#রহস্যময়ী_লেডি_কিলার
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_১৭
“অবনীর হাতে দৈত্যাকার ছুরিটা দেখে নার্স সজোড়ে এক চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে সেখানেই বেহুঁশ হয়ে পড়ে যায়। নার্সের এমন ভয়াবহ অবস্থা দেখে আকাশ অবনীর মুখ চেপে ধরে তাকে বলে,
–এই অবনী, তুমি এটা কি করলে? তোমার হাতের দৈত্যাকার ছুরিটা দেখে তো নার্স অজ্ঞান হয়ে গেছে। এবার যদি তার জ্ঞান ফেরার পর সে তোমার কথা মানুষজনকে বলে দেয়, তখন তুমি কি করবে? তোমার পরিচয় তো সবাই জেনে যাবে। এমনিতেই শহরের অবস্থা ভালো না। প্রশাসন হাত-পা বেঁধে নেমেছে মাঠে। তারা ঐসব হনুমানের দলকে ধরতে পারবে না ঠিক, কিন্তু দেখা যাবে শেষ মেষ তারা তোমায় উঠিয়ে নিয়ে গেছে।
–আমি যা করেছি একদম ঠিক করেছি। কারন সে প্রথমত অনুমতি ছাড়া রুমে প্রবেশ করেছে। তার উপরে সে আমার এতো সুন্দর মুহূর্তটাকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। আমি কতো সুন্দর আপনার বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে ছিলাম। কিন্তু এই শয়তান নার্স সব কিছু শেষ করে দিয়েছে। তাই তার উপরে রাগ করে এমনটা করেছি। আর বাকি রইলো আমার আসল পরিচয় লোকজনের সম্মুখে বলে দেওয়া, সেটা সে কখনোই করতে পারবে না। কারন আমি জানি আপনি সেটা কখনোই করতে দিবেন না তাকে। আর যদি ভুলক্রমে সে আমার আসল পরিচয় কোনো ভাবে কাউকে বলেও থাকে, তাহলেও আমার কিছু হবে না। তার বলায় অতিজোর আমার কথা প্রশাসনের কান পর্যন্ত পৌঁছাবে। তারপর তারা আমাকে গ্রেফতার করতে আসবে। কিন্তু আমি জানি সেটা এই জন্মে কখনোই হবে না। কারন আপনি সেটা হতে দিবেন না। তাই আপনি থাকতে আমার কোনো টেনশন এই নেই। আমি বিন্দাস ঘুরে বেড়াবো।
–হ্যাঁ আমি এমনটা কখনোই হতে দিব না। কিন্তু তার পরেও তোমার সতর্ক থাকা প্রয়োজন। আমি তোমায় প্রটেক্ট করবো বলেই যে তুমি সব সময় বিপদের দিকে তেড়ে যাবে, এটা কিন্তু একদম ভুল। লিমিটের ভিতরে থেকে সব করো। তারপর আমি দেখবো তোমার কে কি ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু তোমার এমন ভুল করা কিন্তু আর চলবে না।
–আচ্ছা আর ভুল করবো না। এবারের মতন আপনি এই নার্সকে সামলে নিন।
–হুম দেখছি। আর শোনো এখন তোমার স্যালাইন নিবার সময় হয়ে গেছে। আমি বাহিরে গিয়ে আগে কাজের মহিলাকে পাঠিয়ে এই নার্সকে রুম থেকে সরিয়ে অন্য রুমে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছি। তারপর তার জ্ঞান ফিরে আসলে বাকিটা আমি দেখে নিব। আর বাকি আরেকজন নার্সকে কিছু সময় পরে পাঠিয়ে দিয়ে তোমার শরীরে স্যালাইন দিতে বলবো। তুমি শুয়ে থাকো। আমি কাজ শেষ করে তোমার খাবার ও পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।
–খাবারটা পাঠাবেন না। সেটা আপনি নিজেই নিয়ে আসবেন। তারপর সেটা আপনি নিজের হাতেই আমাকে খাইয়ে দিবেন। না হয় এক লোকমা খাবার ও আমি মুখে তুলবো না।
–আমার একটু কাজ আছে অবনী।
তুমি আপাতত কাজের মহিলার হাতেই খেয়ে নাও।
–মহাশয় আমি যা বলার বলে দিয়েছি। আপনিই আমাকে খাবার খাওয়াবেন। না হয় আমার কথার নড়চড় হবে না।
–উফ ঠিক আছে। আমিই খাবার নিয়ে আসবো।
–এই তো এতো সময়ে লাইনে এসেছেন।
–আচ্ছা এখন গেলাম।
তারপর অবনীকে রুমে রেখে আমি রুম থেকে বেরিয়ে একজন কাজের মহিলাকে ইশারা করে নার্সের কথা বললাম, যে নার্সকে অন্য একটা রুমে নিয়ে গেয়ে তার জ্ঞান ফেরাবার ব্যবস্থা করতে। কাজের মহিলা আমার ইশারা মতন কাজে লেগে পড়েছে। যাক ভাগ্যিস নার্সের চিৎকারের আওয়াজ রুমের বাহিরে যায়নি। না হয়তো ডক্টর আর বাকি একজন নার্স ও তার চিৎকারের আওয়াজ শুনে ফেলতো। যার ফলে দেখা যেতো তিনজনকেই আমার সামাল দিতে হচ্ছে। কিন্তু রুমটা সাউন্ড প্রুফ হওয়ার কারনে সেসব কিছু থেকে বেঁচে গেছি। আচ্ছা এবার গিয়ে বাকি একজন নার্সকে বলি অবনীর শরীরে স্যালাইন লাগিয়ে দিতে। নার্সের রুম আমার থেকে কিছুটা দূরে। হেঁটে হেঁটে নার্সের রুমে গিয়ে বললাম অবনীর স্যালাইন লাগিয়ে দিতে। পরে নিচে চলে এলাম অবনীর জন্য খাবার নিতে। নিচে আসতেই মুজাহিদ জিজ্ঞাস করলো,
–ভাই আপনি ভাবীকে উপরে একা রেখে নিচে কেন এসেছেন?
–আরেহ আর বলিস না। অবনী আমার হাতে ছাড়া নাকি কারোর হাতে খাবার খাবে না। তাই নিজেই নিচে আসলাম ওর জন্য খাবার নিতে।
–ভাই আপনি সেটা একজনকে ডেকে বললেই তো হতো। আপনি খামোখা কষ্ট করে নিচে আসতে গেলেন কেন।
–আরে সমস্যা নাই।
–না ভাই আপনি চলে যান। উপরে ভাবী একা। আমি বুয়াকে দিয়ে খাবার পাঠাচ্ছি। ভাবীর খাবারের পাশাপাশি আপনার খাবার টাও নিয়ে যাবে।
–আচ্ছা।
মুজাহিদের কথা শুনে নিজের রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে দেখি নার্স অবনীর হাতে স্যালাইন লাগাচ্ছে। তাই কথাবার্তা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। নার্সের স্যালাইন লাগানো শেষ হতেই নার্সকে বললাম, আপনি নিজের রুমে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে নিন। আমি অবনীর কাছে আছি।
–আচ্ছা।
–নার্স আমার কথা মতন রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। নার্স রুম থেকে বের হওয়ার কিছু সময় পরেই বুয়া আমার আর অবনীর জন্য খাবার নিয়ে এসেছে। তাই হাত ধুয়ে অবনীকে নিজের হাতে খাওয়াতে শুরু করলাম। মেয়েটা গপাগপ খেতে আরম্ভ করলো। মনে হচ্ছে যেনো এই জীবনের প্রথম সে এতো তৃপ্তি সহকারে খাবার খাচ্ছে। মেয়েটাকে খাওয়ানো শেষ করে নিজেও খেয়ে নিলাম। তারপর আবার কাজের বুয়াকে খবর লাগিয়ে খাবারের বাসন গুলা নিয়ে যেতে বললাম। বুয়া এসে খাবারে বাসন গুলা নিয়ে গেলো। আর আমি অবনীর পাশে হেলান দিয়ে বসে পড়লাম। মেয়েটা আমার পাশেই শুয়ে আছে। আমি খাটের সাথে বসে বসে হেলান দিয়ে ফোন টিপছি। তখনি অবনী বলে উঠলো,
–ফোন রেখে দিয়ে আমায় আগের মতন বুকে নিন। না হয় আমার পাশে শুয়ে আমায় জড়িয়ে ধরুন। এই দুটোর যে কোনো একটা করুন।
–অবনী তোমার হাতে স্যালাইন লাগানো। আমি তোমায় যে ভাবেই জড়িয়ে ধরি না কেন, এতে তোমার সমস্যা হবে। দেখা যাবে কোনো ভাবে হাতে নাড়া খেয়ে আঘাত লাগবে তোমার।
–না আমার কোনো সমস্যা হবে না। আপনি যাস্ট আমায় জড়িয়ে ধরলেই হবে। বাকি আমি ব্যথা পেলে পাবো। অবশ্য আমার ব্যথা লাগবে না। কারন যেই হাতে স্যালাইন দিয়েছে, সেই হাতে ধারলো ধাতু রয়েছে। যার কারনে কোনো প্রকার চোট লাগবে না হাতে।
–অবনী তোমার এক হাত পোড়া। আর এক হাতে স্যালাইন। দেখবে কোনো না কোনো একটা বিপদ হবেই।
–এই যে আমি বললাম না আমার কোনো সমস্যা হবে না। আপনি আমায় জড়িয়ে ধরুন।
–আচ্ছা।
মেয়েটার সাথে আর তর্কে জড়ালাম না। কারন অবনী যে নাছোড়বান্দা, সেটা আমার বুঝে এসে গেছে। তাই তার পাশে শুয়ে চুপচাপ তাকে জড়িয়ে ধরলাম। আমি তাকে জড়িয়ে ধরতেই সে তার মুখ আমার বুকের কাছে এনে নিবিড়ভাবে তার ঠোঁট জোড়া দিয়ে আমার বুকে স্পর্শ করতে আরম্ভ করেছে। আমি তার স্পর্শ শিউরে উঠছি! কিন্তু তার আচরণে কোনো প্রকারের রিয়েক্ট করলাম না। কারন সে যে আমায় কাছে পেলে উন্মাদ হয়ে যায়, তার এই বিষয় সম্পর্কেও আমার জানতে বাকি নেই। এভাবে বেশ কিছু সময় কাটে। মেয়েটা আমার বুকে স্পর্শ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে।
মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়ার কিছুক্ষণ পর আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম তার সাথে সাথে। এক ঘুমে মাগরিবের ওয়াক্ত হয়ে গেছে। মসজিদের মাইকে আজান দিচ্ছে। ঘুমের ইতি টেনে দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম। কিন্তু অবনী এখনো ঘুমোচ্ছে। তাই তাকে না ডেকে আমি বিছানা ছেড়ে নিজের মতন উঠে গেলাম। বিছানা ছেড়ে উঠে সর্বপ্রথম ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে গেলাম। নিচে যেতেই দেখি ছেলেপেলে সবাই জটলা পাকিয়ে বসে আছে। আমি নিচে যেতেই মুজাহিদ আমাকে দেখে সবার উদ্দেশ্য করে বললো,
–আকাশ ভাই এসেছে তোরা সবাই চুপ থাক।
–কি হয়েছে মুজাহিদ? তোরা সবাই এভাবে জটলা পাকিয়ে বসে আছিস কেন?
–ভাই আপনাকে কিছু বলার ছিলো। আর আমরা এমনিতেই বসে সবাই মিলে কথাবার্তা বলছিলাম।
–আচ্ছা কি কথা বল।
–ভাই ডক্টর আর নার্স আমাদের ছেলেপেলে দেখে অনেক ঘাবড়ে আছে। তবে আমি সেই নার্সকে ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছি। যে কিনা ভাবীর বিষয়ে জেনে গিয়েছে। নার্সের জ্ঞান ফিরবার পর বুয়া এসে আমায় খবর দেয়। তখন আপনি ঘুমোচ্ছিলেন। তাই আপনাকে না ডেকে আমিই নার্সের কাছে গিয়েছি। তখন নার্সের কাছে গিয়ে দেখি সে ভয়ে কাতর হয়ে আছে। তার ভয়াবহ অবস্থা দেখে তাকে জিজ্ঞাস করি কি হয়েছে। তখন সে আমাকে ভাবীর নাম বলে। ভাবির নাম শুনতেই আমি বুঝে যাই আসল কাহিনী কি। তাই তাকে শুরুতে শান্ত করি। তারপর তাকে সবটা বুঝিয়ে বলি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাকি একজন নার্স আর ডক্টরকে নিয়ে। তারা এখান থেকে চলে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু আমি ওদের আঁটকে রেখেছি।
–ভালো করেছিস। তবে তার পরেও তুই ডক্টরকে গিয়ে ভালো করে বুঝিয়ে বল ভয় না পেতে। অবনী একটু সুস্থ হলেই তাঁদেরকে দিয়ে আসা হবে।
–ঠিক আছে ভাই আমি বলে দিব। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কথাটাই এখনো আপনাকে বলা বাকি।
–কি গুরুত্বপূর্ণ কথা?
–ভাই প্রশাসনের কানে কি ভাবে যেনো ভাবীর কথা পৌঁছে গেছে। আর এটাও প্রশাসন জেনে গেছে, যে অবনী ভাবী আপনার কাছে আছে। তার উপরে মিনিস্টার সাহেব একটু আগে রাজ ভাইকে ফোন করে জানিয়েছে। ড্রয়িডের লোকজন নাকি তার কাছে হুমকি ভরা একটা বার্তা পাঠিয়েছে। মানে হলো ড্রয়িডের লোকজন মিনিস্টার সাহেবের সাথে একটা চুক্তিতে আসতে চাচ্ছে। তারা মিনিস্টার সাহেবকে বলেছে, অবনী ভাবিকে যেনো যে কোনো উপায়ে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাহলে তারা আর কোনো দাঙ্গাফাসাদ বা হামলা করবে না শহরে। না হয়তো তারা শহরকে নাকি নড়ক বানিয়ে দিবে। যেই জন্য মিনিস্টার সাহেব রাজ ভাইকে ফোন করে বলেছে অবনী ভাবীকে যেনো মিনিস্টার সাহেবের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তিনি অবনী ভাবীকে ড্রয়িডের লোকজনের হাতে তুলে দিয়ে সমস্ত দাঙ্গাফাসাদ শেষ করতে চাচ্ছেন।
–কিহহহ এই কথা বলেছে মিনিস্টার সাহেব?
–হুম ভাই।
–এই রাজ কোথায়?
–ভাই রাজ ভাই একটু আগে তো এখানেই ছিলো। এখন হয়তো কোথাও গিয়েছে।
–সে যেখানেই থাকুক না কেন, মুজাহিদ তুই তাকে ফোন করে জলদি বাংলোয় আসতে বল।
–ঠিক আছে ভাই বলছি।
.
মুজাহিদ আকাশের কথা মতন রাজকে ফোন করে আসতে বলে। রাজ আকাশের কথা শুনে জলদি বাংলোয় এসে হাজির হয়। আকাশ রাজকে দেখে জিজ্ঞাস করে,
–রাজ তোকে মিনিস্টার সাহেব ফোন করে নাকি অবনীকে তার হাতে হস্তান্তর করার কথা বলেছে?
–জ্বি ভাই ফোন করে এমনটা বলেছে।
–তুই কি তাকে বলিস নি অবনী আমার কি লাগে?
–না ভাই আমি সেভাবে বলিনি। তবে এটুকু বলেছি, যে এই বিষয় নিয়ে আপনার সাথে কথা বলতে।
–ঠিক আছে লাউড দিয়ে ফোন লাগা মিনিস্টার সাহেব কে।
–আচ্ছা ভাই লাগাচ্ছি।
.
রাজ আকাশের কথা মতন মিনিস্টার সাহেবকে ফোন লাগায়। অপরপাশ থেকে মিনিস্টার সাহেব ফোন রিসির করতেই এপাশ থেকে আকাশ বলে উঠে,
–মিনিস্টার সাহেব আমি আকাশ বলছি। আপনি নাকি লেডি-কিলারকে আপনার হাতে তুলে দিতে বলেছেন?
–জ্বি ভাই। কারন সেই মেয়েই সমস্ত দাঙ্গাফাসাদের কারন। ড্রয়িডের লোকজন সেই মেয়েকে পেলে শহরের উপরে আর কোনো ধরনের হামলা করবে না। তারা এমনটাই আমাকে বলেছে।
–মিনিস্টার সাহেব সে নামে লেডি কিলার হলেও বাস্তবে সে ভালোর পক্ষ নিয়ে কাজ করে। তাই তার পিছু নেওয়া আপনারা ছেড়ে দিন। কারন আসল শয়তান হচ্ছে ড্রয়িডের লোকজন। আপনারা শয়তানের হাতে ভালো মানুষকে তুলে দিয়ে শয়তানের শয়তানি বন্ধ করতে পারবেন না।
–ভাই তারপরেও লেডি-কিলারকে আমাদের হাতে তুলে দিন। আমরা তাকে ড্রয়িডের লোকজনের হাতে তুলে না দিলেও স্পেশাল জেলখানায় বন্দী করে রাখবো। কারন সে কোনো সাধারণ মানুষ না। তাই তার অধিকার নাই মানুষের মধ্যে থেকে বসবাস করার।
.
মিনিস্টার সাহেবের কথা শুনে আকাশের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়! যার ফলে সে চেঁচিয়ে মিনিস্টার সাহেবকে বলে উঠে,
–এই বেটা লাগামহীন কথাবার্তা একদম কমিয়ে বলবি। না হয় কন্ঠ নালি একদম টেনে ছিঁড়ে ফেলবো। তুই কোন সাহসে ওকে জেলখানায় বন্দী করার কথা বলিস উল্লুকের বংশধর? তুই কি জানিস সে আমার কি লাগে? অবশ্য জানিস না। কিন্তু এখন জেনে রাখ। সে আমার ভবিষ্যৎ বউ হবে। তাই ওর দিকে কেউ ভুলেও চোখ তুলে তাকাবার মতন সাহস করবি না। না হয় ড্রয়িডের লোকজন কি ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, আমি যেটা চালাবো, তাতে করে তোদের সব কয়টা মারা পড়বি।
.
আকাশের রাগান্বিত কথা শুনে মিনিস্টার সাহেব ভয় পেয়ে যায়। তাই সে আকাশকে বলে,
–ভাই আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি জানতাম না যে উনার সাথে আপনার কোনো কানেকশন আছে। আমি ভেবেছি আপনি শুধু তাকে পাকড়াও করেছেন। কিন্তু তিনি যে আপনার ভবিষ্যৎ বউ হবে, বা আপনি তিনার সুরক্ষা করছেন। সেই বিষয়ে আমি একদম অজানা ছিলাম। তাই আমি আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
–তোর ক্ষমা রাখ তোর কাছে। তুই যেখানেই থাকিস না কেন জলদি এসে আমার সাথে দেখা করবি। না হয় তোর কেয়ামত রটিয়ে দিব।
–না,না ভাই আমি এখুনি আপনার সাথে এসে দেখা করছি।
–এই রাজ, বেটাকে যে কোনো একটা লোকেশনে আসতে বলে ফোন কাট।
–ঠিক আছে ভাই। মিনিস্টার আমি ফোন রাখলাম। আপনি বিএম শপিং কমপ্লেক্সের সামনে বরাবর একটা রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে এসে দেখা করুন।
.
রাজ মিনিস্টার সাহেবকে লোকেশন বলে দিয়ে ফোন কেটে দেয়। রাজ ফোন কাটতেই আকাশকে সবাইকে বলে,
–এই তোরা গাড়ি গোড়া রেডি কর। আমি এক পাক উপর থেকে গিয়ে অবনীকে দেখে আসছি।
.
আকাশের কথা মতন সবাই গিয়ে গাড়িতে বসে। আর আকাশ উপরে আসে অবনীকে দেখার জন্য। সে রুমে এসে দেখে অবনীর ঘুম ভেঙ্গে গেছে। আর সে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আর তার হাতের স্যালাইনটাও শেষ। তাই আকাশ অবনীর হাত থেকে স্যালাইনটা খুলে দিয়ে তাকে বলে,
–অবনী তুমি বাসায় শুয়ে শুয়ে রেস্ট করো। একটু পর বুয়া এসে তোমায় নাস্তা খাইয়ে দিয়ে যাবে। আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি। আমার একটা কাজ আছে।
–এই যে আমার রুমে শুয়ে থাকতে ভালো লাগছে না। আমার অনেক বোরিং লাগছে। আপনি যেখানেই যান না কেন আমায় সঙ্গে করে নিয়ে চলুন। তাতে করে অন্তত আমার বোরিং লাগাটা কমে যাবে।
–অবনীর কথা কিছুক্ষণ চিন্তা-ভাবনা করে তাকে সঙ্গে নিয়ে নিলাম। কারন একটা মানুষের সারাদিন রুম বন্দী হয়ে থাকতে অবশ্যই বিরক্ত লাগবে। তাই তাকে উঠিয়ে মুখ ধুইয়ে দিলাম। তারপর তাকে নিজের সাথে করে ধরে ধরে গাড়ি পর্যন্ত আসলাম।
পরে গাড়িতে আমার পাশের সিটে বসিয়ে একহাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে রাখলাম। আর ড্রাইভারকে বললাম গাড়ি স্টার্ট করতে। কিছুক্ষণ যাত্রাপথ করার পর বিএম শপিং কমপ্লেক্সের সামনে চলে এসেছি। সেখানে এসে দেখি আমার আগেই মিনিস্টার সাহেব এসে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার পাশে আর্মি পুলিশ দাঁড়িয়ে তাকে পাহারা দিচ্ছে। কিন্তু আমার এতে কিছুই আসে যায়। তাকে যে পাহারা দিবে দিক। বেটাকে থাপড়ে তার কান পট্টি গরম করবো এবং ভালোভাবে শাসাবো এটাই আমার মোটিভ। তাই অবনী এবং সবাইকে গাড়িতে বসতে বলে আমি একাই মিনিস্টার সাহেবের কাছে চলে গেলাম। সে আমায় দেখতে পেয়ে বসার জন্য রেস্টুরেন্টের ভিতরে থেকে একটা চেয়ার এনে এগিয়ে দিলো। কিন্তু আমি চেয়ারে না বসে চিন্তা-ভাবনা অনুযায়ী প্রথম যাত্রাতেই ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়েছি মিনিস্টার সাহেবের গালে। যেটা দেখে মিনিস্টার সাহেবের সঙ্গে আশা এক পুলিশ অফিসার পাশ থেকে দৌড়ে এসে আমার পায়ের মধ্যে পিস্তলের ডাট দিয়ে সজোড়ে একটা বাড়ি মেরে দিলো। যার ফলে আমি ব্যথার চোটে হালকা করে চেঁচিয়ে উঠলাম। আমার চেঁচানোর শব্দ শুনে মিনিস্টার সাহেব সেই পুলিশ অফিসারের গায়ে কোষে একটা লাথি মেরে দিয়ে বললো,
–এই হারামীর বাচ্চা, তুই কার গায়ে আঘাত করেছিস? তুই জানিস এটা কে?
.
পুলিশ অফিসার মিনিস্টার সাহেবের কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে মিনিস্টার সাহেবের দিকে! কারন সে মিনিস্টার সাহেবকে রক্ষা করলো। আর মিনিস্টার সাহেব এই কিনা তাকে থাপ্পড় মেরে বকাঝকা করছে! সে পুরোপুরি হতভম্ব হয়ে মিনিস্টার সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছে! মিনিস্টার সাহেব তার আহাম্মকের মতন তাকিয়ে থাকা দেখে তাকে আরেকটা থাপ্পড় মারতে যাবে, তখনি অবনী গাড়ি থেকে ছুটে এসে সেই পুলিশ অফিসারকে কুপিয়ে তার শরীর কয়েক হাজার টুকরোতে বিভক্ত করে ফেলে। কিন্তু অবনী এতেও থামে না। কারন তার প্রিয় মানুষের গায়ে পুলিশ আঘাত করেছে। তাই সে দৈত্যের মতন মুহূর্তের মধ্যেই মিনিস্টার সাহেবের সাথে আসা সকল পুলিশ অফিসারকে কুপিয়ে হত্যা করে ফেলে।
এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখে মিনিস্টার সাহেবর চোখ কপালে উঠে যায়! তখনি আকাশ মিনিস্টার সাহেবকে বলে,
–এবার ঠেলা সামলাও। অনেক তো পাখনা গজিয়েছে তোমাদের। এবার এই দৈত্য তোমাদের সমস্ত পাখনা কেটে হাতে ধরিয়ে দিবে। এজন্যই বলে বুঝে শুনে কদম না ফেললে নিজের পা কাটা পড়ে। এবার সেটা তোমরা নিজের চোখেই দেখতে পারবে….
চলবে….?