#নীলচে_তারার_আলো
#নবনী_নীলা
#পর্ব_১৬
” বসতে বলেছি। নাহলে সবার সামনে কোলে তুলে নিবো।”,বলেই শুভ্র এগিয়ে আসতেই হিয়া ফট করে হুইলচেয়ারে বসে পড়লো। এই ছেলের কোলে বসার তার কোনো শখ নেই। যে ভরা রাস্তায় কোলে নিতে পারে সে যে এইখানে নিবে না তার কি গ্যারেন্টি!
ক্লিনিকে নিয়ে গেছে সেটা পর্যন্ত ঠিক ছিলো হটাৎ আবার পুলিশ স্টেশনে আসার কি দরকার! ছোটো বেলা থেকেই পুলিশ দেখলে হিয়ার ভয় লাগে। শুভ্র পুলিশ স্টেশনের সামনে গাড়ি থামলো। হিয়া ক্লান্ত দৃষ্টিতে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা কি এখন পুলিশে ডাইরি করবে? হুহ কি লাভ হবে ডাইরি করে? ডাইরির পাতা বন্ধের সাথে সাথে এই অভিযোগটাও কর্পূরের মতন উধাও হয়ে যাবে। শুভ্র গাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেই হিয়া ঘুমের ভান ধরলো। এই লোকটা এখন যদি থানার ভিতরেও যেতে বলে? বলতেই পারে!সে থানায় পা দিবে না, জীবনেও না।
হিয়াকে সম্পূর্ন ভুল প্রমাণ করে শুভ্র একাই থানার ভিতরে গেলো। হিয়া হালকা চোখ খুলে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো শুভ্র একাই যাচ্ছে। শুভ্র এমন ভঙ্গিতে যাচ্ছে যেনো এটা থানা নয় তার মামার বাড়ি। হিয়া গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বের করে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। এই শুভ্রনীল আহমেদ অতিরিক্ত পরিমাণে ভদ্র লোক। নিশ্চই সে মারামারি করতে জানে না, মারপিট করতে জানা থাকলে কেউ পুলিশ স্টেশনে আসে না।
হিয়ার আরো অবাক হলো যখন কিছুক্ষণ পর থানার অফিসার শুভ্রের সাথে বেড়িয়ে আসলো। অফিসারটা শুভ্রের বয়সী মনে হচ্ছে। সে অফিসার শুভ্রের গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এসে হিয়াকে বললো,” ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নামগুলো তো শুভ্র বলেই দিয়েছে। আমার জন্যে এখন ওদের খুঁজে পাওয়াটা সহজ হবে।”
হিয়া হা করে শুভ্রের মুখটা একবার দেখলো। নাম বলে দিয়েছে মানে? এই লোক নাম জানে কিভাবে? উনি কি ডাক্তারি ছেড়ে গোয়েন্দা হয়েছেন। হিয়া অফিসারটার দিকে তাকালো তিনি আবার বললেন,” আমি অপু শুভ্রের মামাতো ভাই।” বলেই শুভ্রের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,” কে এই মেয়ে?
শুভ্র আড় চোখে অপুর দিকে তাকালো। এই পরিচয় পর্বটা তার বিরক্তিকর লাগছে। হিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই শুভ্র গাড়ি স্টার্ট দিয়ে অপুর উদ্দেশ্যে বললো,” আমার তাড়া অছে আজ।”বলেই গাড়ি ঘুরিয়ে নিলো। আগে হিয়ার মনে হতো শুভ্র শুধু তার সাথেই এমন করে কিন্তু না এই ডাক্তার সাহেব তো সবাইকে ওষুধের উপর রাখে। হিয়া কিছুক্ষন চুপ করে থেকে জিজ্ঞেস করলো,” আচ্ছা আপনি ওই ছেলেগুলোর নাম জানলেন কিভাবে? ওদের তো আপনি দেখেননি পর্যন্ত।”
শুভ্র আড় চোখে হিয়ার দিকে তাকালো তারপর বললো,” সেটা তোমার জানতে হবে না।”
” হ্যা আমার কিছুই জানা লাগবে না। আপনি সব জেনে বসে থাকুন। ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে সেখানেও ডাক্তারের সাথে আপনি কথা বললেন এই থানায় এনে গাড়ীতে বসিয়ে রাখলেন। যখন আমার জানার দরকার নেই তাহলে আমাকে আনলেন কেনো?”, বলেই হাপিয়ে গেলো হিয়া। বিরক্তি লাগছে তার। হিয়া হাপিয়ে উঠে চুপ করে আছে।শুভ্র গাড়ির ড্রয়ার থেকে একটা পানির বোতল হিয়ার দিকে এগিয়ে দিল। হিয়ার রাগ হচ্ছে পনির বোতলটা নিতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু তৃষ্ণাও পেয়েছে। হিয়া ফট করে শুভ্রের হাত থেকে পনির বোতলটা নিলো। শুভ্রের গোমড়া মুখটা তার অসহ্য লাগছে। যদিও ক্লিনিকে যাবার পর তার ব্যাথাটা কমেছে। তাও পাশে কেউ এমন মুখ করে বসে থাকলে কেমন লাগবে?
হিয়া সর্ব শক্তি দিয়ে চেষ্টা করেও বোতলটা খুলতে পারলো না। বোতলটাও লোকটার মতন। হিয়া গাল ফুলিয়ে বোতলটা একপাশে রেখে দিলো। শুভ্র বিরক্তি নিয়ে বোতলটার দিকে তাকালো।তারপর সামনে গাড়িটা থামিয়ে, বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে বোতলটা হাতে নিয়ে খুললো। তারপর হিয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,” নাও।”
শুভ্রের এমন শান্ত ব্যাবহার হিয়ার ঠিক হজম হচ্ছে না।হিয়া হাত বাড়িয়ে পানির বোতলটা নিলো। তারপর পানি খাওয়া শেষ করতেই শুভ্র গাড়ি স্টার্ট দিলো।
বাড়ি ফিরতে এতো দেরী হওয়ায় রবীউল সাহেব ভীষণ চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু করিডোর দিয়ে শুভ্রের গাড়িতে হিয়াকে ফিরতে দেখে তিনি আরো বেশ অবাক হলেন। এই ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা তিনি খুঁজে পেলেন না।
শুভ্র গাড়ি থেকে নেমে যেতেই হিয়া তাড়াহুড়ো করে রীতিমত দৌড়ে শুভ্রের সামনে এসে দাড়ালো। আজকের ঘটনাতে শুভ্রের মেজাজ এমনেই বিগড়ে ছিল হিয়াকে দৌড়াতে দেখে আরো রেগে গিয়ে বলল,” আবার দৌড়াচ্ছ কেনো? ছটফট না করে থাকতে পারো না?”
হিয়া চোখ পিট পিট করে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।সে একটা কথা শুভ্রকে বলবে লোকটা মানবে কিনা কে জানে? এমনই অগ্নিকুন্ড হয়ে আছে। শুভ্র চোখ বুজে নিজের রাগ সামলে বললো,” পায়ের ব্যাথা কি কমেছে?”
হিয়া হা সূচক মাথা নাড়ল।
” আচ্ছা, তাহলে ভিতরে যাও।”,বলে চলে যেতেই হিয়া আবার এসে শুভ্রের সামনে দাড়ালো। এগুতে গিয়েও থমকে দাড়াতে হলো শুভ্রকে। শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,
” তুমি কি আবার কোনো ভাবে আমার কোলে করে ভিতরে যেতে চাইছো? লিসেন ডোন্ট টেক ইট ফর গ্র্যান্টেড।”
হিয়া হকচকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে দু পা পিছিয়ে হাত দিয়ে না না করতে করতে বললো,” আমার একটা কথা ছিল।”
শুভ্র নিজের দিকে আঙ্গুল দিয়ে বললো,” আমার সাথে? আর ইউ সিউর?”
হিয়া হা সূচক মাথা নেড়ে বললো,” হুম,আজ যা হয়েছে সেটা আপনি কাউকে বলবেন না।”
শুভ্র হিয়ার কথায় এবার প্রচুর বিরক্ত হয়ে হিয়াকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিতেই হিয়া আবারো সামনে এসে দাড়াতেই শুভ্র বললো,” দেখো, একদম আমাকে রাগিয়ে দিয়ো না। আর তোমার এইসব স্টুপিড কথা শোনার আমার ইচ্ছে নেই।”
” আপনি তো এমনেই রেগে থাকেন আরেকটু রাগলে কি হবে? হয়তো ঘূর্ণিঝড়ের বদলে সাইক্লোন আসবে, আসলে আসুক। কিন্তু প্লীজ আপনি বাসার কাউকে বলবেন না।”, কাদো কাদো চেহারা করে বললো হিয়া। তাতে কি কোনো লাভ হলো? শুভ্র আবারো পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।
শেষ এবার এই ঘটনা যে কতদূর গড়াবে তা কেউ জানে না। রবীউল সাহেব যদি কলেজ বদলে দেয়।হিয়া আস্তে আস্তে বাসায় ঢুকলো শুভ্রের পিছনে পিছনে। শুভ্র এসেই সোফায় গা হেলিয়ে দিলো। হিয়া চুপি চুপি নিজের রুমে যাওয়ার আগেই রবীউল সাহেব সামনে এসে বললো,” কিরে এতো দেরী হলো কেনো আজ?”
হিয়া হকচকিয়ে তাকালো তারপর আমতা আমতা করে বলল,” পড়ে গেছিলাম। ”
” পড়ে গিয়েছিলি মানে? বেশি ব্যাথা পেয়েছিস? কিভাবে পড়লি?”, চিন্তিত হয়ে প্রস্ন করলো রবীউল সাহেব।
এবার সে কী বলবে? হিয়া এদিক সেদিক তাকিয়ে বলল,” বে…..বেশি ব্যাথা পাই নি।”
” কিন্তু পড়লি কিভাবে?”, আবারো প্রশ্ন করলেন তিনি। হিয়া আমতা আমতা করে বলল,” হোচট খেয়ে পড়ে গেছি।”
” দেখে শুনে হাটবি না?”,বকা দিয়ে বললেন রবীউল সাহেব। তারপর আস্তে আস্তে বললেন,” শুভ্রের গাড়িতে করে এলি কি করে?”
উফফ মিথ্যে জিনিটাই ভেজাল একটা বলে থামা যায় না একটার পর একটা বলতে থাকতে হয়। হিয়া আড় চোখে একবার শুভ্রের দিকে তাকালো শুভ্র চোখ বন্ধ করে আছে। তারপর হিয়া কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললো,” আমি লিফট চাইলাম। পড়ে গেছিলাম যে তাই। প্রথমে দিতে চায় নি,পড়ে আপনার কথা বলতেই রাজি হয়। আর রাস্তায় এতো জ্যাম ছিলো প্রায় দুইঘন্টা জ্যামে বসে ছিলাম।”
রবীউল সাহেব আড় চোখে একবার ছেলের দিকে তাকালেন। তারপর হিয়াকে বললো,” আচ্ছা গিয়ে তাহলে ফ্রেশ হয়ে নে।”
রবীউল সাহেব চলে যাচ্ছিল হিয়া আশে পাশে তাকিয়ে বললো,” সবাই কোথায়?”, বাড়িতে এলেই শুভ্রের ফুফুর আওয়াজ তো কানে আসারই কথা। কিন্তু বাড়িটা একদম ঠান্ডা হয়ে আছে। রবীউল সাহেব যেতে যেতে বললো,” ওরা কোথায় যেনো গেছে সেই সকালে। মোহনাকেও সঙ্গে নিয়ে গেছে।”
রবিউল সাহেব চলে যেতেই হিয়া দম ফিরে পেলো। উফফ যাক এই লোকটা মুখ বন্ধ রেখেছে। শুভ্র উঠে দাড়িয়ে সিড়ির দিকে এগুতে এগুতে কিছুদূর গিয়ে আবার থেমে গেলো। শুভ্রের পিছু পিছু হিয়া উঠছিলো কিন্তু শুভ্রর থেমে যাওয়ায় আরেকটু হলেই শুভ্রের সাথে একটা ধাক্কা খেতো সে। হিয়া চুপ করে সিড়ির একপাশে দাঁড়ালো অন্য সময় হলে সে চেঁচিয়ে উঠতো কিন্তু এখন সে ভদ্র বাচ্চা। শুভ্র দুই সিড়ি নীচে নেমে হিয়ার সামনে এসে দাড়ালো। হিয়ার বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে।আবার কি কিছু হয়েছে নাকি সে কিছু করেছে? শুভ্র এগিয়ে এসে রেলিংয়ের দুপাশে হাত রাখতেই হিয়া জড়সড় হয়ে দাঁড়ালো।
শুভ্র স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ হিয়ার বিচলিত চেহারার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,” কাল থেকে ড্রাইভার তোমাকে নিতে যাবে, গাড়িতে আসা যাওয়া করবে। আর যদি সেটা না করো তাহলে বাবাকে আমি নিজে গিয়ে সবটা বলবো। এরপর বাবা কি করবে সেটা তো ধারণা করতেই পারছো?”বলেই শুভ্র সিড়ি বেয়ে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো।
হিয়া থ মেরে দাড়িয়ে রইলো। হটাৎ শুভ্রের এতো মাথা ব্যাথা কেনো তাকে নিয়ে। হিয়া কিছুই বুঝতে পারলো না। লোকটা কি একটু হলেও তার জন্যে ভাবে? সারাদিন শুভ্র রাগ করে থাকলেও হিয়ার প্রতি শুভ্রের এই চিন্তাটুকু হিয়ার মাঝে নতুন অনুভূতির জন্ম দিলো। লোকটা এতটাও বাজে না।
🦋 সাহারা খাতুন,রাবেয়া ফুফু আর মোহনার ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হলো। রাবেয়া আক্তারের এই বাড়িতে আসার একটা কারণ হলো তিনি নিজের ছেলের জন্যে মেয়ে খুঁজছেন। ছেলেটাকে বিয়ে দিয়ে দিতে পারলে তিনি চিন্তা মুক্ত হোন। মনের মতো মেয়ে পাচ্ছেন না, পেলেও পরিবার ভালো না। রাতে খাবারের পর তিনি এসে শুভ্রের পাশে বসলেন। শুভ্র কফি হাতে সোফায় বসে ছিল।
রাবেয়া ফুফু বললেন,” এতো ব্যাস্ততা তোর! ফুফুর সাথে তো কথা বলার সময়ও নেই।”
শুভ্র কফিটা নামিয়ে রেখে বললো,” তুমি রাগ করেছো নাকি?”
” রাগ করলে কি করবি? রাগ ভাঙ্গতে পারবি?”, ফুফুর কথায় শুভ্র বললো,”চেষ্টা করতে পারি।”
এইসবের মাঝেই রবীউল সাহেব একপাশে টিভি ছেড়ে খবর শুনতে বসেছেন মাত্র, তখনই রাবেয়া ফুফু বলে উঠলেন,” এই রবীউল।”
রবীউল সাহেব নিজের বোনের দিকে তাকিয়ে বললেন,” বোলো বুবু।”
” তোর বন্ধুর মেয়েটাকে আমার ভালো লেগেছে। খুব মায়াবী একটা চেহারা।”,মোহনা পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো ফুফুর কথা শুনে থেমে এইদিকে আসতে আসতে বললো,” বন্ধুর মেয়ে? বাবার কোন বন্ধুর মেয়েকে আবার তোমার পছন্দ হলো?”
রবীউল সাহেবের সাথে সাথে শুভ্রও কৌতূহল নিয়ে তাকালো। রাবেয়া ফুফুর উত্তরে সবচেয়ে বেশি চমকে গেছে শুভ্র। কারণ এই উত্তরটা শুভ্রের চিন্তার বহিরে ছিলো। রাবেয়া ফুফুর হিয়াকে পছন্দ হয়েছে। তিনি আরো বললেন,” মেয়েটার মামার সাথে আমি কথা বলতে চাই। তুই ওনাকে আসতে বল নয়তো আমি নিজে গিয়ে দেখা করে আসবো।”
মোহনা অবাক হয়ে বললো,” আরে এক্ষুনি কিসের কথা রায়হানের যদি অন্য কাউকে পছন্দ থাকে! তুমি ওকে জোর করবে নাকি?”
” ধুর বোকা মেয়ে, আমি মা। আমি জানি না? আমার ছেলের পছন্দের কেউ থাকলে ঠিক বুঝতাম। আর আমি এমনিতেই একটু দেখা করতে চাই হিয়ার মামার সাথে।”, বলতে বলতে নিজের ভাইয়ের দিকে তাকালো।
রবীউল সাহেব এতক্ষণ শুভ্রের দিকে গম্ভির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন।মনে মনে তার ভীষন রাগ লাগছে।রাগ সামলে তিনি ভারী গলায় বললেন,” হিয়ার মামাকে ডাকতে হবে না। এখন আমি ওর গার্জিয়ান। এতো পছন্দ হলে রায়হান কে এসে হিয়াকে দেখতে বল। পছন্দ হলে সেটা পরে ভাবার বিষয়।”,বলেই তিনি গট গট করে হেঁটে চলে গেলেন।
কথাগুলো একপ্রকার না ভেবেই ক্ষোভের বশেই বললেন তিনি। যে জিনিসের মর্যাদা কেউ রাখতে জানো না সেটা তার জন্যে না।
শুভ্র অনেক বেশি অবাক তার বাবার কথা শুনে। বাবা চাইছে কি? আমনা আমনি শুভ্রের কপালের একটা ভাজ পড়লো। মোহনা হতভম্ভ হয়ে দাড়িয়ে আছে। একটু আগে তার বাবা কি বলে গেলো?
[ #চলবে ]
#নীলচে_তারার_আলো
#নবনী_নীলা
#পর্ব_১৭
কোমড়ে ওড়না বেধে নূপুর পায়ে হিয়া গানের তালে নাচছে। গান চলছে,
মম চিত্তে নীতি নৃত্যে কে যে নাচে
তা তা থই থই তা তা থই থই…।
অনেকদিন পর যেনো তার আনন্দের বাধ ভেঙেছে। এর আগে এতো আয়োজন করে সে কখনো নাচেনি। নাচের এক পর্যায়ে হটাৎ গানটা বন্ধ হয়ে গেলো। হিয়া ভ্রু কুঁচকে পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখল শুভ্র একদম তার কাছে দাড়িয়ে আছে। হিয়া হকচকিয়ে পিছাতে গিয়ে পড়ে যেতেই ভয়ে শুভ্রের শার্টের কলার চেপে ধরলো। আর চোখ মুখ কুঁচকে বন্ধ করে ফেললো, আস্তে আস্তে চোখ খুলে শুভ্রের দিকে তাকাতেই শুভ্রের দিকে যেনো চোখ আটকে গেলো হিয়ার। এতো সুন্দর হয় কিভাবে একটা মানুষ? লালচে ঠোঁট, সুন্দর চোখ দুটি চিকন ফ্রেমের চশমায় বন্দি সাদা ফরমাল শার্টে যেনো পুরো প্রিন্স। সামনের চুল গুলো এসে বিধেছে কপালে। শুভ্রের কপালে হালকা ভাজও পড়েছে। তবুও দেখতে সুন্দর লাগছে। হিয়ার মনে সূক্ষ্ম একটা ইচ্ছে জাগলো, হাত বাড়িয়ে এই বদরাগী ছেলেটাকে ছুঁতে ইচ্ছে করছে তার। হিয়া হাত বাড়িয়ে শুভ্রের গাল স্পর্শ করতেই বিকট শব্দে হিয়ার ঘুম ভেঙে গেলো। কোনো কিছু ভাঙার আওয়াজে লাফিয়ে উঠে বসে পড়লো সে।
হিয়া দুই হাত দিয়ে নিজের বুক চেপে ধরলো। হৃদপিন্ডটা রীতিমতন লাফাচ্ছে। এটা কেমন স্বপ্ন? স্বপ্নের মধ্যে শুভ্রর প্রতি এতো মুগ্ধ হওয়ার কারণ কি? শুভ্রের চেহারা এখনো তার চোখের সামনে ভাসছে। হিয়ার গাল দুটো টমেটোর মতন লাল হয়ে আছে। হিয়া নীচের ঠোঁট কামড়াতে লাগলো। তারপর নিজেকে বুঝলো। এইটা একটা স্বপ্ন! শুধু স্বপ্ন,এতো… এতো… লজ্জার কি আছে? এইটা কোনো ভালো স্বপ্ন না এইটা হলো দুঃস্বপ্ন। তারপর মাথা থেকে সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে পাশের ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো, দেরী হয়ে গেছে। এই বদমাইশ ডাক্তারের স্বপ্ন দেখতে গিয়ে আজ এতো দেরি। হিয়া লাফিয়ে বিছানা থেকে নেমে পড়লো। তারপর চটজলদি রেডি হয়ে গেলো। এক পাশের বেনি করতে করতে ব্যাগ নিয়ে নিচে নামলো হিয়া। বেড়িয়ে যেতেই সামনে পড়লো রাবেয়া ফুফু। হিয়া যেতে যেতে বলল,” কেমন আছেন,ফুফু?”
রাবেয়া ফুফু হাতের ইশারায় হিয়াকে ডাকলেন। হিয়া গাড়ির কাছে গিয়েও ফিরে আসতেই ফুফু বললেন,” এইভাবে চুল বেধেছ কেনো? কলেজে যেতে যেতেই তো খুলে যাবে চুল।” বলেই তিনি হিয়ার চুলে বেনী করে দিলেন। হিয়া ফুফুর এই ব্যাবহারে অবাক। আচ্ছা এই বাড়ির সবাই এতো ভালো কেনো?
এইদিকে সাহারা খাতুন চটে আছে। রান্নাঘরে শুভ্রের ফুফু নেই তাই তিনি নিজের মেয়েকে বললেন,” তোর বাবা পেয়েছে টাকি? এইটা কি খেলা চলছে? তোর ফুফুকে না বলতে পারলো না। তার ইচ্ছে মতোন হবে নাকি সবকিছু। ছয় মাস হয়নি বিয়ে হয়েছে এর মাঝে নতুন নাটক শুরু করেছে তারা ভাই বোন মিলে।”, কাল রাত থেকেই প্রচন্ড রেগে আছেন সাহারা খাতুন।
মোহনা তাকে শান্ত করতে বললো,” আরে ফুফুর কথাকে এতো সিরিয়াসলি নেওয়ার কি আছে? আর রায়হানের হিয়াকে পছন্দ নাও হতে পারে। কিংবা ওর নিজস্ব পছন্দ আছে হয়তো।”
” হ্যা, তোর ফুফুকে তো চিনিস না। কম মেয়ে সে দেখেনি ছেলের জন্যে। শেষমেষ আমার ছেলের বউকে তার পছন্দ করতে হলো। এরা ভাই বোন মিলে আমার ছেলে জিবনটা নরক বানাবে।”,
মোহনা ভ্রু কুঁচকে বললো,” তুমি এতো রিয়েক্ট করছো কেনো? তোমার ছেলেরই তো এই বউ পছন্দ না।সমস্যা নাই নতুন বউ আনতে পারবা ছেলের জন্যে।”
” নাহ্ তোর ফুফুর নজর সব সময়ে আমার ছেলের সবকিছুর দিকে। অসহ্য লাগে আমার এইসব। তোর বাবাকে তো আমি আর সহ্যই করতে পারছি না।”, মোহনা নিজের মাকে শান্ত করতে ব্যাস্ত হলো। সাহারা খাতুনকে বিয়ের পর থেকে এই মহিলার মানে শুভ্রের ফুফুর অনেক কথা সহ্য করতে হচ্ছে। এইবার সে একদম বিরক্ত।
কলেজে দিবার আরেক যন্ত্রণা। দিবা নাকি ক্রাশ খেয়েছে! ক্রাশ শব্দটা হিয়ার নতুন জানা হলো দিবার থেকে। যদিও ক্রাশ মানে ছেলেটাকে হিয়া চিনে না। তবে দিবা এমন ভাবে ছেলেটার বর্ণনা দিয়েছে তাতে হিয়া ছেলেটার চেহারা ভালো করেই কল্পনা করতে পারছে।
লম্বা, ফর্সা, চুলে আর্মি কাট, আর চোখে চশমা। ছেলেটা নাকি সবসময় শান্ত থাকে। তাদের কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সেই ছেলে। তাই ছুটির পর, প্রায় দিবা দাড়িয়ে থাকে একপাশে। কিন্তু আজ সে একা নয়, হিয়াকেও টানতে টানতে নিয়ে এলো। কি যন্ত্রনা এবার নাকি একটা ছেলেকে দেখার জন্যে দাড়িয়ে থাকতে হবে।
হিয়া কলেজের বড় গাছটার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। কখন যে আসবে দিবার রাজপুত্র। হটাৎ দিবা হিয়াকে টেনে এনে হাতে ঈশারা করে বললো,” দেখ দেখ, ঐযে ছেলেটা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।”
হিয়া তাকালো কিন্তু তেমন ভালো করে দেখতে পারলো না। তার আগেই দিবার হাত নামিয়ে দিয়ে বললো,
” এইভাবে দেখাচ্ছিস কেনো? দেখে ফেলবে তো।” দিবা আর হিয়া এখন বন্ধুত্বের তুই পর্যায়ে চলে গেছে।
” দেখুক, আমি তো সেটাই চাই। চশমা পড়া ছেলে গুলো এতো সুন্দর হয় কেনো? দেখলেই তুলে নিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।”, দিবার মুখে এমন কথা শুনে হিয়া হা করে আছে। হায় হায় মেয়েটা কি শুরু করেছে।
” হুর, তুলে নিয়ে যেতে ইচ্ছে করে মানে কি? তুলে নিয়ে কি করবি তুই?”,অবাক হয়ে প্রস্ন করলো দিবা।
” জানি না।”,বলেই দিবা খিল খিল করে হেসে উঠলো।
” আচ্ছা এইবার চল। অনেক দেখেছিস।”,বলেই হিয়া টেনে দীবাকে নিয়ে এলো। এই দিবাটা চশমা পড়া, সুন্দর, লম্বা আর চুপচাপ ছেলে দেখলেই খালি কই মাছের মতন লাফায়।
🦋 হিয়া গেট দিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই হটাৎ সে বাগানে কিছু একটা দেখলো। সাদা সাদা ছোট্ট কি জানি বাগানে দৌড়াচ্ছে। হিয়া কৌতূহল বশত এগিয়ে এলো এ বাড়ির বাগানে সে আগে কখনো আসেনি। বাড়িটার চারিপাশ উচু প্রাচীরে ঘেরা। বাগানের একপাশে সুইমিংপুল। বাগান বললে ভুল হবে! ঘাসের মতন কার্পেট বিছানো তার এক পাশে টবে সারি করে কিছু গাছ আছে। ফুলের গাছ সবগুলো, গোলাপ, টগর, গাঁদা, বেলি এইসব।
হিয়া বাগানে এসেও কিছু একটার নড়াচড়ার আওয়াজ পেলো। হিয়া এদিক ওদিক তাকালো তারপর দেখতে পেলো ফুলের টবের পিছনে বাচ্চা একটা খরগোশ বসে আছে। একদম সাদা দেখতে, হিয়া খরগোশটাকে ধরার জন্যে এগিয়ে যেতেই খরগোশটা দৌড়াতে লাগলো। হিয়ার অনেক পছন্দ হয়েছে খরগোশটা। ধরতে পারলে হিয়া খরগোশটা রেখে দিবে। তাই সে খরগোশটাকে ধরার জন্যে ছুটছে। কিন্তু এই পিচ্চিটা ছোট ছোট পায়ে শুধু ছুটছে।
হিয়া চুপ করে দাড়িয়ে রইলো এবার সুযোগ পেলে সে এগিয়ে আসবে। খরগোশটা সুইমিংপুলের সামনে এসে বসে নিজের কান হাত দিয়ে পরিষ্কার করছে। হিয়া সুযোগ বুঝে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতেই খরগোশটা ছুটে বাম দিকে চলে গেলো। হিয়া সেদিকে তাকাতেই দেখলো একটা ছেলে দুহাতে খরগোশটাকে কোলে নিলো। ছেলেটা সাদা টি শার্টের উপরে লেদারের জ্যাকেট পড়েছে। ছেলেটাকে হিয়ার চেনা চেনা লাগছে। ঠিক চিনে উঠছে পারছে না। ছেলেটা তার দিকে এগিয়ে আসছে। হিয়ার চুলের মাঝে হাত চালিয়ে যাচ্ছে, কে এই ছেলে? ভাবতে ভাবতে হটাৎ কেনো জানি মনে হলো এই সেই হুডিপড়া ছেলেটা। ভেবেই চোখ বড় বড় করে তাকালো হিয়া। ধুর ওই এলিয়েনটা এইখানে আসবে কি করে? সে নিশ্চয়ই ভুল দেখেছে কিন্তু ছেলেটা আরেকটু এগিয়ে আসতেই হিয়া আতকে উঠলো। এইটাই তো সেই ছেলে!
হিয়া একটা ঢোক গিলে দু পা পিছিয়ে গেলো। বেশি পিছাতে পারবে না কারণ পিছনে সুইমিংপুল। ছেলেটার প্রথমে মনোযোগ খরগোশটার দিকে থাকলেও এবার তার দৃষ্টি হিয়ার দিকে। হিয়াকে দেখে তার ঠোঁটের কোনায় সূক্ষ্ম একটা হাসি জমেছে। ছেলেটা খরগোশটাকে আদর করতে করতে এগিয়ে এসে বললো,” তা মিস বৃহস্পতি আবার দেখা হয়ে গেলো যে?”
ছেলেটা এখন হিয়ার একদম কাছে দাড়িয়ে আছে। হিয়া এদিক ওদিক তাকালো এই ছেলেটা এইখানে এলো কি করে? হিয়া আমতা আমতা করে বলল,” আপনি এইখানে কি করছেন?”
ছেলেটা একটা ভ্রু তুলে বললো,” আমি…..?”,বলেই হাসলো তারপর বললো,” হুম….. পার্সেল দিতে এসেছি।”
হিয়া হা করে তাকিয়ে বললো,” আপনি না ফটোগ্রাফার? ডেলিভার বয় হলেন কবে?”
” এইতো মাত্র।”,বলেই আবার হাসলো সে। আবার সেই রহস্যময় হাসি। হিয়া কিছুই বুঝতে পারছে না। পরক্ষনেই হিয়ার চোখ গেলো খরগোশটার দিকে। হিয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আমনা আমনি ঠোঁটের কোণে হাসি জমলো হিয়ার। হিয়ার দৃষ্টি খরগোশটার দিকে থাকলেও ছেলেটার দৃষ্টি হিয়ার দিকে। হাসলে কি সুন্দর লাগে মেয়েটাকে!
” আপনি এই খরগোশটা আমাকে দিবেন?”,হিয়া হাসি মুখে বললো।
” কেনো? তোমার কাছে একটা নাম জানতে চেয়েছিলাম, তুমি বলেছো?”, বলতে বলতে ছেলেটা এগিয়ে আসতেই হিয়া পিছাতে লাগলো। ছেলেটা আরো বললো,” আগে তোমার নাম বলো। তারপর ভেবে দেখবো ম্যারিকে দিবো কি দিবো না?”,
খরগোশটার নাম ম্যারি।
হিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” বলেছি না আমার নাম বৃহস্পতি।” শেষ শব্দটা বলে শেষ না করতে পড়ে যেতেই ছেলেটা হাত বাড়িয়ে হিয়া এক হাত ধরে ফেললো। কথায় কথায় কখন সুইমিংপুলের এতো কাছে চলে এসেছে হিয়া নিজেও টের পেলো না। এখন হিয়ার এমন অবস্থা যে ছেলেটা যদি হাত ছেড়ে দেয় তাহলে হিয়া সোজা গিয়ে পানিতে পড়বে। হিয়া ভয়ের চটে বললো,” আমাকে ছাড়বেন না। পড়ে যাবো।”
” আচ্ছা ছাড়বো না।”, বলে অন্য হাতে থাকা ম্যারিকে জ্যাকেটের সামনের পকেটে রাখতেই ম্যারি পকেট দিয়ে মুখ বের করে পিট পিট চোখে তাকিয়ে আছে।
” তুলুন আমাকে, আমি পড়ে যাবো….. জলদি করুন।”, ভয়ার্ত গলায় বললো হিয়া। ছেলেটা হাসতে হাসতে বললো,” নাহ্ আগে তোমার নাম বলো। নাম না বললে এক্ষুনি ফেলে দিবো।”
হিয়া এক চিৎকার করতেই ছেলেটা টান দিয়ে হিয়াকে সুমিংপুলের কাছ থেকে সরিয়ে এনে বললো,” নামটা বলো এইবার!”
হিয়া দুই হাত দিয়ে বুক চেপে ধরে হাপাতে লাগলো। আরেকটু হলেই প্রাণটা বেরিয়ে আসতো। আরে এই ছেলেটা তার নামের পিছনে পড়েছে কেনো? নাম জেনে কি করবে? আকিকা দিবে? হিয়া ভয়ার্ত দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।
ছেলেটা গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,” থাক তোমার নামটা না হয় নাই বা জানলাম। আমি কিন্তু তোমাকে একটা নাম দিয়েছি, স্ট্রবেরি।” বলেই একটু এগিয়ে এসে কানে কানে বললো,” সুন্দর না নামটা আমার কিন্তু খুব পছন্দ স্ট্রবেরি”, বলেই হিয়ার দিকে তাকাতেই দেখলো হিয়ার চোখ মুখের অবস্থা ভয়াভয়। হিয়ার চোখ মুখের অবস্থা দেখে ছেলেটা হেসে উঠে বললো,”আই মিন স্ট্রবেরি আমার অনেক পছন্দ। তোমার এতো ভয় পেতে হবে না।”
হিয়া অবাক হয়ে কিছুটা সরে দাড়ালো। ছেলেটার কথাগুলো হিয়ার কানে বাজছে। হিয়া জড়সড় হয়ে ছেলেটাকে পাশ কাটিয়ে বাড়ির ভিতরে যেতেই ছেলেটা পথ আটকে দাড়ালো তারপর বললো,” তুমি এই বাড়িতে থাকো?”
হিয়া চোখ পিট পিট করে তাকালো কিছু বললো না এই ছেলেকে তার ভয় লাগছে। ছেলেটা নিজের পকেট থেকে ম্যারিকে হিয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,” ম্যারিকে তুমি চাইলে নিজের কাছে রাখতে পারো। আমি কিন্তু আবার এসে ফেরত নিবো।”
শেষের কথা শুনে হিয়া খুশি হয়ে গেলো। হাত বাড়িয়ে ছেলেটার থেকে ম্যারিকে নিজের কোলে নিলো। কি কিউট! হিয়া খুশি হয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো,” ধন্যবাদ।”
ছেলেটা ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে বললো,” কি বললে তুমি? ধন্যবাদ! তোমার মুখে ধন্যবাদ শুনে আমি ধন্য। যাক প্রথমবার না বললেও দ্বিতীয়বার যে বলেছ এই জন্যে প্রথমবারেরটা মাফ।”
বলতে বলতে ছেলেটা গেটের দিকে এগিয়ে গেলো। হিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। এমন হুট করে এই লোকের সাথে তার দেখা হয় কেনো? হিয়া তার কোলে থাকা ম্যারির দিকে তাকালো। কি কিউট! হিয়া ম্যারিকে আদর করতে করতে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো আর বললো,” তোমার মালিকটা এমন কেনো? হুট হাট করে সামনে এসে পড়ে। যাদের হার্টে সমস্যা তারা তো এনাকে এভাবে হুট করে দেখলে, ইন্নালিল্লাহ।”
কথার মাঝেই ম্যারি হিয়ার হাত থেকে লাফ মেরে দোতলায় দৌঁড়াতে লাগলো। মনে হয় এলিয়েনের বদনাম এই খরগোশের পছন্দ হয় নি। হিয়া কোমড়ে হাত দিয়ে ম্যারির দিকে তাকালো। সে দৌড়াচ্ছে কিন্তু একি! এবার কি হবে? হিয়ার বুকের ভিতরটা ধুক করে উঠলো। ম্যারি শুভ্রের রূমে ঢুকে গেছে। এই লোকটা তো মানুষকে নিজের রুমে যেতে দেয় না আর এইটা তো নিরীহ প্রাণী। হিয়া ভয়ে একটা ঢোক গিললো।
[ #চলবে ]