তৃ-তনয়া পর্ব-৯৬+৯৭+৯৮

0
723

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ৯৬
(নূর নাফিসা)
.
.
সকালে নামাজ পড়ে মেহেদী আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। অফিসের সময় হয়ে যাচ্ছে এখনো ঘুম ভাঙেনি তার। মেহেরুনের সাথে রান্না শেষ করে নাহিদা রুমে এসেছে তাকে ডাকতে। বেশ কয়েকবার ডাকলো কিন্তু মেহেদী উঠছে না! তাকে ঠেলে ঠেলে ডাকলো তা-ও উঠছে না! তার চেহারার ভঙ্গি দেখে নাহিদার মনে হচ্ছে সে এতোক্ষণে জেগে গেছে ঠিকই কিন্তু চোখ খুলছে না। তাই নাহিদা এবার তার নাক চেপে ধরলো। তাতেও লাভ হলো না! কেননা মেহেদী ঠোঁট জোড়া একটু ফাঁক রেখে ঘুমায়। এবার সে নাকের পাশাপাশি অন্যহাতে ঠোঁটও চেপে ধরলো। এবার মেহেদী নাহিদার হাত সরিয়ে হেসে উঠলো এবং চোখ খুলে আড়মোড়া ভাঙার ভঙ্গিতে মোচড় দিয়ে নাহিদার কোলে মাথা রেখে শুয়ে রইলো। অত:পর পেটে একটা চুমু দিয়ে বললো,
– এতো দেরী লাগে কেন!
– কিসের দেরী!
– বাবু কোলে নেওয়া নাকি আরও অনেক দেরী!
– ইশ! ওঠো, আটটা বেজে গেছে।
– এই জামা পড়ো কেন এখনো? ই না এনে দিলাম, ওই যে কি যেনো বলে! মেক্সিকো নাকি কি যেনো।
নাহিদা হেসে উঠলো এবং বললো,
– যখন পড়া প্রয়োজন হবে তখন পড়বো। ওঠো তো!
– স্যারের কাছে আরেকটা আবেদন করতে হবে, সপ্তাহে তিনদিন অফিস করবো।
– একদম না। আমিও তোমার স্যারের কাছে উল্টো আবেদন করবো যাতে সপ্তাহে সাতদিন তোমাকে কাজে লাগিয়ে রাখে।
– একদমই পাষাণ তুমি। আমার মতো অসহায় একজন বাবার উপর একটুও মায়া হয়না তোমার!
– না হয়না৷ ওঠো। নতুবা তোমার স্যারকে পাঠাবো বেত নিয়ে আসতে।
মেহেদী চুপচাপ তাকিয়ে আছে তার চেহারায়৷ কখনো চোখে, কখনো, ঠোঁটে, কখনো নাকে, কখনো গালে আবার কখনো থুতনিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে! খুবের চেয়েও খুব বেশি অসস্তি ও লজ্জা লাগে তার এই দৃষ্টি! নাহিদা মেহেদীর চোখের উপর হাত রেখে ঠোঁট ছুয়ে দিলো। এরপর হাত সরিয়ে নিলে মেহেদী ওঠে বিছানা ছাড়তে ছাড়তে বললো,
– পা তো একদমই চলছে না এখন আর!
নাহিদা তাকে বাথরুমের দিকে ঠেলে দিয়ে বললো,
– গোসল করলে সব চলবে।
মেহেদী গোসল করে এলে নাহিদা ডাইনিং টেবিলে খাবার দিয়ে রুমে এলো।
– খাবার দিয়েছি। যাও।
– খেয়েছো?
– উহুম।
– একসাথে খাবে চলো।
– ভার্সিটি যাবো ভাবছিলাম।
– সপ্তাহে সর্বোচ্চ দুইদিন। এ সপ্তাহে দুইদিন যাওয়া হয়েছে। আবার আগামী সপ্তাহে।
– তুমি কি শপিংমলে যাবে এদিকে?
– কেন?
– ভাবছিলাম নাফিসাকে একটা বোরকা গিফট করবো। ওরকম একটা বোরকা এনে দিতে পারবে?
– ওকে। সাইজ কত?
– ৫৬।
– আরো কিছু?
– উহুম।
– নাফিসাকে গিফট করবে, আপুকে করবে না?
– আপু তো পড়ে না এসব।
– তুমি গিফট করলে ফেলে দিবে?
নাহিদা আর কিছু বললো না। বিকেলে মেহেদী বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে আবার ঘুরতে বেরিয়েছে। ইশারের সময় ফিরেছে হাত শপিং ব্যাগ। চারটা বোরকা এনেছে। মেহতাজ, নাজিয়া, নাফিসা আর নাহিদার জন্য আরও একটা। ডিজাইন একই কিন্তু কালার ভিন্ন। তবে ডিজাইনটা আগেরটার মতো না। রাতে খাওয়ার সময় মেহতাজ কল করেছে। প্রতিদিনই এসময় কল করে কিন্তু আজ তাদের ডিনার করতেই একটু লেট হয়েছে। লাউড স্পিকারে রেখে বাবা-মা কথা বলছে আয়াশ আরিশা ও মেহতাজের সাথে। মেহেদীর কথা জিজ্ঞেস করে মেহতাজ বললো,
– মেহেদী কোথায়?
– হুম, বলো?
– কি ব্যাপার! কল করে তাড়াহুড়োর মাথায় হঠাৎ বোরকার সাইজ জানতে চাইলি!
– টেইলরের কাজ শিখে গেছি তাই ভাবছি বোরকা বানিয়ে দিবো তোমাকে।
– ওরে বাবা! তুই আর টেইলর!
এদিকে জহিরুল ইসলাম জবাব দিলো,
– টেইলর! সবাইকে কল করে বোরকার সাইজ জিজ্ঞেস করে আর আমাকে কল করে তার একাউন্ট ব্যালেন্স শেষ তা ইনফর্ম করে! কই একবারও তো বললো না, “আব্বু তোমার পাঞ্জাবীর সাইজ কত!”
মেহেদী বিষম খেয়ে বললো,
– পাঞ্জাবী লাগবে তোমার! যাও, ঈদের সময় পাঞ্জাবীর সাথে লুঙ্গি ফ্রী। শুধু আমার একাউন্টটা ফুলফিল রেখো।
– সেই তো আমাকেই টানলে না!
সবাই হেসে উঠলো তাদের কান্ডে! বাকিটা সময়ও গল্পগুজবের সাথেই খাওয়া শেষ করলো।
এক্সাম দিয়ে এসে নিশাত রাতেই বইটা পড়ে ফেললো। এক্সাম শেষ হওয়া পর্যন্ত এতো ধৈর্য সে ধারণ করতে পারছে না। বিষয়টি রহস্যজনক হওয়ায় তার মনের ভেতর উশখুশ করছে। হতেও পারে এই উশখুশের জন্য তার লাস্ট এক্সামে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে! তাই সে উশখুশ বন্ধ করতে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে ফেললো। সন্ধ্যায় পাঠ্যবই পড়ে ইশারের পর থেকেই পড়া শুরু করেছে। রাত সাড়ে বারোটার সময় শেষ করেছে। মায়ের রুমেই ছিলো সে, কিন্তু মা ভেবেছে পাঠ্যবই ই পড়ছে! যদিও মনে মনে পড়ছে বিধায় আবিদা বেগম জিজ্ঞেস করেছিলো সে বই পড়ে নাকি ঝিমায়! তখন সে বলেছিলো জোরে পড়তে ইচ্ছে করছে না তার।
কিন্তু পড়া শেষেও তার চোখে ঘুম নেমে আসেনি! কেননা গল্পের মর্মার্থটা বুঝেছে সে। গল্পের নামটাও বুঝেছে এবার। এটা হচ্ছে এক রাজকুমারের গল্প! যে ভালোবেসেছে কোনো এক প্রাসাদ পরিচারিকার মেয়েকে। রূপে নয়, মেয়ের গুণে মুগ্ধ হয়েছিলো সে! মন থেকে খুব করে চাইতো তাকে! কিন্তু পাওয়ার সুযোগ ছিলো না! পিতার কাছে প্রস্তাব করার পর পিতা তো প্রস্তাব গ্রহণ করেইনি, উল্টো পরিচারিকাকে কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে এবং রাজ্য ছাড়া করে বনবাসে পাঠিয়ে দিয়েছে। রাজার অজান্তে রাজকুমার বেশ খুঁজে খুঁজে প্রায় অনেকদিন পর তার দেখা পায়। কিন্তু সেই মেয়েটি তখন গর্ভবতী! পাশের রাজ্যের এক তাতির সাথে বিয়ে হয়েছে তার। দুজনেই সুখী পরিবারে বসবাস করছে। যদিও মানতে পারছিলো না রাজকুমার, তবুও মেনে নিতে বাধ্য! অত:পর সেই রাজকুমার, সেই মেয়ের মায়া নিয়েই কাটিয়েছে অনন্তকাল! বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা সকল রাজকন্যার বিয়ের প্রস্তাব সে প্রত্যক্ষভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এটাই ছিলো গল্পের মূল প্রেক্ষাপট। রাজকুমারের অনন্তকাল কুমার রয়ে যাওয়া থেকেই গল্পের নামকরণ করা হয়েছে অনন্ত রাজকুমার!
নিশাতের মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো! সে নিশ্চিত আশিক এজন্যই তাকে বইটা দিয়েছে কারণ সে জানে নিশাত তার প্রতি দুর্বল। আর এই বইয়ের মাধ্যমেই সে দুর্বলতা কাটিয়ে তাকে প্রত্যাখ্যান করতে চাইছে! এই ভেবে নিশাতের ভেতরটা ভারি হয়ে এলেও বাইরে সে স্বাভাবিক! কিন্তু নিজেকে শক্ত রেখে ভেতরটা হালকা করতে তার অনেকটা সময় লেগেছে। যার ফলে ঘুমিয়েছে দেরীতে আর ঘুম ভেঙেছেও দেরীতে। মা, বড়মা কয়েকবার ডাকলো কিন্তু সে এপাশ ওপাশ করে আবার ঘুমিয়ে গেছে! নাফিসা ইমরান বাড়ি ফিরলে তাদের কণ্ঠ সাথে জিহানের হৈ-হুল্লোড়ের কারণে ঘুম ভেঙেছে তার। রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে চোখ ডলতে ডলতে! জিহানের জন্য রিমোর্ট কন্ট্রোল গাড়ি এনেছে ইমরান। ইমরানের সাহায্যে জিহান তা চালাচ্ছে আর গাড়িতে গান বেজে চলছে! ইমরান নিশাতকে দেখে বললো,
– বাহ! মহারানী এতোক্ষণে ঘুম থেকে উঠেছে!
নিশাত চেয়ার টেনে বসে বললো,
– দিনাজপুর থেকে কি এনেছো আমার জন্য?
– কেন, আমরা এসেছি তাতে খুশি হসনি?
নিশাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই জিহান এক জুতা এনে নিশাতের কোলে দিলো আরেক জুতা সে পড়ে ঘরে হাটতে লাগলো! নাফিসা হেসে উঠলো তার কান্ড দেখে! আর নিশাত জুতা পায়ে দিয়ে দেখলো তার পায়ের মাপের তখন উৎফুল্ল হয়ে বললো,
– ওয়াও! ভেরি নাইস! তুমি এনেছো না ভাবি? থ্যাংক ইউ সো মাচ!
– ইনকাম করি আমি আর ক্রেডিট তোর ভাবির!
– ইনকাম যার তার! পছন্দ ভাবির ছিলো, আ’ম শিওর! কেননা তুমি পাম সো ছাড়া অন্য কোনো জুতা আমাকে কিনে দাও না!
– ওটাই তো ভালো! একটু বড় কিংবা ছোট হলেও মানিয়ে নেওয়া যায়!
– হুহ! যেন এক জুতোতে জীবন পার করবো যে বড় ছোট হবে!
– ব্রাশ কর গিয়ে! খাটাশনী!
তাদের ভাইবোনের কথা কাটাকাটি চললেও নাফিসা চলে গেছে গোসল করতে! কখন একটু ঘুমাতে পারবে সেই প্রচেষ্টায় আছে সে। এরপরই খেয়েদেয়ে ইমরানসহ সে লম্বাটে ঘুম দিলো। সাথে ইমরানের গলা ঝাপটে জিহানও।
ঘুম ভাঙলো ইমরানের ফোনের শব্দে। কল করেছে কেউ। ইমরান রিসিভ করে কথা বললো। অত:পর ফোন রেখে দেখলো নাফিসা তাকিয়ে আছে। জিহান এখনো ঘুমাচ্ছে। সে জিহানকে ছাড়িয়ে দুজনকে টপকে নাফিসার ওপাশে চলে গেলো। নাফিসা হাই তুলছে আর ওদিকে যোহরের আযান পড়ছে। ইমরান বললো,
– হয়েছে না ঘুম? ওঠো এবার।
নাফিসা চুপচাপ শুয়েই রইলো সাথে ইমরানও। ঘুরাঘুরি করে শরীর যেন নিস্তেজ হয়ে পড়েছে যার ফলে উভয়েই আলসেমি করছে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে নাফিসা ইমরানকে বললো,
– আমাকে একটা বাদুড় কিনে দিও তো।
ইমরান ব্রু কুচকে বললো,
– কিহ!
– বাদুড়, বাদুড়।
– বাদুড় দিয়ে কি করবে! আর কিনতে পাওয়া যায় না-কি!
– শপিংমলে অভাব নাই!
– শপিংমলে বাদুড়!
– আরে! ওইযে এক প্রকার বোরকা আছে না, হাত মেললে যে বাদুড়ের মতো ডানা ছড়ায়? ওইটা।
ইমরান শরীর কাপিয়ে হেসে বললো,
– আমি তো ভাবছি তোমার বুঝি মুরগী পালনের মতো বাদুড় পালনের শখ জেগেছে!
নাফিসা তার দুই গাল টেনে বললো,
– এতো বেশি বেশি ভাববে কেন! হুম! একেবারে নাকমুখ টেনে বিড়াল বানিয়ে দিবো।
ইমরান তার হাত টেনে নিয়ে আঙুলে কামড় বসিয়ে দিলো!
সেই যে দুপুরের পর লাঞ্চ করে বেরিয়েছে, সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ পড়ে ইমরান ঘরে এসেছে। নাফিসা ঘরেই বুকসেল্ফ গুছিয়ে নিচ্ছিলো। ইমরান ঘরে প্রবেশ করতে করতে বললো,
– সুপ্রিয় শ্রোতামন্ডলি, আমরা এখন অবস্থান করছি হোসাইন মঞ্জিলে ইমরান হোসাইনের কামরায়। আপনারা জানেন যে গত ছয়দিন যাবত মিস্টার ও মিসেস ইমরান ঢাকার বাইরে ভ্রমণ করে এসেছে। ভ্রমণ শেষে আজ সকালেই তারা নিজ আবাসস্থলে ফিরে এসেছে। তো চলুন আমরা জেনে নেই দিনগুলো তারা কেমন উপভোগ করলো। মিস্টার ইমরানকে দেখা যাচ্ছে না তবে মিসেস ইমরান আমার সামনেই আছে। তো শ্রোতামন্ডলি, চলুন আমরা মিসেস ইমরানের মুখেই শুনি।
নাফিসা প্রথমে চমকে উঠলেও এবার বিড়বিড় করতে করতে নিজের কাজে মনযোগ দিলো। ইমরান দরজা চাপিয়ে তাৎক্ষণিক নাফিসাকে মুখোমুখি দাড় করিয়ে মুখের সামনে ভুট্টা ধরলো! আর নাফিসা চোখ বড় করে ভয়ে একটু পিছিয়ে গেলো! সে খেয়ালই করেনি ইমরানের হাতে ভুট্টা ছিলো! যার ফলে হঠাৎ দেখাতে একটু ভয় পেয়ে গেছে! এখন ইমরান আবার বলতে লাগলো,
– তো মিসেস ইমরান, বলুন কেমন কাটলো আপনার দিনক্ষণ! আর কি কি উপভোগ করলেন? কাইন্ডলি আপনার ফিলিংসটা শেয়ার করুন আমাদের সাথে।
নাফিসা ভুট্টা সরিয়ে দিয়ে বললো,
– পাগলছাগল! ছাতার মাথা!
ইমরান আবার তার মুখের সামনে ভুট্টা ধরে বললো,
– পাবনাতে পাগলের উপদ্রব বেশি, সেটা আগে থেকেই জানা ছিলো। আজ নতুন করে জানলাম দিনাজপুরেও এর প্রভাব রয়েছে। তাও আবার ছাগলের মাঝে! ধন্যবাদ নতুন কিছু জানানোর জন্য। কিন্তু ছাতার মাথাটা ক্লিয়ার না! গত দিনগুলোতে কি বৃষ্টি হয়েছিলো? যার ফলে আপনাকে মাথার উপর ছাতা নিয়ে বেড়াতে হয়েছে!
– আমি মাথার ছাতা বলিনি, ছাতার মাথা বলেছি!
– ওহ! আমি ভাবলাম মাথার ছাতা! যাক, ছাতার মাথা কেন বললেন? এ নিয়ে নিশ্চয়ই কোনো ঘটনা আছে?
ইমরানের মাঝে এখন তাকে বিরক্ত করার ফুটন্ত মনোভাব বুঝতে পেরে নাফিসা এবার তার সাথে তাল মিলিয়ে বললো,
– হ্যাঁ, অবশ্যই!
– কি সেটা? আমরা জানতে ইচ্ছুক।
– মানুষ সাধারণত বৃষ্টির জন্য ছাতার হাতলে ধরে মাথার উপর রাখে। ভ্রমণরত অবস্থায় বৃষ্টির অভাবে আমি ছাতার হাতল আকাশমুখী রেখে ছাতার মাথার দিকে ধরে ভ্রমণ করেছি। ক্লিয়ার?
– ওয়াও! ফ্যান্টাস্টিক! আপনার কথা শুনে সিছিমপুরের হালুমের ঘটনা মনে পরে গেলো! যে কি-না ছাতা উল্টো করে বৃষ্টির পানি জমা করতো!
– হ্যাঁ, আমিও তাকে মনে করেই মাথায় ধরেছিলাম সৌরবিদ্যুৎ সংগ্রহ করতে।
– দারুণ! দারুণ! দেশের সম্পদ বৃদ্ধির কাজে আপনার পদক্ষেপ জটিল! আশা করি অতি শীঘ্রই বিদ্যুৎ এর সরবরাহ অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে। দেশে লোডশেডিং বলতে কিছু থাকবেই না! তা এবার আমাদের মূল কথায় আসি। আমরা আপনার ভ্রমণ অনুভূতিটা জানতে চাচ্ছি! ঠিক কোন মুহূর্তে আপনি কেমন ফিল করেছেন?
– যখন ট্রেনে যাত্রা করছিলাম, ঝকাঝক অনুভব করেছি! যখন যানবাহনে চলছিলাম, পিপ পিপ অনুভব করেছি! যখন খা খা রোদ্দুরে রাস্তায় হেটেছি, ঠকঠক অনুভব করেছি! যখন ঘুমিয়েছি, মিও মিও অনুভব করেছি! যখন জেগেছিলাম, চূড়চূড়ে অনুভব করেছি! যখন মাঠেবনে ঘুরেছিলাম, ফুরফুরে অনুভব করেছি! যখন খেয়েছিলাম কুড়মুড়ে অনুভব করেছি! যখন হাতি দেখেছি দূর দূরে অনুভব করেছি! যখন ফিরে আসছিলাম মুড়মুড়ে অনুভব করেছি! আর এখন, একটা কুট্টুসকে অনুভব করছি! ভেবেছিলাম নিয়মিত টক শো দেখা কোনো এক পাগল বুঝি এসে হাজির হয়েছে আমার রুমে! কিন্তু না, তিনি হচ্ছেন আমার হবু পাগল সে!
কথাটা বলেই ভুট্টা ইমরানের মুখের দিকে ঠেসে দিলো নাফিসা। ইমরান হেসে ভুট্টা নামিয়ে নিতেই নাফিসা হেসে তার গলা জড়িয়ে ধরলো! এবং শরীরের অর্ধেক ভার ছেড়ে দিলো ইমরানের উপর। ইমরান বললো,
– আরে আরে! হচ্ছেটা কি! শ্রোতামন্ডলি শুনে ফেলছে কিন্তু সব!
– ওই, কিসের শ্রোতা! আর শুনবেই বা কি! আমি কিছু বলছি নাকি! একদম চুপ! কোনো কথা হবে না এখন!
– মিস্টার ইমরান…. প্লিজ হেল্প…! ইউর মিসেস শুড কিল মি বাই সামথিং সামথিং!

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ৯৭
(নূর নাফিসা)
.
.
পরদিন সকাল দশটার পর ইমরান যখন অফিসে তখন আননোন নম্বর থেকে কল আসে নাফিসার ফোনে। নম্বরটা দেখে নাফিসার মনে হচ্ছে সেই নম্বরটাই! সে রিসিভ করে সালাম দিলো। ওপাশ থেকে সালামের জবাবে জেরিনের কণ্ঠ শোনা গেলো! নাফিসা বললো,
– আল্লাহর রহমতে আমি তো বেঁচে গিয়ে এখন খুব ভালোই আছি। হানিমুনও সেড়ে এলাম। তো আপনার কি অবস্থা? কেমন আছেন ভাবি?
– কিছু জরুরী কথা বলতে কল করেছি।
নাফিসা তার রুমের দরজা চাপিয়ে রাখতে রাখতে বললো,
– হুম, বলুন।
– জিহান কি করে?
– ভাইয়ার কাছে কল করে জানলেই পারেন সেটা।
– সে এখন অফিসে। তুমি বাড়িতে আছো বিধায় তোমার কাছে জানতে চাইলাম।
– ভাইয়ার নিষেধ আছে, কোনো ইনফরমেশন দেওয়া যাবে না আপনাকে।
জেরিন কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললো,
– আমি একটা ভুল করেছি, আর এখন তার প্রায়শ্চিত্ত করতে একটা সুযোগ দিবে আমাকে?
– প্রায়শ্চিত্ত! তাও আবার আপনি! শুনেছি ভাইয়া নাকি আপনাকে ওয়ার্নিংয়ে রেখেছিলো। প্রায়শ্চিত্ত তো তখন করার কথা ছিলো! সেটা তো আপনি করলেন না। তো এটা আশা করেন কিভাবে যে এখন সুযোগ পাবেন!
– প্লিজ, একটা সুযোগ দাও। আমি আর কখনো কারো সাথে বাজে আচরণ করবো না। একবার আমাকে বাড়িতে আসার সুযোগ দাও তোমরা।
– আমি কি আপনাকে বাড়ি থেকে বের করেছি?
– না।
– তাহলে আমাকে বলছেন কেন!
– যাকে বলবো তাকে বলার সুযোগ নেই। আর তোমার জন্যই আমি বাড়ি ছাড়া হয়েছি। তাই তোমাকেই বলছি।
– আমার জন্য কেন? আমি কি কাউকে বলেছি আপনাকে বাড়ি ছাড়া করতে?
– আমার ভুলের জন্য বাড়ি ছাড়া হয়েছি। হয়েছে এবার? এখন ভুল শুধরে নেওয়ার একটা সুযোগ দাও আমাকে।
– আমি এ ব্যাপারে কিছু করতে পারছি না। দুঃখিত।
– নাফিসা, প্লিজ। জিহানের কথাটা একবার চিন্তা করো। একটা বাচ্চার কাছে তো মাকে প্রয়োজন হয়। প্লিজ একটু বুঝাও আরমানকে।
– জঘন্য কাজ করার পূর্বে আপনারও জিহানের কথাটা একবার চিন্তা করা উচিত ছিলো। আর ভাইয়া আমার ছোট নয় যে বুদ্ধিশুদ্ধির অভাব আছে আর আমি ভাইয়াকে বুঝাবো। তাছাড়া আমি ভাইয়ার সাথে তেমন একটা কথা বলেও অভ্যস্ত নই।
– তুমি ইমরানকে একটু বলো। সে কথা বলতে পারবে।
– আপনার কথা শুনে অবাক না হয়ে পারি না! আরে আপনার ভাগ্য ভালো ইমরান আমাকে নিয়ে হসপিটাল পড়ে ছিলো! নতুবা আপনার জান নিয়ে নিতো! আর সেখানে সে আপনার সুপারিশ কিভাবে করে!
– প্লিজ কিছু একটা করো। তোমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়েই এমন কিছু হচ্ছে। তুমি চাইলে পারবে কিছু একটা করতে। প্লিজ না করো না। নতুবা আরমান ডিভোর্স দিয়ে দিবে!
– সেটাই তো আপনি চান ভাবি। আপনি তো ভাইয়ার সাথে সংসার করতে চান না বলেই এতোসব করে এসেছেন।
– বলছি তো একটা ভুল করেছি। কিছু একটা করো। আরমানকে থামাও। সে ডিভোর্স দিলে অনেক খারাপ হবে আমার সাথে। বাবা-মা আমার বিয়ে দিয়ে দিবে অন্যত্র। তারা এখন ডিভোর্সের আশায়ই আছে।
– ভালোই তো! পাত্র তো মনে হচ্ছে আগে থেকেই ঠিক করা!
– না, ঠিক করা না। ঘটকের সাথে কথা বলেছে মাত্র।
– ভাইয়াকে যখন ভালো লাগে না তো করে নিন বিয়ে। নতুবা কি আর করবেন, জীবন তো একা চলে না।
– নাফিসা আমি মস্করা করছি না। সত্যি বলছি।
– আমিও সত্যিটাই বললাম।
– আমি করবো না কাউকে বিয়ে।
– কেন?
– কেন আবার! তুমি জানো না?
– ওহ্! ইমরানকে বিয়ে করবেন বুঝি?
জেরিন চুপ হয়ে গেছে! নাফিসা আবার বললো,
– কি ভাবছেন? চলে যাবো আমি? আসবেন ইমরানের সংসার করতে?
– কি বলছো এসব!
– আপনি যা চেয়েছিলেন তা-ই বলছি।
– মিথ্যে বলবো না। ইমরানের প্রতি আমি আকৃষ্ট ছিলাম তোমাদের বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত। তুমি আসার পর কেন জানি আমার সেই আকৃষ্ট উঠে গিয়ে তোমার প্রতি একটা ক্রোধ জন্মেছিলো। সহ্য হতো না তোমাকে। কিন্তু বিশ্বাস করো, ইমরানকে নিয়ে আমার মধ্যে কোনো অনুভূতি ছিলো না তখন। এখনো নেই।
– বিশ্বাস জিনিসটা অনেক আপন। তাকে যদি ভেঙে দেওয়া হয় তবে সেটা হৃদপিণ্ডে আঘাত হানে। আর সত্য বলতে আপনার উপর কখনোই আমার বিশ্বাস ছিলো না। আজও নেই। আমার কাজ আছে। রাখি আমি।
– প্লিজ নাফিসা। একটু মেহেরবানি করো।
– আল্লাহ মেহেরবান। তা-ও মানুষের মধ্যে যতটুকু ক্ষমতা আল্লাহ দিয়েছেন আপনি সেটার যোগ্য না।
– প্লিজ এমন করো না। এতোগুলো জীবন নষ্ট হতে দিও না প্লিজ। কিছু একটা করো। আরমান আমাকে অনেক ভালোবাসে। শুধু রেগে এমন কাজ করছে। তাকে আটকাও।
– অনেক ভালোবাসে সেটা জেনেও মর্যাদা লঙ্ঘন করেছেন! আপনি মানুষ নাকি আরও কিছু?
– প্রথমে অন্ধ থাকলেও পরে বুঝতে পেরে মর্যাদা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তোমার ধ্বংস কামনার মোহে পড়ে সুযোগটা আর হয়নি।
– আমার ধ্বংস করতে চেয়েছেন আবার আমার কাছেই সাহায্য চাইছেন! কি আযব না ব্যাপারটা!
– প্লিজ বোন, মাফ করো। আমি প্রেগন্যান্ট। আমাদের জীবনের সাথে দুইটা বাচ্চার জীবন এভাবে নষ্ট হতে দিও না। প্লিজ পায়ে পড়ি তোমার।
– প্রেগন্যান্ট! এবাড়িতে আসার জন্য আবার নতুন পরিকল্পনা সাজিয়েছেন!
– ও বাড়িতে আসতে চাই। কিন্তু কোনো মিথ্যা পরিকল্পনা না। সত্যি বলছি আমি। আমি প্রেগন্যান্ট তা জানার পরই বাবা-মা বিয়ের ব্যবস্থা করছে।
নাফিসা কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না! এমনিতেই জিহানের জন্য খারাপ লাগছে এখন আরও বেশি মায়া হচ্ছে জেরিনের উপর! যদিও জেরিনের সাথে প্রকাশ করেনি সমবেদনা। কিন্তু মনে মনে ভাবছিলো কিছু একটা করার। জেরিন যেহেতু এভাবে কথা বলছে সত্য হলেও হতে পারে। কিন্তু জিহানের ব্যাপারটা তো চোখের সামনে দেখা! আরাফ ভাইয়া তো এসেছিলো, কি কথা হয়েছে তা-ও তো জানা হলো না। বড়মার সাথে কথা বলতে হবে বিষয়টি নিয়ে। এদিকে জেরিন “হ্যালো? হ্যালো?” করেই যাচ্ছে। নাফিসা মন খারাপ করে জবাব দিলো,
– আমার এখন কথা বলতে ভালো লাগছে না। রাখি এখন। আর জিহান এখন গাড়ি নিয়ে খেলা করছে নিশাতের সাথে।
এইটুকু বলে নাফিসা ফোন রেখে দিলো। দুপুরে ইমরান বাড়ি ফিরলে নাফিসা সুযোগ বুঝে জেরিনকে নিয়ে একটু কথা বলতে শুরু করলেই ইমরান তাকে ধমকে থামিয়ে দিলো। সে জেরিন সম্পর্কে কিছু শুনতেই রাজি না। আর নাফিসাকেও তাকে নিয়ে কিছু ভাবতে নিষেধ করে দিলো। নাফিসা বেশ বুঝতে পারছে এর সাথে কথাও বলা যাবে না, কিছু করাও যাবে না। তাই সে সুযোগ বুঝে আবার বড়মার সাথে কথা বললো। জেরিন প্রেগন্যান্ট সেটা জানতো না ঠিকই কিন্তু জিহানের জন্য বড়মাও ভাবছিলো জেরিনকে ফিরিয়ে আনার জন্য। আরমানের সাথে কথাও বলেছিলো আগে, কিন্তু আরমান উল্টো বুঝিয়ে দিয়েছিলো তাকে ফিরিয়ে আনা মানে পুরো পরিবারটাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া। সন্ধ্যায় নাফিসার মুখে শুনে রাতে বড়মা নিজে কল করে কথা বলেছিলো জেরিনের সাথে। জেরিন কান্নাকাটি করলো বড়মার সাথে কথা বলে। বড়মা তার মায়ের সাথে কথা বললো। তার মা রাগান্বিত গলায় পরিস্কার বলে দিলো ডিভোর্স পেপার যেন তারাতাড়ি পাঠিয়ে দেয়, তারা মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিবে।
বাবামায়ের অভিমানটাও বুঝে বড় মা। তিনি আবারও আরমানের সাথে কথা বললেন। আরমান নিষেধ করলো সে কখনোই যাবে না জেরিনকে আনতে৷ আর সাথে অনুরোধও করলো যেন তাকে এমন কিছু করতে বাধ্য না করে! ছেলে বিরক্ত হয়ে অনুরোধ করেছে তাই আর দ্বিতীয়বার বড়মা বললো না জেরিনকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার কথা।
শনিবার নাফিসা ভার্সিটি গিয়েছে। নাহিদা ই কল করে বলেছে ভার্সিটি যেতে। সে একটু লেট করে আসায় নাহিদা বললো,
– এতো লেট করে এলি কেন?
– আরে আর বলো না! হিজাব আটকাতে আটকাতে ঘন্টা লেগে গেছে! কতবার যে খুললাম আর বাধলাম! তা তুমি এখানে দাড়িয়ে আছো কেন? ক্লাস করবে না?
– না। কোচিং করতে এসেছি। তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম৷ তুই কোচিং করছ না?
– করি তো। ছুটির পর। এই ক’দিন তো অসুস্থতায়ই কাটলো! তাই অফ।
নাহিদা একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললো,
– নে, ধর। এটা রাখ।
– এটা কি?
– তোর গিফট।
– কিসের গিফট! আমার তো বার্থডেও না, এনিভার্সারিও না!
– এমনি গিফট করলাম।
নাফিসা ফিসফিস করে বললো,
– বেবির উদ্দেশ্যে গিফট করছো খালামনিকে?
– চুপ! ফাজিল!
নাফিসা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো এবং প্যাকেটটা খুলতে লাগলো। নাহিদা বললো,
– এখন তোর এটা দেখতে হবে! ক্লাসে যা। আর এক্সামের বেশিদিন নেই। পড়াশোনা একটু ভালোমতো করিস।
– হুম। দোয়া করো।
– তা তো অবশ্যই। কিন্তু নিজে প্রেজেন্টেশন না করলে কি দোয়া কাজ করবে!
– হুম। ক্লাস তো একটা মিস হলোই, চলো এক কাপ কফি খাওয়া যাক।
– আজ না। আমি একটু বাসায় যাবো। মায়ের সাথে দেখা করে আবার ওবাড়িতে যাবো।
– আমারও তো যেতে ইচ্ছে করছে এখন!
– ক্লাস করবি না!
– করতেই তো এসেছিলাম।
– তো ক্লাস কর। যা।
– না, বাসায় যাবো। চলো।
নাহিদা নিষেধ করলেও নাফিসা শুনলো না। ইমরানের কথা মনে হতেই নাফিসা রিকশায় বসে কল করলো। এমন ভঙ্গি প্রকাশ করলো যেন তার এখন যেতেই হবে! কিন্তু ইমরানের পারমিশন ছাড়া নড়তেও পারছে না। মিথ্যে বলে অতি সহজেই সে ধরা পড়ে গেছে। হর্নের শব্দে ইমরান বলে দিয়েছে নাফিসা ভার্সিটিতে নেই। ইতোমধ্যে সে রাস্তার পাশে আছে নতুবা বাসায় যাওয়ার মাঝপথে আছে। ধরা পড়ে যাওয়ায় নাফিসা খিলখিল করে হেসে উঠে তাকে ধন্যবাদ জানালো মিথ্যেটা ধরে ফেলার কারণে! ফলশ্রুতিতে ইমরান তাকে “পাগলী” উপাধিতে ভূষিত করেছে।
দুইবোন বাসায় এসে মা ও বাবা উভয়কেই পেয়েছে। দেখাসাক্ষাৎ করে দুপুরে খেয়ে তারপর নিজ নিজ শ্বশুর বাড়ি ফিরেছে। যদিও পরিকল্পনা ছিলো যাবে আর দশ-বিশ মিনিট সময় কাটিয়ে আবার চলে আসবে। কিন্তু তা আর হলো না। সন্ধ্যার একটু আগে খুব জোরে বাতাস বইলো। সাথে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। এটা ছোট খাটো এক বৈশাখী ঝর। ইমরান ও আরমান কিছুক্ষণ আগেই বাসায় ফিরেছিলো। এখন সবাই ঘরে বন্দী। তীব্র বাতাসে ঝরঝর করে ছোট ছোট আমগুলো মাটিতে আছড়ে পড়েছে। নাফিসা অনেক চেষ্টা করেছিলো ঝড়ের মাঝে আম কুড়াবে বলে। কিন্তু ইমরানের জন্য পারলো না। ইমরান তাকে বকাঝকা করেছে এবং বলেছে এতো খেতে ইচ্ছে করলে ঝড় সারলেও কুড়ানো যাবে। কিন্তু ঝড়ের মাঝে আম কুড়াতে যেই সুখ, তা এই ইমরাইন্না বুঝবে কি!
ঝড় থামলেও নাফিসা মন খারাপ করে জানালার ধারে বসে ছিলো। ইমরান মাগরিবের নামাজ পড়ে টর্চ দিয়ে খুজে খুজে আম কুড়িয়ে এনে দিয়েছে৷ কিন্তু নাফিসা তা গ্রহণ করলো না। বিছানায় ছুড়ে মেরে বললো, “তুই খা বেশি করে!” ইমরানও তা-ই করলো। বড় ঘর থেকে জিহানকে ও লবন মরিচ এনে একটা আম খেতে খেতে মুখ চেটে শব্দ করলো। জিহান লবণ ছাড়াই তার দেখাদেখি চেটে শব্দ করে যাচ্ছে। যা একদমই সহ্য হচ্ছিলো না নাফিসার! যার ফলে সে জোরপূর্বক বাকি আমগুলো এবং মরিচের গুড়ো মিশ্রিত লবণ নিয়ে নিশাতের কাছে চলে গেলো। সে প্রকাশ না করলেও ইমরান জানে নাফিসার জ্বিভে জল এসে গেছে।

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ৯৮
(নূর নাফিসা)
.
.
গিফটের কথা মনে হতেই রাতে প্যাকেটটা খুললো নাফিসা। বোরকা গিফট করেছে নাহিদা, তা দেখে ভীষণ খুশি। এদিকসেদিক ঘুড়িয়ে দেখছে, ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে তার সাথে জড়িয়ে দেখছে। তারটাও কফি কালার। কিন্তু নাহিদার সেই বোরকা থেকে ডিজাইন ভিন্ন। ইমরান রুমেই ছিলো। সে ইমরানের সামনে দাড়িয়ে বললো,
– দেখো, সুন্দর না?
ইমরান বই থেকে চোখ সরিয়ে বোরকার চেয়ে বেশি দেখলো নাফিসার চেহারায় ভেসে উঠা উৎফুল্লতা। সে আবার বইয়ে তাকিয়ে বললো,
– হুম।
তার মুখভঙ্গি এবং এমন মন্তব্য নাফিসার মোটেও পছন্দ হলো না! তাই সে বললো,
– এমন পেঁচার মতো মুখ করে বলার কি আছে! হুহ্!
ইমরান কিছু না বলে নিজের পড়ায় মনযোগ দিলো। নাফিসার একটু খটকা লাগলো তার আচরণ! সে এমন কেন করলো সেটাই ভাবছে নাফিসা! বোরকা খাটের একপাশে রেখে ইমরানের হাত থেকে বই নিজের হাতে নিয়ে মেলে রাখা দুই পায়ের উপর বসে বললো,
– রাগ করে আছো কেন?
ইমরান দুইহাত গুটিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বললো,
– কই?
– তাহলে এভাবে কথা বললে কেন?
– আমি তো তেমন কোনো কথাই বললাম না!
– সেটাই তো জানতে চাইছি, বললে না কেন?
– পাগল হয়ে গেছো? একবার জানতে চাইছো কথা বললাম কেন! আরেকবার জানতে চাইছো বললাম না কেন!
– আমি যেমনতেমন, তোমার কিছু হয়েছে। সেটা ক্লিয়ার করো আমাকে।
– কিছু হয়নি আমার। নিজে তো পড়োই না, আমার পড়ায়ও ডিস্টার্ব করছো!
– এরিয়ে যাচ্ছো না আমাকে?
– আশ্চর্য! কিছু হয়নি, বললাম তো! শুধু দেখলাম কারো গিফট পেয়ে তুমি যে কতটা খুশি হতে পারো।
– এটা তো সবাই হয়। গিফট পেলে আমি বরাবরই অনেক অনেক খুশি হই।
– হবেই তো! ধনী পরিবার থেকে দামী গিফট এসেছে যে!
– গিফটে দামী আর কমদামী কি! একটা চকলেট হলেও এতোটাই খুশি হতাম।
– হয়তো হতে। কিন্তু আমি গিফট করলে নিশ্চয়ই হতে না। একটা না একটা উশখুশ থাকবেই আমার গিফটে। যাইহোক, আপুকেই যেহেতু বলেছো কিনে দিতে তো আমাকে আবার বললে কেন? নাকি আমি সাথে সাথে কিনে দিতে পারিনি দেখে আপুকে কিনে দিতে বলেছো? কোনটা?
ইমরানের মাঝে এমন হিংসে মাখা প্যাচ ধরতে পেরে নাফিসা হতবাক হয়ে গেছে! ইমরান তার হাত থেকে বই নিতে চাইলে নাফিসা বই সরিয়ে বললো,
– তুমি এতোটা নিচ কিভাবে ভাবতে পারো আমাকে! আমি তোমার কাছে চাইছি বলে কি আপুদের কাছে চাইবো!
– না চাইলে আপু জানলো কিভাবে তোমার বোরকা প্রয়োজন?
– আমার বোরকা প্রয়োজন ছিলো না এখন। আপু এমন একটা বোরকা পড়ে এসেছিলো সেদিন বাসায়। তখন আপুকে দেখে ভালো লেগেছিলো। বোরকাটা সুন্দর বলে আমি শুধু দামটা জানতে চেয়েছিলাম আপুর কাছে। আপু বলেছে জানে না দাম কত। ভাইয়া এনে দিয়েছিলো। আর কোনো কথাই হয়নি এ নিয়ে! আপুকে দেখে শখের বশে তারপর তো তোমাকেই বললাম এনে দিতে। আজ ভার্সিটিতে এসে আপু আমার হাতে ব্যাগ ধরিয়ে দিলো। নাজিয়া আপুর বিয়ে হয়েছে কত আগে, তার কাছেই আমি এখন পর্যন্ত কিছু চাইলাম না। আর নাহিদা আপুর কাছে যাবো চাইতে! যা প্রয়োজন হয়েছে সবসময় বাবার কাছে বলেছি। আর বিয়ের পর বাবার কাছে বাদ দিয়ে তোমার কাছে। এতেই তুমি এই কথা বলতে পারলে!
– অযথা চোখে এতো পানি আসে কোত্থেকে!
নাফিসা তার কোলে বই রেখে নেমে যেতে চাইলে ইমরান ধরে ফেললো।
– ছাড়ো, পড়বো না আমি এটা। ফেরত দিয়ে দিবো আপুকে।
ইমরান একহাতে চোখ মুছে দিতে দিতে বললো,
– গিফট আবার ফেরত দেয় কিভাবে! আপু কষ্ট পাবে না?
– পাক কষ্ট, কারো কটু কথা শোনার চেয়ে এটুকু কষ্টই ভালো।
ইমরান তাকে নিজের সাথে আরও জড়ো করে বললো,
– মাইর দিবো একটা। দেখোতো, এই বইটাতে কি লেখা আছে।
– জানিনা।
– তাইতো দেখতে বললাম।
– নিজের পড়া নিজে পড়। আমারও বই আছে।
ইমরান নাফিসাকে মুক্তি না দিয়েই নিজের পড়ায় মনযোগ দিলো। নাফিসা তার উপর হেলান দিয়ে আছে। ইমরানের মনোভাব ঠিক হয়েছে কি-না তা পরীক্ষা করতে নাফিসা তার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
– তুমি এনে দিবে না বোরকা?
ইমরান বই থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললো,
– এতো বোরকা দিয়ে কি করবে? আপুই তো দিয়েছে, ওটাই পড়।
– আপু দেক আর না দেক, তোমার কাছে আমি চাইনি?
– কবে যাবে?
– আমি যাবো না। তুমিই নিজের পছন্দে আনবে।
– তারপর আবার বলো, এটা ভালো না, পছন্দ হয়নি, চেঞ্জ করে আনো!
– বলবো না।
– ওকে। বেতন উঠাই, তারপর যাবো।
অত:পর নাফিসা চুপচাপ মিশে রইলো ইমরানের সাথে। ইমরান পড়তে পড়তে একটু পর লক্ষ্য করলো নাফিসা ঘুমিয়ে যাচ্ছে। সে তাকে ঝাকিয়ে বললো,
– আরে! আরে! এই সন্ধ্যায় ঘুম! দিনে ঘুমাওনি! উঠো। আরাম পেয়ে একেবারে পড়ার সময় ঘুমিয়ে যাচ্ছে। যাও বই হাতে নাও৷
– ধুর! খালি ডিস্টার্ব!
ইমরানের ধাক্কায় নাফিসা চোখ কচলাতে কচলাতে নেমে চলে এলো বুকসেল্ফের কাছে।
পরদিন ইমরান ও আরমান অফিস থাকাকালীন বড়মা, নাফিসা ও আরাফ গিয়েছে জেরিনকে আনতে। আবিদা বেগমকে বলা হয়েছিলো কিন্তু আবিদা বেগম যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলো। তাই বাধ্য হয়ে বড়মা ও আরাফের সাথে নাফিসাকেই যেতে হলো। জেরিন খুব খুশি হলেও তার বাবা-মা নারাজ। বাবা তা-ও এ পরিবারের লোকজন দেখে কিছুটা স্বাভাবিক কিন্তু মা একেবারেই নারাজ। তিনি বারবার একই কথা বলে যাচ্ছেন তার মেয়েকে পাঠাবে না। তার এমন জেদের মূল কারণ, ফিরিয়ে নেওয়ার হলে আরমান এলো না কেন! কিন্তু জেরিন তার মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে তৈরি হয়ে যাচ্ছে সে ফিরে আসবে। মেহমানদের খালি হাতে ফিরিয়ে দিলে অসম্মান করা হবে ভেবে এক পর্যায়ে তার বাবাও পারমিশন দিয়ে দিলো। তাছাড়া ধারণা করা যায় বড়মা তার বোন এবং আরাফ ভাগিনা হওয়ায় আর নিষেধ করেনি। তবে আবিদা বেগমের উপর তিনি রাগান্বিত। জেরিনের বাবা তাদের জন্য রান্না করতে বলেছিলো। কিন্তু বড়মা নিষেধ করলো। তারা হালকা খাবার খেয়ে বিকেলের পূর্বেই ফিরে এলো। আরাফ চলে গেছে। স্কুল মিস হলেও তাকে কোচিং-এ যেতে হবে। জেরিনকে দেখে আবিদা বেগম গম্ভীর, নিশাত নিশ্চুপ, জিহান খুশি, জেরিন নাফিসার প্রতি কৃতজ্ঞ আর নাফিসার মনের ভেতর জমা হাজারো ভয়!
বিকেলে কর্তারা বাসায় ফিরেছে। ইমরান সোজা তার রুমে চলে এসেছে আর আরমান বড়ঘরে। জেরিনকে রুমে দেখে যেন তার গায়ে আগুন ধরে গেছে! সে তার সামনে গিয়ে বললো,
– তুই এখানে কিভাবে?
জেরিন ভয়ে নিশ্চুপ হয়ে গেছে! আরমান কোনো জবাব না পেয়ে তার গালে এক থাপ্পড় দিয়ে বললো, “তোর সাহস কি করে হয় আবার এখানে আসার!”
কথাটা বলেই সে তার হাত টেনে রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। জেরিন তার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,
– আরমান, প্লিজ। আমার কথাটা শুনো। একবার শুনো আমার কথা। বড় মা…
নাফিসা আর আবিদা বেগম কিচেনে ছিলো আর বড়মা নামাজ পড়ে কুরআন পড়ছিলো। তাদের কথাবার্তা শুনে সবাই বেরিয়ে এলো। বড়মা আরমানের হাত ধরে থামিয়ে বললো,
– হয়েছে কি?
– এই মেয়ে এখানে এলো কি করে! তার সাহস কি করে হয় এবাড়িতে পা রাখার।
– হাত ছাড়! আমি এনেছি তাকে।
– কেন? খুব ইচ্ছে করে সাপের ছোবল খেতে? আমি বারবার বলেছি এর জায়গা হবে না এবাড়িতে। তা-ও কেন ঠাই দিলে তোমরা? আমার চেয়ে বেশি আপন সে তোমাদের কাছে?
– মাথা ঠান্ডা কর। অফিস থেকে ফিরেছিস, হাতমুখ ধুয়ে খেয়ে নে তারপর কথা বলছি।
আরমান রেগে হনহন করে রুমে চলে গেলো। শার্ট চেঞ্জ করে হাতমুখ ধুয়ে সে জিহানের একটা টিশার্ট নিলো। জিহান ঘুমাচ্ছিলো। সে ঘুমের মধ্যেই টিশার্ট পড়িয়ে নিলো। অত:পর তাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। কোলে নেওয়ার সময়ই জিহানের ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো। সে পরিস্কারভাবে চোখ মেলে তাকাতে তাকাতে এতোক্ষণে আরমান বেরিয়ে এসেছে। বড়মা পিছু পিছু ডাকলো আর জেরিন গেইট পর্যন্ত এসে দাড়িয়ে রইলো। সবাইকে উপেক্ষা করেই বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো সে। জেরিন মন খারাপ করে রুমে এসে বসে রইলো। ভেতরটা কাপছে সাথে চোখ থেকেও অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। আচ্ছা, সে কি জানে দ্বিতীয়বার বাবা হতে চলেছে? বড়মা কি বলেছে তাকে? জিহানের সময় তো খুশিতে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলো সে, তাহলে এখন? না, সে নিশ্চয়ই জানে না। জানলে এমনটা করতো না। আজও খুশি হতো। তাকে জানাতে হবে। সে ফিরলেই জানাবে তাকে।
ইমরান ফ্রেশ হয়ে এই ঘরে এলো। বড়মা খাওয়ার কথা বললে সে বললো খেয়েছে দুপুরে। আরমানের কথা জিজ্ঞেস করেও বড় মা জানতে পারলো আরমানও খেয়েছে দুপুরে।
জেরিন কিচেনে কাজ এগিয়ে দেওয়ার জন্য গেলে আবিদা বেগম তাকে নিষেধ করে দিলেন কিচেনে পা রাখতে। এসেছে, থাকবে খাবে কিন্তু কোনো কিছুতে হাত লাগাবে না সে। আবিদা বেগম যেমন রাগান্বিত তেমন ভীতুও বটে। যদি খাবারে কিছু মিশিয়ে আবার তাদেরও মেরে ফেলে সেই ভয় আছে তার মনে। সে মোটেও চায়নি জেরিন আসুক। কিন্তু বড়মার মুখের উপর কিছু বলতে পারেনি। ফুপির আচরণে জেরিনের কষ্ট লাগলেও কিছু বললো না সে। চুপচাপ রুমে চলে এলো। কেউই কিছু বললো না আর।
ইমরান ঘরে থাকাকালীন নাফিসা তাদের ঘরে আসেনি। বড় ঘরেই সময় কেটেছে তার। ইমরান তখন জেরিনকে না দেখলেও মাগরিবের পর আবার বড় ঘরে এসে জেরিনকে রুম থেকে বের হতে দেখে সে বিস্মিত! সাথে সাথেই সে নাফিসার দিকে তাকালো! নাফিসা দৃষ্টি নামিয়ে নিয়েছে। কাউকে কোনো কিছু না বলে ইমরান চলে গেলো নিজের ঘরে৷ তার দু মিনিট পরেই নাফিসার ডাক পড়লো! “নাফিসা” হাক কানে ভেসে আসতেই ভেতরটা ধুক করে উঠলো! যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়! যেই ভয়টা পেয়ে যাচ্ছিলো সেটাই ঘটতে যাচ্ছে! নাফিসা মুখ মলিন করে দৃঢ় পায়ে এগিয়ে এলো ঘরে। সে রুমে পা রাখতেই ইমরান বললো,
– ও এখানে এলো কি করে?
– গাড়িতে করে।
সিরিয়াস মুডে নাফিসা এমন জবাব দিলো পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টায়। কিন্তু ইমরান আরও বেশি রেগে বললো,
– ফাজলামোর একটা সীমা থাকা দরকার। কার সাথে এসেছে সে?
– বড়মা গিয়েছিলো আনতে।
– বড়মা একা গেছে?
নাফিসা মাথা দু’দিকে নাড়ালে ইমরান আবার বললো,
– কে কে গেছে?
– আরাফ ভাইয়াও গেছে।
– আর তুমি যাওনি?
নাফিসা চুপ করে আছে! তার নিরবতাই স্পষ্ট জবাব দিয়ে দিয়েছে। ইমরান তার হাতে থাকা বইটা টেবিলে আছড়ে রেখে বললো,
– লজ্জা করে না তোর? যার জন্য তুই মৃত্যুর পথ থেকে ঘুরে এসেছিস আজ তার উপরই দরদ এতো উতলে পড়ছে! নিষেধ করেছিলাম না জেরিনের ব্যাপারে তুই কোনো কথা বলবি না। তাহলে আমার কথা অমান্য করলি কেন? গতকালও ফোন চেক করে দেখেছি তুই ফোনে কথা বলেছিস তেরো মিনিট। তবুও আমি কিছু বলিনি। এখন আমার কাছে জবাবদিহি কর, এবাড়িতে জেরিন এনেছে তোকে নাকি আমি এনেছি? বল?
– তুমি।
– তাহলে তুই আমাকে অমান্য করে জেরিনকে মানতে গেলি কেন?
– বড়মা নিয়ে গেছে, আমি কি নিষেধ করতে পারতাম?
– খবরদার, এখন বড়মার কথা বলে কাটিয়ে দিবি তো! তোকে আমার চেনা নেই? কতদিন যাবত শুরু করেছিস এসব? বারবার আমার কানই তো ঝালাপালা করে ফেলছিলি জেরিন জেরিন করে! কি হয় এই জেরিন তোর? মায়ের পেটের বোন? যার জন্য দরদ এতো উতলে উঠে!
– এভাবে কথা বলছো কেন তুমি!
– তুই এটাই প্রাপ্য। যতটাই না ভালোবাসতাম তোকে আজ ততটাই ঘৃণা করি। তোর জন্য আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি দিনে দিনে ক্ষণে ক্ষণে! ভুলটা শুরুতেই আমার ছিলো। না তোকে এতোটা আপন করে চাইতাম আর না আজ এসবের সম্মুখীন হতে হতো!
– কি বলছো এসব! তুমি একবার শু…
– একটা কথাও বলবি না আমার সাথে। জেরিন প্রিয় জেরিনের কাছেই যা। কোনো প্রয়োজন আর অপ্রয়োজনে আমার সম্মুখীন হবি না।
– বারবার ভুল বুঝে রাগ করো কেন!
– হ্যাঁ, আমি ভুল বুঝি আর তুই সাধু ব্যক্তি? তাই না? তুই বারবার ভুল করতে পারবি আর আমি ভুল বুঝতে পারবো না? তোকে জাস্ট অসহ্য হচ্ছে, আমার সামনে থেকে দূর হো!
– একবার শুনলে কি হয়!
– ধ্যাৎ!
বিরক্ত হয়ে ইমরানই বেরিয়ে গেলো! কি আর শুনবে তার মুখে! এতো শত বাহানা দিয়ে নিশ্চয়ই পরিবারে জেরিনের প্রয়োজন উল্লেখ্য করবে! বড়মার প্রতিও কিছুটা রাগ হচ্ছে ইমরানের। আর সবচেয়ে বেশি রাগ হচ্ছে নাফিসা তাকে না জানিয়ে জেরিনের বাসায় যাওয়ায়! সবার রাগ একসাথে দেখিয়ে এলো নাফিসার সাথে। তবুও মন শান্ত হলো না! আর এদিকে নাফিসাও নিজেকে অপরাধী ভাবছে। হবেই না কেন! তার জানিয়ে যাওয়া উচিত ছিলো। সে জানে হাসব্যান্ডের পারমিশন ছাড়া যাওয়া ঠিক হয়নি তার। কিন্তু তখন কি ই বা করার ছিলো! ইমরান জানলে তো তাকে কখনোই যেতে দিতো না। আর আবিদা বেগম না যাওয়ায় বড়মার তাৎক্ষণিক প্রস্তাবেও নাফিসা নিষেধ করতে পারেনি! সব জেনেশুনে তার মাঝে এই ভয়টাই কাজ করছিলো যে ইমরান তার উপর রাগ করবে। এবং তখনকার মতো এখনো আশাবাদী সে ইমরানকে মানিয়ে নিবে। নিজের মধ্যে এই আশ্বাসটা রেখেই সে গিয়েছিলো তখন। তার এই ক্ষণিকের রাগের জন্য তো আর এতোগুলো জীবন নষ্ট হতে দেওয়া যায় না।

চলবে।