লালগোলাপ?
Part-27
Writer-Moon Hossain
রাজ এশারের নামাজ পড়ে বাসায় ঢুকলো।
আনমনে কি যেন ভাবছিলো।
শীতল রাতের খাবার সাজিয়ে ডাইনিংয়ে বসে আছে।
রাজ পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে বলল- তুমি ঠিক কি দিয়ে তৈরি?
-মাটি দিয়ে। কেন আপনি জানেন না? মহান আল্লাহ তায়ালা মানব জাতী দের মাটি দ্বারা তৈরি করেছেন।
রাজ একটা ফোন করলো অফিসে।
শীতল রাজের দিকে তাকিয়ে রইলো।
রাজ খুব অচেনার তার চোখে।
আপনি বসুন। আমি খাবার সাজিয়েছি আপনার পছন্দ মতো।
-আমার কথা চিন্তা করতে হবেনা। তোমার কথা ভাব।
-আচ্ছা। খাওয়া শুরু করুন।
রাজের প্লেটে খাবার দেওয়ার জন্য শীতল উঠতেই রাজ ইশারা করে বসতে বলল।
নিজের হাতে নিজেই প্লেটে তুলে খাচ্ছে রাজ।
এদিক ওদিক তাকাচ্ছে না সে।
নিজের মনে খাচ্ছে।
শাকিলা কোথা থেকে এসে বলল- শীতল একটু উঠে দাড়াও?
শীতল উঠতেই শাকিলা রাজের পাশে বসে পড়লো।
শীতল হতভম্ব!
শাকিলা একটা চোখ মারলো শীতলকে।
চাঁচিও হাজির হলো।
-বাড়ির ছেলেমেয়ে একসাথে বসে খাবে এটাই নিয়ম।
শীতল চাঁচির প্লেটে খাবার তুলে দিলো।
শাকিলা আর রাজ পাশাপাশি বসে খাচ্ছে আর হালকা গল্প গুজব করছে।
শাকিলা না হয় মর্ডান মেয়ে তাই অনেক কিছু জানেনা আর মানেনা বাট রাজ সে তো জানে সবকিছু।
তাহলে সে কেন বেগানা নারীর সাথে ক্লোজ হচ্ছে?
এমনটা হবার কথা নয়।
তবে কি রাজ শাকিলাকে পছন্দ করে?
এজন্য শীতলকে তাড়াতে চাচ্ছে।
রাজের গলায় খাবার আটকে গেলো।
শীতল রাজের মাথায় হাত দেওয়ার আগেই শাকিলা হাত দিলো।
-উফফ, রাজ তোর দেখি এখনো ছেলেমানুষী গেলো না। এতো স্পীডে কেউ খায়?
-নইলে তো তুই খেয়ে নেবি। চাইল্ডহুডের কথা মনে আছে। স্লো করে খেলে সব খেয়ে নিতি।
-তোর সব মনে আছে। হা! হা!হা!
চাঁচি বললো- বাড়ির ছেলেমেয়েরা এইভাবে হাসিখুশি থাকলে কি যে ভালো লাগে।
শীতল খাবার মুখে দিতে পাচ্ছে না।
নিজেকে কেমন যেন একটা অপ্রয়োজনীয় বস্তু মনে হচ্ছে তার।
শাকিলা আর রাজ হাসছে। অন্যদিকে শীতলের চোখ থেকে টপ টপ পানি পড়ছে।
শীতল পেটে হাত দিয়ে মনে মনে বলল- দেখেছো, আমরা না খেয়ে আছি বার তোমার বাবা খেয়েই যাচ্ছে। অনেক ইচ্ছে করছে একসাথে, এক প্লেটে খেতে তাই তো আজ না খেয়ে রইলাম। আমার অভিমান তোমার বাবা বুঝতে পারলো না।
তোমার কথা ভেবে আমার খাওয়া উচিৎ বাবা।
শীতল সবজি মুখে দেওয়ার সাথে সাথেই গড় গড় করে বমি করে দিলো।
সবার খাওয়া বন্ধ।
রাজ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো শীতলের উপর।
শীতল অনেক চেষ্টা করেও আটকাতে পাচ্ছেনা।
ডাইনিং টেবিল ভাসিয়ে দিলো পুরো।
চাঁচি আর শাকিলা ঘৃণায় ওয়াক ওয়াক করতে শুরু করলো।
রাজ ফুলি কে ডাকলো সাথে সব কাজের লোকদেরকেও।
সবার চাকুরী নট করে দিলো।
সবার অপরাধ শীতলকে কেন নিজের রুমে বসে খাওয়াতে পারেনি।
বার বার সে কেন ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার নষ্ট করছে সবার৷
কাজের লোকেরা সবাই অনেক মিনতি করছে চাকুরীতে রাখার জন্য।
রাজ হাত ধুয়ে নিলো।
চাঁচি বলল- ছেলেটা আমার একবারও খেতে পারেনি ঠিক ভাবে।
কি দোষ করেছে ছেলেটা?
একটু নিজের মতো থাকতে চেয়েছে।
ছেলেটা না খেয়ে থাকবে এখন!
শীতল রাজের পথ আটকালো।
-সামনে থেকে সরে যাও!
-না।
-একটা অঘটন ঘটে যাবে।
-ঘটুক।
আমি যাব না। আপনি খেয়ে নিন।
-তুমি খাও তোমার খাবার।
ক্ষিদে নেই আমার।
-মিথ্যা বলা আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না। আপনার একটু পর পর খাওয়ার অভ্যাস।
-তুমি আমাকে বাধ্য করছো মিথ্যে বলতে।
-মানে?
-মানে তুমি জানো না?
আমি একা থাকতে চাই আর তুমি পেছনে লেগে আছো।
তোমাকে আমার প্রয়োজন নেই আর তুমি কিনা…
-আমি কোন বস্তু?যার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলো আর ফেলে দেবেন।
-ফেলে দিইনি।
তোমাকে তার যথেষ্ট মূল্য দিয়েছি।
-কিসের মূল্য? স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মূল্য কিসের?
-তুমি আমার জন্য যা করেছো সেটার মূল্য দিচ্ছি।
-কামরায় চলুন। ওখানে কথা হবে। সবার সামনে এইভাবে কেন বলছেন?
-সবার জানা উচিত। তুমি আমাকে ডিভোর্স দেবে এটা এমনিতেই সবাই জানবে।
কাজের লোক গুলি মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো।
শাকিলা চাঁচির দিকে তাকিয়ে হাসলো।
শীতল স্তব্ধ!
সবার সামনে এভাবে রাজ তাকে অপমান করছে সেটা মানতে পাচ্ছেনা সে।
-তুমি আমার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছো শীতল। ঘুম, খাওয়া, কাজ করা কিছুই করতে দিচ্ছো না।
-আমার জন্য আপনি কিছু করতে পাচ্ছেন না?
-নো। দেখতেই পাচ্ছো।
তোমার কারণে কতজনের চাকুরী চলে গেলো।
তোমার কারণে মেজাজ চড়ে উঠে আমার।
আল্লাহ পছন্দ করেন না এমন কাজ করতে বাধ্য করছো তুমি?
শীতল অবাক দৃষ্টি নিয়ে বলল- আমি বাধ্য করেছি?
-ইয়েস, তুমি।
শীতল নিশ্বাস নিলো লম্বা করে।
হাত জোর করে বলল- সব পরিষ্কার করে দিচ্ছি। খেয়ে নিন। আপনি ক্ষিদে সহ্য করতে পারেন না।
ওদের চাকুরী ফিরিয়ে দিন।
মেজাজ ঠান্ডা করুন।
আমি কখনো আপনার খাওয়ার সময় সামনে আসবো না। কাজের সময় কোন কথা বলব না।
খেয়ে নিন দয়া করে।
আমি নিজের কামরায় খাব এখন থেকে।
শীতল পেটে হাত দিয়ে হালকা সবজি মুখে দিয়েছে।
বমি লাগছে তবুও খেতে হবে সন্তানের কথা ভেবে।
কেউ তো আর অভিমান ভাঙিয়ে খাওয়াবেনা।
শীতল বিছানায় বসে আছে চুপচাপ।
রাজ ফাইল দেখছে কামরার সোফায়।
শীতল রাজের দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। খোঁজার চেষ্টা করছে।
রাজের কাছ থেকে দূরে থেকে কতটা কষ্ট হচ্ছে শীতলের সেটার কি কোন আইডিয়া আছে রাজের।
ডিভোর্স ওয়ার্ডটার কথা মনে হলেই শরীর কেঁপে উঠে।
কি ভাবে সম্ভব!
রাজকে ছাড়া শীতল কিভাবে থাকবে! দম বন্ধ হয়ে আসছে শীতলের।
-কি দেখছো?
শীতল কথা বললো না।
-এমন ভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আগে দেখোনি আমাকে?
সব সময় তো তোমার আঁচলে থাকতাম।
শীতল চুপচাপ।
আগে শীতলকে ছাড় এক মিনিটও থাকতে পারতো না রাজ। আঁচল হাতে বেধে রাখত। শীতল যেখানে রাজও সেখানে।
এখন রাজ দূরে সরে কিভাবে থাকতে পারে ঘন্টা ঘন্টা শীতলকে ছাড়া।
পেটে কারও হাতের স্পর্শ পেলো শীতল।
রাজের চোখে চোখ পড়লো শীতলের।
শীতল চোখ নামিয়ে নিলো।
-তোমার শরীর গরম কেন? জ্বর জ্বর লাগছে? ডক্টর ডাকব?
শীতল উঠে দাঁড়াতো চাইলো।
রাজ হাত ধরে ফেললো।
তোমার চোখ ফোলা কেন? এতে তোমার আর আমার সন্তানের ক্ষতি হবে।
-হাত ছাড়ুন। আপনার কাজে ডিস্টার্ব হবে। আমাদের কথা ভাবতে হবে না।
কাজ করুন।
-আমাকে কি করতে হবে সেটা আমি বুঝব।
-ওআচ্ছা। আপনার যা খুশি করবেন। অন্য কারও কথা তো কথায় নয়।
-শাড়ি পাল্টাও। শাড়িতে ময়লা।
-না। আমার শাড়ি আমি বুঝব। এই শাড়ি-ই পড়ে থাকব।
-অপরিষ্কার অপরিছন্নতা মহান আল্লাহ তায়ালাও পছন্দ করেন না। পাক-পরিষ্কার ইমানের অঙ্গ।
-আল্লাহ আরও অনেক কিছুই পছন্দ করেন না।
-এক কথার মধ্যে আরেক কথা না টেনে আনলে হয়না?
এখুনি শাড়ি পাল্টাও।
-আমাকে কি করতে হবে সেটা আমি বুঝব।
আমার ডায়লগ আমাকেই দিলে? ওয়াশরুমে চলো। শাড়ি মাখিয়ে ফেলেছো। এতো বমি আসে কোথা থেকে?
আমার বেবিটা খুব দুষ্টু হবে মনে হচ্ছে।
ওয়াশরুমে শীতলের শাড়ি পরিষ্কার করে দিলো রাজ।
মনোযোগ দিয়েই পরিষ্কার করে দিলো।
রাজ গলায় হাত রেখে বলল- তোমার কি জ্বর?
দুজন দুজনকে তাকিয়ে দেখছে অপলক দৃষ্টিতে।
রাজ শীতলের খুব কাছে এলো। শীতলের গালে নাক ঘষে দিলো। শীতল চোখ বন্ধ করলো।
হঠাৎ রাজ দাড়িয়ে পড়লো । জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো।
শীতল নিচে তাকিয়ে রইলো। টপ টপ করে চোখের পানি ফেলছে। শীতলের গাল অসম্ভব লা হয়ে গেলো।
রাফিয়া এখন আগের থেকেও গম্ভীর হয়ে থাকে রাফার মৃত্যুর পর।
রাফিয়া শীতলের কাছে মাঝে মাঝে বসে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।
এমন সহজ একটা আমল কিন্তু বিনিময় হিসাবে আপনাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে-
“আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘আদম সন্তানের মধ্যে প্রত্যেক মানুষকে ৩৬০ গ্রন্থির উপর সৃষ্টি করা হয়েছে। (আর প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ থেকে প্রদেয় সাদকা রয়েছে।) সুতরাং যে ব্যক্তি ‘আল্লাহু আকবার’ বলল, ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল, ‘সুবহানাল্লাহ’ বলল, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলল, মানুষ চলার রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা অথবা হাড় সরাল, কিম্বা ভাল কাজের আদেশ করল অথবা মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করল, (এবং সব মিলে ৩৬০ সংখ্যক পুণ্যকর্ম করল), সে ঐদিন এমন অবস্থায় সন্ধ্যা করল যে, সে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে দূর করে নিল।’’(মুসলিম, মিশকাত-১৭৯৮)
দিনে শুধু ৩৬০বার নয় অতি সহজেই আপনার ৫০০বার হয়ে যাবে যেভাবে-
রাসূল (সাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি যদি প্রত্যেক ফরয স্বলাতের পর-
“সুবহা-নাল্লাহ” (আল্লাহ কতই না পবিত্র-মহান)”«سُبْحَانَ اللَّه ((৩৩ বার
“আলহামদুলিল্লাহ” (সকল প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য) الْحَمْدُ لِلَّهِ، (৩৩ বার)
“আল্লা-হু আকবার” (আল্লাহ সবচেয়ে বড়)” اللَّهُ أَكْبَرُ (৩৩ বার)
তারপর ১ বার নিম্নোক্ত দোয়া বলে
« لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ».
(লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর)।
“একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।”
তাহলে ঐ ব্যক্তির সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা সমতুল্যও হয়। (মুসলিম-১২২৮)
আর এ দোয়া না পারলে আর ১ বার “আল্লা-হু আকবার” বলে ১০০ পূর্ণ করবে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, কোন ব্যক্তি ৫ ওয়াক্ত সলাত আদায় করলেই তার ৩৬০ বার নয় ৫০০ বার উপরোক্ত তাসবিহ, তাহলিল, তাকবীর, তাহমিদ আদায় এমনিতেই হয়ে যাচ্ছে তাছাড়া ৫ ওয়াক্ত সলাত আদায়ে আরোও ১টা বিরাট ফযিলত রয়েছে,—
“আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সে জান্নাতবাসী হবে। (নাসায়ী, সিলসিলাহ সহিহাহ-৯৭২)
-ভাবি, আমাদের ছোট থেকেই এই আমল গুলো শিখা উচিৎ। সবার উচিৎ সন্তানদের ছোট বয়স থেকেই এই গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো শিখিয়ে দেওয়া।
আমাদের নতুন বাবু সাহেব কে ছোট থেকেই ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষা দেব।
-ইনশাআল্লাহ! আপা।
শীতল অনেক ক্ষণ কোরআন তেলওয়াত করলো।
রাজ শীতলের কোরআন তেলওয়াত শুনছে মুগ্ধ শ্রোতার মতো।
শীতল বিছানায় বসতেই রাজ বলল,
-পেট ব্যথা করে তোমার?
-না।
-তোমার শরীর এখন কেমন?
-ভালো।
-আমার উপর জেদ করে তুমি আবার আমার সন্তানের ক্ষতি করোনা।
শীতল রাজের চোখের দিকে অবিশ্বাসের মতো তাকালো।
-আমার সন্তান ও। ওর ক্ষতির আগে আমি যেন বেঁচে না থাকি।
রাজ শীতলের ঠোঁটে আঙুল দিলো।
-হুশশ, এসব কথা বলবে না।
-আমার কিছু হলে আপনার কি? বরং ভালোই হবে।
শাকিলা আপা তো আছেই।
অনেক সুন্দরী।
রাজ হাসলো।
-অনেক কিছু আমার তোমার কিছু হলে।
-হাসছেন কেন?
রাজ কথা কাটিয়ে বলল- আমার উপর জেদ করেই তুমি আজ না খেয়ে রইলে। এতে আমার সন্তানের ক্ষতি হবেনা?
বলো আমায়?
-ওর কথা ভাবছেন আর আমি? আমার ক্ষতির কথা ভাবছেন না?
-তোমাদের দু-জনের কথায় ভাবছি আমি।
-সব মিথ্যে। আমার কিছু হলে আপনার শান্তি লাগবে। সুখে থাকবেন। শাকিলা আপাকে নিয়ে মহা সুখে সংসার করবেন।
রাজ আবারও শীতলের ঠোঁটে আঙুল দিলো।
শীতলের খুব কাছে এসে কানে কানে বলল- এসব যেন আর না শুনি।
তুমি ছাড়া কোন নারী আর আমার জীবনে প্রবেশ করতে পারবেনা।
তুমি শত বছর বেঁচে থাকো সুখী হয়ে। ইনশাআল্লাহ, আমিন।
শীতলের চোখের পানি মুছে দিলো রাজ। চোখ জোড়ায় চুমু দিলো।
-একদিন বলেছিলাম। আমার দামী অশ্রু গুলো তুমি ঝরাবে না। আমি একটা পাগল, সাইকো বুদ্ধিমান পাগল। যার মাথায় সবকিছু ধ্বংস করার প্ল্যান চলে।
-আপনি আমার চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষদের একজন। আপনি ইচ্ছে করে এমন করছেন।
আর এমন করবেন না। আমার যে খুব কষ্ট হয়। এই অবস্থায় এসব আমি নিতে পারিনা। আপনাকে ছাড়া থাকা অসম্ভব। আমার প্রতিটি নিশ্বাস আপনার জন্য।
রাজ আর শীতল দু’জন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো। দুজন খুব কাছে চলে এলো। নিশ্বাসের শব্দ চলছে শুধু কামরায়। দুজনের হৃদয় স্পন্দিত হচ্ছে ক্রমশ।
শীতলের ঠোঁট জোড়া নড়ছে। রাজ হালাকা করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
মাঝরাতে রাজের ঘুম ভাঙলো।
শীতল রাজকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে আছে যেন রাজ পালিয়ে যাবে। শীতলকে বুকে নিয়ে রাজের অস্হিরতা বেড়েছে। সে দূর্বল হয়ে পড়বে। রাজ শীতলকে ছেড়ে সোফায় গিয়ে বসলো।
শীতলের কাছে আর থাকা যাবেনা। শীতলের আছে প্রচন্ড রকমের আকর্ষণ ক্ষমতা। রাজ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে একাই জীবন যাপন করবে। কোন মেয়েকে ভরসা করবে না। কোন মেয়ের জায়গা নেই রাজের বুকে।
আছে শুধু ঘৃণা।
শীতলের ঘুম ভেঙে গেলো। হাত দিয়ে বিছানায় রাজকে পেলো না।
রাজ সোফায় বসে আছে। শীতলের দিকে তাকিয়ে আছে।
শীতল ধীরে ধীরে বিছানা থেকে উঠে রাজের কাছে আসতে চাইলো।
শাড়ি এলোমেলো থাকায় পায়ে জড়িয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো তার।
শীতল ভয়ে আতংকে চোখ বন্ধ করে ফেললো দুই হাত দিয়ে।
চোখ খুলে রাজকে দেখতে পেলো সে।
-পড়ে গেলে কি হতো?
সর্বনাশ হয়ে যেত আমার।
কি ব্যথায় না পেতে তুমি।
কল্পনাও করতে পাচ্ছিনা।
শীতল নিশ্চিন্তে গা এলিয়ে দিলো রাজের উপর।
রাজ আছে আর কি ভয়?
রাজ শীতলকে কোলে নিলো।
সোফায় বসিয়ে দিলো
পেটে হাত বুলিয়ে বলল- ব্যাথা পেয়েছো?
শীতল মাথা নাড়ালো না সূচক।
-দেখেশুনে হাঁটবে। একা হাঁটবে না কিন্তু। সার্ভেন্টদের বলে দেব।
-না।
-হোয়াট?
-আপনার সাথে হাঁটবো।
রাজ কথা বললো না।
শাড়ির কুচি ঠিক করে দিলো।
শীতল টান মেরে কুচি খুলে ফেললো। রাজ আবার ঠিক করলো। শীতল আবার খুলে ফেললো।
শীতল যতবার খুলছে ততবার রাজ কুঁচি ঠিক করে দিচ্ছে।
কোন ক্লান্তি বা রাগ বা বিরক্ত বোধ করছেনা রাজ। কিছু বলছেও না।
শীতল এক সময় ক্লান্ত হয়ে গেলো।
রাজের গালে হাত দিয়ে শীতল শান্ত স্বরে বলল- কি হয়েছে আপনার? সব খুলে বলুন? কি সমস্যা আপনার?
আমার সাথে পরামর্শ করুন। আমি আপনার স্ত্রী। সমস্যা যখন তখন সমাধানও আছে।
ছেলেমানুষী করছেন কেন? এই অবস্থায় আর নিতে পাচ্ছিনা আমি।
রাজ শীতলের গালে হাত দিয়ে বলল- তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনা।
তুমি চলে যাও। আমার কোন সমস্যা নেই। সমস্যা যা আছে তা তুমি চলে যাওয়ার পরেই সমাধান হয়ে যাবে।
-বুঝেছি আমাকে আর ভালো লাগেনা৷
-ভুল।
-এটাই সত্যি।
-জাস্ট লিভ মি এলন।
-আমি কেইস করব।
-কি?
-যেটা শুনলেন।
-কেইসের ধরণ?
-একটা নিরীহ মেয়েকে ঠকিয়েছেন। তার সুযোগ নিয়েছেন।
-ওআচ্ছা।
-বলব আপনি আমার সাথে জোরজবরদস্তি করেছেন।
-আর কি?
-আমাকে নির্যাতন করেছেন। জোর করে বিয়ে করেছেন তারপর। এখন আমি প্রেগন্যান্ট।
-আরকিছু?
-আপনার এ ফেয়ার আছে অনেক গুলো, সুন্দর চেহেরা নিয়ে অনেক গুলো প্রেম করেন আপনি।
রাজ হাসলো।
-নারী নির্যাতন, নারী নিপিড়ন, চিটিং, চিটিংবাজ ইত্যাদি সব মামলা একসাথে ঠুকে দেব আপনার নামে।
-কিছু বাদ পড়েছে কেইসে?
-শাকিলা আপার সাথে আপনার অন্যরকম সম্পর্ক আছে। আপনি তাকে বিয়ে করার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছেন তাই প্রেগন্যান্ট স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে চাচ্ছেন।
বলব আপনি দুশ্চরিত্রবান লোক। চরিত্রহীন কোথাকার!
.
❤মহান আল্লাহ তায়ালার ৯৯টি নামের তিনটি নাম (আরবি, বাংলা)
❤৩৭. ﺍﻟْﻜَﺒِﻴﺮُ আল-কাবীর সুমহান।
৩৮. ﺍﻟْﺤَﻔِﻴﻆُ আল-হ়াফীয সংরক্ষণকারী।
৩৯. ﺍﻟْﻤُﻘِﻴﺖُ আল-মুক্বীত লালনপালনকারী❤
চলবে……………