যদি আমার হতে🌹
পর্ব – ৩৪
লেখিকা : সৈয়দা প্রীতি নাহার
মালিহা ইয়াসমিনের মুখটা ভার হয়ে আছে সকাল থেকেই। ছেলে তার বউকে নিয়ে হানিমুনে শ্রীমঙ্গল যাচ্ছে, এই ব্যাপারটা তার কাছে স্বাভাবিক লাগছে না। সাধারনত কাপলরা হানিমুনে বিদেশ যায়। আর দেশে যেতে হলে সমুদ্র বা পাহাড়ে যায়। অথচ তার ছেলের যত আজগুবি কান্ড। সিলেটের চা বাগান দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে! ভেবেছিলেন আদ্রিশা হয়তো যেতে চাইবে না। পাহাড় ভ্রমণের জেদ ধরে বসে থাকবে । কিন্তু না। সেও স্বামীর সাথে চা বাগান দেখতে গোছগাছ করছে! কোথায় বায়না ধরবে, ঝগড়া করবে তা না! শওকত শাহের সাথেও রাগারাগি হয়েছে এ নিয়ে। তিনি না কি ছেলেকে বুঝাচ্ছেন না। অথচ শওকত শাহ ভেবে পান না এখানে তার কি বলার আছে! বিবাহিত ছেলেকে হানিমুনে যাওয়ার ব্যাপারে বাবাকে পরামর্শ দিতে হবে ভেবেই তিনি অস্থির! তবুও স্ত্রীর কথা রক্ষার্থে মুগ্ধর ঘরে গেলেন। শ্বশুড়কে আসতে দেখেই মাথায় কাপড় টেনে দাঁড়িয়ে পরলো আদ্রিশা। শওকত শাহ গলা খাকরি দিয়ে বললেন, “বউমা, তোমার শাশুড়ি ডাকছিলেন বোধহয় তোমায়!” আদ্রিশার ভ্রু খানিক কুঁচকে গেলো। পরোক্ষনে বাবা ছেলের একান্ত কথা থাকতে পারে ভেবেই মাথা নেড়ে ঘর থেকে প্রস্থান করলো। মুগ্ধ তার লাগেজের চেইন লাগিয়ে বাবার দিকে দৃষ্টি দিলো।
“কিছু বলবে বাবা?”
শওকত শাহ ইতস্তত করে বললেন, “আর কোনো জায়গা পেলি না?”
মুগ্ধ স্বাভাবিক ভাবেই বললো, “কেনো বলতো?”
“কেনো আবার, তোকে এখন আমায় সব বলতে হবে না কি?”
“বলা যখন শুরু করেছো তখন শেষ তো করতেই হবে!”
“বিয়ের পর প্রথম ঘুরতে যাচ্ছিস। দেশের বাইরে না যাস, সমুদ্র দেখতে যেতে পারতিস। বউ নিয়ে শ্রীমঙ্গল? ওটা পিকনিকের জন্য উপযোগি। তা বলে হানিমুন! বউমা যেতে ইচ্ছুক কি না তা জানতে চেয়েছিস একবারও? কাল থেকে বলছে পাহাড় দেখবে আর তুই কাওকে কিছু না বলে নিজের পছন্দ অনুযায়ি জায়গা ঠিক করে নিলি!”
“আমি বুঝতে পারছি না তুমি আসলে কি বলতে চাইছো। শ্রীমঙ্গলের মতো এতো মনোরম সুন্দর জায়গায় যাওয়াতে আপত্তি কেনো হবে সেটাই বুঝতে পারছি না। না দেখো, জায়গাটা তো খারাপ না বলো। নেহাত কাজের চাপ, নইলে দেশের বাইরেই কোথাও নিয়ে যেতাম। পারছি না বলেই এই জায়গা বেছে নিয়েছি। এতে অবাক হওয়ার কি আছে সেটাই মাথায় ঢুকছে না। চা বাগান ছাড়াও অনেক কিছু দেখার আছে সেখানে। থাকার জন্য উন্নতমানের রিসোর্ট আছে আর কি চাই। তাছাড়া আদ্রিশাও তো মানা করেন নি যেতে। আপত্তি থাকলে অবশ্যই জানাতেন। আমি নিশ্চয় ওনার পছন্দ অপছন্দের অবমাননা করতাম না। আমি শুধু স্পট ডিসাইড করেছি উনিও রাজি আছেন।”
শওকত শাহ মাথা নাড়লেন। গম্ভীর কন্ঠে বললেন, “তোমাদের মত থাকলে তো আর কিছু বলার নেই। তবে একটা কথা, শ্রীমঙ্গল থেকে ফিরে যদি বউমা বলেছে ওর জায়গাটা মোটেও পছন্দ হয় নি, ওর মন ফ্রেশ না হয়ে যদি আরো খারাপ হয় এই ঘুরার ফলে তাহলে দেখে নিও!”
“বাবা তোমার কি আমার উপর ভরসা নেই? তোমার কি মনে হয় তোমার বউমা বেড়ানো থেকে কাঁদতে কাঁদতে ফিরবে? এসে নালিশ করবে যে তার মোটেও ভালো লাগে নি? তাহলে বলবো ভাবনাটা ভুল! আমাদের আগে যেতে তো দাও তার পর ফেরার চিন্তা। এন্ড আই বেট ইউ, আদ্রিশার খুব ভালো লাগবে। ইন ফেক্ট এখন উনাকে যত খুশি লাগছে ওখানে এর থেকেও দ্বিগুন খুশি থাকবেন!”
শওকত শাহ চিন্তামুক্ত হলেন । এবার তার স্ত্রীকে বুঝানোর পালা।
_______________
বিকেলের দিকে প্রাইভেট কারে বেড়িয়ে পড়লো মুগ্ধ আদ্রিশা। যদিও আরো আগে বেড়োনোর কথা ছিলো তথাপি মুগ্ধর একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য বিকেলে যাত্রা শুরু হলো। মালিহার টেনশন বাড়তে লাগলো এবার। একমনে ভেবে চলেছেন, এই সময়ে এতোটা পথ যাওয়া! রাস্তায় কোনো বিপদ আপদ না হয়!ওখানে পৌঁছতে পৌঁছতে নির্ঘাত রাত হবে! ঠিক ঠাক পৌঁছবে কি না? অচেনা শহর অচেনা পথ অন্ধকার রাস্তা ডাকাত ধরবে না তো? ওনাকে বুঝাতে বুঝাতে অতিষ্ঠ হয়ে টিভি ছাড়লেন শওকত শাহ। তিক্ত গলায় বললেন, “পৌঁছলে জানাবে তো বলেছে। এতো চিন্তার কি আছে? শান্ত হয়ে বসো। ”
দীর্ঘ সারে পাঁচ ঘন্টার যাত্রা শেষে শ্রীমঙ্গল রিসোর্টে পৌঁছতে সক্ষম হলো তারা। মাঝ রাস্তায় টায়ার পান্চার হওয়ায় পর্যাপ্ত সময়ের অধিক লেগেছে। রিসোর্টের রিসেপশনিস্টের কাছে গিয়ে নিজেদের রুমের চাবি নিতে গেলো মুগ্ধ আদ্রিশা।
“হ্যালো! কিভাবে সাহায্য করতে পারি আপনাদের?” (রিসেপশনিস্ট)
“আমরা ৭ দিনের হানিমুন প্যাকেজে এসেছি। রুম বুক করেছিলাম।” (মুগ্ধ)
“স্যার, কি নামে বুক করেছিলেন?” (রিসেপশনিস্ট)
“মাহবুব শাহ এন্ড মিসেস ইফতিকা আহমেদ আদ্রিশা।” (মুগ্ধ)
“যাস্ট এ মিনিট!(একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে) এখানে সাক্ষর করে দিন প্লীজ! আর এই নিন আপনাদের রুমের কি। ” (রিসেপশনিস্ট)
মুগ্ধ চাবিটা হাতে নিতেই রিসেপশনিস্ট বললো, “সোজা গিয়ে ডান দিকে লিফ্ট। দু তলায় সামনে এগুলেই চার নম্বর রুমটা আপনাদের।”
মুগ্ধ থ্যাংকস বলে আদ্রিশা আর নিজের লাগেজটা একা হাতেই টেনে নিতে লাগলো। রুমে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো সে। জুতোটা খুলেই বিছানায় সটান শুয়ে পড়লো। আদ্রিশা লাগেজ খুলে কাপর নিয়ে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। মুগ্ধর হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো । পকেট থেকে ফোন উঠিয়ে কানে লাগাতেই অপাশ থেকে মায়ের অস্থির কন্ঠ ভেসে এলো। গাড়িতেও দুবার ফোন করেছিলেন তিনি। মুগ্ধ বলেছিলো পৌঁছতে দেরি হবে। তার ফোনের অপেক্ষা করতে করতে একসময় বাধ্য হয়ে নিজেই কল করেন। সহিহ সালামতে পৌঁছে গেছে শুনে মনটা শান্ত হলো তার। কথা বলা শেষ হলে মুগ্ধ ফ্রেশ হওয়ার জন্য কাপড় নিলো। আদ্রিশাও বেরিয়ে পরেছে ততোক্ষনে।
রাত হয়ে গেছে বলে আজ আর বেড়োতে পারে নি তারা। মুগ্ধ ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। আদ্রিশার চেহাড়ায় ক্লান্তির ছিটে ফুটাও নেই। ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আশেপাশের সৌন্দর্য্য দেখতে ব্যাস্ত সে। রিসোর্টের পাশেই একটা লেক আছে। আকাশের মস্ত চাঁদের আলোয় লেকের পাশের মাঠটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। লেকের ঠিক পাশেই গাছ থেকে পাতা আর ফুল পরে সম্পূর্ণ জায়গাটা মনমুগ্ধকর করে তুলেছে। আদ্রিশা ভাবছে রাতের বেলা রিসোর্টের কাছটা এতো সুন্দর লাগলে দিনের আলোয় শ্রীমঙ্গল কেমন দেখাবে। মুগ্ধ বলেছিলো অনেক গুলো জায়গায় ঘুরবে তারা। প্রতিটি জায়গাই না কি অতীব সুন্দর। একবার গেলে ফিরতে মন চাইবে না। সত্যি কি? আদ্রিশার ধারনা ছিলো চা বাগান ছাড়া ঘুরার কোনো উপযুক্ত জায়গা নেই শ্রীমঙ্গলে। কিন্তু মুগ্ধর কথানুযায়ি সবুজ ঘেরা এই অন্চলে অদেখা কিছু সৌন্দর্য্য অপেক্ষা করছে তার জন্য।
চলবে,,,,,,,
যদি আমার হতে🌹
পর্ব – ৩৫
লেখিকা : সৈয়দা প্রীতি নাহার
পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে বেরোয় মুগ্ধ আদ্রিশা। মাত্র তিন মিনিটের রাস্তা পারি দিয়ে চা বাগানের ভেতর প্রবেশ করে তারা। চা বাগানের চারপাশে কেবল সবুজের মেলা। কাটিং করা চা গাছগুলো দেখে কখনো মনে হচ্ছে সাগরের ঢেউ তো কখনো মনে হচ্ছে বিশাল সবুজ মাঠ! চা গাছের ফাঁকে ফাঁকে একটি বিশেষ দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে ছায়া তরু। যার ডালপালা, শাখা প্রশাখায় শুনতে পাওয়া যাচ্ছে পাখিদের কলকলানি। আদ্রিশা মুগ্ধ চোখে প্রতিটা জিনিষ লক্ষ করছে। বেখেয়ালি হয়ে হাটার মাঝে হুচট খেয়ে পরে যেতে নিলে মুগ্ধ ধর ফেলে তাকে। মুগ্ধ তার ডান হাতে আদ্রিশার বাম হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। আদ্রিশাও বাধা দেয় না। অন্যহাতে মুগ্ধর বাহু ধরে এগিয়ে চলে তারা।
“বাংলাদেশের মোট ৭টি ভ্যালীর মধ্যে ৬টিই রয়েছে সিলেটে। আর এই ৬ ভ্যালীতে মোট ১৩৮ টি চাবাগানের মধ্যে শ্রীমঙ্গলেই রয়েছে ৩৮। এজন্য শ্রীমঙ্গলকে চায়ের রাজধানীও বলা হয়। বুঝলেন?”
“ওয়াও,,,, আপনি এতো সব কি করে জানলেন মুগ্ধ? আপনি কি এখানে আগেও এসেছেন?”
“কোথাও না গেলে বুঝি সে জায়গা সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে পারে না?”
“তা নয়। তবে জানার তো একটা উৎস থাকে। আপনার জানার উৎস কি সেটাই জানতে চাইছি মূলত।”
“মঈন উদ্দীন!”
আদ্রিশা ভ্রু কুঁচকে বললো, “কে মঈন উদ্দীন?”
মুগ্ধ আদ্রিশার দিকে একপলক দেখে বললো, “আমার ম্যানেজার। বন্ধুর মতোই বলতে পারেন। আমি যখন থেকে অফিস জয়েন করেছি তখন থেকেই আছেন আমার সাথে। অফিসের কাজকর্ম ছাড়াও ব্যাক্তিগত জীবনে অনেক সহায়তা করেন। ভালো মনের মানুষ। সবে এক বছর হবে অথচ মনে হয় ওনার সাথে অনেক দিনের সম্পর্ক। জানেন তো, বন্ধত্ব নেই আমাদের মধ্যে। বস কর্মচারির সম্পর্ক তথাপি বন্ধুর মতোই আচরণ!” কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বললো, “মাঝে মাঝেই নিজের সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে হাজির হই। আমায় ফিরিয়ে দেন না তখন। এবারও তাই। কাজের ব্যাস্ততায় বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি করবো, কোথায় যাবো? তখনই এই শ্রীমঙ্গলে আসার আইডিয়াটা দিলেন তিনি। আর এসব সম্পর্কেও তিনিই বলেছেন। কোথায় ঘুরা যাবে, কখন যাওয়া ভালো হবে সেটাও উনিই বলে দিয়েছেন।”
আদ্রিশা মাথা দুলিয়ে ছোট্ট শ্বাস ফেললো। বউকে নিয়ে কোথায় যাওয়া যায় তাও ম্যানেজার থেকে জানতে হয় না কি? অবশ্য আদ্রিশা তো সাময়িক! তিথিকে নিয়ে কোথাও যাওয়ার সময় নিশ্চয় কারো পরামর্শর দরকার পরবে না তার। এক সপ্তাহর জন্য নয় হয়তো অনেক গুলো দিনের জন্য ঘুরবে তারা। তখন কি আদ্রিশার কথা মনে থাকবে? আর ভাবতে পারে না আদ্রিশা। বুকে ব্যাথা হয় তার। চিনচিন ব্যাথা!
মুগ্ধর ফোন বেজে উঠে হঠাৎ। মনোরম এই জায়গায় মুঠোফোনের বাজখাই রিংটোনটা বেশ অস্বস্তিকর লাগছে। মুগ্ধ আদ্রিশার হাত ছাড়িয়ে ফোন নিয়ে একটু দূরে চলে যায়।মুগ্ধ ফোনটা বের করতেই আদ্রিশা স্ক্রিণে তিথির নাম দেখে নিয়েছিলো। তাই নিজ থেকেই হাতের স্পর্শ হালকা করে নেয়। ফোনালাপের সময় মুগ্ধর চোখে মুখে খুশির ঝিলিক দেখলো আদ্রিশা। “তিথির ফোন আসাতেই মুগ্ধ হাত ছাড়িয়ে নিলো তিথি ফিড়ে আসলে তো একদম একা করে দেবে! এটাই তো হওয়ার কথা। তাহলে এতো ভাবছি কেনো? আচ্ছা, আমি কি একটু বেশিই এক্সপেক্ট করছি? তিথি আর মুগ্ধকে এক করে দেবো তো বলেছিলাম। কিন্তু তা কি সম্ভব! স্বাভাবিক বিষয় এতোটা জটিল হয়ে পরলো কিভাবে?”(আদ্রিশা মনে মনেই বললো)
সারাদিন চা বাগান আর আশেপাশে ঘুরোঘুরি করেই কেটেছে তাদের। বেশ কিছু মুহুর্তও ক্যামেরা বন্দী করেছে তারা। আদ্রিশা অনেকগুলো ছবি তার বন্ধু বান্ধব, ভাবি আর শাশুড়িকে পাঠিয়েছে। ঘুরাঘুরি শেষে পাশের একটা রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খায় তারা। তারপর আবারও উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাটতে থাকে। বিকেলের দিকে রিসোর্টে ফিরে আসে মুগ্ধ আদ্রিশা।
রাতে আদ্রিশা আর মুগ্ধ রুমের ব্যালকনিতে বসে কফি খাচ্ছিলো। বাইরের লেকটার দিকে তাকিয়ে আদ্রিশা বললো, “মুগ্ধ! আপনি বলেছিলেন ঘুরার অনেক জায়গা আছে। অথচ খালি চা বাগানই দেখালেন?”
মুগ্ধ হাসলো। বললো, “আজ প্রথম দিন ছিলো। আরো তো আছি কয়েকটা দিন। একদিনে কি সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব?”
আদ্রিশা মুখ ফুলিয়ে বললো, “৭ দিনের জন্য এলাম একটা দিন তো চলেই গেলো! আর মাত্র ৬ দিন!”
মুগ্ধ চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে বললো, “হুম। এই ৬ দিনেই আপনি পুরো শ্রীমঙ্গল ঘুরতে পারবেন। এখন উঠুন।তারাতারি শুয়ে পরুন সকাল উঠতে হবে তো!”
______________
“চলুন আদ্রিশা। গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ৪ ঘন্টার পথ। সন্ধ্যে হয়ে গেছে অলরেডি।”
“হুম চলুন। ব্যাগ গুলো নিয়েছেন?”
“হুম!”
মুগ্ধ আদ্রিশা বাড়ি ফিরছে আজ। ৭ টা দিন কেটে গেছে তাদের। এখন বাড়ি ফেরার পালা। এই ৭ দিনে আদ্রিশা অনেকগুলো জায়গায়ই ঘুরেছে। শ্রীমঙ্গল যে এতোটা সুন্দর তা কল্পনাও করতে পারে নি আদ্রিশা। মুগ্ধর জন্যই সবুজ প্রকৃতির সাথে তার পরিচয় হলো। বুঝলো বেড়ানোর জন্য শুধু পাহাড় বা সমুদ্র নয়, প্রকৃতিই মূখ্য! একে একে চোখের সামনে ভাসছে প্রতিটি জায়গা। শ্যামলীর সৌন্দর্য্য ভুলার মতো নয়। লাউয়াছড়া ফরেস্ট জোনের শ্যামলীতে নির্মিত পিকনিক স্পটটা অসাধারণ ছিলো। শ্যামলীতে পৌঁছানোর আগে চোখে পরেছিলো কাশ ফুলের সাদা পাহাড়,রাবার গাছ! আর তারপর সবুজ মাঠ। চারদিকে সবুজ আর সবুজ! ডানপাশে পাহাড়ের উপর বিশ্রামের জন্য তৈরি কৃত টিন শেডেই দুপুরের খাবার খেয়েছিলো তারা। অতঃপর শ্যামলীর ডিপ ফিজাপ এরিয়া, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ঘুরেছিলো।
রাবার বাগান, লেবু বাগান, আনারস বাগান, ভাড়াউরা লেক, রাজঘাট লেক, মাগুর ছড়া গ্যাসকূপ, ওফিং হিল, শ্রীমঙ্গলের একমাত্র ঝর্ণা ‘যজ্ঞ কুন্ডের ধারা’ এবং সর্বশেষ ঐতিহ্যবাহী নির্মাই শিববাড়ি! প্রত্যেকটা জায়গা যেনো মনে দাগ কেটে রয়ে গেছে আদ্রিশার। সবুজের ছোঁয়ার পাশাপাশি পানির ছলছল শব্দ কানে বাজছে তার!
“কিছু খাবেন?” মুগ্ধর কথায় ভাবনার সুতোয় টান পরে আদ্রিশার। গাড়িতে বসেই ৭দিনের ভ্রমণের স্মৃতি চারণ করছিলো সে। মৃদু হেসে বললো “উহুম খিদে পায় নি!” মুগ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “মন খারাপ?”
আদ্রিশা গাড়ির কাচের ভেতর থেকে বাইরের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো। মুগ্ধ সামনের দিকে দৃষ্টি দিতেই বললো, “আবারও ধন্যবাদ মুগ্ধ! আমি যতবারই আশা ত্যাগ করি আপনি নতুন আশা বুনতে সাহায্য করেন। অগোছালো সব কেমন করে আপনার কাছে গিয়েই সামলে যায়। গোছালো হয়ে যায়। আমার সপ্নের বাইরেও যে কিছু অসাধারণ থাকতে পারে তা জানানোর জন্য ধন্যবাদ। আমাকে এতোটা খুশি দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।”
“আদ্রিশা প্লিজ। বার বার ধন্যবাদ বলে আমায় ছোট করবেন না। আর আমি কি এমন করেছি বলুন তো? আপনাকে খুশি রাখা তো আমার কর্তব্য!”
আদ্রিশা চোখের জল ফেলে বললো, “ঠিকই বলেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করছি আমি! আসলে, আপনি আমার জন্য এতো করছেন যে শুকরিয়া আদায় করার কোনো পন্থা আমার নেই। আমার ঝুলি শূন্য!”
মুগ্ধর কপালে ভাঁজ পরলো। আদ্রিশা সিটে রাখা মুগ্ধর হাতটা চেপে ধরে বললো, “চাইলেই তো পারতেন তিথির কথা রেখে আজ আমায় ছেড়ে দিতে। তবুও করলেন না! আমায় সাথে নিয়েই নিজের বাড়ি ফিরছেন! রবিনের হাত থেকে আমাকে বাঁচাতে এতোবড় ডিল ক্যান্সেল করে শ্রীমঙ্গল পাড়ি জমালেন আমায় নিয়ে!? চাইলেই তো পারতেন সব অথচ আমার কথা ভেবে কিছুই করলেন না। স্বাভাবিক ব্যাবহার করছেন! আপনার জায়গায় আর কেউ হলে বেশি না হোক ধমকও নাহয় দিতো। আর আপনি! চুপচাপ আমার সব আবদার শুনে গেছেন। কোম্পানির লসের ব্যাপারে একবারও কথা বললেন না! এতোটা সহ্য করে আমায় খুশি রাখার চেষ্টায় ৭ টা দিন পার করে দিলেন? চোখে মুখে চিন্তার ভাজ টুকু পরতে দেন নি! এসবের মূল্য কিভাবে চুকাবো বলতে পারেন?” মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বললো,” অপেক্ষায় থাকবো, কোনো একদিন সবটুকু ফিরিয়ে দেবো আপনাকে! আমাকে দেয়া খুশি আর আমার জন্য সহ্য করা কষ্ট। সব!”
মুগ্ধ মাথা ঘুরিয়ে বাইরের দিকে তাকালো। এখনো মুগ্ধর হাতের উপর আদ্রিশার হাত রয়েছে। মুগ্ধ হাত সরায় নি। শুধু ভাবছে আদ্রিশা কিভাবে এতো কিছু জানলো?
চলবে,,,,,,,,