আমি তোমার গল্প হবো পর্ব-২৬

0
568

#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::২৬

🌻পরদিন🌻

শাহিন রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো তখন সাহিল রুমে এসে,

— ” ড্যাড, শুনেছো তুমি? আশ্বিনরা কাল দেশে ফিরে এসেছে। ”

— শাহিন ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে, ” কখন এসেছে? আর তাদের সাথে কি আর কেউ ছিল? ”

— ” কাল সকালেই ফিরে এসেছে। সাথে তো অধরা, তার দাদি ছাড়া আর কেউ ছিলো না।
আরো শুনেছি, তারা নাকি আজ রাতে মিস্টার জামালের মেয়ের বার্থডে ফাংশনেও আসবে। ”

— শাহিন তাচ্ছিল্য করে, ” হুহহহ। বেশ আনন্দেই আছে মনে হচ্ছে।
ভালো। তাদের খুশি বেশি দিন স্থায়ী থাকতে দিবো না। কিছু একটা তো করাই উচিত। ”

— সাহিল কিছুক্ষণ চুপ থেকে, ” কি করবে তুমি? ”

— ” দেখা যাক, কি করতে পারি। ”

কথাটা বলেই একটা বাঁকা হাসি দেয় শাহিন। সাহিল একটু দূরে দাঁড়িয়ে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।

🌻🌻

অধরা অনেকক্ষণ ধরে রেডি হয়ে বসে আছে অথচ আশ্বিনের অফিস থেকে ফিরে আসার কোন নামই নেই।

অধরা রাগে গজগজ করতে করতে দাদির রুমে এসে ধপ করে দাদির পাশে বসে,

— ” উফ অসহ্য! সেই কখন থেকে রেডি হয়ে বসে আছি।
বলি কি, আসতে যখন এতো দেরি হবে তাহলে আমাকে বারবার ফোন করে রেডি হয়ে থাকতে বললো কেনো? আজব পাবলিক! ”

— দাদি মুচকি হেসে, ” আশ্বিন হয়তো ভেবেছিলো তোর রেডি হতে অনেক টাইম লাগবে। তাই আগে থেকেই বলে রেখেছিলো। ”

দাদির কথা শুনে অধরা গাল ফুলিয়ে বসে আছে। আশ্বিনের প্রতি অনেক বেশি রাগ হচ্ছে তার।

——————-

কিছুক্ষণ পর আশ্বিন এসে অধরাকে নিয়ে ফাংশনের জন্য রওনা দেয়। গাড়িতে উঠে অধরা আশ্বিনের থেকে মুখ ফিরিয়ে বসে আছে। আশ্বিন কয়েকবার আড়চোখে তাকিয়ে বিষয়টা লক্ষ্য করলেও, কিছু বলেনি সে।

ফাংশনে প্রবেশ করতেই মিস্টার এবং মিসেস জামাল তাদের স্বাগত জানাতে আসে। জামাল আশ্বিনকে জড়িয়ে ধরে,

— ” আরে আশ্বিন চৌধুরী। আপনি এসেছেন, আমরা খুব খুশি হয়েছি। ”

আশ্বিন মুচকি হেসে উনার সাথে কথা বলতে বলতে ভেতরে চলে যায়। আর অধরা মিসেস জামালের সাথে উনার মেয়ের কাছে চলে আসে।

আশ্বিন জামালের সাথে কথা বলছিলো তখন অর্ণব তার পাশ এসে দাঁড়ালো। আশ্বিন অর্ণবের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।

— অর্ণব আশ্বিনের কাধে হাত রেখে, ” কিরে, আসতে এতো দেরি হলো কেনো? ”

— আশ্বিন রহস্যজনক হাসি দিয়ে, ” একটা ডিল কনফার্ম করে এসেছি। তোকে পরে সব খুলে বলবো। ”

— ” হুম, ঠিক আছে।
বাই দ্য ওয়ে, আমার ছোট্ট বোনটা কোথায়? ”

আশ্বিন ইশারা দিয়ে অধরাকে দেখিয়ে দিতেই অর্ণব মুচকি হেসে সেখানে চলে যায়। আশ্বিন সেদিকে একনজর তাকিয়ে চলে আসতে নিতেই দেখে শাহিন তার দিকে এগিয়ে আসছে।

— শাহিন বাঁকা হাসি দিয়ে, ” কি খবর আশ্বিন? দিনকাল কেমন যাচ্ছে? ”

— আশ্বিন নিজের রাগকে শান্ত রেখে, ” হুম, আলহামদুলিল্লাহ ভালোই। ”

— ” হুমম। শুনেছি কিছুদিন আগে অধরাকে নিয়ে ইতালি ঘুরতে গিয়েছিলে। অবশ্য নতুন বিয়ে, এখনি তো ঘুরাঘুরি করবে। তাই নয় কি? ”

— আশ্বিন মুচকি হেসে, ” হ্যা সেটাই।
বাই দ্য ওয়ে, মনে হচ্ছে আমার সম্পর্কে অনেক খোঁজ খবর রাখা হয়েছে। ”

— শাহিন হাসতে হাসতে, ” কথায় আছে না, খবর বাতাসে উড়ে। শুনেছি কোন এক ভাবে।
আর, তোমাকে এতোদিন ধরে কোন মিটিংয়ে উপস্থিত না দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম। ”

— আশ্বিন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে, ” ঠিক বলেছেন।
কোন কথাই বেশিদিন গোপন থাকে না। সত্য যতো দেরিতেই হোক, একদিন না একদিন প্রকাশ পেয়েই যায়। ”

আশ্বিন কথাটা বলে মুচকি হাসি দেয়। পক্ষান্তরে শাহিন কথাটা শুনে চুপ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে থেকে পরমুহূর্তে আবার মুচকি হাসি দেয়।

— আশ্বিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে, ” শুনেছি এ.আর কম্পানির সাথে আপনার বিজনেস ডিল বাতিল হয়ে গিয়েছে…।
হঠাত কি এমন হলো যে ডিল বাতিল করতে হলো? ”

— শাহিন একটা ভাব নিয়ে, ” আমি ইচ্ছে করেই ডিলটা বাদ দিয়েছি।

জানোই তো, আমার কাছে প্রতিনিয়ত নতুন সব বিজনেস ডিল আসে। আমি তাদের একজনের কাছে ভালো অফার পেয়েছি তাই এ.আর কম্পানির সাথে ডিল বাদ দিয়েছি। ”

— ” ওহ আচ্ছা। ”

— শাহিন বাঁকা চোখে তাকিয়ে, ” কিন্তু তুমি এই কথা কিভাবে জানলে? এটা তো তোমার জানার কথা না। ”

— আশ্বিন মুচকি হেসে, ” জেনেছি।
কারণ আজ বিকেলেই এ.আর কম্পানি আমার সাথে তাদের বিজনেস অফার নিয়ে এসেছিলো। তাদের কাছেই শুনেছি, আপনার জন্য নাকি কম্পানির অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে তাই তারা ডিল বাতিল করে আমাকে অফার দিয়েছেন।

যাই হোক, একদিনে দুটো গুড নিউজ। প্রথমত মিস্টার জামালের সাথে আজ থেকে নতুন প্রোজেক্ট শুরু করেছি আর এ.আর কম্পানিও এসেছেন তাদের সাথে বিজনেস করতে। ”

— শাহিন কিছুক্ষণ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে, ” গুড। তোমাকে অনেক অভিনন্দন। ”

— ” ধন্যবাদ। ”

কথাটা বলে আশ্বিন মুচকি হেসে সেখানে থেকে চলে আসে। শাহিন হাত শক্ত করে ধরে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।

আশ্বিন অধরাকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার কাছে এসে,

— ” কি হয়েছে? এভাবে মুখ ফুলিয়ে রেখেছো কেনো? ”

— অধরা বাঁকা চোখে তাকিয়ে, ” কারণ, আমি আপনার উপর রেগে আছি। ”

আশ্বিন অধরার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে অধরাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে এসে অধরাকে জড়িয়ে ধরে।

আচমকা কেউ এমন করায় অধরা চমকে উঠে নিচে তাকিয়ে দেখে একটা ছোট্ট বাবু তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিচ্ছে। অধরাও মুচকি হেসে বাবুকে কোলে তুলে নেয়।

আশ্বিন অধরার কোলে কিউট একটা পিচ্চি দেখে মুচকি হেসে আলতো করে বাবুর গালে হাত বুলিয়ে দেয়।

এদিকে,

দূর থেকে অনুরিমা অধরা আর আশ্বিনের দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে।
কি সুন্দর লাগছে তাদের দুজনকে একসাথে।
ভাগ্য তাকেও একটা সুযোগ দিয়েছিলো অথচ সে নিজ ভুলে তা হারিয়েছে।
কথাটা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনুরিমা।

অধরা বাবুকে কোলে নিয়ে তার সাথে কথা বলছে আর আশ্বিন মুচকি হেসে তাদের কার্যকলাপ দেখছে। হঠাত বাচ্চাটার মা তাদের কাছে এসে মুচকি হেসে,

— ” আমি দুঃখিত। মেয়েটা অনেক দুষ্টু হয়ে গিয়েছে, হুট করেই দৌড়ে চলে যায়। অনেক বিরক্ত করেছে তাই না? ”

— অধরা বাবুটার কপালে চুমু খেয়ে, ” আরে না না। অনেক লক্ষী একটা মেয়ে। আমার তো তার সঙ্গে গল্প করতে ভালোই লাগছিলো। ”

— বাবুর মা মুচকি হেসে, ” আপনার স্বামী? ”

অধরা মুচকি হেসে মাথা নেড়ে হ্যা বোঝায়।

— ” মাশাল্লাহ, আপনাদের দুজনকে কিন্তু একসাথে খুব মানিয়েছে।
ইনশাল্লাহ খুব শীঘ্রই আপনাদের কোল জুড়েও যেনো একটা ছোট্ট পরী আসে। অনেক দোয়া রইল। ”

কথাটা বলে তিনি মুচকি হেসে বাবুকে নিয়ে চলে যায়।

অধরা এতোক্ষণ চুপচাপ উনার কথাগুলো শুনছিলো। তিনি চলে যেতেই একবার আড়চোখে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে দেখে আশ্বিন তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আশ্বিন ধীরে ধীরে অধরার কানের কাছে মুখ এনে,

— ” উনি কিন্তু ঠিকই বলেছেন। এমন একটা ছোট্ট পরী আমাদের কাছে থাকলে কিন্তু মন্দ হয় না। ”

আশ্বিনের কথা শুনে মুহূর্তেই অধরার গাল রক্তিম বর্ণ ধারণ করে।
আশ্বিন অধরার অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে ওঠে তা দেখে অধরা আশ্বিনকে হাতের দিয়ে আলতো করে খোঁচা দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
আর আশ্বিন অধরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে।

🌻🌻

শাহিন রেগে নিজের রুমে প্রবেশ করে পায়চারি করতে থাকে। সাহিল তার রুমের পাশ কেটে যাওয়ার সময় শাহিনকে এভাবে দেখে রুমে ঢুকে,

— ” কি হয়েছে ড্যাড? ”

— ” আশ্বিন নিজেকে অনেক চালাক মনে করছে। খুব সুন্দর ভাবে আমার বিজনেসের ডাউন করানোর চেষ্টা করছে। ”

— ” মানে? ঠিক বুঝলাম না। আবার কি করেছে সে? ”

— ” আমার বিজনেস ডিলারের সাথে সে ডিল করছে। আমাকে টেক ওভার করতে চাইছে।
বাট তার এই আশাকে আমি বাস্তবে রুপে নিতে দিবো না। তার চাল তার উপরেই প্রোয়গ করবো।
সে যা চায়, তাই হবে। দ্যা গেইম ইজ বিগেইন নাও। ”

কথাটা বলে একটা বাঁকা হাসি দেয় শাহিন।

—চলবে❤