমি সাদা লং কুর্তি,নেভি ব্লু পালাজো ওড়না আর সাদা হিজাব পরে রেডি হয়ে নিলাম।গাড়ি নিলাম না বাসার।কারন আমি আর আপু বেশিরভাগ সময় রিক্সাতে যাই,ছোটবেলার স্মৃতিগুলো তাজা করতে।যখন বাবার গাড়ি ছিলো না আমরা বাস,অটো,রিক্সা এগুলোতেই ট্রাভেল করতাম।পুরোনো দিনগুলো মনে করলেই মনটা ভালো হয়ে যায়।
–কি এতো ভাবা হচ্ছে আয়নার সামনে??(আপু এসে বললো।আমি আয়নার সামনে দাড়িয়েই এসব ভাবছিলাম এতোক্ষন)
–না তেমন কিছু না বড়াপু।চল যাই…..
|
–আপু তুই কি কিনবি বল তো??দেড় ঘন্টা ধরে শুধু হেটেই যাচ্ছি।এক্ষনি তো মাগরীবের আজান দিয়ে দেবে।কি কিনবি তুই??
–আ আ আমি..ওই একটা ফ্রেন্ডের বার্থডে তো তাই গি গিফট কিনবো।
–হ্যা তা এটা তো ভালো কথা।এতে এতো তোতলাচ্ছিস কেন আজব??
–কই?তোতলাচ্ছি না তো।আচ্ছা সূচী,তুই বরং এক কাজ কর,এখানে দাড়া আমি গিফট কিনে আসছি।তুই তো আর হাটতে পারছিস না।
–না আমার কোন প্রবলেম হবে না,চল আমি যাচ্ছি সাথে।
— না না।হবে হবে,,তুই থাক।তখন কিছু হলে বাবা মা আমাকেই বকা দেবে।বলবে সুমনা তুমি ছোট বোনের খেয়াল রাখতে জানো না।
আপু আমাকে অনেকটা জোর করেই যেন রেখে গেলো কিন্তু আমি পাত্তা দিলাম না।আমি মোবাইল বের করে সেলফি তুলতে লাগলাম।বিভিন্ন পোজে ছবি তুললাম।এবার ছবিগুলো দেখার পালা,ছবিগুলো দেখছি হটাত আমার ব্যাকগ্রাউন্ড এ থাকা ছেলেটাকে দেখে শকড।আরে এটা তো সেই ছেলেটা।তার মানে উনি এখানে আছেন।যাক ভালোই হলো,আমি এবার ওনার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে পারবো।আমি ওনাকে খুজে পেলাম।কোথাও নেই,মনটা খারাপ হয়ে গেলো।হতাশ হয়ে আবার ব্যাক করছিলাম তখনি একটা ক্যাফেতে নজর গেলো।হ্যা সেই ছেলেটাই তো,ব্লাক শার্ট হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা,গ্যাবাডিং এর প্যান্ট আর হাতে বেশ দামী ব্রান্ডের ঘড়ি।পোশাক-আশাক দেখে মনে হচ্ছে বড়লোক বাড়ির ছেলে।কিন্তু এসব ভেবে আমার কাজ নেই।আমি তো ওনাকে সরি বলবো দ্যাটস ইট,এর বেশি ওতো জেনেবুঝে কি হবে??আমি ক্যাফেতে ঢুকে গেলাম।লোকটা তার বন্ধুদের সাথে বসে,আমি সোজা গিয়ে ওনার পাশে দাড়িয়ে পড়লাম।
–সরি
-………………(মানুষটা আমার দিকে একবার তাকালো কিন্তু পাত্তায় দিলো না।আমি যেন হুদাই দাড়িয়ে আছি)
–সরিইইই……
–কি চায় খুকি তোমার??ওরে সরি বলতেছো কেন??(ওনার পাশ থেকে আরেকটা ছেলে বলে ওঠে)
–আই ডিড আ মিসটেক।যার কারনে সরি বলতে এসেছি।
–ওহ,,,মামা তোরে ডাকে তো খুকিটা(ছেলেটা ওনাকে ইশারা করে দেই।উনি এবার আমার দিকে তাকায়)
–হ্যা কিছু বলবেন??(এমনভাবে কথাটা বললো যেন আমাকে চেনেয় না,জীবনে প্রথমবার দেখলো)
–হ্যা বলার জন্যেই তো এসেছি।সকালের জন্যে সরি আর কাল রাতের জন্যে থ্যাঙ্ক ইউ।
–হোয়াট??শুনি নাই আরেকবার বলবেন??(কথাটা আমি এতোটাও আস্তে বলিনি যে উনি শুনতে পারবেন না।বুঝতে পারছি যে মজা নিচ্ছে কিন্তু আমি তাও কিছু মনে করলাম না কারন ভুলটা আমারই)
–কাল রাতের জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ আর আজকের জন্যে সরি।
–ওকেএএএ…(তিনি উঠে দাড়ালেন)এটেনশন প্লিজ গাইজ(ক্যাফের সবাই ওনার দিকে তাকালেন)ইনি হচ্ছেন মিস,মিস মিস?
–তাসনুভা আমিন সূচী।
–ওকে।সো ইনি হচ্ছেন মিস তাসনুভা আমিন সূচী।কাল রাতে ইনাকে আমি একজন খারাপ লোকের হাত থেকে বাঁচায় এই কারনে উনি আমায় থ্যাঙ্কস দিতে এসেছেন।তাই তো মিস সূচী??
–জী।থ্যাঙ্কস এ লট
–বাট আরেকটা ব্যাপারও আছে।উনি আজকে সকালেই আমার গায়ে কোল্ড কফি ঢেলে দিয়েছেন আমাকে ভুল বুঝে যার জন্যে উনি আমাকে সরিও বলতে চান।
–কফি ঢেলে দিয়েছে তোর গায়ে??(পাশ থেকে ওনার বন্ধু বলে ওঠে)
–ইয়েস শাওন।
–ক্যামনে??(শাওন)
–এই যে এমনে………
(কথাটা বলেই উনি টেবিলে থাকা অরেঞ্জ জুসটা আমার গায়ে ছুড়ে দেন।নিমিষেই আমার সাদা জামাটা কমলা রং ধারন করে।ক্যাফের সবাই তো হা হয়ে গেছে ওনার কান্ডে,কেউ কেউ হেসেও ফেলেছে)
–তো মিস সূচী কেমন লাগছে আপনার??বাই দা ওয়ে আমি কিন্তু যাস্ট সকালের ঘটনাটা শাওনকে আই মিন আমার বন্ধুকে প্রাক্টিকালি দেখানোর জন্যেই এরকম করলাম।ডোন্ট মাইন্ড ওকেএএ???
আমি আর একটা কথাও বললাম।খুবি লজ্জা লাগছে এইভাবে সবার সামনে দাড়িয়ে থাকতে।সাথে সাথে ক্যাফেতে থেকে বের হয়ে শপিং মলের বাইরে চলে এলাম।আমাকে দৌড়াতে দেখে আপুও চলে এসেছে এতোক্ষনে।আপু আমার কাধে হাত দিয়ে বললো,
–কি হয়েছে বোন??তোর গায়ে এসব কি?
আমি আপুকে দেখে নিজের কান্না আটকাতে পারলাম না।আপুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলাম।কিন্তু ওই অভদ্র ছেলেটা যে এরকম কিছু করেছে বললাম না।নিজেই ভুল করে জামায় জুস ফেলেছি আর সেটা দেখে সবাই হেসেছে এটাই বললাম।আপুও বিশ্বাস করে নিলো যে এই জন্যেই হয়তো কাঁদছি।রিক্সা নিয়ে বাসায় আসলাম।
৫.
আপু রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া দিচ্ছে,আমি আর দাড়ালাম না আগেই ঘরে ঢুকে গেলাম।কিন্তু বাসার মেইন গেইট খোলা আর ড্রয়িং রুমে মা দুইজন অপরিচিত লোকের সাথে গল্প করছে।একজনের বয়স ৩৪-৩৫ হবে আরেকজনের ২৬ মতোন।আমাকে দেখে মা ওনাদেরকে হাসি মুখে বলে উঠলো,
–এই দেখ তোদের আদরের ছোট বোন…(মায়ের মুখে আদরের ছোট বোন শুনে আমি তো অবাক।মা বলে কি এ??আমি ওনাদের কেমন বোন কবে হলাম?)
–কেমন আছিস বোন??আমি তোর অন্তু ভাইয়া,বড় ভাইয়া।তোর মামার বড় ছেলে।
–………………(আমি কিছু বললাম না,কারন উনি আমার মামাতো ভাই যাকে আমি জীবনে প্রথমবার দেখলাম)
–আর ওই দেখ ও হলো আকাশ তোর মেজো ভাইয়া।কিরে দুরে দাড়িয়ে কেন কাছে আয়..
আমি ওনাদের কাছে গেলাম।আমার ২টা মামাতো ভাইয়াই অনেক ভালো,মিশুক মানুষ।জীবনে প্রথম নানুবাড়ির কারোর সাথে আমার পরিচয় হলো।টুকটাক গল্প করলাম।তারপর নিজের রুমে এলাম ড্রেস চেঞ্জ করার জন্যে।ওদিকে বড়াপু তো মহল্লার দোকানগুলোতে খুচরা খুজে বেড়াচ্ছে।অনেক খুজে খুজে খুচরা পেয়ে রিক্সাওয়ালাকে টাকা দেই আপু।তারপর বাসার মধ্যে আসে।কিন্তু বাসায় এসে আপু ছোটখাটো হার্ট এট্যাক করে(কেন করে পরে জানতে পারবেন)
বড়াপু–আকাআআশ…
মা–হ্যা ও তো আকাশ।কিন্তু তুই কিভাবে জানলি ওর নাম আকাশ তা??(মায়ের কথা শুনে আপুর হুশ ফেরে)
–কে আকাশ মা???আমি তো বাইরের আকাশের কথা বলছি।আকাশে খুব মেঘ করেছে।
–আকাশে মেঘ করেছে??(আমি ড্রেস চেঞ্জ করে এতোক্ষনে চলে এসেছি আর আপুকে প্রশ্নটা করলাম)
–হ্যা করেছে তো
–কিন্তু আমি তো কিছু দেখলাম না।সব তো নরমাল।
–হ্যা আমরাও তো দেখিনি(অন্তু ভাইয়া বলে ওঠে)
–তখন ছিলো না এখন আছে(আপু উত্তর দেই)
–ওহ।ভালো কথা সুমনা এই দেখ আমি তোরে ইরমাক,ইশফাকের কথা বলতাম না??আমার ভাইয়ের ছেলে ওরা তো তারাই।আর অন্তু,আকাশ এই দেখ তোদের বড় বোন সুমনা।(মা আপুর দিকে ইশারা করে বলে)
–কেমন আছিস বোন?আমি তোর বড় ভাই ইরমাক যদিও তোর মা এমনকি সবাই আমাকে অন্তু বলেই চেনে।আর ও হলো ইশফাক যাকে সবাই আকাশ বলে চেনে তোর মেজো ভাইয়া।আরেকজন আছে অবশ্য ছোট যার নাম অভ্র তোর মায়ের পছন্দ করা নাম,অবশ্য ওউ তোর বছর দেড়েক বড়।
–তা ভাইয়া ছোটজনকে আনলে না কেন??(আমি অন্তু ভাইয়াকে বলে উঠি)
–ও একটু ব্যস্ত রে বোন।
–ওহ……
আমি,মা অন্তু ভাইয়া অনেক গল্প করি।আপুও টুকটাক কথা বলে কিন্তু আকাশ ভাইয়া একদম চুপ করে আছেন।এসি,ফ্যান সব চালানো তাও উনি ঘামছেন।ঘন্টা খানিক পর ভাইয়ারা চলে যাচ্ছে।যাওয়ার আগে অন্তু ভাইয়া বলে,
–ফুপু তুমি যাবে তো??অনেক তো মান অভিমান এবার যাবে তো তুমি নিজের বাড়ি???
–মা কোন কথা বলে না কেঁদে দেই….
অন্তু ভাইয়ারা বিদায় নিয়ে চলে যায়।মা এখনো কাঁদছে।২৫ বছর আগে নানাভাই,নানীর বিরুদ্ধে গিয়ে মা বাবাকে বিয়ে করে।সেই যে ঘর ছাড়ে আর কোনদিন তা ঠিক হয়নি।মামা নাকি অনেক চেষ্টা করেছিলো কিন্তু আমার নানানানী,মা কেউই কাউকে ক্ষমা করতে পারিনি।দুজন প্রচুর কষ্ট পেয়েছে কিন্তু দুই পরিবারের ঝামেলাও ঠিক হয়নি।সেই কারনেই আমরা তিন ভাইবোনও কোনদিন নানানানীর ভালোবাসা পাইনি।কিন্তু এখন নানী অসুস্থ,নানা মারা গেছেন ৪ বছর আগে যা আমরা জানতেও পারিনি।বাসা চেঞ্জ করাই মামাও আমাদের খোজ পাননি আর।কিন্তু এখন কিভাবে যেন খোজ পেয়েছেন,নানী তার মেয়েকে দেখতে চান সেই আবদার নিয়েই আজকে অন্তু ভাইয়া আর আকাশ ভাই এসেছিলো।
৬.
রাতে খাওয়াদাওয়ার পর আপুর রুমে আপু ফোনে,
–হ্যালো,এটা কি হলো??
–সেটা আমি কিভাবে বলবো আমার আদরের বোনটি?(অপর পাশ থেকে একটি ছেলে বলে ওঠে)
চলবে…..
(আর ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।ধন্যবাদ)