লালগোলাপ❤
Part-45
Writer-Moon Hossain
“আজ জুম্মার দিন। জুম্মা পড়ে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব।দুপুরে একসাথে রেস্টুরেন্ট খাব।তৈরি থেকো। দারোয়ানের কাছে ঔষধ দিয়েছি। খেয়ে নেবে গুড গার্লের মতো। ভালোবাসা নিও!
শীতল ম্যাসেজটা পড়ে ওয়াশরুমে অনেক ক্ষণ কাঁদলো।
আয়নায় নিজেকে দেখলো। গলা লাল হয়ে আছে। দাগ বসেছে দাঁতের।
শীতল যা ভেবেছে তাই হয়েছে। রাজ হঠাৎ শীতলের হিজাবে হাত দিয়েই কটাস করে গলায় কামড় বসিয়ে দিয়েছে।
শীতল কিছু বলেনি। বলার সুযোগ পায়নি।
রাজ ওকে গাড়ি করে বাংলোয় পৌঁছে দিয়েছে।
পৌঁছে দেওয়ার সময় রাজ একটা কথাও বলেনি। পুরো রাস্তায় নিরবতা কাজ করেছে দুজনের মধ্যে।
বাংলোয় আসার পর শীতল শুধু বলেছিলো।
-মাহবুব সাহেব আসল কথাটা জানেনা। তাই হয়ত ভুল বুঝেছে। উনাকে কিছু করার দরকার নেই।
রাজ শুধু মাথা নাড়ালো।
শীতল সারা রাত ঘুমাতে পারেনি। গলা ব্যথা করছিলো অসম্ভব।
রাজও রাতে ঘুমুতে পারেনি।
টানা তিন ঘন্টা সে শাওয়ার নিয়েছে। তারপর রাতেই বের হয়ে যায়।
বাংলোর সামনে গাড়ি থামায়। শীতলের রুমের জানালা নিচে চুপচাপ পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে থাকে সে।
গাড়িতে ঔষধ আছে। শীতলের জন্য এনেছিলো।
বাট দেওয়ার সাহস হচ্ছে না। শীতল নিশ্চই ঘুমুচ্ছো। ঘুম থেকে জাগানো ঠিক হবেনা। তারচেয়ে বরং যখন ঘুম ভাঙবে তখন ঔষধ খাইয়ে আসবে। খুব ভোরে শীতলের যখন ঘুম ভাঙে তখন জানালার পর্দা টেনে আশেপাশে চোখ বুলায় সে।
রাজ মাঝে মধ্যে রাতে এবং ভোরে বাংলোর সামনে এসে দাঁড়ায় বলে এটা জানে। শীতল জাগলে অবশ্যই পর্দা টেনে বাহিরে চোখ বুলাবে।
রাজ তখন বাংলোর ভেতরে ঢুকে ঔষধ খাইয়ে আসবে।
জানালার নিচে ঝোপঝাড়। প্রচুর মশার উপদ্রব হয়েছে।
রাজ সারারাত মশার কামড় সহ্য করলো। শীতলকে রাজ কামড় দিয়েছে আর রাজকে মশা কামড় দিচ্ছে। রাজ কথাটা ভেবে হাসলো খানিক্ষন।
তারপর নিজে নিজেই বলল- বউকে কামড় দেওয়ার শাস্তি এবার মহান আল্লাহ তায়ালা কড়ায় গন্ডায় মশা দিয়ে শোধ নিচ্ছে।
রাতে শীতলের মনে হলো আবছা আবছা কিছু তার দিকে এগিয়ে আসছে। আবছা কিছু একটা তার গলায় কামড়ের জায়গায় হাত রাখলো।
শীতল ধড়মড় করে বিছানা থেকে উঠে পড়লো। শেষরাতে একটু চোখ লেগেছিলো।
এটা কি সপ্ন না সত্যি! শীতলের অস্হিরতা বেড়ে গেলো। গলা শুকিয়ে গেলো।
কামরায় চোখ বুলালো ভয়ে ভয়ে। রাজ আবার কামরায় আসেনি তো! রাজের যা স্বভাব তাতে কামরায় আসতেই পারে। তাতে শীতল অবাক হবেনা। বরং রাজ না আসলেই শীতল অবাক হবে।
-শুভ সকাল।
সপ্ন দেখেছিস নাকি?
নে পানি খেয়ে নে। তোর শরীরে ঘামে চটচটে হয়ে আছে। দয়া করে শাওয়ার নে।
শিশির কে দেখে শীতলের অস্হিরতা খানিকটা কাটলো। রাজ আসেনি কামরায়। বাঁচা গেলো। শীতল ঢকঢক করে পানি গেলো। ফজরের আজানের সুরেলা আওয়াজ ভেসে আসছে।
ফজরের আজান দিচ্ছে। মসজিদে নতুন ইমাম এসেছে মনে হয়। নতুন ইমামের আজান দেওয়াটা খুব অমায়িক।ভালো লাগছে আজান শুনে। গলাটা কেমন চেনা চেনা লাগছে।
রাজের আজান দেওয়ার মতো লাগছে। হ্যাঁ এটা তো রাজের গলা।
শিশির বলল- এটা নতুন ইমামের আজান। কি সুরেলা! এমন আজান শুনে মনটা ফ্রেশ হয়ে গেলো। আজ ছুটির দিনটা ভালো কাটবে দেখে নিস।
শীতল শিশিরের কথা শুনে জানালার পর্দা টেনে দিলো।
রাজ এসেছিলো রাতে। বাংলোর রাস্তার সাথে মসজিদ আছে। ওখানেই আছে রাজ ।
নামাজ পড়ার পরেই রাজের ম্যাসেজ এলো।
শিশিরকে দারোয়ান এসে ঔষধ দিয়ে গেলো।
-শীতল দারোয়ান ঔষধ দিয়েছে। এগুলো কিসের ঔষধ? তোর শরীর খারাপ?
– হ্যাঁ।
শীতল ঔষধ গুলো নিয়ে ড্রয়ারে রেখে দিলো।
ব্যথা দিয়ে আবার ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে। এমন ভালোবাসা দরকার নেই শীতলের। শীতল ঠিক করেছে রাজের দেওয়া ঔষধ সে খাবেনা এবং নিজেও ঔষধ কিনবে না।
এতে যদি ইনফেকশন হয়ে যায় তাহলে তাই হোক।
শীতলকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই তো রাজ কিছু না ভেবে কামড় দিয়েছে। মসজিদের নামাজ পড়া শেষ হলে
ইমাম সাহেব জুম্মার ফজিলত ব্যাখ্যা করলেন-
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
বিষয় জুমআর দিনের ফযীলত ও বৈশিষ্ট্য
১। জুমুআহ অর্থাৎ জমায়েত বা সমাবেশ ও সম্মেলনের দিন। এটি মুসলিমদের সাপ্তাহিক ঈদ ও বিশেষ ইবাদতের দিন। মহানবী (সাঃ) বলেন, “এই দিন হল ঈদের দিন। আল্লাহ মুসলিমদের জন্য তা নির্বাচিত করেছেন। অতএব যে জুমআয় আসে, সে যেন গোসল করে এবং খোশবূ থাকলে তা ব্যবহার করে। আর তোমরা দাঁতন করায় অভ্যাসী হও।” (ইবনে মাজাহ্, সুনান ১০৯৮নং)
২। জুমআর দিন সবার চাইতে শ্রেষ্ঠ দিন। এমনকি ঈদুল ফিতর ও আযহা থেকেও শ্রেষ্ঠ।
৩। এই দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং বেহেশ্ত দান করা হয়েছে।
মহানবী (সাঃ) বলেন, “যার উপর সূর্য উদিত হয়েছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল জুমআর দিন। এই দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাঁকে বেহেশ্তে স্থান দেওয়া হয়েছে এবং এই দিনেই তাঁকে বের করে দেওয়া হয়েছে বেহেশ্ত থেকে। (এই দিনেই তাঁর তওবা কবুল করা হয়েছে, তাঁর মৃত্যু হয়েছে এই দিনেই। আর কিয়ামত সংঘটিত হবে এই দিনেই।” (মুসলিম, মালেক, মুঅত্তা, আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, ইবনে হিব্বান, সহীহ, জামে ৩৩৩৪নং)
তিনি বলেন, “জুমআর দিন সকল দিনের সর্দার এবং আল্লাহর নিকট সবার চেয়ে মহান দিন। এমনকি এ দিনটি আল্লাহর নিকট আযহা ও ফিতরের দিন থেকেও শ্রেষ্ঠ। এই দিনে রয়েছে ৫টি বিশেষ বৈশিষ্ট্য; এই দিনে আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেছেন, এই দিনে তাঁকে পৃথিবীতে অবতারণ করেছেন, এই দিনে তাঁর ইন্তিকাল হয়েছে, এই দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যদি কোন মুসলিম বান্দা সে মুহূর্তে আল্লাহর নিকট কোন কিছু বৈধ জিনিস প্রার্থনা করে, তাহলে আল্লাহ তাকে তা দিয়ে থাকেন। এই দিনে কিয়ামত সংঘটিত হবে। আর প্রত্যেক নৈকট্যপ্রাপ্ত ফিরিশ্তা, আকাশ, পৃথিবী, বাতাস, পর্বত, সমুদ্র এই দিনকে ভয় করে।” (ইবনে মাজাহ্, সুনান ১০৮৪নং)
৪। এই দিনে মহান আল্লাহ জান্নাতে প্রত্যেক সপ্তাহে বেহেশতী বান্দাগণকে দর্শন দেবেন। হযরত আনাস (রাঃ) (ولدينا مزيد) এর ব্যাখ্যায় বলেন, ‘মহান আল্লাহ বেহেশতীদের জন্য প্রত্যেক জুমআর দিন জ্যোতিষ্মান হবেন।’ এই দিনের আসমানী ফিরিশ্তাবর্গের নিকট নাম হল, ‘য়্যাউমুল মাযীদ।’
৫। এই দিনে গুনাহ মাফ হয়। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওযু করে জুমআর উদ্দেশ্যে (মসজিদে) উপস্থিত হয়। অতঃপর মনোযোগ সহকারে (খুতবাহ্) শ্রবণ করে ও নীরব থাকে সেই ব্যক্তির ঐ জুমুআহ থেকে দ্বিতীয় জুমুআহর মধ্যবর্তীকালে সংঘটিত এবং অতিরিক্ত তিন দিনের পাপ মাফ করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি (খুতবা চলাকালে) কাঁকর স্পর্শ করে সে অসার (ভুল) কাজ করে।” (মুসলিম, সহীহ ৮৫৭ নং আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান)
৬। এই দিনে এমন একটি সময় আছে, যাতে দুআ কবুল হয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “জুমআর দিনে এমন একটি (সামান্য) মুহূর্ত আছে, যদি কোন মুসলিম বান্দা নামায পড়া অবস্থায় তা পায় এবং আল্লাহর নিকট কোন মঙ্গল প্রার্থনা করে, তাহলে আল্লাহ তাকে তা দিয়ে থাকেন।” (বুখারী ৯৩৫নং, মুসলিম, মিশকাত ১৩৫৭নং)
এই মুহূর্তের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, তা হল ইমামের মিম্বরে বসা থেকে নিয়ে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়। (মুসলিম, মিশকাত ১৩৫৮নং) অথবা তা হল আসরের পর যে কোন একটি সময়। অবশ্য এ প্রসঙ্গে আরো অন্য সময়ের কথাও অনেকে বলেছেন। (যাদুল মাআদ, ইবনুল কাইয়েম ১/৩৮৯-৩৯০)
৭। এই দিনে দান-খয়রাত করার সওয়াব বেশী। হযরত কা’ব (রাঃ) বলেন, ‘অন্যান্য সকল দিন অপেক্ষা এই দিনে সদকাহ্ করার সওয়াব অধিক।’ (যাদুল মাআদ, ইবনুল কাইয়েম)
৮। জুমআর ফজরের নামায জামাআত সহকারে পড়ার পৃথক বৈশিষ্ট্য আছে। মহানবী (সাঃ) বলেন, “আল্লাহর নিকটে সব চাইতে শ্রেষ্ঠ নামায হল, জুমআর দিন জামাআত সহকারে ফজরের নামায।” (সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৫৬৬নং)
৯। এই দিনে বা তার রাতে কেউ মারা গেলে কবরের আযাব থেকে রেহাই পাবে। মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে মুসলিম জুমআর দিন অথবা রাতে মারা যায়, আল্লাহ তাকে কবরের ফিতনা থেকে বাচান।” (আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান, জামে ৫৭৭৩)
রাজ মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলো বাংলোর সামনে।
শীতলকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। আচ্ছা ফোন করলে কেমন হয়? একটিবার শীতলকে না দেখলেই নয়।
ইশশ,কাল ওভাবে কামড় দেওয়া ঠিক হয়নি রাজের।
দাঁতের দাগ বসে পড়েছে।এটা কি করলো ও!
দারোয়ান বলল- আসসালামু আলাইকুম স্যার!
ভেতরে আসুন।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম! নো। ঠিক আছি এখানেই।
শীতলকে সেই কখন কল করে বলেছিলো একটু বারান্দায় দাঁড়াতে।
এখন এগারোটা বাজে। কড়া রোদ রাজের গায়ে এসে পড়েছে। পাঞ্জাবির দুটো বোতাম খুলে একটু হালকা হাওয়ার অপেক্ষায় রাজ হাটাহাটি করছে। এতে গরমন আরও বেড়েছে। রাস্তা দিয়ে কত লোকজন যাচ্ছে। রাজ অনেক ক্ষণ ধরে বাংলোর সামনে দাড়িয়ে আছে। তাতে লোকেদের কিছু আসে যায়না। আজকাল লোকজন এতো ব্যস্ত যে কারও কোন কৌতুহল নেই। কিছু লোক অবশ্য ভ্রু কুঁচকে রাজের দিকে তাকালো। কারও সাহস বা কৌতুহল হলো না রাজকে কিছু বলার। রাজ আবার কল করলো। শীতল ধরলো না।
ফোন সাইলেন্ট করে সে সোফায় বসে কাঁদছে।
আজ তার বাবুর কথা খুব মনে পড়ছে। একটি বার মুখ খানি দেখেওনি সে। কি যে আফসোস! শীতল শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করছে, “হে মহান আল্লাহ তায়ালা, পরম দয়ালু, অসীম ক্ষমতার অধিকারী, আমাকে ইহকালে আমার সন্তানের মুখ দেখাওনি, পরকালে একটি বারের জন্য তাকে দেখার তৌফিক দান করো। একটি অসহায় সন্তান হারা মায়ের আর্জি তোমার কাছে।
ফোন সাইলেন্টে থাকার পরও ভোঁ ভোঁ আওয়াজ হচ্ছে।
রোদে দাড়িয়ে থাকা কি যে কষ্টের তা রাজ টের পেলো।
কত ফেরিওয়ালা রোদের মধ্যে ফেরি করে। রিকশাওয়ালা, ঠেলাগাড়ি ওয়ালা, ভ্যানগাড়ি ওয়ালা, সারাদিন নিদারুণ কষ্টে রোজগার করে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে। আমরা একটি বারও তাদের কথা ভাবিনা। তাদের কাছ থেকে শুধু নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে নিই।এক ভিক্ষুক রাজের সামনে হাত পাতলো, রাজ ওয়ালেট বের করতে করতে ঠিক করলো ওয়ালেটে যত টাকা থাকবে তত টাকায় ভিক্ষুকের। ভিক্ষুক কখনো এতো টকা এক সাথে দেখেনি। সে কিছুটা ভয় পেলো। ওয়ালেট থেকে মাত্র একটা নোট নিয়ে সে কেটে পড়লো।রাজ আকাশের দিকে তাকালো। এতো টাকা দেওয়ায় ভিক্ষুক টাও শেষে তাকে পাগল ভাবলো। এজন্যই পুরো টাকা টা নেয়নি। সবাই তাকে কেন পাগল ভাবে! এখন তো সে সুস্থ! একটু পর আরও দুজন ভিক্ষুক এলো। তারপর আরও এলো। রাজ সবাইকে একটা একটা নোট বের করে দিয়ে দিলো। রাজের কাছে এখন শুধু ওয়ালেট আছে। ছোট একটা ছেলেকে সে ওয়ালেট টা দিয়ে দিলো। ছেলেটা ওয়ালেট টা কয়েক বার দেখে পকেটে ভরে নিলো।
ছেলেটা যাওয়ার পরেই মনে হলো, আরে ওয়ালেট টা শীতলের দেওয়া ছিলো। ছেলেটা কে ওয়ালেট টা দেওয়া ঠিক হয়নি। এখন কি হবে! ছেলেটার কাছ থেকে সে কি ওয়ালেট টা নিয়ে আসবে! আরকিছু ভাবতে পাচ্ছেনা রাজ রোদের মধ্যে। অসম্ভব গরম লাগছে তার৷ রাজ ঠিক করলো শীতল যতক্ষণ না আসবে ততক্ষণ সে কড়া রোদের মধ্যে দাড়িয়ে থাকবে। রোদে পুড়ে কয়লা হয়ে যাবে তবুও সে ছায়ায় যাবেনা। শীতল আসছেনা দেখে রাজ গাড়িতে মাথা ঠুকলো কয়েকবার৷ তাতেও কোন লোক এসে জিজ্ঞেস করলো না কিছু রাজকে। সবাই আরচোখে দেখে চলে যাচ্ছে নিজ নিজ গন্তব্যে।
” আমার মগজ এমনিতেই নড়বড়ে। এই রোদে মগজ টা না আবার সিদ্ধ হয়ে যায়। পরে ঠেলা সামলাতে পারবে তো।
শীতল ম্যাসেজ টা সিন করলো রাজের।
শীতল কান্না থামিয়ে বারান্দায় এলো। সে জানে তাকে না দেখে রাজ যাবেনা।
এমনিতেই মাথার মগজ নড়বড়ে । এই গরমে নড়বড়ে মগজটা সিদ্ধ হয়ে যাবে।
জুম্মার নামাজ শেষে রাজ বাংলোয় ঢুকলো।
শিশির ঘুমুচ্ছো খেয়েদেয়ে।
শীতল খায়নি। হতে পারে সে রাজের সাথে খাবে বলে খায়নি।
কলিং বেল বাজছে।
শীতল দরজা খুলে রাজকে দেখলো।
গোলাপি একটা পাঞ্জাবি পড়ে আছে সে। দেখতে খুব সুন্দর লাগছে তাকে। বরাবরই রাজকে পাঞ্জাবিতে মানায়। আজ একটু বেশি মানাচ্ছে।
-ওভাবে তাকিও না। জানি আমি হ্যান্ডসাম। তবুও লজ্জা লাগছে। আসসালামু আলাইকুম!
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। কি লাগছে?
-লজ্জা!
-লজ্জা আর আপনি?
এই কথা শুনলে লজ্জারও লজ্জা লাগবে।
-হয়েছে থাক থাক। আর প্রশংসা করতে হবেনা।
ভেতরে আসতে বলবে না?
– না আসতে বললে বুঝি আসবেন না?
-এটা অবশ্যই ঠিক বলেছো।
রাজ নিজে নিজেই ভেতরে ঢুকে পড়লো।
সোফায় বসতে বসতে বলল- অফিসের বস এসেছো তোমার বাসায়!
-তো?
– আপ্যায়ন করো।
– কিভাবে?
-কিছু খাওয়াতে পারও তো!
-কি খাবেন?
-চুমু।
-কি?
-বাংলা বুঝো না? চুমু! ইংরেজিতে কিস।
-ওআচ্ছা।
-মেহমানকে খালি মুখে যেতে দিতে নেই। বস বলে কথা।
-তাই নাকি?
-ইয়েস। সো আমার খাবারটা কি আমি নিজে খাব? না তুমি খাইয়ে দেবে?
-আপনি নিজে একবার চেষ্টা করে দেখুন তো?
রাজ মুচকি হেসে এক টানে শীতলকে সোফায় নিজের কোলে বসিয়ে দিলো। ঠোঁটের কাছে মুখ নিতেই শীতল পায়ে একটা চাপ দিলো জোরে।
রাজ আহা! করতেই শীতল গালে একটা খামচি দিয়ে উঠে পড়লো।
রাজ ব্যথা পেয়েছে এমন ভাব করে বলল- বসের সাথে বেয়াদবি? এভাবে জব থাকবে? এবারের মতো মাফ করে দিলাম।
শীতল অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো জীব দেখিয়ে।
-একটু আধটু আদর-সোহাগ, যত্ন-আত্তি করলে প্রমোশন পেতে পারও। সো সুযোগ টা কাজে লাগাও। বস যখন তোমার বাড়িতে এসেছে। নীরব জায়গা।
শীতল রাগের জায়গায় একটু হাসলো।
হাসিটা রোমান্টিক ছিলো।
হঠাৎ সে সোফায় বসে পড়লো রাজের গা ঘেঁষে।
রাজ অবাক হলো।
অবাক হয়ে সরে বসলো।
শীতল আবারও রাজের গা ঘেঁষে বসলো একদম কাছে।
শীতল কেমন করে যেন রাজের দিকে তাকাচ্ছে। ঠোঁটে মুচকি হাসি। আঙুল দিয়ে শাড়ি পেঁচাচ্ছে আর লজ্জা লজ্জা কেমন যেন ভাব করছে। রাজের দিকে তাকিয়ে অনবরত ভাবে চোখের পলক ফেলছে শীতল।
রাজ একটু কাশলো।
-কি খাবেন স্যার?(শীতল হাসলো) আমি নিজ হাতে বানিয়ে নিজ হাতে মুখে তুলে খাওয়াব আপনাকে(আবার হাসি।) বলুন স্যার? বলুন না? (হাসি)।
-তুমি এমন করছো কেন?
শীতল রাজের গালে হাত দিয়ে বলল- এমন করার কথাই তো ছিল স্যার।
রাজ একটু সরে বসে বললো- খুব গরম করছে।
-তাহলে বাতাস দিই?
শীতল শাড়ির আঁচল দিয়ে রাজকে বাতাস করতে লাগলো।
রাজ শীতলের আচরণে অবাক হচ্ছে। হঠাৎ শীতলের এমন মিষ্টি আচরণে রাজ খানিকটা ভয় পাচ্ছে।
-আহা! আপনার কপালে ঘাম! দেখি দেখি এদিকে ঘুরুন! মুছে দিই। শীতল লাজুক একটা হাসি দিলো।
-তুমি অমন করছো কেন?
-কেমন করছি?
-আমার সাথে এতো ঘেঁষাঘেঁষি করছো কেন?
তুমি তো এমন কখনো করোনা।
-আগে করিনি। এখন করব।
-আর কি করবে?
-আরও অনেক কিছু।
একটু কাছে আসুন না।
-আর কত কাছে? অনেক কাছেই আছি।
-আরও কাছে। যেখানে আমাদের মাঝে এক চুলও ফাঁক থাকবেনা। আরও কাছে আসুন! একটু আদর করি আপানাকে!
-আমার কেমন যেন লাগছে।
-একটু আদর করে দিই সব কেমন লাগা ভালো লাগাতে পরিণত হবে।
শীতল রাজের পাঞ্জাবির বোতাম খুলছে।
-কি করছো? বোতাম কেন খুলছো?
শীতল রাজে ঠোঁটে আঙুল দিলো।
-হুশশ, কোন কথা নয়। শুধু অনুভব করুন। বোতাম খোলা হলে শীতল রাজের বুকে মুখ নিয়ে ঘ্রাণ নিতে থাকলো,
হাত দিয়ে রাজের গালে হাত বুলাতে লাগলো, অন্য হাত দিয়ে রাজের পিঠে হাত বুলাচ্ছে,পা দিয়ে রাজের পায়ে পা ঘষছে।
রাজ বলল- আমার ভয় করছে তোমার বিহেভিয়ারে। এতো মিষ্টি বিহেভিয়ার হজম হচ্ছে না, এরচেয়ে তোমার তেঁতো বিহেভিয়ার ঢের ভালো। আই লাইক ইট।
শীতল বলল- উফফ, চুপ করুন। আমাকে আমার কাজ করতে দিন।
শীতল রাজের গালে নাক ঘষছিলো।
-তোমার এতো এতো মিষ্টি বিহেভিয়ারে আমার ডায়বেটিস হয়ে যাচ্ছে, হার্ট নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে, আর এক সেকেন্ডে হার্ট-অ্যাটার্ক হতে পারও। ছাড়ও আমাকে দয়া করে।
-না। চুপচাপ বসে থাকুন।
রাজ চোখ বন্ধ করে শীতলকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। লাভ হলো না। শীতল আরও আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরলো রাজকে।
রাজ আকস্মিক বড় ধাক্কা খাচ্ছে শীতলের এমন আদরে। হজম হচ্ছে না।
শীতল দেখলো রাজ শক্ত করে চোখ বুঝে আছে।
হঠাৎ শীতল রাজের সাথে এতো ঘেঁষাঘেঁষি করছিলো যে শীতলকে ছাড়াতে ছাড়াতে নিজেই সোফা থেকে পড়ে গেলো।
রাজ ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়াতেই শীতল সোফায় গা এলিয়ে দিলো।
– কি হলো স্যার? পড়ে গেলেন কেন?
আমার পাশে বসুন, আদর এখনো বাকি আছে। আপনার মতো হ্যান্ডসাম, গুড লুকিং,ড্যাসিং স্যারকে সুন্দরী স্টাফ হিসেবে একটু আদর-যত্ন আত্তি করছিলাম। আমার জবটা একটু দেখবেন স্যার।
এবার তো প্রমোশন দেবেন তাইনা?
রাজ নিজেকে সামলে নিয়ে বলল- আমার তোমার মতো সুন্দরী স্টাফের আদর-যত্ন আর লাগবেনা।
মাই গড তোমার এতো মিষ্টি আদরে আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। বাপ রে বাপ।
দয়া করে আগের মতো তেঁতো বিহেভিয়ার করো আমার সাথে, কেমন?
একমাত্র এই বিহেভিয়ার আমার হজম হয়।
– আপনি যা বলবেন।
স্যার আমার প্রমোশন টা?
-দম নিতে দাও। তুমি তো আমার হার্ট-অ্যাটার্ক করিয়ে দিচ্ছিলে।
শীতল সোফায় একটানে রাজকে বসিয়ে কাছে এসে গালে হাত বুলিয়ে বলল- নেক্সট টাইম এমন মিষ্টি ব্যবহার করবো যে নগতে ডায়াবেটিস হয়ে যাবে। কথাটা মনে রাখবেন ডিয়ার স্যার?
রাজ অসহায় বসের মতো মাথা নাড়ালো।
শীতলকে দাড় করিয়ে রাজ গাড়ি নিয়ে এসে দেখে মাহবুব বাংলোতে গাড়ি নিয়ে এসেছে।
শীতলের সাথে কথা বলছে। শীতল কিছু বলছেনা।
রাজ পকেটে হাত রেখে ওদের কাছে এলো।
মাথায় রক্ত চড়েছে আজ, চোখ রক্তিম লাল দেখাচ্ছে।
মাহবুব বলল- আসসালামু আলাইকুম স্যার।
আপনি এখানে?. কোন দরকারে?
রাজ কথার জবাব দিলো না।
শীতল রাজকে দেখে ভয় পেলো। শীতল বুঝতে পাচ্ছে মাহবুবের দিন শেষ হয়ে এসেছে।এই সিচুয়েশনে শীতলের ইচ্ছে করছে মাটিতে গর্ত করে মাটির তলায় ঢুকে পড়তে।
মাহবুব আবার বলল- আপনি এসেছেন ভালো হয়েছে। আপনি আমার গার্ডিয়ানের মতো। আজ ছুটির দিন তাই শীতলকে সারপ্রাইজ দিতে এলাম। রেস্টুরেন্টে একসাথে খাব। কি বলেন স্যার?
রাজ শীতলের দিকে তাকালো।
শীতল ঢোক গিলে বলল- মাহবুব সাহেব আপনি বিষয়টি বুঝতে পাচ্ছেন না। আমি বিবাহিতা!
-আরে ধুর এসব ম্যাটার না। আপনার দশটা বিয়ে হয়ে থাকলেও আপনাকেই বিয়ে করব। না দেখেই খুব মায়ায় পড়েছি আপনার।
রাজ পেকেট থেকে হাত বার করে পাঞ্জাবির হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করলো।
শীতল হন্তদন্ত হয়ে বলল- আপনি বাসায় যান। আমার মাথা ঘুরছে আমি ঘুমুব। আসসালামু আলাইকুম! আল্লাহ হাফেজ।
– বুঝেছি। নো প্রবলেম।
তুমি একটু রেস্ট নাও। আমি ড্রয়িংরুমে বসে ওয়েট করব।
কি বলেন স্যার।
মাহবুব বাংলোর ভেতরে ঢুকে পড়লো।
শীতল রাজের পাঞ্জাবির হাতা নামিয়ে দিলো। তারপর হাট দুটো দুদিকের পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল- আল্লাহর দোহায়! হাত দুটো পকেটে ভরে রাখুন।
তা না হলে খুনাখুনি হয়ে যাবে।
আমি বিষয়টা দেখছি। দেখলেন তো আমার বিয়ে হয়েছে জেনেও কেমন হেসে উড়িয়ে দিলো।
রাজ ভেতরে ঢুকতেই মাহবুব বলল- বসুন স্যার।
বাংলোটা কি সুন্দর দেখেছেন? চা কফি কিছু খাবেন?.
রাজ বলল- লেট হয়ে যাচ্ছে। রেস্টুরেন্টে যেতে হবে। এরপর তো বিকেল হয়ে যাবে।
-ঠিক বলেছেন স্যার।
শীতল বলল- আমি যাব না।
মাহবুব বলল- এই কথা বললে চলবেনা।
যেতে হবে। স্যার শীতলকে কিছু বলুন। আপনি বস তাই আপনার কথা ফেলতে পারবে না।
রাজ বলল- মিস/মিসেস শীতল চলুন না! আপনি তো রেডি হয়ে আছেন।
শীতল ভয়ে ভয়ে বলল- আমার মাথা ঘুরছে। ঘুমুব।
-এসে ঘুমুবেন। খুব ভালো ঘুম হবে আপনার।
রাজ শীতলের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।
– ঠিক আছে যাব। শিশিরকে ডেকে নিই।
রাজের গাড়িতে সবাই মিলে যাচ্ছে। রাজ ড্রাইভারের মতো ড্রাইভ করছে। পাশে মাহবুব বসেছে। পেছনের সিটে শীতল আর শিশির। শিশির বলেছে সে একবার খেয়েছে তাই আর খাবেনা। সে গাড়িতে ঘুমিয়ে সবার জন্য অপেক্ষা করবে।
মাহবুব সামনে বসলেও পেছন ফিরে শীতলের সাথে আলাপ করছে। সব বিয়ের প্ল্যান।
রাজ আয়নায় শীতলকে দেখছে শুধু। শীতল আয়নায় তাকিয়ে রাজকে দেখছে।
দুজন চোখে চোখে কথা বলছে।
রাজ জোরে একটা ব্রেক দিলো। মাহবুব কয়েকটা ধাক্কা খেয়ে সামনে ফিরে তাকালো।
রাজ বলল- রেস্টুরেন্ট এসে পড়েছি।
– ওআচ্ছা স্যার।
রাজের আগে মাহবুব গাড়ি থেকে নেমে শীতলের গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলল- মাই কুইন, প্লিজ কামিং!
শীতল দেখলো রাজ মাহবুবের পেছনে দাড়িয়ে আছে পেকেটে হাত দিয়ে।
শীতলের খুব কান্না পেলো।
রেস্টুরেন্টে দুটো টেবিল বুক করা হয়েছে। একটা শীতলের একার। অন্যটা মাহবুব আর রাজের।
খাওয়া শেষ হলে তিনজন এক টেবিলে বসলো। রাজের সামনে বার বার মাহবুব বিয়ে বিয়ে করছিলো। রাজ শুধু শীতলের দিকে তাকিয়ে আছে।
শীতলের ইচ্ছে করছে দৌড়ে পালিয়ে যেতে। খুব কান্না পাচ্ছে।
মাহবুব বলল- কিছু বলো? আমাদের বিয়ের প্ল্যান কেমন হলো?
শীতল রাজের দিকে তাকিয়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলো।
মাহবুব হতভম্ব!
মাহবুব, শীতল, রাজ তিনজন গাড়ির দিকে আসছিলো।
রাজ আর শীতলকে হঠাৎ এক বুড়ো রিকশাওয়ালা ড্রেনে ফেলে দিলো ধাক্কা মেরে।
রাজ আর শীতলের পুরো শরীর কাদাময় হয়ে গেলো। এমন রাগ উঠলো রাজের। নিজের জন্য না। শীতলের জন্য। বোরখা লেপ্টে আছে শীতলের গায়ের সাথে। লোকজন দেখছে আড়চোখে। শীতল আকস্মিক ভাবে হতভম্ব হয়ে আছে।
রাগে রাজ গর্জন করে উঠলো। বুড়ো রিকশাওয়ালা ভয় পেয়ে গেলো।
-এই আপনি এটা কি করলেন?
শীতল বলল- আসলেই তো আপনি আমাদের ধাক্কা মারলেন কেন?
মাহবুব কষে একটা থাপ্পড় দিলো লোকটার গালে।
চোখে পানি এসে গেলো লোকটার। সাথে শীতলেরও। লোকটার গায়ে এভাবে থাপ্পড় মারা উচিত হয়নি। রাজও এমন কিছু ভাবতে পারেনি। তারও কষ্ট হলো। লোকটা বয়স্ক, শ্রদ্ধার পাত্র। ।
বুড়ো লোকটা হাত জোর করে বলল- মাইক্রোবাস আসছিলো রাস্তা দিয়ে। ধাক্কা না মারলে উনারা চাপা পড়তেন। মাফ করে দেন। ভুল হয়ে গেছে।
ঘটনা স্থলে মোটামুটি একটা ভিড় জমে গেলো।
রাজ এগিয়ে এসে বুড়ো লোকটার হাতে একটা চেক তুলে দিলো। লোকটা কয়েকবার চেকটা উল্টো পাল্টো করে দেখলো।
তারপর মাহবুব কে বলল- মাফ চান।
-কি বললেন স্যার?.
-মাফ চান। বাংলায় বলেছি।
-এটা অফিস নয় যে আপনি অর্ডার করবেন। আমি শুনব।
– আমি বস নয় সাধারণ পাবলিক হিসেবে বলছি। মাফ চান উনার কাছে।
মাহবুব রাজের কথায় কিছুটা শঙ্কিত হয়ে মাফ চাইলো।
বুড়ো রিকশাওয়ালা টাকার চেক আর মাফ চেয়েছে কেউ এগুলো দেখে কেঁদে ফেললো।
রাজও কেঁদে দিলো সবাইকে অবাক করে দিয়ে। সে না কাঁদার চেষ্টা করছে কিন্তু হচ্ছে না। আবার চোখ ভরে গেলো পানিতে। পাঞ্জাবির হাতা দিয়ে চোখ মুচ্ছে বার বার।
– চাচা মিয়া আর কাঁদবেন না। কারও কান্না দেখলে আমি সহ্য করতে পারিনা। আমার চোখেও পানি এসে পড়ে।
রাজ নিজের চোখের পানি মুছে শীতলের দিকে তাকালো।
শীতলের চোখ থেকে পানি পড়ছে।
-তোমার আবার কি হলো? কাঁদছো কেন?
শীতল চোখ মুছে বলল- কই নাতো।
পরদিন অফিসে বিশাল কান্ড ঘটলো।
হল রুমে সবাইকে রাজ জরুরি মিটিংয়ের জন্য প্রিপ্রারেশন নিতে বলল।
সবাই উপস্থিত হলে রাজ মাইক্রোফোন নিয়ে বলল- আসসালামু আলাইকুম এভরিবডি!
সবাই ওয়ালাইকুম আসসালাম বলল।
– আপনারা অনেকেই জানেন না আমার পার্সোনাল বিষয়ে কিছু।
আজ বলব।
সবাই অধীর আগ্রহে রাজের কথা শুনছে। শিশির সবচেয়ে বেশি আগ্রহী।
শীতলকে ফোন করে করে রাতে জ্বালিয়ে মেরেছে রাজ। তাই সে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝিমাচ্ছে। সবচেয়ে অমনোযোগী হলো মাহবুব। সে শীতলকে দেখায় ব্যস্ত।
রাজ নিজের সম্পর্কে মোটামুটি বলার মতে করে বলল সবকিছু। সে একটা সময় পাগল ছিলো সেটাও বলল। সবার লাস্টে বলল- আমি ম্যারিড। সবাই জেনে অবাক হবেন যে, আমার ওয়াইফ এই অফিসেই জব করে। সে আপনাদের কলিগ। খুব পর্দাশীল, ধার্মিক, আত্মমর্যাদা সমপন্ন নারী।
আমার ওয়াইফকে আমি খুব ভালোবাসি।
হঠাৎ শীতলের উপর নীল একটা আলো পড়লো।
সবাই শীতলকে দেখছে।
শীতল আকস্মিক ভাবে কি ঘটছে তা বুঝতে পারলোনা।
রাজ বলল- শি ইজ মাই ওয়াইফ! আই লাভ হার! ভেরি মাচ লাভ হার!
অফিস স্টাফরা হাত তালি দিলো।
মাহবুব আর শিশিরের বেশিকিছু হলো না আশা ভঙ্গ হওয়ায় জাস্ট সেন্স লেস হলো দুজন!
অফিস স্টাফরা হতভম্ব!
.
❤মহান আল্লাহ তায়ালার ৯৯টি নামের তিনটি নাম (আরবি,বাংলা)
৮৯. ﺍﻟْﻤَﺎﻧِﻊُ আল-মানি’ প্রতিরোধকারী, রক্ষাকর্তা
৯০ ﺍﻟﻀَّﺎﺭُّ আদ়-দ়়র্র যন্ত্রণাদানকারী, উৎপীড়নকারী
৯১ﺍﻟﻨَّﺎﻓِﻊُ আন-নাফি’ অনুগ্রাহক,উপকর্তা,হিতকারী❤
.
চলবে………