#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::১৩
শাহিন হাসাদ রুমে প্রবেশ করে রাগে সবকিছু ভাঙতে শুরু করে। সাহিল চুপচাপ ঘরের এক কোণে বসে আছে।
শব্দ শুনে অনুরিমা দৌড়ে রুমে এসে দেখে শাহিন একে একে সব ভেঙে ফেলছে।
— ” এসব কি করছেন আপনি? সব ভেঙে ফেলছেন কেনো? ”
শাহিন রেগে দৌড়ে এসে অনুরিমার চুল টেনে ধরে….
— ” এই সব তোর জন্য হয়েছে। আজ তোর ছেলের জন্য এতোগুলো লোকের সামনে আমার সম্মানহানী হয়েছে। এতো বড় একটা বিজনেস ডিল আমি হারিয়েছি, শুধু তোর ছেলে আর ছেলের বউয়ের জন্য…। ”
কথাটা বলে অনুরিমার চুল ছেড়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। অনুরিমা পরে গিয়ে মাথায় একটু ব্যাথা পায়।
সাহিল বসে বসে সব দেখছে।
— অনুরিমা মাথায় হাত দিয়ে, ” আশ্বিন তার নিজ যোগ্যতায় এই ডিল পেয়েছে। এখানে আমার কি দোষ? আপনি কেনো আমার ছেলের পিছনে লেগে আছেন? ”
— সাহিল উঠে দাঁড়িয়ে, ” এনাফ মম। তোমার ছেলে শুধু আমি, বুঝতে পেরেছো? আর কিসের যোগ্যতা ওই ছেলের? বউয়ের সাহায্য নিয়ে প্রোজেক্ট হাতিয়ে নিয়েছে সে। ”
— অনুরিমা সাহিলের দিকে তাকিয়ে, ” কি করেছে অধরা? তোমার বাবার মতো টাকার বিনিময়ে ডিল কিনতে চেয়েছে? সে শুধু অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। ”
— শাহিন অনুরিমার চুল টেনে ধরে, ” তুই এসব কথা কিভাবে জানলি? তার মানে অধরার সাথে তুই গোপনে হাত মিলিয়েছিস। তাই না? ”
— অনুরিমা ব্যাথায় কুঁকড়ে ওঠে, ” আমি কিছুই করিনি।
অধরাকে ছোট বলে দূর্বল ভাববেন না। অধরা এমন মেয়ে না। আমি যে ভুল করছি আপনি হাজার চাইলেও অধরাকে দিয়ে সেই ভুল করাতে পারবেন না। ”
— শাহিন হাসতে হাসতে, ” এতোটা কনফিডেন্স? ঠিক আছে। তবে আমিও দেখে নিবো। বিজনেসের রাজ্যে একমাত্র আমিই রাজত্ব করবো। আর আমার পথে যে আসবে…। ”
কথাটা বলেই ভিলেন হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় শাহিন। সাহিলও তার বাবার সাথে সাথে চলে যায়।
এদিকে অনুরিমা মেঝেতে বসে নিরবে চোখের পানি ফেলে।
🌻পরদিন🌻
অধরা সকাল থেকেই বাসায় যাওয়ার জন্য একদম রেডি। আশ্বিন ল্যাপটপে কাজের ফাঁকে ফাঁকে আঁড়চোখে অধরার সব কর্মকান্ড দেখছে। সকাল থেকেই আশ্বিন নানাভাবে তার কাজের মাধ্যমে অধরাকে বোঝাতে চেয়েছে যে সে রেগে আছে। কিন্তু অধরা কোনভাবেই তার দিকে খেয়াল করছে না।
— অধরা রেডি হয়ে আশ্বিনের কাছে এসে, ” দেখুন তো, আমাকে কেমন লাগছে? ”
— আশ্বিন ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে, ” হুম। সুন্দর। ”
— অধরা ভ্রু কুঁচকে, ” আরে আপনি তো আমার দিকে তাকালেনই না। ”
— আশ্বিন বিরক্তি নিয়ে, ” বললাম তো সুন্দর লাগছে। আর, এতো রেডি হওয়ার কি আছে? নিজের বাসায়ই তো যাচ্ছো নাকি? ”
— অধরা বাঁকা চোখে তাকিয়ে, ” হ্যা। বিয়ের পর আজ প্রথম যাচ্ছি বাসায়।
ওফ হো, আপনি বুঝবেন না। আমি দাদি বুড়িকে জিজ্ঞেস করে আসছি। ”
কথাটা বলেই অধরা দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। এদিকে আশ্বিন রাগে একটানে ল্যাপটপ বন্ধ করে দেয়।
— ” ড্রামা কুইন একটা। সবকিছু উনি বুঝেন অথচ আমি যে রেগে আছি এটা উনি বুঝেন না। ”
কথাটা বলে আবার ল্যাপটপ অন করে আবার সাইডে রেখে, ” ধ্যাত। ভালো লাগে না। ”
🌻বিকেলে🌻
অর্ণব আর কণা অধরাকে নিতে চলে আসে। অধরা তাদের দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে। আশ্বিন আর অর্ণব কথা বলায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ে আর অধরা কণাকে নিয়ে রুমে চলে আসে।
— কণা সোফায় বসতে বসতে, ” বুঝলি ছোট, অবশেষে মাহিনকে নিজের করে পাবো। ভাগ্যিস সেদিন তুই ওই প্ল্যানটা দিয়েছিলি। ”
— অধরা একটা বাঁকা হাসি দিয়ে, ” আপুনি, তোমাকে বলেছিলাম না আমার আইডিয়া কখনো ফ্লপ হতেই পারে না। দেখো কিভাবে এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করেছি আমরা। ”
— কণা মুচকি হেসে, ” হুম ঠিক। বাই দ্য ওয়ে, আশ্বিন কি সবটা জানে? ”
— ” আরে তুমি কি পাগল হয়েছো আপুনি? আমাদের প্ল্যানের কথা ভুলেও উনাকে জানতে দেওয়া যাবে না। ”
” আমাকে কি জানতে দেওয়া যাবে না? ”
হঠাত কথাটা শুনে অধরা আর কণা চমকে ওঠে পিছনে ফিরে দেখে আশ্বিন দাঁড়িয়ে আছে। আশ্বিনকে দেখে দুজন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
— আশ্বিন রুমে প্রবেশ করে, ” কি হয়েছে? চোখগুলো এভাবে গোল গোল করে তাকিয়ে আছো কেনো? আর কি জানতে দিবে না আমাকে? ”
— অধরা অনেক কষ্ট হাসির চেষ্টা করে, ” ইয়ে মানে আসলে, আমি আপুনিকে বলেছি আমি সাতদিনের জন্য বাসায় যাচ্ছি। তাই আপুনিকে নিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবো সেটা নিয়েই কথা বলছিলাম।
আর আপনি সব শুনে ফেললেন। ”
— আশ্বিন কণার দিকে এক নজর তাকিয়ে অধরার দিকে তাকিয়ে, ” ওহ আচ্ছা। যাই হোক, অর্ণব তোমাদের ডাকছে। ”
— কণা জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে, ” জি ভাইয়া। এই ছোট, ভাইয়ার কাছে বিদায় নিয়ে তারাতারি নিচে আয়। ”
— অধরা কণার কথা শুনে আশ্বিনের তাকিয়ে, ” টাটা, বাই বাই। আমি যাচ্ছি, আপনি ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
বিদায় নেওয়া শেষ, চলো আপুনি। ”
— অধরার কণা শুনে কণা অধরার মাথায় আলতো করে চড় দিয়ে, ” তুই সবসময় গাধীই রয়ে গেলি। এভাবে বিদায় নিতে হয়? ”
— অধরা মাথায় হাত বুলিয়ে, ” আমি আবার কি করলাম? ”
অধরার কথা শুনে কণা আশ্বিনের দিকে একবার তাকিয়ে অধরার কানের কাছে এসে,
— ” আরে গাধী, তোর বরের কাছে বিদায় নিচ্ছিস। একটু রোমান্টিক ভাবে বিদায় নিবি। সব কিছু কি আমার বলে দিতে হবে? ”
কণার কথা শুনে অধরা ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ কণার দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে আশ্বিনের কাছে এসে ধপ করে মাটিতে বসে আশ্বিনের পা ছুঁয়ে সালাম করে,
— ” ওগো শুনছেন, আমি সাতদিনের জন্য বাবার বাসায় যাচ্ছি।
আপনি কিন্তু যথাসময়ে অনুষ্ঠানে চলে আসবেন। ভালোভাবে থাকবেন। আর যদি আমার কথা মনে পড়ে তবে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলবেন,
ভালো আছি, ভালো থেকো।
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো। ”
অধরার বলা কথাগুলো শুনে কণা তো প্রায় অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা। এদিকে আশ্বিন অনেক কষ্টে নিজের হাসি আটকে রেখেছে।
কণা অধরার মাথায় একটা চড় মেরে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। অধরা উঠে দাঁড়িয়ে কণার পিছু যেতে চাইলেই…
আশ্বিন অধরার হাত টেনে তাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলে। আচমকা এমন হওয়ায় অধরা চোখ বড় বড় করে আশ্বিনের দিকে তাকায়। আশ্বিনের এতোটা কাছে আসায় তার বুকর ভেতর যেনো কেউ হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে।
আশ্বিন চোখ বন্ধ করে অধরার কপালে কপাল ঠেকিয়ে শান্ত কণ্ঠে…
— ” এতোদিন থাকার কি খুব দরকার ছিলো? আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে তুমি? ”
— আশ্বিনের এমন শীতল কণ্ঠে অধরা হালকা কেপে ওঠে, ” এতোদিন কোথায়? মাত্র তো সাতদিন।
আর তাছাড়া আমি না থাকলে তো আপনি খুশিই হবেন। কেউ আপনাকে কাজের সময় এসে বিরক্ত করবে না। স্বাধীন ভাবে থাকবেন। একদম আগের মতো। ”
— ” আগের সাথে তুলনা করে কোন লাভ নেই। আগে তো তুমি ছিলে না। কিন্তু এখন তুমি আছো। আমার অভ্যাসে মিশে আছো।
এখন রোজ সকালে আমার দিন শুরু হয় তোমাকে দেখে..
আমার সকল কল্পনা আর চিন্তা থাকে তোমাকে ঘিরে।
দিন শেষে বাড়ি ফিরে প্রথম তোমায় খুঁজি..
তোমার কোলে মাথা রেখে সকল ক্লান্তি ভুলি। ”
কথাগুলো বলে আশ্বিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটু দূরে সরে এসে বললো…
— ” যাই হোক, সাবধানে যেও। পৌঁছে আমাকে ফোন দিয়ে জানাবে। মম ড্যাডকে আমার সালাম দিবে। আর, খবরদার কোন প্রকার ঝামেলা করবে না। ”
অধরা এতোক্ষণ মনোযোগ দিয়ে আশ্বিনের কথাগুলো শুনছিলো। আশ্বিন কথাগুলো বলে মুচকি হেসে অধরার কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে তার হাত ধরে নিচে নেমে আসে।
অধরা দাদির কাছে বিদায় নিয়ে অর্ণব আর কণার সাথে চলে আসে।
🌻এদিকে🌻
শাহিন চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভাবছে। সাহিল ধীরে ধীরে তার পাশে বসে..
— ” কি ভাবছো ড্যাড? ”
— শাহিল চোখ মেলে তাকিয়ে, ” ভাবছি, লাইফে প্রথম কেউ আমাকে চ্যানেল করলো। হুহহ, তাও আবার অধরার মতো একটা বাচ্চা মেয়ে। ”
— ” কিন্তু ড্যাড। তার কাজে কিন্তু প্রকাশ পায়নি সে একটা বাচ্চা মেয়ে। ”
— শাহিন সোজা হয়ে বসে, ” আগুন নিয়ে খেলার খুব ইচ্ছা অধরার। কিন্তু সে হয়তো জানে না আগুন নিয়ে খেললে সে নিজেই সেই আগুনে পুড়ে যাবে। ”
— ” কি করবে তুমি? ”
— ” অধরা যদি আমার পথের কাঁটা হতে চায়, তবে আমি সেই কাঁটা তুলে ফলে দিবো। ”
কথাটা বলেই একটা বাঁকা হাসি দেয় শাহিন।
—চলবে❤