আমি তোমার গল্প হবো পর্ব-১৪

0
917

#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::১৪

অধরা বাসায় প্রবেশ করতেই তার মা দৌড়ে এসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে। তারপর একে একে সবাই নিচে নেমে আসে।

— অধরাকে ধরে তার মা, ” কেমন আছে আমার আম্মুটা?
দেখি দেখি….আমার মেয়েটা দুদিনেই কেমন যেন শুকিয়ে গিয়েছে। তারা কি ঠিক মতো তোমার খেয়াল নেয় না? ”

— অধরা মুচকি হেসে, ” আমি একদম ঠিক আছি আম্মু। আর তারা আমার অনেক খেয়াল রাখে। স্পেশালি দাদি বুড়ি…আমাকে খুব খুব খুব ভালোবাসে। ”

— অধরার বাবা, ” আরে কি করছো তুমি? মেয়েকে নিয়ে কি দাঁড়িয়েই থাকবে? নাকি ভেতরে আসতে দিবে? আর, আশ্বিন কোথায়? তারা আসেনি? ”

— অধরা বাবাকে জড়িয়ে ধরে, ” বাবাই তুমি তো আমার কথা ভুলেই গিয়েছো। আসতেই আশ্বিনের কথা জিজ্ঞেস করলে…আমার তো কোন দামই নেই। একমাত্র ভাইয়াই আমাকে ভালোবাসে। ”

— অধরার নাক আলতো করে টেনে, ” আমি কি আমার মাকে ভুলে যেতে পারি নাকি? যাই হোক, চলো দাদুভাইয়ের সাথে দেখা করবে। ”

দাদাভাইয়ের কথা শুনে অধরা দৌড়ে দাদুর রুমে এসে দাদুকে জড়িয়ে ধরে।

— দাদুভাই মুচকি হেসে, ” এইতো আমার কলিজাটা চলে এসেছে। তোকে ছাড়া এতোদিন বাসাটা একদম খালি খালি লাগছিলো। এখন একদম ঠিক আছে। ”

অধরা মুচকি হেসে দাদুর সাথে গল্প জুড়ে দেয়।

🌻এদিকে🌻

আশ্বিন বসে ল্যাপটপে কাজ করছে আর বারবার ফোনের দিকে নজর দিচ্ছে। এতোটা সময় হয়ে গেল তাও অধরার ফোন আসলো না।

— ” এতোক্ষণে তো পৌঁছে যাওয়ার কথা। নিশ্চিত সবাইকে পেয়ে এখন আমাকে ফোন দিতে ভুলে গিয়েছে। ”

কথাটা ভেবে আশ্বিন ফোন নিয়ে অধরাকে কল দেয়। কিন্তু দুবার রিং হওয়ার পরেও অধরা ফোন রিসিভ করেনি। তাই রাগে ফোন রেখে খাটে এসে শুয়ে পড়ে।

অধরা এতোক্ষণ সবার সাথে গল্প শেষ করে নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে আশ্বিনের এতোগুলো মিসকল। মূহুর্তেই মুখে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে তার। বারান্দায় এসে আশ্বিনকে কল দিয়েই সাথে সাথে রিসিভ করে আশ্বিন…

— ” হ্যালো আশ্বিন…। ”

— ওপাশ থেকে, ” বলো। ”

আশ্বিনের কণ্ঠ শুনে অধরা ঠিকই বুঝতে পারছে আশ্বিন রেগে আছে। তবুও অধরা একটু দুষ্টুমি করে…

— ” আপনি ফোন দিয়েছিলেন আমাকে। আমি আসলে সবার সাথে গল্প করছিলাম তাই খেয়াল করিনি। ”

— ” হ্যা খেয়াল তো করবেই না। আমি তো আর কেউ না, আমার ফোন রিসিভ করবে কেনো? ”

— অধরা মুচকি হেসে, ” আরে আরে, আপনি রেগে যাচ্ছেন কেনো? আমি তো এখন ফোন দিয়েছি, নাকি? ”

— ” হুমম, খুব ভালো করেছো। ”

— ” হুম। এতো রাত হয়ে গিয়েছে আর আপনি এখনও জেগে আছেন? কাল অফিসে যেতে হবে না? ”

— অভিমানী কণ্ঠে, ” ঘুম আসছে না আমার। হয়তো প্রতিদিনের মতো মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার মতো কেউ নেই তাই। ”

আশ্বিনের কথা শুনে অধরা মুচকি হেসে বারান্দার দোলনায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
অপর পাশে আশ্বিন খাটে হেলান দিয়ে বসে জানালা দিয়ে বাহিরের আকাশ দেখতে থাকে।
যেনো নিস্তব্ধতাই আজ দুটো মনের হাজারো অনুভূতির প্রকাশ করছে, যার সাক্ষী হয়ে থাকবে আকাশের সেই শুক্র তারা।

🌻পরদিন🌻

সকাল থেকেই বাসার মানুষ নানারকম কাজে ব্যস্ত।
আর অধরা কণার রুমে বসে তাকে রেডি হতে সাহায্য করছে। দুজনকেই আজ খুব সুন্দর লাগছে।
বিকেলের দিকে ধীরে ধীরে মেহমান আসতে শুরু করে। অধরার বাবা আর কণার বাবা মেহমান আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত।

কিছুক্ষণ পর আশ্বিন আর দাদি চলে আসে। অধরার বাবা আশ্বিনের সাথে কণার ফিয়ন্সে মাহিনের পরিচয় করিয়ে দেয়।
আশ্বিন পরিচিত হয়ে মুচকি হেসে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে খুঁজতে শুরু করে। হঠাত সিঁড়ি দিয়ে অধরা কণাকে নিয়ে নেমে আসে।

অধরাকে দেখে আশ্বিনের চোখ আটকে যায়। কালো আর কমলা রঙের একটা লেহেঙ্গা পরে আছে অধরা। লম্বা চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে আর মুখে হালকা সাজ, সব মিলিয়ে তার মায়াবতীকে আরো বেশি মায়াবী লাগছে।

অধরা মুচকি হেসে কণাকে নিয়ে নিচে নামার সময় হঠাত আশ্বিনের দিকে নজর যায়। ফরমাল লুকে আরও বেশি সুন্দর লাগছে আশ্বিনকে। অধরা আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দাদির কাছে চলে আসে।

— ” দাদি বুড়ি…। ”

— ” আরে আমার ছোট্ট বুড়িটা। তোকে তো আজ খুব সুন্দর লাগছে। ”

— ” হিহিহি। ধন্যবাদ দাদিবুড়ি।
আসতে এতো দেরী করেছো কেনো? তোমাকে না বললাম তাড়াতাড়ি চলে আসবে। ”

— ” আমি তো সেই কখন থেকে রেডি হয়ে বসে আছি। কিন্তু আশ্বিনের জন্যই দেরী হলো। অফিস থেকে ফিরতেই চলে আসলাম। ”

— ” ভালো। চলো সবার সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেই। ”

কিছুক্ষণের মধ্যেই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল। আশ্বিন ধীরে ধীরে এসে অধরার পাশে দাঁড়িয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। অধরা মুচকি হেসে আশ্বিনের দিকে তাকাতেই অর্ণব দূর থেকে মুহূর্তটার একটা ছবি তুলে নেয়।

রাতে খাওয়া শেষে আশ্বিন দাদিকে নিয়ে চলে যায়। অবশ্য অধরাকে বারবার যাওয়ার জন্য বলেছিলো কিন্তু অধরা যেতে রাজি হয়নি, তাই বাধ্য হয়ে অধরাকে রেখেই চলে যায় তারা।

🌻🌻

পরদিন বিকেলে অধরা কণা আর মাহিন একসাথে শপিং এর জন্য এসেছে। বিয়ের জন্য টুকটাক জিনিস পত্র এখন থেকেই কিনতে শুধু করেছে তারা।

অধরা কণা কথা বলতে বলতে রোড ক্রস করছে হঠাত একজনের উপর চোখ আটকে যায় অধরার। অধরা এক ধ্যানে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।

— কণা অধরার দিকে তাকিয়ে, ” ছোট, কি হয়েছে? ”

— অধরা অন্যমনস্ক হয়ে, ” উনি এখানে কি করছেন? ”

— ” উনি মানে? কে? কি হয়েছে? ”

— অধরা কণার দিকে তাকিয়ে, ” ইয়ে মানে, কিছু না আপুনি। ভেবেছিলাম আশ্বিনকে দেখেছি। ”

— ” ওহ আচ্ছা। চল এখন। ”

— ” আপু তোমরা যাও। আমি একটা জরুরী কাজ করে আসছি। এখনি চলে আসবো। ”

কথাটা বলে অধরা এক মুহূর্ত দেরি না করে চলে আসে। পিছন থেকে কণা অনেকবার ডাকলেও শুনেনি সে।

আসলে হঠাত অনুরিমাকে দেখে চমকে উঠে অধরা। নিজেকে অনেকটা লুকিয়ে একা একা কোথায় যেন যাচ্ছে। অধরার কাছে বিষয়টি সন্দেহ লাগায় সেও অনুরিমার পিছু নেয়।

অনুরিমা লুকিয়ে একটা কবরস্থানে প্রবেশ করে। অধরা একটা দূরে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

— ” উনি এই কবরস্থানে কি করছেন? এখানে তো উনার পরিবারের কারো কবর থাকার কথা না। তাহলে? ”

অধরা ধীরে ধীরে কবরস্থানে প্রবেশ করে দেখে অনুরিমা একটা কবরের সামনে বসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। দূর থেকে উনার কথাগুলো বোঝা যাচ্ছে না। তবে মনে হচ্ছে অনুরিমার আপন কেউ।

কিছুক্ষণ পর অনুরিমা চলে যেতেই অধরা কবরটার সামনে এসে দেখে এখানে নাম পরিচয় লেখা নেই। তাই ফোন বের করে জনিকে কল দেয়।

— ” হ্যা ছোট মনি। ”

— ” জনি ভাইয়া, অনুরিমা মামুনি আজ হঠাত বড় মসজিদের সামনের কবরস্থানে কারো কবর জিয়ারত করতে এসেছে। আপনি কি জানেন এটা কার কবর? ”

— ” না তো। আমার জানা মতে উনাদের একটা পারিবারিক কবরস্থান আছে। তাহলে সেখানে উনি কি করছেন? কবরটা কার জানতে পেরেছো? ”

— ” না ভাইয়া। আপনি একটু খোঁজ নিয়ে আমাকে জানান। কেনো জানি এখানে একটা বড় ধরনের রহস্য আছে মনে হচ্ছে। ”

— ” ঠিক আছে। আমি আজ কালের মধ্যেই সব তথ্য সংগ্রহ করে জানাচ্ছি। ”

— ” ঠিক আছে ভাইয়া। ”

অধরা ফোন রেখে কিছু একটা ভেবে বাসায় চলে আসে।

🌻রাতে🌻

অধরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আজকের কথাগুলো ভাবছে। অনুরিমা মামুনি লুকিয়ে কেনো সেখানে গেলো? আর কার কবর আছে সেখানে?
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই আশ্বিন ফোন করে। অধরা রিসিভ করতেই…

— ” কি ব্যাপার? আজকে তো একবারও ফোন দিলে না। শুনেছি শপিং করতে গিয়েছিলে। ”

— ” হ্যা। কণা আপু জোর করলো তাই…। আচ্ছা আশ্বিন, একটা কথা বলি? ”

— ” হুম বলো। ”

— ” বড় মসজিদের সামনের কবরস্থানে কি আপনার পরিবারের কারো কবর আছে? ”

— আশ্বিন কিছুক্ষণ ভেবে, ” না তো। কেনো? ”

— ” না, এমনি জিজ্ঞেস করেছি। ”

অধরার কথায় আশ্বিনের একটু সন্দেহ লাগলেও কিছু বলে না সে।
অপরদিকে, অধরা কোনভাবেই বুঝতে পারছে না অনুরিমা তাহলে কেনো সেখানে গিয়েছিলো।

—চলবে❤