তুমিময় আসক্তি পর্ব-৪২

0
1073

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“৪২”

–” একটা লেকের পাশে মন খারাপ করে বসে আছে রুদ্র। বাড়ি থেকে বেরিয়ে এখানে এসেছে। জায়গাটা শহর ছেড়ে একটু দূরেই। এর আগেও অনেকবার এসেছে রুদ্র এখানে। মন খারাপ হলে রুদ্র এখানে ছুটে আসে একটু শান্তির খোঁজে। কিন্তু আজ কোনো কিছুতেই যেনো স্বস্তি মিলছে না তার। দোলার কথা গুলো মনে পড়লেই রুদ্রর ভেতরটা ক্ষততে ভরে উঠছে।

— দোলা বসে আছে মাথা নিচু করে। সামনে হুইলচেয়ারে রত্না চৌধুরী গভীর দৃষ্টি রেখে তাকিয়ে আছে দোলার দিকে। তানিয়া একপাশে দাঁড়িয়ে আছে মন খারাপ করে। সব কিছু ঠিক হয়েও আবার এলোমেলো। সুখ যেনো ধরা দিয়েও দেয় না এদের কাছে।
– আমি তোকে কিছু বলব না। আর না কিছু জিজ্ঞেস করবো কি হয়েছে তোদের। শুধু অনুরোধ করবো তোর কাছে! আমার ছেলেটাকে আর কষ্ট দিস না মা। ছোট থেকে অনেক কষ্ট পেয়ে বড় হয়েছে আমার রুদ্রটা। আমি জানি তুই কারণ ছাড়া কিছু করিস না। আর তোদের স্বামী স্ত্রীর মাঝে আমরা কেউ আসতেও চাইনা। মা হয়ে শুধু এইটুকু বলতে পারি কোনো ভুল হওয়ার আগে সব ঠিক করে নিস। আমার ছেলে যদি অন্যায় করে থাকে তার জন্য আমি ক্ষমা চাইছি তোর কাছে। রত্না চৌধুরীর কথায় দোলা চোখ তুলে তাকায়। চোখের মধ্যে অশ্রুপাত। একটু পলক নড়ালে টপ করে পড়বে দোলার সুন্দর মুখশ্রী বিচরণ করে।

— সেই দুপুরে বেরিয়ে গেছে৷ এত রাত হয়ে গেলো এখনো বাড়ি ফিরলো না। জানি না কোথায় আছে আমার ছেলেটা। কাছে থেকে সন্তানের কষ্ট দেখতে পারবো না রে মা। তুই আর রুদ্র সুখে থাক! সাথে থাক এটা চাই আমরা। তোদের ভালো দেখলে আমরা তবেই ভালো থাকবো। অবুঝের মতো কাজ করিস না মা। কথাটা বলে রত্না চৌধুরী দোলার মাথায় হাত রাখলে দোলা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে রত্না চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে। তানিয়ার চোখেও পানি চলে আসে এবার।

— রাত সাড়ে নয়টা। রুদ্র পানির দিকে স্থীর দৃষ্টি রেখে আছে। পানির মধ্যে যেনো দোলার চেহারাটা ভেসে উঠছে বারবার। দোলার মিষ্টি মুখের হাসিটা রুদ্র সেই পানির মধ্যে দেখতে পাচ্ছে। হঠাৎ সামনে একটা বিয়ারের বোতল ধরাই চমকে উঠে রুদ্র। বিয়ারের বোতল অনুসরণ করে বিয়ার ধরে রাখা মানুষটাকে দেখে বেশি অবাক হয় রুদ্র।
– তুই এখানে? আর এই সব কি? গম্ভীর কন্ঠে বলে রুদ্র। রাজ রুদ্রর পাশে আয়েশ করে বসে বলে, তোকে খুঁজতে খুঁজতে অবস্থা কাহিল। সব জায়গায় খুঁজে যখন পাইলাম না তখন এখানে ছুটে আসলাম। জানতাম এখানে আসলে পাবো। তাই সাথে বিয়ারটাও নিয়ে আসলাম দুজন মিলে খাবো তাই। রুদ্রর ঠিক হজম হয়না রাজের কথা৷ তাই ভ্রু কুচকে কৌতুহল নিয়ে বলে! তুই আমাকে বিয়ার খেতে বলছিস? সিরিয়াসলি?

— হ্যাঁ তো? গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে রাজ।
— এরপর কিছু সময় নিরবতা চলে দুজনের মধ্যে। দুজনেই লেকের পানি দেখতে ব্যস্ত।

— দোলা ভাবিকে কখনো নিজের মুখে ভালবাসার কথা বলেছিস? হুট করে বলে উঠে রাজ। রাজের কথায় রুদ্র পানি থেকে চোখ সরিয়ে রাজের দিকে তাকায় বিমুঢ় চোখে।
– এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? বলেছিস?
– রাজের কথায় রুদ্র আবার চোখ সরিয়ে নেয় রাজের দিক থেকে। এরপর দৃষ্টিটা মাটিতে আবদ্ধ করে মাথা নাড়িয়ে না বলে। এতে রাজ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

– কেনো বলিস নাই? দোলা তো তোর ওয়াইফ৷ তাহলে নিজের ওয়াইফকে ভালবাসার কথা বলতে সমস্যাটা কোথায়? আর ক’দিন পর বাবা হতে যাচ্ছিস অথচ নিজের বউকে ভালবাসার কথা বলতে পারলি না। বউ তো এমনি চলে যেতে চাইবে৷ নেহাতই দোলা ভালো মেয়ে বলে তোর সাথে আছে এখনো। আমি হলে..বাকি কথা বলার আগে রাজ থেমে যায় মুখ চেপে ধরে। আর রুদ্র তো বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে রাজের দিকে।

— রাজ দাঁত কেলিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলে, না মানে আমি বলতে চাইছিলাম যে… এই সময়ও তোর রসিকতা করতে ইচ্ছে করছে ষ্টুপিড। রুদ্রর ধমকে রাজ মুখটা মলিন করে বলে নে ধর! এটা খেয়ে মুড ঠিক কর বিয়ারের বোতলটা এগিয়ে দিয়ে বলে রাজ।
— তোর মতলব কি রে৷ হঠাৎ আমাকে সেধে সেধে বিয়ার দিচ্ছিস। অন্যদিন তো ছুঁতেও দিস না৷ আজ খেতে দিচ্ছিস? এক আকাশ সমান কৌতুহল নিয়ে বলে রুদ্র।

— আমি জানি তোর অনেক মন খারাপ। আর অনেক কষ্ট পাচ্ছিস ভেতরে। এটা না খাওয়া পর্যন্ত শান্তি আসবে না তোর মধ্যে। তাই নিয়ে আসলাম। নে ধর। রাজের কথায় রুদ্র আর কিছু ভাবে না৷ সত্যি বোতলটা নিয়ে এক নিশ্বাসে সব শেষ করে দেয়৷ রাজ হা হয়ে যায় তাতে।

– আরে কি করলি৷ সব খেয়ে নিলি? আমার জন্য অল্প রাখতে পারতি তো মুখটা ফ্যাকাসে করে বলে রাজ৷ কিন্তু মনে মনে হাসে সে। রুদ্র করুণ একটা লুক দিয়ে তাকায় রাজের দিকে।

–‘ রুদ্র মাথা নিচু করে বসে আছে। তার মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করতে শুরু করেছে।
— বাড়ি যাবি না? রাজের কথায় ব্যথিত চোখে তাকায় রুদ্র। কিন্তু মুখে কিছু বলে না৷ রাজ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে।

— হুট করে রুদ্র রাজের হাত চেপে ধরে। এতে রাজ চমকে উঠে রসগোল্লার সমান চোখ করে তাকায়।
– দোলা আমাকে ছেড়ে সত্যি চলে যাবে রাজ৷ আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না৷ আমি ওকে অনেক ভালবাসি৷ ও কেনো বুঝতে পারে না আমার ভালবাসা৷ আমার রাগ জেদ অভিমানটাই দেখে শুধু। আমার ভালবাসা কেন দেখে না? আহত কন্ঠে বলে রুদ্র৷

কথায় আছে মানুষ নেশার ঘোরে তার মনের অপ্রকাশিত সব কথা বলে। তার মধ্যকার দুঃখ, কষ্ট যেগুলো নিজের মধ্যে রাখার চেষ্টা করে। সেগুলো নেশা করার পর এমনি প্রকাশ পায়। রুদ্ররও তেমন। আর রাজ এই জন্যই রুদ্রর জন্য বিয়ারের বোতলটা নিয়ে আসে৷। ও জানে রুদ্র নেশা করার পর নিজেকে সামলাতে পারে না৷ ওর মধ্যকার জমানো কথা যেগুলো চাইলেও বলতে পারে না সেগুলো নেশার ঘোরে নির্দ্বিধায় বলে দেয়।

— তুই তোর রাগ জেদ অভিমান প্রকাশ করেছিস বলে দোলা সেগুলোই শুধু দেখতে পাই। কখনো ভালবাসার কথা কি বলেছিস? নাকি বুঝতে দিয়েছিস তোর ভালবাসা টা। ও বেচারি তো অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তোর ভালবাসি কথাটা শোনার জন্য। তোকে ভালবেসে গুমরে গুমরে মরছে ভেতরে। কিন্তু তুই সব সময় রাগ’টাই প্রকাশ করে এসেছিস। আমি কিন্তু দোলার দোষ কখনো দেবো না। উহু একটু দেবো না৷ প্রথম থেকে মেয়েটা সব সহ্য করে আসছে৷ কষ্ট, দুঃখ উপেক্ষা করে সবার জন্য সব কিছু করে এসেছে৷ এর পরিবর্তে মেয়েটা কি পেয়েছে বলতে পারিস? একটা মেয়ের সব চেয়ে আপন তার স্বামী হয়। আর সে স্বামীর থেকে যদি সুখ না পাই তাহলে একটা মেয়ের কাছে দুনিয়ার সব সুখ থাকলেও সেটা তুচ্ছ মনে হয়। রুদ্র মোহিত চোখে রাজের কথা গুলো শুনছে।

— শুন রুদ্র৷ অনেক তো হলো। আর দেরি করিস না৷ দোলাকে বলে দে না ভালবাসার কথাটা। কেনো বলতে পারছিস না এই ছোট একটা শব্দ। যে কথার উপর ভিত্তি করছে গোটা সম্পর্কটা। সে কথা বলতে বাধা কিসের?

–‘ আমি জানি না কি হয় আমার। আমি দোলার সামনে ভালবাসি কথাটা বলতে পারি না। অনেকবার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। ভালবাসি বলতে গেলে আমি থমকে যায় সে সময়। বাচ্চাদের মতো ফেস করে বলে কথাটা রুদ্র। রুদ্রর কথায় রাজ হো হো করে হেসে উঠে বলে সিরিয়াসলি রুদ্র? তোর এইটুকু কথা বলতে এমন অবস্থা। আচ্ছা তুই কি দোলাকে ভয় পাস। রিজেক্ট করে দেবে সে ভয়ে। তুই কি রোজার মতো ভাবিস দোলাকে। প্রপোজ করলে তোকে অপমান করবে। মুখ ফসকে রাজ রোজার কথা বলে ফেলে রুদ্রর সামনে। কথাটা বলে রাজ নিজেই চমকে উঠে কি বলেছে সেটা ভেবে। রুদ্র ফ্যালফ্যালে চোখে তাকিয়ে আছে রাজের দিকে।। রুদ্রর নেশাটা তীব্র আকার ধারণ করায় রাজের কথাটার গুরুত্ব পায়না তেমন রুদ্রর কাছে৷ এতে রাজ যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।

— আচ্ছা দোস্ত শুন৷ তুই আজ দোলাকে তোর মনের কথা বলে দিবি ওকে। কি পারবি না? রাজের কথায় রুদ্র অসহায় চোখে তাকায়। তাই দেখে রাজ একটা হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, দোলা তোকে ছেড়ে চলে গেলে ভালো লাগবে? রাজের কথাটা শেষ হতে দেরি কিন্তু রুদ্রর রিয়াক্ট করতে দেরি হয়না৷ নায়া বলে চিৎকার করে উঠে।

— রুদ্র ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে। রুদ্র যেনো একটা ছোট বাচ্চা হয়ে গেছে এই সময়। প্রিয় কিছু হারানোর ভয়ে এই বুঝি কেঁদে দেবে এখনই।
– তাহলে এখনই বাড়ি ফিরবি আর দোলাকে মনের কথাটা বলে দিবি। ডান? রুদ্র মুচকি হেসে বলে ওকে ডান। আমি বাড়ি যায় বলে উঠে দাঁড়াতে গেলে রুদ্র পড়ে যেতে যায়। সাথে সাথে রাজ ধরে ফেলে রুদ্রকে।
— রুদ্র তুই তো নিজ পায়ে দাঁড়াতেই পারছিস না। দোলাকে কথা গুলো বলতে পারবি তো? কৌতুহলী হয়ে বলে রাজ।

– রুদ্র রাজের হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলে আলবাত পারবো। আমাকে পারতে হবে। আমিও দেখতে চাই ভালবাসি বলার পর দোলা আমাকে রেখে কি করে যায়। ওকে আমি যেতেই দেবো না৷ এইভাবে জড়িয়ে রাখবো রাজকে ধরে বলে রুদ্র৷ রাজ ঘাবড়ে গিয়ে বলে আরে কি করছিস৷ এইটা আমি ভাই। তোর মাথাটা একদম গেছে৷ আমারই ভুল হয়েছে তোকে বোতলটা দেওয়া। চল আমি রেখে আসছি বলে রুদ্রকে ধরে নিয়ে যায় রাজ।

–‘ তারা যেতেই লেকের পানি গুলো ছন্দে ছন্দে বেজে উঠতে লাগে। আকাশে পুর্ণ থালার ন্যায় চাঁদটা আরো তীব্র আলো ছড়ায় যেনো। হয়তো ওরাও চাই আজ দুজন মানুষ দুজনের মনের কথা গুলো জানুক। বুঝুক। মিলেমিশে একাকার হয়ে যাক। বন্ধনটা আরো দৃঢ় হোক। তবে সত্যি কি প্রকাশ পাবে আজ ভালবাসা? জমিয়ে রাখা ভালবাসার আলোর শিখায় কি আলোকিত করতে পারবে দোলা আর রুদ্রর বন্ধনটা?

–” চৌধুরী বাড়ির পরিবেশ টা থমথমে। কারো মুখে হাসি নেই৷ নেই মনে শান্তি। যে যার মতো মন খারাপ করে বসে আছে। রাত ক্রমশ তার আঁধার ছড়িয়ে দিচ্ছে গভীর থেকে গভীরে। ঝিঁঝিপোকারা ক্লান্ত হয়ে তারাও ঘুমিয়ে গেছে। দোলা তার ঘরে রুদ্রর অপেক্ষা করছে৷ এই বুঝি রুদ্র আসবে। এই অপেক্ষা করতে করতে অনেকটা সময় চলে গেছে রুদ্রর এখনো আসেনি৷ দোলা আহত চোখে বারবার ঘড়ির দিকে তাকায়। ঘড়ির কাটা এখন বারোর ঘরে অবস্থান করছে৷ তানিয়া দোলার কাছে থেকে গিয়েছে ঘন্টাখানিক আগে৷ দোলা নিরব মেরে গেছে একদম৷ জাহির চৌধুরী, রত্না চৌধুরী, তানভীর আহমেদ ড্রয়িং রুমে অপেক্ষা করছে রুদ্রর ফেরার। অনেকবার রুদ্রকে ফোন দিয়েছে কিন্তু তার ফোন সুইচ অফ৷ এই জন্য তাদের দুঃচিন্তাটা আরো বৃদ্ধি পায়। রাজকে ফোন দিয়েছিলো কিন্তু রাজ ফোন উঠাইনি।
— মামা, মামি আর কতখন এইভাবে বসে থাকবে। তোমরা ঘরে যাও রেস্ট করো৷ ব্রো আসলে আমি তোমাদের খবর দেবো বললাম তো। চিন্তিত কন্ঠে বলে তানিয়া৷
— ছেলেটা সেই বেরিয়েছে এখনো ফিরলো না৷ কিভাবে নিশ্চিন্তে থাকি বলতো তানি মা? এত রাত হয়ে গেলো তাও বাড়ির ফেরার নাম নেই। আমার ছেলেটা ঠিক আছে তো? কোনো বিপদ হয়নি তো রুদ্রর কথাটা বলে রত্না চৌধুরী কেঁদে উঠে।

-; রত্না চৌধুরীর কথায় সবার মনটা আরও বেশি খারাপ হয়ে যায়। মনোক্ষুণ্ণ হয়ে তাকায় রত্না চৌধুরীর দিকে।

– আহ মামি! এইসব কথা কেনো ভাবছো? ব্রো ঠিক আছে৷ আর চলে আসবে। এবার কিন্তু তোমাদের শরীর খারাপ করবে। প্লিজ তোমরা ঘরে গিয়ে রেস্ট করো৷ আমি তোমাদের জানাবো বললাম তো। ব্রো আসলে সঙ্গে সঙ্গে জানাবো তোমাদের।। বাবা তুমিও ঘরে যাও রেস্ট করো। তোমার শরীরটা দুদিন ধরে ভালো যাচ্ছে না৷ সেটা আমি বেশ ভালো করে জানি। তানিয়ার কথায় তানভীর আহমেদ মুচকি হেসে বলে তুই তো আমার মা। মা ছেলের খবর রাখবে না তো আর কে রাখবে৷ আমি ঠিক আছি তানু৷ রুদ্র আসলে আমি চলে যাবো।

— তানভীর আহমেদের কথায় তানু চোখ গরম করে তাকালে তানভীর আহমেদ চুপসে গিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
– ভাইজান আমরা বরং ঘরে যায় চলুন৷ তানু তো বলল রুদ্র আসলে আমাদে জানাবে৷ সত্যি তো অনেক রাত হয়ে গেছে এইভাবে বসে থাকলে ভাবি, আপনার শরীর খারাপ করবে৷ পরে কিন্তু রুদ্র কষ্ট পাবে। চলুন আমি আপনাদের ঘরে দিয়ে আসি বলে জাহির চৌধুরী আর রত্না চৌধুরীকে নিয়ে ঘরে যায় তাদের৷ তানিয়া যেনো একটু স্বস্তি পায় ওদের ঘরে পাঠাতে পেরে।

–” দোলা আর অপেক্ষা করতে পারে না। রাত বেড়ে চলেছে রুদ্রর আসার নাম নেই। দোলা এবার রুদ্রকে ফোন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
— নাহ! অনেক বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে আমার। তখন ওইভাবে কথা গুলো বলা ঠিক হয়নি। উনি হয়তো অনেক কষ্ট পেয়েছেন আমার কথায়৷ তাই বাড়ির ফিরছেন না৷ উনি কি সত্যি আমাকে বুঝতে পারেন না৷ আমার মুখের কথা গুলো সব উনার কাছে৷ মনের মধ্যে যে না বলা কথা গুলো জমে আছে সেগুলো একটু বোঝার চেষ্টা করে না। একবার ফিরে আসুন ছোট সাহেব। আমি সব কিছু ঠিক করে নেবো। আর কখনো এইসব কথা বলব না। আপনাকে ছেড়ে যেতে চাইবো না। লাগবে না আপনার মুখে ভালবাসি কথা৷ আপনি ফিরে আসুন শুধু। আমি আপনাকে নিয়েই ভালো থাকতে চাই কথা গুলো একা একা বলে কেঁদে উঠে দোলা। এরপর বিসানার উপর থেকে ফোন উঠিয়ে রুদ্রকে ফোন দিতে গেলে দেখে ফোন বন্ধ হয়ে পড়ে আছে৷ চার্য আউট হয়ে গেছে দোলার ফোনের। দোলা বিরক্ত হয়ে ফোনটা ছুড়ে মারে।

–“” এই সময়ই চার্য শেষ হতে হলো। কি করবো এখন? চিন্তিত হয়ে ভাবতে থাকে দোলা। এরপর দোলা তানিয়ার কাছে যাবে বলে মনস্থির করে। তানিয়ার ফোন থেকে রুদ্রকে ফোন করবে। ভাবনা অনুযায়ী দোলা ঘর থেকে বের হতে গেলে রুদ্র হুমড়ি খেয়ে পড়ে দোলার উপরে। হঠাৎ এমন হওয়াতে দোলা সামলাতে পারে না নিজেকে৷ রুদ্রকে নিয়ে পরে যায় ফ্লোরে। রুদ্র নেশা এতটা হয়ে গেছে যে, নিজ পায়ে ভালো মতো দাঁড়াতেই পারছিলো না। ফ্লোরে নরম কার্পেট থাকায় দোলা তেমন আঘাত পায় না। তাছাড়া রুদ্র তার একটা হাত দোলার পিঠের নিচে দেয় পড়ে যাওয়ার সময়। যার জন্য দোলার তেমন কোনো আঘাত লাগে না। পড়ে যাওয়ায় দুজন একটা ঘোরের মধ্যে থাকে কিছুখন৷ ঘোর কাটিয়ে দুজন দুজনের দিকে মায়াভরা চোখে তাকিয়ে থাকে। রুদ্রকে দেখে দোলা অনেক খুশি হয়েছে৷ চোখ মুখে তার উপচে পড়া খুশির ভীড়৷ কাঁপা কাঁপা ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসির রেশ।

–” চলবে..