#এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়-২
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
#পর্ব – ৫২ [অন্তিম পাতা]
‘ ও মাই গড! তুমি এখনই সব খুলে টুলে আমায় কন্ট্রোললেস করার প্ল্যানে আছো নাকি আহি?’
আনভীরের এমন কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে রইলাম আমি। বুকের ঢিপঢিপ শব্দ বেড়ে উঠলো চক্রবৃদ্ধিহারে। আমি অস্বস্তিতে সেভাবেই মূর্তপ্রতীক হয়ে রইলাম। যেন ভুলে গিয়েছি এখন আমার কি করা উচিত। মানুষটা লাগামবছাড়াবজানি তাই বলে একজন মানুষ কি এতটাই লাগামছাড়া হতে পারে? এতটাই? আমায় নড়াচড়া না করতে দেখে ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটালেন আনভীর। ভাঁজ করা হাত নিরূপনে হলদে পান্জাবির পকেটে গুঁজে এগিয়ে আসলেন আমার দিকে। তৎক্ষণাৎ আমার ধ্যান ভাঙলো। নিজের অব স্থান টের পেয়ে কোনোমতে কুচি সামলে অস্ফুটস্বরে বলে উঠলাম,
‘ আপনি এখানে কি করছেন আনভীর?’
উনি ভ্রু কুঁচকালেন। বিদ্রুপ স্বরে বললেন,
‘ সব খুলে টুলে দেখানোর এতক্ষণ পর তোমার মনে এই প্রশ্ন উদয় হলো যে আমি এখানে কেন এসেছি?’
আবারও, আবারও এমন ঠোঁটকাটা কথায় গাল রক্তিম হয়ে গেলো আমার। আপাতত আমি বুঝতে পারছিনা এই মানুষটাকে আমার প্রতিউত্তরে কি বলা উচিত। আনভীর আমায় বিব্রত হতে দেখে যেন চরম আনন্দ উপভোগ করছেন। জড়ানো কন্ঠে বললেন,
‘ আহি!’
আমি নিশ্চুপ।
‘ তোমায় এভাবে দেখতে মাথা নষ্ট করা সুন্দর লাগছে জান! মাথানষ্ট করা সুন্দরী মানে বুঝো? যা দেখলে মন মস্তিষ্ক সব কিছুই আউট অফ কন্ট্র্রোল হয়ে যায়।’
মাথা আমার রীতিমতো চক্কর দিয়ে উঠলো। একে থামাতে হবে। নাইলে আজ রাতে যে উনার অসভ্য অসভ্য কথাগুলো শুনে জ্ঞান হারাবো এ ব্যাপারে কোনো গাফলতি নেই। কপট রাগ দেখানোর অভিনয় করলাম আমি। তরতর কন্ঠে বললাম,
‘ আপনি জানেন না যে আমাদের দেখা করতে মানা করেছে? তাহলে কেন এলেন আপনি? কিভাবেই বা এলেন? সামনে দিয়ে এলে তো রিমি আপু বা নীলু আপনার কল্লা কেটে দিতো?’
‘ তাই তো পেছন দিয়ে এসেছি।’
আমি অবাক হলাম। জিজ্ঞেস করলাম,
‘ মানে?’
‘ মানেটা সিম্পল। জানালা দিয়ে ঢুকেছি। বাইরে আজরান ভাইয়া পাহাড়া দিচ্ছে।’
চোখজোড়া আপনা আপনিই বিস্ফোরিত হয়ে গেলো আমার। ভয়ার্ত কন্ঠে বললাম,
‘ আ-আজরান ভাইয়া?’
‘ হুম। এতে অবাক হওয়ার কি আছে? উনি আমার থেকেও ফাস্ট। আমার কষ্ট একমাত্র ভাইয়াই বুঝেছিলো। তাই বললো, যা বউয়ের সাথে দেখা করে আয়। নগেন মশাইয়ের মতো খালি দেখা করে দু’চারটি কথা বলবি না, সুযোগ পেলে আদরও করে আসবি। বিয়ের আগের রাত পানসে হলে বিয়ের পর সারাজীবনই পানসে সংসার যাবে।’
আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। এমন পৃথিবীতে হয়তো আমিই এমন বালিকা যে এমন ভাসুর পেয়েছে। মুখে বাঁধ নাই, ফ্রি মানুষ, যা খুশি তাই বলে বেড়াতে পারে।ছোটবেলায় যখন জাফর ইকবাল স্যারের বই পড়তাম মাঝেমাঝে কিশোর উপন্যাসে আজরান ভাইয়ার মতো চরিত্রের দেখা পেতাম। আজ বাস্তবে এমন মানুষের পাল্লায় পড়ে হাসবো না কাদবো বুঝে পারছিলাম না। তবে এতটুকু বুঝেছি এমনি এমনি আনভীর আসেননি। ভয়ার্ত কন্ঠে বললাম,
‘ আমায় দেখেছেন না? এবার বেরোন। যেভাবে এসেছেন, ভদ্র ছেলের মতো ওভাবেই চলে যাবেন।’
উনি কৌতুহল ভরা চোখ নিয়ে ঠোঁট কামড়ে বললেন,
‘ এভাবে তো যাব না।’
শীতল হাওয়া বইলো দেহে। উনি কি সত্যিই তবে আজরান ভাইয়ার কথা খাটাতে এসেছেন নাকি? বলে উঠলাম,
‘ ম…মানে?’
আনভীর হাসলেন। আড়ষ্ট কন্ঠে বললেন,
‘ সবাই আমার বউকে হলুদ লাগালো। কপালে , গালে, নাকে এক কথায় সারা মুখে হলুদ লাগিয়ে একাকার করে দিলো আর আমিই দিলাম না, এটা হলো?’
আমি নির্বোধের মতো মাথা নাড়ালাম। উনি আবার বললেন,
‘ হিসেবে আমার উচিত প্রথমে তোমায় হলুদ ছোয়ানো। এটলিস্ট মুভিতে, গল্প উপন্যাসে তো এরকমই দেখানো হয়। বাট এবার না হয় একটুভিন্ন আয়োজন করি? আনভীর তার আহিকে সবার ইতিতে হলুদের স্পর্শে ভরিয়ে প্রমাণ করে দিবে যে দিনশেষে আহি শুধুমাত্র আনভীরের।’
হঠাৎ উনার এই কথা আমার টনক নাড়াতে বাধ্য করলো। উনি যে কেন এসেছেন এ কথাগুলো দ্বারা বুঝতে বিলম্ব হলোনা। আমি কিছু বলতে যাবো তার পূর্বে আমার খানিকটা কাছে এগিয়ে আসতে থাকলেন আনভীর। আমি তৎক্ষণাৎ ব্যস্ত সুরে বললাম,
‘ আমি শুধুই আপনার আনভীর। শুনেছেন তো? এবার হলুদ টলুদ ছুঁইয়ে প্রমাণ করতে হবে না। তাছাড়া এখানে হলুদ নেই দেখেন? আপনি মুখ গাল পরিষ্কার না করলেও আমি আসা মাত্রই সবআমুছে ফেলেছি। এখন কোথায় পাবেন হলুদ? পাউডার দিয়ে কাজ সারবেন নাকি?’
বলেই আমি মেকি হাসলাম। কিন্ত উনি পরোয়া করলেন না। এভাবে এগিয়ে আসাতে পিছাতে পিছাতে ড্রেসইং টেবিলের সাথে মিশে দাঁড়ালাম আমি। ভয়ে রীতি মতো বুক দুরু দুরু করছে। পেছনে থাকা সবগুলো প্রসাধনী আমার ধাক্কায় এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। আমায় অবাক করে দিয়ে কোমড় চেপে ড্রেসিং টেবিলের ওপর বসিয়ে দিলেন আনভীর। আমি হতভম্ব হয়ে পড়লাম। বললাম,
‘ কি করছেন?’
এতক্ষণে উনি অস্ফুটস্বরে বললেন,
‘ তোমায় হলুদ ছুঁইয়ে দেয়ার জন্য এক্সট্রা হলুদের প্রয়োজন পড়বে না। আনভীরের কাছে যেটা আছে ওটাই যথেষ্ট।’
বলে আচমকা নীরব হয়ে আমার দিকে ঝুঁকে নিজের গালের সাথে আমার গাল মিশিয়ে ফেললেন আনভীর। আমি চমকপ্রদ হয়ে রইলাম। অনুভূতির বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে খিঁচে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। উনি আলতো করে ঘষা দিতেই আমার অনুভূতি যেন প্রখর হয়ে উঠলো। গালে কটকটা হলুদের আচমকা স্পর্শে মস্তিষ্ক অচল হয়ে গেলো। আবেশেই দুহাতে জড়িয়ে ধরলাম উনার গলা। শিশির ভেজা কন্ঠে বলার চেষ্টা করলাম,
‘ আ-আনভীর?’
আনভীর পরোয়া করলেন না। নিজের গাল থেকে আমার গালে হলুদ লাগিয়ে নামলেন গলার দিকে। এতক্ষণে আমার সমস্ত ইন্দ্রিয় যেন কাজ করা বন্ধ করে দিলো। আনভীর একবার ঘাড় থেকে গলায় নিজের গাল স্লাইড করে পুরো হলুদ মিশিয়ে দিলেন আর আরেকবার ডানহাতে থাকা অবশিষ্টাংশ হলুদ পেটের উন্মুক্ত অংশের কাছে চেপে ধরলেন। আলতো করে চুমু খেলেন গলায়। আমার নিঃশ্বাস ঘন হয়ে এলো। টের পেলাম কাঁপছি আমি। এমন পরিস্থিতে কথা বলতেও যেন ভুলে গিয়েছি। কখন যে আমার একটি হাত আনভীরের ঘাঁড় ছেড়ে চুলে গিয়ে পৌঁছুলো তা আমার নিজেরও জানা নেই। চুল জোরে মুঠো করতেই উনি যেন ধ্যান ফিরে পেলেন। নিজেকে ধাতস্ত করলেন উনি। চোখ তুলে আমার দিকে তাকালেন। আমি তখনও নিভু নিভু অবস্থায় আছি। উনার স্পর্শের রেশ ধাঁধিয়ে তুলেছে আমার সমস্ত শরীর। আনভীর আলতো হাসলেন। এগিয়ে এলেন কানের কাছে। ফিসফিসিয়ে বললেন,
‘ বাকিটুকু আগামীকালের জন্য বরাদ্দ রইলো কেমন? আপাতত আমার কাজ শেষ।’
আমি কথা বলবার জো পেলাম না। হঠাৎ দরজার কড়াঘাতের শব্দে দুজনেই বাস্তবে ফিরে এলাম। বুঝলাম বিরক্ত হয়েছেন আনভীর। আমি তাড়া দিয়ে বললাম,
‘ আল্লাহ! রিমি আপু এসেছেন বোধহয়। আপনি এবার চলে যান প্লিজ!’
‘ এভাবে যাবো না তো! আগে রিটার্ন গিফ্ট দাও তারপর।’
আমি জানি উনি কথায় ও কাজ অটল। একবার যেহেতু বলেছেন রিটার্ন গিফ্ট না দিলে যাবেননা তাহলে সত্যি সত্যিই যাবেন না। আর রিমি আপু বা বাকিদের সামনে লজ্জায় পড়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই আমার। কোনো কিছু না ভেবে টুপ করে উনার ঠোঁটের কোণে চু’মু দিয়ে বললাম,
‘ খুশি তো? এবার প্লিজ যান।’
আনভীর হতভম্ব হয়ে রইলেন। ভরাট কন্ঠে বললেন,
‘ রিটার্ন গিফ্ট হিসেবে আমি জাস্ট তোমার হাত থেকে হলুদ ছুঁয়ে নিতে চেয়েছিলাম আহি!’
বুঝলাম ভয়াবহ একটা কাজ সেরেছি আমি। আনভীর কিছুই বললেন না। হয়তো বলতেন যদি অসময়ে রিমি আপু না এতো। অগত্যাই জানালা টপকে সটকে গেলেন উনি। আমি দরজা খুলে দেখলাম রিমি আপু দাড়িয়ে আছে। আমায় দেখে অবাক কন্ঠে বললো,
‘ একি ভাবি? দরজা খুলতে সময় নিলে আমি তো ভাবলাম হয়তো শাড়ি পাল্টাচ্ছো কিন্তু তুমি তো আগের বেশেই আছো? আর একমিনিট। হলুদ এলো কোথেকে তোমার গলায় ঘাড়ে? সব না মুছেছিলে তুমি?’
আমি ভড়কে গেলাম। কোনোমতে রিমি আপুকে সামলে দরজা লাগিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আমি। আপু সন্দিহান ছিলেন তবুও কিছু বললেন না। আমি ফ্রেস হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। তবে ঘুমুতে পারছিনা। চোখ বন্ধ করলেই আনভীরের তখনকার ঘটনাগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সেসব ভাবতেই আপনাআপনি গলায় হাত চলে গেলো। আজ তোর ঘুম হবে না আহি। ওই মানুষটা আজ তোকে দেখার পর নিশ্চিন্তে ঘুমালেও তোর ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
_____________________
বহু প্রতীক্ষার ফসল আজকের এই দিনটি। আনভীর আর আমি নতুনভাবে আজ স্বামী স্ত্রী রূপে একত্র হলাম। পূর্বে হয়েছিলাম সবার চক্ষুগোচরে, যার দরুন লোকে আমায় নিয়েবাজে মন্তব্য করতেও দু’বার ভাবেনি। কিন্তু আজ সবার সামনেই আনভীর গ্রহণ করেছেন আমায়। কবুল বলার সময় আমার গলা ধরে এসেছিলো, চোখ ঘোলাটে হয়ে এসেছিলো এতগুলো মানুষের সমারোহে রাহি আপু আশ্বস্ত করে ধরলো আমার হাত। হ্যাঁ রাহি আপু। এতদিন আমার কাছ থেকে লুকিয়ে ছিলো শুধুমাত্র আমার ভালোর জন্যই। বায়োলজিকালি রাহি আপু আমার আপন বোন না হলেও আপু যা করেছে সেটা আমি ভুলতে পারবো না। হয়তো আনভীরকে পাওয়ার ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে আপুরই য়াত ছিলো। হয়তো আনভীর আর আপু শুরুকার ওই ঘটনা না সাজালে কখনোই পেতাম না তাকে।
অবশেষে বিয়ে সম্পন্ন হলো আমাদের। সবার চোখে মুখে তৃপ্তির হাসি। পরিচিত অপরিচিত নানা মানুষ শুভকামনা জানাতে লাগলো আমাদের। তখনই নাহিদ ভাইয়ার ডাক পড়লো যে জার্নালিস্টরা এসেছে। জাস্ট আমাদের ছোটোখাটো কয়েকটা সাক্ষাৎকার নিয়েই চলে যাবে। আনভীর বাঁধা দেননি আর। কিন্তু আমি বিরক্ত হলাম সেই সাথে মনে মনে পেলাম ভয়ও। আনভীর তা দেখে বললেন,
‘ এখনও নার্ভাস হচ্ছো?’
‘ সেটা কি স্বাভাবিক নয়?’
কোনোমতে নিজেকে সামলে বাইরে মিডিয়ার মুখোমুখি দাঁড়ালাম আমরা। এত মানুষের ভীড়ে হঠাৎ নিজেকে গুটিয়ে নিতেই আনভীর সবার সামনে হাত আঁকড়ে ধরলেন। একে একে শাটারের সাউন্ড আর আলোর প্রতিফলনে আমি তাকাতে পারছি না। চারদিকে শুধু শোনা যাচ্ছে,
‘ কংগ্রাচুরেশনস ফর ইউর নিউ জার্নি এআরকে।’
মিডিয়ার এই জগতে হয়তো আনভীরের পরিচয় অনেকবেশি। অনেকটাই বেশি। উনি আমার সামনে নিজেকে সাদামাটাভাবে উপস্থাপন করলেও আসলে উনি এতটা সাদামাটা নন। আজকে উনার জন্য এত জনস্রোতে আরও একবার টের পেলাম সেটা। আনভীর সাদরে সেই উইশেসগুলো গ্রহণ করলেন। আমি শুধুক্ষণে ক্ষণে অবাক হচ্ছিলাম আমার প্রতিমানুষটার এত ভালোবাসা বেখে। আমি ভাগ্যবান। আসলেই ভাগ্যবান এমন কাউকে পাওয়ার জন্য!
_______________
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে নীলু। ওর চোখে মুখে খুশির রেশ। আহিকে বরাবরই ও বেশি ভালোবাসতো। কিন্তু কোনো এক কারনে দুরত্ব হয়েছিলো অনেক। আজ ভালোলাগছে। ভালোলাগছে প্রাণপ্রিয় আপুটির চোখে মুখে প্রাপ্তির ঝলক দেখে। ফোনে কথা বলার জন্য দোতলার বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলো নাহিদ। বিরক্তি সূচক কন্ঠে বললো,
‘ আরে ভাই বলছিনা এআরকে না করেছে কোনো এড এই মান্থে করবেন না। খামোখা জ্বালা…..’
নীলুকে দেখে অবাক হলো নাহিদ। চোখে আপনাআপনি ওর মসৃন চুলে চলে গেলো। মেয়েটা আপনমনে বাইরে তাকিয়ে আছে। উপভোগ করছে খাগড়াছড়ির পাহাড়ে ঘেরা সৌন্দর্য। আরও একবার নাহিদের বুক ধক করে উঠলো। ঘোরবশত কল কেটে পান্জাবির পকেটে গুঁজে দিলো সে। তারপর এগিয়ে গিয়ে নীলুকে জিজ্ঞেস করলো,
‘ কি ভাবছো এত?’
‘ আপুর কথা! আপু শেষমেষ কতটা লাকি তাই না? এটা তাহলে সত্যি যে মানুষের জীবন সবসময় এক ধারায় যায় না। কে জানতো যে আনভীর ভাইয়ার মতো আপুর লাইফে কেউ এসে পড়বে?’
নাহিদ হাসলো আনমনে। বললো,
‘ ভালোবাসা আপেক্ষিক জানিস নীলু। #এক_শ্রাবণ_হাওয়ায় এর মতোই হুট করে জীবনে ঘনিয়ে আসে।’
নীলু তাকালো নাহিদের দিকে। কালো গহীন চোখ, পুরু ঠোঁট, সেই ঠোঁটে বরাবরই চাপা হাসি, অল্পতেই ছেলেটা কপাল ভাঁজ করতে ভালোবাসে। এতে যেন আরও মারাত্নক লাগে দেখতে। নীলু এবার ফিচেল হাসলো। বলে উঠলো,
‘ একটা কথা বলবো?’
‘ বলো?’
‘ থ্যাংক ইউ।’
নাহিদ কিঞ্চিত অবাক হলো। ধরতে পারলো না ধন্যবাদ জ্ঞাপনের কারন। নীলু তা বুঝে বলে উঠলো,
‘ থ্যাংক ইউ আহি আপুর সাপোর্টে থাকার জন্য। থ্যাংক ইউ তাকে ভাবি হিসেবে নয়, একজন বন্ধু হিসেবে ট্রিট করার জন্য। এগেইন থ্যাংকিউ যে সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যেও আনভীর ভাইয়ার সাথে আপনাকেও আপুর পাশে থাকার জন্য। আপু বলুক বা না বলুক আমি জানি যে আপনি আপুর লাইফের একজন সেরা বন্ধু।’
নাহিদ এতটা ভাবেনি এসব নিয়ে। হয়তো সত্যি, আহিকে সত্যিই নিজের বিশেষ বন্ধু বলে মনে করে। নীলু এগিয়ে এলো খানিকটা। বললো,
‘ এবার আরও একবার নাহয় ভাবিধর্ম পালন করুন। আপনার ভাবির তো অনেক ইচ্ছে আপনার লাইফ পার্টনার দেখবে। সেটা নাহয় পূরণ করুন।’
‘ কিন্তু কিভাবে?’
আরও কাছে এলো নীলু। ফিসফিসিয়ে বললো,
‘ যেভাবে আপনি আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন!’
বলেই ধীর পায়ে চলে গেলো নীলু। নাহিদ এখনও দাঁড়িয়ে আছে সেই ভঙ্গিমায়। আকাশে গর্জন হচ্ছে খুব। আজ বৃষ্টি নামবে। ঘটা করে শ্রাবণের আমেজে মুখোরিত হবে চারিপাশ।
_________
বৃষ্টি শুরু হয়েছে তুমুলগতিতে। ক্ষণে ক্ষণে মেঘের ডাক। আমি এবার সবার আড়ষ্ট কথাবার্তা পেরিয়ে ঘরে ঢুকলাম। আনভীর আসেননি। হয়তো আসবেন কিছুক্ষণ পর। ঘর আধাঁর হয়ে আছে। কোণায় কোণায় মোমবাতির আলোয় মায়াবী লাগছে ঘর। আমার আজ অন্যরকম অনুভূতি খেলা করতে লাগলো। যেন প্রকৃতিও সায় দিচ্ছে সেই উথালপাতাল অনুভূতির। বধূবেশে আয়নায় নিজেকে পরখ করে নিলাম আমি। এই সাজ, এই রূপ শুধুমাত্র একজনের জন্য। সেটাহলো আনভীর।
অজস্র ভাবনা ভাবছিলাম তখনই দরজা খোলার শব্দে চমকে উঠলাম আমি। আনভীর এসেছেন। মুখে ক্লান্তির রেশ। আমায় দেখে দুর্বল হাসি দিলেন। এই হাসিতে তোলপাড় হয়ে উঠলো হৃদয়। উনি খানিকটা কআছে এগিয়ে ফট করে কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
‘ এভাবে আনইজি ফীল করতে হবেনা। পাল্টে আসো।’
তাই করি আমি। আমি ধাতস্থ করলাম শাড়ি পড়বো আজ। আনভীরের সামনে কখনোও বিশেষ ভাবে শাড়ি পড়া হয়নি। আজই হয়তো সেই রাত। তাই একটা নীল শাড়ি গায়ে জরিয়ে নিলাম আমি। চুল মুছতে মুছতে বের হলাম। ততক্ষণে আনভীর ক্যাজুয়াল লুকে এসে পড়েছেন।বারান্দায় থাকা টেবিলে কফি আর গিটার নিয়ে বসেছেন আজ দু’জন গল্প করবো বলে। কিন্তু আমায় এই রূপে দেখে থমকে গেলেন আনভীর।
আমি নতজানু হয়ে রইলাম। উনি ডাকলেন,
‘ আহি!’
আমি নিরুত্তর। অতঃপর হাসলেন উনি। কোনোমতে নিজেকে ধাতস্থ করে ইশারায় বললেন পাশে বসতে। আমি তাই করলাম। উনি কফির মগ এগিয়ে দিয়ে বললেন,
‘ কফি খাও। আজ নাইট ডিউটি করতে হবে তো!’
দুষ্টুমির রেশ নিয়ে বলাতে ভ্রুকুটি করে উঠি আমি। আনভীর তা দেখে প্রাণখুলে হাসলেন। আজকের মতো উনাকে এতটা হাসিখুশি কখনও দেখিনি আমি। আনভীর এবার বললেন,
‘ আহি?’
‘ হুম?’
‘ গান শুনবে?’
আমি অপ্রতিভ হলাম। আমার মৌনতাকে সম্মতি ধরে নিলেন আনভীর। অতঃপর গিটারে আঙুল চালিয়ে বললেন,
‘ দিস ইজ ফর ইউ।’
——
Tu yeh mujhko bata de
Chahoon main ya na
Apne tu dil ka pata de
Chahoon main ya na
Tu hi yeh mujhko bataa de
Chahoon main ya na
Apne toh dil ka pata.. de
Chahoon main ya na
Itna bata doon tujhko
Chahat pe apni mujhko
Yun toh nahin ikhtiyaar
Phir bhi ye socha dil ne
Ab jo laga hoon milne
Poochhun tujhe ek baar.. oho..
Tu yeh mujhko bata de
Chahoon main ya na
Apne tu dil ka pata de
Chahoon main ya na
[আমি বাংলিশ লিখিনা তবে এই মুহূর্তে এই গানটাই বেস্ট মনে হয়েছে আমার। তাই লিখা।]
আনভীরের কন্ঠ তোলপাড় লাগিয়ে দিলো হৃদয়ে। অতঃপর উনি গান থামালেন, দৃষ্টি নিরূপন করলেন আমাতে। আমার তখন কি হলো জানিনা। ফট করে বললাম,
‘আমি আপনার কাছে বসবো আনভীর।’
আনভীর বাঁকা হাসি দিলেন। হাত বাড়িয়ে দিতেই আমি উনার বুকে মিশে গেলাম এবার। আগের মতো লজ্জা নেই, নেই কোনো সংকোচ। বুকে উথালপাতাল কয়েকটা স্পর্শ করতেই উনি যেন নিয়ন্ত্রণ হারাতে লাগলেন। কোনোমতে বললেন,
‘ আজ বেশ রোম্যান্টিক মুডে আছো নাকি আহি!’
আমি কথা বললাম না। লজ্জায় নুইয়ে ফেললাম মুখ। চোখ বন্ধ করে বললাম,
‘ আই ওয়ান্ট ইউ আনভীর!’
উনি হয়তো ভাবতেও পারেননি এমন কিছু বলবো আমি। তারপর কদাচিত বিস্ময় নিয়ে তাকালেন আমার দিকে। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে বাহিরে। ঘরে গুমোট পরিবেশ। শোনা যাচ্ছে একে অন্যের বিক্ষিপ্ত নিঃশ্বাস। আনভীর কথা বললেন না। আমায় কোলে তুলে নিঃশব্দে শুইয়ে দিলেন খাটে। আমি নির্বাক হয়ে উনার গহীন চোখ দেখলাম। মনে পড়লো সেই রাতের কথা যখন উনাকে প্রথম দেখেছি। তখন ভাবতেই পারিনি এই মানুষটাকে এতটা ভালোবেসে পারবো। আনভীর আরও ঘনিষ্ঠ হলেন। বললেন,
‘ আমায় গ্রহণ করতে পারবে তো!’
উনার জামা খামচে ধরে নিজের কাছে টেনে ঠোঁটকোণে স্পর্শ করলাম আমি। আনভীর সম্মতি পেয়ে আলতো হাসলেন। ভরাট দুষ্টুমি কন্ঠে বললেন,
‘ মনে আছে তো যে এই রাতে একটা টাইট কি’স করতে হবে?’
নিঃশ্বাস ফেললাম আমি। আজ গ্রহণ করবো, গ্রহণ করবো মানুষটার সকল উদ্ভট কথাবার্তা। বৃষ্টির গতি বাড়ছে। সেই সাথে নিঃশ্বাস প্রগাঢ় হচ্ছে আনভীরের।এক শ্রাবণ হাওয়ায় এর মতো জীবনটা হাওয়ার ন্যায় এক অন্য ভালোবাসার জগতে নিয়ে গেলো। বৃষ্টির ছন্দপতন, জানালার কপাটের শব্দ, শো শো হাওয়া আর উষ্ণ নিঃশ্বাসের আদলে আনভীরের বলা কথাটাই হঠাৎ কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বেজে উঠলো। ঝংকারের ন্যায় বলে উঠলো,
‘ আই লাভ ইউ আহি। আই লাভ ইউ ইভেন মোর দেন মাই এভরিথিং।’ .
.
.
.
.
__________সমাপ্ত___________
অবশেষে ইতি টেনে দিলাম আপনাদের প্রিয় গল্পটির। হয়তো আরও বড়ো করতে পারতাম তবে করিনি। এর কারন আগেরমতো পড়াশোনার ব্যস্ততা। আমি অনিয়মিত লিখতে পছন্দ করিনা আর জানি যে এটা অনেকের কাছে বিরক্তিকর। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে যাওয়াতে হয়তো আগের মতো নিয়মিত দিতে পারিনি। মাঝে মাঝে গল্পে ভুল করেছি, কিছু জায়গা নিতান্তই খাপছাড়া হয়েছে সেগুলো ক্ষমাসুলভ চোখে দেখবেন। নতুন গল্প কবে আনবো তা বলতে পারছিনা। তবে মার্চের ১২ তারিখ থেকে আমার পরীক্ষা। সবাই প্লিজ দোয়া করবেন আমার জন্য।
শেষবারের মতো আনভীর আহিকে নিয়ে মন্তব্য চাচ্ছি আপনাদের। ভালোবাসা অবিরাম। আসসালামু আলাইকুম!
এক শ্রাবণ হাওয়ায় সিজন ০১ পড়তে লেখাটি উপর ক্লিক করুন।